Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.
দিগন্তের দিকে তাকাতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সূর্যোদয়, হ্যাঁ এটা দেখার ইচ্ছাই ছিল তার। কিন্তু এই সূর্যোদয়ের জন্য অনেক বড় দাম চুকাতে হয়েছে। বিসর্জন দিতে হয়েছে নিজের প্রিয় মেয়েকে এবং একটু আগেই এক চুটকিতে এই মহাবিশ্বের অর্ধেক প্রাণকে সে হত্যা করেছে।
অবশেষে সেই সূর্যোদয়; Image Source: Disney/Marvel
এই কাজ যদি সে নিজের গ্রহে করতে পারতো, হয়তো টাইটান বেঁচে যেত। কিন্তু সবাই ভেবেছিলো সে একজন উন্মাদ। তার ভয় একদিন ঠিকই সত্য হলো। অধিক জনসংখ্যার চাপে টাইটান ধ্বংস হলো। সে পণ করলো, নিজের গ্রহের সাথে যা হয়েছে তা অন্য কোনো গ্রহে হতে দেবে না। তাই সে গড়ে তুললো নিজের বিশাল এক বাহিনী। তারপর সে এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে গিয়ে সেখানকার অর্ধেক মানুষকে হত্যা করত। আস্তে আস্তে সে হয়ে উঠলো এই মহাবিশ্বের এক আতংক, মৃত্যু যাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করত।
নিজ গ্রহের ধ্বংসস্তূপের সামনে থ্যানোস; Image Source: Disney/Marvel
এমনটাই ছিল মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের অন্যতম ভয়ানক ভিলেন থ্যানোসের গল্প। আট ফুট লম্বা, বেগুনী, কদাকার এই দানবের আগমনের ইঙ্গিত মার্ভেল আমাদের দিয়েছিল সেই ২০১২ সালে প্রথম অ্যাভেঞ্জার্স মুভিতেই। লোকির হাতে মাইন্ড স্টোন তুলে দিয়ে, সাথে নিজের চিটাউরি আর্মিকে পাঠিয়েছিল পৃথিবী থেকে টেসারেক্ট নিয়ে যেতে। এরপর গার্ডিয়ান অফ দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম ১ এ তাকে অল্প একটু সময়ের জন্য দেখা যায়। আর অ্যাভেঞ্জার্স এজ অফ আল্ট্রন মুভিটির পোস্ট ক্রেডিট সিনে থ্যানোস জানিয়ে দেয় সে আসছে। অ্যাভেঞ্জার্স ইনফিনিটি ওয়ার সিনেমাটি মূলত তাকে ঘিরেই। সবচাইতে বেশি স্ক্রিনটাইম (২৯ মিনিট) পাওয়ার পাশাপাশি তার মেধা এবং ক্ষমতার বেশ ভাল ঝলক দেখতে পাই আমরা।
থ্যানোস কোনো ইনফিনিটি স্টোন ব্যবহার না করেই হাল্ককে হারিয়ে দিয়েছিলো; Image Source: Disney/Marvel
কমিকে থ্যানোসের গল্প
কমিকে থ্যানোস পরিচিত ‘দ্য ম্যাড টাইটান’ নামে। মুভির মতো কমিকেও তার আগমন অনেক পরেই। তাকে প্রথম দেখা যায় ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত দ্য ইনভিন্সিবল আয়রন ম্যান কমিকের ৫৫ তম ইস্যুতে। চরিত্রটি সৃষ্টি করেন জিম স্টার্লিন এবং মাইক ফ্রেডরিখ।
থ্যানোসের স্রষ্টা জিম স্টার্লিন এবং মাইক ফ্রেডরিখ; Image Source: Vice.com
জিম স্টার্লিনের মাথায় থ্যানোসের ধারণা প্রথম আসে কলেজের একটি সাইকোলজি ক্লাসে। এরপর মার্ভেল কমিকসের এডিটর রয় থমাস তাকে জিজ্ঞেস করেন তিনি আয়রন ম্যানের একটি ইস্যুতে কাজ করতে চান কি না। সাথে সাথেই সেই সুযোগটি লুফে নেন স্টার্লিন, কারণ এটাই হয়তো একমাত্র সুযোগ ছিল একটি চরিত্র সৃষ্টি করার। সেই আয়রনম্যানের ইস্যুতেই তিনি যোগ করেন থ্যানোসকে, যেখানে মাইক ফ্রেডরিখ থ্যানোসের ডায়লগের কাজ করেন।
