চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ফ্র্যাঞ্চাইজির অভাব নেই। বেশ কিছু সিনেমারই সিক্যুয়েল/প্রিক্যুয়েল জায়গা করে নিয়েছে হলিউডের ইতিহাসে। কিন্তু মারভেল তাদের সিনেমাটিক ইউনিভার্সকে যেভাবে সাজিয়েছে, ভবিষ্যতে আর কোনো স্টুডিওর পক্ষে সেটি সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম এই ইউনিভার্সের ‘ফেজ ওয়ান’-এর সিনেমাগুলো নিয়ে। আজ আমরা কথা বলব ‘ফেজ টু’-এর সিনেমাগুলো নিয়ে। তবে এর আগে জেনে নেওয়া প্রয়োজন এই ‘ফেজ টু’ বিষয়বস্তুটুকু সম্পর্কে।
মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের দ্বিতীয়াংশ এবং ‘ইনফিনিটি স্যাগা’র দ্বিতীয়াংশ নিয়েই মূলত ‘ফেজ টু’ সাজানো। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ফেজ টু’র সিনেমাগুলো বিশ্বব্যাপী ৫.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করে, যা ছাপিয়ে গেছে ‘ফেজ ওয়ান’ সিনেমাগুলোর সাফল্যকেও। পরবর্তী ধাপের সিনেমাগুলোকে বলা হবে ‘ফেজ থ্রি’।
এই দ্বিতীয় ফেজে মূলত অ্যাভেঞ্জারস এবং শিল্ডের যৌথ ‘মিশনে’ নিউ ইয়র্কের যুদ্ধপরবর্তী অবস্থাই মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও ফ্যালকন, কুইক সিলভার, স্কারলেট উইচ, ভিশন, গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি (স্টার লর্ড, গামোরা, ড্রাক্স – দ্য ডেস্ট্রয়ার, রকেট র্যাকুন, গ্রুট) এবং অ্যান্ট-ম্যানের মতো বেশ কিছু সুপারহিরোর আবির্ভাব ঘটেছে এই পর্যায়ে। ইনফিনিটি স্টোনের অরিজিন স্টোরি সম্পর্কেও বিশদ ব্যাখ্যাও রয়েছে এই পর্যায়ের সিনেমাগুলোতে।
ধারণাটুকু মোটামুটি অর্জন করা শেষ। চলুন, এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই ধাপের সিনেমাগুলো সম্পর্কে।
আয়রনম্যান থ্রি
সিনেমাটিক ইউনিভার্সের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড এবং দিকনির্ধারনী সিনেমাগুলোর একটি হলো আয়রনম্যান থ্রি। এমন না যে, সিনেমাটি দর্শকরা পছন্দ করেননি। তবে এর গভীরত্ব বা গুরুত্বটুকু অনুধাবন করতে না পারায় সিনেমাটি পড়ে যায় ফ্র্যাঞ্চাইজির সাধারণ একটি ফিলারের কাতারে। সিনেমাটি পরিচালনার ভার ছিল এর আগে মাত্র একটি সিনেমা নির্মাণ করা পরিচালক শেন ব্ল্যাকের উপর। ২০০৫ সালে নির্মিত তার প্রথম সিনেমারও নামচরিত্রে ছিলেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। তাই তাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালোই ছিল। তবে এর মাঝের সাত বছরে কোনো সিনেমা পরিচালনা করেননি তিনি। আর ততদিনে আয়রন ম্যান কিংবা মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স অবস্থান করছিল সেলুলয়েড জগতের ভিন্ন এক উচ্চতায়।
তবে হতাশ করেননি তিনি। ড্রিউ পিয়ার্সের সাথে হাত মিলিয়ে তিনি নিজেই লিখেছেন সিনেমার চিত্রনাট্য। এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে টনি স্টার্কের ভিন্ন এক রূপ।
