টারগেরিয়্যান হাউজের গৃহযুদ্ধ ‘ব্ল্যাকফায়ার রেবেলিয়ন’-এর শুরুর দিকের গল্প নিয়ে ছিল এই লেখার প্রথম পর্ব। আজকের পর্বে থাকছে সুদীর্ঘ এই সংঘর্ষের বাকি ঘটনাবলী, এবং বিদ্রোহের অবসানের কাহিনি।
দ্বিতীয় ব্ল্যাকফায়ার রেবেলিয়ন
সময়টা ২১২ AC, প্রথম রেবেলিয়নের ১৬ বছর পরের কথা, আয়রন থ্রোনে বসা রাজা এইরিস দ্য ফার্স্ট টারগেরিয়্যান। লর্ড বাটারওয়েলের দ্বিতীয় বিয়ে উপলক্ষে হোয়াইটহল প্রাসাদে আয়োজন করা হয় এক টুর্নির। সেই টুর্নিকে ঘিরেই ব্ল্যাকফায়াররা তাদের দ্বিতীয় রেবেলিয়নের পরিকল্পনা করে। ডেইমন ব্ল্যাকফায়ারের ছেলে, ডেইমন দ্য সেকেন্ডকে জন দ্য ফিডলার ছদ্মনাম দিয়ে এই টুর্নিতে নিয়ে আসা হয়। তবে এবারের রেবেলিয়ন যুদ্ধের আকার ধারণ করার আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়।
ডেইমন দ্য সেকেন্ডের খবর পেয়ে কিংস ল্যান্ডিং থেকে তিনজন কিংসগার্ড, ‘রেইভেন্স টিথ’-এর তিনশ’ ধনুকধারী, ক্রাউনল্যান্ডস আর রিভারল্যান্ডস থেকে পাঁচশ সৈন্য এবং পাঁচ হাজার পদাতিক বাহিনী নিয়ে হোয়াইটহলের দিকে রওনা দেয় তৎকালীন হ্যান্ড অব দ্য কিং- ব্র্যান্ডন ‘ব্লাডরেইভেন’ রিভার্স। এই বাহিনীর খবর পেয়ে ডেইমন প্রাসাদে থাকা মানুষকে যুদ্ধে আহ্বান করলে সবাই হেসে উড়িয়ে দেয় তার প্রস্তাব। অতঃপর ডেইমন নিজেই ব্র্যান্ডন রিভার্সকে সিঙ্গেল কমব্যাটে চ্যালেঞ্জ জানালে খুব সহজেই লর্ড রিভার্স তাকে বন্দী করে নিয়ে যায়। এভাবেই শুরু হওয়ার আগেই দ্বিতীয় ব্ল্যাকফায়ার রেবেলিয়ন থেমে যায়।
তৃতীয় ব্ল্যাকফায়ার রেবেলিয়ন
দ্বিতীয় রেবেলিয়নের মাত্র সাত বছর পরেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে ব্ল্যাকফায়ার প্রিটেন্ডাররসা। ২১৯ AC-তে এইগর ‘বিটারস্টিল’ রিভার্স আরেক রেবেলিয়ন শুরু করে ডেইমন ব্ল্যাকফায়ারের চতুর্থ ছেলে, হেইগন দ্য ফার্স্ট ব্ল্যাকফায়ারকে রাজা ঘোষণা করে। প্রথম রেবেলিয়নের পরাজয়ের পর এইগর রিভার্স এসোসে গিয়ে ‘গোল্ডেন কোম্পানি’ নামের এক সেলসোর্ড বাহিনী তৈরি করে, একই ‘গোল্ডেন কোম্পানি’, যাদেরকে সার্সি ল্যানিস্টার গেইম অভ থ্রোন্সের সিজন ৮-এ ভাড়া করে।
এই বাহিনীর মাধ্যমেই বিটারস্টিল তৃতীয় ব্ল্যাকফায়ার রেবেলিয়ন আরম্ভ করে। এই রেবেলিয়নের সময় আয়রন থ্রোনে ছিলেন এইরিস দ্য ফার্স্ট টারগেরিয়্যান, তবে রাজ্যশাসন বা যুদ্ধবিগ্রহে তার কোনো আগ্রহ ছিল না। ফলত এই রেবেলিয়ন ঠেকাতে মূল ভূমিকা পালন করেন রাজার ছোট ভাই, প্রিন্স মেইকার টারগেরিয়্যান। প্রথম রেবেলিয়নের শেষ ব্যাটলে ‘দ্য হ্যামার এন্ড দ্য এনভিল’ চাল খাটানো সেই মেইকার আর তার দুই ছেলে, প্রিন্স এইরিয়ন ও এয়গন টারগেরিয়্যান যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের প্রমাণ করেন সংঘর্ষের সময়ে।
