“সদ্য আসা নিউজ, আমরা মাত্রই শুনলাম চলচ্চিত্র পরিচালক স্ট্যানলি কুব্রিক ৭০ বছর বয়সে মারা গেছেন।”
“স্ট্যানলি কুব্রিক, যাকে অভিহিত করা হয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত এবং কুখ্যাত মাস্টার হিসেবে। তিনি সদ্যই ‘আইস ওয়াইড শাট’-এর কাজ শেষ করেছেন, যেটার নির্মাণে ৫ বছর সময় লেগেছে।”
“স্ট্যানলি কুব্রিককে ডাকা হয় ‘সিনেমার হাওয়ার্ড হিউ’ বলে, কারণ তিনি ছিলেন নির্জনতাপ্রিয় একজন ব্যক্তি। আমি বরঞ্চ তাকে ‘সিনেমার ফ্র্যাংক সিনাত্রা’ ভাবতেই পছন্দ করব, কারণ, সে সবকিছু তার মতো করেই সবসময় করে গেছেন। আপনি কুব্রিকের যেকোনো সিনেমাই আবার দেখে আসতে পারেন এবং পুনর্জন্মের অনুভূতি লাভ করতে পারেন।”
মহাকাশের কিছু স্ন্যাপশটের পর, যেন মাস্টার কুব্রিকেরই মহাকাব্যিক সিনেমা ‘২০০১: আ স্পেস ওডিসি’র সুর ধরে, নাম ওঠে এই ডকুমেন্টারির। ‘কুব্রিক বাই কুব্রিক’ (২০২০)। তার পরপরই আগের লাইনের ভাবনাটাকে সত্য প্রমাণিত করে, গ্রাফিক্সে তৈরী স্পেস ওডিসির সেট দিয়েই শুরু ডকুমেন্টারিরর। পর্দায় নিক্ষিপ্ত হলো প্রোজেক্টরের আলো। ওইযে গাড়ি থেকে নামলেন কুব্রিক। ঠোঁটের এক কোণে জ্বলছে সিগারেট।
যুবক বয়সের হয়ে আসলেও বালকসুলভ কমনীয়তা চেহারা থেকে মোছেইনি। হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে হ্যান্ডশেক করছেন। এরপরই তো হৃদয়বিদারক সংবাদটা। কম্পিউটার গ্রাফিক্সে নির্মিত সেটের ছোট্ট টিভিতে একটা রিল ফুটেজ চালু হলো। মার্চ ৭, ১৯৯৯। কুব্রিকের মৃত্যুসংবাদ। এরপরই একে একে, লেখার শুরুর ওই উক্তিগুলো আসতে আসতে একেকজনের মুখ থেকে।
৪০ বছরে সিনেমা বানিয়েছেন মাত্র ১৩টি। প্রত্যেকটিই যেন ছিল একেকটি ইতিহাস। মুক্তির পর প্রতিটি সিনেমাই হয়ে উঠেছে একেকটি বড় ঘটনা। তিনি বানিয়েছেন শ্রেষ্ঠ এপিক সিনেমাটা (স্পার্টাকাস), শ্রেষ্ঠ সায়েন্স ফিকশন সিনেমাটা (২০০১: আ স্পেস ওডিসি), ভবিষ্যতের ভায়োলেন্স নিয়ে শ্রেষ্ঠ সিনেমা (আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ), শ্রেষ্ঠ হরর সিনেমা (দ্য শাইনিং), ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে শ্রেষ্ঠ সিনেমা (ফুল মেটাল জ্যাকেট)। বলতে হয়, সিনেমার সকল জনরাতেই আছে তার পদচারণা, আছে তার শ্রেষ্ঠত্বের নজির।
