“সারঙ্গ নয়ন বচন পুন সারঙ্গ তনু মধুপানে।
সারঙ্গ উপর উগল দশ সারঙ্গ কেলি করথি মধ্যপানে।।”
‘অলঙ্কারের মাস্টার’ খ্যাত বিদ্যাপতির লেখা এই দুটি চরণে ‘সারঙ্গ’ শব্দটির অর্থ কোথাও হরিণ, কোথাও পদ্ম, তো কোথাও ভ্রমর, আবার কোথাও কোকিল কিংবা মদন। কোথায় ঠিক কোনটা বসবে, ভাবছেন? বাংলা ভাষার আসল সৌন্দর্যই হয়তো এই রহস্যময়তায়। আর এই রহস্যময় ভাষার ইতিহাসে একটি দুর্ভেদ্য রহস্য হলো ‘পঞ্চাননমঙ্গলকাব্য’।
“১২০০ হইতে ১৪৫০ অব্দের মধ্যে বাঙ্গালা সাহিত্যের কোনো নিদর্শন তো নাই-ই, বাঙ্গালা ভাষারও কোনো হদিশ পাওয়া যায় না।”
— ডঃ সুকুমার সেন।
তাহলে, ঠিক কেমন ছিল সে যুগের বাংলা ভাষা? কীভাবে লিখত তখন এ দেশের মানুষ? সেসব হারিয়েই বা গেল কোথায়? নাকি এর পেছনে আছে কোনো নিপাট ষড়যন্ত্র? বাংলা সাহিত্যের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের গূঢ় রহস্যের উদঘাটন নিয়েই একটি চাঞ্চল্যকর থ্রিলার লিখেছেন প্রীতম বসু। বলা চলে, মেধা এবং পরিশ্রম মিলিয়ে যে অসাধারণ কিছু তৈরি করা সম্ভব, তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন এ বইয়ে।
কাহিনীসংক্ষেপ
‘পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল’ বইটির কাহিনী আবর্তিত হয় ১৪০০ সালের হারিয়ে যাওয়া বেগবতী নদীর পার্শ্ববর্তী বল্লালগ্রামকে ঘিরে— যা আবার কালের পরিক্রমায় ‘পঞ্চমুণ্ড’ থেকে ‘পাঁচমুড়ো’ নাম নিয়েছে। পাঁচমুড়ো গ্রামের বহু পুরোনো চয়নবিলের তলা থেকে একদিন আবিষ্কৃত হলো পাথরে খোদাই করে ১৪০০ সালের কথ্য ভাষায় ও লিপিতে লেখা ‘পঞ্চাননমঙ্গলকাব্য’। কিছুদিন আগের ভূমিকম্পে চয়নবিলের নিচে থাকা চোরাগুহার মুখ ফেটে যাওয়ায় গুহা থেকে অনেক শিলালিপি এবং পাথরের খণ্ডাংশ বেরিয়ে আসতে দেখেন পাঁচমুড়োরই জমিদার সদানন্দ ভট্টাচার্য। ইংরেজ আমলে তার বাবার রমরমা পুঁথিব্যবসার দরুন সদানন্দ নিজেও একজন দক্ষ পুঁথি বিশারদ। বাবার কাছেই তিনি এবং তার সৎভাই চিদানন্দ, পুঁথি যাচাইয়ের সকল দীক্ষা নেন।