প্রথমবারের মতো আয়রনম্যান স্যুট গায়ে জড়ানোর পার হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর। মাত্র কয়েক মাস আগেই টনিকে মোকাবিলা করতে হয়েছে এক এলিয়েন আর্মির সাথে, যার এক পর্যায়ে তাকে যেতে হয়েছিল মৃত্যুসম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। সেই ঘটনাটিই পুরোপুরি বদলে দেয় টনির জীবনধারা। নিজেকে তার আয়রনম্যান স্যুটের বাইরে আর ভাবতে পারে না সে। ‘পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’-এ ভুগতে থাকা টনির এক উদ্বেগের মধ্যে বসবাস শুরু হয়।
আরেকটি বড় বিষয় হলো, ‘আয়রনম্যান ট্রিলজি’র সবচেয়ে বড় সমস্যার সমাধান মেলে এই সিনেমাতে। ‘আয়রনম্যান টু’ সিনেমাটির নানা সমস্যা থাকলেও ‘আয়রনম্যান’ সিনেমাটি নিঃসন্দেহে চমৎকার ছিল। কিন্তু সবকিছুর পরও সিনেমা দু’টিতে অভাব ছিল একটি মানসম্মত ভিলেনের, যার দেখা মিলে তৃতীয় কিস্তিতে এসে। এতে খলনায়ক হিসেবে দেখানো হয় ম্যান্ডারিনকে। নিজের মানসিক অসুস্থতার পাশাপাশি টনির মোকাবেলায় নামতে হয় অপ্রতিরোধ্য এই টেরোরিস্টের।
আয়রনম্যান টু’র ব্যর্থতার পর ট্রিলজির মুখ উজ্জ্বল করতেই যেন শেন ব্ল্যাক হাত ধরেন আয়রনম্যানের। সিনেমাটির অ্যাকশন সিকোয়েন্স, স্পেশাল এফেক্ট থেকে শুরু করে গল্পের গতিময়তা, সবকিছুই ঠিকঠাক রেখেছিলেন তিনি। তবে সবকিছুর পরও সিনেমাটির সফলতার সবচেয়ে বড় কারণ, রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। আয়রনম্যান হিসেবে তিনি অতুলনীয়, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সমালোচকরা প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সিনেমাটিকে। ২০০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের এই সিনেমাটি বক্স অফিসেও আয় করে নেয় প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার।
থর: ডার্ক ওয়ার্ল্ড
মারভেলের দশ বছরের এই লম্বা সময়ে মুক্তি পাওয়া সবগুলো সিনেমার যদি ‘ওয়ার্স-টু-বেস্ট’ (বাজে সিনেমা থেকে ভালো সিনেমা) তালিকা করা হয়, তবে সেই তালিকার শুরুতেই নাম থাকবে ‘থর: ডার্ক ওয়ার্ল্ড’। দর্শক-সমালোচক কারোরই মন জয় করতে ব্যর্থ হওয়া এই সিনেমাটির বক্স অফিসের অবস্থাও দুর্বল। ক্যানেথ ব্রানাহ’র হাতে শুরু হওয়া ‘থর ট্রিলজি’র এই দ্বিতীয় সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ‘গেম অফ থ্রোনস’খ্যাত পরিচালক অ্যালান টেইলর।
তার পরিচালনা করা সিনেমার সংখ্যা কম হলেও পরিচালনার জগতে মোটেও নতুন কেউ ছিলেন না অ্যালান। ‘গেম অফ থ্রোনস’ ছাড়াও তিনি পরিচালনা করেছেন ‘ম্যাড ম্যান’ এবং ‘দ্য সপ্রানোস’-এর বেশ কিছু এপিসোড। তবে এত দক্ষতা সত্ত্বেও তিনি থরকে বাঁচাতে পারেননি রসাতলের হাত থেকে।