প্রত্যেকটি নতুন সিনেমাতেই তিনি সীমানাকে ক্রমাগত ধাক্কা দিয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন নিজেকে রহস্যাবৃত রাখা, অধরায় থাকা একজন মানুষ; যিনি কাজের ক্ষেত্রে খবরদারি এবং অন্য কারো দেখাটাকে গ্রাহ্য করতেন না। একজন বলছিলেন সেটা। এর পরই ‘স্পেস ওডিসি’র সেটে থাকা টিভিতে, তার নিভৃতচারী স্বভাবটা নিয়ে শেলি ডুভ্যাল (দ্য শাইনিং), ম্যালকম ম্যাকডয়েলের (আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ) আর্কাইভড সাক্ষাৎকার দেখতে পাওয়া যায়। আর তার পরই আসে সমালোচক মিশেল সিমেন্তের সাক্ষাৎকার।
মিডিয়া, প্রেস থেকে একদম আড়ালে থাকা, প্রচারবিমুখ কুব্রিকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল হাতেগোনা কয়েকজনের। মিশেল সিমেন্ত তাদেরই একজন। প্রায় ১০ বছরের যোগাযোগে কুব্রিককে নিয়ে একটি বইও লিখেছেন তিনি। এই কাজটা রীতিমতো অসাধ্য সাধন করা। কারণটা সিমেন্ত নিজের মুখেই বলেছেন,
“কেউই কুব্রিকের অন্তরঙ্গ বন্ধু হতে পারে না।”
১৯৬৮ সালে ‘স্পেস ওডিসি’ সিনেমা নিয়ে একটা লেখা পড়ার বরাতেই কুব্রিকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার মতো কঠিন কাজটা তিনি করতে পেরেছেন। একথার পরপরই গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ে সেট ডিটেল হিসেবে চালু হয়ে যায় একটা টেপ রেকর্ডার। ভেসে আসে মাস্টারের কণ্ঠস্বর। কুব্রিকের ভাষ্যে, তিনি সিনেমার অ্যাস্থেটিকস নিয়ে কথা বলার যথাযথ কারণ কখনো পান না এবং সেটা সম্ভবও না নিজের সিনেমাগুলোর ক্ষেত্রে। আর সাক্ষাৎকার জিনিসটা এমনিতেই তার পছন্দ না। কারণ সেখানে যেকারো, নিজের সিনেমা নিয়ে চটকদার কিংবা অভিভূতকারী কিছু বলার বাধ্যবাধকতা থাকে।
নিজের চিন্তার প্রক্রিয়াগুলোকে ব্যক্ত করার কাজটা খুব দুঃসাধ্য মনে হতো তার কাছে। কুব্রিক কথা বলছিলেন তার সিনেমার ডিটেলগুলোকে নিখুঁত করার প্রতি আচ্ছন্নতা নিয়ে, যেটার জন্য তিনি কুখ্যাতও। ‘ব্যারি লিন্ডন’ (১৯৭৫) সিনেমার কস্টিউম, নানান পেইন্টিংয়ের সরাসরি অনুপ্রেরণায় তৈরী। এই কাজটার জন্য মাসের পর মাস ধরে খুঁজে খুঁজে লাইব্রেরির সমস্ত আর্ট বইয়ের পাতা ছিঁড়ে একটা হাজার পৃষ্ঠার স্ক্র্যাপবুক বানিয়েছিলেন সিনেমার জন্য। ন্যাচারাল লাইটে ঠিকঠাক কম্পোজিশনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিল্পীসহ সবাই বসে ছিলেন। মাঝে মাঝে তো গোটা দিন এক জায়গায় বসেই গিয়েছিল, জানিয়েছিলেন সেই সিনেমার অভিনেত্রী।
‘স্পার্টাকাস’ (১৯৬০) সিনেমার শ্যুট যখন করছিলেন, তখন নিজের সাথে একটা ভিউফাইন্ডার রাখতেন তিনি। সেটের প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় যাতে নিখুঁত থাকে, সেটা সর্বদা নিশ্চিত থাকার উদ্দেশ্যে।
