আমরা যখনই ধনী সুপারহিরোদের কথা চিন্তা করি না কেন, আমাদের মাথায় প্রথমেই আসে ব্যাটম্যান কিংবা আয়রন ম্যানের নাম। এর প্রধান কারণ একটিই, এই চরিত্রগুলো সবচেয়ে বেশি সুপরিচিত। তবে যারা কমিকস বই পড়েন, তাদের অনেকেরই জানা আরও বেশ কিছু সম্পদশালী সুপারহিরো সম্পর্কে। আর টেলিভিশন সিরিজ কিংবা সিনেমার সৌজন্যে ধীরে ধীরে সাধারণ দর্শকরাও পরিচিত হচ্ছেন নতুন সব সুপারহিরোদের সাথে।
কমিকস বইয়ে বিলাসিতার ভাঁজে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করা সুপারহিরোদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। চলুন জেনে নেয়া যাক এমনই কিছু সুপারহিরোর সম্পর্কে, যারা ব্রুস ওয়েইন আর টনি স্টার্ক থেকে সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও তাদের ছায়ায় ঢাকা পড়ে আছেন।
১০. ব্লু বিটল
আমাদের এই তালিকার ১০ নম্বরে আছেন ব্লু বিটলের ম্যান্টল তুলে নেয়া সুপারহিরো টেড কর্ড। অনেকেই হয়তো বর্তমানে ব্লু বিটল বলতে হাইমে রেইসকে চেনেন। তবে টেড কর্ড হচ্ছেন দ্বিতীয় জমানার ব্লু বিটল। তার কোনো সুপারপাওয়ার ছিল না। কারণ হাইমের মতো তার পিঠে স্কারাব (গুবরে-পোকাবিশেষ) নেই। তার অ্যাথলেটিক ক্ষমতা, ফাইটিং দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত প্রতিভা দিয়েই তিনি লড়তেন অপরাধের বিপক্ষে।
সুপারপাওয়ার ছিল না বটে, তবে টেড ছিলেন বেশ সম্পদশালী। তার আনুমানিক ১০০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পত্তি ছিল। ব্রুস ওয়েইনের মতো তিনিও ছিলেন নিজের ইন্ডাস্ট্রির মালিক (কর্ড ইন্ডাস্ট্রি)। সেই আয় দিয়ে তিনি তার প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র, সরঞ্জামাদি, বিভিন্ন ধরনের গ্যাজেট ও উড়ন্ত গাড়ি কিনতেন। এছাড়া অন্য এক সুপারহিরো বুস্টার গোল্ডের সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব ছিল। একপর্যায়ে তারা দুজনে মিলে একটি গেম কোম্পানিও চালু করেন।
৯. মিস্টার ফ্যান্টাস্টিক
তালিকায় এবারে রয়েছেন মারভেলের সবচেয়ে স্মার্ট সুপারহিরোদের একজন, নাম তার রিড রিচার্ডস। যদিও এখন তিনি মিস্টার ফ্যান্টাস্টিক নামেই পরিচিত। অন্যান্য ধনবান সুপারহিরোদের মতো রিডের কোনো কোম্পানি নেই। তার আয়ের টাকাগুলো আসে সরকারের পকেট থেকে। তিনি সেগুলো পেয়েছেন তার নানা বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্যে।
তার আয়ের পরিমাণ প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার একটি বাক্সটার বিল্ডিং রয়েছে এবং ফ্যান্টাস্টিক ফোরের সকল অ্যাডভেঞ্চারের খরচাপাতি তার পকেট থেকেই আসে।
৮. ম্যাগনিটো
ম্যাগনিটোকে হয়তো ঠিক সুপারহিরো হিসেবে ধরা যায় না, তবে তার অবস্থান অনেকটা হিরো-ভিলেনের মাঝামাঝি। তা নাহলে তাকে তো আর এমনি এমনি ম্যালকম এক্স এর সাথে তুলনা করা হয় না। কেননা প্রফেসর এক্সের সাথে তার দৃষ্টিভঙ্গি আর মতের অমিল বলেই তিনি ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন।
সে যা-ই হোক! ম্যাগনিটো বা ম্যাক্স আইসেনহার্টও রয়েছেন আমাদের এই তালিকায়। ম্যাগনিটো যে শুধু সবচেয়ে শক্তিশালী মিউট্যান্টদের মধ্যে একজন, তা কিন্তু নয়। তিনি প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক। কুখ্যাত সংগঠন হাইড্রার নাৎসি স্বর্ণ চুরি করার পর এত টাকার মালিক হন ম্যাগনিটো। মজার ব্যাপার হলো, তিনি বিত্তবান ঠিকই, তবে তার আদৌ অর্থের কোনো ব্যবহার বা প্রয়োজন নেই।
৭. আয়রন ফিস্ট
