তার নাম মোঃ রোকনুজ্জামান। বয়স ৪০, বাড়ি নাটোর। ২০০৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে। এরপর ২০১০ সালে তিনি লাইব্রেরিয়ান পদে যোগ দেন বগুড়া উডবার্ণ সরকারি গণগ্রন্থাগারে।
লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি লক্ষ্য করেন, তরুণ প্রজন্মের অনেকেই, বিশেষত পেশায় যারা শিক্ষার্থী, তারা যেকোনো কারণেই হোক একাকীত্বে ভুগছেন। মধ্যবয়সী অনেককেও অসহায়ভাবে অস্থির আচরণ করতে দেখেন। তার মনে হয়, এই মানুষগুলোর অসুস্থ মন একটি জায়গায় স্থির হয়ে আছে। কিছুতেই এ চরম দুরাবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না তারা।
তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অধ্যায়ন এবং পরবর্তীতে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজের সুবাদে রোকনুজ্জামান এই সমস্যার একটি বিজ্ঞানসম্মত সমাধানের উপায় জানেন। তাই তিনি অস্থিরমনা কয়েকজনকে চিহ্নিত করে তাদের সাথে কথা বলেন। খুব মনোযোগ দিয়ে শোনেন তাদের কী সমস্যা। তার কাউন্সেলিংয়ে তারা সকলেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
একপর্যায়ে রোকনুজ্জামান প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাদের মনের অবস্থা ও দুর্দশা অনুযায়ী কিছু বই পড়ার পরামর্শ দেন। লাইব্রেরির সদস্য যারা, তাদেরকে তিনি নিজেই বেছে বেছে পাঁচ থেকে সাত-আটটি বই বের করে দেন, এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পড়া শেষ করে সেগুলো ফেরত দিলে বলেন। বইগুলো পড়া শেষ হলে আবার তাদের কাউন্সেলিং করেন তিনি। দেখতে পান, ৮০ শতাংশ ব্যক্তিই বইগুলো পড়ার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরেছেন।
প্রিয় পাঠক, খেয়াল করুন রোকনুজ্জামান এখানে আসলে কী করেছেন। তিনি মানসিক সমস্যায় আক্রান্তদের সাথে একান্তে কথা বলেছেন, তাদের সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন, তাদের সমস্যার মূল জায়গাটা ধরিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ তাদের কাউন্সেলিং করেছেন। এরপর তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির নির্দিষ্ট সমস্যা অনুযায়ী বই পড়তে দিয়েছেন। বইগুলো পড়ে অধিকাংশ ব্যক্তির মানসিক সমস্যার নিরাময়ও হয়েছে।
এই গোটা প্রক্রিয়াটির নাম হলো বিবলিওথেরাপি। আর রোকনুজ্জামান নিজেকে দাবি করেন দেশের সর্বপ্রথম বিবলিওথেরাপিস্ট হিসেবে। শুরুতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজটি শুরু করলেও, বর্তমানে নিজের লাইব্রেরি থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই কাজটি করছেন তিনি। বগুড়া সরকারি গণগ্রন্থাগারের ওয়েবসাইটে ঢুকলে দেখতে পাবেন, সেখানে সেবার তালিকায় সর্বশেষে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পুস্তক চিকিৎসা বা বিবলিওথেরাপি।
বিবলিওথেরাপি কথাটির প্রথম প্রচলন ঘটে ১৯১৬ সালে, স্যামুয়েল ক্রোদার্সের মাধ্যমে। কথাটি মূলত দুটি গ্রিক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। ‘বিবলিওন’ অর্থ বই, এবং ‘থেরাপিয়া’ অর্থ নিরাময়।
ক্রোদার্স বিবলিওথেরাপি কথাটির উল্লেখ করেছিলেন অ্যাটলান্টিক মান্থলিতে প্রকাশিত ‘আ লিটারারি ক্লিনিক’ শীর্ষক একটি আর্টিকেলে। সেখানে তিনি ব্যাগস্টার নামক এক উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তির কথা তুলে ধরেন, যিনি একটি ‘বিবলিওথেরাপি ইনস্টিটিউট’ চালাতেন। একটি চার্চের বেজমেন্টে বসে কাজটি করতেন ব্যাগস্টার। মানুষজন এসে তার কাছে তাদের দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যার কথা তুলে ধরত, যা তাদেরকে মানসিকভাবে পীড়া দিচ্ছে। সব শোনার পর ব্যাগস্টার তাদেরকে ওষুধ হিসেবে কিছু বই পড়ার উপদেশ দিতেন। তিনি বলতেন,
