২০২০ সালের ১৮ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’ ম্যাগাজিনে ‘The Real Lessons of the 75th Anniversary of World War II‘ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যেটির লেখক ছিলেন রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিনের লিখিত এই নিবন্ধটিতে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উৎপত্তি সম্পর্কে রুশ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তাঁর এই নিবন্ধটি পশ্চিমা ইতিহাসবিদদের মধ্যে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ কী ছিল? কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে পরাজিত জার্মানির ওপর যে অপমানজনক ভার্সাই চুক্তি চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, সেটির প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে। এটি সত্যি যে, ভার্সাই চুক্তি জার্মানদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে এবং এর ফলে সৃষ্ট উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারাকে ব্যবহার করেই অ্যাডলফ হিটলারের নেতৃত্বাধীন নাৎসি দল জার্মানির শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। কিন্তু হিটলার কি ভার্সাই চুক্তির প্রতিশোধ নেয়ার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেন? নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পেছনে তাঁর অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল?
বস্তুত ১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একে একে ভার্সাই চুক্তির শর্তগুলো লঙ্ঘন করতে শুরু করেন। তিনি জার্মানিতে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ পুনঃপ্রবর্তন করেন, জার্মানির সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করেন, জার্মান বিমানবাহিনীকে বিস্তৃত করেন, রাইনল্যান্ডের সামরিকীকরণ করেন এবং অস্ট্রিয়াকে জার্মানির সঙ্গে অঙ্গীভূত করেন। এগুলোর সবই ছিল ভার্সাই চুক্তির লঙ্ঘন, কিন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী শক্তি ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এগুলোকে উপেক্ষা করে। এই রাষ্ট্রগুলো হিটলারের তীব্র কমিউনিস্টবিরোধী মনোভাবকে নিজেদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের জন্য ব্যবহার করতে চেয়েছিল এবং এজন্য হিটলারের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রকল্পে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ থেকে বিরত ছিল। এসময় নাৎসি ‘তৃতীয় রাইখ’–এর চেয়ে কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নকে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো নিজেদের জন্য বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করত।
জার্মান সামরিক ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রোল্ফ–ডিটার মেলার তাঁর ‘Enemy in the East: Hitler’s Secret Plans to Invade the Soviet Union‘ বইতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উৎপত্তি সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটি প্রচলিত ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মেলারের মতে, ভার্সাই চুক্তির প্রতিশোধ নেয়া নয়, বরং প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নকে দখল করে নিয়ে সেখানে জার্মান সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটানোই ছিল হিটলারের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর মূল উদ্দেশ্য!
হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এই অধ্যাপকের মতে, পূর্বদিকে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য হিটলারের এই আকাঙ্ক্ষা কোনো নতুন বিষয় ছিল না। বরং ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে জার্মান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জার্মানদের মধ্যে এই আকাঙ্ক্ষা ছিল। জার্মান জাতীয়তাবাদী দলগুলো, প্রাশিয়ার সামন্ত শ্রেণী, এমনকি জার্মান সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে রুশদের প্রতি তীব্র জাতিগত বিদ্বেষ কাজ করত। ১৮৮৭ সালে রাশিয়ার নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত বার্নহার্ড ভন বুলোভ প্রস্তাব করেছিলেন যে, জার্মানির উচিত রাশিয়ার ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে রুশ কৃষি অঞ্চলগুলো বিধ্বস্ত করে দেয়া, রুশ উপকূলীয় শহরগুলোর ওপর বোমাবর্ষণ করা এবং রুশ শিল্প ও বাণিজ্য খাতকে ধ্বংস করে দেয়া। শুধু তা-ই নয়, বুলোভের মতে, জার্মানির উচিত ছিল বাল্টিক ও কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলগুলো থেকে রুশদেরকে বিতাড়িত করা এবং ভোলগা নদীর তীর পর্যন্ত অগ্রসর হওয়া!
তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর অটো ভন বিসমার্ক অবশ্য এইসব পরিকল্পনার তীব্র বিরোধী ছিলেন। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্সকে ইউরোপীয় রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা এবং এই উদ্দেশ্যে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিসমার্কের পদত্যাগের পর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা জার্মান পররাষ্ট্রনীতির নিয়ন্ত্রণ লাভ করে এবং তারা রাশিয়াকে পরাজিত করে পূর্ব দিকে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য আগ্রহী ছিল। ফলশ্রুতিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পূর্ব ও পশ্চিম উভয় দিকে একই সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পশ্চিম রণাঙ্গনের মতো পূর্ব রণাঙ্গনেও একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়েছিল এবং রুশ পোল্যান্ডের যুদ্ধক্ষেত্রে রুশদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সাফল্য অর্জন সত্ত্বেও ১৯১৪ থেকে ১৯১৬ সালের মধ্যে জার্মানরা রাশিয়াকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু ১৯১৭ সালের মার্চে আকস্মিকভাবে রাশিয়ায় রাজতন্ত্রের পতন ঘটলে রাশিয়া রাজনৈতিক অরাজকতায় নিমজ্জিত হয়। জার্মানরা এই সুযোগকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে সুইজারল্যান্ডে নির্বাসিত বলশেভিক নেতা ভ্লাদিমির লেনিনকে রাশিয়ায় প্রত্যাবর্তনের সুযোগ করে দেয়। তারা জানত, লেনিন রাশিয়ায় ফিরে বলশেভিক শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবেন এবং রাশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা চরম রূপ ধারণ করবে।
চতুর জার্মানদের ধারণা সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। লেনিন রাশিয়ায় ফিরে রুশ অস্থায়ী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রচারণা আরম্ভ করেন এবং ১৯১৭ সালের নভেম্বরে তাদেরকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে নেন। লেনিনের নেতৃত্বাধীন বলশেভিক সরকার প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিশাল রুশ সেনাবাহিনীকে অকার্যকর করে ফেলে। ফলে ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন জার্মানরা নতুন করে আক্রমণ শুরু করে, বলশেভিকরা সেটি প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয় এবং মার্চে অপমানজনক ব্রেস্ত–লিতোভস্কের সন্ধিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এর ফলে ইউরোপীয় রাশিয়ার বিশাল এক অঞ্চল জার্মানদের হস্তগত হয়, কিন্তু একই বছর পশ্চিম রণাঙ্গনে জার্মানদের পরাজয়ের পর জার্মানরা পূর্ব দিকে দখলকৃত ভূমি থেকে পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পূর্ব রণাঙ্গনে জার্মানদের বিজয়ের মূল কারণ ছিল জার্মানদের রাজনৈতিক কূটকৌশল, তাদের সামরিক সক্ষমতা নয়। যদি বলশেভিকরা ক্ষমতা দখল করতে না পারত, সেক্ষেত্রে জার্মানির পক্ষে এই বিজয় অর্জন করা সম্ভব হতো কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কারণ রাজতন্ত্রের পতনের পরও রুশ অস্থায়ী সরকার জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। কিন্তু জার্মান উগ্র জাতীয়তাবাদীরা এই বিজয়কে তাদের সামরিক বিজয় হিসেবে চিহ্নিত করে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের জন্য জার্মান ইহুদি ও সমাজতন্ত্রীদের দায়ী করে।
হিটলার ক্ষমতায় আসার পর পূর্ব দিকে সাম্রাজ্য বিস্তারের এই ধারণাকে উজ্জীবিত করেন। হিটলার ও তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মীদের ধারণা ছিল যে, ‘ইহুদি’ বলশেভিকরা সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘অবমানব’ স্লাভিক ও এশিয়াটিক জনসাধারণকে শাসন করছে। হিটলারের উদ্দেশ্য ছিল এই ‘ইহুদি’ বলশেভিকদের উৎখাত করে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড দখল করে নেয়া এবং সেখানে জার্মান উপনিবেশ স্থাপন করা। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য হিটলার ইতালি, পোল্যান্ড, ব্রিটেন ও জাপানের সঙ্গে মিলে একটি সোভিয়েতবিরোধী জোট গঠনের পক্ষপাতী ছিলেন। এই চারটি রাষ্ট্রই ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তির অন্তর্গত এবং এদের প্রত্যেকেই জার্মানির পরাজয়ে লাভবান হয়েছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালি জাতিগত জার্মান–অধ্যুষিত দক্ষিণ টাইরল দখল করে নিয়েছিল। জার্মানির জাতিগত পোলিশ–অধ্যুষিত প্রদেশগুলোর পাশাপাশি জাতিগত জার্মান–অধ্যুষিত ডানজিগ বন্দর, পশ্চিম প্রাশিয়া ও উচ্চ সাইলেশিয়া পোল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ব্রিটেন আফ্রিকায় অবস্থিত জার্মান উপনিবেশগুলোর বড় একটি অংশ দখল করে নিয়েছিল। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত জার্মান উপনিবেশগুলো দখল করে নিয়েছিল জাপান। এরপরও হিটলার এই রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
