হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজির বইগুলোতে চরিত্রের সংখ্যা প্রায় ৭০০ এর কাছাকাছি। এতো চরিত্রকে স্বাভাবিকভাবেই সিনেমায় তুলে আনা সম্ভব নয়। বইয়ের কাহিনীকে সেলুলয়েডের ফিতায় ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে গল্পের অনেক অংশেই ছুরি-কাঁচি চালানোর পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রকেও বাদ দিতে হয়েছে। হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজির সাতটি বইয়ে তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছিল হগওয়ার্টসের প্রাঙ্গণ, কখনো বা তারা রূপ নিয়েছে গল্পের মূল প্রসঙ্গে। বইয়ে ছাপ রেখে গেছে কিন্তু সিনেমা থেকে বাদ যাওয়া এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিয়েই আজকের এই আয়োজন।
পিভস
হগওয়ার্টস দুর্গের প্রতি হাউজে অনেক ভূত থাকলেও উপদ্রবকারী ভূত হিসেবে দুর্গের আনাচে-কানাচে সর্বত্র দেখা মিলবে পিভসের। সর্বদা গণ্ডগোল পাকাতে উস্তাদ এই ভূত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও উত্যক্ত করত। ৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে হগওয়ার্টস প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই হগওয়ার্টসে বসবাস শুরু হয় পিভসের। হগওয়ার্টস প্রতিষ্ঠার পর এর কেয়ারটেকার ছিল ব্রিটিশ হাফ ব্লাড উইজার্ড হ্যাঙ্কারটন হাম্বল। শুরু থেকেই তার সাথে পিভসের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কারণ, পিভস তাকে নানাভাবে জ্বালাতন করত। মূলত তখন থেকেই সকল কেয়ারটেকারের সাথে পিভসের দা-কুমড়া সম্পর্ক শুরু হয়। ১৮৭৬ সালে কেয়ারটেকার ‘র্যানকরোস কার্প’ পিভসকে দুর্গ থেকে তাড়ানোর জন্য ‘এলাবোরেট ট্র্যাপ’ নামে কাঁচের বোতলে ‘কনটেইমেন্ট চার্ম’ দিয়ে এক ফাঁদ বানিয়েছিল। যদিও সে ফাঁদ গলে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয় পিভস।
হ্যারি পটারের সময়ে যদিও পিভসের অতি গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোনো ভূমিকা নেই, তবুও রূপালী পর্দায় পিভসকে ছাড়া হ্যারি পটার অসম্পূর্ণই থেকে যায়। অবশ্য ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফারস স্টোন’ মুভিতে পিভসের একটু অংশ ক্যামেরায় ধারণও করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা মুভি থেকে বাদ দেওয়া হয়। হগওয়ার্টসে হ্যারির প্রথম বর্ষে, হ্যারি, রন ও হারমায়োনি, অ্যারগাস ফিলচের দেওয়া কারফিউ ভেঙে ফেললে, ফিলচকে সে সম্পর্কে অবহিত করেছিল পিভস। হ্যারি স্লিদারিনের বংশধর, এরকম গুজব প্রথমে পিভসই ছড়িয়েছিল। তবে পিভস দুই উইজলি যমজ ভাই এবং স্লিদারিন হাউজের ভূত ব্লাডি ব্যারনের উপদেশ মান্য করত। হগওয়ার্টসের প্রধান শিক্ষক অ্যালবাস ডাম্বলডোরকে খুব শ্রদ্ধা করত পিভস। ফিলচের ডাকে সারা দিয়ে পিভস ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টসের সময় কেল্লার সুরক্ষার দায়িত্বে অংশ নিয়েছিল।
উইংকি
