Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চাওয়া-পাওয়ার পূর্ণতা-অপূর্ণতার রাজ্য ‘লা লা ল্যান্ড’

City of stars Are you shining just for me?
City of stars There’s so much that I can’t see

সিনেমাটির গল্প স্বপ্নে বিভোর দুই তরুণ-তরুণীকে ঘিরে। তাদের পরিচয় হয়েছিল ঘটনাক্রমে, দুজনেই ভিন্ন জগতের মানুষ এবং তাদের স্বপ্নও ছিল ভিন্ন। ছেলেটি (সেবাস্তিয়ান) স্বপ্ন দেখে হারিয়ে যাওয়া জ্যাজ মিউজিককে আবার বাঁচিয়ে তোলার, আর কফি শপে কাজ করা মেয়েটির (মিয়া) স্বপ্ন, সে নামকরা অভিনেত্রী হবে। তবুও পরিচয়ের পর এক-অপরকে যখন তারা বুঝতে পারে, তাদের স্বপ্নগুলো যেন মিলেমিশে এক হয়ে যায়। ধীরে ধীরে ভালোলাগার সূচনা হয়, একসময় ভালোলাগা পরিণত হয় ভালোবাসায়। তারা হয়ে ওঠে পরস্পরের প্রেরণার শক্তি। সেই প্রেম আর বাস্তবতার কঠিন দ্বন্দ্ব নিয়েই ড্যামিয়েন শেজেল সাজিয়েছেন তার ‘লা লা ল্যান্ড’

লা লা ল্যান্ড © Patrick Connan

অবসর পেলেই সিনেমা নিয়ে বসে যাওয়ার অভ্যাস কম-বেশি আমাদের সকলেরই আছে। কেউ অ্যাকশন-থ্রিলারের ভক্ত, কেউ আবার ডুবে থাকেন ভূতুড়ে গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমার মধ্যে। তবে যতই অ্যাকশন-থ্রিলার কিংবা হরর নিয়ে পড়ে থাকি না কেন, জীবনে অন্তত একবার হলেও কোনো না কোনো রোমান্টিক সিনেমা আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে গেছে। এই ধাঁচের সিনেমার কাহিনী যেন যতই জীবনঘনিষ্ঠ হয়, ততোই মানুষকে কাছে টানে। বাস্তবিক প্রেম থাকুক বা না থাকুক, সিনেমার প্রেম আর তার অলি-গলিতে ভেসে যায় আবেগাপ্লুত মানুষের মন।

সেরকমই, ভালোবাসা আর কল্পনার জগতের সাথে কঠিন বাস্তবতার মিশেলে তৈরি জাদুকরী জীবনের গল্প ‘লা লা ল্যান্ড’। যে গল্প চাইলে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ভালোবাসার কল্পনার জগতে, আবার পরক্ষণেই করে পার্থিব জগতের কঠিন মারপ্যাঁচের সম্মুখীন। পরিচালক শেজেল তার পরিচালনার জাদু দিয়ে ছন্দময় একটি গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন অদম্য দুই মানুষের স্বপ্ন পূরণের বাসনা, তুলে ধরেছেন জীবনের সত্যিকারের রূপ। সিনেমার ছন্দ ভোলানো লাইনগুলো কিংবা গানের মোহনীয় সুরগুলো মিলে তৈরি করেছে এক ঘোর লাগানো জীবনের গল্প।

লা লা ল্যান্ড সিনেমার একটি দৃশ্য © Summit Entertainment

মিউজিক্যাল ড্রামার প্রতি মানুষের এখন আকর্ষণ প্রায় নেই বললেই চলে। ধুন্ধুমার অ্যাকশন আর সুপারহিরোর সিনেমাগুলোর ভিড়ে এই ধাঁচের সিনেমার অস্তিত্ব এখন বিলুপ্তপ্রায়। তবুও মুক্তির আগে তো বটেই, এমনকি মুক্তির পরেও ভালো সাড়া জাগাতে পেরেছিল ‘লা লা ল্যান্ড’। তারকাদের সাবলীল অভিনয়ের পাশাপাশি দক্ষ পরিচালনার কারণে প্রায় সব ধরনের দর্শকের আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে সিনেমাটি। পুরনো ধাঁচের চিত্রনাট্যের সাথে আধুনিক স্টোরিটেলিংয়ের সুন্দর সমন্বয়ে ড্যামিয়েন শেজেল তৈরি করেছেন স্মার্ট একটি মিউজিক্যাল ড্রামা। অন্য কোনো পরিচালক গল্পটি এমনভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন কিনা সন্দেহ আছে। অসাধারণ পরিচালনার পাশাপাশি ছবির গল্পটিও ছিল সুন্দর এবং বাস্তবধর্মী। মনমাতানো আবহ সঙ্গীত আর কোরিওগ্রাফির সাথে চিত্রগ্রহণের চমৎকার কারুকার্য আপনাকে নিয়ে যাবে সেই ষাটের দশকের ক্লাসিক মিউজিক্যাল কিংবা রোমান্টিক ছবির জগতে। স্মরণ করিয়ে দেবে ‘ক্যাসাব্লাঙ্কা’ কিংবা ‘সিঙ্গিং ইন দ্য রেইনে’র কথা, অথবা ‘ওয়েস্ট সাইড স্টোরি’ কিংবা ‘মাই ফেয়ার লেডির’ মতো সিনেমাগুলোকে।

