![](https://assets.roar.media/assets/F87mTzUS8flQ2E7b_2.png?w=1200)
নরম্যান বেটস। বেটস মোটেলের বর্তমান মালিক, ম্যানেজার মানে সর্বেসর্বা। মায়ের সাথে থাকে, সারাদিন বই পড়ে, মোটেলে কেউ আসলে তদারকি করে।
মাকে খুব ভালোবাসে সে, মোটেলের সাথেই এক পাহাড়ের উপরে মায়ের সাথে থাকে। একদিকে যেমন মাকে ভালোবাসে, অন্যদিকে প্রচন্ড ভয়ও করে। এক ঝড়ের রাতে জেন উইলসন নামে এক সুন্দরী এসে আশ্রয় নেয় তার মোটেলে। কিন্তু পরদিন সে নিখোঁজ হয়ে যায়, কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায়।
বিপদে আশ্রয় নেয়া এই রমনীর সাথে একসাথে বসে খাবার খায় নরম্যান। রুম নাম্বার ৬-এ মেয়েটি ওঠে। না চাইতেও মেয়েটিকে দেখে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে ফেলে সে। কুচিন্তা কিছু তার মনে আসে; কিন্তু সে জানে, তার মা আছেন, সেই বাঁচাবে তাকে সব কিছু থেকে।
মা তাকে যতই বকুক না কেন, যতই নিষেধ করুক, সব বিপদ থেকে একমাত্র বাঁচাবে মা-ই। তাই সে নিশ্চিন্ত। কিন্তু মায়ের মানসিক আর শারীরিক অবস্থাও আবার খুব একটা সুবিধার না। তাহলে এখন কী করবে নরম্যান?
এদিকে মি. লাউড়ির প্রতিষ্ঠান থেকে খোয়া গেছে চল্লিশ হাজার ডলার, যার সেই টাকা ব্যাংকে জমা করার কথা ছিল, সেই মেয়ে অর্থাৎ মেরি ক্রেন নিখোঁজ। তার খোঁজ চলছে পুরো রাজ্য জুড়ে।
মেরি আর লিলি দু’বোন, আগে-পরে তাদের কেউ নেই, দুই বোনই আছে দু’জনের জন্য। এক ভ্রমণে গিয়ে স্যাম নামের এক ব্যক্তির সাথে মেরির সম্পর্ক হয়। মেরিকে কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে স্যামকে বিয়ে করতে। কিন্তু কেন?
![](https://assets.roar.media/assets/7lhBF9KxB3PRL4kS_1.jpg)
মেরি হারিয়ে গেল। আর তাই লিলি ক্রেন বোন মেরিকে খুঁজতে খুঁজতে এসে হাজির হয় স্যাম অর্থাৎ মেরির প্রেমিকের দোকানে। স্যামের আচরণ বেশ সন্দেহজনক। ওদিকে মেরির ঘরের টেবিলে স্যামের এক চিঠি পাওয়া গিয়েছিল।
এদিকে লিলির পিছু নিয়েছেন এক গোয়েন্দা, নাম মিলটন আরবোগাস্ট; তিনিও খুঁজছেন মেরিকে। কিন্তু কেন? মেরিকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই নিখোঁজ হয়ে যান আরবোগাস্ট।
নরম্যান এদিকে মায়ের ভয়ে শিটকে আছে। মায়ের শাসনে একদিকে সে অতিষ্ঠ, অন্যদিকে মাকে ছেড়ে থাকতেও পারছে না। তার মা তাকে এখনও পাঁচ বছরের শিশুর মতো শাসন করে। নরম্যান চাইছে মায়ের হাত থেকে নিস্তার পেতে।
মেরির নিখোঁজ হওয়ার সাথে আরবোগাস্টের নিখোঁজ হবার কি সম্পর্ক আছে? শহরে ঘটে চলছে একের পর এক নারকীয় ঘটনা। এর মধ্যে শেরিফের কাছ থেকে জানা গেল এমন ভয়ঙ্কর তথ্য, যা বদলে দিল সব ঘটনা।
কী ঘটেছিল সেই ঝড়ের রাতে? এই যে সব নারকীয় ঘটনা ঘটে চলছে, কে রয়েছে এর পেছনে?
