Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য বয়েজ ইন দ্য ব্যান্ড (১৯৭০): ট্যাবু ভাঙা এক সিনেমার কথা

পরিচালক উইলিয়াম ফ্রিডকিন’কে পরিচয় করিয়ে দিতে গেলে, কোনোরূপ সন্দেহ ছাড়াই ‘দ্য ফ্রেঞ্চ কানেকশন’ (১৯৭১), ‘দ্য এক্সরসিস্ট'(১৯৭৩) সিনেমা দু’টির নাম শুরুতেই উচ্চারিত হবে। স্বীয় জনরায় কালজয়ী সিনেমা হিসেবে খ্যাত এই দু’টি সিনেমারই পরিচালক ফ্রিডকিন। আরো অনবদ্য সব সিনেমা তার ক্যারিয়ারে আছে। ‘সোর্সেরার’ (১৯৭৭) সিনেমাটা তো এখন ৭০ দশকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা হিসেবেই বিবেচিত। তারপর আছে ‘টু লিভ অ্যান্ড ডাই ইন এল.এ.’ (১৯৮৫), ‘ক্রুইজিং’ (১৯৮০) এর মতো সব সিনেমা। তবে আরো একটি সিনেমার জন্য বেশ নামডাক রয়েছে তার, ‘দ্য বয়েজ ইন দ্য ব্যান্ড’।

এই সিনেমার বিষয় সার্বজনীন নয়, তাই নামটাও ঢালাওভাবে আসে না। ‘দ্য বয়েজ ইন দ্যা ব্যান্ড’কে বিশেষিত করা হয় ‘কুইয়াহ্/কুইয়ার’ সিনেমার মাইলফলক হিসেবে। সমকামী, উভকামী, রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষদের পরিচিতি ও অভিজ্ঞতা প্রকাশের ধারা হলো, কুইয়াহ্/কুইয়ার। এই ধরনের চরিত্র নির্ভর প্রথম উল্লেখযোগ্য আমেরিকান সিনেমা ‘দ্য বয়েজ ইন দ্য ব্যান্ড’। 

এবারে বলা যাক গল্প নিয়ে। ম্যানহাটনের প্রতিবেশী পাড়া, আপার ইস্ট সাইডের এই অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধ্যাটা প্রাণবন্ত একটি সন্ধ্যা হিসেবেই কেটে যেতে পারত। আবার হয়তো প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠত এক বছর পর। তেমনটাই হতে পারত, যদি অ্যালেন আসবে না বলে, আবার হুট করে চলে না আসত। একটা অপ্রস্তুত, বিব্রতকর সন্ধ্যা হিসেবেই হয়তো কেটে যেতে পারত। এই বিশ্রীরকম পরিস্থিতির সৃষ্টিই হতো না।

কিন্তু, সংরক্ষণশীল অ্যালেন মেজাজটা আর ধরে রাখতে পারেনি। এমোরির ‘মেয়েলি’ স্বভাব সে এড়িয়েই যেত। খুঁচিয়ে বলা কথাও এড়িয়ে চলছিল। কিন্তু এমোরি খোঁচানো বন্ধ করছিল না। তার যৌনতা সে কেন লুকিয়ে রাখবে? অ্যালেন ‘স্ট্রেইট’ বলে? তো অ্যালেন এই পার্টিতে এসেছেই বা কেন? এমোরি এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় পার্টির আয়োজক মাইকেলের দিকে।

মাইকেল তো আর সেধে আনেনি। অ্যালেন, মাইকেলের বাল্যবন্ধু। হঠাৎই নিউ ইয়র্ক শহরে আসলো আর দেখা করতে চাইল। মাইকেল বলল, পরে দেখা করবে। তেমনটি মেনে নিয়েও আবার অনাকাঙ্ক্ষিত এই কাজটি অ্যালেন করে বসবে, কে জানত? মাইকেল সবাইকে একটু রয়েসয়ে থাকতে বলল। বিব্রতবোধ হলো সকলেরই, তবে মাইকেলের কথায় গ্রাহ্য করল তারা, এমোরি ছাড়া। ঘরের পরিবেশটা গম্ভীর হয়ে উঠেছিল অ্যালেনের প্রবেশের পর থেকেই। ঘরের মানুষজনগুলোর ভেতরেও চলছে অন্তর্দ্বন্দ্ব, যার কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় হ্যাংক আর ল্যারির কথাবার্তায়। তবে তখনো পরিস্থিতি এতটা ভয়ানক হয়ে উঠেনি।

