হুইস্পার অব দ্য হার্ট: অন্তরের গভীরতম অনুভবই পারে নিজেকে চিনতে শেখাতে

Country roads, take me home
To the place I belong

কান্ট্রি রোডস, জন ডেনভারের এই বিখ্যাত গান আমাদের চেনা। অতীত যেখানে জড়িয়ে থাকে গাছের পুরনো শেকড়ের মতো, জীবন সেখানে ফুরফুরে হাওয়া- পাহাড়ের মতো উচ্ছল। ভাবুন তো, কেমন হবে যদি স্নিগ্ধতায় ঘেরা এই কান্ট্রি রোড জন্ম দেয় কংক্রিটে মোড়ানো রুক্ষ কিছু অনুভবের?

রুক্ষ ভাবনাদের স্মৃতিতে গেঁথে বসানো বেশ কঠিন একটি কাজ। আর কঠিন এই কাজই ভীষণ আগ্রহ নিয়ে করতে দেখা যায় আলোচিত অ্যানিমে, হুইস্পার অব দ্য হার্টের সিজুকো চরিত্রকে। সিজুকো হাই স্কুলপড়ুয়া এক কল্পনাপ্রবণ বালিকা- বন্ধুদের জন্য জন ডেনভারের বিখ্যাত গানকে জাপানি ভাষায় রূপান্তর করে সে, একটু অন্যভাবে।

সিজুকোর স্মৃতিতে ডেনভারের কান্ট্রি রোড মূল থিমের বিপরীত সত্ত্বার প্রকাশ ঘটায়। ভার্জিনিয়ার মনোরম রাস্তার ধার জাপানের প্রেক্ষাপটে গ্রহণ করে কংক্রিটের আবরণ। বন উজাড়, নদী-উপত্যকার মৃত্যু ঘটানোর মতো জঘন্য অপরাধ দগদগে হয়ে জ্বলে ওঠে সিজুকোর রূপান্তরিত গানের কথায়। আধুনিকতার রন্ধ্রে কষাঘাত!

কল্পনাপ্রবণ সিজুকো সারাক্ষণ বই নিয়ে মেতে থাকত; Image Source: Film Gaze

হুইস্পার অব দ্য হার্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, সিজুকো বই পড়তে খুব পছন্দ করত। স্কুল যখন দীর্ঘদিনের জন্য ছুটি হয়ে গেছে, তখনও প্রবল উদ্যমের সাথে লাইব্রেরিতে হানা দিতে দেখা যেত সিজুকোকে। এন্ট্রান্স এক্সাম এগিয়ে আসছে? তাই বলে বই পড়া থামিয়ে দেওয়া যাবে না। আসলে পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, একটু চেষ্টা করলেই সময় বের করা যায় নিজের জন্য। পার্সোনাল গ্রোথের এই দারুণ পাঠ মিলবে সিজুকোর কাছ থেকে।

যা-ই হোক, সিজুকোর পড়া সব বই আগে থেকেই একজন পড়ে ফেলত। প্রত্যেকটা বইয়ের কার্ডে নাম এন্ট্রি করে রাখা আছে তার, সেইজি আমাসাওয়া। কে এই সেইজি আমাসাওয়া? কীভাবে সে সিজুকোর পড়া সব বই আগে আগে পড়ে ফেলে?

সিজুকোর পড়া সব বই আগে আগে পড়ে ফেলত সেইজি; Image Source: Pinterest

সেইজির অনুপ্রবেশ- কাহিনিতে চমকের সূচনামাত্র। সেইজির আগ্রহের বিষয় ভায়োলিন। বাজাতে নয়, ভায়োলিনের নির্মাণকাজেই যত আগ্রহ তার। হুইস্পার অব দ্য হার্টের আরেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, সেইজি আমাসাওয়া নিজেকে গড়ে তুলতে চায় এই কাজের সেরাদের কাতারে।

কাহিনির একপর্যায়ে এসে সেইজির সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে সিজুকোর। সেইজির দাদার সাথেও প্রাণবন্ত এক সম্পর্কের সূচনা ঘটায় সে। এরপর থেকেই হুইস্পার অব দ্য হার্টের গল্প এগিয়ে চলে দুর্দান্ত গতিতে।

নিজের ভেতরেই লুকিয়ে আছে সম্ভাবনার হীরে; Image Source: Morning Pages

ভায়োলিন মেকিং শিখতে সেইজি পাড়ি জমায় ইতালির ক্রেমোনা শহরে। এমনিতেই চমৎকার হাতের কাজ তার, ক্রেমোনায় গিয়ে ভায়োলিন নির্মাণে আরও বেশি পারদর্শী হয়ে উঠবে। এদিকে সেইজির কর্মদক্ষতায় ভাবনার খোরাক পায় সিজুকো। নিজেকে প্রশ্ন করতে বাধ্য হয়, কোন কাজে ভালো সে? কোথায় লুকিয়ে আছে তার সম্ভাবনার হীরে?

সম্ভাবনার হীরে ব্যাপারটা সম্পর্কে জানা যাক। জীবনকে আমরা তুলনা করতে পারি অসংখ্য নুড়ি-পাথরের একটা সাগরের সাথে। বেশিরভাগ পাথরই মূল্যহীন, অকেজো। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব নুড়ি পাথরের মাঝেই লুকোনো থাকে ব্যক্তি জীবনের সম্ভাবনার হীরে। আসলে আত্ম-অনুসন্ধানের প্রশ্নটা শুনতে খুব কঠিন লাগলেও উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় বিবেকের কাছে। অন্তরের গভীরতম অনুভবই পারে নিজেকে চিনতে শেখাতে। আর হুইস্পার অফ দ্য হার্ট আমাদের এই বার্তাই দেয়।

হুইস্পার অফ দ্য হার্ট শেখায় নিজেকে চিনতে; Image Source: Film Companion

নিজেকে চেনার জন্য চাই দৃঢ় মনোযোগ। অন্তরের গভীরতম অনুভব যে বার্তা প্রদান করে, সেই বার্তা ধারণ করার মধ্য দিয়েই সেলফ অ্যাসেসমেন্টের সূত্রপাত। এবং সেলফ অ্যাসেসমেন্ট আমাদের নিজেদের মূল্যায়ন করতে শেখায়। কোন পথে এগিয়ে গেলে সফলতার দেখা পাওয়া যাবে, তার উত্তর নিজের চেয়ে ভালো আর কেউ দিতে পারে না। আর এজন্যই প্রয়োজন অন্তরের গভীরতম অনুভব, হুইস্পার অব দ্য হার্ট।

অ্যানিমে যে নিছক শিশুদের জন্য নয়, এই স্টেরিওটাইপ অনেক আগেই ভেঙে ফেলেছে জাপানি প্রতিষ্ঠান স্টুডিও ঘিবলি। এক্ষেত্রে হুইস্পার অব দ্য হার্টকে বলা যেতে পারে অন্যতম জোরালো একটা উদাহরণ। খুবই সাধারণ কিছু ন্যারেটিভে জীবনের জটিলতম টানাপোড়েনের দৃশ্যায়ন ঘটতে দেখা যায় এখানে। সিজুকোর অস্তিত্ব সংকটের সাথে কমবেশি সবাই নিজেকে সম্পর্কিত করতে পারবে। কিছু ভালো সময় কাটানোর জন্য ঘুরে আসতে পারেন হুইস্পার অব দ্য হার্টের সফর থেকে।

Language: Bangla
Topic: Review of the anime Whisper of the Heart

Related Articles

Exit mobile version