“বিবলিওথেরাপি হলো… একটি নতুন বিজ্ঞান। একটি বই হতে পারে উদ্দীপক কিংবা প্রশান্তিদায়ক কিংবা যন্ত্রণাদায়ক কিংবা নিদ্রাকর্ষক। মূল বিষয় হলো, এটি আপনার উপর কোনো না কোনো প্রভাব অবশ্যই ফেলবে, এবং আপনি উপলব্ধি করবেন সেটি কী।”
তবে নিরাময়ের জন্য পড়ার ধারণাটি নতুন কিছু নয়। মিশরের রাজা দ্বিতীয় রামসেস তার সংগ্রহের বইগুলো রাখার জন্য ব্যবহার করতেন একটি বিশেষ প্রকোষ্ঠ। সেই প্রকোষ্ঠের প্রবেশদ্বারের উপর লেখা ছিল, ‘আত্মা নিরাময়ের ঘর’। সিগমুন্ড ফ্রয়েডও উনবিংশ শতকের শেষ দিকে তার সাইকোঅ্যানালাইসিসে অন্তর্ভুক্তি ঘটিয়েছিলেন বইয়ের।
মেরিয়াম-ওয়েবস্টার ডিকশনারিতে বিবলিওথেরাপিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে,
“পাঠ্যোপযোগী কোনো জিনিসের ব্যবহার, ব্যক্তিগত সমস্যা দূরীকণ কিংবা সাইকিয়াট্রিক থেরাপিতে।”
বাংলা সাহিত্যেও বিবলিওথেরাপি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। এ ব্যাপারে অগ্রগণ্য চিত্তরঞ্জন বন্দোপাধ্যায়। বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদ হতে প্রকাশিত সাময়িকপত্র ‘গ্রন্থাগার’ এর কার্তিক, ১৩৭১ সংখ্যায় তিনি রচনা করেন ‘বিবলিওথেরাপি’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ। সেখানে তিনি লেখেন,
“জ্ঞানলাভের জন্য আমরা বই পড়ি, তাই বইয়ের এত মূল্য। জ্ঞান অর্জন ব্যতীত আনন্দ পাবার জন্যও আমরা বই পড়ি, গল্প উপন্যাস কাব্য নাটক প্রভৃতি বিভিন্ন জাতীয় বই পড়ে আনন্দ পাই। সাধারণ গ্রন্থাগারের জনপ্রিয়তা এই শ্রেণীর বই সরবরাহের উপরই নির্ভর করে। সম্প্রতি ইউরোপ আমেরিকায় বইয়ের একটি নতুন ব্যবহার সুপরিকল্পিতভাবে করার চেষ্টা চলছে। এটি হলো বইয়ের সাহায্যে রোগের চিকিৎসা। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখেছেন রোগের প্রকৃতি বিচার করে রোগীকে উপযুক্ত বই পড়তে দিলে বিশেষ উপকার হয়।
“বইয়ের সাহায্যে চিকিৎসাকে বলা হয় ‘বিবলিওথেরাপি’ বা ‘The use of carefully selected books for therapeutic purposes.” মনের সাথে দেহের যে ঘনিষ্ঠ যোগ আছে এ কথা সর্বজনবিদিত। কোনো কারণে মনের ভারসাম্য বিচলিত হলে দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এবং অসুস্থ দেহের প্রভাবেও মন খারাপ হয়। দেহ ও মনের সম্পর্ক একান্তরূপে নিবিড়। কোনো একটি অসুস্থ হলে অন্যটিও সুস্থ থাকতে পারে না। এইজন্য ডাক্তাররা সর্বদা উপদেশ দেন রোগীর মন প্রফুল্ল রাখতে। মনের প্রফুল্লতা দেহের রোগ দ্রুত উপশমে সহায়তা করে।”
১৯৪১ সালে প্রকাশিত হয় ডরল্যান্ড অলঙ্কৃত মেডিকেল ডিকশনারি, যেখানে বিবলিওথেরাপিকে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার একটি অনুষঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৫০ এর দশকে বিবলিওথেরাপির ব্যবহার আরো বৃদ্ধি পায়, যখন ক্যারোলিন শ্রোডস একটি তাত্ত্বিক কাঠামো দাঁড় করান, যার প্রাথমিক অনুমান এই ছিল যে, মানুষ চরমভাবে প্রভাবিত হয় গল্পে পড়া সেসব চরিত্রদের দ্বারা, যাদের সাথে তারা নিজেদের জীবনের সাদৃশ্য খুঁজে পায়।
১৯৬৬ সালে আমেরিকান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন বিবলিওথেরাপির একটি আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা প্রণয়ন করে, এবং ১৯৬৯ সালে গঠিত হয় অ্যাসোসিয়েশন অভ পোয়েট্রি থেরাপি। বিবলিওথেরাপিরই একটি উপশাখা হিসেবে আবির্ভূত হয় পোয়েট্রি থেরাপি।