অ্যালেনের মেজাজ’টা হারিয়ে এমোরির থুতনিতে আঘাত করা আর “ইউ ফ্যাগোট” বলে চিৎকার করে উঠার সেই মুহূর্তটাতেই মাইকেলের ভেতরে কিছু একটা ঘটে যায়। মুখ শক্ত করে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার ওই মুহূর্তটাতেই মাইকেল বিধ্ধংসী চিন্তাটা করে ফেলে। টেলিফোন গেইমে অংশগ্রহণ করতে সবাইকে বাধ্য করে মাইকেল। তার মূল উদ্দেশ্য, অ্যালেনের লুক্কায়িত সত্য আজ সকলের সামনে আনা। কিন্তু এই খেলা যে, অতীতের বিভীষিকা আর বর্তমানের উত্তেজনাকে সরলরেখায় টেনে সকলের চেতনায় এবং আবেগে এত বড় আঘাত হানবে, তা হয়তো ভাবেনি মাইকেল কিংবা বাকিরা।

এমোরি চরিত্রটি; Image Source: Paramount Pictures

মার্ট ক্রওলির একই নামের মঞ্চনাটকের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সিনেমা। মঞ্চনাটকের ‘গেইম চেঞ্জার’ বলে অভিহিত করা হয়, ক্রওলির ‘দ্য বয়েজ ইন দ্য ব্যান্ড’কে। মঞ্চনাটকের অভিনেতারাই সিনেমায় স্ব-স্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই সিনেমা তিন অংকের রীতিতে নয়, বরং দুই অংকে নির্মিত। প্রারম্ভিক দৃশ্যে মন্তাজের ব্যবহারে সিনেমার প্রতিটি চরিত্র এবং তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের খণ্ডচিত্র উঠে আসে।

সিনেমার প্রথম অংক, চরিত্রদের পরিচয়; তাদের স্বভাব; চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে দর্শককে অবগত করার পাশাপাশি গল্প ধারণা এবং এগিয়ে নেওয়ার কাজটি গতিময়তার সাথে করে ফেলে। দ্বিতীয় অংক, জন্মদিনের পার্টিটা নারকীয় কিছুতে রূপান্তরিত হবার ঘটনা বয়ান করে। ‘ডিনারপার্টি টু হেল’ এমন ধাঁচের সিনেমার হালকা নির্যাস পাওয়া যায় দ্বিতীয় অংকে।

সিনেমার চিত্রনাট্য, নাটকের রচয়িতা মার্ট ক্রওলি নিজেই লিখেছেন। সেই সময়টায় আমেরিকায় সমকামীদের সামাজিক অবস্থা এবং তাদের জীবনধারার অকপট চিত্রণ তিনি চিত্রনাট্যে উপস্থাপন করেছেন। ‘কুইয়ার’ শব্দটি তাদের ক্ষেত্রে, সমাজের একজন বহিরাগত এবং অসুখী ব্যক্তি হিসেবেই অর্থবোধক হতো। ক্রওলি তার চরিত্রগুলোতে, অকুণ্ঠিত স্বভাবের উপস্থিতি রাখলেও কৃত্রিমতাকে রেখেছেন তার ছায়ায়। কারণ সমাজে, একঘরে হয়ে থাকার বেদনাকে আড়াল করতেই যে তারা ওই ‘অকুণ্ঠিত’ স্বভাবকে মিথ্যে ভালো থাকার অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করতো।

সিনেমা মুক্তির পর সমকামী সম্প্রদায়, ক্রওলির চরিত্রদের ‘নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা’র স্বভাবটি সমকামী সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম দেবে, এমন আশঙ্কায় সিনেমাকে দোষারোপ করে। আদতে ক্রওলির দৃষ্টি ছিল সুদূরপ্রসারী।

