বৃষ্টিভেজা শান্ত শহর উইন্ডেনের মাঝে অশান্তির ছায়া বয়ে আনে কিশোর এরিকের হারিয়ে যাওয়া। ৩৩ বছর আগেও এমনটা ঘটেছিল। শহরের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের লোকজনের আচরণ সন্দেহজনক। শহরের প্রান্তে থাকা গুহা থেকে ভেসে আসে অদ্ভুদ শব্দ, মাঝে মাঝে পুরো শহর কেঁপে ওঠে বৈদ্যুতিক গোলযোগে, আর আকাশ থেকে পড়তে থাকে মরা পাখির ঝাঁক। সত্যিই কি অ্যাপোক্যালিপ্সে ধ্বংস হতে চলেছে এই শহর?
২০১৭ এর শেষের দিকে আসা নেটফ্লিক্সের জার্মান সাই-ফাই থ্রিলার ডার্ক বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে দেয় এর মাথা ঘুরানো টাইম প্যারাডক্সের আবহে। কোনো ঘটনাকে বদলে দিয়ে টাইম লুপ ভাঙার চেষ্টা করা হলেও দেখা যাচ্ছে, সেটাও ঐ লুপেরই অংশ। ‘ডনি ডার্কো’র মতো অনিবার্য অ্যাপোক্যালিপ্স, ‘প্রিডেস্টিনেশন’ মুভির মতো বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স কিংবা ‘গেম অফ থ্রোনস’ সিরিজের মতো ফুপু-ভাতিজার সম্পর্ক, সবকিছু মিলিয়ে এটি সবচেয়ে আলোচিত সিরিজগুলোর একটি।
The question is not w̶̶h̶̶e̶̶r̶̶e̶, w̶h̶o̶ or h̶o̶w̶, but when?
নতুন সিজন দেখার আগে কাহিনী মনে করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেজন্য আগের দুই সিজনের কাহিনী নিয়ে রোর বাংলার এই রিক্যাপ আর্টিকেল। বুঝতেই পারছেন, সামনেই আছে স্পয়লার! প্রয়োজনে পাঠে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
ফ্যামিলি ট্রি
নিলসেন
অ্যাগ্নেসের ছেলে ট্রন্ট, ট্রন্ট-জানার সন্তান ম্যাডস (মৃত) এবং উলরিখ। উলরিখ-ক্যাথারিনার সন্তান ম্যাগনাস, মার্থা এবং মিকেল। অ্যাগ্নেসের ভাই নোয়া।
কানওয়াল্ড
নার্স ইনেস কানওয়াল্ডের পালক ছেলে মিকেল। মিকেল- হ্যানার সন্তান হলো সিরিজের মূল চরিত্র ইয়োনাস (জোনাস)।
টিডাম্যান
এগন-ডরিসের সন্তান ক্লডিয়া। ক্লডিয়ার মেয়ে রেজিনা, তার বাবার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি। রেজিনা-আলেক্সান্ডারের ছেলে বার্তোশ।
ডপলার
বার্নড এবং গ্রেস ডপলারের ছেলে হেলগে। হেলগের ছেলে পিটার ডপলার। পিটার-শার্লোটের সন্তান ফ্রান্সেসকা এবং এলিজাবেথ। এলিজাবেথ এবং নোয়ার সন্তান শার্লোট।
গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বিজ্ঞানী এইচজি ট্যানাহসের, তবে তার সাথে কারো আত্মীয়তার সম্পর্ক দেখানো হয়নি এখনও। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো অ্যাডাম, যে কিনা ইয়োনাসেরই ভবিষ্যৎ রূপ।
সিরিজে দেখানো অতীত দুইরকম, কিছু হলো ফ্লাশব্যাক (উলরিখ আর ক্যাথারিনার প্রেম) আর কিছু হলো বর্তমানের ঘটনার প্রভাব (মিকেল আর হ্যানার বিয়ে)।