অস্কার হাতে ড্যামিয়েন শেজেল © Frederic J. Brown/Agence France-Presse

হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত অবস্থায় ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে শেজেলের মাথায় আসে ‘লা লা ল্যান্ডে’র গল্প। পরে ২০১০ সালে গীতিকার বন্ধু জাস্টিন হারউইটজকে সাথে নিয়ে লিখে ফেলেন ছবির স্ক্রিপ্ট। কিন্তু একে তো নেই পুরনো পরিচিত গান, তার উপর ছবিতে ব্যবহার করা হবে বিলুপ্তপ্রায় জ্যাজ মিউজিক, তাই কোনো স্টুডিওই প্রথমাবস্থায় তার ছবিতে অর্থায়ন করতে রাজি হয়নি। একপর্যায়ে প্রযোজক মিললেও, তাদের কথা অনুযায়ী ছবিতে আনতে হতো বেশ কিছু পরিবর্তন। কিন্তু ছবিতে পরিবর্তন আনতে নারাজ ড্যামিয়েন শেজেল শেষমেশ বাদ দিয়ে দেন সেই প্রজেক্ট। লেখা শুরু করেন ‘হুইপলাশের’ কাহিনী। তারই পরিচালনায় ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৪ সালে। সমালোচক থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শকদের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয় ‘হুইপলাশ’। পাঁচটি ক্যাটাগরিতে অস্কার নমিনেশন পায় সিনেমাটি, পুরস্কারও জিতে নেয় তিনটিতে। অভিযোজিত চিত্রনাট্যের জন্যে অস্কারে মনোনয়ন পেলেও, সে বছর অস্কারটি নিজের করে নিতে পারেননি শেজেল। তবে হুইপলাশের ব্যাপক সফলতার পরেই তিনি হাজির হন তার অসম্পূর্ণ স্বপ্ন নিয়ে এবং অতিক্রম করেন একের পর এক মাইলফলক। তার সিনেমাটি মোট ১৪টি ক্যাটাগরিতে মনোয়ন পায় ৮৯তম অস্কারের আসরে, জেতে ৬টি ক্যাটাগরিতে। তিনি নিজেও জিতে নেন সেরা পরিচালকের অস্কার।

অস্কার জেতার পর লা লা ল্যান্ডের ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা ছবি © Summit Entertainment

রায়ান গসলিংয়ের সাথে আমাদের অনেকের প্রথম পরিচয় তার বিখ্যাত ‘নোটবুক’ চলচ্চিত্র দিয়ে। অন্য সিনেমাগুলোর মতো লা লা ল্যান্ডেও সেবাস্তিয়ান চরিত্রে তিনি দারুণ অভিনয় করেছেন। অবশ্য শুটিংয়ের আগে বেশ কষ্ট করেছেন তিনি চরিত্রটির জন্য। গান আর নাচের পাশাপাশি তাকে পিয়ানো বাজানো শিখতে হয়েছে। বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ও এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করা জন লিজেন্ড, যিনি নিজেই কিনা একজন ক্লাসিক্যাল পিয়ানো বাদক; শুটিং চলাকালীন গসলিংয়ের খুব দ্রুত পিয়ানো বাজানো শেখার সামর্থ্য দেখে বলেন, তিনি নিজেই ঈর্ষান্বিত হয়ে যাচ্ছিলেন।

‘ক্রেজি, স্টুপিড, লাভ’ আর ‘গ্যাংস্টার স্কোয়াড’-এর পর তৃতীয়বারের মতো রায়ান গসলিংয়ের সাথে অভিনয় করেছেন এমা স্টোন। ‘বার্ডম্যান’ সিনেমার পার্শ্ব চরিত্রে এই অভিনেত্রীর পারফর্মেন্স ছিল মনোমুগ্ধকর। ‘লা লা ল্যান্ড’ দেখে তার অভিনয়ের প্রেমে পড়বেন অনেক দর্শকই।

