গেম অফ থ্রোনস: রবার্টের রাজবিদ্রোহ (পর্ব-৩)

উন্মাদ বনে যাওয়া অ্যারিস তখন ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন। উইন্টারফেলের বর্তমান লর্ড ও ভবিষ্যত লর্ডকে একসাথে হত্যা করেও এরিসের মনের খেদ মেটে না। রাজপুত্রকে হত্যা করার কথা বলে, কত বড় সাহস স্টার্কদের! দক্ষিণের ওয়ার্ডেনের কথা মনে হলো তার। দ্রুতই বার্তা পৌঁছে গেল ভেইলে, লর্ড জন অ্যারিনের কাছে। দেশদ্রোহিতা ও বিদ্রোহের অপরাধে উইন্টারফেলের লর্ড রবার্ট ও তার ছেলে ব্র‍্যান্ডন স্টার্ককে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। অতিসত্ত্বর তাকে কিংস ল্যান্ডিং যেতে হবে। আর রবার্ট ব্যারাথিওন ও রবার্টের দ্বিতীয় ছেলে এডার্ডের কাটা মাথা খুব দ্রুত যেন পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ঈরী প্রাসাদ

ঈরী প্রাসাদের সবচেয়ে উচুঁ কক্ষটিতে দাঁড়িয়ে আছেন জন অ্যারিন, বয়স প্রায় ষাট। বয়স হলেও তার রক্তের তেজ কমেনি। স্বভাব, চিন্তা ও যুদ্ধদক্ষতার সাথে তার বেশ মিল আছে তিনশ’ বছর আগে, স্টোর্মস এন্ড শাসন করা আর্জিলাক দ্য অ্যারোগেন্টের সাথে। হাতে একটি চিঠি ধরে আছেন তিনি। কিংস ল্যান্ডিং থেকে কিছুক্ষণ আগে অশুভ এক কাক বয়ে নিয়ে এসেছে ম্যাড কিংয়ের বার্তা। ব্র‍্যান্ডন ও রিকার্ডকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের সাথে ছিলেন অ্যালবার্ট অ্যারিন; অ্যারিন বংশের ভবিষ্যৎ ও সন্তানহীন জন অ্যারিনের ভাতিজা। তিনিও এখন বেঁচে নেই!

জন অ্যারিন ; Image Source: Fantasy Flight Games

ম্যাড কিং এখন চায় রবার্ট ও এডার্ডের কাটা মাথা। রবার্টের বাবা অনেক আগে মারা গেছে এই রাজার খামখেয়ালি চিন্তাভাবনার জন্য। এখন এডার্ডও পিতাকে হারাল। জন অ্যারিনের মৃত্যুর পর অ্যারিন বংশেও কেউ থাকবে না। মনে মনে ভাবলেন জন,

“অ্যারিস সম্পূর্ণ উন্মাদে পরিণত হয়েছে।”

জনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রবার্ট ও এডার্ড। দু’জনই বয়সে তরুণ। হ্যারেনহালের অনুষ্ঠানের পর কেউ নিজ নিজ রাজ্যে ফেরেনি। নিজের ক্ষোভ ভেতরে চেপে শান্ত স্বরে জন বললেন,

“রাজা অ্যারিস উন্মাদ হয়ে গেছে। রাজা থাকার যোগ্যতাও হারিয়েছে। তাকে সিংহাসন থেকে সরাতে হবে।”

এডার্ড ও রবার্টের ভেতর রবার্ট প্রচন্ড মাথা গরম স্বভাবের। লিয়ানাকে অপহরণের দায়ে সে রেয়গারকে হত্যা করার জন্য পাগল হয়ে উঠেছে। জন তাকে শান্ত করলেন। ঈরী প্রাসাদের উক্ত কক্ষে তৈরি হলো অ্যারিসকে সিংহাসনচ্যুত করার নীল নকশা। জন অ্যারিনের আগ্রাসী নেতৃত্বে লড়াইয়ের মঞ্চে নামার জন্য তৈরি হলেন রবার্ট ও এডার্ড।

