হাউজ হাফলপাফ। কালো-হলুদের সংমিশ্রণজাত প্রতীকী রঙ ভাসে সেই হাউজের পতাকায়। সাথে একটি নজরকাড়া ব্যাজারের ছবি যেন সেটার আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ। অনেকের কাছেই হাউজ হাফলপাফ ‘আন্ডাররেটেড’ একটা শব্দ। একদিক বিবেচনা করলে, তাদের যুক্তি ঠিকই। কারণ গ্রিফিন্ডর আর স্লিদারিন হাউজের মতো হাফলপাফের শিক্ষার্থীদের তেমন লাইমলাইটে আনা হয়নি হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজিতে। আবার ইচ্ছা করলেই তাদের সেই মতামতকে মোটাদাগে কেটে দেওয়া যায়। কারণ, ট্রাই-উইজার্ড টুর্নামেন্টে পুরো হগওয়ার্টসের প্রতিনিধিত্ব করা শিক্ষার্থী সেডরিক ডিগরি ছিল হাফলপাফের শিক্ষার্থী।
তার উপর ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস গাথা এগিয়ে চলেছে হাফলপাফের শিক্ষার্থী নিউট স্ক্যামান্ডারের হাত ধরেই। তাই কঠোর পরিশ্রম, সহনশীলতা, আনুগত্য, ন্যায়পরায়ণতা, এবং বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাব, এসব বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ এই হাউজকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। নানা সময়ে অনেক দুনিয়া কাঁপানো জাদুকর বের হয়েছে এ হাউজ থেকে। সে তালিকা থেকে সেরা দশ বাছাই করাটা মোটামুটি কঠিনই বলা চলে। তবে এই চরিত্রগুলোকে ক্ষমতা বা বুদ্ধিমত্তার ক্রমবিন্যাসে সাজানোর দুঃসাহস কারো পক্ষে দেখানো সম্ভব নয়। তালিকার প্রতিটি চরিত্রই পরস্পরের চেয়ে আলাদা, অনুপম, যাদের রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতা।
১. সেডরিক ডিগরি
হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজিতে হাউজ হাফলপাফ থেকে লাইমলাইটে আসা প্রথম ছাত্রটি হলো হাস্যোজ্জ্বল সেডরিক ডিগরি। ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অভ ফায়ার’ খণ্ডে পুরোটা সময় জুড়ে হ্যারি পটারের পর সে-ই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। মূলত ওই খণ্ডের কাহিনী ঘুরপাক খাচ্ছিল সেডরিককে ঘিরেই। কুইডিচ দলের সিকার থেকে শুরু করে ট্রাই-উইজার্ড টুর্নামেন্টে পুরো হগওয়ার্টসের প্রতিনিধিত্ব করা, যেন তার সবগুলো গুণকে প্রিজম থেকে বিচ্ছুরিত হওয়া রঙগুলোর সাথে তুলনা জুড়ে দেয়। সেডরিক যদি হয় সাদা আলোকরশ্মি, তার গুণগুলো হলো ত্রিভুজাকৃতির প্রিজমে বিচ্ছুরিত হওয়া পৃথক বর্ণালি। হাফলপাফের সবক’টা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য; যেমন, বিশ্বস্ততা, কর্মনিষ্ঠতা, পরোপকারিতা, ও বন্ধুত্ব ধরে রাখা- সে ছিল সবগুলোর মিশ্রিত প্রতিরূপ।
