“What I am about to tell you is a top-secret, A conspiracy bigger than all of us. There’s a powerful group of people out there that are secretly running the world. I’m talking about the guys no one knows about. The guys that are invisible. The top 1% of the 1%, the ones in control, the ones who play God without permission.”
এই কথাগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে কি আমরা খুব অবাক হবো? বর্তমানে আমরা প্রযুক্তির উপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি যে প্রযুক্তির প্রতিটি খাত অচল হওয়া শুরু করলে পুরো বিশ্বই অচল হয়ে পড়বে, আমরা অচল হয়ে পড়বো।
প্রযুক্তির সেবা গ্রহণের জন্য আমরা নিজেদের উন্মুক্ত করে দিচ্ছি পৃথিবীর বড় কোম্পানিগুলোর কাছে। আপনার পাশের মানুষটি সম্পর্কে আপনি যতটা জানেন, তার চেয়ে গুগল বোধয় বেশি জানে! আমরা তাদের প্রতি এতটাই নির্ভরশীল। কোটি কোটি মানুষের দ্বারা এমন বড় কোম্পানিগুলো কী করিয়ে নিতে না পারে? এমনই এক কোম্পানি হচ্ছে ই-কর্প। আর তাকে ধ্বংসের দোরগোড়ায় নিয়ে যাবে মি. রোবট, এলিয়ট এফসোসাইটি এবং দ্য ডার্ক আর্মি!
এলিয়ট অল্ডারসন (রামি মালেক)
ছোটবেলায় ড. জেকিল অ্যান্ড মি. হাইড পড়েছেন তো? না পড়ে থাকলে অবশ্যই পড়বেন! ড. জেকিলের মতোই একজন চরিত্র এলিয়ট অল্ডারসন। দিনে সে একজন সাধারণ সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট এবং রাতে অনন্য দক্ষতার একজন হ্যাকার। এলিয়ট কোনো সাধারণ মানুষের মতো নয়, তার একটি রোগ রয়েছে। সামাজিক উদ্বিগ্নতায় ভোগে সে। এই ব্যাধির কারণে এলিয়টের জীবনে যেমন অনেক বাধার সৃষ্টি হয়, তেমনি সৃষ্টি করে নতুন সব সম্ভাবনার। এছাড়া রোগের সাথে তার চরিত্রের দ্বৈততা পুরোই আলাদা একটি জগত সৃষ্টি করে।
Allsafe নামক কোম্পানিতে সে সিনিয়র নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করে। কোম্পানিটির কাজ হলো ডাটা ব্রিচ এবং হ্যাক থেকে Evil Corp-সহ বিভিন্ন কোম্পানিকে রক্ষা করা। এছাড়া সে তার দৈনন্দিন জীবনের মানুষদের হ্যাক করে পর্যবেক্ষণ করে এবং তার ঘনিষ্ঠ, প্রিয় ব্যক্তিত্বদের বিভিন্ন অনিষ্টের হাত থেকে রক্ষা করে। এতে কোনো সময় ফলাফল বিপরীতও হয়ে যায়, তবে তার মতে সেটি একটি স্যাক্রিফাইস।
নিউ জার্সির ওয়াশিংটন টাউনশিপে জন্ম নেয়া এলিয়ট নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করে। তার ব্যাধির সাথে জুড়ে গিয়েছে ছোটবেলার জটিলতায় পূর্ণ সব স্মৃতি। শৈশবে বাবার মৃত্যু, মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্নতা- সব মিলিয়ে সে পৃথিবীর সবার থেকে আলাদাভাবে জীবনযাপন করে আসছে। এছাড়া হ্যাকিংয়ের জন্য সে গ্রেফতারও হয়েছে। সেজন্য কোর্ট থেকে তাকে ১ বছরের থেরাপি নেয়ার নির্দেশ দেয়। এছাড়া মরফিনের লিমিটেড ডোজের মাধ্যমে সে স্ব-চিকিৎসা গ্রহণ করে এবং এটি যাতে নেশায় পরিণত না হয় সেজন্য সাবঅক্সনও গ্রহণ করে। সব মিলিয়ে তার জীবন চলছিল নিজের মতো করে। কিন্তু এরপর মি. রোবটের প্রবেশ তার জীবনের ধারা পাল্টে দেয়।