এই ইস্যুতেই প্রথম দেখা যায় থ্যানোসকে; Image Source: Marvel Comics
জ্যাক কিরবির ‘নিউ গডস’ স্টার্লিনের থ্যানোস সৃষ্টিতে অনুপ্রেরণা ছিল। যদিও অনেকেই মনে করেন, থ্যানোস ডিসি কমিকের ডার্কসাইডের আদলে তৈরি, তবে সেটা ভুল। এ বিষয়ে জিম স্টার্লিন বলেন,
তোমরা হয়তো ভেবে থাকবে থ্যানোস ডার্কসাইড থেকে অনুপ্রাণিত, কিন্তু বিষয়টি তা নয়। থ্যানোসকে নিয়ে আমার আঁকা প্রথম ছবিগুলোতে, যদি তাকে কারোর মতো মনে হতো, সে হলো মেট্রন।
মেট্রন এবং থ্যানোস; Image Source: Comicbook.com
থ্যানোস প্রথমদিকে অনেক চিকন ছিল, পরে রয় পরামর্শ দিলেন যাকে তাকে কিছুটা দানবীয় করে তোলা হয়। তাই এখন থ্যানোসকে দেখতে অনেকটাই ডার্কসাইডের মতো মনে হয়।
থ্যানোসের জন্ম শনির ষষ্ঠ উপগ্রহ টাইটানে। সে ছিল ইটারনালদের বংশধর। সেলিস্টিয়াল নামক দুই হাজার ফুট লম্বা স্পেস গডরা আদিম মানবজাতির (Homo Erectus) উপর জেনেটিক এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে ইটারনালদের সৃষ্টি করে। সেটাও কয়েক মিলিয়ন বছর আগেই। এই ইটারনালরা অনেক বছর বাঁচতে পারে, তবে তার মানে এই না যে তারা অমর।
থ্যানোসের বাবা আ’লারস এবং মা সুই-সান একে অপরের প্রেমে পড়েন। তারা টাইটানে ইটারনালদের একটি কলোনি গড়ে তোলেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে, যেটা একসময় একটি স্বর্গ হয়ে ওঠে। যেখানে কোনো ঝগড়া, হিংসা বা কোনো অপকর্ম ছিলো না। কিন্তু সেই স্বর্গে নরকের দূত হিসেবে জন্ম নেয় থ্যানোস। জন্মের সময় সে ডিভিয়েন্ট সিন্ড্রোম নিয়ে জন্মায়। ডিভিয়েন্ট ছিল ইটারনালদের একপ্রকার মিউটেশন, যার কারণে থ্যানোসের শরীরে ডিভিয়েন্টদের জিনগত বৈশিষ্ট্য দেখা দেয়। থ্যানোস জন্ম নেয় বেগুনী রঙয়ের চামড়া নিয়ে। আস্তে আস্তে সে এই মিউটেশনের জন্য শারীরিক দিক থেকে অন্যান্য টাইটানসদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
বেগুনী রঙের শিশু থ্যানোস; Image Source: Marvel
টাইটানের ডাক্তাররা অবাক হয়েছিলেন শিশু থ্যানোসের বেঁচে থাকার এই অস্বাভাবিক ক্ষমতা দেখে। যখন সুই-সানের কোলে শিশু থ্যানোসকে তুলে দেয়া হয়, মায়ার পরিবর্তে সুই-সানের চোখে নেমে আসে ভয়ের ছায়া। তিনি থ্যানোসের দুই চোখে মৃত্যু দেখতে পান, দেখতে পান টাইটানের ধ্বংস। তাই তিনি তখনই থ্যানোসকে হত্যা করতে পাশে পড়ে থাকা ছুড়িটির দিকে হাত বাড়ান। কিন্তু আ’লারস তাকে বাঁধা দেন। সুই-সানকে তখন চেতনানাশক ইনজেকশনের মাধ্যমে অজ্ঞান করা হয়। কিন্তু তখনও সুই-সান বলে যাচ্ছিলো,
