
মনে আছে সেই নরম্যান বেটসকে? যার মোটেলে ঘটেছিল নৃশংস সব ঘটনা? যার মা খুন করে ফেলত হোটেলে আসা অতিথিদের? ‘মায়ের করা’ খুনগুলোর শাস্তি পাচ্ছে নরম্যান। মানসিক হাসপাতালে সে বন্দী হয়ে আছে বহু বছর ধরে।
বই পড়ে, টেলিভিশন দেখে সে সময় কাটায়। নরম্যানকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে ডক্টর ক্লেইবর্ন। এই হাসপাতালের রোগীদের সে কিন্তু আর দশজনের মতো পাগল বলে না। বরং মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে, সুস্থ করে তোলে। তাদের নানাভাবে সাহায্য করে। মোদ্দাকথা, সে তাদের বন্ধু। বিশেষ করে নরম্যানের খুব কাছের মানুষ।
এদিকে একদিন নরম্যানের সাথে দেখা করতে আসে কয়েকজন। কী কারণে দেখা করতে আসে, সেটা না হয় পাঠক বই পড়েই জানবেন। তো এবার গল্পে ফিরি, ঠিক সেদিন কয়েকটি খুন করে নরম্যান মানসিক হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। আর কেউ না বুঝলেও ক্লেইবর্ন বুঝে যান নরম্যান কোথায় যাবে। হলিউডে। কারণ সেখানে নরম্যানের জীবন নিয়ে বানানো হচ্ছে একটি সিনেমা।

রয় আমোস, নরম্যানের জীবন নিয়ে বেশ জটিল করেই লিখেছেন চিত্রনাট্য। মুখ্য ভূমিকায় আছে পল মরগ্যান আর জেন হার্পার। তারা নরম্যান আর মেরি ক্রেনের ভূমিকায় অভিনয় করবেন। পল বেশ ভালো অভিনয় করেন, তবে জেন কেবল শুরু করেছে তার হলিউড জীবন। সেট রেডি, সেই ভয়ানক ৬ নাম্বার রুম, অবিকল নরম্যান বেটসের, বেটস মোটেলের মতো সাজানো হয়েছে। এখানে মাঝেমধ্যে রিহার্সাল চলছে। নরম্যান, নরম্যানের মা, মেরি সবাই চরিত্রকে নিজের মধ্যে ধারণ করেছে। সবাই প্রাণান্ত চেষ্টা করছে, বহু বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে পর্দায় রূপ দিতে। কিন্তু একে একে অনেক বাধা এসেছে, আসছে। ঘটে চলেছে একের পর এক নৃশংস ঘটনা।
ডক্টর স্ট্যাইনার, ডক্টর ক্লেইবর্ন, ড্রিসকল, ভিজিনিসহ বেশ কিছু মানুষ এই সিনেমার পেছনে আছে। কিন্তু এদের মধ্যে কে চাইছে সিনেমা হোক, আর কে-ই বা এর বিপক্ষে? নরম্যান এখন মুক্ত। কী ঘটবে সামনে? এত বছর পর কি নরম্যান স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে? সে কি হলিউডে যেতে পারবে? নরম্যান কী চায়? সে কি চায়, তার জীবন নিয়ে সিনেমা হোক, নাকি চায় না? কে জানে? জানার জন্য বইটি পড়তে হবে।

