– Feeling guilty?
– I’m the one who hit him.
– You can’t bring the kid back.
– You’ve got your own now.
– You’ve got to raise your kid.
শুভ্র হিমশীতল তুষার আচ্ছন্ন শহরে ইউরি বিকভ জমিয়েছেন দ্য মেজর‘ (২০১৩) থ্রিলার প্রকল্প। অজান্তে মেরুদণ্ডে শিরশিরে অনুভূতি দিয়ে যাবে মেজর সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা-জটলা। ফলশ্রুতিতে কয়েক সেকেন্ডের ভুল থেকে উদগীরিত সহস্র ভুল জেঁকে বসে সময়ান্তে। ভুলে ভুলে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর অমানবিক গল্পের ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায় বিকভের থ্রিলার। কোনো অজানা রহস্যের পিছু ছোটা নয়, বরং একটি ঘটনা থেকে আরেকটি ঘটনার উদ্ভব তত্ত্বতে ভর করে বলিষ্ঠতা পায় এর চিত্রনাট্য। থ্রিলারের সচরাচর আকস্মিক বয়ান থেকেও ধারাবাহিকতার বুনন এখানে হয়ে উঠে প্রগাঢ়। মানবতাকে বুড়ো আঙুলে ধিতাং ধিতাং নাচাতে নাচাতে মেজরের গল্প কালক্রমে অগ্রসর হয় ভয়ানক পরিণতির দিকে।
মেজর শুরুতে যে পরিণতির কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি, অবিশ্বাস্যভাবে পুরো পুলিশ বিভাগই পরে ধীরে ধীরে মেজরের সাথে সাথে অনভিপ্রেত পরিণতির দিকে ধাবিত হয়। এমতাবস্থায় ঘটনার জট থেকে পিছু হটবার সুযোগ নেই। বরং, ডারউইনিজমে আস্থা রেখে নিজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে মগ্নতা লক্ষণীয় চলচ্চিত্রে।
উচ্চপদস্থ মেজরের অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর পুলিশ বাহিনীর গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র ‘দ্য মেজর’। প্রারম্ভের তিন মিনিটেই একটু নড়েচড়ে চেয়ারে সোজা হয়ে বসে দেখার ফিল্ম এটি। সন্তানহারা এক মায়ের কান্না ছবির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর বিচ্ছেদ্য অংশ বিকভের হিউমার সৃষ্টির কারিশমা। যেগুলো আলাদা আলাদা করে দেখতে চাইলে সমাজ ব্যবস্থার দিকে সোজাসুজি আঙুল উত্থিত হয়। তেমনই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিনে বিকভ দেখিয়েছেন কারিশম্যাটিক কিছু নজির। ইরিনা ও তার স্বামী গুতরভকে সই করানোর জন্য, জেলা পুলিশ অফিসার পাশা জেলে নিয়ে আসলে সেখানে দেখা মেলে জেলের সামগ্রিক পরিস্থিতি। মাত্রই জেলে ধরে নিয়ে আসা একদল হুকারকে বের হতে দেখা যায় সেল থেকে। পরক্ষণে পুলিশের অফিসারকে লক্ষ্য করে বয়োজ্যেষ্ঠ বৃদ্ধা করতে থাকেন অভিসম্পাত। মুহূর্তের মাঝে পরিস্থিতি ক্ষণিকের জন্য থমকে যায় । মৃত সন্তান প্রসবের অভিশাপের কথা উচ্চারিত হয় সে বয়ানে। যা স্ক্রিপ্টের মূল গল্পের সন্তানহারা মায়ের সাথে দারুণ যোগসূত্র সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে বাচ্চাদের কলরবে মুখর চীফ অব পুলিশের প্রধান বরিসের বাসায় ফন্দি আঁটা হয় এই কেস সুরাহার। সেখানে পুলিশ মেজর সারগেই সোবলেভের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রয়াস চলে। ভিন্ন কায়দায় সেখানে ব্যবহার করা হয় ভিক্টিম কোলইয়ার সমবয়সী পুলিশ চীফ বরিসের ছেলেকে। খুঁটিনাটি এ বিষয়গুলোয় যত্নের ছাপ দেখা যায়। নির্মাতা হিউমারের ফাঁদ পেতেছেন রাস্তার এক মদ্যপকে দিয়ে সোবলেভের পাশার দিকে গুলি তাক করার দৃশ্যতে! নির্মাতা সন্তানহারা মা ইরিনার সাথে প্রসব বেদনায় কাতরানো নাদিয়াকে একই সময়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন।
সোবলেভ চরিত্রটি মুভির নাম ভূমিকায় থাকলেও আমার কাছে অফিসার পাশা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। কেননা এই পাশার চালেই বিদঘুটে একেকটি অধ্যায় ক্রমানুসারে চলতে থাকে। আর চমকের ব্যাপার হলো— এই পাভেল তথা পাশা চরিত্রে অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রের পরিচালক বিকভ নিজে। অর্থাৎ বলা নিষ্প্রয়োজন যে, অফস্ক্রিন এবং অনস্ক্রিনে নির্মাতা ও স্ক্রিপ্টরাইটার ইউরি বিকভ একাই আসল খেলাটা খেলেছেন। তবে দলগত পারফর্মেন্সে বাকিরাও কেউ কারোর চেয়ে কম যায়নি। ডিপার্টমেন্ট ধরে বলতে গেলে- সব ডিপার্টমেন্টই সমান সমুজ্জ্বল।