রবার্ট এবং নেড ; Image Credit: Fantasy Flight Games

নর্থ, ভেইল ও স্টোর্মল্যান্ডস। ভেইল ও স্টোর্মল্যান্ডসের সব লর্ড যে জন ও রবার্টের ডাকে সাড়া দেবে না, এটা তারা জানে। এছাড়া ডর্ন ও রিচ তো আছেই। একমাত্র ব্যতিক্রম নর্থ, শীতার্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা বহিরাগত শাসক পছন্দ করে না। আর উইন্টারফেলের বর্তমান ও ভবিষ্যত লর্ডকে এভাবে হত্যা করায় ফুঁসছে সমগ্র নর্থবাসী। তাই এডার্ড জানতেন, সমগ্র নর্থ তার পাশে থাকবে। ভেইলের পরিকল্পনা শেষে তিন রাজবিদ্রোহী বেরিয়ে পরলেন নিজ রাজ্যের ব্যানারম্যানদের একত্র করতে।

গালটাউন

রবার্ট গেলেন দক্ষিণে, নেড উত্তরের পথে। জন অ্যারিন নামলেন ভেইলের সব লর্ডদের সাথে দেখা করতে। কিন্তু সবাই তাদের পক্ষে সাড়া দিল না। সমগ্র ওয়েস্টেরসে টারগেরিয়ানদের অনুগত অনেক রাজ্যই আছে। তাই ভেইল থেকে প্রথম প্রতিরোধ আসল, হাউজ গ্রাফটনের লর্ড মার্ক গ্রাফটনের দিক থেকে। এরা গালটাউন বন্দর নিয়ন্ত্রণ করত। রবার্টের পরিকল্পনা ছিল, এই বন্দর পেরিয়ে নিজ রাজ্যে ঢুকবে। তাই বিদ্রোহের প্রথম যুদ্ধ ঘটে এই বন্দর অঞ্চলে।

যুদ্ধের ময়দানে রবার্ট ও এডার্ড ; Image Source: Fantasy Flight Games

জন অ্যারিন নিজের ব্যানারম্যান যোগাড় করে মুখোমুখি হলেন হাউজ গ্রাফটনের। আর যুদ্ধে জনের পাশে থাকলেন রবার্ট, তার ভয়ংকরদর্শন হাতুড়ি নিয়ে। একপাশে চারকোনা হাতুড়ি, অন্য পাশে সূচালো কাঁটা লাগানো প্রায় নিজের সমান উচ্চতার এই অস্ত্র ভয়ংকরভাবে বনবন করে ঘোরাতেন তিনি। এই বিকটদর্শী হাতুড়ির আঘাত কোনো মানুষের গায়ে লাগলে দ্বিতীয়বার দুই পায়ে উঠে দাঁড়ানোর মতো ক্ষমতা থাকবে না।

রবার্টের হাতে নিহত হন মার্ক গ্রাফটন। ফলে হাউজ গ্রাফটনকে খুব সহজেই হারিয়ে দিল জনের বাহিনী। আর রবার্ট বন্দর পেরিয়ে দক্ষিণের দিকে রওনা হলেন নিজের রাজ্য স্টোর্ম’স এন্ডে। বিপরীতে, এডার্ড স্টার্ক মাউন্টেন অফ দ্য মুন পেরিয়ে ফিঙ্গার্সে গিয়ে পৌঁছান। সেখানে তার প্রয়োজন ছিল কোনো মাছ ধরা জেলেকে। কারণ, তাদের নৌকাতে বাইট উপসাগর পার হলে অন্যপাশে তার এলাকা।

বাইট পেরিয়ে, এডার্ড পৌঁছালেন হোয়াইট হারবারে। হোয়াইট হারবারে থাকা হাউজ ম্যান্ডারলি সবসময় স্টার্কদের অনুগত। তাই তাদের সাহায্যে দ্রুত উইন্টারফেলে পৌঁছে গেলেন এডার্ড। সমগ্র নর্থের শক্তি একত্র করতে তার তেমন বেগ পেতে হলো না।

সামারহল

রবার্টের রাজ্যের পরিস্থিতি এডার্ডের রাজ্য থেকে একদম ভিন্ন। স্টোর্মল্যান্ডসের অনেক লর্ডই রাজা অ্যারিস ও টারগেরিয়ানদের পক্ষে। নিজেদের গুপ্তচরের মাধ্যমে রবার্ট জানতে পারলেন, ক্যাফেরেন, ফল ও গ্রান্ডিসন হাউজ টারগেরিয়ানদের পক্ষে সামারহলে একত্রিত হবে। কারণ, সামারহল প্রাসাদে তিন হাউজ একত্র হয়ে সর্বশক্তি দিয়ে ব্যারাথিওনদের দুর্গ স্টোর্মস এন্ড ঘেরাও করতে চায়। 

