Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যে পাঁচ কারণে পিএইচডির ফাঁকে সেরে নেবেন ইন্টার্নশিপ

পিএইচডি করার সময় অনেকেই পুরোটা সময় এবং মন-মস্তিষ্কের সবটা ঢেলে দেনে গবেষণায়। ইন্টার্নিশিপ বা পরবর্তী কর্মজীবন নিয়ে সেভাবে ভাবেন না। ভাবা উচিত। অবশ্যই প্রতিটি মানুষের চিন্তা-ভাবনা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আলাদা। তারপরও স্বাভাবিকভাবে, পিএইচডি চলাকালীন সময়ে ইন্টার্নশিপ করার কথা ভাবা দরকার। এটি পিএইচডি পরবর্তীতে জীবনেও কাজে লাগবে।

প্রশ্ন হলো, কেন? কেন পিএইচডি চলাকালীন ইন্টার্নশিপ করা দরকার? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা যাব। তবে তার আগে, একজন পিএইচডি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে শুনে নেয়া যাক তার নিজের অভিজ্ঞতা কী বলে।

জেসিকা স্যাগার্স। ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে অবস্থিত হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল থেকে ডক্টরেট করছেন। বিষয়, লাইফ সায়েন্স। বর্তমানে শেষ বর্ষে আছেন তিনি। সম্প্রতি ন্যাচার ম্যাগাজিনে এ বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন এভাবে

ল্যাব ফ্রিজার থেকে জমে যাওয়া একটা টিউব ফেলে দিতে দিতে ভাবছিলাম, আমাকে যদি আর একবারও টিস্যু-কালচার মিডিয়াম বানাতে হয়, মরেই যাব। স্বাভাবিক তো। সেই আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট (অনার্স) থেকে শুরু করে প্রায় একযুগ ধরে কোষ আর টিস্যু কালচার করেই যাচ্ছি। বেশিরভাগ সময় নিজের কাজ করতে ভালোই লাগে। এমনকি মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখেছি, নিজস্ব গবেষণাগারে কাজ করবো। কিন্তু সবসময় কি আর একরকম কাজ করতে ভালো লাগে? মাঝে মাঝে মনে হয়, সব ছেড়ে দেই!

তৃতীয় বর্ষে একটা ইন্টার্নশিপ করার কথা থাকলেও করেননি। ভেবেছেন, যদি পড়াশোনায় সমস্যা হয় বা মনযোগ নড়ে যায়? পরবর্তীতে ইন্টার্নশিপ করতে গিয়ে দেখেছেন, পিএইচডির কাজে এটি তাকে আরো মনযোগী করে তুলেছে। দারুণ সব অভিজ্ঞতা হয়েছে এই ইন্টার্নশিপ করতে গিয়ে।

চলুন তাহলে, জেনে নেয়া যাক, পিএইচডি করার সময় ইন্টার্নশিপ করার কথা কেন ভেবে দেখা দরকার

ইন্টার্নশিপ কেন করবেন; Image Source: abaforlawstudents.com

গবেষণাগারের বাইরে সময় দিন

বছরের পর বছর ধরে যদি বিজ্ঞানের একটি নির্দিষ্ট শাখাতেই কাজ করতে থাকেন, তাহলে কাজের বাইরের জগতটার ব্যাপারে অনেকটাই বিস্মৃত হয়ে পড়বেন আপনি। কিন্তু কাজের বাইরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা নন-অ্যাকাডেমিক কোনো ইন্টার্নশিপ করা শুরু করলে বাইরের জগৎটার ব্যাপারে আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন। নতুন নতুন সুযোগ-সম্ভাবনা, গবেষণার আরো দারুণসব বিষয়ের ব্যাপারে জানার সুযোগ পাবেন। চাইলে, নিজের ল্যাবের কাছাকাছি কোথাও ইন্টার্নশিপের সুযোগ পেলে, লুফে নিতে পারেন। ১০ মিনিট দূরের জায়গাটাও আপনাকে নিয়ে যাবে ভিন্ন এক জগতে।

আপনি হয়তো মেডিক্যাল বা লাইফ-সায়েন্স নিয়ে কাজ করছেন। নতুন ওষুধ যারা প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে নেয়, বা নতুন কোনো রোগ ধরা পড়লে সেটা নিয়ে যখন কাজ হয়- ওখানে থাকলে আপনি বুঝবেন, পিএইচডি করা গবেষকরা সেখানে কী ভাবছেন, কীভাবে এগোতে চাইছেন সমাধানের দিকে। একইভাবে, আপনি হয়তো নেটওয়ার্কিং কিংবা ডাটা সায়েন্স নিয়ে কাজ করছেন। ইন্টার্নশিপ করতে গেলে বুঝবেন, নতুন কোনো সমস্যায় ডাটা সায়েন্স কীভাবে প্রয়োগ করতে হয়, বা একটা সমস্যা সমাধান করার জন্য গবেষকরা কীভাবে ভাবার চেষ্টা করে। কীভাবে এপ্রোচ করে। আর, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোনো ইন্টার্নশিপ করলে, সবকিছুর ব্যবসায়িক দিকটুকু বা যেকোনো নতুন প্রোডাক্ট বাজারজাত করার ব্যাপারেও ভালো একটা অভিজ্ঞতা হবে আপনার।

