Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এলা ভিজহা পুনচিরা: পাহাড়চূড়ায় রিভেঞ্জ আর ভয়ের আখ্যান

মালায়লম ইন্ডাস্ট্রির ব্যাপারে খোঁজখবর রাখেন এমন লোকেদের কাছে শাহী কবির এক পরিচিত নাম। তিনি ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে। লিখেছেন জোসেফ (২০১৮) এবং নায়াট্টু (২০২১)-এর মতো সিনেমার চিত্রনাট্য। এলা ভিজহা পুনচিরা (২০২২)-এর মাধ্যমে ডিরেকশনে তার হাতেখড়ি হলো। স্ক্রিপ্টরাইটিংয়ের মতো ডিরেকশনেও তার চরিত্ররা পুলিশের সদস্য। গল্পের প্রেক্ষাপট ভূমি থেকে ৩,২০০ ফুট উচ্চতায়। এর গল্প লিখেছেন নিধীশ জি এবং শাজী মারাদ। উভয়েরই পুলিশের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে। শাহীর লিখিত গল্পের মতো এখানেও মিনিমালিজম সিনেমার মুখ্য একটি বৈশিষ্ট্যরূপে প্রতীয়মান হয়। 

ভোরবেলায় উঁচু পর্বতের পাথুরে বক্ষ। চারদিকে আলো কম, কুয়াশার সাথে মিশে যাচ্ছে মেঘ। এমন পরিবেশে আপন মনে ঘুরছে-ফিরছে একটি কুকুর। খানিকক্ষণ খেলাধুলার পর কুকুরটি কোনোকিছুতে জড়িয়ে থাকা একটি পলিথিন সরালো। তারপর সেখান থেকে সরে গেল। কিন্তু কুকুর সরে গেলেও আমরা দৃষ্টি সরাতে পারি না। কারণ? পলিথিনটি যে জড়িয়ে ছিল কারো খন্ডিত পায়ের পাতায়! 

হঠাৎ করেই নৈসর্গিকতা তার সারল্য হারিয়ে ফেললো!

পরিচালক শাহী কবির; Image Credit : The Hindu

ওপেনিং ক্রেডিটের শেষে আমরা দেখতে পাই টেকো মাথার এক ব্যক্তিকে। পরনে তার চিরায়ত মালায়ালী পুরুষের পোষাক, লুঙ্গি আর শার্ট। ব্যাগ কাঁধে সে উঠে বসে একটি বাসে। খানিক পরেই আবার জায়গা বদলায়। বিড়ি ফোঁকার জন্য বাইরে যায়। আবার ফিরে আসে। বাস চলতে শুরু করে। লম্বা সফরে তার মুখ দিয়ে একটি কথাও বের হয় না। মনের ভেতর কিছু একটা চলছে তার। বাসের কন্ডাক্টর যখন টিকিটের পয়সা চায়, তার পাশে বসে টিকেট কেটে দেয়, পয়সা ফেরত দেয়; তখনও তার মুখে কোনো রা নেই। এভাবেই বাস পৌঁছায় তার গন্তব্যে। কিন্তু বাসের পথচলা শেষ হলেও লোকটার পথচলা শেষ হয় না। বাজার-সদাই নিয়ে জীপে চড়ে তাকে যেতে হয় পাহাড়চূড়ায়। সেখানেই তার কর্মস্থল। পরে আমরা জানতে পারি- লোকটার নাম মাধু (সৌবিন শাহির)। সে চাকরি করে কেরালার কোট্টায়াম রাজ্যের ওয়্যারলেস পুলিশে। 

কোনোকিছুর কামড়ে চোখের পাতা ফুলে যাওয়া মাধুর কম কথা বলা বা ভাবলেশহীন আচরণের বাইরেও একটা জিনিস আমরা লক্ষ্য করি। সেটা হলো একধরনের অস্বাভাবিকতা। কিছু মানুষ তো থাকে যারা কম কথা বলে কিংবা আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে না। কিন্তু তার এসব আচরণের পেছনে যেন আরো গূঢ় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। এটি আরো বেশি প্রতীয়মান হয় জিপে করে তার যাত্রার সময়, পায়ে হেঁটে পাহাড়ে আরোহনের সময়। সে যেন নিজের ভেতর নেই। তাকে কোনো কিছু কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। কিন্তু সে প্রকাশ করতে পারছে না। 

