২০১০ সালে এক ওরাংওটাং ও তার বাচ্চা মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত এক গ্রামে ঢুকে ভূমিধসের কবলে পড়ে। তারা যে বনে থাকত, তার গাছপালা কেটে পাম তেলের চাষাবাদ শুরু হয়েছিল। পরে জানা যায়, এই তেল ব্যবহার করা হচ্ছে পণ্য প্যাকেজিংয়ের প্রায় অর্ধেক কাজেই। কিন্তু এজন্য ওরাংওটাংয়ের মতো প্রাণীদের বিলুপ্ত করে দেওয়ার মতো চওড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ই-কমার্স ব্যবসার অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটেছে, বেড়েছে পণ্য প্যাকেজিংয়ের হারও। পরিবেশবান্ধব ই-কমার্সের গুরুত্ব তাই মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতি ও প্রাণী রক্ষার তাগিদ। সে জায়গায় ই-কমার্সের মতো ব্যবসা কতটা ভূমিকা রাখছে?
ই-কমার্সের প্রাথমিক পাঠ
ইলেকট্রনিক কমার্স (ই-কমার্স) বলতে এমন একটি ব্যবসায়িক মডেলকে বোঝানো হয় যা কোম্পানি এবং ব্যক্তির ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও পরিষেবা কেনা ও বিক্রির সুযোগ করে দেয়। ই-কমার্স ব্যবসায়ী এবং ভোক্তার মধ্যকার চারটি প্রধান বাজার বিভাগ নিয়ে কাজ করে থাকে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতার যুগে এখন যে কেউ কম্পিউটার, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন এবং অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে এই ব্যবসা ঘরে বসেই পরিচালনা করতে পারে। বই, সঙ্গীত, বিমানের টিকিট এবং শেয়ার বাজার বিনিয়োগ ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মতো আর্থিক পরিষেবাগুলোসহ ই-কমার্স লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি কল্পনাযোগ্য পণ্য এবং পরিষেবা পাওয়া সম্ভব। ভোক্তা কোনো পণ্য অর্ডার করলে একদিনেরও কম সময়ের মধ্যে সেটি তার হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। ঘরে বসে পণ্য পেয়ে যাওয়ার ফলে ভোক্তার সময় বেঁচে যাচ্ছে বহুগুণে। ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় পণ্যের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন এড়ানোর চেষ্টায় ভোক্তা ও বিক্রেতার মধ্যে বাড়ছে আস্থার সম্পর্কও।
ই-কমার্স মানুষকে পণ্যের কেনাবেচায় এবং পরিষেবাগুলো ব্যবহার করার উপায় পরিবর্তন করেছে। পণ্য অর্ডার করার জন্য আরও বেশি সংখ্যক লোক তাদের কম্পিউটার এবং স্মার্ট ডিভাইসের দিকে ঝুঁকছে। সারাবিশ্বেই গেল বেশ কয়েক বছরে ই-কমার্স ব্যবসা চোখে পড়ার মতো উন্নতি দেখিয়েছে। অ্যামাজন এবং আলিবাবার মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো ই-কমার্সে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথাগত খুচরা বিক্রের ব্যবসাপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করেছে। খুচরা পর্যায়ে ক্রেতারা এখন নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ই-কমার্স সুবিধা রাখছেন।
ই-কমার্সের বাজার ঠিক কত বড়?
