Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

একটি ম্যাগাজিন, একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক এবং একজন ‘কালচারাল আইকন’ হয়ে উঠবার গল্প!

LIFE (2015)

আইকনিক স্টার জেমস ডিন, তখনও আইকন হননি। গ্রেট পরিচালক কাজানের সাথে ‘ইস্ট অভ ইডেন’ সিনেমার কাজ সবে শেষ হয়েছে। সিনেমা তখনও মুক্তি পায়নি। মুক্তির পর পরই তো বদলে যায় সবকিছু। জেমস ডিন রাতারাতি সুপারস্টার। এই গল্পকে সেভাবে জেমস ডিনের বায়োগ্রাফি বলা যায় না। বরঞ্চ মাত্র ২৫ বছরের ক্ষণজীবন থেকে কয়েকটি মাসের গল্প বলে এই সিনেমা। তা-ও মূলত ফটোগ্রাফার ডেনিস স্টকের সাথে তার বন্ধুত্বের কথা। ডেনিসের বয়স একেবারে কাঁচা। দুজন বলতে গেলে সমবয়সীই। ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করে ১৭ বছরে বাচ্চার বাপও বনে যায়। কিন্তু দায়িত্ব নিতে শেখেনি। জেমস ডিনের সাথে ডেনিসের প্রথম পরিচয় হয়েছিল গ্রেট পরিচালক নিকোলাস রে’র বাড়িতে।

নিক রে তার কালজয়ী সিনেমা ‘রেবেল উইদাউট আ কজ’ (১৯৫৫) চিত্রনাট্য শেষ করে কাস্টিং ঠিক করেছে। ওদিকে ডেনিস, লাইফ ম্যাগাজিনের স্থিরচিত্রগ্রাহক। এর আগে নেভিতে ছিল। কিন্তু ও কাজে তার মন নেই। সে ছবি তুলতে চায়। কিন্তু তুলতে চায় শৈল্পিক সব ছবি। আর্টিস্টিক ইন্ডালজেন্স অক্ষুণ্ণ রেখে ছবি তুলতে চায়। কিন্তু ম্যাগাজিন তাকে দিয়ে তোলাতে চায় কমার্শিয়াল ছবি। হুট করে এই উঠতি তারকা জেমস ডিনের মধ্যেই সে তার ছবির সাবজেক্ট খুঁজে পায়। ডিনের অদ্ভুত স্বভাব, ভিন্নরকম লাইফস্টাইল, র কথাবার্তা তাকে আকর্ষণ করে। কিছু একটা আছে এই ছেলের মধ্যে, তা সে বুঝতে পারে। ডেনিস, ডিনের উপর একটা ফটো-এসে করতে চায়। যা ডিনকে জনপ্রিয় বানাবে (এবং বাস্তবে তা-ই হয়েছিল শেষাবধি। টাইম স্কয়ারের সামনে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে ওভারকোটকে আরো টেনে, ঠোঁটের কোণে সিগারেট ধরে রাখার যেই বিখ্যাত ছবি- সেটা এই ডেনিসেরই তোলা।)

টাইম স্কয়ারের সামনে, বিখ্যাত সেই ছবি তোলায় ব্যস্ত ডেনিস; Image Source: Imdb

ডিন তো কখনোই অমন সিরিয়াস ছিল না। গ্লাসের পর গ্লাস মদ খেয়ে, একের পর এক সিগারেট জ্বালিয়ে আড়ষ্ট ভঙ্গীতে কথা বলাই ডিনের জন্য যথেষ্ট। ওদিকে লাইফ ম্যাগাজিন এক অখ্যাত ছেলের উপর ফটো-এসে’র বিষয়ে রাজি হয় না। কিন্তু ডেনিস নাছোড়বান্দা। সে সেটা সম্ভব করেছিল। প্রেমিকা ছেড়ে যাবার বিরহ আর এক অদ্ভুত শূন্যতায় বুঁদ থাকা ডিনকে সে সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত ঠেলেছিল। শেষে ডিন রাজি হয়েছিল। ইন্ডিয়ানায়, তার পরিবারের কাছে থাকার সেই দুটো দিনই ডিন আর ডেনিসের বন্ধুত্বের সবচেয়ে সুন্দর সময় ছিল। ডেনিসের উদ্দেশ্যও পূরণ হয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পর জেমস ডিন তখন জনপ্রিয় নাম। ‘ইস্ট অভ ইডেন’ মুক্তি পেয়েছে। ডিনের জয়জয়কার। অন্যদিকে ডেনিস সফল হয়েছে, তার আর্টিস্টিক অ্যাম্বিশনকে টিকিয়ে রাখতে।