তার চোখের দিকে তাকাও। তোমরা কেউ কি তার চোখে মৃত্যু দেখতে পাচ্ছো না? আমরা যদি ওকে এখন হত্যা না করি, তাহলে আমরা সবাই মারা যাব। ওর দিকে তাকাও, ও আমার সন্তান না। ও একটা দানব।
নিজ হাতে সদ্যোজাত সন্তানকে হত্যা করতে যাচ্ছিলো সুই-সান; Image Source: Marvel
এই ঘটনার পর মানসিক ভারসাম্য হারায় সুই-সান এবং তাকে পাঠানো হয় একটি মানসিক হাসপাতালে। আ’লারস একাই থ্যানোস এবং থ্যানোসের ভাই ইরোসকে লালন পালন করতে থাকেন। থ্যানোস তার এই ডিভিয়ান্ট জিনের কারণে বেশ মেধাবী হয়ে ওঠে। সে চেয়েছিল তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে একজন বিজ্ঞানী হতে। তাই সে সারাদিন গবেষণাতেই মেতে থাকতো। এছাড়াও সে ছোটবেলায় বেশ লাজুক এবং শান্তশিষ্ট ছিল। সে এতটাই নিরীহ ছিল যে, একবার ক্লাসে একটি সরীসৃপ ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে বরং সেখান থেকে দৌড় দিয়ে পালায় এবং বমি করে দেয়। প্রশ্ন আসতে পারে- এই থ্যানোস কিভাবে পরবর্তীতে মৃত্যুর লীলাখেলায় মেতে ওঠে?
লেডি ডেথের প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি রাখেনি থ্যানোস; Image Source: Marvel
কমিকে থ্যানোসের গল্পে যে নামটি অবশ্যই আসবে সেটি হলো মিস্ট্রেস ডেথ, মৃত্যুর শারীরিক স্বত্তা, থ্যানোসের ভালোবাসা। মিস্ট্রেস ডেথের সাথে থ্যানোসের পরিচয় মার্ভেল ইউনিভার্সের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। এখানেই অন্যান্য ভিলেনের সাথে থ্যানোসের পার্থক্য। সব সুপারভিলেন যেভাবে এই মহাবিশ্বে নিজের রাজত্ব কায়েম করতে চায়, একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে চায় সেখানে থ্যানোস শুধু চেয়েছিলো ডেথের ভালোবাসা। ডেথকে খুশি করাতেই থ্যানোস এত হত্যা করেছে, নিজ গ্রহ ধ্বংস করেছে। কিন্তু অবাক করা বিষয়- সেই ভালোবাসা ছিল একতরফা। থ্যানোস কোনোভাবেই ডেথের মন জয় করতে পারেনি।
থ্যানোসের সবচাইতে শক্তিশালী অস্ত্র তার মেধা। সে ‘Knowledge is power and power is everything’ এই নীতিতে বিশ্বাস করতো। বিভিন্ন মিস্টিক আর্ট, ডার্ক ম্যাজিক, আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে একসময় বেশ পারদর্শী হয়ে ওঠে। এরপর সে নিষিদ্ধ প্রযুক্তি দিয়ে এমন একটি অস্ত্র বানাচ্ছিলো যা টাইটানে নিষিদ্ধ ছিল। এই খবর যখন তার বাবা জেনে যায় তখন তিনি থ্যানোসকে টাইটান থেকে নির্বাসিত করেন। তবে তার মনে আশা ছিল, তার ছেলে একসময় ভুল বুঝতে পেরে আবার টাইটানে ফিরে আসবে।
কিন্তু ফল হয় পুরো উল্টো। থ্যানোস গ্রহ থেকে গ্রহে ঘুরতে থাকে এবং বিভিন্ন বিষয়ে নিজের জ্ঞান আহরণ করতে থাকে। সাথে গড়ে তোলে নিজের এক বিশাল সৈন্যবাহিনী। একসময় নিজের জন্মভূমির প্রতি ঘৃণা আর নির্মমতা দেখিয়ে থ্যানোস টাইটানে হামলা চালায়। শান্তিপ্রিয় টাইটানে লাখ লাখ ইটারনালদের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে তার মা-ও ছিল।