কিন্তু একসময় বুড়ো সদানন্দকে ধোঁকা দিয়ে চিদানন্দ বেশ কিছু প্রাচীন পুঁথি আর মূল্যবান নিদর্শন নিয়ে কলকাতা পাড়ি দেয়। সদানন্দ যেতে পারেন না, তিনি থেকে যান এই পাঁচমুড়োর জমিদার বাড়িতে, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে। আর তাই ব্যবসার এমন মন্দায় চয়নবিলের তলা থেকে শিলালিপি ভেসে ওঠায় সদানন্দ যেন লক্ষ্মী হাতে পেলেন। লোকমুখে চলে আসা পঞ্চাননমঙ্গলকাব্যের মিথ আর শিলালিপিতে থাকা বাংলা ভাষার নমুনা দেখে এর মূল্য বুঝে উঠতে বিচক্ষণ সদানন্দের এক মুহূর্তও দেরি হলো না। বাংলা সাহিত্যের এই দুর্মূল্য নিদর্শন বিদেশের মাটিতে সর্বোত্তম উপায়ে সংরক্ষণের ইচ্ছা কিংবা নিজের পকেটের পোয়াবারো দেখার লোভ, যে কারণেই হোক না কেন, সদানন্দ খবর দিলেন ‘লন্ডনে নিজের মিউজিয়াম থাকা’ ড. ধাড়াকে।
সদানন্দ ড. ধাড়ার সাথে এসব নিয়েই কথা বলছিলেন, এমন মুহূর্তে সেখানে এসে হাজির কালাচাঁদ পণ্ডিত ওরফে কালাচাঁদ চোর। চোর বলতে ঠিক সিঁদ কেটে ঢোকা চোর নয়, কালাচাঁদের কাজ হচ্ছে জাল পুঁথি বিক্রি এবং আসল পুঁথির হাতবদল। এ কাজে যে সে খুব পারদর্শী, এমনটাও নয়। এই যেমন শেষবার যখন সে এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে লালসালুতে জড়ানো ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলের একটা পুঁথি বগলদাবা করে নিয়ে তীরের বেগে পালাতে গেল, অমনি সদ্য সাবানপানিতে মোছা সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে শেষতক একবেলা হাসপাতালে এবং পরের তিন মাস জেলে কাটাতে হলো।
তবে এ বেলায় তার চৌর্য-ইন্দ্রিয়ের জোরেই কালাচাঁদ বুঝে ফেলল, সদানন্দ এবং ড. ধাড়া যা নিয়ে আলাপ করছেন, তার বাজারমূল্য নেহাতই কম হবে না! আর তাই সুযোগ বুঝে সদ্য তুলে আনা শিলালিপি থেকে উদ্ধারকৃত বাংলা ভাষার সম্ভাব্য সেই পঞ্চাননমঙ্গলকাব্যের চরণ দুটো অন্তঃকরণে চটপট তুলে নিয়ে সোজা চলে এলো হরু ঠাকুর আর তার ভাগনে বদনের বাড়িতে।
সে যুগের ম্যানুয়াল পুঁথি অনুলিপিকার এবং বর্তমানে সেসব নকলে সিদ্ধহস্ত হরু ঠাকুর তার এখন পর্যন্ত সব অভিজ্ঞতা দিয়ে তৎক্ষণাৎ চরণ দুটির ছন্দ উদ্ধার করে ফেললেন। কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিল, যখন অঙ্কে পারদর্শী এবং তুখোর মেধাবী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বদন সেই চরণ দুটো থেকে আবিষ্কার করল ছন্দের সাথে অঙ্কের এক অভূতপূর্ব মিশ্রণ। শব্দের অভাবনীয় কারুকার্যে লুকিয়ে আছে হাজার বছর আগে আবিষ্কৃত অঙ্কের নানান সূত্র। ছন্দ আর অঙ্ক তাতে পাখির ডানার দু’দিক। একপাশে অঙ্ক তো আরেকপাশে ছন্দ নিয়ে সেই পাখি যেন সাহিত্যের অন্ধকার আকাশে আলোর সন্ধানে উড়ে চলেছে!
লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে, এটি একটি থ্রিলার। কিন্তু এতদূর এসে পাঠক হয়তো ভাবছেন, এখানে থ্রিল কোথায়? সদানন্দ-ড. ধাড়া-কালাচাঁদ-হরু ঠাকুর আর বদনের এ চক্রে থ্রিল নিয়ে আসে আরবের এক পাগলা শেখ, যে নিজেকে পরিচয় দেয় আল-খোয়ারিজমি নামে। প্রাচীন নিদর্শনের অবৈধ কেনাবেচাকারী ইন্টারন্যাশনাল মাফিয়া চক্রের বড় চাঁই এই শেখের প্রাচীন পুঁথি দিয়ে নিজ সংগ্রহশালা সুসজ্জিত করার কোনো সদিচ্ছা নেই, বরং সেসব হাতে পেলেই সে তা ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
আর তাই অর্থলোভী ডঃ ধাড়া যখন শেখকে পঞ্চাননমঙ্গলকাব্যের আবিষ্কারের খবর জানাল, তখন লেখকের ভাষ্যে, “কুর্ম অবতারের পিঠে মেদিনী যেন দুলে উঠল।” ড. ধাড়ার কথা শুনে কালাচাঁদ এবং হরু ঠাকুরও গিয়ে পৌঁছালো সেই শেখের ডেরায়। সেখানেই নিজের বেঈমান দালালের রক্তের স্রোতে দাঁড়িয়ে শেখ হুমকি দিল, “সাতদিনের মধ্যে আমার পঞ্চাননমঙ্গল চাই। না হলে—।” আর ঠিক এখান থেকেই আবিষ্কারের সাদাসিধে গল্পটার ভোল পাল্টে জীবন-মরণের দোলাচলে থাকা টানটান উত্তেজনার থ্রিলার হিসেবে যাত্রা শুরু।
চরিত্র বিশ্লেষণ
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কালাচাঁদ পণ্ডিত উপন্যাসটির অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ছিল আদ্যোপান্ত। চরিত্রটির গঠন বেশ নিরীক্ষণধর্মী, লেখকের যত্নের ছাপ এতে স্পষ্ট। লেখক এই চরিত্রকে ভালো-খারাপের বাঁধাধরা ছাঁচে ফেলতে চাননি, কিংবা বোকা-চতুরের কাঠগড়াতেও ফেলেননি। সময়ের প্রয়োজনে থরে থরে কালাচাঁদ নানা আঙ্গিকে পাঠকের সামনে আসতে থাকে। কখনো সে কার্যসিদ্ধির জন্য আচারের তেলকে মহামাঁষের তেল বলে সদানন্দকে পট্টি পড়ায়, তো কখনও বুড়ো সদানন্দের হরিণের মাংস আর দেরাদুন চালের ভাতের তৃপ্তিভোজে বিপত্তি বাঁধানোয় আক্ষেপ করে। কখনো সে বদনের অঙ্কের বই নিয়ে পালায়, তো কখনো বদনের ব্যবসার জন্য নিজের ভাগের সব টাকা দিয়ে দেয়। কালাচাঁদ চরিত্রের এমন ধোঁয়াশা আবহই পুরো উপন্যাসকে আরও সুখপাঠ্য এবং বাস্তবিক করে তুলেছে।
এরপর চলে আসে সদানন্দ ভট্টাচার্যের কথা। পাঁচমুড়োর একসময়ের প্রতাপশালী জমিদারের সর্বশেষ বংশধর হিসেবে সদানন্দ বেশ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। জমিদারি ঠাঁটবাট বর্তমানে না থাকলেও তার ব্যক্তিত্বকে এসবের কোনো কিছুই স্পর্শ করতে পারেনি। শুধু তা-ই নয়, বাইরের শক্ত খোলসের ভেতরে থেকেও তার চরিত্রের নানা কোমল দিক উঠে এসেছে উপন্যাসের পরতে পরতে।
এছাড়া হরু ঠাকুর, বদন, ডঃ ধাড়াসহ অন্যান্য চরিত্রগুলো উপন্যাসের সাথে বেশ ভালোভাবে মিশে গেছে। কোনো চরিত্রকে উটকো বা গল্পে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়নি।
যত যা ভালো-মন্দ