অসম সাহসের অধিকারী এই হগওয়ার্টস যোদ্ধা পদে পদে রেখেছে নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর, চেষ্টা চালিয়েছে অসম্ভবকে সম্ভব করার। পুরো হগওয়ার্টসে সে ছিল এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। মিশুক ও হাস্যোজ্জ্বল স্বভাবের জন্য প্রায় সবাই তাকে পছন্দ করত। ট্রাই-উইজার্ড টুর্নামেন্টে সেডরিক যে ভেল্কিবাজি দেখিয়েছে, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ড্রাগনের কাছ থেকে স্বর্ণের ডিম চুরি করা, সু-নিপুণভাবে বাবলহেড চার্ম তৈরি করা, ইত্যাদি ধাপ সে সফলতার সাথে পার করেছিল। ট্রাই-উইজার্ড কাপে লুকানো পোর্টকির মাধ্যমে রিডল পরিবারের পারিবারিক গোরস্থানে গিয়ে ফেঁসে যায় সে। ওখানে ভলডেমর্টের আদেশে পিটার পেট্টিগ্রুর হাতে জীবন দিতে হয় তাকে। তার মৃত্যুর মাধ্যমেই ডার্ক লর্ডের প্রত্যাবর্তন করে নিজের সকল শক্তি নিয়ে।
সেডরিক ডিগরি বেঁচে থাকলে হয়ত জাদু জগতের এক কিংবদন্তিতে পরিণত হতে পারত। অর্জনের ঝুলি পরিপূর্ণ থাকত বিশেষ সম্মান ও অর্জনে। তার মতো প্রতিভাবান ও মেধাবী এক জাদুকরের অকালমৃত্যু ছিল হগওয়ার্টস, বিশেষ করে জাদু জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। মৃত্যুকে হাসিমুখে আলিঙ্গন করে সে বেঁচে রয়েছে লক্ষ-কোটি পটারহেডের হৃদয়ে।
২. হেঞ্জিস্ট অভ ওডক্রফট
হেঞ্জিস্ট অভ ওডক্রফটের নাম শুনে অনেক পাঠক ভ্রু কুঁচকাতে পারেন। অনেক হ্যারি পটার ভক্তের কাছেই নামটা ততটা পরিচিত নয়, কিন্তু হ্যারি পটারে বিভিন্ন সময় মেটাফোরের ছায়ায় তার কর্মকে অস্পষ্টতার চাদরে মুড়িয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই জাদুকর হগসমিডে অবস্থিত উইজার্ডিং ভিলেজের গোড়াপত্তন করেন। অত্যাচারী মাগলদের রোষানলের কবলে পড়ে হগসমিডে এসে বাসা বাঁধতে হয় তাকে।
জনশ্রুতি অনুসারে, তিনি থ্রি ব্রুমস্টিকস নামক সরাইখানাকে বাড়ি হিসেবে বেছে নেন। চকলেট ফ্রগ কার্ডে তার বাস্তব সাক্ষাৎ মেলে। উল্লেখ্য যে, হ্যারি পটার হগওয়ার্টসের ভর্তি হবার শুরুতে যে চকলেট কার্ডগুলো জমিয়েছিল, এর মধ্যে হেঞ্জিস্ট অভ ওডক্রফটের ফ্রগ কার্ড ছিল অন্যতম। হগওয়ার্টস দুর্গের চতুর্থ ফ্লোর করিডোরে তার একটি আবক্ষ মূর্তিও রয়েছে।
১৯৯১ সালের ১ সেপ্টেম্বর, হাউজ হাফলপাফের প্রিফেক্ট গ্যাব্রিয়েল ট্রুম্যান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে হাফলপাফ বেজমেন্টে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেয়ার সময় হেঞ্জিস্টের নাম উল্লেখ করে। সেখানে বলা হয়, হাউজ হাফলপাফ থেকে বের হওয়া যে ক’জন শিক্ষার্থী দুনিয়ায় নাম কামিয়েছে, তাদের মধ্যে হেঞ্জিস্ট অন্যতম। হাউজ হাফলপাফের এই জাদুকর সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। শুধু এটা নিশ্চিত যে, তিনি ছিলেন ব্রিটেনের বিখ্যাত এক জাদুকর। তার প্রতিষ্ঠিত উইজার্ডিং ভিলেজে ছিল জাদুকরে পরিপূর্ণ। যুক্তরাজ্যের এই জায়গায় ছিল অনেক খ্যাতনামা জাদুকরের বসবাস।