সেবারই ডিনের শেষ বাড়ি ফেরা ছিল। সিনেমা শেষ হতে হতে দর্শক জানতে পারে, ডিন আর ডেনিস দুজনের আলাদা ক্ষেত্রের খ্যাতি আর সফলতার কথা। ‘রেবেল উইদাউট আ কজ’-এর শ্যুটিংয়ের আগে ডেনিস যে সেবার না করে দিল ডিনের সাথে যাওয়ার ব্যাপারে, সেই জায়গার অকস্মাৎ নীরবতা- যা দুজনের মনের বৈরীতাকেই নির্দেশ করে, সেটায় জমে থাকা দুঃখবোধ আবেগে অনেক তীব্রভাবে আঘাত করে। ডেনিস জানতো না, ডিনের আয়ুষ্কাল ফুরাতে যাচ্ছে শীঘ্রই। কিন্তু ডিন তো একাকিত্ব বয়ে বেড়াচ্ছিল শুরু থেকেই। 

পরিচালক অ্যান্টন করবিন গোটা সিনেমা ধরে মূলত মুডকেই তৈরি করেছেন। এবং সেটাই দর্শকমনে প্রভাবক আকারে ছড়াতে চেয়েছেন। সেটা ছাড়া তো একরকম প্লটলেসভাবেই এগোয় সিনেমাটি। ‘লাইফ’ (২০১৫) মূলত জেমস ডিনের সাথে ডেনিসের বন্ধুত্বের গল্পই বলতে চেয়েছে। সেটার মধ্যেই করবিন তার আর্টিস্ট্রি খুঁজে পেয়েছেন। কী এমন বিশেষত্ব? বিশেষত্ব হলো, তারা দুজনেই লস্ট সোল। যারা এই বিশালত্বের মাঝে নিজেদের ক্ষুদ্র অস্তিত্বকে খুঁজতে গিয়ে খাবি খেতে থাকে বার বার। তারা দুজনেই এমন দুটি প্রাণ, যারা আটকে গেছে ভুল জালে। ডেনিস তো তুলতে চায় শৈল্পিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এমন ছবি। ওসব কমার্শিয়াল ছবি সে তুলতে চায় না। তাই নিখুঁত সাবজেক্ট হিসেবে সে খুঁজে পেয়েছিল জেমস ডিনকে। প্রথম দর্শনেই বুঝতে পেরেছিল, কিছু একটা আছে এই ছেলের মধ্যে। বৈচিত্র্যময় চরিত্র, তার মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা, জৌলুসতা নেই।

তবে সবচেয়ে বড় কথা, তাকে (ডিনকে) দেখলেই মনে হয় এক অপার শূন্যতা তাকে ঘিরে আছে। হ্যাঁ, শূন্যতাই যে ঘিরে ছিল ডিনকে। কোনোকিছুর মধ্য দিয়ে জীবনের সর্বোচ্চ মিনিং বা অর্থকে সে বোঝার চেষ্টা করছে। সামনে ছিল অভিনয়। তাই অভিনয়ে, নানা চরিত্রে প্রবেশ করে সেই অর্থ পাওয়া যায় কি না; সেই অনুসন্ধানই করে গেছে ডিন। নিগূঢ় বিষাদে তলিয়ে থেকেও। 

সেবার, ইন্ডিয়ানায়… ডেনিস আর জেমস ডিনের শেষ দুটো দিন; Image Source: Imdb

ডিন আর ডেনিস, দুজনের মাঝে আরো একটি সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাপার হলো, এই দুজনেরই ম্যাচিউরিটি সময়ের আগে এসেছে। খুব অল্প বয়সেই নানামুখী অভিজ্ঞতার সম্মুখীন তাদের হতে হয়েছে। শৈশব প্রগলভতাকে আপন করে নেবার সুযোগ পায়নি তারা। বেড়ে ওঠা হয়ে গেছে সময়ের পূর্বেই। তাই টিনেজ যে জটিলতাগুলো সেই বয়সে ঘিরে ধরে, তাদের ক্ষেত্রে সেসব হয়েছে আরো অভিঘাতপূর্ণ। সেকারণেই পরবর্তী বয়সে একাকিত্ব, বিচ্ছিন্নতা আর বিষাদ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে।