১৯৩৪ সালে জার্মানি ও পোল্যান্ডের মধ্যে একটি অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং চুক্তিটির আলোচনা চলাকালে হিটলার পোলিশ একনায়ক মার্শাল জোসেফ পিলসুদস্কির সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর যৌথ আক্রমণ পরিচালনা করার পরিকল্পনা করেন। জার্মানি পোল্যান্ডের কাছে ডানজিগ বন্দর ফেরত চেয়েছিল এবং জার্মানি থেকে বিচ্ছিন্ন পূর্ব প্রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পোলিশ ভূমির মধ্য দিয়ে একটি করিডোর স্থাপন করতে আগ্রহী ছিল। বিনিময়ে জার্মানি পোল্যান্ডকে সোভিয়েত ইউক্রেন ও বাইলোরাশিয়া প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
১৯৩৫ সালে জার্মানি ও ব্রিটেনের মধ্যে একটি নৌশক্তি বিষয়ক চুক্তি সম্পাদিত হয় এবং এর মধ্য দিয়ে জার্মানি ব্রিটেনের সঙ্গে সামুদ্রিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য কোনো ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। ব্রিটেন যেসব জার্মান উপনিবেশ দখল করে নিয়েছিল, সেগুলোর ওপর থেকে সকল দাবি প্রত্যাহার করে নিতেও জার্মানি রাজি হয়, বিনিময়ে তারা পূর্ব দিকে জার্মানির সাম্রাজ্য বিস্তারে ব্রিটেন যেন কোনো বাধা প্রদান না করে তার নিশ্চয়তা চেয়েছিল।
১৯৩৬ সালে জার্মানি ও জাপান কমিন্টার্ন (কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল) বিরোধী একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং কমিউনিজমের বিরুদ্ধে (বস্তুত সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে) ‘যৌথ সংগ্রামে’র ব্যাপারে একমত হয়। বিনিময়ে জার্মানি প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত প্রাক্তন জার্মান উপনিবেশগুলোর ওপর জাপানি কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেয়। একই সঙ্গে জার্মানি চীনের সঙ্গে তার মৈত্রীর অবসান ঘটায় এবং ১৯৩৭ সালে জাপানের চীন আক্রমণকে সমর্থন করে।
১৯৩৭ সালে ইতালিও কমিন্টার্নবিরোধী চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং দক্ষিণ টাইরলের ওপর ইতালীয় কর্তৃত্বকে জার্মানি স্বীকার করে নেয়। বিনিময়ে ইতালি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ‘যৌথ সংগ্রাম’ পরিচালনা করতে সম্মত হয়। স্পেনের গৃহযুদ্ধে জার্মানি ও ইতালি স্পেনের সোভিয়েত–সমর্থিত প্রজাতন্ত্রী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং কমিউনিজমবিরোধী জাতীয়তাবাদীদের পক্ষে সামরিক হস্তক্ষেপ করে।
এই প্রেক্ষাপটে ১৯৩৮ সালে যখন জার্মানি ভার্সাই চুক্তিকে লঙ্ঘন করে অস্ট্রিয়া দখল করে নেয়, তখন অস্ট্রিয়ার স্বঘোষিত রক্ষাকর্তা ইতালি কিংবা ভার্সাই চুক্তির ধারক-বাহক ব্রিটেন ও ফ্রান্স তাতে কোনো ধরনের বাধা প্রদান করেনি। একই বছরে মিউনিখ সম্মেলনের মাধ্যমে ইতালি, ব্রিটেন ও ফ্রান্স চেকোস্লোভাকিয়ার বিভাজনের জন্য জার্মানিকে অনুমতি প্রদান করে। জার্মানি চেকোস্লোভাকিয়ার জাতিগত জার্মান–অধ্যুষিত সুডেটেনল্যান্ড দখল করে নেয় এবং স্লোভাকিয়াকে একটি জার্মান আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত করে। পোল্যান্ড জার্মানির এই কার্যকলাপকে সমর্থন করে এবং চেকোস্লোভাকিয়া কিছু অংশ দখল করে নেয়।
কিন্তু ১৯৩৯ সালে জার্মানির সব হিসেব নিকেশ পাল্টে যায়। ১৯৩৯ সালের ২৩ আগস্ট জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে একটি অনাক্রমণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডকে আক্রমণ করে। ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, এবং ইতালি ও জাপান এই যুদ্ধে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে। এই অকস্মাৎ পরিবর্তনের কারণ কী ছিল?
জার্মানি কেন পোল্যান্ডকে আক্রমণ করে? ১৯৩৯ সালে যখন জাপান সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, তখন জার্মানি কেন জাপানকে সহযোগিতা করল না? চেকোস্লোভাকিয়ার বিভাজনে ব্রিটেন জার্মানিকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছিল, অথচ পোল্যান্ড আক্রমণ করায় জার্মানি বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল কেন? ইতালি কেন ১৯৩৯ সালে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলো না? হিটলার কেন তার চরম ঘৃণার পাত্র ‘ইহুদি’ বলশেভিকদের সঙ্গে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন? ১৯৪১ সালে অবশেষে যখন জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ করল, তখন কেন জাপান পূর্বের পরিকল্পনা মোতাবেক দূরপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ করল না?
পাঠক যদি এই প্রশ্নগুলোর বিস্তৃত উত্তর পেতে চান, তাহলে ‘এনিমি ইন দ্য ইস্ট’ বইটি তার জন্য অবশ্যপাঠ্য।
বই: Enemy in the East: Hitler’s Secret Plans to Invade the Soviet Union
লেখক: রোল্ফ–ডিটার মেলার (জার্মান ভাষায়)
অনুবাদক: আলেকজান্ডার স্টারিট
প্রকাশনী: I. B. Tauris
প্রকাশকাল: ২০১৫