“Dragons are intelligent–more intelligent than men according to some maesters,”
– Tyrion Lannister.
ড্রাগন, অতিকায় এক কাল্পনিক প্রাণী, যার কিংবদন্তি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন পুরাণ ও উপকথার পরতে পরতে। এ এমন এক জীব, যাকে ছাড়া কল্পনাপ্রসূত ফ্যান্টাসি জগৎ যেন অপূর্ণই থেকে যায়। ফ্যান্টাসি লেখকেরা তাদের নিজস্ব ধাঁচে সাজিয়েছেন একেকটি ড্রাগনকে, স্থান দিয়েছেন তাদের তৈরি ফ্যান্টাসি ইউনিভার্সে। সেজন্য, লর্ড অব দ্য রিংস থেকে শুরু করে হ্যারি পটার, দ্য উইচার, গেম অব থ্রোন্সসহ দুনিয়াকাঁপানো সকল ফ্যান্টাসি উপকরণেই ড্রাগনের অবাধ বিচরণ বিদ্যমান। জর্জ আর. আর. মার্টিনের সৃষ্ট ‘অ্যা সং অব আইস অ্যান্ড ফায়ার’ ইউনিভার্সে টারগেরিয়ান রাজবংশের পুরো ইতিহাসই লেখা হয়েছে ড্রাগনের মাধ্যমে। এগন টারগেরিয়ান থেকে ডেনেরিস টারগেরিয়ান, প্রত্যেকেই রাজত্ব করতে চেয়েছেন এই ড্রাগন দ্বারা। তাই আইস অ্যান্ড ফায়ার ইউনিভার্সের বড় এক অংশজুড়ে ড্রাগনের মাহাত্ম্য ও উপাখ্যান বিস্তৃত। এই ইউনিভার্সের শক্তিশালী সকল ড্রাগন নিয়েই এই আলোচনা। গেম অব থ্রোন্সে দেখানো ডেনেরিসের তিন ড্রাগনকে বাদ দিয়ে বাকি সব ড্রাগন প্রাধান্য পাবে এখানে। পাঠকের সুবিধার্থে লেখাটি মোট দুই পর্বে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। আজ রইলো এই আলোচনার দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।
পড়তে পারেন: আইস অ্যান্ড ফায়ার ইউনিভার্সের শক্তিশালী যত ড্রাগন | পর্ব – ১
ড্রিমফায়ার
ড্রিমফায়ার ছিল পূর্ণবয়স্কা এক ড্রাগন। প্রথমে সে ওল্ড কিংয়ের বোন রেইনা টারগেরিয়ানের বাহক হলেও পরবর্তীতে তাকে বাগিয়ে নেয় হেলেনা টারগেরিয়ান। ড্রিমফায়ার বেড়ে উঠেছিল ড্রাগনপিটের আস্তাবলে। ড্রিমফায়ারের জন্ম এগন ফার্স্ট টারগেরিয়ানের রাজত্বকালে। এগনের প্রথম নাতনি রেইনা টারগেরিয়ান ৩৫ এসিতে ড্রিমফায়ারের চালক হয়ে যান। ৪১ এসিতে রেইনা তার ভাই এগন সেকেন্ড টারগেরিয়ানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে, তাদেরকে এক রাজকীয় নিমন্ত্রণে পাঠান তাদের বাবা এনিস ফার্স্ট টারগেরিয়ান। ওই দাওয়াতে রেইনা তার ড্রাগন ড্রিমফায়ারকে সাথে করে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু বাবার নিষেধে পরবর্তীতে সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কারণ, রেইনার স্বামী এগন তখনো কোনো ড্রাগন বাগাতে পারেননি। স্ত্রী ড্রাগনে চড়বে, আর স্বামী চড়বে ঘোড়ায়; জিনিসটা এনিসের চোখে পুরোপুরি বেমানান লাগার কারণেই তার পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা চলে আসে। ড্রিমফায়ার তখন কিংস ল্যান্ডিংয়েই থেকে যায়।