১৯৭০ এর দশকে লাইব্রেরিয়ান রিয়া রুবিন বিবলিওথেরাপিকে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেন: ডেভেলপমেন্টাল (পড়াশোনার জন্য) এবং থেরাপেটিক (মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য)। ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় তার রচিত Using Bibliotherapy: A Guide to Theory and Practice, যা এ অঙ্গনের ক্রমবিকাশের পথে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এরই সূত্র ধরে ১৯৮৩ সালে গঠিত হয় দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর বিবলিও/পোয়েট্রি থেরাপি।
বর্তমানে মনোচিকিৎসকদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদরাও বিবলিওথেরাপিকে নানাভাবে ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ থেকে শুরু করে লাইব্রেরিয়ান এমনকি বাবা-মায়েরাও সন্তান পালনের উদ্দেশ্যে বিবলিওথেরাপির দীক্ষা নিচ্ছেন। আত্মোন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বিবলিওথেরাপি।
আধুনিক মনোচিকিৎসকরা কীভাবে সাইকোথেরাপির অংশ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন বিবলিওথেরাপিকে? এক্ষেত্রে আমরা অনুসরণ করতে পারি ওয়েক ফরেস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্যাম গ্ল্যাডিংয়ের দৃষ্টান্ত, যিনি বিবলিওগ্রাফিকে আখ্যায়িত করেন একটি বই, একজন কাউন্সেলর এবং একজন রোগীর সমন্বয়ে সৃষ্ঠ একটি শক্তিশালী ত্রিমুখী মিথস্ক্রিয়া হিসেবে।
“কাউন্সেলর ও রোগী মিলে আলোচনা করে রোগীর জীবনের সেই সকল সমস্যা বা উদ্বেগের জায়গাগুলো নিয়ে, যেগুলো তাকে পীড়িত করছে। এরপর কাউন্সেলর রোগীকে একটি বই বা গল্প পড়ার পরামর্শ দেয়।”
গ্ল্যাডিং বলেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন বই বা গল্পটি পড়ে রোগী নিজের জীবনের সাথে মিল খুঁজে পায়, এবং মূল চরিত্রের জীবনের সমস্যাগুলোর সাথে রোগী একাত্ম অনুভব করতে পারে। এরপর কাউন্সেলর ও রোগী আবারো একত্র হয়, এবং তারা কথা বলে কীভাবে বই বা গল্পের মূল চরিত্রটি তার সমস্যাগুলো মোকাবেলা করেছিল, এবং ওই বইয়ে বর্ণিত সমাধানের উপায়গুলো রোগী তার নিজের জীবনেও প্রয়োগ করলে সম্ভাব্য কী কী ঘটনা ঘটতে পারে।
এবার চলুন দেখা যাক, বিবলিওথেরাপি একজন রোগীকে কীভাবে সাহায্য করে।
প্রথমত, বই পড়া রোগীর জন্য বাস্তবতা থেকে পলায়নের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে। রোগী যতই নিজের সমস্যা নিয়ে অতিচিন্তা করে, তার সমস্যার মাত্রা ততই বাড়তে থাকে। কিন্তু সে যখন একটি বই পড়তে শুরু করে, তখন সে নিজ জীবন ছেড়ে অন্য কারো জীবনে প্রবেশ করে, নিজের মস্তিষ্কের অতিচিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে বইয়ের লেখকের চিন্তাভাবনার সাথে যুক্ত হয়। এর ফলে সে কিছু সময়ের জন্য হলেও নিজের বাস্তবতাকে ভুলে থাকতে পারে।
দ্বিতীয়ত, রোগীর পক্ষে সম্ভব হয় নিজের জীবনের সমস্যাগুলোকে অন্য কারো সাথে ঘটতে, কিংবা তৃতীয় পুরুষের জবানিতে বর্ণিত হতে দেখা। এর ফলে রোগীও নিজের আমিত্ব থেকে বেরিয়ে এসে নিরপেক্ষভাবে গোটা বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারে, যা তার দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে।
তৃতীয়ত, বই বা গল্পে যখন রোগী নিজের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সমস্যাগুলোর সমাধান হতে দেখে, তখন তার নিজের মনেও আশার আলো জ্বলে ওঠে। সে বিশ্বাস করতে শুরু করে, বইয়ের চরিত্রটি যদি একই ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে, তাহলে তার নিজের পক্ষেও সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এবং সমস্যা কাটানোর কিছু সম্ভাব্য সমাধান সে বইয়ের পাতাতেই পেয়ে যায়।