সিনেমার শুরুতেই দেখা যায়, বিষণ্ণ থর নয় রেল্মের বিভিন্ন যুদ্ধে ব্যস্ত। জেনকে আর দেখতে না পারার শোক ভালোভাবেই বাসা বেঁধেছে তার মধ্যে। এরপর দেখা যায় অ্যাসগার্ডের বন্দীশালায় বিধ্বস্ত এক লোকিকে। সিনেমার এই পর্বের ভিলেন হচ্ছেন ম্যালেকিথ নামের এক এলফ, ‘ইথার’ নামের এক ভয়াবহ অস্ত্রের দ্বারা যে গোটা ইউনিভার্স ধ্বংসের প্রচেষ্টা চালায়। পৃথিবীসহ বাকি নয়টি গ্রহকে বাঁচাতে থরকে নামতে হয় জীবন-মরণ যুদ্ধে। প্লট শুনে সিনেমাটির কাহিনী যতটা সাধারণ মনে হয়, বাস্তবিকপক্ষে তা ছিল আরো বেশি নীরস। গল্পে ছিল না কোনো গভীরতা। প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের সিনেমাটির বক্স অফিসের আয় ছিল ৬৪৪ মিলিয়ন ডলার, যা সিনেমাটিক ইউনিভার্সের সবচেয়ে কম।
ক্যাপ্টেন আমেরিকা: দ্য উইন্টার সোলজার
‘দ্য অ্যাভেঞ্জারস’ সিনেমার নিউ ইয়র্ক ব্যাটলের কিছুদিন পরের কথা। শিল্ডসের বিভিন্ন মিশনের পাশাপাশি স্টিভ রজার্স ধীরে ধীরে নিজেকে বর্তমান সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে চেষ্টা করছেন। সময় যত অতিক্রান্ত হচ্ছে, তিনি বুঝতে পারছেন, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এখন পৃথিবী যতই উন্নত হোক না কেন, বর্তমান সময়টি এখন আগের চেয়েও বেশি জটিল। সবকিছু আরো জটিল হতে শুরু করে, যখন এক অ্যাকশন সিকোয়েন্সের সময় রজার্স তার পুরনো বন্ধু ‘বাকি’কে দেখে। গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য এই একটি দৃশ্যই ছিল যথেষ্ট।
উইন্টার সোলজারের নেপথ্য নায়কেরা বুঝতে পেরেছিলেন, ক্যাপ্টেন আমেরিকা মূলত একটি সেকেলে প্রত্যাগত ধারণা; আমরা পৃথিবীকে যেভাবে দেখতে চাই, তারই একটি প্রতিচ্ছবিমাত্র। কিন্তু তারপরও একটি সূক্ষ্ম দ্বন্দ্ব ছিল। স্বার্থপরদের জগতে পৃথিবীকে যেভাবে আছে, সেভাবেই মেনে নেওয়ার প্রথা আছে – যাকে পুঁথিগত সংজ্ঞায় ‘বাস্তববাদিতা’ বলে। কিন্তু এই অসহায়ত্বের শেকল ভেঙে এমন একজন উঠে আসলেন, যিনি সবাইকে এক অন্ধ অনুপ্রেরণা দিলেন জেগে ওঠার, একদম শূন্য থেকে উঠে এসে কিছু করে দেখানোর।
দেখতে বসার পর সিনেমাটি আপনাকে মনে করিয়ে দেবে সত্তরের দশকের কথা। নিজের বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকার সময়ে রবার্ট ফোর্ড অভিনয় করেছেন কন্সপাইরেসি থ্রিলারে। সিনেমার পেছনের দুই কারিগর অ্যান্থনি এবং জো রুশো অনেকটা সেরকমই কিছু ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন উইন্টার সোলজারে, শুধু ড্রামার বদলে এটি ছিল একটি সুপারহিরো সিনেমা।
দর্শক-সমালোচক দু’দলের কাছেই সমানভাবে সমাদৃত হয়েছিল সিনেমাটি। অনেকেই উপমা দিয়েছিলেন মারভেল ইউনিভার্সের ‘ডার্ক নাইট’ হিসেবে। স্পেশাল ইফেক্ট আর সিজিআইয়ের বাইরে গিয়ে রুশো ভ্রাতৃদ্বয় ক্যাপ্টেন আমেরিকাকে উপস্থাপন করেছেন ভিন্ন এক রূপে। কমিকস বইয়ের সেই ক্যাপ্টেন আমেরিকার শারীরিক শক্তি ও গতির ব্যবহার দেখে সত্যি সত্যিই তাকে বাস্তব জীবনের সুপারহিউম্যান মনে হচ্ছিল। ১৭০ মিলিয়ন বাজেটের সিনেমা বক্স অফিসে আয় করে নিয়েছিল প্রায় ৭১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা প্রথম সিনেমার প্রায় দ্বিগুণ!
গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি
আয়রন ম্যান থ্রি’র পর মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের যদি আর কোনো দিকনির্ধারণী সিনেমা থেকে থাকে, তাহলে সেটি হলো ‘গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি’। ফ্র্যাঞ্চাইজির টাইমলাইন থেকে ভিন্ন পথে চলা এই সিনেমারও ছিল নিজস্ব প্লট। সিনেমার সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ দিক ছিল, এতে ছিল না আগের সিনেমার পরিচিত কোনো মুখ। তবে পরিচিত মুখের প্রয়োজন যে ছিল না, সেটি আপনি বুঝতে পারবেন সিনেমাটি শেষ করার পর।
‘গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি’ হলিউডের চিরাচরিত সিনেমাগুলো থেকে ব্যতিক্রমধর্মী। ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্য সিনেমাগুলো সফল না হলে মারভেলও হয়তো এই সিনেমা বানানোর কথা মাথায় আনতো না। আজ থেকে দশ বছর আগেও আসলে সিনেমাবোদ্ধারা হয়তো আয়রনম্যান কিংবা থর সিনেমাগুলোর সফলতা কল্পনা করতে পারেননি। আর ২০১৪ সালে এসেও ‘গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি’র মতো সিনেমা বানানোতে ঝুঁকি তো ছিলই, তাও আবার প্রধান চরিত্রগুলোর পরিচিতি যখন আউটল’ (Outlaw) হিসেবে! এই নির্বাসিতদের টিম লিডার ‘স্টার লর্ড’ (পিটার কুইল), যার চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য হয়তো আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেবে হান সলো কিংবা ক্যাপ্টেন কার্কের কথা। সাথে ‘রকেট’ নামের একটি র্যাকুন, গাছসদৃশ এক এলিয়েন ‘গ্রুট’, ‘ম্যাড-টাইটান’ থানোসের মেয়ে গামোরা এবং স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন ‘ড্রাক্স-দ্য ডেস্ট্রয়ার’।
পরিচালক জেমস গান তুলনামূলক কম পরিচিত এরকমই এক দল সুপারহিরো (!) নিয়ে মূলধারার সাথে মিল রাখার কিছুটা প্রয়াস রেখেই তৈরি করেছেন ‘গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি’র প্রথম কিস্তি। সিনেমাটির গল্পে ততটা গভীরতা নেই, তেমন একটা চ্যালেঞ্জিংও মনে হবে না। কিন্তু আপনি এর চরিত্রগুলোর প্রতি মায়া কাটাতে পারবেন না। তাদের মধ্যকার টিম কেমিস্ট্রি, সিনেমার কমিক রিলিফ আপনাকে ক্ষণিকের জন্যেও বিরক্তি দেবে না। ‘গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি’ দিয়ে মারভেল সবাইকে যে যারপরনাই বিস্মিত করেছে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসার পাশাপাশি বক্স অফিসেও আয় করেছে প্রায় ৭৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অ্যাভেঞ্জারস: এজ অফ আল্ট্রন