ঘটনার প্রবাহ পাঁচটা ভিন্ন সময়ে ১৯২১, ১৯৫৩, ১৯৮৬, ২০১৯ ও ২০৫২ সালে।
যতক্ষণ পর্যন্ত ওয়ার্মহোল থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সময়কে আরেকটা মাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। অতীতের পরিণতিতে ভবিষ্যত নয়, বরং ভবিষ্যতের পরিণতিতেই অতীতকে ঘটতে দেখা যাবে। সিরিজের ঘটনাগুলো নন-লিনিয়ারভাবে ঘটে, তাই নির্দিষ্ট কিছু চরিত্রকে অনুসরণ করতে পারলেই পুরো সিরিজের ঘটনা মনে রাখা সম্ভব।
২০১৯- ইয়োনাস
সিরিজের মূল চরিত্র, হ্যানা এবং মাইকেলের সন্তান। সিরিজ শুরু হয় তার বাবা মাইকেলের আত্মহত্যা দিয়ে, যার কারণে ইয়োনাস দুই মাস হাসপাতালে কাটায়। স্কুলে ফিরে এসে দেখে তার গার্লফ্রেন্ড মার্থা তার বেস্টফ্রেন্ড বার্তোশের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। সে বনের মধ্যে ড্রাগ খুঁজতে যায় মার্থাদের তিন ভাইবোন আর বার্তোশের সাথে। ঘটনাক্রমে সে আর মিকেল আলাদা হয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পরই মিকেল হারিয়ে যায় আর ইয়োনাস তার বাবাকে কালিমাখা অবস্থায় দেখতে পায়।
শহরে আসে ২০৫২ সালের ইয়োনাস, যে কিনা ২০১৯সালের ইয়োনাসের কাছে ৩৩ বছরের পুরানো একটা চিঠি পাঠায়। সেটা পড়ে ২০১৯-ইয়োনাস বুঝতে পারে, মিকেল গুহার টাইম পোর্টাল দিয়ে ১৯৮৬ সালে হয়ে গেছে মাইকেল আর হ্যানাকে বিয়ে করে জন্ম দিয়েছে ইয়োনাসের। ইয়োনাস তখন ১৯৮৬ সালে গিয়ে মিকেলকে খুঁজে পায়, মিকেল-হ্যানার প্রথম পরিচয়ও দেখে। তাকে ফিরিয়ে আনার চিন্তা করলেও ২০৫২-ইয়োনাস তাকে বাধা দেয়। কেননা তার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না তাহলে। কিন্তু পরে সে মনে করে, মিকেলকে ফিরিয়ে আনলেই সবকিছুর সমাধান হবে।
আবার সেই উদ্দেশ্যে ১৯৮৬ সালে গেলে হেলগে এবং নোয়া তাকে কিডন্যাপ করে ১৯৮৬ সালের নীল বাঙ্কারে আটকে রাখে। নিজের বাবার সুইসাইড নোটটা সে পুড়িয়ে ফেললেও ২০৫২-ইয়োনাসের হাতে সেই একই চিঠি দেখতে পায়। বুঝতে পারে তারা এখনো চক্রের মধ্যেই আছে।
২০১৯-ইয়োনাস শেষে চলে যায় ২০৫২ এর অ্যাপোক্যালিপ্টিক পৃথিবীতে। সিলজা নামে একজনের সাহায্য নিয়ে সেখানকার স্থিতিশীল গড পার্টিকেল ব্যবহার করে সে চলে যায় ১৯২১ সালে, দেখা পায় বিকৃত চেহারাধারী অ্যাডামের। টাইম ট্র্যাভেল করে আত্মহত্যা করার ঠিক আগে আগে মিকেলের কাছে হাজির হয় সে। মিকেল নিজের আত্মহত্যার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে। সে ২০১৯-ইয়োনাসকে বলে যে, ইয়োনাসই তাকে গুহায় ঢুকিয়েছিল চক্র শুরু করার জন্য। এমনকি তাকে চিঠিটাও দেখিয়েছিল, যাতে সে সেই মোতাবেক সুইসাইড নোট লিখতে পারে। ২০১৯-ইয়োনাস বোঝে, ওর বাবাকে বৃহত্তর স্বার্থে মরতেই হবে।