গৃহযুদ্ধের সময় ছয় বছর বয়সী সন্তানকে হারিয়ে পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে যান রানি হেলেনা টারগেরিয়ান। শারীরিক ও মানসিকভাবে এতটাই বিমর্ষ হয়ে পড়েন যে, ড্রাগনে চড়ার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেন তিনি। দুঃখে তিনি জানালা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। হেলেনার মৃত্যুমুহূর্তে গগনবিদারী চিৎকারে আকাশ-বাতাস তোলপাড় করে ফেলে ড্রিমফায়ার। সাথে গলার দুইটা শিকলও ছিঁড়ে ফেলে সে। ড্রাগনপিটের স্টোর্মিংয়ের সময় চারটা ড্রাগনকে শিকল বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে শিকল ভেঙে শুধু মুক্ত হতে পেরেছিল ড্রিমফায়ার। জীবদ্দশায় সে কোনো গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ লড়েনি।
সিলভারউইং
ড্রাগন সিলভারউইংয়ের ডানা দেখলে মনে হতো দক্ষ কোনো কারুশিল্পী হয়তো ওর ডানা রূপালী রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে। জীবদ্দশায় সে বহু যুদ্ধ লড়েছে। ড্যান্স অভ দ্য ড্রাগন্সে বেঁচে থাকা গুটিকয়েক ড্রাগনের মধ্যে সে ছিল অন্যতম। সে মোট দুইজন আরোহীকে পিঠে চড়িয়েছে। প্রথমজন হলেন রানি অ্যালিসেন টারগেরিয়ান, দ্বিতীয়জন হলেন সার উল্ফ হোয়াইট। ৩৬ এসিতে অ্যালিসেনের বোন রেইনা টারগেরিয়ান অ্যালিসেনকে যে ড্রাগনের ডিম উপহার দিয়েছিলেন, তা থেকেই সিলভারউইংয়ের জন্ম। সিলভারউইং, কুইকসিলভার, এবং ভারমিথর – এই তিন ড্রাগনের আগুন দিয়েই সম্রাট এনিস ফার্স্ট টারগেরিয়ানের মৃতদেহ দাহ করা হয়েছিল।
৪৮ এসিতে সিলভারউইংকে নিয়ে প্রথম আকাশে চড়েন অ্যালিসেন টারগেরিয়ান। মেগর ফার্স্ট টারগেরিয়ানের মৃত্যুর পর অ্যালিসেন সিলভারউইংকে নিয়ে কিংস ল্যান্ডিংয়ের পানে রওয়ানা দেন। সাথে তার ভাই জ্যাহারিস ভারমিথরে করে, এবং তার বোন রেইনা ড্রিমফায়ারে করে অ্যালিসেনের সঙ্গ দিয়েছিলেন। কিংস ল্যান্ডিংয়ে আসার মূল উদ্দেশ্য হলো আয়রন থ্রোন দাবি করা। ৫৪ এসিতে অ্যালিসেন সিলভারউইংকে নিয়ে ওল্ডটাউনে গিয়েছিলেন হাই সেপ্টনের শেষকৃত্যে যোগ দিতে।
অ্যালিসেনের পর সিলভারউইংয়ের মালিক হন সার উল্ফ হোয়াইট। উল্ফ হোয়াইট ছিলেন ড্যান্স অভ দ্য ড্রাগনসের সময়কার একজন ড্রাগনসিডার। উল্ফ সিলভারউইংকে নিয়ে গুলেটের এক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ভারমিথর, শিপস্টিলার, ভারম্যাক্স, এবং সিলভারউইং – এই চার ড্রাগন মিলে থ্রি ডটার্সের মোট নব্বইটির মতো যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছিল। ১৩৬ এসি – ১৫৩ এসির মধ্যে মারা যায় সে।