‘দ্য কিলিং’ (১৯৫৬)-এ হেইডেনের একটা ছোট্ট সংলাপের জন্যই ৩৮বার টেক নিয়েছিলেন কুব্রিক, যাতে তার মুখের ভয়াল অভিব্যক্তি সংলাপের প্রতিটি শব্দের সাথে একীভূত হতে পারে। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা আর্কাইভড ফুটেজে বলতে দেখা যায় অভিনেতাকে। ‘ফুল মেটাল জ্যাকেট’ (১৯৮৭)-এ যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামের রিয়েল ফুটেজ নিয়ে কুব্রিক নিজেই কথা বলছিলেন। ড্রিল ইনস্ট্রাকটর চরিত্রের ওই লি আর্মি তো বাস্তবেই তা ছিলেন। বাস্তবিক করে তুলতেই চরিত্রটায় লি’কে নিয়েছিলেন কুব্রিক।
সেটা নিয়েও কথা বলছিলেন তিনি। বলছিলেন লি আর্মি নিজেও। একটা ছোট্ট ফুটেজে দেখা মেলে ‘দ্য শাইনিং’ (১৯৮০) সিনেমার জ্যাক নিকলসনের। তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন, একটা টেক কেন এতবার নিচ্ছেন, তার পেছনের কারণও থাকত স্পষ্ট আর নিখুঁত, কুব্রিকের কাছে।
‘পারফেকশন’কে আপন করার, নাকি বলতে হয়, মাথা নোয়ানোর; যা-ই হোক, সেটার জেদ আর অদম্যতাকে কুব্রিক প্রতিটা ক্ষেত্রেই ব্যবহার করতেন। শ’খানেক বই পড়ে একটা বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে হোক, চিত্রনাট্য তৈরির ক্ষেত্রে হোক, কাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে হোক, অ্যাস্থেটিকস বাছাইয়ের ক্ষেত্রে হোক, সঙ্গীতের ক্ষেত্রে হোক, সেট নির্মাণের ক্ষেত্রে হোক; প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই পারফেকশন আসা অব্দি তিনি থামতেন না। মিউজিক কম্পোজার লিওনার্দ রোজেনম্যান একটা ঘটনা বলছিলেন, ‘ব্যারি লিন্ডন’ সিনেমার এক দৃশ্যে একদল সৈন্যের মার্চ করে এগোনোর দৃশ্যে অথেন্টিক ড্রামস, বাঁশি ব্যবহার করা হয়েছিল।
দ্বিতীয় টেকটাই যথাযথ ছিল। কিন্তু কুব্রিক নিয়েছেন ১০৫টা টেক! রোজেম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে চেপে ধরেছিলেন তার কলার! সবাই অবশ্য হেসে উঠেছিল। কারণ, এ পাগলামি তো কুব্রিকই করেন একমাত্র।
সিনেমার ক্ষেত্রে কুব্রিক ছিলেন সেই নিষ্ঠুর জেনারেল, যার সাথে সবাই মার্চ করতে রাজি ছিল। সব প্রতিকূলতায়ও তার কাজটা তিনি মনমতোই আদায় করে নিতেন। সিনেমার ক্ষেত্রে নিজে ভিশন নিয়ে কোনোরকম মধ্যস্থতায় যাওয়াটা তার ক্ষেত্রে ছিল কল্পনাতীত। প্রথম কয়েকটা সিনেমা বানানোর পরই চলে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। শহর থেকে দূরে, একদম নির্জনতায় বিশাল সম্পত্তির উপর নিজের বাড়ি, নিজের স্টুডিও তৈরি করেছেন। হলিউড থেকে দূরে।
