হিউম্যান্স আর নট ফ্রম আর্থ: সত্যিই কি তাই?

পৃথিবী; সৌরজগতের এ নীল গ্রহে প্রাণের বিকাশ হয়েছে কিছুকাল হলো। এককোষী থেকে দ্বি-কোষী, দ্বি-কোষী থেকে বহুকোষী প্রাণের বিবর্তনের মাধ্যমে গ্রহটি পূর্ণ হয়েছে প্রাণীকূলের সরব উপস্থিতিতে। বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষেরও আবির্ভাব ঘটেছে এখানে, ধীরে ধীরে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও কল্পকাহিনীর রোমাঞ্চকর ঘটনা এসব মানুষকে কৌতূহলী করে তুলেছে রহস্যের পানে অভিগমনে। জন্ম দিয়েছে চিন্তার খোরাক জোগানো অল্প-বিস্তর গল্পেরও।

এসব গল্প কখনো চমৎকারভাবে নাড়া দিয়েছে সৃষ্টিশীল মানুষের ভেতরকার জগৎকে। বিজ্ঞানী এলিস সিলভার তাদেরই একজন। পৃথিবীতে মানবের আবির্ভাব ও বিবর্তন নিয়ে গবেষণার ফলশ্রুতিতে তিনি হারিয়ে যান ভিন্ন এক জগতে। হাতরে ফেরেন সত্যিকার মানুষ রূপের অর্থ! লিখেন এক সাড়াজাগানো বই ‘হিউম্যান্স আর নট ফ্রম আর্থ’।

হিউম্যান্স আর নট ফ্রম আর্থ; Image Source: Amazon

কী আছে এই বইয়ে? এমন প্রশ্নের জবাব এক বাক্যে দেওয়া অসম্ভব। কেননা, ছোট্ট এ বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় পাঠক হারিয়ে যাবেন ভাবনার ভিন্ন এক জগতে। খুঁজে পাবেন নিজ স্বজাতির নানাবিধ সীমাবদ্ধতার অজানা রহস্যময়তা।

প্রাণের স্পন্দন থাকা মিলিয়ন-বিলিয়ন একক ও বহুকোষী প্রাণীর বিচিত্র নিবাস পৃথিবী ও মানুষের আদি উৎসের অনুসন্ধানের পানে ছুটে চলা এ বইয়ের অনুসন্ধিৎসু ঝুড়িটিও থরে থরে সাজানো হয়েছে যুক্তি দিয়ে। যে কেউ চাইলে সেই ঝুড়ি থেকে সংগ্রহ করতে পারবে থোকা থোকা চিন্তার খোরাক। আন্দোলিত করতে পারবে ভেতরকার সাতরঙা জগৎ।

মনুষ্যকূলের নানাবিধ যন্ত্রণা ও সীমাবদ্ধতা সামনে রেখে লেখক পেতে বসেছেন একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার পসরাও। একের পর এক টেনে ধরেছেন কৌতূহলোদ্দীপক আলোচনা। যেমন- বইয়ের প্রথমেই তিনি বলেছেন, প্রাণী হিসেবে মানবজাতিকে কেউ এনেছে এই পৃথিবীতে। কে এনেছে? অবশ্যই ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী কিংবা বিশেষ কোনো শক্তি! এর স্বপক্ষে তিনি মেলে ধরেছেন সতেরোটি যুক্তি।

নীল গ্রহটি পূর্ণ হয়েছে প্রাণীকূলের উপস্থিতিতে; Image Source: iStock

যেমন- পৃথিবীতে একমাত্র মানুষের চোখই সূর্যের প্রখর তাপে ঝলসে যায়, পুড়ে ছাই বর্ণ ধারণ করে ত্বক, সৃষ্টি হয় ক্যান্সারও! এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ব্যবহার করতে হয় কৃত্রিম ছাতা, হ্যাট, সান্সস্ক্রিন ও সানগ্লাসের মতো আরও নানা উপাদান। কিন্তু অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে তা হয় না। আর এখানেই রহস্যের গোলকধাঁধা।