ই-কমার্স ব্যবসাকে বলা হয়ে থাকে সবচেয়ে সহজ এবং কম সময়ে আয়ের পথ। আপনার আজকে ইচ্ছা হলো আপনি কিছু পণ্য বিক্রি করবেন। ব্যস, পাইকারী বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়ে এলেন পণ্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পণ্য বিষয়ক গ্রুপ বা পেজ তৈরি করলেন, করলেন পণ্যের প্রচার। শুরু হলো বেচাকেনা। আপনি বনে গেলেন ই-কমার্স ব্যবসায়ী। আপনার ব্যবসার উন্নতি হতে থাকলে হয়তো একটি ওয়েবসাইট তৈরির ভাবনা মাথায় আসবে আপনার। ব্যাপারটা এমনই দাঁড়িয়ে গেছে এখন।
কিছু পরিসংখ্যানে চোখ বোলানো যাক। ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী খুচরা ই-কমার্স বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সংখ্যা আগামী চার বছরে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৭.৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী যখন মহামারীর কারণে শহর থেকে গ্রামে লডডাউনে বন্দি ছিল মানুষ, তখন সবচেয়ে বড় লাফটা এসেছে পরিসংখ্যানে। আগের বছরের তুলনায় সেই বছর ৮৯৭ বিলিয়ন ডলার বেচাকেনা বেড়েছে ই-কমার্স ব্যবসায়। গত বছর অনেক ভোক্তাকেই মহামারীকালে অনলাইনে পোশাক কেনায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে দেখা গিয়েছিল। পোশাক এবং আনুষাঙ্গিক সামগ্রির জন্য ই-কমার্সে বিক্রয় বৃদ্ধিও ছিল অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি।
ক্যাটাগরি বিবেচনায় পোশাক সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বিভাগ হলেও, ভোক্তারা এখনও বিনোদন উপকরণ কেনাতেও বেশ আগ্রহী। দুটি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভাগ, যেগুলোর চাহিদা সবসময়ই উর্ধ্বগামী, তার মধ্যে রয়েছে বই, সঙ্গীত ও ভিডিও (যেখানে ই-কমার্স বিক্রয় মোট খুচরা বিক্রয়ের ৬৯.১ শতাংশ হবে), এবং কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী (মোট খুচরা বিক্রয়ের ৫৩.২ শতাংশ)।
ই-কমার্সে পরিবেশ ভাবনা
ই-কমার্স ব্যবসায় ঘরে বসে ক্রেতা পণ্য অর্ডার করেন। এতে পরিবহনব্যবস্থার বদৌলতে পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কারণ, পরিবহন এককভাবে পরিবেশে বিশাল হারে কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। প্রত্যেক ক্রেতার জন্য যাতায়াতে পরিবহন ব্যবহার হলে পরিবেশের উপর বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। একইভাবে, বিক্রয়কর্মীরাও বাড়িতে বসেই অর্ডার নিচ্ছেন, অনলাইনে যোগাযোগ রাখছেন ক্রেতাদের সাথে। এতে তাদেরও যাতায়াত ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। ফলে কমছে কার্বন ফুটপ্রিন্ট। ই-কমার্সে ব্যবসায়িক হিসাবনিকাশ অনলাইনে করা সম্ভব হওয়ায় কাগজবিহীন এক সমাজ প্রতিষ্ঠাতেও এটি রাখছে ভূমিকা। ফলে কাগজ তৈরির জন্য গাছের উপর চাপ কমছে। বন উজাড়ের ঘটনাও কমে আসছে।
ঘরে বসে পণ্য পেয়ে যাওয়ার সুবিধায় অসংখ্য মানুষ এখন ই-কমার্সে আস্থা বাড়াচ্ছেন। ব্যবসায়িক দিক বিবেচনায় নিঃসন্দেহে এটি একটি ইতিবাচক প্রভাবই বয়ে আনছে। কিন্তু পরিবেশের কথা বিবেচনা করলে প্রভাব কি ইতিবাচকই থাকছে? ই-কমার্স ব্যবসায় একটি পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে প্যাকেজিং, শিপিং, পরিবহন এবং ভোক্তার দরজায় পৌঁছে দেওয়া অবধি নানা ধাপ পেরোতে হয়। প্রত্যেকটি ধাপেই পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। গত কয়েক বছর ধরে কলকারখানার দ্বারা নদী, বায়ু ও জমি দূষিত হওয়ার গল্প সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন পণ্য তৈরির কারখানা থেকে কার্বন নিঃসরণ বৈশ্বিক উষ্ণায়নে অবদান রাখছে।