এদিকে মার্থা সম্পর্কে তার ফুপু হয়। ঘটনাক্রমে দুইজনেই জেনে যায় সেটা। তারপরেও সম্পর্ক চালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু অ্যাডাম খুন করে মার্থাকে। আচমকা উন্নত এক টাইম মেশিন নিয়ে ইয়োনাসের কাছে হাজির হয় ভিন্ন জগতের আরেকজন মার্থা।
২০৫২-ইয়োনাস
মিকেল হারানোর পরে উইন্ডেন শহরে আসে প্রাপ্তবয়স্ক ২০৫২-ইয়োনাস৷ সে টাইম ট্র্যাভেল করতে পারলেও কোনো চক্র ভাঙার চেষ্টা করেনি। দীর্ঘ সময় ধরে সে কাজ করেছে ক্লডিয়া টিডারম্যানের সাথে হাত মিলিয়ে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সিক মুন্ডাস নামের অভিশপ্ত কাল্ট এবং এদের নেতাকে ধ্বংস করা। ভবিষ্যতে কোনো একসময়ে সে নিজেই স্বয়ং সিক মুন্ডাসের নেতা অ্যাডামে পরিণত হবে।
তার এই চক্র পছন্দ না হওয়ায় সে চলে এসেছে ১৯৮৬তে, যখন কিনা তেজক্রিয়তার কারণে প্রথম পোর্টাল খুলে গিয়েছিল। দুঃখের বিষয়, ২০৫২-ইয়োনাস টাইম পোর্টাল বন্ধ করার জন্য সিজিয়াম চুরি করে বিজ্ঞানী ট্যানহসের মেশিনটা চালু করার ফলেই মূলত ১৯৮৬ এর পোর্টালটা সৃষ্টি হয়েছিল। সুতরাং এটা একটা প্যারাডক্স। যতবার ইয়োনাস পোর্টাল বন্ধ করতে যাবে, ততবার এটা চালু হবে।
মিকেল/মাইকেল কানওয়াল্ড
গলায় ফাঁস দিয়ে মাইকেলের আত্মহত্যা আর স্কুলপড়ুয়া মিকেলের নিখোঁজ হওয়া দিয়ে মূল কাহিনী শুরু হয়। ইয়োনাস, ম্যাগনাস, মার্থা, বার্তোশের সাথে গুহার কাছে অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়া মিকেল হারিয়ে যায় ২০১৯ সালের ৪ঠা নভেম্বর। টাইম ট্রাভেল করে সে চলে যায় ১৯৮৬ সালে। নিজের বাবা-মা উলরিখ আর ক্যাটারিনাকে আবিষ্কার করে টিনেজ অবস্থায়। জাদুকর হুডিনির পদাঙ্ক অনুসরণ করতে যাওয়া মিকেলের জীবনের সবকিছু ওলটপালট খেয়ে গেলেও তাকে রক্ষা করে নার্স ইনেস কানওয়াল্ড। তার কাছে বড় হয়ে হ্যানাকে বিয়ে করে ইয়োনাসের জন্ম দেয় সে।
এদিকে ২০১৯-ইয়োনাস টাইম ট্র্যাভেল শুরু করে এবং মিকেলের অতীতে চলে যাওয়া ঠেকাতে চায়। যদিও এর কারণে তার অস্তিত্ব নাই হয়ে যাবে। সে টাইম ট্র্যাভেল করে আত্মহত্যা করার ঠিক আগে আগে মিকেলের কাছে হাজির হয়। মিকেল নিজের আত্মহত্যার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে। সে ২০১৯-ইয়োনাসকে বলে যে, ইয়োনাসই তাকে গুহায় ঢুকিয়েছিল চক্র শুরু করার জন্য। এমনকি তাকে চিঠিটাও দেখিয়েছিল, যাতে সে সেই মোতাবেক সুইসাইড নোট লিখতে পারে। ২০১৯-ইয়োনাস বোঝে, ওর বাবাকে বৃহত্তর স্বার্থে মরতেই হবে।
২০১৯ সালের জুন মাসের ২১ তারিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে মিকেল, চিঠি লিখে রেখে যায় পালিত মা ইনেসের উদ্দেশ্যে। ইনেস বোঝে, মিকেল আসলেই কমিকের ক্যাপ্টেন ফিউচারের মতো।