নিজের জন্মভূমিকে আক্রমণ করলো থ্যানোস; Image Source: Marvel
তবে থ্যানোস রাইজেস কমিকে সেটা কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। সেখানে দেখানো হয়, থ্যানোস মিস্ট্রেস ডেথের প্ররোচনায় পড়ে বিভিন্ন প্রাণীকে হত্যা তারপর ব্যবচ্ছেদ করে তাদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করত। একসময় সে জানতে চায়, সে কেন দেখতে এমন, সবার থেকে আলাদা? তা জানার একটাই উপায়, মা সুই-সান। তাই সে নিজের মাকে হত্যা করে জানার চেষ্টা করে সব প্রশ্নের উত্তর। অর্থাৎ থ্যানোসের জন্মের সময় যা হচ্ছিলো, তার উল্টোটাই পরবর্তীতে হয়েছে। থ্যানোস নিজ হাতে হত্যা করে নিজের মাকে।
ইনফিনিটি ওয়ারে থ্যানোসের আগের জীবনের গল্প দেখানো হয়নি। তবে থ্যানোস: টাইটান কনজিউমড নামক একটি কমিকে সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের থ্যানোসের শৈশব থেকে ম্যাড ম্যান হয়ে ওঠার গল্প উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানেও থ্যানোসের জন্মের পর তার মা মানসিক ভারসাম্য হারায়। কমিক অনুযায়ী মুভিতে থ্যানোস নয়, বরং থ্যানোসের মা দ্য ম্যাড টাইটান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই থ্যানোস তার ডিভিয়েন্ট জিনের জন্য বেশ মেধাবী ছিল। মাত্র ছয় মাসেই হাঁটতে পারতো, কথা বলা শিখে যায় প্রথম জন্মদিনের আগেই। ছোটবেলা থেকেই তার এই অদ্ভুত চেহারা এবং গায়ের রঙের কারণে তাকে সবাই এড়িয়ে চলতো। নিজের বাবা-মায়ের ভালোবাসাও সে পায়নি। সেই কমিকেই উল্লেখ করা হয়েছিল যে, অর্ধেক জনসংখ্যাকে হত্যা করার উপায় বাতলে দেয়ায় থ্যানোসকে নির্বাসিত করা হয়েছিল।
ভিলেন হিসেবে থ্যানোস চরিত্রের বিশ্লেষণ
কমিকে মিস্ট্রেস ডেথ বুঝতে পেরেছিলো ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা বিপুল জনসংখ্যা এই মহাজগতের ভারসাম্য নষ্ট করছে। তাই সে থ্যানোসকে এই ইউনিভার্সের অর্ধেক প্রাণ বিনাশ করার দায়িত্ব অর্পণ করে। থ্যানোস ডেথকে খুশি করতে এর আগে অনেক হত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো। কিন্তু এই কাজ সবচাইতে বড়। ডেথের প্রেমে অন্ধ থ্যানোস খুশি হয়েছিলো এই ভেবে যে, এই কাজ যদি সে করতে পারে, যদি সে এই ইউনিভার্সের অর্ধেক প্রাণ ধ্বংস করতে পারে, তাহলে হয়তো সে ডেথের ভালোবাসা পাবে।
মুভিতে থ্যানোস লেডি ডেথের ভালোবাসা চায়নি, চায়নি এই ইউনিভার্সের সবচাইতে শক্তিশালী প্রাণী হয়ে সবাইকে শাসন করতে, সে চায়নি এমন কিছু অর্জন করতে যা তাকে সবার সম্মান এবং ভালোবাসা এনে দেবে। সে চেয়েছে এই ইউনিভার্সের একটি বাস্তব এবং ভয়াবহ সমস্যার সমাধান করতে।