এই রেবেলিয়নে আবারও মুখোমুখি হয় এইগর এবং ব্র্যান্ডন রিভার্স। বিটারস্টিল আর ব্লাডরেইভেনের দ্বিতীয় ডুয়েলের দেখা মেলে এখানে। ব্ল্যাকফায়ার প্রিটেন্ডার, হেইগন দ্য ফার্স্টকে মেরে ফেলার মাধ্যমে ইতি ঘটে তৃতীয় ব্ল্যাকফায়ার রেবেলিয়নের। যুদ্ধশেষে বিটারস্টিলকে কিংস ল্যান্ডিং-এ বন্দী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রিন্স এইরিয়ন ও ব্লাডরেইভেন কিং এইরিসকে পরামর্শ দেয় বিটারস্টিলকে হত্যা করতে। কিন্তু এইরিস তাদের কথা না শুনে বিটারস্টিলকে নাইট’স ওয়াচে যোগ দেয়ার জন্য ওয়ালে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তবে ওয়ালে যাওয়ার পথে জাহাজ থেকে এইগর রিভার্স পালিয়ে যায় তার বাহিনী ‘গোল্ডেন কোম্পানি’র কাছে। বছর শেষ হওয়ার আগেই সে হেইগনের ছেলে ডেইমনকে রাজা ঘোষণা করে।
চতুর্থ ব্ল্যাকফায়ার রেবেলিয়ন
ডেইমন দ্য থার্ড ব্ল্যাকফায়ারকে রাজা ঘোষণা করার ১৬ বছর পরে রাজা এইগন দ্য ফিফথের শাসনামলে চতুর্থ ব্ল্যাকফায়ার রেবেলিয়ন সংঘটিত হয়। এইগর ‘বিটারস্টিল’ রিভার্স আর তার ‘গোল্ডেন কোম্পানি’ নিয়ে ডেইমন দ্য থার্ড ন্যারো সী পার হয়ে ওয়েস্টরসে হাজির হয়। তাদের মোকাবেলা করতে স্বয়ং রাজা এয়গন দ্য ফিফথ আর তার তিন ছেলে, প্রিন্স ডানক্যান, জাহেরিস ও ডেইরন যুদ্ধে নেমে পড়েন। এবারের রেবেলিয়নের উল্লেখযোগ্য অধ্যায় ছিল ‘দ্য ব্যাটল অব ওয়েন্ডওয়াটার ব্রিজ’, যুদ্ধের শেষ সংঘর্ষ। রক্তক্ষয়ী এই লড়াইয়ে বিদ্রোহী ব্ল্যাকফায়াররা প্রচন্ড রকমের এক পরাজয়ের শিকার হয়। টারগেরিয়্যান বাহিনীর জীবনের ক্ষয়ক্ষতি একশোজনের কম হলেও ব্ল্যাকফায়ারদের মৃত সৈন্য দিয়ে পাশে থাকা এক নদী ভরে গিয়েছিল। কিং এইগনের এক কিংসগার্ড, স্যার ডানক্যান দ্য টল ডেইমন দ্য থার্ডকে হত্যা করার মাধ্যমে এই রেবেলিয়নের সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধের পরে বিটারস্টিল আবার পালিয়ে যায় এসোসে, সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে ২৪১ AC-তে। তবে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই ব্ল্যাকফায়ারদের বিদ্রোহ শেষ হয়ে যায়নি।
ওয়ার অব দ্য নাইনপেনি কিংস/ পঞ্চম ব্ল্যাকফায়ার রেবেলিয়ন