মাধু চরিত্রে সৌবিন শাহির; Image Credit : Kadhaas Untold

পাহাড়ের ওপর নিজের কর্মস্থলে যাওয়ার পথে মাধু কিছু পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় যেগুলো গল্পের আসন্ন পট পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে। কিছু দৃশ্য রূপক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। পথিমধ্যে তার সাথে দেখা হয় পরিচিত মুখ জোশী (কিরান পিতাম্বরন)-এর সাথে। দুজনের কথোপকথনে সে জানতে পারে যে, তার স্টেশনের বড় কর্তা ভেনকায়াম (জিতু অ্যান্থনি জোসেপ) আগামীকাল ছুটিতে যাচ্ছে। এবং সহকর্মী সুধী (সুধী কোপ্পা) কালই ছুটি থেকে ফিরে কর্মস্থলে যোগ দেবে। কথায় কথায় জোশী মাধুর ব্যাগে গরুর মাংস আছে বলে ধরে নেয়। সাধারণত দক্ষিণ ভারতের হিন্দুরাও গরুর মাংস খেলেও, ভেনকায়াম খায় না। সে পুরোদস্তুর নিরামিষভোজী। এটা সহ তার ধর্মপরায়ণতা নিয়ে সহকর্মীরা বাঁকা কথা বলে আড়ালে। এই ব্যাপারটা আমরা পুরো সিনেমাজুড়েই দেখতে পাবো।

অবশেষে মাধুর যাত্রা শেষ হয়। সে পৌঁছায় নিজের কর্মস্থলে। ভেনকায়াম এবং সুধী উভয়ের সাথে তার দেখা হয় একে একে। এ অংশে এসে পরিচালক গল্প বলার গতি খানিকটা কমিয়ে দেন। আমাদেরকে তিনি তিন হাজারের চেয়েও অধিক উঁচুতে অবস্থিত কর্মস্থলে পুলিশদের পৃথিবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। আমরা দেখতে পাই তাদের জীবনযাপনের পদ্ধতি। পরস্পরের সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়া এবং সম্পর্কের স্বরূপও অবলোকন করি। দেখতে পাই ওয়্যারলেস স্টেশন কেন আছে এবং সেখানে পুলিশদের পোস্টিংই বা কেন হয়। এভাবে স্টেশনের সদস্যরা কেমন, তাদের মানসিকতা এবং মোটিভেশনের সাথেও দর্শকের পরিচয় ঘটে। এদের সকলের প্রাণী প্রেমের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এলা ভিজহা পুনচিরা ওয়ারল্যাস স্টেশন; Image Credit : Kadhaas Untold

এভাবে একসময় দুই ছেলেসহ স্টেশনে আসেন এক মা। তার স্বামী এই স্টেশনেই কাজ করেছেন আগে। আগতদের সাথে ঘটা একটা ঘটনার অনুসন্ধানে নিজের দলবল নিয়ে হাজির হন ইন্সপেক্টর জিন্টো (জীতু আশরাফ)। পারিবারিক সমস্যায় যার জীবন বিপর্যস্ত, মেজাজের পারদও চওড়া। একে বকছেন, তাকে ধমকাচ্ছেন। হঠাৎ করেই একটি কল আসে জিন্টোর মোবাইলে। তড়িঘড়ি করে অনুসন্ধান পুরোপুরি সমাপ্ত না করেই সকলকে গাড়িতে উঠতে বলেন তিনি। ডাক পড়েছে অন্য জায়গায়। পরে আমরা জানতে পারি রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে এক নারীর মৃতদেহের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ পাওয়া যাচ্ছে। এসব অংশ এতটাই ক্ষুদ্র যে ফরেনসিক ডাক্তাররা সঠিকভাবে কিছুই বলতে পারছেন না। তার ওপর সুচতুরভাবে ফিঙ্গারপ্রিন্টও গায়েব করে ফেলা হয়েছে। এতে মাথা খারাপ হবার দশা হয় পুলিশের। হাজার চেষ্টা করেও কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়া যায় না। বাড়ে কেবল মৃতদেহের টুকরোর সংখ্যা। 