উলরিখ নিলসেন
ট্রন্ট-জানার ছেলে উলরিখ। স্কুলে পড়ার সময় ১৯৮৬ সালে তার ভাই ম্যাডস বনের মধ্যে নিখোঁজ হয়। ক্যাথারিনার সাথে উলরিখের প্রেম, আর হ্যানার আবার উলরিখকেে পছন্দ। তাই হিংসায় পড়ে হ্যানা উলরিখকে মিথ্যা ধর্ষণের দায়ে ফাঁসিয়ে দেয় শেরিফ এগন টিডারম্যানের কাছে। এগন আবার আগে থেকেই উলরিখকে দেখতে পারতো না। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে এসে উলরিখ হয় শহরের শেরিফ। ক্যাথারিনার সাথে সুখের সংসার এবং তিন সন্তান (ম্যাগনাস, মার্থা, মিকেল) থাকা সত্ত্বেও সে হ্যানার সাথেই পরকীয়া করে। ৪ নভেম্বর মিকেল বনের মধ্যে নিখোঁজ হবার পরে সে তদন্ত করে বনের মধ্যে গুহার (তেজস্ক্রিয় বলে জনসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ) সাথে তার ভাই ম্যাডস, ছেলে মিকেল এবং স্থানীয় ছেলে এরিকের হারিয়ে যাবার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পায়।
পরবর্তীতে সে তার ভাইয়ের লাশ খুঁজে পায়, যদিও প্রথমে দেখে চিনতে পারেনি। এলাকার নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট অফিসে জোর করে খোঁজাখুঁজি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ম্যাডসের কেস ফাইল ঘেঁটে আধপাগল বুড়ো হেলগে ডপলারের সাথে রহস্যের সাথে সম্পর্ক খুঁজে পায়। তাকে তাড়া করে বনের গুহাতে ঢুকে পড়ে আরেকবার। বামের গলিতে ঢুকে চলে যায় ১৯৫৩ সালে।
সেখানে তার সাথে তার বাবা ছোট্ট ট্রন্ট আর দাদী অ্যাগনেসের দেখা হয়। ১৯৫৩ সালে বিজ্ঞানী ট্যানহসকে গিয়ে ট্যানহসেরই লেখা বই উপহার দিয়ে আসে, সেই সাথে তার কাছে ফেলে রেখে আসে তার ২০১৯ সালের স্মার্টফোন। যেটা পরবর্তীতে টাইম মেশিন বানানোর কাজে লাগে। হেলগে যে খুনী, এই ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত ছিল সে। তাই হেলগের কেবিনের সামনেই ছোট হেলগেকে ইট দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। হেলগে মরে গেলে হয়ত টাইমলাইন বদলে যেত, কিন্তু সে মরে না, আর সন্দেহজনক আচরণের কারণে উলরিখ গ্রেফতার হয়। কেননা দুইটা বাচ্চার লাশের (ওয়ার্মহোল দিয়ে চলে আসা এরিক ও ইয়াসিন) পাশাপাশি হেলগেও নিখোঁজ। ভাগ্যের পরিহাসে সে হাতে পড়ে তরুণ শেরিফ এগনের (যে তাকে দেখতে পারতো না ১৯৮৬ সালে)। সে আটকা পড়ে গেলো ১৯৫৩ সালের জেলে। হেলগে কে মাথায় বাড়ি দিয়ে মারার চেষ্টা করতে গিয়েই উলরিখই প্রকারান্তরে তাকে খুনি বানিয়ে দিয়েছে।