হাউজ এল্ফ উইংকি বেশি সময় নিয়ে উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ডে বিচরণ না করলেও, ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অভ ফায়ারে’ তার উপস্থিতি ছিল বেশ কিছুক্ষণ। উইংকির পরিবার ছিল ক্রাউচ পরিবারের প্রতি অনুগত। কুখ্যাত ডেথ ইটার বার্টি ক্রাউচ জুনিয়র তার বাবার সহায়তায় মৃত্যুপুরী আজকাবান থেকে পালিয়ে গিয়ে, তার অসুস্থ মাকে পলিজুস পোশন খাইয়ে তার বদলে আজকাবানে দিয়ে আসে। তখন থেকে বার্টি জুনিয়রের দেখভালের দায়িত্ব ছিল উইংকির ঘাড়ে ন্যস্ত। বার্টি জুনিয়রকে বার্টি সিনিয়র ইম্পেরিয়াস কার্স দিয়ে রেখেছিল, যাতে সে পালাতে না পারে। উইংকি এই অপকর্মের কথা বহু বছর যাবত গোপন রেখেছিল। একদিন বার্থা জরকিন্স বার্টি সিনিয়রের কাছে একটা কাগজ সই করাতে আসলে উইংকি বলেছিল, তার প্রভু বাসায় নেই। একটু অপেক্ষা করতে হবে। তখনই জরকিন্স উইংকিকে বার্টি জুনিয়রের সাথে কথা বলতে শুনে ফেলে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, বার্টি সিনিয়র মেমোরি চার্ম ব্যবহার করে জরকিন্সের স্মৃতি ভুলিয়ে দিয়েছিল।
নারী এল্ফ উইংকি কখনো মুক্ত হতে চায়নি। বার্টি সিনিয়র তাকে এক জাদুর ছড়ি হাতে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখার পর, মুক্তির মাধ্যমে ছাটাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, বার্টি সিনিয়রের মতে, উইংকি যেকোনো সময় বার্টি জুনিয়রের হুমকির কারণ হতে পারে। এই ঘটনার পর উইংকি প্রচণ্ড বিষণ্ণ হয়ে নেশায় ডুবে থাকতে শুরু করে। কারণ, সে ভেবেছিল, সে ক্রাউচ পরিবারকে সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তখন আরেক এল্ফ ডবি তাকে হগওয়ার্টসের রান্নাঘরে কাজ পাইয়ে দিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের ২ মে, উইংকি এল্ফ ক্রিচারের নেতৃত্বে ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টসে অংশগ্রহণ করেছিল। স্ক্রিপ্ট রাইটার উইংকিকে দেখানোর বদলে বার্টি জুনিয়রের ব্যাক-স্টোরি ডেভেলপিংয়ে গুরুত্ব দিয়েছিল বেশি। মুভিতে উইংকির অনুপস্থিতি ক্রাউচ সিনিয়রের মৃত্যু এবং ক্রাউচ জুনিয়রকে নিয়ে বেশকিছু প্লটহোল তৈরি করে, যেগুলোর উত্তর কখনো ব্যাখ্যা করা হয়নি।
লুডো ব্যাগম্যান
ট্রাইউইজার্ড টুর্নামেন্ট হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজির খুব গুরুত্বপূর্ণ এক ইভেন্ট হলেও, সে টুর্নামেন্টের সংগঠক এবং অবসরপ্রাপ্ত কুইডিচ খেলোয়াড় লুডু ব্যাগম্যানকে ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অভ ফায়ার’ সিনেমায় দেখানো হয়নি। বইয়ে ব্যাগম্যান ‘ম্যাজিক্যাল গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস’ এর প্রধান, কুইডিচ বিশ্বকাপে ধারাভাষ্যকার, এবং ট্রাইউইজার্ড টুর্নামেন্টের বিচারক ছিলেন। তিনি ছিলেন জুয়ার নেশায় আসক্ত। তাই, হ্যারির উপর তিনি মোটা অংকের অর্থ বাজি ধরেছিলেন। বিশ্বকাপ শুরুর আগে তিনি সাঁইত্রিশ গ্যালিয়ন, পনেরটি সিকল এবং তিনটি নাট এবং একটি জোক ওয়ান্ড দিয়ে ফ্রেড এবং জর্জের সাথে বাজি ধরেছিলেন। বিশ্বকাপের পর দেউলিয়া হবার পর তিনি লেপ্রেচান গোল্ড দিয়ে তার ঋণদাতাদের ঠকানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাই, উইজলি ভ্রাতৃদ্বয় স্কুলে ব্যাগম্যানকে আটকে রেখে তাদের পাওনা টাকা আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু তারা তাতে সফল হতে পারেনি। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর, লুডোকে স্টেডিয়ামের কাছের এক জঙ্গলে একদল গবলিন আটকে ফেলে। লুডো গবলিনদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে সোনা ধার নিয়েছিল কিন্তু তাদেরকে তা ফেরত দেয়নি। গবলিনরা তখন তার কাছে থাকা সমস্ত টাকা কেড়ে নিয়েছিল, কিন্তু এগুলো তাদের ঋণ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