শিপস্টিলার
গ্রে ঘোস্টের পর তালিকায় জায়গা করে নেওয়া দ্বিতীয় বুনো ড্রাগন হচ্ছে শিপস্টিলার। যে কয়টা ড্রাগনের পিঠে টারগেরিয়ান বংশের কেউ চড়তে পারেনি, তার মধ্যে শিপস্টিলারের নাম বেশ জনপ্রিয়। ভেড়ার মাংস খুব বেশি পছন্দ করতে বলে স্মলফোকেরা এর নাম দিয়েছিল শিপস্টিলার। সে বাস করত ড্রাগনমন্টের পিছনে, এবং শিকারস্থল নির্দিষ্ট ছিল ড্রিফমার্ক এবং ওয়েন্টওয়াটারের মধ্যে। ড্যান্স অভ দ্য ড্রাগনের প্রাক্কালে ড্রাগনস্টোনে বাস করা তিন বুনো ড্রাগনের মধ্যে শিপস্টিলার ছিল অন্যতম। কিং জ্যাহারিস ফার্স্ট টারগেরিয়ান যখন টগবগে তরুণ, তখন ডিম ফুটে জন্ম হয় শিপস্টিলারের।
ড্যান্স অভ দ্য ড্রাগন্স শুরু হবার পর জ্যাকারিস ভেলেরিয়ন সকল ড্রাগনসিডদের ডেকে ড্রাগন বাগিয়ে নিতে বলেন। শিপস্টিলার ছিল সে চার ড্রাগনের মধ্যে একটি, যার পিঠে চড়ার জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়েছে ড্রাগনসিডেরা; কিন্তু শেষমেশ তাতে সফল হয়েছিল নেটল নামে এক মেয়ে। নেটল টারগারিয়ান বংশের কেউ নন, বরং ছিলেন একজন ‘বাস্টার্ড’। সিস্মোক, ভারমিথর, এবং, সিলভারউইং মিলে যত মানুষ মেরেছে, তার বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে শিপস্টিলার একাই। রেইনেরা টারগেরিয়ানের আদেশে শিপস্টিলারকে নিয়ে ব্যাটেল অভ গুলেটে অংশগ্রহণ করেছিল নেটল। রিনেরার প্রয়াণের পর কিং এগন সেকেন্ড টারগেরিয়ান যখন আয়রন থ্রোন পুনরায় দখল করেন, তখন শেষবারের মতো শিপস্টিলারকে মাউন্টস অভ দ্য মুনের ক্র্যাকক্ল পয়েন্টে দেখা গিয়েছিল।
ভারমিথর
ওয়েস্টেরসের ইতিহাসে ভারমিথরের খ্যাতি ছড়িয়ে ছিল বৃহত্তম ড্রাগন হিসেবে খ্যাত। শক্তিমত্তা, হিংস্রতা, ক্ষিপ্রতা, এবং উন্মত্ততায় ছিল তার জুড়ি মেলা ভার। টারগেরিয়ান শাসকদের পিঠে নিয়ে সে বহু যুদ্ধ লড়েছে। তামাটে বর্ণের বিশাল ডানা নিয়ে খ্যাপাটে এই ড্রাগন দাপিয়ে বেড়াত আকাশ-বাতাস। ৪৮ এসিতে তার চেয়ে বড় শুধু আর দুইটা ড্রাগনই ছিল – ব্যালেরিয়ন এবং ভ্যাগার।
প্রথমে সে তার আরোহী হিসেবে গ্রহণ করে প্রিন্স জ্যাহারিস টারগেরিয়ানকে, ৪৮ এসিতে। কিং মেগর ফার্স্ট টারগেরিয়ানের আকস্মিক মৃত্যুর নয়দিন পর ভারমিথরের পিঠে চড়েই জ্যাহারিস আয়রন থ্রোনের দাবি আদায়ে কিংস ল্যান্ডিংয়ে পৌঁছান। রাজত্বকালে জ্যাহারিস ফার্স্ট এবং তার স্ত্রী-বোন রানি অ্যালিসেন টারগেরিয়ান ভারমিথরসহ মোট ছয়টি ড্রাগন নিয়ে উইন্টারফেলে ভ্রমণ করেছিলেন। ১০৩ এসিতে জ্যাহারিসের মৃত্যুর পর প্রভুশূন্য হয়ে পড়ে ভারমিথর। জাহারিসের উত্তরসূরি ভিসেরিস ফার্স্ট