টাইম ট্র্যাভেলের কথা জানতে পেরে হ্যানা চলে আসে ১৯৫৩ সালে। কিন্তু অতীতে আসার আগে উলরিখ তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিল, তাই সে উলরিখকে বাঁচানোর আশা দিয়েও বাঁচায় না। ২০১৯ সালের উলরিখ ১৯৫৩ থেকে যন্ত্রণাময় ৩৩ বছর কাটিয়ে আসে ১৯৮৬তে৷ বৃদ্ধাশ্রমে তার সাথে দেখা হয় এগনের। এগন তাকে বলে বাচ্চা মিকেলের কথা। অবশেষে ৩৩ বছর পরে মিকেলের দেখা পায় উলরিখ। কিন্তু গুহা দিয়ে টাইম ট্র্যাভেলের আগেই ধরা পড়ে যায় বাবা-ছেলে, উলরিখের জায়গা হয় পাগলা গারদে।
এলিজাবেথ ডপলার
২০১৯ সালে স্কুলপড়ুয়া এলিজাবেথ হলো পিটার ডপলার এবং শার্লোট ডপলারের মেয়ে। একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময়ে নোয়া তার হাতে ‘ফর শার্লোট’ লেখা ঘড়ি তুলে দেয়। শহরের শেরিফ হিসেবে শার্লোট বাচ্চাদের হারানো তদন্ত করতে থাকে।
শার্লোটের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইয়াসিনকে টাইম মেশিন প্রোটোটাইপ বানানোর গিনিপিগ হিসেবে খুন করে নোয়া। ২০২০ সালে অ্যাপোক্যালিপ্স হবার সময়ে বাবার সাথে বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে যায় এলিজাবেথ।
২০১৯-ইয়োনাস টাইম ট্র্যাভেল করে ২০৫২ তে গিয়ে অ্যাপোক্যালিপ্স পরবর্তী পৃথিবীর নেত্রী হিসেবে আবিষ্কার করে এলিজাবেথকে। ফাঁসির হাত থেকে তাকে বাঁচায় এলিজাবেথ।
পরবর্তীতে দেখা যায়, নোয়া এবং এলিজাবেথের সন্তান হলো শার্লোট, অর্থাৎ শার্লোট একই সাথে এলিজাবেথের মা এবং মেয়ে। নোয়া টাইম ট্র্যাভেল করায় এটা সম্ভব হয়েছে। ২০২০ এ শার্লোট এবং এলিজাবেথ আঙুলে আঙুল ঠেকানোর সময়ে অ্যাপোক্যালিপ্স সংঘটিত হয়।
ক্লডিয়া টিডাম্যান
১৯৫৩ সালে ক্লডিয়া এবং ট্রন্টের মাঝে বন্ধুত্ব ছিল। সেই সাথে হেলগেও তার বন্ধু ছিল। তার বাবা এগন টিডাম্যান। সে ছোট থেকেই মেধাবী, ১৯৮৬ সালে প্রথম নারী সিইও হিসেবে নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টে যোগ দেয়া সেটারই ফলাফল। তার মেয়ে রেজিনার বাবা কে সেটা এখনো পরিষ্কার হয়নি। রেজিনাকে সাহায্য করায় অবৈধ পাসপোর্টওয়ালা আলেক্সান্ডারকে প্ল্যান্টে চাকরি দেয় সে, প্ল্যান্টের বর্জ্য গুহার মধ্যে অবৈধভাবে সিলগালাও করে দেয় তাকে দিয়ে। গুহার মধ্যে হারানো কুকুর খুঁজে পেয়ে আর হেলগের কাছে থেকে ‘অ্যা জার্নি থ্রো টাইম’ বইটা পেয়ে টাইম- ট্রাভেলের ব্যাপারটা বের করে সে।
আশির দশকে নিজের বাবার মৃত্যু ঠেকাতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত সে-ই তাকে খুন করে ফেলে। আশির দশক থেকে টাইম ট্র্যাভেল করে ইয়োনাসের সাথে চলে আসায় ১৯৮৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত রেজিনা তার কোনো খোঁজ পায়নি।