৩. থিসেয়াস স্ক্যামান্ডার
হাফলপাফের শিক্ষার্থীরা ভীতু প্রকৃতির হয়, হগওয়ার্টসের এই মিথটা ভেঙেছিলেন দুঃসাহসী থিসেয়াস স্ক্যামান্ডার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মাগলদেরকে সাহায্য করে ‘ওয়ার হিরো’ খেতাব নিয়ে পালটে দিয়েছিলেন ঠাট্টা-তামাশার চালচিত্র। যুদ্ধ শেষ হবার প্রায় দশেক বছর পরেও মাগল দুনিয়া তার কথা স্মরণ রেখেছে শ্রদ্ধাভরে। হগওয়ার্টসে ভর্তি হবার পর সর্টিং হ্যাট তাকে নির্বাচিত করে হাউজ হাফলপাফে। সেখান থেকে গ্রাজুয়েশনের পাট চুকিয়ে, জাদু মন্ত্রণালয়ে অরোর হিসেবে যোগ দেয়ার পর, নিজ মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন স্পষ্টভাবে। ফলে, অল্পসময়েই নির্বাচিত হন অরোর বিভাগের প্রধান হিসেবে।
অরোর প্রশিক্ষণের সময় কনসিলমেন্ট অ্যান্ড ডিজগাস, স্থিলথ অ্যান্ড ট্র্যাকিং কোর্সগুলোতে ছিল তার অভাবনীয় সাফল্য। ক্রমাগত জাদুবিদ্যা অনুশীলনের ফলে তিনি এমন এক পর্যায়ে গিয়েছিলেন, যেখানে গেলার্ট গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের বিপক্ষে লড়ার সময়ও ডরভয় তার ধার ঘেঁষেনি। গ্লোবাল উইজার্ডিং ওয়ারে ব্রিটিশ জাদু মন্ত্রণালয় তাকে গ্রিন্ডেলওয়াল্ড পাকড়াও অভিযানে পাঠানোর পর, ফরাসি জাদু মন্ত্রণালয় তাকে মেঘ-পিশাচ ক্রিডেন্স ব্যারবোনের খোঁজে পাঠায়। কালো জাদুর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা, চার্ম, দ্বন্দ্বযুদ্ধ, নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা, প্রায় সবকিছুতেই ছিল থিসেয়াসের জুড়ি মেলা ভার। জাদু জগতের ইতিহাসে তিনি ছিলেন অন্যতম সফল একজন অরোর এবং হাউজ হাফলপাফের গর্ব।
৪. পমোনা স্প্রাউট
হার্বোলজিতে অশেষ জ্ঞানসম্পন্ন প্রফেসর পমোনা স্প্রাউট জাদু জগতে বিচরণ করেছেন নিজ সাবলীলতায়। ভলডেমর্ট ও তার বাহিনীকে সবসময়ই তোয়াক্কা না করার মনোভাব দেখিয়েছেন তিনি। তিনি ম্যানড্রাক্স নামক এক প্রকার জাদুকরী উদ্ভিদ তৈরি করেছিলেন, যা দিয়ে চ্যাম্বার অভ সিক্রেটসের দানবীয় ব্যাসিলিস্কের গভীর ক্ষত সারানো যেত।
ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টসের সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে স্প্রাউট ডেথ ইটারদের দিকে ডেভিল স্নেয়ার সহ কিছু বিপজ্জনক উদ্ভিদ লেলিয়ে দেন, যা যুদ্ধে ডেথ ইটার নিধনে ব্যাপক সাহায্য করেছে। এছাড়াও তিনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যুদ্ধে আহত হওয়া যোদ্ধাদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। যেন হগওয়ার্টসের ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল!