চতুর্থত, থেরাপিস্ট একজন রোগীকে অনেক কথাই বলে, কিন্তু সেসব কথা রোগীর মাথায় দীর্ঘস্থায়ী না-ও হতে পারে। তাই অনেক সময় দেখা যায় যে পূর্ববর্তী সেশনে রোগীকে যা যা বলা হয়েছিল, সে সেগুলো ভুলে গেছে, কিংবা সেগুলো এখন আর তার উপর কোনো ইতিবাচক প্রভাবই ফেলছে না। কিন্তু থেরাপিস্টের বলা কথাগুলো যখন রোগী বাসায় গল্পের ছলেও পড়তে পারবে, তখন সেগুলো তার মনে গেঁথে যাবে, এবং অবচেতন মনেই রোগীকে সাহায্য করতে থাকবে।
অনেক সময় বিবলিওথেরাপিস্টরা দর্শন, কবিতা কিংবা ননফিকশনের বই পড়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকে বটে, কিন্তু উপন্যাস বা গল্পই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। কেন ফিকশনই সর্বাপেক্ষা থেরাপেটিক? কেননা গবেষণায় উঠে এসেছে, সাহিত্যিক ফিকশন আমাদেরকে অন্যদের প্রতি আরো বেশি সহানুভূতিশীল করে তোলে, আমাদেরকে অন্য কোনো চরিত্রের জুতা পায়ে পরিয়ে তার অবস্থায় নিজেকে কল্পনা করতে উৎসাহ যোগায়, এবং কাল্পনিক চরিত্রের মাঝে নিজেদের সমস্যাগুলোর প্রতিফলন ঘটায়।
গ্রুপ থেরাপির সেটিংয়েও অনেক সময় বিবলিওথেরাপির অবতারণা ঘটে। অর্থাৎ রোগী তখন একাই বিবলিওথেরাপিস্টের সাথে কোনো বই নিয়ে কথা বলে না, বরং একটি গ্রুপের সবাই মিলে একই বই নিয়ে কথা বলতে থাকে। সাধারণত একই ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্তরা একটি গ্রুপে একত্র হয়, এবং তাদেরকে অভিন্ন বই পড়ার হোমওয়ার্ক দেয়া হয়। পরের দিন তারা প্রত্যেকেই বইটির পাঠ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এর ফলে নিজের পাঠ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পাশাপাশি, একই সমস্যার সম্মুখীন অন্যরা কীভাবে বইটিকে গ্রহণ করেছে, তা জানাও সম্ভব হয়।
বিবলিওথেরাপি যে সর্বরোগের মহৌষধ, সে দাবি করা যাবে না অবশ্যই। নির্দিষ্ট কিছু মানসিক রোগে এটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে। যেমন: মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ, ইটিং ডিজঅর্ডার, সম্পর্কজনিত সমস্যা, অস্তিত্ব সঙ্কটে ভোগা, মাদকাসক্তি ইত্যাদি। তবে অন্য কোনো শারীরিক সমস্যায় যে বিবলিওথেরাপি একেবারেই কাজে দেবে না, তা বলারও উপায় নেই। ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’ খ্যাত রবার্ট লুই স্টিভেনসনই যেমন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছিলেন, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল রচিত ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অভ শার্লক হোমস’ বইটি পড়ে নাকি সাময়িকভাবে তার দাঁতের সমস্যা ও বুকের ব্যথা দূর হয়েছিল!
সে যা-ই হোক, বর্তমানে দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে মানসিক সমস্যায় ভোগার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে, সে কথা অনস্বীকার্য। এবং এটিও সত্য যে একই সমান্তরালে দেশের মানুষ বইয়ের উপর থেকেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এমনটি বললে অত্যুক্তি হবে না যে পাঠবিমুখতাই বর্তমান প্রজন্মের মানসিক সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। তাই দেশে মানসিক সমস্যায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় তো বটেই, এমনকি আত্মোন্নয়নেও বিবলিওথেরাপির যথাযথ প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি।
শেষ করার আগে পুনরাবৃত্তি করা যাক বই পড়া নিয়ে রেনে দেকার্তের সেই অমর বাণী,
“সব ভালো বই পড়া মানে হলো বিগত শতকগুলোর সেরা মনদের সাথে কথোপকথন।”
বিশ্বের চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/