বিটারস্টিলের মৃত্যুর ২০ বছর পরে ২৬০ AC-তে সেভেন কিংডমস দখল নেয়ার উদ্দেশ্যে যুদ্ধের সাজসজ্জা শুরু করে ‘দ্য ব্যান্ড অব নাইন’। এই ‘ব্যান্ড অব নাইন’ ছিল একদল বণিক, ভাড়াটে সৈন্য আর জলদস্যু যারা ওয়েস্টরসের সাত রাজ্যকে নিজেদের মাঝে ভাগ করে নেয়ার উদ্দেশ্যে যুদ্ধে নামে। এদের মাঝে ছিল শেষ ব্ল্যাকফায়ার প্রিটেন্ডার, মেইলিস দ্য মনস্টারাস যে ওই সময়ে ছিল ‘গোল্ডেন কোম্পানি’র সেনাপতি। সেভেন কিংডমস ভাগাভাগি করে নেওয়ার পরিকল্পনা শুনে প্রিন্স ডানক্যান মজা করে বলেছিলেন, “এক পেনিতে নয়টা মুকুট বেঁচাকেনা হচ্ছে”। এই ঘটনা থেকেই ব্যান্ড অব নাইনের সদস্যদের জন্য ‘নাইনপেনি কিংস’ ছদ্মনাম প্রচলিত হয় এবং পঞ্চম ব্ল্যাকফায়ার রেবেলিয়ন পরিচিত হয় ‘ওয়ার অব দ্য নাইনপেনি কিংস’ হিসেবে।
তৎকালীন রাজা জাহেরিস দ্য সেকেন্ড আগাম এই হুমকি বুঝতে পেরে বৃহদাকার এক সৈন্যবাহিনী পাঠান স্টেপস্টোনসে, যেখানে ব্যান্ড অব নাইন তখন অবস্থান নিয়েছিল। বাহিনীর নেতৃত্ব জাহেরিস নিজের হাতে নিতে চাইলেও তার হ্যান্ড অব দ্য কিং, ওরমুন্ড ব্যারাথিওন অন্য উপদেশ দেয়। ওরমুন্ড নিজেই সেনাপতি হিসেবে স্টেপস্টোনসে নিয়ে যায় টারগেরিয়্যান বাহিনীকে। স্টেপস্টোনসে পৌঁছানোর পর থেকে প্রায় এক বছর ধরে স্থলে এবং সাগরে পুরোদমে যুদ্ধ চলতে থাকে। ল্যানিস্টার এবং মার্টেলদের পাঠানো সৈন্যরা স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আর গ্রেজয়দের একশো জাহাজের নৌবহর সাগরে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। লড়াইয়ের প্রথমদিকের নিহতদের একজন ছিলেন হ্যান্ড অব দ্য কিং ওরমুন্ড ব্যারাথিওন। তার মৃতুর পরে টারগেরিয়্যান বাহিনীর নেতৃত্ব যায় কিংসগার্ডের লর্ড কমান্ডার স্যার জেরল্ড হাইটাওয়ারের হাতে।
এক বছরব্যাপী চলমান এই যুদ্ধে বেশ কয়েকজন লর্ড এবং সৈন্য নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে নাম উজ্জ্বল করে। গেইম অভ থ্রোন্স থেকে পরিচিত কিছু মানুষও এই যুদ্ধেই ওয়েস্টরসের ইতিহাসে নিজেদের নাম লিখিয়েছিল- ক্যাটলিনের চাচা, ব্র্যান্ডন ‘ব্ল্যাকফিশ’ টালি, টাইউইন ল্যানিস্টার আর তার ভাই কেভান ল্যানিস্টার এবং এইরিস টারগেরিয়্যান, পরবর্তী ইতিহাসে যার পরিচিতি হবে দ্য ম্যাড কিং হিসেবে!
তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর কীর্তি ছিল মাত্র ২৩ বছর বয়সী এক সৈন্যের যে গোল্ডেন কোম্পানির বাধা ভেঙে নিহত সেনাদের রক্তে রঞ্জিত পথের মধ্য দিয়ে মেইলিস দ্য মনস্টারাসকে সিঙ্গেল কমব্যাটে পরাজিত করে হত্যা করে। সেই তরুণ সৈন্যের নাম স্যার ব্যারিস্টন সেলমি! ব্যারিস্টন সেলমির হাতেই নিঃশেষ হয় ব্ল্যাকফায়ার প্রিটেন্ডারদের ব্লাডলাইন। ওয়েস্টরসে প্রায় ৮০ বছর ধরে চলতে থাকা এই অবিরাম সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটে স্যার ব্যারিস্টনের তলোয়ারের এক আঘাতে।