তার চিত্রনাট্যে মূলত ওই সময়ের সামাজিক ও মানসিক যে দ্বন্দ্ব সমকামীদের ভেতরে এই স্বীয় ঘৃণা আর শোচনীয় অবস্থার জন্ম দেয়, সেই জায়গাটিকেই চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। স্বীয় উপলব্ধি, অনুবেদনের জায়গা থেকেই চরিত্রগুলোকে ওভাবে তৈরি করেছেন ক্রওলি। ভিশনারি করে তুলেছেন গোটা চিত্রনাট্যটিকে। ওয়ান লাইনার সমৃদ্ধ চমৎকার সব সংলাপে ভরা গোটা চিত্রনাট্য। চরিত্রদের একে অপরের সাথে তর্কাতর্কিতে উচ্চারিত হওয়া সংলাপগুলোতে উইটের জায়গাটা বুঝতে পারলেই সেই স্বাদ পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি সংলাপই ছুরির ফলার মতো তীক্ষ্ণ।

সাসপেন্স রাখতে চরিত্র সম্পর্কে ছোট ছোট তথ্য প্রকাশ করেই যথাযথ আগ্রহ তৈরি করায় বেশ পারদর্শী ক্রওলি। ফোনের মাধ্যমে হ্যাংক এবং ল্যারির পরস্পরের দোষগুলো ভুলে পুনর্মিলিত হওয়া এবং তা দেখে মাইকেলের উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ার দৃশ্যটি, সিনেমার অন্যতম স্মরণীয় দৃশ্য। ক্রওলির এই অসামান্য চিত্রনাট্যের প্রভাব আজো অ-ম্রিয়মাণ। 

মাইকেল আর এলেনের দ্বন্দ্বের মুহূর্ত; Image Source: Paramount Pictures

এই ধরনের সিনেমাগুলোর ভিতটা ‘দ্য বয়েজ ইন দ্যা ব্যান্ড’-এই গাড়া। নিজের বাসনাকে গোপনে রাখা, নিজের সম্পর্কে সত্য জানার পর পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়া- এমন বিষয়গুলোর সাথে সর্বপ্রথম পরিচিত করায় এই সিনেমাই। মাইলফলক হওয়ার পেছনে আরো কারণ রয়েছে। প্রমাণস্বরূপ বলা যায়, আমেরিকান সিনেমায় ‘দ্য বয়েজ ইন দ্য ব্যান্ড’ই সকল ট্যাবু ভেঙে প্রথমবারের মতো পুরুষ সমকামীদের নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছে। এর পূর্বের ক’দশকে- ‘রেবেল উইদাউট আ কজ’, ‘রোপ’-এর মতো ক্ল্যাসিক সিনেমাগুলোতে এই বিষয়ের অবতারণা থাকলেও তার পুরোটাই সাবটেক্সটে, যার কারণে সেন্সরের ফাঁদ কেটে বেরিয়ে যেতে পারাটা তখন সম্ভবপর হয়েছিল। কিন্তু এই সিনেমায় সেই লুকোছাপার স্বভাব নেই। খোলাখুলি আলোচনার সাহসটা এই সিনেমাই সর্বপ্রথম করে দেখিয়েছে। 

পরিচালক উইলিয়াম ফ্রিডকিন, সেই ‘ফ্রেঞ্চ কানেকশন’ থেকে ‘কিলার জো’; তার প্রায় প্রতিটি সিনেমাতেই একটা ডকুমেন্টারি ভাব রেখেছেন। লং টেক, হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরা, অন-লোকেশন শ্যুট; যে স্টাইলগুলো সাধারণত ডকুমেন্টারিতে দেখা যায়, দৃঢ়তার সাথে নোংরা বাস্তবতাকে উঠিয়ে আনতে এই স্টাইলগুলোই ফ্রিডকিন অনুসরণ করেন। এগুলোকেই তিনি তার নিজস্ব স্টাইলে পরিণত করেছেন। ডকু-ফিল্মমেকার হিসেবেই অবশ্য তার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল। 

ফ্রিডকিন তার সিনেমার নন্দনতত্ত্ব, চরিত্রায়ন, গল্পবয়ানে ডকুর আমেজটা রাখেন। কারণ, এই ভিত তাকে, মানুষের অস্পষ্ট এবং সর্বদা পরিবর্তনীয় নীতির ধারণার বাস্তবিক খোলসটা খুলে ফেলতে সাহায্য করে। তার এই স্টাইল, স্টাইল হিসেবে পরিণত হয়েছিল ‘দ্য ফ্রেঞ্চ কানেকশন’ সিনেমা হতে। এই সিনেমার ক্ষেত্রে তার পরিচালনা একদম সরাসরি। মঞ্চনাটকের ভাব আছে। এবং তিনি সচেতন ভাবেই এমনটি করেছেন।