সামারহল টারগেরিয়ানদের ভগ্নপ্রায় এক প্রাসাদ। অনেক বছর আগে এই প্রাসাদে ড্রাগন জন্ম দেওয়ার চেষ্টা থেকে ভয়াবহ আগুন লেগে পুড়ে মারা গিয়েছিল রাজা পঞ্চম এগন, প্রিন্স ডানকান টারগেরিয়ান এবং লর্ড কমান্ডার অব কিংসগার্ড স্যার ডানকান দ্য টল। সামারহল যখন দাউদাউ করে জ্বলছিল, তখন জন্ম হয় রেয়গার টারগেরিয়ানের। আগুন থেকে জন্ম নেয়া এক রাজপুত্র।

স্টোর্মস এন্ডে আগে থেকেই রবার্টের ছোট ভাই স্ট্যানিস সৈন্য প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। রবার্ট এসে বাহিনী নিয়ে সামারহল আক্রমণ করলেন। সামারহলে তখন মাত্র একটি হাউজ অবস্থান করছিল। রবার্টের আকস্মিক হামলায় কিছু সময়ের মধ্যেই বাকি দুই হাউজও এসে পড়ে। তাদের প্রস্তুতিই ছিল না, আর রবার্ট এসেছিলেন একদম তৈরি হয়ে। ফলে স্টোর্মল্যান্ডসেও রবার্টের বিদ্রোহ বাধা দেওয়ার মতো আর কেউ রইল না।

সামারহলের যুদ্ধ ; Image Credit: HBO

ভেইলে ততক্ষণে অ্যারিন সকল বিদ্রোহ হাউজকে দমিয়ে দিয়েছে। নর্থে এডার্ডের কোনো সমস্যা হয়নি। রবার্টও তার রাজ্যে থাকা টারগেরিয়ানদের অনুগত হাউজকে খর্বকায় করে দিল। ফলে উত্তর থেকে স্টার্ক, পূর্ব থেকে অ্যারিন ও দক্ষিণ থেকে ব্যারাথিওন সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসছে।

অ্যাশফোর্ড

সামারহলে টারগেরিয়ানদের পক্ষে থাকা তিন হাউজকে দমিয়ে রবার্ট স্টোর্মস এন্ডের দায়িত্ব ছোট ভাই স্ট্যানিসকে দিয়ে নিজের বাহিনী নিয়ে দক্ষিণ দিকে আরও অগ্রসর হলেন। তখনও অ্যারিন ও এডার্ড উত্তরের পথেই। অ্যারিসের দিকে সর্ব বৃহৎ বাহিনী ছিল ডর্ন ও রিচ। যদিও ডর্ন আসলে রেয়গারের পক্ষে। বিদ্রোহের পর তারা আপাতত কোনো পক্ষকে সাহায্য না করে দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

রবার্ট দক্ষিণ দিকে একাই রওনা হলেন। তিনি জানতেন না, র‍্যান্ডিল টার্লি রিচের বিশাল এক সৈন্য বাহিনী নিয়ে তার আগেই রওনা দিয়েছে। অ্যাশফোর্ডে দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়। র‍্যান্ডিলের বিশাল বাহিনীর সামনে ব্যারাথিওনরা মুহূর্তে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। প্রতিপক্ষের তীব্র আক্রমণে রবার্ট নিজেও আহত হলেন। এই লড়াইয়ে টিকতে পারবেন না বুঝে রবার্ট তার বাহিনী নিয়ে দ্রুত উত্তর দিকে সরে গেল। অতিরিক্ত তেজ দেখিয়ে একাই রওনা হওয়া রবার্টের জন্য এটা ছিল দারুণ এক বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত। কারণ, পিছু না হটলে ব্যারাথিওন বাহিনীর অধিকাংশ সৈন্য হারাতে হতো।

টার্লির বিশাল সৈন্য বহরের সামনে পড়ে পিছু হটতে হলো রবার্টের ; Image Source: Fantasy Flight Games

রবার্টের পিছু হটার পর নিজের রাজ্য অরক্ষিত রেখে ব্যারাথিওনদের প্রাসাদ স্টোর্মস এন্ড ঘেরাও করে রাখে মেইস টাইরেল। প্রাসাদের ভেতর আটকা পড়েন স্ট্যানিস। টাইরেলরা রাজার কতটা অনুগত, সেটা বোঝানোর জন্যই তারা এই কাজ করে। এছাড়া, তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল না। 