নিজের ক্যামেরা, নিজের সম্পাদনার যন্ত্রপাতি, শব্দগ্রহণের যন্ত্রপাতি; সবই ছিল। ওখানে বসে নিজের শিডিউল মোতাবেক সব কাজ করতেন। হলিউডে শোরগোলটা, ইংল্যান্ডে নির্জনে বসেই ফেলতেন। কতটা প্রভাবশালী, ক্ষমতাবান একটা আকৃতি তিনি হয়ে উঠেছিলেন- তা এ থেকেই বোঝা যায়। এসব নিয়ে বিখ্যাত সমালোচক রজার ইবার্টসহ আরো কয়েকজনের একটা টেবিল বৈঠকের ফুটেজও পাওয়া যায় এই ডকুমেন্টারিতে।
এই টিভি ডকুমেন্টারি যে ২০২০ সালে, অর্থাৎ করোনাকালের সময়টাতে ঘরে বসে, সম্পূর্ণভাবে সৃষ্টিশীলতার উপর নির্ভর করে করা হয়েছে, তা এতে কোনোরকম ফিজিক্যাল কিছুর অনুপস্থিতি দেখেই বোঝা যায়। স্টিল ইমেজ আর আর্কাইভ রিল ফুটেজ দিয়েই গোটা ডকুটা বানানো। রিল ফুটেজগুলো; কুব্রিকের মৃত্যুর পরপর তাকে নিয়ে টম ক্রুজ, ম্যালকম ম্যাকডয়েল, শেলি ডুভ্যাল, স্টার্লিং হেইডেনদের স্মৃতিচারণ এবং তার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা; নানান বিখ্যাত সমালোচকের তাকে নিয়ে আলোচনা তুলে ধরে।
এর মাঝে ক্রমান্বয়ে তাঁর প্রত্যেকটা সিনেমার বিভিন্ন তথ্যও এই ডকুতে আছে। ব্যবহার করা হয়েছে সেসব কালজয়ী সিনেমার নির্দিষ্ট দৃশ্য। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বেশকিছু রিয়েল ফুটেজ ব্যবহৃত হয়েছে, যেটা ‘ফুল মেটাল জ্যাকেট’ সিনেমার সাথে সম্পর্কিত। সেসব ছাড়া ব্যবহার করা হয়েছে অনেক অনেক স্টিল ইমেজ।
কুব্রিক তো সশরীরে সাক্ষাতকার দেনইনি। তাই তার কণ্ঠের বিবরণ অনুযায়ী নানা ফুটেজ, নানা ইমেজ পর্দায় দৃশ্যমান হচ্ছিল। আর এই জিনিসটা, দেখার সময় এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগায় মনে। কারণ তাকে দেখতে পেত তো খুব কম লোক। এই একটা কণ্ঠ দিয়েই গোটা হলিউড শাসিয়ে গেছেন। একের পর এক নিয়ম ভেঙে গেছেন। তাই তার কণ্ঠের দৃঢ়তা আঁচ করতে পেরেই যেন একটা চাপা উৎকণ্ঠা দর্শকমনে জাগে, যা ভাবতেই বিস্মিত হতে হয়। স্টুডিওতে কাজ করবার সময়কার কিংবা শ্যুটিং সেটে অভিনেতাকে দৃশ্য বোঝানোর অনেক স্টিল ইমেজ ডকুতে পাওয়া যায়।
তিনি নিজে কথা বলছিলেন, ‘আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’ (১৯৭১)-এর ‘নেসেসারি ভায়োলেন্স’-এর দিকটা নিয়ে। সমাজের রীতি, নৈরাজ্য নিয়ে। দুয়েকটা হোম ফুটেজও আছে, যেখানে কুব্রিককে দেখা যায় তার পরিবারের সাথে। শেষদিকে আছে টম ক্রুজের সাক্ষাৎকারের একটা ফুটেজ। ‘আইস ওয়াইড শাট’ (১৯৯৯)-এর ভুল বিচার, যৌন আচ্ছন্নতার বিষয় আর কুব্রিকের মৃত্যু নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। ভেসে আসছিল সিনেমার সৃষ্টিকর্তার নিজের কণ্ঠ। মানুষের যৌনতার পছন্দ নিয়ে, কল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলছিলেন।
