Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সসেমিরা: ফেলু, বোমক্যাশের ভক্ত ‘সিলোটি’ টিকটিকি কামাল ও তার প্রথম কেস!

‘সসেমিরা’, পদ হিসেবে বিশেষ্য। যার সম্প্রসারিত অর্থ সংকটজনক কিংবা কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। এই কৌতূহলোদ্দীপক নামই গোয়েন্দা উপন্যাসটি পড়ার আগ্রহের কারণ। ভেতরেও মন্দ হয়নি। ওল্ড স্কুল ডিটেকটিভ ফিকশন। অবশ্য সেটা সজ্ঞানেই। এই জনরার প্রতি একটা স্মৃতিমেদুর হোমাজ হিসেবেও দেখা যায় একে। ক্লাসিক গোয়েন্দা গল্পের উপাদান, অলংকারকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে ব্যবহার তো আছেই, সাথে এই সময়ানুযায়ী কিছু সাবভার্সন আছে। 

নামের পাশাপাশি এর গোয়েন্দা চরিত্রও ভিন্নরকম। ‘ভিন্ন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেই যে ভিন্ন করা, সেটাও বেশ বোঝা যায়। লেখকের নিজস্ব ইন্ডালজেন্স বা নিমগ্নতা এই জায়গায় সুস্পষ্ট। হয়তো সেটা তিনি লুকোতে চাননি, লুকানোতে বুদ্ধিদীপ্ততা আর দক্ষতা কোনোটাই খর্ব হতো না যদিও। তবে ইন্ডালজেন্সটা মাঝেমধ্যে অমনিসিয়েন্ট বা সর্বদর্শী ন্যারেটরের কাছে না রাখে, ওই ভূমিকায় লেখকের নিজেরই উপস্থিত হয়ে যাওয়াটা একটু বেশিই দেখনদারি ব্যাপার হয়ে গেছে। ভিন্ন-র কথা বলতে গিয়ে বাগাড়ম্বর হয়ে গেছে। যদিও এটা আলোচনার সাথে সাযুজ্যতা রাখেই। পরে হলেও। 

তো গোয়েন্দা ভিন্নরকমের কারণ, বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত গোয়েন্দাদের মতো দেখতে সে না। ফেলুদা, ব্যোমকেশ কারো মতোই অমন ম্যানারিজম সে ধারণ না। ঢিলেঢালা শার্ট আর প্যান্ট পরে থাকা একদমই সাধারণ মানুষ সে। একহারা গড়নের। ছিমছিমে শরীর। চেহারায় তেমন পুরুষালি ভাব নেই। ডার্বি সিগারেট ফুঁকে। আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। অবসরে মোবাইলে ইবুক পড়ে। সংকটে পড়লে “সসেমিরা, সসেমিরা” বলে। তাকে কেউ ভীড়ের মাঝে আলাদা করতে পারে না। মানুষজন সমীহও করে না। ডাকে টিকটিকি কামাল কিংবা পুলিশের ফেউ বলে। তাকে নিয়ে আলোচনা হয় না, তার মগজাস্ত্র নিয়ে বিশ্লেষণ হয় না। টাকায় টান পড়লে বর্ডারে মাদকও পাচার করে টুকটাক। তবে তার মধ্যে অ্যাম্বিশন আছে ভরপুর।

সসেমিরার ফ্যান প্রচ্ছদ, Image Source: Boiwala

তার ক্ষুরধার চোখের বর্ণনাও কেউ করে না। কিন্তু সে আসলেই মানুষ বুঝতে পারে। ওহ, অ্যাম্বিশন… হ্যাঁ, তাই তো সমাপ্তিতে এসে বেধড়ক মার খেয়েও সে বলে, “আপনাগে বসতি হবেক। নাইলি কবো না কিছু।” হার মেনে সবাই যখন বসে, তখন হাসি দিয়ে সে বলে, ফেলুদা; শার্লক, ব্যোমকেশ- সবাই তো শেষে এমন বৈঠকি আমেজ তৈয়ার করে রহস্য সমাধানের গোটা প্রক্রিয়ার বিশদ বয়ান দিত। এই জায়গাটা আসলেই খুব মজার আর চতুর হয়েছে। রেফারেন্স ও ইন্ডালজেন্স দুটোই ভালো কাজ করেছে। 