টারগেরিয়ানের আমলেও নতুন করে কেউ বসেনি ভারমিথরের পিঠে। নিঃসঙ্গ এই সময়টা ভারমিথর কাটিয়েছিল ড্রাগনস্টোনের এক দ্বীপে। ১২৯ এসিতে ‘ড্যান্স অভ দ্য ড্রাগন্স’ শুরু হবার পর লর্ড গরমন পোষ মানাতে চেয়েছিলেন ভারমিথরকে। কিন্তু, ভারমিথর তার মাথা নুইয়েছিল হিউ হ্যামার নামে এক বাস্টার্ডের কাছে। এই হিউ ভারমিথরকে নিয়ে পূর্ণ উদ্যমে অংশগ্রহণ করেছিল ব্যাটেল অভ গুলেটে। ওইসময় তার বয়স ছিল একশ’র কাছাকাছি।
দ্য ক্যানিবল
টারগেরিয়ান শাসনামলে অধিকাংশ ড্রাগন যুদ্ধ-বিগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও কিছু ড্রাগন ছিল ব্যতিক্রম। নিজে ড্রাগন হয়ে অন্য ড্রাগনকে খেয়ে ফেলার স্বভাব তখন বিদ্যমান ছিল এক ড্রাগনের মধ্যে। স্বজাতি ভক্ষণ প্রথা অনুসরণ করে মৃত ড্রাগন, নবজাতক ড্রাগন, এবং ড্রাগনের ডিম খেয়ে ফেলত বলে ড্রাগনস্টোনের স্থানীয় স্মলফোকেরা তার নাম দিয়েছিল দ্য ক্যানিবল। যার বাংলা অর্থ হচ্ছে, ‘স্বগোত্রীভোজী’।
ড্যান্স অভ দ্য ড্রাগন্সের সময় ক্যানিবল বাস করত ড্রাগনস্টোনে। ড্রাগনস্টোনের আদিবাসী কিছু স্মলফোকের দাবি, ১১৪ বিসিতে টারগেরিয়ানরা এই দ্বীপে পা রাখার আগ থেকেই ক্যানিবল এই দ্বীপে বসবাস করে আসছে। ১২৯ এসিতে প্রিন্স জ্যাকারিস ভেলেরিয়ন ড্রাগন বাগানোর অনুমতি দিলে, ড্রাগনসিডারদের কেউ ভয়ে ক্যানিবলের কাছে ঘেঁষেনি। কারণ, পান থেকে চুন খসলেই যেতে হবে ক্যানিবলের পেটে। দ্য ক্যানিবল হলো সে চার ড্রাগনের মধ্যে একটি, যে ড্যান্স অভ দ্য ড্রাগন্সের পরেও বেঁচে রয়েছিল। তবে যুদ্ধের পর সে লাপাত্তা হয়ে যায়। দ্য ক্যানিবলের পিঠে কেউ কখনো চড়তে পারেনি।
সিস্মোক
পাণ্ডুবর্ণের রূপালী-ধূসর ড্রাগন সিস্মোক তার জীবদ্দশায় সার লেইনর ভেলেরিয়ন এবং ড্রাগন সিড অ্যাডাম অভ হালকে পিঠে চড়িয়েছে। আকারে সে ছিল টেসারিয়নের প্রায় সমান কিন্তু ভারমিথর থেকে তিনগুণ ছোট। ১০১ এসিতে, লেইনরের সাথে জোট বাধে সিস্মোক। সিস্মোককে নিয়ে লেইনরের অহংকারের অন্ত ছিল না, বুক ফুলিয়ে গর্ব করতেন তিনি। ১২০ এসিতে লেইনরের মৃত্যুর পর প্রায় এক দশকের মতো চালক-বিহীন অবস্থায় ড্রাগনমন্টে কাটায় সিস্মোক। ড্যান্স অভ দ্য ড্রাগন্সের সময় সিস্মোক রিনেরার এক রক্ষীকে পুড়িয়ে মেরে ফেলে। এরপর তাকে বাগে আনতে সক্ষম হন পনের বছর বয়সী কিশোর অ্যাডাম অভ হাল। সিস্মোকসহ আরও পাঁচ ড্রাগন ট্রায়ার্কিদের বিরুদ্ধে ব্যাটেল অভ গুলেটে অংশগ্রহণ করেছিল। ১০১ এসিতে জন্মগ্রহণ করা এই ড্রাগন টাম্বলটোনে ১৩০ এসিতে মৃত্যুবরণ করে।
মিরাক্সিস
