Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হসপিটাল ফার্মেসির আদ্যোপান্ত এবং হাসপাতালে ফার্মাসিস্টের ভূমিকা

ফার্মাসিস্ট হলেন একজন নিবন্ধিত পেশাদার ব্যক্তি যিনি ওষুধ প্রস্তুত, বিতরণ এবং ওষুধ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে থাকেন। তারা শুধু বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে নয়, বিভিন্ন হাসপাতালেও কর্মরত রয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব ফার্মাসিস্ট কর্মরত, তাদেরকে বলা হয় হসপিটাল ফার্মাসিস্ট। উন্নত দেশগুলোর সব হাসপাতালে রয়েছে হসপিটাল ফার্মাসিস্টদের সরব পদচারণা। কীভাবে হসপিটাল ফার্মেসির যাত্রা শুরু হলো এবং হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের কী ভূমিকা রয়েছে চলুন জেনে নেয়া যাক।

হসপিটাল ফার্মেসির ইতিহাস

যুক্তরাষ্ট্রে যখন থেকে হাসপাতালের অস্তিত্ব ছিল তখন থেকে হাসপাতালে ফার্মাসিস্টের অবস্থানও ছিল। পেনসিলভেনিয়া হাসপাতাল ১৭৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলের প্রথম হাসপাতাল। জনাথন রবার্টসকে এ হাসপাতালে একজন ওষুধ প্রস্তুতকারক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তিনিই ছিলেন প্রথম হসপিটাল ফার্মাসিস্ট।

ভেষজ ওষুধ প্রস্তুতিতে মর্টার এবং পেস্টেলের ব্যবহার, Image source: Steve Buissinne/ Pixabay
ভেষজ ওষুধ প্রস্তুতিতে মর্টার এবং পেস্টেলের ব্যবহার; Image source: Steve Buissinne/ Pixabay

 

আঠারো শতকে হসপিটাল ফার্মাসিস্টরা ছিলেন খুবই দুর্লভ, কারণ তখন হাসপাতালের সংখ্যা নগণ্য ছিল। আঠারো শতকের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ঔষধি চিকিৎসায় বিভিন্ন বিশোধক পদার্থ, যেমন- ক্যাথারটিকস, ইমেটিকস এবং ডায়াফোরেটিকস ব্যবহার করা হত। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তখন ওষুধের চেয়ে বিশুদ্ধ বাতাস এবং ভালো খাবারকে গুরুত্ব দেওয়া হত। মেডিকেল অভিজাতরা তখন কোনো ওষুধ ব্যবহার করতেন না কিংবা নতুন এলকালয়েড ওষুধ, যেমন- মরফিন, স্ট্রাইকনিন এবং কুইনাইন ব্যবহার করতেন। তখন হাসপাতালে ফার্মেসি সেবাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হত না। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া শুরু করে যখন গৃহযুদ্ধের সময় হাসপাতালের পরিচালকেরা ওষুধ প্রস্তুত এবং মেডিকেল পণ্য ক্রয়ে ফার্মাসিস্টদের অভিজ্ঞতার জন্য ফার্মাসিস্ট খোঁজা শুরু করেন।

১৮৭০ থেকে ১৮৮০ সালের মধ্যে অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ার সাথে হাসপাতালের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। বেশিরভাগ অভিবাসী ছিল রোমান ক্যাথলিক এবং তারা ক্যাথলিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে। ক্যাথলিক হাসপাতালে নানদের ফার্মেসি বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল।

বিশ শতকের শুরুতে হসপিটাল ফরমুলারির আবির্ভাব হওয়ার ফলে হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের চাহিদা বাড়তে শুরু করে। ১৯২০ সালে অ্যালকোহল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর হাসপাতালে ফার্মাসিস্টের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। কারণ অ্যালকোহলযুক্ত যেসব ওষুধ রয়েছে সেসব বাণিজ্যিকভাবে ক্রয় করতে হত অনেক দাম দিয়ে, যা হসপিটাল ফার্মাসিস্টরা সহজে কম খরচে তৈরি করতে পারতেন।

১৯৩০ সালে ‘আমেরিকান হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশান’ একটি কমিটি গঠন করে যা ফার্মেসির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা নির্ণয়ে কাজ করে এবং সমস্যা উত্তরণে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে। এডওয়ার্ড স্পিএস হসপিটাল ফার্মেসি স্ট্যান্ডার্ডের জনক হিসেবে পরিচিত। তিনি এবং রবার্ট পোর্টার ফার্মেসি এন্ড থেরাপিউটিক কমিটির ধারণা প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৫০ সালের শেষ দিকে ১০টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ৪টিতে সার্বক্ষণিক ফার্মাসিস্ট ছিল। তখন ফার্মাসিস্টদের প্রধান কাজ ছিল বাল্ক কম্পাউন্ডিং এবং স্টেরাইল সল্যুশন তৈরি। তখন ফার্মাসিস্টদের কাছ থেকে ওষুধ বিষয়ক বিভিন্ন ব্যাপারে খুব কম পরামর্শই চাওয়া হত, যেমন- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ডোজেস ফর্ম ইত্যাদি ।