প্রফেসর কাথবার্ট বিনস
হগওয়ার্টসের প্রধান দুর্গে একটি অফিস প্রফেসর কাথবার্ট বিনসের জন্য বরাদ্দ ছিল। তিনি প্রথম তলার 4F শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকতা করতেন। একসময় বয়সের ভারে নুইয়ে পড়লেও তিনি পাঠদানের কার্যক্রম অব্যাহত রেখে যান। ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে একদিন স্টাফ রুমে ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি মারা যান। পরবর্তীতে তিনি ভূত হয়ে হগওয়ার্টসে থাকতে শুরু করেন। তবে নিজের প্রিয় শিক্ষকতা ছাড়েননি। তিনি ভূত হয়েও শিক্ষার্থীদের নানা সময়ের গবলিন বিদ্রোহ এবং দৈত্য-যুদ্ধের বিষয়ে পড়াতেন। প্রফেসর বিনসের পাঠ কার্যক্রমকে হগওয়ার্টসের সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিস হিসাবে বিবেচনা করা হতো। ১৯৯১-৯২ স্কুল বছরে তিনি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ‘ইউরিক দ্য ওডবল’ এবং ‘এমেরিক দ্য ইভিল’ এর মতো অসংখ্য ঐতিহাসিক জাদুকর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছিলেন। পরের শিক্ষাবর্ষে তিনি তার দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসে ‘চেম্বার অফ সিক্রেটস’ এর কিংবদন্তি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু মুভিতে তার বদলে সে সম্পর্কে বর্ণনা করতে দেখা যায় মিনারভা ম্যাকগোনাগলকে।
O.W.L সম্পন্ন করার আগ পর্যন্ত তিনি হ্যারি পটারদের ‘জাদুবিদ্যার ইতিহাস’ সম্পর্কে খুঁটিনাটি পড়াতেন। তার অগোছালো পাঠদান পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের কাছে একপ্রকার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার ক্লাসে শিক্ষার্থীরা ভালো করে মনোযোগ দিত না। সত্তর দশকে তিনি জেমস পটাকে প্রাচীন গ্রিসের এক নারী জাদুকরের চকলেট ফ্রগ কার্ড দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেটা চলে যায়, প্রফেসর কুইরেলের হাতে। যেটা তিনি তার ভল্ট নম্বর ৯৯৮ এ রেখে দিয়েছিলেন।
চার্লি উইজলি
হ্যারি পটার সিরিজের মুভিগুলোতে পুরোটা সময় জুড়ে উইজলি পরিবারের সকল সদস্যকে দেখানো হলেও সেখান থেকে দুর্ভাগ্যবশত বাদ পড়ে গেছে উইজলি পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান চার্লি উইজলি। তবে বইয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার উপস্থিতি বিদ্যমান ছিল। ড্রাগন-বিশারদ চার্লি মূলত ড্রাগন নিয়ে রোমানিয়ায় কাজ করত। ১৯৮৪-১৯৯১ সাল পর্যন্ত হগওয়ার্টসে অধ্যয়নকালে এই পিউর ব্লাড উইজার্ড গ্রিফিন্ডর হাউজের প্রিফেক্ট এবং কুইডিচ ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করেছে। ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফারস স্টোন’ এ হ্যাগ্রিডকে জিজ্ঞাসাবাদের আগেই সে বাচ্চা ড্রাগন নবার্টকে অন্য স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে সে ভলডেমর্টের বিরুদ্ধে ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টসে অংশ নিয়ে দারুণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল। পরবর্তীতে সে আর বিয়ে করেনি। ড্রাগন নিয়ে গবেষণা করেই বাকি জীবন কাটিয়েছিল। তবে সে তার ভাই-বোনের ছেলেমেয়েদের সাথে সময় কাটানোর জন্য মাঝেমধ্যে ইংল্যান্ডে চলে আসত।