এই সিরিজের প্রথম বই সাইকো; যেখানে মেরি ক্রেন নামে এক নারী মর্মান্তিকভাবে খুন হন। আর সেই খুনের তদন্তে বেরিয়ে আসে একের পর এক ভয়ানক তথ্য। সেই বেটস মোটেলের স্বত্বাধিকারী নরম্যান বেটস খুনের দায়ে জেলে যায়, কিন্তু আসলে খুন করে তার মা। সেখানে শেষ হয় প্রথম পর্ব। আর দ্বিতীয় বইটি শুরু হলো সেই থেমে যাওয়া অংশ থেকেই। প্রথম বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন সাজিদ রহমান। এ পর্ব অনুবাদ করেছেন মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ। অনুবাদের মান মোটামুটি ভালো ছিল। তবে নরম্যানের সিনেমার নাম ‘উন্মাদিনী’ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘সাইকো’ কিংবা ‘উন্মাদ’ রাখলে ভালো হতো। বইয়ে নাম এবং বানানের ক্ষেত্রে কিছু ভুল চোখে পড়েছে। সেটা হয়তো পরবর্তী সময়ে সংশোধন করে নেওয়া যেতে পারে। ‘সাইকো’ সিরিজের তিনটি বই প্রকাশ করেছে আদী প্রকাশনী।
বইয়ের পুরোটা জুড়েই ছিল ‘টার্ন অ্যান্ড টুইস্ট’। লেখক খুনের এবং খুনীর সন্দেহ সবার মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। কখনো মনে হয়েছে জেন দায়ী, কখনো সন্দেহের তীর ছুটে গেছে টম পোস্ট বা ভিজিনির দিকে। কিন্তু শেষটায় গল্প এমনভাবে ঘুরে যাবে যে তা কেউ ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারবে না।
সবথেকে সদয় চরিত্র মনে হয় ক্লেইবর্নকে। সে নিজ হাতে নরম্যানকে বের করে এনেছিল তার অতীতের ট্রমা থেকে। তার চেষ্টায় নরম্যান আজকের এই জীবনে। অন্যদিকে জেন চরিত্রটি বেশ শক্তিশালী। নিজে পরিশ্রম করেই নিজের অবস্থান তৈরি করতে চাইছে সে। তার জীবনের না বলা কিছু কষ্ট ছিল তার চলার পথের শক্তি।

প্রথম পর্বে যেমন অনেকগুলো ঘটনা ছিল, আলাদা আলাদা, এই বইটির সবগুলো ঘটনা কিন্তু নরম্যানকে ঘিরেই। প্রতিটি চরিত্র হাসছে, কথা বলছে, ভাবছে। তবে সবকিছুর মধ্যে নরম্যান আছেই। মজার ব্যাপার হলো, নরম্যানের কিন্তু সেটা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। সে শুধু চাইছে একটি জিনিসই।
তবে এই বইটি শেষদিকে মনে হয় ধুপ করে শেষ, কোথাও একটা কিছু বাদ পড়ে গেছে। ঠাণ্ডা মাথায় পড়লে সব কড়ি আর সুতো একসাথে জুড়তে পারবেন। লেখক প্রতিটি প্লট যেভাবে সাজিয়েছেন, তাতে করে সহজে শূন্যস্থান খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এত বছর আগের গল্পে লেখক কিছু কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন, যেটা একবিংশ শতাব্দীতে অহরহ ঘটছে, ঘটবে। যেটা দিয়ে বোঝা যায়, আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে জড়িত সময়ের সাথে। কোথাও না কোথাও, অতীত-বর্তমান সব এক।
বইটিতে বেশ অনেকগুলো চরিত্র আছে। আলাদা আলাদা করে সবাইকে মনে রাখা প্রথমদিকে একটু গোলমেলে লাগতে পারে, তবে সময়ের সাথে সাথে চিনে যাবেন। ডক্টর স্ট্যাইনার আর ডঃ ক্লেইবর্ন- এই দুজনকে নাকি অধিকাংশ মানুষ গুলিয়ে ফেলেন।
প্রতিটি চরিত্র নিজের কিছু কথা গল্পে বলে গেছে। গল্পের চালক নরম্যান বেটসের এমন একটি কথা,
গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক, সে গন্ধ ছড়াবেই।
শেষের কয়েক পাতা যেভাবে আপনাকে অবাক করে দেবে, ঠিক সেভাবে কষ্ট দেবে। যার জন্য আমরা বা আপনি কেউ প্রস্তুত নই। বইটা শেষ করে ভাবতে বসবেন, কী হলো, কেন হলো, আর কীভাবে হলো? এ-ও কি সম্ভব? যারা থ্রিলার পছন্দ করেন, তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য একটা বই।
বই: সাইকো ২
লেখক: রবার্ট ব্লক
অনুবাদ: মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ
প্রকাশনী: আদী