রবার্ট ব্লকের লেখা সাইকো সিরিজের প্রথম বই এটি। মূল ঘটনার শুরু বেটস মোটেল থেকে। এই সিরিজের মোট তিনটি বই রয়েছে। আদী প্রকাশনী থেকে তিনজন অনুবাদক অনুবাদ করেছেন। অনুবাদ মানসম্মত। বানান ভুল কম আর আক্ষরিক অনুবাদ না করায় সেগুলো বেশ সহজেই বোধগম্য হয়েছে।
![](https://assets.roar.media/assets/WvIAmz6Ab0rJkymX_psycho.jpg)
এবার আসা যাক গল্পের কথায়। ছোট্ট একটি বই, প্রতি পাতায় পাতায় সাস্পেন্স আর টানটান উত্তেজনা। পাঠক অনুমানই করতে পারবেন না সামনে কী ঘটতে চলেছে। বইটি ১৯৫৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়, এর পরের বছর আলফ্রেড হিচকক এই বই থেকে ‘সাইকো’ নামেই একটি মুভি তৈরি করেন। মুভি তৈরির আগে গ্রন্থস্বত্ব এবং বই দুটোই পরিচালক কিনে নেন, যাতে বই পড়ে মুভির সাসপেন্স কেউ আগেভাগে জানতে না পারে।
বইয়ের মূল চরিত্র নরম্যান হলেও অনেকখানি জুড়ে রয়েছেন তার মা নরমা বেটস। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নরম্যানের মতো আপনারও মনে হতে পারে, মা হিসেবে হয়তো কঠোর হচ্ছেন তিনি, কিন্তু একসময় নিজেই বুঝতে পারবেন যে সন্তান যত বড়ই হয়ে যাক না কেন, মায়ের কাছে তারা সেই ছোট্টটিই থাকে।
একাকী নরম্যানের সঙ্গী ছিল বই, নানা ধরনের বইয়ের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বই-ই সে বেশি ভালোবাসে। নরম্যানের মতো নিঃসঙ্গ এমন জীবন যদি বাস্তবে কেউ যাপন করে, তখন বেটসের মতো হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। যেমন ধরুন, পাহাড়ের উপরে পড়ে আছেন বছরের পর বছর, লোকজনের সাথে সাক্ষাৎ নেই বললেই চলে, তখন আমি বা আপনি নিজের চারপাশেই একটা আলাদা দেয়াল তুলে নেব, যেমনটা করেছিল নরম্যান।
অন্যদিকে মেরির চরিত্র ভালো লাগবে, যদিও তার ছোট্ট এক ভুল পুরো গল্প বদলে দিয়েছিল, কিন্তু তার এই সিদ্ধান্তের পেছনেও একাকিত্ব অনেকটা দায়ী।
নরমা বেটস ছেলেকে অনেক কুচিন্তা আর কুকর্ম থেকে বাঁচিয়েছেন, যা সব মা-ই করবেন। কিন্তু তার কিছু কিছু সিদ্ধান্ত কি ভুল ছিল?
প্রথম বইয়ে অনেক অজানা রহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় আর স্পয়লার ফ্রি রিভিউ লেখার প্রয়াসে অনেক কিছু বাদ দিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আশা করি পাঠক পরবর্তী রিভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করবেন। সাসপেন্স এবং থ্রিলারপ্রেমী মানুষেরা, যারা এই বই পড়েননি, তদের উচিত দ্রুত পড়ে ফেলা, নাহলে মনোজগতের অনেক বড় এক খোরাক থেকে বঞ্চিত হবেন। তবে এই বই পড়ে কেউ নিজে সাইকো হলে তার জন্য রিভিউ লেখক দায়ী নয়; লেখককে দায়ী করতে পারেন, তবে তিনি গত হয়েছেন বহু আগেই!
![](https://assets.roar.media/assets/JbwzQ0XAFKKGaPsq_2.jpg)
বইটি লেখার জন্য লেখককে মানুষের মনের বিভিন্ন দিক, সময়, পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করতে হয়েছে, নাহলে এত নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হত না। ভাবুন তো, এটা এমন এক সময়ের কথা, যখন আজকের মতো তথ্য এতটা সহজলভ্য ছিল না, কিন্তু আপনার মনে হবে এটা ২০২১ সালের কোনো ঘটনা।
অনুবাদক হিসেবে সাজিদ রহমানকে ৪.৮/৫ দেয়া যেতেই পারে, কারণ অনুবাদ বেশ সাবলীল ছিল। আর মূল লেখককে রেটিংয়ের আওতায় আনাটা দুঃসাহস হয়ে যাবে রিভিউদাত্রীর জন্য।
যাবেন নাকি তুফানের রাতে, বেটস মোটেলের ৬ নাম্বার ঘরে? মোটেলের লাইট জ্বালিয়ে আপনার জন্য বেটস মা- ছেলে অপেক্ষা করছে। আপনি না গেলে কী চলে? চলুন না, গ্যাস লাইটের আলোয় বেটস মোটেলে গিয়ে সাইকো বইটি আরও একবার পড়ে আসি!