১৯৯৫-৯৬ খ্রিষ্টাব্দে হগওয়ার্টস যখন ডলোরেস আমব্রেজের স্বৈরাচারী হেঁয়ালিপনায় পিষ্ট, অন্যসব কর্মীরা তার দলে স্বাচ্ছন্দ্যে যোগ দিলেও, স্প্রাউট স্রোতের বিপরীতে গা ভাসান। ব্যাটেল অভ অ্যাস্ট্রোনমি টাওয়ারের পর অনেকে স্কুল খোলা রাখার পক্ষে ভোট দিলেও, স্প্রাউট তা নাকচ করে দেন।
হার্বোলজি বিদ্যার খুঁটিনাটি নখদর্পণে থাকায়, তাকে হগওয়ার্টসের হার্বোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তার এই সমূহ জ্ঞান শুধু হার্বোলজির আঙিনায় সীমাবদ্ধ ছিল না, চার্ম ও পোশন তৈরিতে তিনি ছিলেন বিশেষ দক্ষ। যেমন, ফায়ার-ম্যাকিং স্পেল, দ্য ইন্সেন্ডিও ড্যো স্পেল, দ্য লুমোস সোলেম স্পেল, দ্য হার্বিভিকাস চার্ম, দ্য সেভেরিং চার্ম ইত্যাদি। বিষয়টি হার্বোলজিতে তার জ্ঞান পরিধিকে আরও উঁচুতে নিয়ে শান দিয়েছে দক্ষতার কাঁচিতে।
কালো জাদুর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ও দ্বন্দ্বযুদ্ধেও তিনি ছিলেন আরও এক কদম এগিয়ে। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল যখন সেভেরাস স্নেইপের সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন, প্রফেসর স্প্রাউটই তখন স্নেইপকে হগওয়ার্টস থেকে তাড়িয়ে দিতে ম্যাকগোনাগলকে সাহায্য করেছিল। এছাড়াও ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টসে শুভ শক্তির পক্ষে থেকে অশুভ কালিমা দূরীকরণে তার ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। গ্রিফিন্ডরের শিক্ষার্থী নেভিল লংবটম হার্বোলজি বিভাগে তার অধীনে কিছুদিন প্রশিক্ষণ নিয়েই নিজেকে পাকাপোক্ত করেছে।
৫. নিমফ্যাডোরা টঙ্কস
প্রতিভার রঙে জাদু জগতের ভুবন রাঙানো রঙিন-চুলো টঙ্কসের সাথে পটারহেডরা বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সের অনুগত এই জাদুকর, অরোর হিসেবে তার কর্তব্য পালন করেছেন অসংখ্যবার। ব্রিটিশ এ হাফ-ব্লাড জাদুকর ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে হগওয়ার্টসে ভর্তি হলে সর্টিং হ্যাট তাকে হাউজ হাফলপাফের জন্য নির্বাচিত করে। তিনি ছিলেন হাউজ গ্রিফিন্ডরের চার্লি উইজলির ব্যাচমেট। ১৯৯১ সালে হগওয়ার্টস থেকে গ্রাজুয়েশনের পর জাদু মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন তিনি। নিজেকে দক্ষ একজন অরোরে পরিণত করতে, জাদু জগতের অন্যতম সেরা অরোর ম্যাড-আই মুডির অধীনে থেকে, সকল গুরুত্বপূর্ণ জাদু কৌশল আয়ত্তের মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে যান এক অনন্য উচ্চতায়।
১৯৯৫ সালে অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সে যোগ দেবার পর তিনি মন্ত্রণালয়ে গোয়েন্দার মতো গুরুদায়িত্ব পালন করেন। জাদু জগতের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাকে কঠিন ঝুঁকি নিয়ে, জাদু মন্ত্রণালয় ও অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্স- দু’খানেই সব্যসাচীর মতো কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে। রহস্য বিভাগের ভবিষ্যদ্বাণীর সুরক্ষা দান, অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করার পাশাপাশি, মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাফাস স্ক্রিমগেউরের চোখ ফাঁকি দিয়েও সুকৌশলে অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি ছিলেন একজন মেটামরফম্যাগাস, যিনি পলিজুস পোশান, বা মন্ত্র ছাড়াই তৎক্ষণাৎ ইচ্ছানুযায়ী নিজের রূপ বদল করতে পারতেন। জাদু জগতে সেটা মোটেও ছেলেখেলা নয়। এটা করতে জাদুবিদ্যায় থাকা লাগে গভীর জ্ঞান, নিয়ন্ত্রণ ও তুখোড় দক্ষতা।