অ্যালিস এবং ফ্র্যাঙ্ক লংবটম
হ্যারি পটার মুভিতে হাবাগোবা, সহজ-সরল গোছের নেভিল লংবটমকে দেখে থাকলেও, অনেকেই তার মা-বাবা অ্যালিস ও ফ্র্যাঙ্ক লংবটম সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সের সক্রিয় সদস্য এবং অরোর হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন এই দম্পতি। তারা ভলডেমর্টের মতো দুর্ধর্ষ জাদুকরের মুখোমুখিও হয়েছে তিন-তিনবার। নিজের প্রথম উত্থানের পর অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সের সামনে দাঁড়াতে পারেনি ভলডেমর্ট।
কিন্তু যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে, নেভিল লংবটম যখন সবেমাত্র শিশু, তখন বেলাট্রিক্স লেস্ট্রেঞ্জ, তার স্বামী, এবং বার্টি ক্রাউচ জুনিয়র মিলে অ্যালিস ও ফ্র্যাঙ্কের উপর অমানবিক জুলুম চালিয়েছে। নির্যাতনের একপর্যায়ে তারা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তী সময়ে তাদেরকে সেন্ট মাঙ্গোস হাসপাতালে পাঠানো হয়। অরোর থাকাকালীন, অ্যালিস্টার মুডিদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে ভলডেমর্টের অনুসারীদের গ্রেফতারে সাহায্য করেছেন এই লংবটম দম্পতি।
গন্ট পরিবার
হ্যারি পটারে প্রায় সকল চরিত্র হ্যারি পটারের সামসময়িক হলেও স্মৃতি পাত্রের মাধ্যমে অতীতের কিছু চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তেমনিভাবে ভলডেমর্টের বংশধর এবং সালাজার স্লিদারিনের উত্তরসূরি গন্ট পরিবারকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ ব্লাড প্রিন্স’ বইয়ে। ভলডেমর্ট তথা টম রিডলের মা মেরোপি গন্ট ছেলেবেলা থেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পিওর-ব্লাড হওয়া সত্ত্বেও তিনি ঠিকমতো জাদু ব্যবহার করতে পারতেন না। কাল পরিক্রমায় একসময় মেরোপি গন্ট টম রিডল সিনিয়র নামে এক মাগল যুবকের প্রেমে পড়ে তাকে লাভ পোশনের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে আষ্টেপৃষ্ঠে ফেলল। সে কথা মেরোপির বাবা মারভোলো গন্ট জানতে পেরে টম রিডলকে মারার চেষ্টা করে। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও মারভোলো তাতে ব্যর্থ হয়।
জাদুবলে মাগল হত্যার চেষ্টা করায়, সে ‘ম্যাজিক্যাল ক্রিমিনাল আইন’ ভেঙে ফেলেছিল। সে অপরাধে তাকে পাঠানো হয় ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন আজকাবান কারাগারে। টম রিডল সিনিয়রের সাথে অবাধ মেলামেশার কারণে একসময় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায় মেরোপি গন্ট। পেটে সন্তান থাকায় টমের উপর লাভ পোশন প্রয়োগ করা বন্ধ করে দেয় সে। ভেবেছিল, সন্তানের প্রতি টান জন্মানোর ফলে কখনো তাকে ছেড়ে যাবে না টম রিডল সিনিয়র। কিন্তু ফলাফল হলো এর বিপরীত। মেরোপিকে বিপদসংকুল অবস্থায় রেখে নিরুদ্দেশ হয় টম রিডল সিনিয়র। গন্ট পরিবারের কাছে স্লিদারিনের রেখে যাওয়া একটা লকেট সংরক্ষিত ছিল। অর্থের টানাপড়েনে মেরোপি স্লিদারিনের সে লকেট বিক্রি করে দেয় ‘বর্গিন এন্ড বার্কস’ নামক এক দোকানে। তারপর লন্ডনের ওলস অরফানেজের উদ্দেশে পাড়ি জমায়। ওখানেই জন্ম হয় জাদু জগতের অন্যতম সেরা খলনায়ক টম মারভোলো রিডলের। গন্ট পরিবারের এই কাহিনী রূপালী পর্দায় বোনা হলে ভলডেমর্টের অরিজিন অনেকটাই খোলাসা হয়ে যেত।