ই-কমার্সের নেতিবাচক প্রভাবে শিপিং এবং প্যাকেজিংও অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পরিবেশের জন্য। প্রতি বছর প্যাকেজিংয়ের জন্য ব্যবহৃত কার্ডবোর্ডের মোট পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি গাছের সমান। এর মধ্যে অবশ্য প্লাস্টিক, বাবল র্যাপ, এবং টেপের মতো অন্যান্য উপকরণ অন্তর্ভুক্ত নয়, এর সবগুলোই নিজস্ব বর্জ্য তৈরি করে এবং কখনো পুনর্ব্যবহৃত হতে দেখা যায় না বা করা যায় না। ২০১৯ সালে শুধুমাত্র অ্যামাজনই পণ্য সরবরাহের কাজে প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ে ৪৬ কোটি ৫০ লক্ষ পাউন্ড বর্জ্য তৈরি করেছে। এই প্যাকেজগুলো পরিবহনেরও পরিবেশগত একটি বড় প্রভাব রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ধরনের প্যাকেজিংয়ে পণ্য পরিবহনের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি পাবে। আবার দ্রুততার সাথে ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে গিয়ে বেড়ে যাচ্ছে জ্বালানীর ব্যবহার। এতে প্রভাব পড়ছে সীমিত জীবাশ্ম জ্বালানির উপর। এছাড়া পণ্য পছন্দ না হওয়ায় অনেক ক্রেতাই পণ্য ফিরিয়ে দেন বা বদল করার জন্য পাঠান। এতে পুনরায় প্যাকেজিং এবং পরিবহনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পরিবেশের উপর।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য ডায়নামিক ওয়েবসাইট চালু রাখা হয়। বড় ওয়েবসাইট চালানোর পরিবেশগত প্রভাব আছে। সারা বিশ্বে ওয়েবপেজ লোড করার জন্য শক্তি এবং ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন, উভয়ই কার্বন নির্গমন তৈরি করে। হাজার হাজার ওয়েবসাইট সমর্থন করে এমন সার্ভারে পূর্ণ বিশাল ডাটা সেন্টারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শক্তি ব্যবহার করা হয়, যার বেশিরভাগ এখনও জীবাশ্ম জ্বালানীতে পরিচালিত হয়।
ই-কমার্সের পরিবেশগত প্রভাবকে আগে এত বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হতো না। কিন্তু এখন তা হচ্ছে, এবং ভোক্তারাও তাদের দায়বদ্ধতার জায়গায় নিজেদের সক্রিয় করছেন। পরিবেশগত প্রভাবকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না এমন ব্র্যান্ডগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
ই-কমার্স ব্যবসা কি পরিবেশবান্ধব করা সম্ভব?
এককথায় জানতে চাইলে বলা যায়- অবশ্যই সম্ভব। যদি আপনি আপনার গ্রাহকদের ধরে রাখতে চান, নতুন ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে চান, এবং আমাদের গ্রহ বাঁচিয়ে রাখার মিশনে অবদান রাখতে চান, তাহলে আপনার ব্যবসায়িক ভাবনা আরও টেকসই করে তুলতে হবে। পরিবেশগত দিক বিবেচনায় ই-কমার্সের কোনো অন্ধকার দিক থাকবে না যদি বিক্রেতা হিসেবে আপনি সচেতন হন। প্রকৃত প্রচেষ্টা এবং আপনার গ্রাহকদের সাথে স্বচ্ছ সম্পর্ক তৈরি ই-কমার্সকে অনেক বেশি ইতিবাচক এবং পরিবেশবান্ধব শিল্পে পরিণত করে তোলা এমন কোনো কঠিন ব্যাপার নয়।