রেজিনা- আলেক্সান্ডারের সন্তান বার্তোশের সাথে তার প্রথম দেখা হয় ২০১৯ সালে। কিন্তু ২০১৯ সালের বৃদ্ধ ক্লডিয়া একাধিকবার বিভিন্ন সময়ে টাইমট্র্যাভেল করেছে, ট্যানহসের টাইমমেশিন সম্ভবত সেই আবিষ্কার করেছে তার পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞান দিয়ে। আর ১৯৫৩ সালে ট্যানহসকে টাইম মেশিনের নীলনকশা দিয়েও আসে সে। তার কাছে আছে লুপের ঘটনা লেখা নোয়া/২০৫২-ইয়োনাসের জার্নাল, যার কয়েক পাতা বাদ দিয়ে সে ট্রন্টকে দিয়ে যায়। বহুদিন সে কাজ করেছে সিক মুন্ডাসের বিরুদ্ধে। নোয়াকে সে বলে যে অ্যাডাম তাকে ভুল বোঝাচ্ছে, নিখুঁত চক্র কোনোদিনই আসবে না। নোয়া বিভ্রান্ত হয়, তবে ক্লডিয়াকে গুলি করে হত্যা করে।
নোয়া
নোয়ার জন্মের ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। প্রথম সিজনে সে-ই ছিল মূল ভিলেন। একের পর এক বাচ্চাকে অপহরণ করে আশির দশকের থিমওয়ালা বাঙ্কারে আটকে রাখা আর তাদেরকে টাইম মেশিন বানাতে গিয়ে খুন করাই ছিল তার কাজ। এই কাজে সে ১৯৮৬ সালের হেলগের সাহায্য নিতো। পরবর্তীতে ২০১৯ এ এসে বার্তোশের সাথে দেখা করা শুরু করে সে। লক্ষণীয়, হেলগের বাবা বার্নডট এবং বার্তোশের বাবা আলেক্সান্ডার দুইজনেই প্লান্টের প্রধান।
নোয়ার পিঠের ট্যাটুর সাথে এমারেল্ড ট্যাবলেটের মিল পাওয়া যায়, যার সাথে যোগ আছে গুহার দরজায় লেখা কথাটার (‘sic mundus creatus est’ যার অর্থ ‘আর এভাবেই সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবী’)। নোয়া অ্যাডামের হয়ে কাজ করে, তার বিপক্ষের দল ক্লডিয়া এবং ২০৫২-ইয়োনাস। নোয়া এমন একটা টাইম মেশিন বানাতে চাচ্ছিল যেটা ৩৩ বছরের লুপের বাইরে যেকোনো সময়ে নিয়ে যেতে পারবে।
পরবর্তীতে জানা যায় যে ১৯২১ সালের তরুণ নোয়াও অ্যাডামের হয়ে সিক মুন্ডাসে কাজ করত। কোনো একসময়ে এলিসাবেথের সাথে তার সম্পর্ক হওয়ায় জন্ম নেয় শার্লোট। তার সাথে ২০১৯-ইয়োনাসের বন্ধুত্ব হবে ভবিষ্যতে।
প্রাপ্তবয়স্ক নোয়া পোর্টাল ব্যবহার করে ১৯৮৬ কিংবা ২০১৯ সালে বিভিন্নজনের কাছে দেখা দেয়। উলরিখের দাদী অ্যাগ্নেস হলো তার বোন। তারা দুইজনেই অ্যাডামের দলে। ক্লডিয়াকে মারার পর নোয়া যখন অ্যাডামকে খুন করতে যায়, তখন অ্যাগ্নেসই বেঈমানি করে তাকে গুলি করে হত্যা করে।
হেলগে ডপলার
সিরিজের আরেক হতভাগ্য চরিত্র, পিটার ডপলারের বাবা। উলরিখ মনে করেছিল, হেলগেকে মেরে ফেললে চক্র ভেঙে যাবে, ফলে বাচ্চাদের অপহরণ বন্ধ হবে। তাই সে ১৯৫৩ সালের শান্তশিষ্ট হেলগেকে আক্রমণ করে এবং ইট দিয়ে তার মাথা থেঁতলিয়ে দেয়। শিশু হেলগে যখন ১৯৫৩ সালে কেবিনে ছিল, তখন ওয়ার্মহোল খুলে যায়, আর ইয়োনাসের সাথে আঙুল মেলানোয় সে চলে আসে ১৯৮৬তে। তারপর নোয়া তাকে নিয়ে গবেষণা করে তাকে ১৯৫৩তে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়। সবকিছুই ঈশ্বরের ইচ্ছা এই ধারণা ঢুকিয়ে দেয় তার মনে।
