যে শহরে আপনার বাস, যে অলিগলি ধরে রোজ আপনার যাতায়াত- সে জায়গাটি স্যাঁতস্যাঁতে থিকথিকে নোংরা কাদায় ভরা। বেঁচে থাকার জন্য রোজ যে লড়াইটা করতে হচ্ছে আপনাকে, সেখানে প্রতিদিন একটু একটু করে হারাটাই যেন আপনার নিয়তি। নিতান্তই নগণ্য যে জীবনটা যাপন করতে সমাজ আপনাকে অনুমতি দিচ্ছে, সেটাও যে কোনো মুহূর্তে কেড়ে নিতে পারে উঁচুতলার যে কেউ। সবগুলো জায়গায় মাথা নত করে চলতে চলতে কুঁজো হয়ে যাওয়া মেরুদণ্ডেও চেপে বসে আছে ‘কর্তব্যের’ অকল্পনীয় ভার। ভেতরের সমস্ত ক্রোধ, যন্ত্রণা ও হতাশা তীব্র চিৎকারে বের করে দিতে ইচ্ছা করলেও ঠোঁটে হাসির কুলুপ এঁটে সহ্য করে যাচ্ছেন সবই।
কিন্তু একদিন… এক অনিবার্য দিনে সুস্থতার সেই মুখোশটাও খুলে ফেললেন এক নিমিষে। অগ্নুৎপাতের মতো যতো অন্ধকার এতদিন জমে ছিল আপনার অসুস্থ মগজের কোণে- সেগুলোকে উগড়ে দিতে গিয়ে তোয়াক্কা করলেন না বিবেক আর আইনের বলয়কেও। নিজেকে অবশেষে নির্ভার লাগলো আপনার; মনে হলো, এটাই বুঝি মোক্ষলাভ! কিন্তু এই মোক্ষলাভের বিনিময়ে কী হারালেন, সেটার হিসাব কষেছেন কি?
গল্পটাকে খুব পরিচিত মনে হচ্ছে? শহরটিকে ঢাকা, আর জীবনের সাথে যুঝতে থাকা চরিত্রটিকে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন?
মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। যে সময়ে আমাদের বাস, সেখানে এই গল্পের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারবে এই শহরের যে কেউ। কিন্তু বিশ্বাস করুন, গল্পটি কাল্পনিক! ১২১ মিনিটের এক সিনেমার গল্প; যেখানে গোথাম শহরের সবচেয়ে বড় সুপারভিলেনকে নামিয়ে আনা হয়েছে একেবারেই সাধারণ খেটে খাওয়া জীবনযুদ্ধে বারবার হারতে থাকা মানুষদের কাতারে। তবে তার সেই অবনমনও এতোটাই মহাকাব্যিক যে, ওই ১২১ মিনিটের প্রতিটি ক্ষণ আপনাকে বাধ্য করবে তাকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে। তার দুঃখে, ব্যথায় হবেন নীল, তার বাস্তবতায় লীন হয়ে একটা সময় নিজের জগৎকেই মনে হবে পরাবাস্তব!
টড ফিলিপসের বয়ানে ‘জোকার’ তাই হয়ে উঠে সেই মহৎ শিল্পকর্মের নাম, যেখানে স্রেফ কল্পজগতের কিংবদন্তি রূপে নয়, বিনোদন ইতিহাসের সবথেকে ভয়ঙ্কর খলনায়ককে গড়ে তোলা হয়েছে বাস্তব জীবনের কঠিনতম ছাঁচে। এখানে জোকারের পরিচয় স্রেফ ব্যাটম্যানের ‘চিরশত্রু’র ট্যাগে আবদ্ধ নয়। এখানে গোটা জীবন অস্তিত্ব সংকটে ভুগতে থাকা ব্যর্থ এক কমেডিয়ান কীভাবে হারিয়ে যেতে থাকে উন্মত্ততার নিকষ গহ্বরে, আর সেখান থেকেই কেমন করে তার পুনর্জন্ম ঘটে নীচুতলার বঞ্চিত মানুষের নায়ক হিসেবে- এক অভূতপূর্ব আখ্যানে দেখানো হয়েছে সেই গল্পই।
আর জোকারকে সাধারণ দর্শকের সামনে এই রূপে মূর্ত করেছেন যিনি, সেই মানুষটিও যে নিতান্তই সাধারণ কেউ নন, সিনেমার প্রতিটি পরতে হাড়ে হাড়ে তা টের পেয়েছে দর্শককুল। এই মানুষটিতে ভর করেই পুনর্জন্ম ঘটবে জোকারের- দীর্ঘদিন আগে করা এক ভবিষ্যদ্বাণী এতোটা রাজসিকভাবে ফলে যাবে, তা হয়তো নিজেও এভাবে ভাবেননি নির্মাতারা!
সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে বিনোদন জগতে বিচরণ ‘দ্য ক্লাউন প্রিন্স অফ ক্রাইমে’র। রূপালি জগতেও জোকারের মনস্তত্বকে তুলে ধরে পরপারে অমর হয়ে আছেন হিথ লেজারের মতো তারকা। আর এপারে জ্যাক নিকলসন, মার্ক হ্যামিল আর জ্যারেড লেটোদের মতো মহারথীরা বারবার এই চরিত্রকে তুলে ধরেছেন আপন আঙ্গিকে; প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে বলার চেষ্টা করেছেন তার গল্প। কিন্তু এবারের গল্পটি তুলে আনার ক্ষেত্রে নির্মাতা চাইছিলেন একটি বিশেষ মানুষকেই। প্রযোজকদের তরফ থেকে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর মতো হেভিওয়েট তারকার কথা বলা হলেও টড ফিলিপস এক বছরের পরিশ্রমে এই সিনেমার চিত্রনাট্যটি লিখেছিলেন ওই একটি মানুষকে মাথায় রেখেই। তার নাম হোয়াকিন ফিনিক্স।
কারণটাও পরিষ্কার করেই বলেছিলেন ফিলিপস। টোটাল ফিল্মকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন,
“জোকারের দুনিয়ায় হোয়াকিন ফিনিক্সকে ঢোকানোটা আমাদের লক্ষ্য ছিল না। লক্ষ্যটা ছিল ফিনিক্সের দুনিয়ায় জোকারের অনুপ্রবেশ ঘটানো!”
সত্যিই, হোয়াকিন ফিনিক্সের সেই সেই জাদুকরি দুনিয়ায় জোকার এমনভাবেই মিশে গিয়েছে এই সিনেমায় যে, এক পর্যায়ে গিয়ে এটি নিতান্তই অভিনয়ের বলয়ে আবদ্ধ থাকেনি। ফিনিক্স নিজেই হয়ে উঠেছেন আর্থার ফ্লেকের জীবন্ত প্রতিমূর্তি।
ফিনিক্স বহু বছর ধরেই বিশ্বের প্রথম সারির অভিনেতাদের একজন। অভিনয় আর গল্পকথন তার রক্তেই এমনভাবে মিশে আছে, এ থেকে তার মুক্তি ছিল না কখনোই। একাধিকবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েও তাই রূপালি আলোর দুনিয়াতেই ফিরতে হয়েছে তাকে বারবার। মেথড অ্যাক্টিংয়ের মায়াজালে এমনভাবেই আটকে গেছেন তিনি যে কেবলমাত্র সেসব চরিত্র রূপায়নেই তিনি রাজি হন, যেগুলোর আত্তীকরণে দিয়ে দিতে হয় তার সর্বস্বই।
আর্থার ফ্লেকের আত্তীকরণেও আরেকবার এই একই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গেছেন ফিনিক্স। দৈন্যক্লিষ্ট চেইনস্মোকার আর্থারের অস্থিসার অবয়বে আসতে নিজেকে শারীরিকভাবে তো ভেঙেছেনই, তার ভঙ্গুর ব্যক্তিত্বকে ধারণ করতে নিজের মানসপটকেও পাল্টে ফেলেছেন সেভাবেই। এমনকি তার চাহনিতেও ফিনিক্স ধারণ করতে পেরেছেন আর্থারের সুবিশাল শূণ্যতাকে; আবার বেসামাল ও বেসুরা হাসির দমকে সেই শূণ্যতাকে বারবার ভরিয়ে দিয়েছেন অমানবিক বিষাদে।
এই সিনেমায় আর্থার ফ্লেক মধ্যবয়স্ক এক ব্যর্থ কমেডিয়ান। গোথাম শহরের নিম্নবিত্তদের বাকি সবার মতোই সেও ধুঁকছে নিদারুণ দৈন্যে। অসুস্থ মায়ের প্রতি আর্থারের অটুট ভালোবাসা; তাই একবেলা খাবার জোগাড় করতে পারলে সেটুকু সে পরম মমতায় খাইয়ে দেয় মাকেই। স্বপ্ন দেখে স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হবার কিন্তু মানুষের স্বাভাবিক হাস্যরসের ধারণার সঙ্গে মেলাতে পারে না নিজের