ই-কমার্স চেইন জুড়ে ছোট-বড় পরিবর্তন করা ই-কমার্সের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনার পণ্য প্যাকেজিংকে আরও টেকসই বিকল্পে রূপান্তরের মাধ্যমে, পরিবেশবান্ধব শিপিং পদ্ধতি ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে প্যাকেজিং ও শিপিংয়ের পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। টেকসই উপকরণ থেকে দীর্ঘস্থায়ী পণ্য তৈরি করা, পুনঃব্যবহারযোগ্য শক্তির ব্যবহার করা বা কম শক্তি ব্যবহার করার জন্য আপনার ওয়েবসাইট অপ্টিমাইজ করাও পরিবেশের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে।
এই সমস্ত পরিবর্তনের বাস্তবায়ন একদিনে অসম্ভব। একটি পরিবেশগত বন্ধুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ড হওয়ার মাধ্যমে আপনি অন্যদের কাছেও আলাদা গুরুত্ব পাবেন। আপনি আপনার ব্যবসাকে আরও টেকসই করতে পারেন এমন বিভিন্ন উপায় রয়েছে, এবং আপনি যে পরিবর্তনই বাস্তবায়ন করতে পারেন না কেন তা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে আপনার ব্যবসাকে।
পরিবেশবান্ধব ভাবনায় পাঁচ পরামর্শ
আপনি যদি উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন, আপনার যদি অনলাইনে পণ্য কেনা-বেচার ব্যবসা থেকে থাকে, তাহলে আপনার কাছে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসাকে পরিবেশবান্ধব করে তোলাকে উটকো ঝামেলা মনে হতে পারে। আপনি ভাবতে পারেন, অর্থ-শ্রম-সময় সব দিয়ে যদি উন্নতি না হয় কিংবা উল্টো অবনতির দিকে যায় আয়? কিন্তু টেকসই ই-কমার্সের ভাবনায় লেখার এই অংশে বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই আপনাদের, যা নিঃসন্দেহে আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
১. টেকসই করে তুলুন ব্র্যান্ড ইমেজ
শুরুটা করতে পারেন আপনার ব্র্যান্ডকে টেকসই উদ্যোগের সাথে সংযুক্ত করে। এটি আপনাকে এগিয়ে রাখবে প্রতিযোগীদের কাছ থেকে। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের মতামত নিন। ব্যবসা টেকসই করতে তারা কেমন উদ্যোগ চায় আপনার কাছ থেকে সেটি জানার চেষ্টা করুন। গ্রাহকের মতামতকে গুরুত্ব দিন। তার ভিত্তিতে কিছু ক্যাম্পেইনও করতে পারেন। ফ্রান্সভিত্তিক স্কিনকেয়ার পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইয়োন কা প্যারিস’ এক্ষেত্রে হতে পারে উদাহরণ। প্রতিষ্ঠানটি একটি প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলে প্লাস্টিক বর্জ্যের ভয়াবহতার ব্যাপারে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করেছে। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের টেকসই পছন্দের দিকে ধাবিত করার প্রয়াসে প্রকৃতপক্ষে নিজেরাই লাভবান হচ্ছে।
২. শুরু হোক ঘর থেকেই
আপনার ব্যবসা যত বড় হবে, এতে তত মানুষ সংযুক্ত হতে থাকবে। নিয়মিত কাজের পরিবেশে পরিবর্তন রাখুন। টেকসই পণ্য তৈরি এবং প্যাকেজিং নিশ্চিতে কাজের পরিবেশ রাখতে পারে ইতিবাচক ভূমিকা। টেকসই ভাবনার প্রতিফলনের জন্য কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণও জরুরি। লস অ্যাঞ্জেলসভিত্তিক আরেক স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড ‘আরকোনা’ তাদের পণ্য ব্যবস্থাপনায় পুনর্ব্যবহার তত্ত্ব প্রয়োগ করে। তাদের স্টুডিওতে কর্মীদের শিপিং বক্স এবং প্যাকেজিং কাজের উপকরণ ফেলে দেওয়ার আগে পুনর্ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়।