মিরাক্সিস ছিল টারগেরিয়ান হাউজের প্রচণ্ড শক্তিশালী এক ড্রাগন। তার নামকরণ করা হয়েছিল ওল্ড ভ্যালেরিয়ার একজন দেবতার নামানুসারে। এগন কনকোয়েস্টের সময় তার আরোহী ছিলেন রানি রেনিস টারগেরিয়ান। রেনিস মিরাক্সিসের চালক হয়েছিলেন, তার ভাই এগনকে বিয়ে করার কিছু সময় পূর্বে। আকারে মেরাক্সেস ছিল ভ্যাগারের থেকে বড় কিন্তু ব্যালেরিয়নের চেয়ে ছোট। এক নিমিষে সে একটি আস্ত ঘোড়া গিলে ফেলতে পারত। তার সোনালী রঙের চোখ থেকে সোনালী আভা যেন টিকরে পড়ত। এগন কনকোয়েস্টের সময় ফিল্ড অভ ফায়ারই একমাত্র যুদ্ধ, যেটাতে তৎকালীন টারগেরিয়ান বংশের শ্রেষ্ঠ তিন ড্রাগন অংশ নিয়েছিল। মেরাক্সেস, ভ্যাগার এবং ব্যালেরিয়ন মিলে হাজারের উপর যোদ্ধাকে জীবন্ত পুরিয়ে মেরেছিল। কিং মার্ন নাইন্থ গার্ডেনার ওই যুদ্ধে মারা যাওয়ার পর হাউজ গার্ডেনার পুরোপুরি ধুলোয় মিশে যায়।
৪ এসিতে প্রথম ডোর্নিশ যুদ্ধ শুরু হলে, এগন ওই রাজ্য জয় করতে চান। প্রথমে মিরাক্সিসে করে পাঠানো হয় রানি রেইনিসকে। তিনি মিরাক্সিসকে দিয়ে পুরো প্ল্যাঙ্কি শহর জ্বালিয়ে ছারখার করে দেন। ১০ এসিতে হেলহল্টে স্করপিয়ন থেকে ছোড়া এক লৌহ নির্মিত তীর মিরাক্সিসের চোখ ভেদ করে ফেলে। সাথে সাথে মিরাক্সিসে এবং রেইনিস শূন্য থেকে মাটিতে ভূপাতিত হন।
টারগেরিয়ান বংশের বাকি আঠারোটি ড্রাগনের খুলির সাথে মিরাক্সিসের খুলিও রেড কিপের দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয়। রবার্ট’স রেবেলিয়নের পর কিং রবার্ট ফার্স্ট ব্যারাথিয়ন রেড কিপ থেকে সেই ড্রাগনের খুলি সরিয়ে তা এক স্যাঁতসেঁতে কক্ষে জড়ো করে রাখেন। ২৮৪ এসিতে টিরিয়ন ল্যানিস্টার যখন তার বোন সার্সির বিয়েতে রাজধানী এসেছিলেন, তখন তিনি ওই বদ্ধ কক্ষে মিরাক্সিসের খুলি দেখতে পান।
ভ্যাগার
টারগেরিয়ান ড্রাগনদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার যুদ্ধের ময়দানে অংশগ্রহণ করার রেকর্ড ভ্যাগারের দখলে। ড্যান্স অভ দ্য ড্রাগন্স শুরু হবার সময় ড্রাগনদের মধ্যে সে-ই ছিল আকারে সবচেয়ে বৃহৎ। রানি ভিসেনিয়া টারগেরিয়ান ছিলেন ভ্যাগারের প্রথম আরোহী। ভিসেনিয়া ছাড়াও ভ্যাগারের পিঠে চড়ে রাজ্য শাসন করেছেন প্রিন্স বেইলন টারগারিয়ান, লেডি লেইনা ভেলেরিয়ন, প্রিন্স এইমন্ড টারগারিয়ান। ভ্যাগারের নামকরণ করা হয়েছিল ওল্ড ভ্যালেরিয়ার এক দেবতার নামানুসারে। ডিম ফুটে তার জন্ম ড্রাগনস্টোনে, সেঞ্চুরি অভ ব্লাডের সময়। কিংবদন্তি অনুসারে, ভ্যাগারের নিঃশ্বাস এতটাই উষ্ণ ছিল যে তা অনায়াসে একজন নাইটের বর্ম-আবরণ গলিয়ে দিয়ে তাকে ঝলসে ফেলতে পারত। ড্যান্স অভ দ্য ড্রাগন্সের ইভেন্ট আসতে আসতে সে প্রায় শ’খানেকের মতো যুদ্ধ লড়ে ফেলেছিল। ওই হিসেবে ভ্যাগার ছিল ব্যালেরিয়নের প্রায় সমকক্ষ এবং সবচেয়ে বয়ঃজ্যেষ্ঠ ড্রাগন। ভ্যাগারের গগনবিদারী চিৎকারে স্টর্ম এন্ডের মজবুত ভিত পর্যন্ত কেঁপে উঠত। ৩৭ এসিতে কিং এগন ফার্স্ট টারগেরিয়ান মারা গেলে, তার দেহ পুড়ানো হয় ভ্যাগারের আগুন দিয়েই।