ভিন্ন ধারার কর্মক্ষেত্র এবং ভিন্নরকম কর্মপদ্ধতির ব্যাপারে জানার সুযোগ

পিএইচডি শেষে নিজের কর্মক্ষেত্র নিয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আপনার হয়েই যাবে। কিন্তু ভিন্ন কর্মক্ষেত্রের মানুষদের কর্মপদ্ধতি জানা বা তাদের সঙ্গে মেশার অভিজ্ঞতা কিন্তু আপনার নেই। টানা নিজের কাজ করতে গিয়ে বরং বাকি দুনিয়া থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। আপনি যার অধীনে গবেষণা করছেন, তাকে কীভাবে বুঝিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আদায় করে নেয়া যায় বা তার কাছে নিজের কাজটুকু কীভাবে উপস্থাপন করা যায়, সেটাও আপনি বেশ ভালো ভাবেই জানেন। কিন্তু একদল মানুষ, যাদের প্রত্যেকের চাহিদা এবং দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন- তাদের সঙ্গে কাজ করে পুরো দলের চাহিদা মেটানো, সুপারভাইজারকে বুঝিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় বাজেট, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি আদায় করা- এসব আপনি ডক্টরেট গবেষণা থেকে শিখতে পারবেন না।

এদিকে কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদলগুলোকে প্রয়োজনীয় সব কিছু দেয়। ইন্টার্নরা কাজ করলে তাদেরকেও দেয়। তবে সেটা অবশ্যই চেয়ে নিতে হবে। বুঝাতে হবে, জিনিসগুলো আপনাকে দিলে কোম্পানিরই লাভ। এ সময়ে আপনি চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে সমস্যা নেই। শুধরে নেয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু সরাসরি কর্মজীবনে এই সু্যোগ আপনি পাবেন না।

সেজন্যই, ইন্টার্নশিপ করলে দলীয় কাজে নিজের ভূমিকা বা ভিন্ন চিন্তাধারার সুপারভাইজারের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার অভিজ্ঞতাটুকু অন্তত হবে।

ইন্টার্নশিপ আপনাকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে দেবে অনেকটুকু; Image Source: womanium.org

ক্যারিয়ারের জন্যে প্রয়োজনীয় মানুষের সঙ্গে পরিচয় এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয়

এখানে ক্যারিয়ারের জন্য ‘কানেকশন’ বা প্রয়োজনীয় লোকজনের সঙ্গে পরিচয় মানে, বেআইনি কিছু বা অনৈতিক সুযোগ-সুবিধাকে বোঝানো হয়নি। আপনি যে ডক্টরেট করছেন, তারপর তো কোথাও না কোথাও কাজ বা গবেষণা করবেন। সেজন্য গবেষণাগার লাগবে, লাগবে বিশাল ফান্ডিং। সেটা আপনাকে দিবে বিভিন্ন কোম্পানি। সত্যি বলতে, কোম্পানি সবার আগে দেখতে চাইবে তার কী লাভ। আপনি তাকে বেশ ভালো একটা এসেসমেন্ট (প্রয়োজনীয় তথ্য, হিসেব-নিকেশসহ সব) দিলেন, এবং সব তথ্য, সূত্র ঠিকই আছে। কিন্তু আপনি মানুষটা যে আসলেই যা বলছেন, সেটা করতে পারবেন, কোম্পানির এই বিনিয়োগে যে আপনার জন্য লোকসান হবে না- সেটা তারা কীভাবে বুঝবে? তারা তো আপনাকে চেনে না। ব্যবসায়িক গবেষণা বা একটা প্রজেক্টের জন্য নির্দিষ্ট সময় সীমা আছে, লাভ তুলে আনার ব্যাপার আছে, হুট করে সমস্যা দেখা দিলে, সেটা সমাধানের ব্যাপার আছে- এসব মাথায় নিয়ে তো ডক্টরেট করেননি আপনি। অথচ, কোম্পানি চায় অভিজ্ঞ কাউকে এই দায়িত্ব দিতে।

ঠিক এই পরিচয়টুকুই আপনার দরকার। ইন্টার্নশিপ করতে গেলে সেটা আপনার হবে। যেখানে কাজ করবেন, তারা বুঝবে আপনি কতটুকু কী পারেন। পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন কি না। তারা সেই হিসেবে ইন্টার্নশিপ শেষে আপনাকে সার্টিফিকেটও দিবে। এখন কিন্তু আপনি আর নতুন করে শুরু করছেন না। এই সনদের কারণে আপনার ঝুলিতে অভিজ্ঞতা জমা পড়েছে। আপনি বুঝবেন, ফান্ডিং বা প্রয়োজনীয় কিছু কীভাবে চাইতে হবে। কার কাছে যেতে হবে সেজন্য। এমনকি, ইন্টার্নশিপে ভালো কাজ দেখালে কোম্পানিগুলো স্থায়ী চাকরির প্রস্তাবও দেয়। আপনাকে তারা নিজস্ব গবেষণাগারও দিয়ে দিতে পারে! শুধু, আপনার উপর যে নির্ভর করা যায়, এটুকু জানাতে হবে তাদের। এবং ইন্টার্নশিপ আপনাকে এই চমৎকার সুযোগটা করে দেবে।