৩. পণ্যের উপকরণ নিয়ে ভাবুন
ভোক্তারা ক্রমেই সতর্ক হচ্ছে পণ্যের উপকরণ ও প্যাকেজিংয়ের ব্যাপারে। তাহলে ব্যবসায়ী হিসেবে আপনি কেন বসে থাকবেন? পণ্য কিংবা পণ্যের প্যাকেজিংয়ের উপকরণগুলো টেকসই কিনা সেটির খোঁজ রাখুন, করুন তদারকি। এই জায়গায় খুব একটা মাথা ঘামাতে হয় না ঠিক, কিন্তু এক আধটু পরিবর্তনই দীর্ঘ মেয়াদে আপনার ব্যবসার জন্য মঙ্গলজনক হয়ে উঠতে পারে। এই লেখা শুরু করেছিলাম ওরাংওটাংয়ের কাহিনী দিয়ে, মনে আছে নিশ্চয়ই? ওরাংওটাংয়ের সেই কাহিনী বড় পরিবর্তন এনেছে সাপ্লাই চেইনে। গেল বছর সবচেয়ে বড় পাম তেল সরবরাহকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস করে তারা পাম তেল চাষ করবেন না। কিন্তু প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান অবধি এর কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করতে হবে আরও বহুদিন। আপনাদের একটি প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ দিতে পারি। আমেরিকান প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাসেনশিয়াল ডিপো’ পণ্য সংশ্লিষ্ট সকল কাজে নিজেদের দায়বদ্ধতার ব্যাপারকে গুরুত্ব দিয়ে পাম তেলের ব্যবহার বন্ধ করেছে তাদের প্যাকেজিংয়ে। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের সামনে পণ্য বেচাকেনায় চারটি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছে এখন, কার্বন ফুটপ্রিন্ট, প্রাণী বন্ধুত্ব, জৈব সখ্যতা, এবং ন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন। তারা মনে করে, এই কর্মসূচীর মাধ্যমে গ্রাহকদের একটি পণ্যের ব্যবহারে সামাজিক ও পরিবেশগত দিকগুলো তুলে ধরতে সক্ষম হবে।
৪. গ্রাহক পর্যায়ে জাগান সচেতনতা
আপনি যদি টেকসই পণ্য বিক্রি করে থাকেন, সেক্ষেত্রে পুরষ্কার, ডিসকাউন্ট, পয়েন্ট বা ছোট্ট উপদেশের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে টেকসই পণ্যের প্রভাবের বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন। যদি আপনি টেকসই পণ্য বিক্রি না করে থাকেন, তাহলে টেকসই ব্যবহার, পুনর্ব্যবহার এবং টেকসই ডেলিভারি ব্যবস্থা সম্পর্কে গ্রাহকদের জানাতে আপনি আপনার প্লাটফর্ম কাজে লাগাতে পারেন। আমেরিকান গৃহস্থালী পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ‘ওল্ড হোয়েলিং কোম্পানি’ তাদের সিংহভাগ পণ্যই জৈব অথবা নিরামিষাশী উপকরণ ব্যবহার করছে। এতে পরিবেশের মতো তারা যেমন দায়বদ্ধ থাকতে পারছে, তেমনি ভোক্তার কাছেও সচেতনতার বার্তা পৌঁছাতে পারছে।
৫. যুক্ত হোন সামাজিক কাজে
পরিবেশ ও সমাজের জন্য ইতিবাচক প্রভাব রাখতে আপনি চাইলেই টেকসই অনুশীলন বিস্তৃত করতে পারেন আপনার কাজের ক্ষেত্রের বাইরেও। এই অনুশীলন শুরু করা যায় উৎপাদনের শেকড় থেকেই, যেমনটা করেছে ‘থ্রাইভ ফার্মার’। কফি ও চা পাতা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানটি তাদের কফি ও চা পাতা সরবরাহকারী কৃষকদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের আয়ের একটা অংশ তাদের দিয়ে অংশীদার করেছে ব্যবসায়, চেষ্টা করে যাচ্ছে কৃষকদের চাষাবাদ এবং জীবনমান উন্নয়নে।