এরকম একটা পরিস্থিতিতে সুধীকে আমরা একটি কুকুরের পেছনে দৌড়াতে দেখি। কুকুরের পেছনে ছুটতে ছুটতেই সে পাহাড়ের ওপরে আবিষ্কার করে একটি কাটা হাত। কিন্তু সে কিছু করতে পারার আগেই তার পেছনে পিস্তল তাক করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় মাধুকে! 

কী হলো শেষ পর্যন্ত? কীভাবে হাতটা এখানে এলো? আমাদের পরিচিত মাধুই কি তবে খুনী? 

জানতে হলে দেখতে হবে ১০২ মিনিট দৈর্ঘ্যের সিনেমাটি। 

সুধী চরিত্রে সুধী কোপ্পা; Image Credit : Kadhaas Untold

এলা ভিজহা পুনচিরা-এর কারিগরি দিক বর্ণনা করতে গেলে শাহী কবিরকে বাহবা দিতে হবে। নিজের ডেব্যু প্রজেক্টের সর্বময় নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই ছিল। তিন অংকে কখনো স্বাভাবিক, কখনো ধীরলয়ে, অথবা কখনো স্টোরিটেলিংয়ের গতি বাড়িয়েছেন স্বীয় প্রয়োজনবোধে। এই ব্যাপারসমূহ ছিল সংসক্ত। সাথে ছিল পুলিশের সহজাত ভাবনার পদ্ধতির প্রতি সরাসরি খোঁচা। ডিরেক্টরসহ স্ক্রিপ্ট রাইটারদের পুলিশি যোগের কারণে কোথাও কোনকিছু আরোপিত মনে হয়নি। শ্যামল প্রকৃতির কোলে তিনি যেভাবে ভয় আর সাসপেন্সের আবহ সৃষ্টি করেছেন, সেটাও তার মেধার সাক্ষ্য দেয়। এলা ভিজহা পুনচিরা নামে একটা এলাকা বাস্তবে রয়েছে কেরালার কোট্টায়াম রাজ্যে। সেটির প্রাণবন্ত সবুজ আর গল্পের করাল ভয়; উভয়ই ভাস্কর হয়েছে স্বমহিমায়। এক্ষেত্রে তার যোগ্য সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন মানেশ মাধবন এবং অনিল জনসন। প্রথমজন ছিলেন সিনেম্যাটোগ্রাফার এবং পরেরজন রচনা করেছেন সংগীত। এটিই প্রথম মালায়লম সিনেমা যেটিতে ডলবি ভিশন ফোরকে এইচডিআর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। 

এলা ভিজহা পুনচিরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো মাধু। সে-ই এই গল্পের ভীত। তার রয়েছে নানা রূপ এবং নানা অভিব্যক্তি। কখনো সে চুপচাপ, আবার কখনো সে বন্ধুবৎসল সিনিয়র সহকারী। কখনো সে জনরোষের হাত থেকে সহকর্মীকে বাঁচাতে লাঠি হাতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। আবার কখনো সহকর্মীর সাথে আদিম বুনো ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে। মলিউডের পরিচিত মুখ শাহির ক্যারেক্টার আর্টিস্ট হিসেবে প্রসিদ্ধ। এখানে মাধুকে তিনি পোট্রে করলেন পিন পয়েন্ট অ্যাকুরেসিতে। বিশেষত হন্তক আর মোটিভ সংক্রান্ত আলোচনায় বা সবশেষে তার প্রতিশোধের রূপ; দর্শককে আরো একবার তার উঁচু ক্যালিবারের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। 

The article is in Bangla Language. It contains the review of the Malayalam film Ela Veehza Poonchira (2022). Necessary sources are hyperlinked in the article.

Related Articles