সত্যিকার অর্থেই যদি অন্য প্রাণীদের মতো এটিই আমাদের মাতৃগ্রহ হতো, তাহলে আমাদেরও কিছু না হওয়ারই কথা! কিন্তু ঘটে চলছে তার উল্টোটা। এছাড়াও ঋতুর পরিবর্তনে সৃষ্ট অসুস্থতা, উদ্ভট খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত প্রজননে সৃষ্ট জনসংখ্যার চাপ, আত্মরক্ষার অক্ষমতা, পরিবেশের ক্ষতি ও ধ্বংসাত্মক মনোভাবের পরিণতির কথা লেখক যুৎসইভাবেই তুলে ধরেছেন তার বইয়ে।

মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে আমাদের মাতৃগ্রহের সবকিছু ঠিক কেমন হবে? লেখকের মতে, সেটি হবে অনেকটা উপরের বিষয়গুলোর ঠিক বিপরীত। যেখানে সূর্যের চারপাশে থাকবে একটি সুরক্ষিত মেঘমাল্লার আবৃত বলয়, যা সুরক্ষা দেবে অমূল্য চোখ ও ত্বককে। এত এত ঋতুর পরিবর্তনও ঘটবে না সেখানে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টি হবে না ঋতু পরিবর্তনজনিত সমস্যা। দিনের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে চব্বিশ ঘণ্টার ঘড়ির সময়ও হবে একটু বেশি। এক প্রাণোচ্ছল সভ্যতা বেড়ে উঠবে এমন মনোরম পরিবেশে।

Image Source: iStock

মাথায় পুনরায় একঝাঁক প্রশ্নের দৌড়ঝাঁপ। তাহলে আমরা কেন বা কীভাবে এসেছি এ গ্রহে? এর উত্তর লেখক চমৎকারভাবে সাজিয়ে রেখেছেন তার বইয়ে। যেমন- পৃথিবী নামক এ গ্রহে ভিনগ্রহের প্রাণীরা আমাদের রেখে গেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এ গ্রহে মনুষ্যজাতির অভাব পূরণে, অন্য প্রজাতির আধিপত্য কমাতে কিংবা বন্দী হিসেবে মহাকাশযান থেকে ছুড়ে ফেলা হয়েছে এখানে।

তাহলে আমরাও কি ভিনগ্রহের প্রাণী? হতেও পারি। কেননা, বইয়ের বিশদ বর্ণনায় নীল গ্রহ পৃথিবী, যারা আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে সেই ভিনগ্রহবাসী, যেখান থেকে নিয়ে এসেছে সেই গ্রহ- মোট তিনটি স্থানের পার্থক্য অনুযায়ী আমাদেরও রয়েছে অন্য কোনো গ্রহের বাসিন্দা হওয়ার সম্ভাবনা!

মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠবে প্রাণোচ্ছল সভ্যতা; Image Source: iStock

এভাবেই চমৎকার ঘটনাপ্রবাহের মন্ত্রমুগ্ধ বর্ণনা, সূক্ষ্ম চিন্তা-চেতনার প্রায়োগিক অর্চনা ও যৌক্তিক সরল আলোচনা দিয়ে লেখক সাজিয়েছেন তার সাড়াজাগানো বইটি। ইতি টেনেছেন পাঠকের দিকে কতগুলো অমীমাংসিত প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে। যার সমাধান খুঁজতে নিমজ্জিত থাকা একজন পাঠক পৌঁছে যাবে ভাবনার অনন্য ভুবনে। নিজের ভেতরকার রহস্যময়তাকে রাঙিয়ে তুলবে আল্পনার বর্ণিল বর্ণে, স্বপ্নিল রঙে।

Language: Bangla
Topic: Review of the book Humans are not from earth by Ellis Silver
Feature Image: iStock.

Related Articles

Exit mobile version