এলিয়ট চরিত্রে অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেতা রামি মালেক। দর্শক দ্বিধায় পড়ে যাবেন এটি অভিনয় নাকি বাস্তবতা! প্রতিটি মুহূর্ত তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। এলিয়ট চরিত্রে যেন অন্য কাউকেই এতটা মানাতো না। রামি মালেক প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার অভিনয় চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যান, কিন্তু এই চরিত্রকে যেন তিনি অনন্য ধারায় নিয়ে গিয়েছেন।
স্যাম ইসমাইলের অসাধারণ কীর্তি ও অপূর্ব সিনেমাটোগ্রাফি
মি. রোবট সিরিজটির স্রষ্টা, প্রযোজক এবং প্রধান লেখক স্যাম ইসমাইল। এছাড়া ৩৫টি এপিসোড পরিচালনাও করেন তিনি নিজেই। গত দশকের শেষের দিকে সিরিজটি তৈরির কাজ শুরু করেন। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও আরব বসন্ত থেকে আংশিক প্রেরণা নিয়ে তৈরি শুরু করেছিলেন। তার মতে, গল্পের প্রধান চরিত্র এলিয়টের মাঝে তার নিজেরও ছায়া বিদ্যমান। ইসমাইল নিজেও সামাজিক উদ্বিগ্নতা ব্যাধির শিকার এবং নিজেও জন্ম নিয়েছেন নিউ জার্সির ওয়াশিংটন টাউনশিপে। শুধু লেখাই নয়, সিরিজটিতে চোখে পড়বে অপূর্ব সিনেমাটোগ্রাফি।
পুরো সিরিজটিই আপনাকে মুগ্ধ করবে এর ক্যামেরার কারসাজি দিয়ে। প্রতিটি ফোকাস, জুম যেন নিখুঁতভাবে করা হয়েছে। রয়েছে ছোট ছোট মন্টেজ। এছাড়া সিরিজটির ইন্ট্রোই আপনার আগ্রহকে আরও জাগিয়ে তুলবে। সিরিজটিতে কিছু সুন্দর লোকেশনও রয়েছে। এবং সাউন্ডট্রাক নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা। এই সুন্দর সিনেমাটোগ্রাফির কৃতিত্ব টড ক্যাম্পবেলের। এছাড়া এত টেকনোলোজিক্যাল ডিটেইলস হয়তো আর কোনো সিরিজে ব্যবহার করা হয়নি। সিরিজটির প্রতিটি এপিসোডের টাইটেল থেকে শুরু করে হ্যাকিং কোনোটিই বাদ যায়নি। দেখানো হয়েছে বাস্তব সব ওয়েবসাইট, এবং বাস্তব হ্যাকিংও। প্রতিটি ক্ষেত্র এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে বাস্তব থেকে একে আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সিরিজ রিভিউ
এতটা রহস্যেঘেরা সিরিজ নিয়ে সামান্য বলতে গেলেও স্পয়লার হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে! প্রথমে সিরিজটির চরিত্রগুলো নিয়ে বলা যাক। সিরিজটির প্রধান চরিত্রের মাঝে পড়ে এলিয়ট, মি.রোবট, ডারলিন, অ্যাঞ্জেলা, টাইরেল, ফিলিপ এবং রহস্যময়ী হোয়াইটরোজ। প্রতিটি চরিত্রের মাঝেই কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায় এবং সিরিজটিতে প্রত্যেকটিকেই অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এসব অনন্য চরিত্র সিরিজটির প্রতিটি সিনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
শুরুটা হয় ই-কর্প বা ইভিল কর্পকে নিয়ে। ই-কর্প একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি; ফোন, কম্পিউটার থেকে শুরু করে ব্যাংকিং খাতেও পরিসর বিস্তৃত তাদের। মি.রোবটের মতে, তারা বিশ্বের ৭০ ভাগ ভোক্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্যই ই-কর্প এফসোসাইটির লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