সিনেমাকে অন্য একটা মোড়ে আনার পেছনে কাজ করা দুই চরিত্র;
Image Source: Paramount Pictures

ফ্রিডকিন ‘দ্য বয়েজ ইন দ্য ব্যান্ড’-এর মঞ্চ সংস্করণটার একটা সিনেম্যাটিক সংস্করণ নয়, বরং মঞ্চ নাটকটাকেই ক্যামেরায় তুলে সংরক্ষণের কাজটা করেছেন। চরিত্রদের মনস্তত্ত্বকে সামনে আনতে এই সংকীর্ণ জায়গায় নেওয়া অজস্র ক্লোজ-আপ শট যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। প্রথম অংকে, ফ্রিডকিন উৎফুল্ল পরিবেশ’টায় দর্শককে মাতিয়ে রাখতে ফুল শটের ব্যবহার করেছেন, ক্যামেরার নড়াচড়ায় গতি এনেছেন, সম্পাদনাকেও গতিময় করে তুলেছেন। দ্বিতীয় অংকে, বাস্তবতাকে চার দেয়ালের ভেতর যখন ঢুকতে দিয়েছেন, তখনই ক্যামেরা ও সম্পাদনায় শ্লথ গতি এনেছেন, বাস্তবতাকে বিদগ্ধ রূপে সেই চরিত্রদের ও দর্শকদের মনে আধিপত্য নিয়ে নিতে। গুমোট পরিস্থিতিতে উত্তেজনা বাড়িয়ে, পরিবেশটাকে আরো গুমোট করে তুলতে লং টেক ব্যবহার করেছেন।

ঠেকায় না পড়লে নাকি কখনো দ্বিতীয় টেক নিতে চান না ফ্রিডকিন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, যেই ‘র’ আবেগ তিনি চরিত্রের মধ্য দিয়ে উঠিয়ে আনতেন, সেটা দ্বিতীয়বার ধারণ করা সম্ভব না। করলেও ওই ‘র’ ব্যাপারটা থাকবে না। প্রমাণ হিসেবে দারুণ উদাহরণ এই সিনেমা। এখানে চরিত্রদের তিনি ব্যবহার করেছেন যেন ডকুমেন্টারির একেকটি প্রসঙ্গ হিসেবে এবং এতে অভিনেতারা তাদের চরিত্রের সহজাত অনুভূতি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। ফ্রিডকিনের এই বৈশিষ্ট্যই তাকে চরিত্রনির্ভর ফিল্মমেকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। 

দ্য ব্যান্ডের সকল বয়েজ; Image Source: Paramount Pictures

‘দ্য বয়েজ ইন দ্য ব্যান্ড’ (১৯৭০)-এর অনবদ্য চিত্রনাট্য এবং নিটোল পরিচালনা গুণে দুটো গড়পড়তা বৈশিষ্ট্যের চরিত্র এবং কিছুটা অহেতুক ভাবালু হবার দিকটা থেকে চোখ এড়িয়ে নিতে সাহায্য করে। ৭০ পরবর্তী সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির জায়গায় এবং ৯০ এর ‘কুইয়ার ফিল্ম মুভমেন্ট’-এ, এই সিনেমার অবদান অনস্বীকার্য। আলোচনার প্রয়োজনীয়তা রেখে যেতে সক্ষম হয়েছে এই সিনেমা, যার কারণে আজো আলোচিত হচ্ছে।

This article is a review of the film 'The Boys In The Band' (1970), directed by William Friedkin. He is a great filmmaker, who made films like 'The French Connection', 'The Exorcist', 'Sorcerer', 'To Live and Die In L.A.', 'Killer Joe'. This film is one of his earliest works. It's known as a groundbreaking piece of work. For it's subject matter, it's widely regarded as one of the important films of 70. It influenced the 'queer film movement of 90s'.

Featured Image: FilmSpeak

Related Articles