৪১ এসিতে কিং এনিস ফার্স্ট টারগেরিয়ান তার জ্যেষ্ঠপুত্র প্রিন্স এগনকে ড্রাগনস্টোনের প্রিন্স হিসেবে ঘোষণা করলে ক্রোধের বশে ড্রাগনস্টোন ত্যাগ করেন ভিসেনিয়া টারগেরিয়ান। জনশ্রুতি অনুসারে, ভিসেনিয়া ভ্যাগারকে নিয়ে ড্রাগনস্টোন ত্যাগ করার সময় নাকি চাঁদ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছিল। ভিসেনিয়ার মৃত্যুর পর প্রায় ২৯ বছর ধরে কেউ ভ্যাগারের পিঠে চড়েনি। ৭৩ এসিতে প্রিন্স বেইলন দ্য ব্রেইভ নাইটহুড উপাধি লাভের পর ভ্যাগারকে বাগে নিয়ে আসেন। ১০১ এসিতে বেইলনের প্রয়াণের পর আবারও চালকহীন হয়ে যায় ভ্যাগার। এরপর ভ্যাগারের পিঠে চেপে বসেন লেডি লেইনা ভেলেরিয়ন, মাত্র বারো বছর বয়সে। লেইনা প্রিন্স ডেইমনের সাথে ১১৫ এসিতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবার পর তারা ভ্যাগার এবং কারাক্সিসের পিঠে চড়ে ন্যারো সি পাড়ি দিয়ে পেন্টোস, ভলান্টিস, কোহোর, এবং নরভোসে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বিখ্যাত দুই ড্রাগনকে দেখার জন্য প্রচুর লোকের সমাগম হতো। ১২০ এসিতে মৃত্যুবরণ করেন লেইনা। মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও তিনি ভ্যাগারের পিঠে চড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি ছিল না। লেইনার মৃত্যুর পর দশ বছর বয়সী এইমন্ড টারগেরিয়ান ভ্যাগারকে নিজের ড্রাগন হিসেবে বাগিয়ে নেন।
ব্যালেরিয়ন
দ্য ব্ল্যাক ড্রেড নামে খ্যাত ড্রাগন ব্যালেরিয়নকে বলা হয় হাউজ টারগেরিয়ান তথা আইস অ্যান্ড ফায়ার ইউনিভার্সের সর্বশ্রেষ্ঠ ড্রাগন। শক্তিমত্তা, বা ক্ষিপ্রতায় তার সাথে অন্য ড্রাগনের পেরে উঠা দায়। ব্যালেরিয়নের জন্ম ভ্যালিরিয়ার ফ্রিহোল্ডে। ডুম অভ ভ্যালিরিয়ার ধ্বংস থেকে নিজেকে বাঁচাতে এইনার টারগেরিয়ান যে পাঁচটা ড্রাগন নিয়ে ড্রাগনস্টোনে এসে থিতু হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ব্যালেরিয়ন অন্যতম।
যুদ্ধক্ষেত্রে সে দুর্ধর্ষ এক যুদ্ধাস্ত্র, অপ্রতিরোধ্য এবং অপরাজেয় এক নিয়ামক। সে দলে থাকা মানে জয়ের পাল্লা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভারী হয়ে যাওয়া। পুরো ওয়েস্টেরসকে নিজ শাসনের অধীনে একত্র করতে এগন ফার্স্ট টারগেরিয়ান অমোঘ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন দ্য ব্ল্যাক ড্রেডকে। সবাই তার কাছে হাঁটু গেড়ে বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল।