স্টোনি সেপ্ট

র‍্যান্ডিল টার্লির কাছে হেরে রবার্ট উত্তরের রিভারল্যান্ডের দিকে অগ্রসর হতে বাধ্য হলেন। ততক্ষণে এ খবর চলে গেছে কিংস ল্যান্ডিংয়ে, অ্যারিসের কাছে। রবার্ট বিদ্রোহ করার পর অ্যারিস তার হ্যান্ড বদলে ফেলেছিলেন। ছেলে রেয়গারের বন্ধু তরুণ জন কনিংটন হলেন রাজার নতুন হ্যান্ড। একরোখা মানুষ জন বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করলেন না। রবার্ট যেহেতু উত্তরের দিকে সরে গেছেন, তাই তিনি বড়সর এক বাহিনী নিয়ে চললেন উত্তরের পথে।

জন কনিংটন ও রেয়গার ; Image Source: yakuzafish

রিভারল্যান্ডের সীমানার এক ছোট শহর স্টোনি সেপ্টে রবার্টের বাহিনীকে ধরে ফেলেন জন। যদিও তিনি তার বাহিনী নিয়ে ঢোকার আগেই শহরের অলিগলিতে রবার্টের সৈন্যরা লুকিয়ে ছিল। বহিরাগতদের হামলার ফলে পুরো শহরে ঘন্টা বাজিয়ে সর্তকতা করা হল। খুব দ্রুতই শহরের বিভিন্ন গলিতে দুই পক্ষের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। জন শহরের প্রত্যেক বাড়ি ও দোকানে তল্লাশি চালাতে লাগলেন। কিন্তু রবার্টের কোনো হদিস নেই। 

এই অবস্থার মাঝেই ব্যারাথিওনদের পক্ষে হাজির হল এডার্ডের বাহিনী। তার সাথে আবার হোস্টার টালির বিশাল সৈন্যবহর। এতক্ষণ থেমে থেমে খণ্ডযুদ্ধ হচ্ছিল, এবার দুই পক্ষের আসল যুদ্ধ শুরু হল। স্টার্ক ও টার্লির সম্মিলিত বাহিনীর সামনে জন কনিংটনের দিশেহারা অবস্থা। তবুও তিনি আক্রমণ চালিয়ে গেলেন। কারণ রবার্টকে না পেলে এই লড়াই সম্পূর্ণ বৃথা।

স্টোনি সেপ্টের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ; Image Credit: Fantasy Flight Games

শহরে প্রচণ্ড ঘণ্টার শব্দ। এর মাঝে দুই পক্ষের প্রচন্ড লড়াই। রক্তের বন্যা বইছে স্টোনি সেপ্ট শহরের পাথরের খাঁজে। লড়াইয়ের এক পর্যায়ে জন কনিংটন হত্যা করলেন ডেনিস অ্যারিনকে। যুদ্ধের এ পর্যায়ে হুট করে উদয় হলেন রবার্ট। পুরোপুরি সুস্থ নন তিনি। তবুও ছয়জন সৈন্যকে তার হাতুড়ি দিয়ে উড়িয়ে মারলেন। তার হাতে মারা গেল রেয়গারের কাছের বন্ধু নাইট মেইলিস মোতেন। তবে স্টোনি সেপ্টে রবার্ট ও জন মুখোমুখি লড়াইয়ে আসেননি। রবার্টের কাছে পৌঁছাতে না পারা, জন হেরে কিংস ল্যান্ডিংয়ে ফিরল। ক্ষিপ্ত রাজা হ্যান্ডের পদবি ও রাজ্য কেড়ে নিয়ে জনকে সোজা নির্বাসনে পাঠিয়ে দিলেন। এই যুদ্ধে হারার পর অ্যারিস প্রথমবার বুঝলেন রাজা হিসেবে তার স্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে। ব্ল্যাকফায়ারদের পর এই ব্যারাথিওনদের আগ্রাসী ও ভয়াবহ বিদ্রোহও তাকে মোকাবিলা করতে হবে।

স্টোনি সেপ্টের লড়াই হারার পর দৃশ্যপটে আগমন ঘটে রেয়গার টারগেরিয়ানের। রবার্টের বিদ্রোহের শুরু থেকেই ডর্নের টাওয়ার অফ জয়ে আত্মগোপন করেছিলেন তিনি। কিংস ল্যান্ডিংয়ে এসে অ্যারিসকে অনুরোধ করলেন টাইউইনকে আবার হ্যান্ড বানাতে। কিন্তু নিজের ছেলের কথা কানে তুললেন না রাজা, রেয়গারের প্রতি তার বিশ্বাস নেই। নতুন হ্যান্ড বানালেন কার্লটন চেলস্টেডকে।