মারভেল সুপারহিরোদের প্রথম ক্রসওভার ‘দ্য অ্যাভেঞ্জারস’ দিয়ে বাজিমাত করার পর অনেকেই অপেক্ষা করে ছিলেন, অ্যাভেঞ্জারসের দ্বিতীয় সিনেমাও হয়তো সমান মাত্রার হবে। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি দিয়ে মারভেল যা পর্দায় তুললো, তা না পেরেছে সমালোচকদের করাত এড়াতে, না পেরেছে দর্শকদের মন জয় করতে। এরকম একটি ব্লকবাস্টারের একটি-দু’টি সমস্যা থাকলে সেটা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু এই সিনেমার প্লটে এত কিছু একসাথে জুড়ে দেয়ার প্রচেষ্টার কারণে এমন এক জগাখিচুড়ির সৃষ্টি হয়েছিল যে, তা মেনে নেয়া সহজ ছিল না।
সিনেমার মূল অ্যান্টাগনিস্ট আল্ট্রনের পেছনের তারকা জেমস স্পেডারের কন্ঠ যতটা ত্রাস সৃষ্টিকারী ছিল, তাকে পর্দায় ঠিক ততটা ভয়ালরূপে তুলে ধরতে পুরোপুরি ছিলেন ব্যর্থ পরিচালক জশ হুইডেন। আর অ্যাভেঞ্জারসদের সাথে তার বিরোধের কারণটি মোটেও মতাদর্শগত পার্থক্যের জন্য মনে হয়নি। বরং সে তাদেরকে ঘৃণা করার পেছনে কারণ, তারা প্রোটাগনিস্ট।
অথচ ‘এজ অফ আল্ট্রন’ সিনেমাটি মোটেও এরকম হওয়ার কথা ছিল না।
তবে একটি ব্যাপার না বললেই নয়। আল্ট্রনের কারণেই পরবর্তী ‘সিভিল ওয়ার’ সিনেমার প্লট তৈরি করাটা বেশ সহজ হয়ে গিয়েছিল, বিশেষ করে টনি স্টার্কের জন্য। তবে এমন না যে, সিনেমাটিতে উত্তেজনাকর কিছু ছিল না। কমিকস ভক্ত ছাড়াও সাধারণ দর্শকদের হতবাক করে দেয়ার মতো দৃশ্য ছিল এতে। বিশেষ করে হাল্কের সাথে হাল্কবাস্টারের মারামারির দৃশ্যগুলো আপনি দারুণ উপভোগ করবেন। দর্শক-সমালোচকদের রোষানলে পড়েও বক্স অফিসে ১.৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে সিনেমাটি। তবে এটি তৈরি করতেই প্রয়োজন পড়েছিল প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
অ্যান্ট-ম্যান
মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের সবচেয়ে ‘আন্ডাররেটেড’ সুপারহিরো সম্ভবত অ্যান্ট-ম্যান। তাই অ্যান্ট-ম্যান সিনেমা নিয়ে কারোরই তেমন প্রত্যাশা ছিল না। তাছাড়া সিনেমার নির্মাণের শুরুতেই যখন সৃজনশীল পার্থক্যের জন্য এর পরিচালকের পরিবর্তন হয়, তখন সেই সিনেমা নিয়ে অধিক প্রত্যাশা করাও বোকামি। আর হয়তো সে কারণেই মুক্তির পর আশাতীতভাবে উতরে গেছে সিনেমাটি। মারভেলের মাস্টারপিসের কাতারে না পড়লেও আন্ডারডগ হিসেবে খুব একটা খারাপ ছিল না অ্যান্ট-ম্যান।
প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে খুব সরলভাবে যে একটি সুপারহিরো সিনেমা বানানো সম্ভব, তা দেখিয়ে দিলেন পরিচালক পেইটন রিড। কন-ম্যান পিতার তার মেয়ের সাথে বন্ধন ধরে রাখার প্রচেষ্টা, আর এক বৃদ্ধের বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে তার অ্যান্ট-ম্যান হয়ে ওঠার অ্যাডভেঞ্চার আপনার মুখে হাসি ফোটাতে বাধ্য। সুপারহিরো ধাঁচের না বলে ‘হাইস্ট’ (Heist) সিনেমা বললেই বরং অ্যান্ট-ম্যানের প্রতি সুবিচার করা হবে।
যে জিনিসটা বেশি চোখে লেগেছে সেটি হলো, পরিচালক চাইলেই হয়তো ‘কোয়ান্টাম রেল্ম’কে আরো জটিল ও সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারতেন। অথচ এখানে সেটাকে মনে হয়েছে অনেকটা বিচিত্র ক্যালাইডোস্কোপের মতো।