এফসোসাইটি (fsociety) মি. রোবটের তৈরি একটি হ্যাকার গ্রুপ। ৫ সদস্যবিশিষ্ট এই হ্যাকার গ্রুপটির মূল উদ্দেশ্য ই-কর্পকে ধ্বংস করা এবং এখান থেকে সেবা নেয়া প্রতিটি মানুষকে ঋণমুক্ত করা। কিন্তু শুধু এফসোসাইটির পক্ষে পুরো কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব ছিল না। চীনে অবস্থিত সার্ভার ব্রিচ করার জন্য তাদের আরেকটি হ্যাকার গ্রুপের সহায়তা নিতে হয়। এই চীনা গ্রুপের নাম ডার্ক আর্মি এবং হোয়াইটরোজ তাদের প্রধান।
এফসোসাইটি থেকেও ধুরন্ধর একটি গ্রুপ ডার্ক আর্মি। পেশাদার খুনী থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গও রয়েছে তাদের হাতে। তাদের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই দুর্লভ এবং কেউ যদি তাদের সম্পর্কে কিছু প্রকাশ করে তাহলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। ডার্ক আর্মির নির্মমতার পরিচয় পুরো সিরিজ জুড়েই পাবেন দর্শক। তবু হোয়াইটরোজ চরিত্রটি দর্শকের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। বিশেষ করে BD Wong-এর অভিনয় ছিল অসাধারণ।
সিরিজটির গল্প ও চরিত্রগুলোর মোটিভ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হতে থাকে এবং এর টাইমলাইনে পড়ে ঘাবড়ে যেতে পারেন অনেকেই! তবে এতে মূল নায়কের মানসিক যাত্রাকেই কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। শুধু হ্যাকিংই নয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিকগুলোও বাস্তবের সাথে যথেষ্ট মিল রেখে তৈরি করা।
সিরিজটি প্রথম অনলাইনে ভিডিও অন ডিমান্ড সার্ভিস দ্বারা প্রিমিয়ার করা হয় ২০১৫ সালের মে মাসে। এরপর জুন ২৪ থেকে ইউএসএ নেটওয়ার্কে প্রিমিয়ার শুরু হয় এবং ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৪৫ এপিসোডের ৪টি সিজন দিয়ে এর যাত্রা শেষ করে।
সিরিজটি সমালোচকদের কাছেও ব্যাপকভাবে প্রসংসিত হয় এবং জিতে নেয় দুটি গোল্ডেন গ্লোব ও অ্যামি এওয়ার্ড। এর আইএমডিবি রেটিং ৮.৫, রোটেন টম্যাটোজে ৯৪% ও রেটিং গ্রাফে ৯/১০। দ্বিতীয় সিজনটি অনেকের কাছে বোরিং মনে হতে পারে, তারপরও দেখে যাবেন। কারণ তৃতীয় ও চতুর্থ সিজনকে সমালোচকেরা টিভি সিরিজ ইতিহাসে অন্যতম সেরার মাঝে ফেলেছেন!
এলিয়টের কালো হুডি, সিরিজ জুড়ে কালি লিনাক্স জিনোমের কারসাজি যেন কোনো হ্যাকারের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিয়েছে। প্রতিটি এপিসোডের টাইটেল কমপক্ষে দুটি দিক নির্দেশ করে, একটি হ্যাকিং সম্পর্কে, আরেকটি চরিত্র সম্পর্কে।
স্যাম ইসমাইল তার কর্মের কোনো ক্ষেত্রেই কমতি রাখেননি। বাস্তবের সাথে মিল রেখে তিনি তৈরি করেছেন আলাদা একটি জগত। তৈরি করেছেন সেরা একটি টেকনোলজিক্যাল থ্রিলার। যারা প্রযুক্তি ভালোবাসেন কিংবা সাইবার ক্রাইম, তাদের জন্য এই সিরিজ একটি অবশ্য দ্রষ্টব্যের মাঝে পড়ে।