এবারে তালিকায় রয়েছেন আরেকজন মারভেল সুপারহিরো! তিনি হলেন আয়রন ফিস্ট বা ড্যানিয়েল র্যান্ড। বাবা-মা’র মৃত্যুর পর, তাদের বিপুল সম্পত্তির মালিক হন আয়রন ফিস্ট। তিনি প্রথমে র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কোম্পানি পরিচালনা করতেন। পরে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য সেটাকে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন।
আয়রন ফিস্টের অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এত সম্পত্তির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তালিকার অন্য সুপারহিরোদের তুলনায় বেশ সাদামাটা জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন তিনি।
৬. প্রফেসর এক্স
ছয় নম্বরেও রাখতে হবে আরেকজন মারভেল সুপারহিরোকে। তবে তিনি স্বল্পপরিচিত কেউ নন। বলা যায় মারভেলের এক্স-ম্যান ইউনিভার্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের একজন এই লোক। তিনি হলেন এক্স-মেনের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর চার্লস জাভিয়ের কিংবা শুধু প্রফেসর এক্স।
প্রফেসর সাহেবের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। তার সম্পত্তির পুরোটাই তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন তার পিতার কাছ থেকে। সেই টাকা দিয়ে তিনি একটি স্কুল পরিচালনা করেন, যেখানে তার মতো প্রতিভাধর তরুণ মিউট্যান্টদেরকে নিজেদের ক্ষমতার সঠিক পরিচালনা ও বিকাশ সহ আরও নানা বিষয়ে সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হয়। তাদের ভরণপোষণের খরচও তিনি নিজেই বহন করেন।
৫. অ্যারো
পাঁচ নম্বরে আছেন ‘His name is Oliver Queen’। না তার নাম ঠিক হিজ নেইম ইজ অলিভার কুইন নয়। তবে “মাই নেইম ইজ অলিভার কুইন” ডায়লগ দিয়ে শুরু হয় বর্তমানে টিভিতে প্রচারিত তার ‘অ্যারো’ নামের ধারাবাহিকটি। এই সিরিজের কল্যাণেই কমিকসভক্ত ছাড়াও প্রচুর দর্শক এখন অ্যারোকে চেনেন। অলিভার তার সম্পত্তির পুরোটাই পেয়েছেন বাবা-মায়ের কাছ থেকে। এছাড়াও তিনি কুইন ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক। আর টেলিভিশন শো অনুযায়ী তিনি বর্তমানে শহরের মেয়র।
অলিভার কুইনের সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার বাবা গোলাবারুদ ও অস্ত্র বিক্রি করে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন। তবে অলিভার এখন সেই অর্থ বিভিন্ন দাতব্য কাজ এবং তার বন্ধুদের সাহায্য করতে ব্যয় করেন।
৪. ব্যাটম্যান
কিছুটা অবাক করা বিষয় হলেও সত্যি যে, তালিকার চার নম্বরেই রাখতে হবে সবচেয়ে জনপ্রিয় সুপারহিরো ব্যাটম্যানকে! তার ওয়েইন এন্টারপ্রাইজের বার্ষিক আয় ৩১.৩ বিলিয়ন ডলার হলেও ফোর্বসের দেয়া তথ্যানুযায়ী তার সম্পত্তির পরিমাণ ৯.২ বিলিয়ন ডলার। তবে অন্য আরেকটি তথ্য অনুযায়ী তার সমস্ত সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
ওয়েইন পূর্বপুরুষরা শুরু থেকে বিশাল সম্পত্তির অধিকারী। ব্রুস ওয়েইন নিজেও চমৎকার ব্যবসায়ী, তবে তার কোম্পানির বেশিরভাগ কার্যক্রম লুসিয়াস ফক্স ও আলফ্রেডের দ্বারাই পরিচালিত হয়। ক্লার্ক কেন্ট যে কোম্পানিতে কাজ করেন, ব্রুস সেই কোম্পানির বিরাট অংশীদার। অর্থাৎ সুপারম্যান ব্রুস ওয়েইনের কর্মচারী! ব্রুস তার অর্থের এক বিরাট অংশ ব্যয় করেন ব্যাটম্যানের সরঞ্জামাদির পেছনে এবং অনাথাশ্রম সহ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করতে।
৩. আয়রন ম্যান