স্টোনি সেপ্টের কাছে অবশিষ্ঠ কনিংটনের সৈন্যরা আত্মগোপন করেছিল। অ্যারিস কিংসগার্ড সদস্য স্যার ব্যারিস্টান সেলমি ও স্যার জোনাথন ড্যারিকে পাঠালেন তাদের রাজধানীতে ফেরত আনতে। পাশাপাশি, অ্যারিস তার পাইরোম্যান্সারদের আদেশ দিলেন, রাজধানীর আনাচে-কানাচে ওয়াইল্ডফায়ারের ঘড়া মজুদ করে রাখতে।

বিদ্রোহীদের অংশে তখন উৎসবের আমেজ। অ্যালবার্ট ও ডেনিসের মৃত্যুর পর জন অ্যারিনের প্রয়োজন ছিল একজন উত্তরসূরীর। রিভারানের লর্ড হোস্টার টালির পরামর্শে তাই তিনি বিয়ে করেন লাইসাকে। এই হোস্টার টালির আরেক কন্যা কেটলিনের সাথে বিয়ে হবার কথা ছিল ব্র্যান্ডনের। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এডার্ডের সাথে বিয়ে হয় কেটলিনের।

 কেটলিন টালি ; Image Source: Fantasy Flight Games

ট্রাইডেন্ট

অ্যারিসকে সাহায্য করতে প্রথমে রাজি হননি ডোরান মার্টেল। কিন্তু পরবর্তীতে রেয়গারের বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য দশ হাজার ডর্নিশ সৈন্য পাঠাতে বাধ্য হন তিনি। কিংসগার্ড সদস্য প্রিন্স লেউইন মার্টেলকে ইলিয়া ও তার সন্তানদের কব্জা করার ভয় দেখিয়ে অ্যারিস তাকে পাঠান এই সৈন্য নিয়ে আসতে। রেয়গার রাজধানী থেকে আরও সৈন্য জোগাড় করেন। প্রায় চল্লিশ হাজারের তিন রাজ্যের বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে রেয়গার রিভারল্যান্ডের দিকে রওনা হন।

ট্রাইডেন্ট ওয়েস্টেরসের সবথেকে বড় ও গভীর নদী। উত্তর থেকে গ্রিন ফর্ক, পশ্চিম থেকে ব্লু ফর্ক ও দক্ষিণ দিক থেকে রেড ফর্ক নামক তিন ভিন্ন নদী এসে মিলে ট্রাইডেন্ট তৈরি করেছে। নদীর উত্তরে রেয়গারের বাহিনী এসে অবস্থান করতেই, তারা খবর পেল নদীর দক্ষিণ দিক থেকে রবার্টের নেতৃত্বে বিশাল এক বাহিনী এগিয়ে আসছে। রেয়গারের দল নদী পার হবার আগে তাদের উপর হামলে পড়লেন বিদ্রোহীরা।

পূর্বদিকে আক্রমণ করলেন জন অ্যারিন। সেদিকে অবস্থান করা ডর্নিশ সৈন্যরা বুঝে উঠতে পারার আগেই খেই হারিয়ে ফেলল। মারা গেলেন ডর্নিশ সৈন্যদের নেতৃত্বে থাকা লেউইন মার্টেল। পশ্চিম থেকে এডার্ড ও হোস্টার আক্রমণ করল কিংসগার্ড বাহিনীকে। যাদের নেতৃত্বে ছিলেন ব্যারিস্টান সেলমি ও জোনাথন ড্যারি। রেয়গার ছিলেন এই দুই বাহিনীর ঠিক মাঝে, ঘোড়ার পিঠে সওয়ার, পান্না-খচিত বর্মে রক্তাক্ত তলোয়ার হাতে। ট্রাইডেন্টের পরিষ্কার পানির মাঝে তার তলোয়ারের আঘাতে ঢলে পড়ছিল একের পর এক ব্যারাথিওন সৈন্য।

ট্রাইডেন্টের লড়াই; Image Credit: Abe Papakhian

বিপরীতে রবার্ট ছিলেন ঘোড়ার পিঠে; মাথায় হরিণের শিং ছড়ানো শিরোস্ত্রাণ, আর হাতে ভয়ালদর্শন ওয়ারহ্যামার। এই রণক্ষেত্রের মাঝে “রেয়গার” বলে চিৎকার করে ওঠেন রবার্ট। ঘোড়া ছুটিয়ে একে অপরের দিকে ছুটে যান দু’জন। প্রথম আঘাত করেন রেয়গার, কিন্তু তার ঝিলিক দেয়া তলোয়ারটা রবার্টের বর্মের একাংশ ছুয়ে যায়। বেশ জখম হন তিনি, কিন্তু দমে যান না।