কিন্তু প্রকাশের ক্ষেত্রে তারা সবসময় চাপা। অনেক বেশি নুন্যোক্ত। জেমস ডিনের বাবার বাড়ি, ইন্ডিয়ানায় যাবার সময়কার একটা সিন আছে, যেখানে জেমস ডিনকে প্রথমবারের মতো ভেঙে পড়তে দেখা যায়। মানে আবেগকে পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে দেখা যায় ওই দৃশ্যে। সন্দেহাতীতভাবেই সিনেমার সবচেয়ে ড্রামাটিক সিন সেটি। এবং তখন গিয়েই, জেমস ডিনকে অনেকখানি বুঝতে পারা যায়। তা-ও পুরোপুরি না। কারণ, জেমস ডিন সবসময়ই মিস্ট্রিয়াস। প্রকাশে নুন্যোক্ত। অলস আর আড়ষ্টতায় বিষাদ লুকাতে চাওয়া একজন। 

ওদিকে ডেনিস তো ক্রমাগত সংগ্রাম করে চলেছে তার বৌ-বাচ্চাকে সময় দিতে, আর্থিক স্বচ্ছলতা দিতে। এর মধ্যে আবার ‘লাইফ’ ম্যাগাজিনের সম্পাদকের সাথে তার সংগ্রাম চলছে, ডিনের ফটো এসে’র ব্যাপারে তাদেরকে রাজি করানো নিয়ে, যার মূলে আছে ডেনিসের শৈল্পিক ক্ষুধা। আবার জেমস ডিন নিজেই তো পূর্ণ মাত্রায় হেয়ালি আর ছন্নছাড়া থাকতে চাওয়া একজন। তাকেও সর্বদা তাগাদা দিতে হয় ডেনিসের। ভেঙে পড়ে অনেকবার (ডেনিস), তবে হাল ছাড়ে না। ওই ফটো এসে করতে চাওয়ার পেছনে তার শৈল্পিক ক্ষুধা নিবারণের উদ্দেশ্য যেমন আছে, তেমনি ডিনকে তুলে ধরার চেষ্টাও কিছু কম নেই। জেমস ডিনের পৈতৃক ভিটায় থাকার সেই কয়েক দিনেই, ডিনকে গভীরভাবে বুঝতে পেরেছিল ডেনিস। তার চমৎকার ছবির বেশিরভাগই ওখানে তোলা। 

নাছোড়বান্দা ডেনিস, রাজি করাচ্ছিল ডিনকে; Image Source: Imdb

(পরিচালক) অ্যান্টন করবিন নিজেও একজন ফটোগ্রাফার। কমার্শিয়াল নয়, সম্পূর্ণ শৈল্পিক দিকেই মনোযোগী তিনি। তাই বোধকরি, এই গল্প; বিশেষত এই ডেনিস চরিত্রের প্রতি তার একটা অন্তরঙ্গ সংযোগ তৈরি হয়েছে। ব্রায়ান এডামস, নির্ভানা, কোল্ড প্লে’র গানের মিউজিক ভিডিও পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু। সিনেমা বানিয়েছেন হাতেগোণা কয়েকটি। শৈল্পিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পেয়েছেন যেসবে, সেগুলোই বানিয়েছেন। সেই সূত্রেই এমন ভিন্নরকম এপ্রোচের সিনেমাটি বানিয়েছেন। 

ভিজ্যুয়ালের দিক থেকে খুব যে ল্যান্ডস্কেপ নির্ভর হয়েছে এই সিনেমা; তা কিন্তু নয়। অত বড় ক্যানভাসে জেমস ডিনের এই গল্প চিত্রায়িত হয়নি, যেটা হয়তো একরকম প্রত্যাশিতই ছিল। সিনেমার বাধাধরা বাজেট এক্ষেত্রে যৌক্তিক একটি কারণ। বাজেট স্বল্পতার কারণে অত সমৃদ্ধ প্রোডাকশন ডিজাইন করা হয়নি। তাই করবিন ল্যান্ডস্কেপ বাছাই করেছেন সতর্কতার সাথে, একদমই চিহ্নিত কিছু জায়গায়। প্রয়োজন না পড়লে, অত বেশি শূন্য স্পেস ক্যামেরায় তোলেননি। এমনিতেই স্পেস ক্যামেরায় উঠেছে যথেষ্টই। করবিন তৈরি করেছেন সিনেমার আবহ; মিড ক্লোজ আর মোটিভেটেড ব্লকিংয়ে থেকে। একদমই মুডি/গম্ভীর আবহের সিনেমা। এই মুডই দর্শককে আকর্ষণ করে ধরে রাখা। সেই দক্ষতা আর নিয়ন্ত্রণ অ্যান্টন করবিনের মাঝে আছে।