কৌতুকগুলোকে। অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে কাজ করতে হয় সংদের এক এজেন্সিতে। লোক হাসানোর ঠিকা কাজে সফল হতে চেহারা তাকে ঢাকতে হয় পুরু মেকআপের আড়ালে; জোর করে হাসিমুখে ঘুরে বেড়াতে হয় পথে পথে। কিন্তু প্রতিদিনের যে বঞ্চনা, লাঞ্ছনা সহ্য করে সে টিকে থাকে, তাই তাকে ধীরে ধীরে ঠেলে দিতে থাকে মানসিক স্থিরতা হারিয়ে ফেলার চূড়ান্ত ধাপে। আর্থারের জার্নালেও এলোমেলো কথনে উঠে আসে তার গহীনতম বিষাক্ত চিন্তাগুলো।
সিনেমার শুরু থেকেই আর্থারকে দেখানো হয়েছে নানাবিধ মানসিক সমস্যার ভুক্তভোগী হিসেবে। এক অদ্ভুত রোগের শিকার সে ছোটবেলা থেকেই, যার জন্য প্রচণ্ড মানসিক চাপের মুখে তার ভেতর থেকে বের হয়ে আসে বিকারগ্রস্ত হাসির দমক। এই হাসির নানা রূপ, নানা অভিব্যক্তির মাধ্যমে সিনেমাজুড়েই অসাধারণ ভাবে তুলে এনেছেন ফিনিক্স; এই সিনেমার পর বিনোদন জগতে এটি ‘ফিনিক্স হাসি’ হিসেবে বিখ্যাত হয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
জোকার হিসেবে ফিনিক্সের অভিনয়কে যথাযোগ্য সঙ্গ দিয়েছে সিনেমার চিত্রনাট্য। সিনেমার দ্বিতীয়ভাগে শুধুমাত্র আর্থারকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে এমনসব দৃশ্যপট, যেখানে ফিনিক্স একাই তার মনোদৈহিক অভিব্যক্তির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন জোকারের সমস্ত যাতনাকে।
জোকারের নির্মাণ প্রক্রিয়ার শুরুতে এর সঙ্গে প্রযোজক হিসেবে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল মার্টিন স্করসেসির মতো নির্মাতার। সিনেমার শেষ পর্যন্ত তিনি থাকতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু চিত্রনাট্যে তার ছাপ রয়ে গেছে ঠিকই। আর্থার ফ্লেকের জোকারে পরিণত হওয়ার মুহূর্তগুলোর সঙ্গে তাই মিল খুঁজে পাওয়া যাবে ট্যাক্সি ড্রাইভারের ট্র্যাভিস বিকলের। এমনকি স্করসেসির অতিপ্রিয় অভিনেতা রবার্ট ডি নিরোও এই সিনেমায় করেছেন এমন একটি চরিত্র, যেটি আসলে তার আরেক বিখ্যাত সিনেমা ‘দ্য কিং অফ কমেডি’র কথাই বারবার মনে করিয়ে দেয় দর্শককে।
সেইসঙ্গে সিনেমাটির সংলাপের সে কী দাপট! দর্শকের মাথায় পাকাপাকিভাবে গেঁথে যাওয়ার মতো সংলাপের অভাব নেই জোকারে। সিনেমার শুরুই হয় বিখ্যাত সেই সংলাপটি দিয়ে, ‘ইজ ইট জাস্ট মি, অর ইজ ইট গোয়িং ক্রেইজিয়ার আউট দেয়ার?’ এটিই যেন খবরের ইন্ট্রোর মতো দর্শকের সামনে এক কথায় তুলে ধরে গোটা সিনেমার মর্মার্থ।
আবার থমাস ওয়েইনের (ব্রেট কালেন অভিনয় করেছেন এই চরিত্রে) মতো প্রভাবশালী চরিত্র যখন টিভি সাক্ষাৎকারে বলে ওঠে ‘আমরা যারা জীবনে সফল হতে পেরেছি, তারা, যারা হতে পারেনি, তাদেরকে সং হিসেবেই দেখি’- তখন সেটিও ফুটিয়ে তোলে গোথামের আসল রূপকে। পুঁজিবাদী সমাজের চাকচিক্যের আড়ালে বড়লোকদের মানবিক দৈন্য কতটা প্রকট- তাই যেন একেবারে নগ্ন হয়ে বেরিয়ে আসে এই একটি কথার মাধ্যমে।