দ্বন্দ্বযুদ্ধে দোর্দণ্ড ক্ষমতা অর্জন করা এই অরোর রহস্য বিভাগ, অ্যাস্ট্রোনমি টাওয়ার, সেভেন পটারের যুদ্ধ, এবং ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টসে বহু ডেথ ইটারকে ধরাশায়ী করেছেন। এসব দক্ষতার পাশাপাশি মন্ত্রবিদ্যা, কালো জাদুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, হার্বোলজি, পোশন, ব্রুমস্টিক ফ্লাইং ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও টঙ্কসের ছিল পরিপূর্ণ দখল। স্কোরিং চার্ম, স্টানিং স্পেল, শিল্ড চার্মের ব্যবহার তার কাছে ছিল পান্তাভাত। তিনি প্যাট্রোনাস কাস্টের ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন হগওয়ার্টসে চতুর্থ বর্ষে থাকাকালীনই। তিনি ছিলেন আরেক বিখ্যাত জাদুকর রেমাস লুপিনের সহধর্মিণী। জাদু জগতের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে দু’জনই শহিদের কাতারে শামিল হয়ে চিরতরে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন।
৬. গ্রোগ্যান স্টাম্প
জাদু মন্ত্রণালয়ের অন্যতম জনপ্রিয় এক জাদুকর গ্রোগ্যান স্টাম্প ১৮১১-১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জাদুমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে হগওয়ার্টসে ভর্তির পর তিনি হাউজ হাফলপাফের শিক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। হগওয়ার্টস থেকে বের হবার হয়ে ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে, ৪১ বছর বয়সে তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগদান করার পর মন্ত্রণালয়ের প্রভূত উন্নতি সাধন করেন তিনি। ডিপার্টমেন্ট ফর দ্য রেগুলেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অভ ম্যাজিক্যাল ক্রিয়েচার এর বিয়িং ডিভিশন, বিস্ট ডিভিশন ও স্পিরিট ডিভিশন ছিল তার নিজস্ব সংস্থাপন। খেলাধুলার প্রতি প্রবল টান থাকায়, তিনি ডিপার্টমেন্ট অভ ম্যাজিক্যাল গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস প্রতিষ্ঠা করেন। হাফলপাফের কিংবদন্তি এই জাদুকর ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে জোসেফিনা ফ্লিন্টের উপর মন্ত্রণালয়ের ভার ন্যস্ত করে মন্ত্রিত্বের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
৭. আর্টেমিসিয়া লাফকিন