গোয়েন্দা কামাল আসলে জড়িয়ে গিয়েছিল এক আপাত জটিল ঘূর্ণাবর্তে। কুখ্যাত খুনি রঘু রায় থানায় এসে নিজে ধরা দিয়ে অপরাধ স্বীকার করে। ওদিকে বসুনিয়া পরিবারের সাইফ বসুনিয়ার স্ত্রী আর ছোট্ট মেয়ে নিখোঁজ হয় ঘর থেকে বেরিয়েই। টিকটিকি কামাল আর তার পুলিশ স্যার রইস এই কেসের তদন্তে নামে। কামাল বুঝতে চেষ্টা করে, দুটো ব্যাপার একসাথে জড়িত কিনা; আর হলেও কীভাবে, এবং কেন! ওই সূত্রেই এক রহস্যময় ঘূর্ণাবর্তে জড়ায় সে। 

যেমনটা পূর্বে বলেছিলাম, ‘ওল্ড স্কুল ডিটেকটিভ ফিকশন’। হ্যাঁ, আসলেই তাই। আসামী এসে বয়ান দেওয়া, দুটো সুতোকে একইসাথে টানা- এ সকল জনরা অলংকার যথেষ্ট চর্চিত। তবে নাবিল মুহতাসিমের এই থ্রিলার উপন্যাস কাজ করেছে, কারণ অলংকারগুলো সম্বন্ধে সচেতনতা এবং জেনেবুঝেই ব্যবহার করা- হোমাজের উদ্দেশ্যে। সাথে কামালের মতো একটি গোয়েন্দা চরিত্র, পুলিশ রইসের সাথে তার রসায়ন (যেটা আরো বর্ধিত করলে জমতো) ও কামালের চরিত্রায়নের মতো আরো কিছু ছোট ছোট সাবভার্সন। 

সসেমিরার গ্রাফিক নভেল ভার্সনের প্রচ্ছদ; Image Source: Boiwala

কিন্তু শেষটায় স্বভাবসুলভ তাড়াহুড়োর সাথে কিছু গোলযোগও আছে। একটু বেশি নাটকীয় হয়েছে। সাইফ বসুনিয়াকে জড়িয়ে যে বড় গল্পবাঁক, সেটা অবশ্য আঁচ করতে পারা যায়। তা-ও কামালের উদঘাটনপর্ব মজার। আর ওভাবে ছন্দে/কবিতায় রহস্য/সমাধান লুকানোর পুরনো তরিকার হোমাজের উদ্দেশ্যে ব্যবহারও ভালো। তবে রঘু রায়ের গোটা বিষয়ই একমাত্রিক আর অনেকখানি বিচ্ছিন্নতায় রয়ে গেল। অথচ ওটা থেকেই তো গল্প শুরু হবার সুযোগ পেয়েছে।

হ্যাঁ, মানলাম রঘু রায় সময় বেশি বের করতেই এই পন্থা ধরেছে, আর রইসের সাথেও খেলেছে। কিন্তু লাল ফ্রক আর ওই ছোট বাচ্চাজড়িত যে ঘটনা সে শুরুতে বলে, পুলিশকে বিপথে নিতে, শেষে যখন আসল ঘটনা আর রঘু রায়ের সম্পর্ক বেরিয়ে আসে, তখন ব্যাপারটা তো খুব অস্বস্তি আর অসুস্থতার পরিচায়ক হয়ে থাকে। গোটা বিষয়টাই খুব অসংহত একটা জায়গায় পৌঁছায় তখন। রঘু রায়ের সংযোগ যেহেতু এত পার্সোনাল, তাহলে ঠিক এমন গল্পই সে কেন ফাঁদবে? এমন পার্ভার্ট আর সাক্ষাৎ সাইকো হিসেবে তো শেষে তাকে দেখানো হয়নি। আবার ওপারে সে নাকি রীতিমতো ‘ভালো মানুষ’ হিসেবে পরিচিত। মহৎ কাজ করেছে।