কোনোমতে তাল সামলে রবার্ট ঘোড়া ঘুরিয়ে পাল্টা আঘাত হানেন। কিন্তু তার হাতুড়ির আঘাত রেয়গারকে স্পর্শ তো করেই না, উল্টে পাঁজরে ভালো রকমের আঘাত লাগে তার। তবে রবার্টের হাতুড়ির আঘাত গিয়ে লাগে ঘোড়ার মাথায়, ফলে ঘোড়া থেকে ছিটকে পানিতে পড়েন রাজপুত্র রেয়গার।

ট্রাইডেন্টে রেয়গার বনাম রবার্ট; Image Source: HBO

 

রবার্ট নিজেও এবার ঘোড়া থেকে নেমে আসেন। পুরোপুরি সুস্থ নন তিনি, পাঁজরের আঘাতের কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কাঁধে ক্ষীণ একটা রক্তের ধারা অনুভব করেন তিনি। কিন্তু হাল ছাড়েন না, হাতুড়ি শক্ত করে ধরে রেয়গারের মুখোমুখি হন। এক হাতে তলোয়ার, অন্য হাতে ঢাল হাতে এগিয়ে আসেন রেয়গার। একে অপরের প্রতি আক্রমণ চলতে থাকেন… কোনোটা বর্মে, কোনোটা আবার ঢালে।

রবার্ট বুঝতে পারেন, তিনি ধীরে ধীরে গতি হারাচ্ছেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে দু’হাত হাত। কিন্তু রেয়গারের কোনো ক্ষতি হয়নি, একজন দুর্ধর্ষ নাইটের মতো রবার্টের আক্রমণ রুখে যাচ্ছেন তিনি। রবার্ট একের পর এক আঘাত হানতে থাকে। টানা আক্রমণে অল্প সময়ের জন্য রেয়গার তাল হারান। ঢালকে পাশ কাটিয়ে রবার্টের আঘাত সোজা এসে লাগে তার বুকে। আঘাতের আকস্মিকতায় খেই হারানো বর্মের পান্নাগুলো ঝিলিক দিয়ে ওঠে, এরপর টুপ করে ডুবে যায় ট্রাইডেন্টের রক্তাক্ত নোংরা পানিতে।

রেয়গারের প্রাণহীন দেহ লুটিয়ে পড়ল ট্রাইডেন্টের বুকে; Image Credit: Fantasy Flight Games

যন্ত্রণায় হাঁটু মুড়ে বসে পড়েন রেয়গার। মাথা নিচু, খুব ধীরে তার শ্বাস চলছে। হাতের ঢাল-তলোয়ারও তলিয়ে গেছে পানিতে। দুরন্ত এক যোদ্ধা রেয়গার এবার নিরস্ত্র, চোখেমুখে হতাশার চিহ্ন স্পষ্ট।

রবার্ট এগিয়ে এলেন। শক্ত করে ধরে আছেন তার ওয়ারহ্যামার। নিজের দেহের সর্বশক্তি দিয়ে আরও একবার আঘাত করলেন রেয়গারের শিরোস্ত্রাণহীন মাথায়।

ট্রাইডেন্ট নদীর পানি সেদিন সাত রাজ্যের সৈন্যের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। রবার্টের শেষ আঘাতে খসে পড়া পান্নাগুলোর পাশে নেতিয়ে পড়ল একটি দেহ। ট্রাইডেন্ট পেল আরও একটি প্রাণের রক্তের নোনা স্বাদ, সে রক্ত রাজপুত্র রেয়গার টারগেরিয়ানের। আগুন থেকে জন্ম নেয়া এক অসামান্য যোদ্ধার সলিল সমাধি ঘটল, তার রাজ্য থেকে বহু দূরে অচেনা পরিবেশের রণক্ষেত্রে।

(চলবে)

This article is in Bangla language. It is about Targaryen dynasty in seven kingdom and the weird friendship between the Mad King Areys II and his hand Tywin Lannister, based on Fire & Blood and The World of Ice and Fire book which is written by Sir George R. R. Martin. 

Feature Image Source: HBO

Related Articles

Exit mobile version