ব্যালেরিয়নের নামকরণ করা হয় ফ্রিহোল্ডের এক প্রাচীন দেবতার নামানুসারে। ব্যালেরিয়নের ডানা ছিল কালো রংয়ের। ডানার ব্যাপ্তি এতই বিশাল ছিল যে তার ছায়া পুরো শহরকে ঢেকে ফেলত পারত। তরবারির মতো তীক্ষ্ণ দাঁত, আর বিশাল বড় চোয়াল একটা লোমশ ম্যামথ গিলে ফেলার উপযুক্ত ছিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তার আগুনের হলকার রঙও ছিল কালো। ব্যালেরিয়ন তার আগুন দিয়ে অনায়াসেই পাথর এবং লোহা গলিয়ে ফেলার পাশাপাশি বালিকে পুড়িয়ে কাঁচে পরিণত করতে পারত। এগন ছাড়াও ব্যালেরিয়নকে নিয়ে আকাশে চড়ে বেরিয়েছেন কিং মেগর ফার্স্ট টারগেরিয়ান, প্রিন্সেস এইরিয়া টারগেরিয়ান, এবং প্রিন্স ভিসেরিস টারগেরিয়ান।
এগন তার বোন ভিসেনিয়া এবং রেনিসকে বিয়ে করার আগেই ব্যালেরিয়নকে বাগিয়ে নিয়েছিলেন। এগনের নিকট পরাজিত সকল শত্রুর তরবারি দিয়ে যে আয়রন থ্রোন নির্মাণ করা হয়েছিল, সে তরবারি গলানো হয়েছিল ব্যালেরিয়নের আগুন দিয়েই। এগন ফার্স্ট টারগেরিয়ানের মৃত্যুর পর ব্যালেরিয়নকে দখল করে নেয় তার সন্তান প্রিন্স মেগর টারগেরিয়ান।
শাস্তি হিসেবে মেগরকে একসময় পেন্টসে নির্বাসিত করা হলে, তিনি সাথে করে ব্যালেরিয়নকে নিয়ে যান। কিং এনিস ফার্স্ট টারগেরিয়ানের মৃত্যুর পর ব্যালেরিয়নের পিঠে চড়েই আয়রন থ্রোন দখলের জন্য ওয়েস্টেরসে পা রাখেন তিনি। ফেইথ মিলিট্যান্টদের উত্থানের সময় কিং মেগর ব্যালেরিয়নের আগুন দিয়ে সেপ্ট অভ রিমেম্ব্রেন্স জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। একই ঘটনা তিনি ঘটিয়েছেন গ্রেট ফর্ক অভ দ্য ব্ল্যাকওয়াটার রাশ যুদ্ধেও।
মেগরের মৃত্যুর পর ৫৪ এসিতে প্রিন্সেস এইরিয়া টারগেরিয়ান এক সকালে হঠাৎ করে ব্যালেরিয়নের পিঠে চড়ে বসেন। এরপর তিনি প্রায় বছরখানেকের মতো লাপাত্তা ছিলেন। ব্যালেরিয়ন কিংস ল্যান্ডিংয়ে ফেরত এসেছিল ৫৬ এসি। ব্যালেরিয়নের সর্বশেষ চালক ছিলেন প্রিন্স ভিসেরিস টারগেরিয়ান, যিনি ড্রাগনটিকে বাগে আনতে ড্রাগনপিটে পদার্পণ করেন ৯৩ এসিতে। ব্যালেরিয়নের শরীরের অবনতি শুরু হয় থাকে তখন থেকেই। শ্বাস প্রশ্বাস নিতে তার বেশ কষ্ট হতো তখন। প্রিন্স ভিসেরিস তখন বুঝতে পেরেছিলেন, কিংস ল্যান্ডিং থেকে ড্রাগনস্টোনে উড়ে যাওয়ার আর কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই ব্যালেরিয়নের। ভিসেরিস করায়ত্ত করার এক বছরেরও কম সময়ে মারা যায় ব্যালেরিয়ন, ৯৪ এসিতে। তখন কিং জ্যাহারিস ফার্স্ট টারগেরিয়ানের রাজত্ব চলছিল। মৃত্যুকালে ব্যালেরিয়নের বয়স হয়েছিল প্রায় ২০০ বছর।