সেসবই যদি শেষে থাকবে, তবে শুরুতে এমনভাবে তাকে প্রকাশ করা হলো কেন! আবার রঘু রায় মারা যাওয়ায় তার দিক থেকে বয়ান নেই। এটা গল্পে ভালোরকম একটা অসম্পূর্ণতা আর বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে, যা কামালের ন্যারেটিভের দোহাই কিংবা অন্যকিছু দিয়ে ঢাকা যায় না। এমনিতে তো আবার অমনিসিয়েন্ট ন্যারেটরই বলে। জোর করে যদি রঘু রায়ের কাহিনী একটা মিথ বা অন্যকিছু বলে এই ন্যারেটিভ ত্রুটি এড়ানোও হয়, তা-ও সেই ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে শুরুর যে গল্প, সেটার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। 

আর লেখক নাবিল মুহতাসিম রেফারেন্সের দিকে একটু বেশিই ঝুঁকেন (সিনেমা/সাহিত্য বিষয়ক)। হ্যাঁ, সেটা মজা যোগ করে। তবে চরিত্র অনুযায়ী হওয়া দরকার ব্যবহারটা। চরিত্রের নিরীখেই সেটার ব্যবহারে পরিমিত হওয়া উচিত। কারণ চরিত্র থেকে বেরিয়ে সেটা যদি লেখকেরই আত্মনিমগ্নতা এবং তিনি যে অনেক বেশি জানেন-পড়েন তা বেশি প্রকাশ করে, তবে তো চরিত্রের বিস্তৃতিই দ্বন্দ্বে ভুগবে। এবং গদ্যের ক্ষেত্রে; বর্ণনায় যদি “শো, ডোন্ট টেল”-এর দিকটি ধরে ‘টেলিং’ এর ভূমিকা কমিয়ে উপযুক্ত ও দক্ষ বর্ণনায় ‘শো’ এর অনুভূতি দিতে পারেন- তবে গদ্য আরো সুঢৌল হবে। তার গদ্য চতুর হতে পারে, বুদ্ধিদীপ্ত হতে পারে- সেই প্রতিভা আছে। কিন্তু রেফারেন্স আর চটুল রসে সেটা অতি চতুরতায় সেটা ঢাকা পড়ে যায়, প্রায়শই। সেটা এড়ালে, গদ্যভাষা আরো প্যালপ্যাবল কোয়ালিটি পাবে। 

লেখক নাবিল মুহতাসিম; Image Source: Goodreads

নাবিল মুহতাসিমের ‘শ্বাপদ সনে’ বইটির পর ‘সসেমিরা’ই ভালো লেগেছে। ‘বাজি’ ট্রিলজি পড়া হয়েছে, যেটা নাকি তার সবচেয়ে পাঠকপ্রিয় ট্রিলজি। কিন্তু ভালো লাগেনি, কারণ অতিরঞ্জিত বর্ণনা ও বিশ্বাসযোগ্যতা কম। বাংলাদেশের বুকে এমন একটি এস্পিওনাজ ওয়ার্ল্ড তো তিনি বানাতে চেয়েছেন, তবে ভাবে-স্বাদে-গন্ধে সেটা বিদেশিই রয়ে গিয়েছে। অনেক বেশি হলিউডি। বর্ণনার ভঙ্গীতে সিনেম্যাটিক কড়চা ও স্টাইলের ভাবটাও প্রবল। বইয়ের ক্ষেত্রে যেমন প্রিসাইজ ডিটেলিং দরকার, তার চেয়ে অদরকারি বিবরণ আর রেফারেন্সের ঝরঝরি তো আছেই। মোটকথায়, সেভাবে ‘বাঙাল’ করে তোলাটা হয়নি এই এস্পিওনাজ দুনিয়াকে। তাই বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়নি। একটা কল্পিত জায়গাতেই রয়ে গিয়েছে। তা যাক। ‘সসেমিরা’ গোয়েন্দা গল্প। আর এর টিকটিকি কামাল একদম এদিককার লোক হয়েছে। চরিত্র হিসেবে সে ভালো দাঁড়িয়েছে। এখন তার ভবিষ্যৎ কেস আরো জটিল আর অভিঘাতপূর্ণ হলেই জমে উঠবে আরো। এক্ষেত্রে আগ্রহ টিকে রইল।

This Bengali article is a review of the detective thriller novel 'Sosemira' by well known Bangladeshi thriller writer Nabil Muhtasim. An exciting old school throwback!
Feature Image: Goodreads

Related Articles