১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত হাসপাতালে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল সেবার উপর চালানো অডিটের ফলে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে ‘মিরর টু হসপিটাল ফার্মেসি’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশ করা হয়।

রাসায়নিক পদার্থ এবং বই, Image source: Angelo Rosa/ Pixabay
Image source: Angelo Rosa/ Pixabay

 

সময়ের সাথে সাথে যখন হাসপাতালের সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন সেখানে ফার্মাসিস্টের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে। সেই সাথে বাড়তে থাকে হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের দায়িত্বও। বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের ক্রমবিকাশের মাধ্যমে আজকের অবস্থানে এসেছে হসপিটাল ফার্মেসি।

হাসপাতালে ফার্মাসিস্টের ভূমিকা

১) ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ, সাসপেনশন, ইমালশনসহ বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ পাওয়া যায়। কোন রোগীর জন্য কোন প্রকারের ওষুধ ভালো হবে তা নির্ধারণ করা হসপিটাল ফার্মাসিস্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ, Image source: Arek Socha/ Pixabay
Image source: Arek Socha/ Pixabay

২) ওষুধ প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন পথ রয়েছে, যেমন মুখ, রক্তনালী, শ্বাসতন্ত্র, পায়ু ইত্যাদি। কোন পথে ওষুধ প্রয়োগ করলে রোগীর জন্য ভালো হবে তা রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে ঠিক করেন হসপিটাল ফার্মাসিস্টরা।

৩) কোন ওষুধ কী মাত্রায় খেতে হবে, দিনে কতবার খেতে হবে এবং কত দিন খেতে হবে এই সম্পর্কে রোগীকে তথ্য প্রদান করা।

৪) রোগীর উপর প্রয়োগকৃত ওষুধের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা এবং ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে রোগীকে পরামর্শ প্রদান করা।

৫) একটি ওষুধের সাথে অন্য কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে রোগীদের পরামর্শ দেওয়া। দুই বা ততোধিক ওষুধ একসাথে খেলে যদি কোনো প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেই সম্পর্কেও রোগীদের ধারণা প্রদান করে থাকেন হসপিটাল ফার্মাসিস্টরা।  

৬) বিভিন্ন ওষুধের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন- জ্বর, বমি, ঝিমানো ইত্যাদি। কোন ওষুধ খেলে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তা নিয়ে রোগীদের তথ্য প্রদান করাও হসপিটাল ফার্মাসিস্টদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

রোগীকে পরামর্শ দিচ্ছেন ফার্মাসিস্ট, Image source: today.mims.com
রোগীকে পরামর্শ দিচ্ছেন ফার্মাসিস্ট; Image source: today.mims.com

৭) কিছু ফার্মাসিস্ট, যেমন- ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট রোগীদের কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইবও করতে পারেন।

৮) প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পর যেসব রোগীকে হাসপাতাল থেকে খারিজ করা হয় তাদের তথ্য লিপিবদ্ধ করা এবং খারিজের সময় দেওয়া তথ্যের সাথে মিল রেখে সঠিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা।

৯) হাসপাতালের প্রয়োজনীয় ওষুধ সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া।

১০) নির্ভরযোগ্য ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নির্ণয় করা।

১১) ক্রয়কৃত ওষুধের গুণগত মান পর্যবেক্ষণ ও নিশ্চিত করা।

১২) সঠিক তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ নিশ্চিত করা।

১৩) সঠিক ওষুধ বিতরণ করা।

১৪) প্রস্তুতকৃত ওষুধ পাওয়া না গেলে রোগীর জন্য ওষুধ প্রস্তুত করা।

১৫) প্রস্তুতকৃত এবং বিতরণকৃত ওষুধের তথ্য লিপিবদ্ধ করা।

১৬) বিভিন্ন ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করা।

১৭) ডাক্তার, নার্স এবং রোগীর মাঝে সমন্বয় সাধন করা।

১৮) ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ওষুধ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ও হালনাগাদ তথ্য প্রদান করা।

একজন প্রতীকী ফার্মাসিস্ট, Image source: Mohamed Hassan/ Pixabay
একজন প্রতীকী ফার্মাসিস্ট; Image source: Mohamed Hassan/ Pixabay

বাংলাদেশের অভিজাত কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া অন্য হাসপাতালগুলোতে এখনও হসপিটাল ফার্মাসিস্টদের তেমন উপস্থিতি নেই। তবে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট নিয়োগের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি হসপিটাল ফার্মাসিস্টরা মানবসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন- এই আশাবাদ সবার।

This is a bengali article discussing about hospital pharmacists and their variety of roles. Necessary references have been hyperlinked inside the article.

Feature Image: Pharmacy Business

Related Articles