থ্যানোস যখন বুঝেছিল, জনসংখ্যা একসময় টাইটানের ধ্বংসের কারণ হবে, সে তা থামানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তখন তার কোনো ক্ষমতা ছিল না। সবাই তাকে বদ্ধ উন্মাদ ভেবেছে, গ্রহ থেকে বিতাড়িত করেছে। কিন্তু টাইটানে সেটিই হয়েছিল যা সম্পর্কে থ্যানোস আগেই বলেছিল। এরপর সে বুঝতে পারলো, এই মহাবিশ্ব খুব দ্রুত সেই একই ফল ভোগ করবে, যদি না কেউ সেটার ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে আসে।
এটি কোনো নায়কের অতীতের গল্প হতে পারত, কারণ থ্যানোসের উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার এবং একদিক দিয়ে মহৎ। এই মহাবিশ্বের কোনো প্রাণী যদি ছয়টি ইনফিনিটি স্টোন পেত, তাহলে সে নিজের রাজত্ব কায়েম করতে চাইতো। কিন্তু থ্যানোস চেয়েছে মহাবিশ্বের রক্ষা। সে চেয়েছে প্রতিটি সভ্যতা যাতে আরো কয়েক হাজার বছর টিকে থাকতে পারে, যেটি অবশ্যই একটি ভুল উপায়ে, যা তাকে একজন নায়কের পরিবর্তে খলনায়ক হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করে।
থ্যানোস জনসংখ্যার চাপে পিষ্ট সেসব গ্রহে হামলা করতো, যারা তার সাহায্য চায়নি। সে বর্বরভাবে, নির্বিচারে সেই গ্রহের অর্ধেক প্রাণকে হত্যা করত। যে অর্ধেক এই বর্বরতা থেকে বেঁচে যেত, তাদের বাকি জীবন পরিবার এবং বন্ধু হারানোর শোকে কাটাতে হতো। কিন্তু থ্যানোস বিশ্বাস করে, মুক্তির জন্য এই ছোট দাম পরিশোধ করতেই হবে। তাই সে কখনোই নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত নয়।
তবে থ্যানোসকে হৃদয়হীন, নির্মম দানব ভাবলেও ভুল হবে আমাদের। গামোরার গ্রহে হত্যাযজ্ঞ চালানোর সময় গামোরার মনোবল থ্যানোসকে মুগ্ধ করে, তাই সে গামোরাকে নিজের কাছে নিয়ে আনে, নিজের মেয়ের মতো লালন পালন করে।
সৌল স্টোন পেতে থ্যানোসকে যখন নিজের সবচাইতে প্রিয় মানুষটিকে বিসর্জন দিতে হত, গামোরার মতো সবাই ভেবেছিলো এই স্টোন থ্যানোস কখনোই পাবে না। কারণ তার মতো দানব, খুনী কাউকে ভালোবাসতে পারে না। কিন্তু থ্যানোসের চোখের পানি প্রমাণ করে থ্যানোস ভালোবাসতে জানে। সে যে পথে নেমেছে, নিজের ভালোবাসা তার কাছে তুচ্ছ। চোখে পানি নিয়ে সে গামোরাকে বলে,
নিয়তি থেকে একবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। সেই ভুল আর করব না। হোক না সেটা তোমার জন্য।
এই ত্যাগ সিনেমাতে হিরোদের চাইতে থ্যানোসের মনোবল এবং দৃঢ়তার পর্বতসমান পার্থক্য আমাদের সামনে তুলে ধরে। ভেবে দেখুন, লোকি যদি তার ভাইকে, গামোরা তার বোনকে, পিটার কুইল এবং ওয়ান্ডা যদি ভালোবাসার মানুষদের বিসর্জন করতে প্রস্তুত থাকত, হয়তো থ্যানোস ছয়টি স্টোন সংগ্রহ করতে পারতো না, বেঁচে যেত ট্রিলিয়ন প্রাণ। কিন্তু হিরোদের স্বার্থপরতা আর থ্যানোসের দৃঢ়তা এই মুভিতে একটি বিশাল পার্থক্য গড়ে দিলো।