আরিয়ানা ডাম্বলডোর
আরিয়ানা ডাম্বলডোর ছিলেন হগওয়ার্টসের ইতিহাসে সেরা প্রধান শিক্ষক এবং জাদু জগতের অন্যতম সেরা জাদুকর অ্যালবাস ডাম্বলডোরের বোন। ছয় বয়সে অ্যারিয়ানার উপর একদল মাগল যুবক আক্রমণ করায় ক্রোধের বশে তাদের উপর জাদু প্রয়োগ করেছিলেন অ্যালবাসের বাবা পারসিভ্যাল ডাম্বলডোর। জাদু নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করার দরুন, তার বাবাকে আজীবনের জন্য আজকাবান কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল। সেখানে থাকা অন্ধকারকে নিত্যসঙ্গী বানিয়ে, নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত ধুঁকতে ধুঁকতে একেবারে ভগ্নদশার দ্বারপ্রান্তে ঠেকেছেন তিনি। ওদিকে কেন্ড্রা তার পরিবারকে নিয়ে স্থানান্তরিত হয়ে যান গড্রিক’স হোলো নামক জায়গায়। পারসিভ্যাল এবং কেন্ড্রা, কেউই আরিয়ানার উপর মাগল আক্রমণের কথা কাউকে জানতে দেননি। কারণ, তারা ভেবেছিলেন এই কাহিনী ‘International Statute of Wizarding Secrecy’ জানতে পারলে আরিয়ানাকে বিভিন্ন জেরার সম্মুখীন করে শেষমেশ মানসিক রোগী হিসেবে পাগলা গারদে পুরে দেবে।
একদিকে কেন্ড্রার ছেলেরা হগওয়ার্টসে জ্ঞানের স্ফুরণ ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে তার স্বামী আজকাবান কারাগারে বন্দী। তাই তিনি মেয়ে আরিয়ানাকে নিয়েই কষ্টেসৃষ্টে দিন গুজার করতে লাগলেন। এমন সময় চারিদিকে গুজব ছড়িয়ে গেল, কেন্ড্রার মেয়ে আরিয়ানা একজন স্কুইব, (জাদু পরিবারে জন্মেও যাদের কোনো জাদু ক্ষমতা নেই) এবং তাকে অন্ধকার এক কুঠুরিতে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
এই গুজব ছড়ানোর নেপথ্যে যারা ছিল, তাদের মধ্যে মুরিয়েল এবং তার কাজিন ল্যান্সেলট অন্যতম। আরিয়ানা ডাম্বলডোর তার নিজ জাদু শক্তির উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারত না। সেজন্য ১৮৯৯ সালের গ্রীষ্মের কোনো এক দিন অ্যারিয়ানার হাতেই দুর্ঘটনাবশত প্রাণ খুইয়ে বসেন তার মা কেন্ড্রা ডাম্বলডোর। হঠাৎ একদিন অ্যালবাস, তার ভাই অ্যাবারফোর্থ, এবং গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বেঁধে যায়। অসতর্কতা হোক বা অনিচ্ছাকৃত ভুল, এক মৃত্যুশাপে প্রাণ হারায় তার বোন অ্যারিয়ানা ডাম্বলডোর। তিনজনের মধ্যে কে মূলত হত্যার জন্য দায়ী, সেটা কেউ সঠিকভাবে জানত না। পুরো ব্যাপারটাই সারাজীবন ধোঁয়াশায় থেকে গেছে। এর ফলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অ্যালবাস বুকে গুমরে থাকা অসন্তোষ ও অনুশোচনা নিয়ে জীবনের বাকি সময়টা কাটিয়েছেন।
সেলুলয়েডের পর্দায় শুধুমাত্র অ্যালবাস ডাম্বলডোর ও তার ভাইকে দেখানো হয়েছে। পারসিভ্যাল ডাম্বলডোর, কেন্ড্রা ডাম্বলডোর এবং আরিয়ানা ডাম্বলডোরকে সিনেমায় উপস্থাপন করা হয়নি।