‘কুব্রিক বাই কুব্রিক’ ডকুমেন্টারি, একজন মহান স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে কথা বলার অনেক অন্তর্দৃষ্টি তুলে ধরেছে। তবে কুব্রিক সম্বন্ধে সত্যিকার অর্থে সকল তথ্য, সকল অন্তর্দৃষ্টিই একটা নির্দিষ্ট বৃত্তের আশেপাশে ঘুরপাক খাবে। অনেক বেশি গভীরে যাবে না। কারণ ওইযে, কুব্রিক কিছু বলতে পছন্দ করেন না। তার নান্দনিক পছন্দ নিয়ে, দর্শন নিয়ে, মেটাফিজিক্যাল ধারণা অনেককিছু তলিয়ে দেখবার রয়েছে। কিন্তু ওই অতলটা কখনোই ছোঁয়া যাবে না।
আর কুব্রিকের দূরদর্শিতা এতটাই সূদুর আর তলে যে, তা ছোঁয়াটাও রীতিমতো অতিমানবীয় কাজ। তাই কুব্রিককে ছোঁয়ার দুঃসাহসটা কুব্রিকই একমাত্র দেখাতে পারতেন। সেই বিষয়টি বুঝেছেন ডকুমেন্টারির পরিচালক- গ্রেগরি মনরো। তাই ওই বৃত্তেই যতটুকু বিবরণ পাওয়া যায়, তা, অর্থাৎ প্রত্যাশিত তথ্য আর ইনসাইট যুক্ত করেছেন। ওতেই যা আছে, ততটুকুই ‘অভিভূতকারী’ যেকারো জন্য।
গ্রেগরি মনরো, মূল কাজটা করেছেন সম্পাদক হিসেবে। এত ফুটেজ; সিনেমার, রিল ফুটেজ; স্টিল ইমেজ সবকিছুকে নিখুঁতভাবে জোড়া লাগিয়ে একটা সংহত উপায়ে গল্প বলে গেছেন। শুরুটা কীভাবে করতে হবে, কোন ফুটেজ ব্যবহার করে বিস্ময়টা কোন কোন সময় জাগাতে হবে, কীভাবে ইতিটা টানতে হবে- এগুলো দীর্ঘ সময় আর নিখুঁত পরিকল্পনার গুণেই চমকপ্রদ হয়ে উঠেছে। অতটা সংহতিপূর্ণ হবার কারণেই কোনোরকম বিচ্যুতি চোখে পড়ে না, ভ্রুকুটি কাটতে হয় না। কুব্রিকের রহস্যে মোড়া একটা স্রোতে মোহাবিষ্ট হয়ে এগিয়ে যেতে হয়। কুব্রিকের সিনেমার আবহসঙ্গীত ফুটেজ অনুযায়ী মিলিয়ে ঠিক মুহূর্তে প্লে করায় আবেদনটা আরো বেড়ে গিয়েছে।
শেষত; কুব্রিক যে এক রহস্যময় অস্তিত্ব ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন, সেই বিষয়টাই প্রগাঢ়ভাবে বলে যায় এই ডকুমেন্টারি। তার সৃষ্টি উপভোগ করা যায়, আলোচনা করা যায়, নতুন নতুন তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়। কিন্তু সৃষ্টির পূর্ণাঙ্গ স্বরূপটা শুধুমাত্র তার কাছেই। এখানেই শিল্পের রহস্য, এখানেই শিল্পের সৌন্দর্য।
একদম কিশোরকালে বোনের সাথে নাচের একটা ফুটেজ দিয়ে ডকুটা শেষ হয়। ওইযে কমনীয়তায় ভরা চাহনির কুব্রিক। এই ‘চার্ম’ তো বুড়ো বয়সে চশমার ভেতরের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির কোন এক কোণে ঠিকই ছিল। চেহারায় ধরা পড়ত। এবং বিষয়টা ভাবতেই আসলে অবাক লাগে, এই মোহনীয় ব্যক্তিত্ব আর সিনেমার সেটের সেই ব্যক্তিত্বে কতখানি দ্বন্দ্ব আর দূরত্ব। এই বিষয়টা যতটা আকর্ষণীয়, ততটাই রহস্যাবৃত।