পরিচালকরা জানিয়েছিলেন, থ্যানোসের বয়স প্রায় এক হাজার বছর। এই দীর্ঘ জীবনে থ্যানোস অনেক গ্রহ ঘুরেছে। অনেক জ্ঞান আহরণ করেছে এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে, যা তাকে মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের সবচেয়ে মেধাবী এবং বুদ্ধিমান চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
থ্যানোস হিসেবে জশ ব্রোলিন
পুরো মুভিতে বিশেষ স্যুট এবং হেলমেট পরে অভিনয় করেছেন জশ ব্রোলিন; Image Source: IGN
মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সে মোট দুজন অভিনেতা থ্যানোস চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ২০১২ সালে প্রথম অ্যাভেঞ্জার্স মুভিতে ডেমিয়েন পয়টিয়ার থ্যানোস হিসেবে আবির্ভূত হলেও ২০১৪ সালের গার্ডিয়ান অফ দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম ১ সিনেমাটিতে নতুনভাবে জশ ব্রোলিনকে কাস্ট করা হয়।
মূলত হাল্কের মতোই থ্যানোসের পুরো শরীরটি সিজিআইয়ের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে৷ এজন্য বিশেষ স্যুট এবং হেলমেট পরেই পুরো মুভিতে শ্যুটিং করতে হয়েছে ব্রোলিনকে। এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছিলেন। দ্য হবিট চলচ্চিত্রটিতে কাম্বারব্যাচ ড্রাগন স্মাগের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ইউটিউবে সেই ভিডিও দেখেই থ্যানোস হিসেবে অভিনয়ের অনুপ্রেরণা খুঁজে পান ব্রোলিন।
জশ ব্রোলিন নিজেকে থ্যানোস হিসেবে বেশ ভালোভাবেই তুলে ধরতে পেরেছেন। মোশন ক্যাপচার স্যুট এবং হেলমেট পরে অভিনয় করা চাট্টিখানি কথা নয়। ব্রোলিনের প্রশংসায় মুখর ছিলেন থ্যানোস চরিত্রের স্রষ্টা জিম স্টার্লিন নিজেই। ফেসবুকে তিনি সিনেমাটি দেখার পর নিজের অভিমত ব্যাখা করেন এভাবে, “ব্রোলিন থ্যানোস হিসেবে দুর্দান্ত ছিল। তার চলাফেরা এবং আবেগ একই রকম ছিল, যেভাবে আমি তাকে কমিকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম।“
থ্যানোসের মুভির অভিব্যক্তি এভাবেই তুলে রাখা হয়েছিল; Image Source: Digital Domain
সর্বমোট ১৪টি ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস হাউজ ইনফিনিটি ওয়ার মুভিতে কাজ করেছে। তবে আট ফুট লম্বা এই চরিত্রটিকে মুভিতে ফুটিয়ে তুলতে কাজ করেছে দুটি ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস হাউজ, ডিজিটাল ডোমেইন এবং ওয়েটা ডিজিটাল। সিনেমার কাজ শুরু করার আগে ব্রোলিনের মুখের অভিব্যক্তি- হাসি থেকে শুরু করে বিমর্ষ হয়ে পড়া সবকিছু মেডুসা নামক ফেসিয়াল স্ক্যানিং সিস্টেমের মাধ্যমে তুলে রাখা হয়।
ইনফিনিটি ওয়ারের সিক্যুয়াল অ্যাভেঞ্জার্স এন্ডগেম মুক্তি পাবে এপ্রিলের ২৬ তারিখ। সিনেমাটিতে থ্যানোস আবারও ফিরে আসবে। অ্যাভেঞ্জাররা কি এবার থামাতে পারবে এই ম্যাড ম্যানকে? নাকি থ্যানোস নিজের মেধা, শক্তি এবং মনোবলের মাধ্যমে আবার পরাজিত করবে তাদের? উত্তরের অপেক্ষায় থাকাটাই কষ্টকর!