সিনেমাটোগ্রাফি এবং এডিটিংয়ের সমন্বয় জলের সাথে মাছের মতোন মিশে গেছে। প্রতিটি লাশকে ফ্রেমে পাশ কাটিয়ে গেছে কিরিল ক্লেপালভের সচেতন ক্যামেরা। অথচ একই ব্যক্তির ক্যামেরা আবার ফ্লোরে লেপটে দেয়া লাশের রক্তের প্রবাহ কিংবা নির্দয় অত্যাচারের রক্তের ছোপ ধারণ করেছে অতি সচেতনতায়। তুষারশুভ্র শহরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যও স্থান পেয়েছে ক্ষণিকের তরে। ভূমি সমান্তরাল মাস্টারশট আস্থা দেখিয়েছে সিনেমাটোগ্রাফির বেসিক গ্রামারে। ম্যাচ কাটের চাতুর্যতা অবহিত করেছে দুই অফিসার কর্তৃক একই সময়ে সংঘটিত দুটি অনিচ্ছাকৃত খুনের। সময়ে সময়ে সংলাপের তীক্ষ্ণতা আর তির্যক বৈশিষ্ট্য রীতিমত বিমোহিত করেছে। সন্তানহারা অসহায় বাবা আর পুলিশ অফিসারের নিচের সংলাপটি যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
আমি পরের জন্মে এর বদলা নেব।
এই জন্মেই না হয় চেষ্টা করো।
অতঃপর অসহায় বাবা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই জন্মেই হয়ে ওঠেন প্রতিশোধপরায়ণ হিংস্র অগ্নিমূর্তি। পক্ষান্তরে পাশার দান উল্টে যেয়ে অবাক অফিসারের কাঁধে ভর করে সাময়িক অসহায়ত্ব। সেলে দুই অফিসারের যুক্তিতর্কে অগত্যা টিপ্পনী কেটেছে কারাবন্দী অচেনা আগন্তুক:“Going to prison isn’t difficult in our country”.
সোবলেভকে উদ্ভূত পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝাতে পাশা চিৎকার করে, “I did it for you. Wanna join him in the morgue?”
একইভাবে সন্তানহারা ইরিনার অবস্থানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে আরেক অফিসার মেরকুলভ। বোঝাতে চেষ্টা করে— যা কিছু হচ্ছে তার সবকিছুরই দায় উদ্ভূত পরিস্থিতির। ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকে নিজেদের জায়গা থেকে স্বার্থপর।
দ্য মেজরের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর হৃদস্পন্দনের আওয়াজের প্রতিধ্বনি তোলে। ঘড়ির কাঁটা আর বিটের তালমিশ্রিত ধ্বনির প্রখরতা মুভির থ্রিলার উত্তেজনার সাথে সমান তালে বহমান। পিস্তল এবং গুলির সাউন্ড ইফেক্ট থ্রিলারের সাথে অ্যাকশনধর্মকে সজীবতা দিয়েছে। সব মিলিয়ে মুভিতে থ্রিলারের যে শাব্দিক গাম্ভীর্য তার শ্রাব্যতা খুঁজে পাওয়া গেছে পুরো সময়। মেকআপ এবং কস্টিউমের জায়গা থেকেও দ্য মেজর কেতাদুরস্ত। নিখুঁত, মানানসই এবং সাবলীল। পুলিশ স্টেশনে ইউনিফর্মের বৈচিত্র্য বিশেষ নজরে আসে। পাশাপাশি প্রত্যেকের চুলের ছাঁটের ভিন্নতা একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়বে। আচরণিক পার্থক্য এবং নানারূপ মনস্তত্ব গুরুত্ব পেয়েছে বিকভের মাস্টারপিস এই চলচ্চিত্রে। যেন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাপারগুলোও পরিচালক আতশ কাচে বড় করে দেখে নিয়েছেন প্রি-প্রোডাকশন পর্যায়ে।
কাহিনীর ধারাবাহিকতা এবং গতিময়তা এই চলচ্চিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। সমত্বরণে দ্য মেজরের গল্পের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই প্রথম তিন মিনিটে ঘটা অঘটন পরবর্তী সময়ে আরও দ্রুতলয়ে সৃষ্টি করেছে আপত্তিকর অনভিপ্রেত নানা ঘটনার। যা সামলাতে প্রতিটি চরিত্র হিমশিম খেয়েছে সিনেমার শেষ অবধি। অবশ্য শেষেও তা সামলানো গেল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন বিকভ।
সহজতম সুহারার পথে না হেঁটে বন্ধুর পথে এগিয়েছে অমীমাংসিত গল্প। যেখানে আপাতদৃষ্টিতে গোপনীয়তা রক্ষা পাবে বলে সাময়িক আশা জাগে। তবে ইতোমধ্যে সমগ্র ঘটনা উপরমহলে জানানো হয়ে গেছে তা মনে পড়তে সে আশা কর্পূরের মতো উড়ে যায়। গল্পের শুরুর যাত্রাপথ প্রসূতি হাসপাতাল শেষ দৃশ্যতেও অপরিবর্তনীয় থাকে। কেবল মাঝরাস্তায় ঘটে যায় সীমাহীন পরিবর্তন। উল্লেখ্য, এই চলচ্চিত্রের আলোকে নেটফ্লিক্স ২০১৮ সালে ‘সেভেন সেকেন্ডস’ নামে ১০ পর্বের একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করে।