জাদু জগতে হাউজ হাফলপাফের জাদুকর আর্টেমিসিয়া লাফকিন এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। লাফকিনই ব্রিটেন জাদু ইতিহাসে প্রথম নারী জাদুকর, যিনি জাদুমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন, যা তাকে নিয়ে গিয়েছিল খ্যাতির চূড়ায়। এ পদে তিনি আসীন হয়েছেন একাধিকবার। তিনি হগওয়ার্টসে লেখাপড়া করেছেন ১৭৬৫-১৭৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। ১৭৯৮ সালে তিনি ব্রিটিশ জাদু মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন এবং সেখানে ১৩ বছর পর্যন্ত নিজের দায়িত্ব পালন করে যান। সেসময় তিনি ব্রিটেনে একটি কুইডিচ বিশ্বকাপ সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হন। ১৮১১ সালে হাফলপাফের আরেক শিক্ষার্থী গ্রোগ্যান স্টাম্প তার পর ওই আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
৮. ব্রিজেট ওয়েনলক
অ্যারিথম্যান্সিতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ব্রিজেট ওয়েনলককে জাদু দুনিয়ায় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। অ্যারিথম্যান্সি হলো একপ্রকার জাদুকরী গাণিতিক বিদ্যা, যেখানে সংখ্যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ গণনা করা হয়। হগওয়ার্টসে তৃতীয় বর্ষে ওঠার পর সে বিষয়টা ঐচ্ছিক হিসেবে রাখা হয়। বিষয়টা অনেক গাণিতিক জটিলতায় পরিপূর্ণ হলেও গ্রিফিন্ডরের হারমায়োনি গ্রেঞ্জার এটা অনেক পছন্দ করত। ত্রয়োদশ শতাব্দীর বিখ্যাত এই ব্রিটিশ জাদুকরই প্রথম জাদু জগতে ‘সাত’ সংখ্যাটার মাহাত্ম্য সবার সামনে তুলে ধরেন।
নিজের তৈরি করা সকল তত্ত্ব সুরক্ষিত রাখার জন্য তিনি তা অদৃশ্য কালি দিয়ে লিখে রেখেছিলেন। মন্ত্রে বিশেষ দক্ষতা থাকায়, তিনি আবার রিভিলিং চার্ম দিয়ে তা দৃশ্যমানও করে দিতে পারতেন। ৮৩ বছর বয়সে ১২৮৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহীয়সী এই নারী। তার স্মৃতির স্মরণে তার অ্যারিথম্যান্সির সাফল্য চকলেট ফ্রগ কার্ডে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। হগওয়ার্টস দুর্গের ৬ষ্ঠ-ফ্লোর করিডোরে তার একটি পোর্ট্রেটও ঝোলানো আছে।
৯. নিউট স্ক্যামান্ডার
বিচিত্র জাদুকরী প্রাণীসমূহ জাদু জগতের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে বিস্তৃত, আর সেই বিস্তৃত অংশের একচ্ছত্র অধিপতি হলেন নিউট স্ক্যামান্ডার। বিরল, দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদেরকে সংরক্ষণে রাখার জন্য তিনি জাদু বিশ্বে সমাদৃত। ১৮৯৭ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি, ইংল্যান্ডের স্ক্যামান্ডার পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন এই বিখ্যাত ম্যাজিজ্যুলোজিস্ট। তার বড় ভাই হলেন আরেক বিখ্যাত জাদুকর থিসেয়াস স্ক্যামান্ডার।
১৯০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর হগওয়ার্টসে ভর্তি হবার পর তাকে হাউজ হাফলপাফের জন্য নির্বাচিত করা হয়। প্রথম দিকে তার সখ্যতা গড়ে উঠে হাউজ স্লিদারিনের লেটা লেস্ট্রেঞ্জের সাথে। গ্রাজুয়েশনের পর মন্ত্রণালয় তাকে সেখানে যোগ দেবার কথা বললেও, তিনি তাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। তার একমাত্র ইচ্ছা ছিল দুনিয়া ঘুরে বিচিত্র লুপ্তপ্রায় প্রাণী সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা। তিনি পাঁচ মহাদেশের প্রায় একশোটির মতো দেশ ভ্রমণ করে এই মনোবাসনা পূরণ করেছেন। এসব প্রাণীর উপর গবেষণা করেই তিনি লিখেছিলেন, ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস অ্যান্ড হোয়্যার টু ফাইন্ড দেম’ নামক কালজয়ী বই। পরবর্তী সময়ে এটি হগওয়ার্টসের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবই হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। নওজোয়ান অ্যালবাস ডাম্বলডোর তখন নিউট স্ক্যামান্ডারকে খুব পছন্দ করতেন।
হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজি পুরোটা যেমন হ্যারি পটারকে কেন্দ্র করে লেখা, তেমন এর প্রিক্যুয়েল ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস নিউট স্ক্যামান্ডারকে কেন্দ্র করে বর্ণনা করা হয়েছে। মেঘপিশাচের পিছু নিতে গিয়ে তিনি এক চরম সত্য উদঘাটন করে ফেলেন, যা ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস সিক্যুয়েলের প্রথম দুই মুভিতে কিছুটা ধারণা দেওয়া হয়েছে। তিনি ছিলেন গেলার্ট গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের সামসময়িক। ক্রিডেন্সকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের মতো শক্তিশালী জাদুকরকেও ধরাশায়ী করতে পেরেছেন।
রেভেলিও চার্ম, আনডিটেক্টেবল এক্সটেনশন চার্ম, মেমোরি চার্ম, শেইল্ড চার্ম, জেনারেল কাউন্টার স্পেল, অ্যাটমোস্ফেরিক চার্ম ইত্যাদি চার্মের ব্যবহারেই স্পষ্ট হয়ে যায়, তিনি মন্ত্র ব্যবহারে কতটা সুদক্ষ ছিলেন। এছাড়াও হিলিং ম্যাজিক, নন-ভার্বাল ম্যাজিক, কালো জাদুর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা, হার্বোলজি, দ্বন্দ্বযুদ্ধ, পোশন প্রত্যেকটা ভাগেই তিনি তার প্রতিভার সু-ব্যবহার করে দেখিয়েছেন। সেজন্য তিনি অমর হয়ে আছেন জাদু জগতের নক্ষত্র পঞ্জিকায়।
১০. হেলগা হাফলপাফ
হেলগা হাফলপাফ হচ্ছেন হগওয়ার্টস স্কুল অভ উইচক্র্যাফট অ্যান্ড উইজার্ড্রির চারজন নির্মাতার মধ্যে একজন এবং হাফলপাফ হাউজের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নিজ হাউজে শিক্ষার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন কোনো অনুরক্তি বা পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই। হাউজ হাফলপাফ সবসময় কঠোর পরিশ্রম, সহনশীলতা, আনুগত্য এবং ন্যায়পরায়ণতাকে মূল্যায়ন করে এসেছে। মানুষ হিসেবে তিনি বেশ দরদী ও মমতাময়ীও ছিলেন। হাউজ-এল্ফদের উপর তাদের জাদুকর গৃহপরিচারিকারা নির্মম নির্যাতন চালাত। তিনি সেখান থেকে তাদেরকে মুক্ত করে এনে হগওয়ার্টসের রান্নাঘরে স্থান দিয়েছিলেন।
সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করার গোপন কিছু মন্ত্র জানা ছিল হেলগার। তিনি তৎকালীন হগওয়ার্টসের ভোজ-উৎসবে সেগুলোর সদ্ব্যবহার করে, খাদ্যের স্বাদ বাড়িয়েছেন কয়েকগুণ, খাদ্যকে করেছেন লোভনীয় ও মুখরোচক। জাদুর সাহায্য নিয়ে হেলগা একটি বিশেষ জাদুকরী পেয়ালা তৈরি করেছিলেন, যা তার বংশধর হেপজিবাহ স্মিথের কাছে সংরক্ষিত ছিল। টম রিডল নামক চতুর এক শিক্ষার্থী সেই পেয়ালাটি চুরি করে হরক্রাক্সে রূপান্তরিত করে ফেলে। হেলগা হাফলপাফ ছিলেন তার সময়ের শ্রেষ্ঠ জাদুকরদের মধ্যে একজন। এমনকি জাদু জগতের সর্বকালের সেরা জাদুকরদের তালিকা তৈরি করলে তার নাম সেখানে উঠে আসবে অনায়াসেই।