তালিকায় তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছেন জিনিয়াস, বিলিয়নিয়ার, প্লেবয় এবং জনদরদী টনি স্টার্ক, যার থার্মোনিউক্লিয়ার অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে বিশেষজ্ঞ হতে বড়জোর একরাত সময় লাগে! তিনি স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রির মালিক এবং মারভেলের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন। তার অর্থের পরিমাণ প্রায় ১২.৪ বিলিয়ন ডলার।
তার বাবা হাওয়ার্ড স্টার্কের কাছ থেকে তিনি উত্তরাধিকার সূত্রেই স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রির মালিক হন এবং স্বীয় প্রতিভা ব্যবহার করে কোম্পানিকে আগের থেকে অনেক ভালো অবস্থায় নিয়ে যান। টনি স্টার্কের আয়ের বিরাট অংশ এসেছে যুদ্ধে বিক্রি করা অস্ত্র থেকে। তার কাছে যুদ্ধ হল সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। তিনি সবসময় বিলাসবহুল জীবনযাপন ও উন্নত প্রযুক্তির গ্যাজেট ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।
২. নামর
আপনি হয়তো এই লোকের সাথে খুব একটা পরিচিত না-ও হতে পারেন। অথবা ভেবে বসবেন, এ নিশ্চয় ডিসি কমিকসের নকল। তার সবকিছু অনেকটা ডিসির অ্যাকোয়াম্যানের হলেও কমিকসে তার আগমন ঘটেছে অ্যাকোয়াম্যানের দুই বছর আগে। কিন্তু তবুও তাকে ডাকা হয় মারভেলের অ্যাকোয়াম্যান। গোলাপি চামড়ার এই লোকটি একজন মিউট্যান্ট এবং আটলান্টিস রাজ্যের রাজকুমার, নাম তার নামর ম্যাকেনজি।
নামরের অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৬০ বিলিয়ন ডলার। তাকে মূলত ‘রুলার অব দ্য ওশেন’স’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, কেননা বিশ্বের সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ তার নিয়ন্ত্রণে।
১. ব্ল্যাক প্যান্থার
আর এই তালিকার সবচেয়ে প্রতাপশালী সুপারহিরো হচ্ছেন ‘হিজ হাইনেস’ কিং টি’চালা। ব্ল্যাক প্যান্থার নিঃসন্দেহে সবথেকে ধনী সুপারহিরো। তার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৯০.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। অবাক হলেন? না, অবাক হওয়ার কিছু নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান পদার্থ ভাইব্রেনিয়ামের পাহাড় যার আছে, তার কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার থাকতেই পারে।
ক্যাপ্টেন আমেরিকার শিল্ড বানানো এই ভাইব্রেনিয়াম ধাতু দিয়ে। তার উন্নত রাজ্য ওয়াকান্দার ছাড়া আর কোথাও ভাইব্রেনিয়াম পাওয়া যায় না। তাই বাইরের পৃথিবীর সভ্যতা এগিয়ে নিতে টি’চালা বহির্বিশ্বেও ভাইব্রেনিয়াম বিক্রি করেন অল্প পরিমাণে।
যদিও তার নাম তালিকায় নেই, তবুও তর্কের সাপেক্ষে হলেও তার নাম না নিলে তার উপর অবিচার করা হবে। তিনি ডিসি কমিকসের অ্যাকোয়াম্যান আর্থার কারি। অ্যাকোয়াম্যান সমগ্র সমুদ্রের তলদেশের মালিক এবং এর সম্পূর্ণ অংশই তার নিয়ন্ত্রণে। সমগ্র সমুদ্রতলের আয়তন প্রায় ৩৬১.৯ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার, যা সমগ্র ভূখণ্ডের চেয়ে দ্বিগুণ বড়। এখন কোনো ব্যক্তি যদি সম্পূর্ণ সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে চিন্তা করুন তার বাহিনী কত বিশাল! তাছাড়া পেট্রোলিয়াম, স্বর্ণ, টিন, টাইটেনিয়াম ও হীরে সহ বিশ্বের বিভিন্ন খনিজ সম্পদ রয়েছে তার দখলে। এ সবকিছু হিসেব করলে তার সম্পত্তির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ১৫০ ট্রিলিয়ন থেকেও বেশী, যা ব্ল্যাক প্যান্থারের প্রায় দ্বিগুণ।
তথ্যসূত্র: Forbes, Time.com, Ranker
ফিচার ইমেজ © Noel Ransome