ভাষা-ইতিহাসের প্রতি দুর্বলতা থাকলে এমন একটা নিরীক্ষাধর্মী এবং তথ্যবহুল বই শেষপাতে মিষ্টির মতো মনে হয়। বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর হালকা আমেজ এবং সকৌতুক পরিবেশনা। খুব সাধারণ কিছু ঘটনাও লেখকের বুদ্ধিমত্তা এবং ভাষার কারুকার্যে বেশ আনন্দদায়ক হয়ে উঠেছে। যেমন কালাচাঁদ, হরু ঠাকুর আর বদন— এই তিনটি চরিত্রের নাম নিয়ে বেশ মজার একটা অংশ আছে। তিনজনকে প্রথম দেখে সদানন্দ বলেন,
“তা বেশ করেছে, নচেৎ বামে কালাচাঁদ, মধ্যে হারুচন্দ্র, ভাগ্নে বদন যদি চাঁদ জোড়ে তাহলে তো এই ক্যাটক্যাটে সকালে আমার বাড়িতে চাঁদের হাট বসে যাবে।”
এই অংশটুকু পড়তে নিয়ে মনে হয়েছে, যেন শুধুমাত্র এই কৌতুকের জন্যেই তিনটি চরিত্রের এমন ছন্দবদ্ধ নামকরণ। ছোটখাট ঘটনার সাথে এমন চমকপ্রদ কিছু কৌতুকের মিশেল উপন্যাসকে অনেক উপভোগ্য করে তুলেছে।
উপন্যাসের গঠন নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই নজরে পড়ে ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্যপূর্ণ আলোচনা, যা গল্পের স্বার্থেই চরিত্রদের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে এসেছে। ‘কথায় কথায় বলে যাওয়া’র মতো করে চরিত্রগুলোর মাধ্যমে লেখক তুলে ধরেছেন চর্যাপদের কাহিনী, করেছেন ভাষার ব্যবচ্ছেদ, এনেছেন ইতিহাস ও লোককাহিনীর অজস্র উদাহরণ এবং সবকিছু এক সুতোয় এনে উপন্যাসে বেঁধেছেন বেশ শক্তপোক্তভাবে। তিনি তুলে ধরেছেন এদেশের নিদর্শন রক্ষার অপারগতার কথা, কীভাবে শুধু এই অপারগতার দোহাই দিয়ে ইংরেজরা আমাদের সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ নিজেদের কাছে নিয়ে গেছে, তা-ও রীতিমতো দিনে-দুপুরে ডাকাতি করে। সেই সাথে উঠে এসেছে পুঁথিসহ নানা প্রাচীন মূর্তি পাচারের ঘটনা।
গল্পচ্ছলে উঠে এসেছে, কীভাবে এশিয়াটিক সোসাইটির সংগ্রহশালা থেকে অসংখ্য পুঁথি ইংরেজরা চুরি করে নিয়ে যায়। সেই সাথে নিজস্ব ইতিহাস সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমাদের খানিকটা গাফিলতিও নজরে আসে। এসব কারণেই হয়তো বাংলা সাহিত্যের অনেক অমূল্য নিদর্শনই এখনও পাশ্চাত্যে সংরক্ষিত। অতীন্দ্র মজুমদারের ‘চর্যাপদ‘ বইটিতেও তিনি এমনকিছুর উল্লেখ করেছেন—
“কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ভূতপূর্ব প্রধান অধ্যাপক প্রয়াত ডক্টর শশিভূষণ দাশগুপ্ত নেপাল থেকে একশোটি নতুন চর্যাপদ ১৯৬৩ সালে সংগ্রহ করে আনেন। এই চর্যাগুলির সন্ধান তিনি পান লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর আর্নল্ড বাকেরের কাছ থেকে। ডক্টর বাকের নিজস্ব সংগ্রহ থেকে ডঃ দাশগুপ্ত কুড়িটি চর্যাপদ টেপ রেকর্ডারে তুলে নিয়ে আসেন।”
একদিকে বাঙালির অজস্র বিষয়ে জ্ঞান এবং পারদর্শিতার আলেখ্য যেমন পাঠককে রোমাঞ্চিত করে, তেমনই অন্যদিকে এসব গৌরব হারানোর কলঙ্ক হতাশায় আচ্ছন্ন করে রাখে। লেখক শুধু এটুকুতেই থেমে থাকেননি, তিনি সেই সময়ের বাংলার একটি প্রতিচ্ছবির সাথেও পাঠককে পরিচিত করেছেন। চৌদ্দশো বছর আগে হারিয়ে যাওয়া নদী বেগবতী। তার তীরবর্তী দূরদর্শী জমিদার প্রতাপাদিত্যের বল্লালগ্রাম।