লা লা ল্যান্ড সিনেমার দুই দৃশ্যে রায়ান এবং এমা © Summit Entertainment

এমা বা রায়ানের কেউই কার্যত নাচিয়ে-গাইয়ে নন। তবে তাদের উভয়ের মধ্যে রয়েছে নতুন কিছু করার আগ্রহ। পাশাপাশি চলচ্চিত্র তাদের কাছ থেকে যা আশা করে, তা পূরণ করতে তারা দুজনই সুচারুভাবে পারদর্শী। তাদের মধ্যকার কেমিস্ট্রি ছিল এই ছবির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মিউজিক্যাল/কমেডি ক্যাটাগরিতে দুজনেই গোল্ডেন গ্লোব জিতেছেন এবং প্রধান চরিত্রে অস্কারের নমিনেশন পেয়েছিলেন। ক্যাসি অ্যাফ্লেকের জন্যে রায়ানের অস্কার মিস হলেও এমা জিতে নিয়েছেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার।

মিউজিক্যাল সিনেমাগুলোতে একধরনের ফ্যান্টাসির ছোঁয়া থাকে। বাস্তবে তো আর হঠাৎ করেই কেউ দিনে-দুপুরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান গাইতে শুরু করে না, আর শুরু করলেও রাস্তায় থাকা অন্যরা সেই গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচ-গান শুরু করে না। কাজেই, মিউজিক্যাল সিনেমা হলো এমন সব গল্পের আধার, যেখানে সন্নিবেশ ঘটে সৃজনশীলতা ও কল্পনার। সব ধরনের সম্পর্কের যেমন একটি সত্যিকারের অস্তিত্ব থাকে, তেমনি থাকে একটি কল্পনার জগত, যে জগতটাকে প্রতিনিয়ত খুঁজে ফেরে সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা সেসব মানুষগুলো।

লা লা ল্যান্ড সিনেমার একটি আর্টওয়ার্ক © Slash Film

সবকিছুর পরেও ছবিটি যেহেতু মিউজিক্যাল ঘরানার, তাই প্রথমে অনেকের হয়তো ভালো না-ও লাগতে পারে, তারা দ্বিতীয়বার দেখতে পারেন চাইলে; কারণ অনেক সিনেমা প্রথমবার ভালো না লাগলেও দ্বিতীয়বার দেখায় ভালো লেগে যায়। দারুণ সব গান আর মূল চরিত্রগুলোর অনবদ্য অভিনয় নিশ্চিতভাবেই মন কাড়বে সিনেমাপ্রেমীদের।

ট্রিভিয়া

  • সিনেমাটি নির্মাণ করা হয় মাত্র ২ মাস সময়ের মধ্যে।
  • অভিনেত্রী এমা ওয়াটসন ‘বিউটি এন্ড দ্য বিস্ট’ সিনেমায় অভিনয় করার জন্য এই সিনেমার ‘মিয়া’র চরিত্রটি ফিরিয়ে দেন। অপরদিকে, এই সিনেমায় অভিনয় করার জন্যে রায়ান গসলিং ‘বিউটি এন্ড দ্য বিস্ট’ সিনেমার চরিত্র ফিরিয়ে দেন।
  • জন লিজেন্ড, যিনি কিনা বাস্তব জীবনে একজন গায়ক এবং পিয়ানো বাদক, তাকে এই সিনেমায় অভিনয় করার জন্যে গিটার বাজানো শিখতে হয়েছিল।
  • ‘সিঙ্গিং ইন দ্য রেইন’ এবং ‘দ্য উইজার্ড অফ অজ’ সিনেমাগুলোর আবহ সংগীত যে স্টুডিওতে রেকর্ড করা হয়েছিল, একই স্টুডিওতে ‘লা লা ল্যান্ডে’র গানগুলোও রেকর্ড করা হয়।
  • সিনেমার প্রথমার্ধের এক দৃশ্যে ক্যামিও হিসেবে দেখা যায় পরিচালকের প্রেমিকাকে।

সিনেমাটির IMDb রেটিং:  ৮.২/১০
রোটেন টোম্যাটোস: 92%

Here’s to the fools who dream!

La La Land is a 2016 American romantic comedy musical film written and directed by Damien Chazelle. It stars Ryan Gosling as a jazz pianist and Emma Stone as an aspiring actress, who meet and fall in love while pursuing their dreams in Los Angeles. John Legend, Rosemarie DeWitt, Finn Wittrock, and J. K. Simmons also star.

Related Articles