ব্যক্তিগত এই দক্ষতাগুলো অর্জনের দারুণ সুযোগ করে দেবে ইন্টার্নশিপ; Image Source: novoresume.com

ব্যক্তিগত দক্ষতা গড়ে তোলা

গবেষকরা সাধারণত দুনিয়া থেকে নিজেদেরকে একরকম বিচ্ছিন্নই করে ফেলেন। ডক্টরেট করতে গিয়ে টানা গবেষণা করলে সেটা হওয়াই স্বাভাবিক। এটা অবশ্য খারাপ কিছু না। ধরুন, আপনি ল্যাবেই জীবন কাটাবেন। সেখানে সাধারণত পাশের মানুষটার সঙ্গে গল্প করার সুযোগ পাবেন না আপনি। কাজেই, মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলার অভিজ্ঞতা হবে না আপনার। অথচ নতুন একটা স্টার্টআপে যোগ দিলে সেখানে সবার সাথে কথা বলতে হবে। সেইসঙ্গে অস্বস্তি তো আছেই। নতুন মানুষ, সবাই এভাবে তাকাচ্ছে কেন ইত্যাদি ভাবনা। তার উপর কফি মেকারটা কীভাবে কাজ করে, একটা ফাইল কোথায়-কীভাবে সাবমিট করা লাগবে- সেটা জিজ্ঞাসা করতেও ভয় হয়।

এই জড়তা কাটাতে দারুণ এক সুযোগ এই ইন্টার্নশিপ। এতে করে আপনার জড়তা যেমন কাটবে, তেমনি আপনার খুঁটিনাটি অনেক কিছু জানা হবে। একটা অফিসে কাজের খুঁটিনাটি নিয়ে আমরা কথাই বলি না সেভাবে। কিন্তু এই জিনিসগুলো শেখা গুরুত্বপূর্ণ। ফাইলিং সিস্টেম থেকে শুরু করে সুপারভাইজারের দরজা নক করা পর্যন্ত প্রত্যেকটি জিনিসই আপনার কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেজন্যই কবি বলেছেন,

ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল।

নতুন নতুন সমস্যা সমাধানের জন্য মাথা খাটালে দূর হবে মনস্তাত্ত্বিক অবসাদ; Image Source: 123rf.com

নতুন নতুন সমস্যা সমাধানের অভিজ্ঞতা আপনার মনস্তাত্ত্বিক অবসাদ দূর করবে

পিএইচডির শুরুতে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বেছে নিয়েছেন আপনি। সেই বিষয়ের দারুণ সব সমস্যা সমাধান করে এসেছেন এক সময়। কিন্তু দিনে দিনে সমস্যাগুলো অনেকটা একইরকম হয়ে পড়বে। শুরুর সেই রোমাঞ্চ, উত্তেজনা কখনো কখনো রূপ নেবে অবসাদে। মনে হবে, এক কাজ আর কত?

এই একঘেয়েমি কাটাতে ইন্টার্নশিপ খুবই সহায়ক। নতুন সব সমস্যার মুখোমুখি হলে শুরুর দিনগুলোর সেই রোমাঞ্চের স্বাদ পাবেন। সেই সঙ্গে নতুন ধরনের সমস্যা সমাধান করলে মস্তিষ্কের চর্চাটুকুও হবে, যেটা পরবর্তী জীবনে বেশ কাজে দেবে। কারণ, ল্যাবে আপনি একটা নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে কাজ করবেন। ভিন্ন কোনো সমস্যা কিন্তু আপনার কাছে আসবেই না। সেটা চলে যাবে ওই ধরণের সমস্যা নিয়ে যারা কাজ করে, তাদের কাছে। অথচ বাস্তব জীবনে এমনটা হবে না। কাজেই, নতুন সব সমস্যা সমাধান করার সুযোগ পেলে একদিকে একঘেয়েমি বা অবসাদ যেমন কাটবে, তেমনি মস্তিষ্কটাকে আরেকটু শাণিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়ে যাবেন আপনি।

এবার তাহলে আপনি নিজেই ভেবে দেখুন, পিএইচডি করার সময় একটা ইন্টার্নশিপ করে নেবেন, নাকি নিজেকে আটকে ফেলবেন নির্দিষ্ট এক বৃত্তের মাঝে।

This article is in Bangla language. Five reasons why you should do an internship during your phd programme is discussed here. Necessary references are hyperlinked inside.

Feature Image: nevadaemployers.org

Related Articles