ডিন আর ডেনিস যে শূন্যতা নিজেদের মাঝে অনুভব করে, সেটা সিনেমার সামগ্রিক বাতাবরণেও ভালোভাবে অনুভব করা যায়। এবং প্রায় নিখুঁত কাস্টিংও এক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগীতা করেছে। জেমস ডিনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডেইন ডেহান। ডিনের অলসতা, কথা বলার ক্ষেত্রে আড়ষ্টতা; ধীরতা- এগুলোকে নৈপুণ্যতার সাথে ধারণ করেছেন ডেহান। ওদিকে ফটোগ্রাফার ডেনিস স্টকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রবার্ট প্যাটিনসন। তার অনুসন্ধিৎসু স্বভাব আর এক্সপ্রেসিভ চোখ, চরিত্রের ভেতরটা স্বচ্ছ জলে প্রতিভাসিত হওয়া প্রতিচ্ছবির মতো দেখতে সাহায্য করে। এই ক্ষমতা নিজের অভিনয়ে ধারণ করতে পারা সহজ কথা নয়। প্যাটিনসন তা অনায়াসে পারেন। ডেনিস স্টকের শূন্যতা, শৈল্পিক ক্ষুধা, ডেস্পারেশন সবকিছু চমকিত হবার মতো সুস্পষ্ট; সহজ আর বহুমাত্রিক হয়ে ওঠে প্যাটিনসনের অভিনয়ের সহজাত গুণে। তাকে যদি ডেনিস স্টকের চরিত্র না দিয়ে, জেমস ডিনের চরিত্রটাই দেওয়া হতো; তবে কতটা দারুণ করতেন- এই কৌতূহল চাপা দেওয়া বেশ কঠিনই। লাইফ ম্যাগাজিনের সিনিয়র সম্পাদক হিসেবে জোয়েল এডগার্টনের অভিনয় এবং স্টুডিও মোঘল জ্যাক ওয়ার্নার (ওয়ার্নার ব্রাদার্স-এর একজন) চরিত্রে বেব কিংসলের ক্যামিও সুন্দর কিছু বিট যোগ করেছে।

ডেনিস আর জেমস ডিনের সেবারই শেষ দেখা, শেষ যাত্রা; Image Source: Imdb

ভিন্নরকম অ্যাপ্রোচ ও ন্যারেটিভ আর্ক, শৈল্পিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে জিইয়ে অ্যান্টন করবিনের দক্ষ পরিচালনা আর রবার্ট প্যাটিনসন এবং ডেইন ডেহানের কমনীয় এক বন্ধুত্বপূর্ণ রসায়নের উপর ভর করে ‘কালচারাল আইকন’ জেমস ডিনের স্বল্পায়ু জীবন ও ক্যারিয়ারের সবটার উপর না হলেও, ‘আইকন’ হয়ে উঠবার আগের সময়, নিভৃতচারী জীবন, প্রেমের সম্পর্কে প্রতারিত হওয়া, বিষণ্নতা, বন্ধুত্ব, সর্বোপরি সে যে একজন স্বকীয় এবং সৎ শিল্পী/অভিনেতা- এসবকে ন্যারেটিভে রেখে একটা ভালো ট্রিবিউট হয়েছে লাইফসিনেমাটি। যে ‘লাইফ’, লাইফ ম্যাগাজিন এবং আক্ষরিক অর্থে দুটি লাইফ বা জীবনের একই উদ্দেশ্য অন্বেষণের খণ্ডচিত্র!

This article is a review of the film 'LIFE' (2015), which depicts the slice of life and friendship story of the youth icon; a film star JAMES DEAN and photographer Dennis Stock. It's a non-conventional film with an intimate approach. A sensational tribute.

Feature Image- Rotten Tomatoes

Related Articles