১৯৮৬ সালে সে প্লান্টের একজন কর্মচারী। ক্লডিয়ার হাতে টাইম ট্র্যাভেলের বই তুলে দেয় সে। নোয়া তাকে দিয়ে ম্যাডস, এরিক, ইয়াসিনকে অপহরণ করায়। দুঃখের জীবনে পরিবর্তন আসবে, এই আশায় হেলগে নোয়ার হয়ে খুনগুলো করে টাইমমেশিন বানাতে সাহায্য করে। নীল বাঙ্কারটা আসলে হেলগের কেবিনের মধ্যে, যার নিচে দিয়ে গুহার সুড়ঙ্গ গেছে।
২০১৯ সালে ৭৫ বছরের আধপাগলা বুড়ো হেলগে এই চক্র ভাঙতে চায়। কিন্তু বয়সের কারণে স্মৃতিভ্রংশ হয়ে গেছে তার। তারপরেও সে অতিকষ্টে ঘটনাগুলো মনে করে এবং টাইম ট্র্যাভেল করে ১৯৮৬ সালে যায়।
ইন্সপেক্টর ক্লসেন
উইন্ডেন শহরের নিখোঁজ কিশোরদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিয়ে শহরে আসে সে। বড় কথা হলো, তার নিজের ভাই, আলেক্সান্ডার কোহলারও নিখোঁজ হয়েছিল। রেজিনা টিডাম্যানের স্বামী আশির দশকে এই নামের আইডি নিয়েই পালিয়ে এসেছিল উইন্ডেন শহরে। পরে সে স্ত্রীর নামে আলেক্সান্ডার টিডাম্যান নামে পরিচিত হয় আর নিজের পরিচয় (বোরিস নিওয়াল্ড) মাটিচাপা দিয়ে ফেলে।
ক্লসেন তার দক্ষ গোয়েন্দাগিরি দিয়ে ঠিকই নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের লুকোছাপা এবং আলেক্সান্ডারের অতীত নিয়ে সন্দেহ করে বসে। তাকে গ্রেপ্তার করার পরে পাওয়ার প্ল্যান্ট তদন্ত করতে গিয়ে সেখানকার মাটির নিচে থাকা নিউক্লিয়ার বর্জ্য আবিষ্কার করে ক্লজেন ও তার দলবল। পরে সেই বর্জ্য থেকেই সৃষ্টি হয় ওয়ার্মহোল এবং সংঘটিত হয় ২০২০ সালের অ্যাপোক্যালিপ্স।
মার্থা
সত্যি বলতে মার্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র না। টাইম ট্র্যাভেল না করার কারণে তার কাহিনী সোজাসাপ্টা। মিকেলের বোন হবার কারণে সে ইয়োনাসের ফুপু, এই টুইস্ট বাদে তেমন কিছু ছিল না। সিজন ২ এর শেষে এসে অ্যাডাম খুন করে মার্থাকে। ফলে ইয়োনাস বোঝে, নতুন চক্র শুরু করা ছাড়া আর উপায় নেই। শেষ মুহূর্তে আসে চমক। অ্যাপোক্যালিপ্স হবার সময়ে ভিন্নরূপী এক মার্থা এসে জানায়, সে অন্য সময় থেকে না, অন্য জগৎ থেকে এসেছে। ফলে সামনে হয়তো আমরা মাল্টিভার্স দেখতে পাবো।
৩য় সিজনের আগ পর্যন্ত এখনো পুরো চক্র সম্পূর্ণ হয়নি। অনেকের অভিযানই বাকি রয়ে গেছে। ২য় সিজন পর্যন্ত সবার মধ্যেকার সম্পর্ক এখনো খোলাসা হয়নি। সিজন ৩ এই পাজলের বাকি অংশগুলো মিলিয়ে দেবে। আপনারা যারা ৩য় সিজন দেখা শুরু করবেন উপরের তথ্যগুলো জট খুলতে সাহায্য করবে।
সিরিজের ১ম সিজনের রিভিউ পড়তে চাইলে দেখুন এখানে: ডার্ক: নেটফ্লিক্সের মাথা ঘোরানো দুর্দান্ত এক সিরিজ