বিভিন্ন দিক থেকেই ব্যাটম্যান এবং জোকারকে নিয়ে এপর্যন্ত যত সিনেমা তৈরি হয়েছে সেসবের থেকে পুরোপুরি আলাদা এবারের ‘জোকার’। কমিকগুলোতে তো বটেই, লাইভ অ্যাকশন আর অ্যানিমেটেড সিরিজগুলিতেও গোথামের সবচেয়ে বড় পুঁজিপতি টমাস ওয়েইনকে দেখানো হয়েছে দেবতুল্য হিসেবে। ওয়েইন এন্টারপ্রাইজকে দেখানো হয়েছে সমৃদ্ধির স্বর্গ হিসেবে। শিল্পপতি টমাস ওয়েইন বিশাল মনের অধিকারী, একাগ্রতার সঙ্গে সারা কাজ করেছেন গোথামের প্রবৃদ্ধির জন্য। তাই সামান্য এক গুন্ডার হাতে তার সস্ত্রীক খুন হওয়ার ঘটনাটিকে বারবার তুলে ধরা হয়েছে গোথামের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হিসেবে।
কিন্তু সত্যিই কি টমাস শহরের সার্বজনীন উন্নতি চেয়েছিলেন? তাহলে কেন তার প্রাসাদোপম ওয়েইন ম্যানরের বিপরীতেই গোথামের অন্ধকারাচ্ছন্ন গলিতে বাড়ছিলো বৈষম্যের প্রকোপ? টমাসের বদান্যতাতেই গড়ে উঠেছিলো আরখাম অ্যাসাইলাম; কিন্তু সেটার উদ্দেশ্য কী সত্যিই মানসিক ভারসাম্যহীনদের রিহ্যাবিলিটেশন দেয়া, নাকি ওয়েইন সাম্রাজ্যের অধিপতির কালো অধ্যায়ের সাফাই করা? ব্রুস-এর মায়ের সঙ্গে টমাসের যে প্রেমপূর্ণ নিখুঁত সম্পর্কের বয়ান এতোদিন শুনে এসেছি আমরা, সেটা কি সত্যিই অতোটা নিখুঁত ছিল? নাকি ব্যক্তি টমাসের স্খলনই শেষ পর্যন্ত দায়ী হয়েছে গোথাম নগরীর পতনের?
‘জোকারে’র পরতে পরতে এসব প্রশ্নের উত্তর অনেকখানি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন নির্মাতারা। দুয়েকটি দৃশ্যে হয়তো এর কারণে নির্দেশনা কিঞ্চিৎ খেই হারিয়েছে, কিন্তু এর চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে সিনেমাটি দাঁড়িয়ে গেছে এক দুর্দান্ত গোলকধাঁধা হিসেবে! এই গোলকধাঁধা দর্শককে ক্লান্ত তো করেইনি, বরঞ্চ একেবারেই অনুনমেয় ন্যারেটিভ তাদেরকে দিয়েছে সত্যিকারের সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের রোমাঞ্চ।
সিনেমার ডিরেকশন অফ ফটোগ্রাফি নিয়ে আলাদা করে বলতেই হয়। বিশেষ করে আর্থারের ক্লোজআপ শটের প্রতিটি ফ্রেমই একেকটি অনন্য আলোকচিত্রের মতো। আর যে জিনিসটি ছাড়া সিনেমাটি অসম্পূর্ণই থেকে যেতো, তা হলো এর মিউজিক। চলতি বছরেই ‘চেরনোবিলে’ নিজের জাত চিনিয়েছেন আইসল্যান্ড ভিত্তিক ধ্রুপদী সংগীতকার হিলডুর গুরনাডোটির। এবারও তার মোক্ষম সাংগীতিক অভিব্যক্তিতে বেঁধে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন জোকারের বেদনাতুর পৃথিবীর সমস্ত করুণ সুরকে। ‘দ্য গেস হু’র ‘লাফিং’ গানটিও একদম সঠিক উপায়ে ব্যাবহার করা হয়েছে সিনেমায়।
সিনেমা হিসেবে ‘জোকার কতটা সফল, আর ফিনিক্সই বা কতটা মুনশিয়ানা দেখাতে পারলেন আর্থার ফ্লেক চরিত্রে সেটি বুঝতে আপনাকে অবশ্যই বড়পর্দায় এটি দেখার অভিজ্ঞতা নিতে হবে। মুভির অত্যন্ত অস্বস্তিকর শেষ দৃশ্যটিও যখন বিদ্রূপের হাসি ফুটিয়ে তুলবে ঠোঁটে, তখন বুঝতে পারবেন, ‘জোকারে’র পৃথিবীতে নিজের অজান্তেই সামিল হয়ে গেছেন আপনি!