নদীতে ভেসে আসা শ্রীহট্ট-ত্যাগী পুণ্যাত্মা-পণ্ডিত নন্দীধন, তার মেয়ে ভানুমতি আর বিশালাকার পঞ্চমুণ্ড শিবমূর্তি, অত্যাচারী জমিদার জটামদন, আর রোমথা বলরামের জীবনগাথা নিয়ে লেখা যে হৃদয়বিদারক মঙ্গলকাব্য সেই সময়ের বাংলা ভাষার আদলে লেখক সাজিয়েছেন তা সত্যিই অভাবনীয়। কালাচাঁদের ভাষ্যে, “আরিব্বাস! এ তো সেই হাণ্ডিকুণ্ডি ভাষায় লিখে ফেললে!” একজন লেখকের চিন্তাশক্তির সাথে পরিশ্রমের মিশেল ঘটলে কতটা সৃষ্টিশীল সাহিত্যকর্ম হতে পারে, তারই জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ এই ‘পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল’।
তবে বইটিতে মুসলিমদের প্রতি একটা চাপা আক্রোশ বেশ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে সময়ে-অসময়ে। বখতিয়ার খিলজির নালন্দার সংগ্রহশালা পোড়ানোর সেই ঘৃণ্য ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয়, তবুও পুরো বইতে মুসলিম শাসক এবং কর্ণধারদের নিয়ে লেখকের কিছুটা একতরফা বিরূপ প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ে, যার ছাপ ভিলেনরূপী শেখ চরিত্রের অতিরঞ্জিত নাটকীয়তার মাঝে দেখা যায়। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে বর্তমানের থেকে ইতিহাসের ঘটনায় রোমাঞ্চ ধরে রাখার প্রচেষ্টা তুলনামূলক বেশি বলে মনে হয়েছে।
সার্থকতা
নিরীক্ষাধর্মী এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যনির্ভর এই হিস্টোরিক্যাল ফিকশনটি বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম মাইলফলক। ছোটবেলার রসকষহীন ইতিহাসের বুলি মুখস্ত করে প্রজন্মের পর প্রজন্মে ইতিহাস নিয়ে যে বিতৃষ্ণা জন্মেছে, তার তিতকুটে স্বাদ কমাতে বইটি মধুর মতো কাজে দেয়। বইটি পড়ার পর যে কারো বাঙালি এবং বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি হবে। সেই সাথে বইয়ের শেষ কয়েক পাতায় সংযুক্ত রেফারেন্সসমূহ জ্ঞান অন্বেষণের কাজ আরেকটু সহজ করে দেয়।
এছাড়া বইয়ের মলাট, কাগজ, বাঁধাই সবকিছুই অত্যন্ত মানসম্মত। বিশেষভাবে প্রচ্ছদের জন্য দেবাশীষ রায়েরও ধন্যবাদ প্রাপ্য। বইয়ের প্লট এবং কাহিনীবিন্যাসের সাথে এর থেকে ভালো প্রচ্ছদ হয়তো করা সম্ভব হতো না। সর্বোপরি, স্বদেশের ভাষা এবং সাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে গড়পড়তার বাইরে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে জানতে হলে বইটি পড়তে পারেন।
বইয়ের নাম: পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল
লেখক: প্রীতম বসু
প্রচ্ছদ: দেবাশীষ রায়
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ২৩০
মলাট মূল্য: ১৫০ রুপি
প্রথম প্রকাশ: ২০১৫