বিদেশে পড়াশোনা কিংবা স্থায়ী বসবাসের জন্য যেতে হলে প্রায় বেশিরভাগ দেশেই ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয়। আর এই দক্ষতা প্রমাণের জন্য রয়েছে IELTS, TOEFL, PTE এর মতো বিভিন্ন পরীক্ষা। তবে এসব পরীক্ষার মধ্যে ১৯৮৯ সালে চালু হওয়া IELTS সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, কেননা বর্তমানে প্রায় প্রতিটি দেশই IELTS স্কোর গ্রহণ করে। কানাডা বা অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ী বসবাসের (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি) জন্য আবেদন করতে হলে IELTS দেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ইংরেজির প্রতি আমাদের একটা ভয় কাজ করায় IELTS এর প্রতিও অনেকের ভয় কাজ করে। IELTS এর মতো পরীক্ষাগুলোর আরেকটি সুবিধাজনক দিক হচ্ছে এই পরীক্ষাগুলোতে কোনো পাশ-ফেল নেই। IELTS আপনাকে যে স্কোর দিবে সেটা আপনার ইংরেজির দক্ষতা কতটুকু সেটি নির্দেশ করে। IELTS-এ কীভাবে ভালো স্কোর করা যায়, সেটি নিয়েই এই লেখা।
টেস্ট ফরম্যাট
IELTS মূলত দুই ধরনের- অ্যাকাডেমিক ও জেনারেল। যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বাইরে যেতে চান তাদের জন্য অ্যাকাডেমিক আর যারা কাজ বা স্থায়ী বসবাসের জন্য যেতে চান তাদের জন্য জেনারেল। দুই ধরনের IELTS এই চারটি সেকশন থাকে- লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং ও স্পিকিং। অর্থাৎ IELTS পরীক্ষা করবে আপনার ইংরেজি শোনা, পড়া, লেখা ও বলার দক্ষতা। IELTS এর স্কোর হয় ব্যান্ড হিসেবে, যেখানে সর্বোচ্চ ব্যান্ড ৯। প্রতিটি সেকশনে আলাদা আলাদা স্কোর হয় এবং চারটি সেকশনের স্কোরের গড় হলো আপনার সামগ্রিক স্কোর। টেস্ট ফরম্যাট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
কত দিনের প্রস্তুতি প্রয়োজন
IELTS এর প্রস্তুতির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি করা হয় সেটি হচ্ছে ভালো স্কোর করতে কতদিন সময় লাগে। এই প্রশ্নটির কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। প্রস্তুতির সময় সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার ইংরেজির দক্ষতার উপরে। তবে আপনার ইংরেজি দক্ষতা যেমনই হোক না কেন, রিডিং সেকশনের জন্য আপনার পড়ার অভ্যাস থাকতে হবে। এটি আবশ্যক। রিডিং সেকশনে তিনটি প্যাসেজ থেকে প্রশ্ন হয়, আর প্যাসেজগুলো একেকটি ৭০০-৮০০ শব্দের হয়। সুতরাং পরীক্ষার চাপ আর মাত্র এক ঘন্টা সময়সীমা আপনার পড়ার দক্ষতার বেশ ভালো পরীক্ষাই নেবে।
স্পিকিং
অনেকেই ইংরেজি খুব ভালো বোঝেন, ইংরেজিতে ভালো লেখেন, কিন্তু বলার বেলায় একেবারে নয়-ছয় অবস্থা হয়ে যায়। তাই প্রথমেই স্পিকিং নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। স্পিকিংয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ইংরেজিতে কথা না বলার অভ্যাসের কারণে। একটি ভাষা শুধু জানলেই হয় না, নিয়মিত যদি সেই ভাষায় কথা না বলা হয় তাহলে বলার সময় কথা আটকে যাবে। এটি কোনো দোষ নয়, বরং এটিই স্বাভাবিক। এছাড়া আমরা বাংলার মতো ইংরেজি খুব দ্রুত বলার চেষ্টা করি। এ কারণে অনেক সময় কথা জড়িয়ে যায়। খুব দ্রুত বলার কোনো দরকার নেই, স্বাভাবিক গতিতে বললেই চলবে।
এ কারণে স্পিকিং এ ভালো করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করার পর থেকেই সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার ঘন্টা কারো সাথে অনুশীলন করা। যদি সম্ভব হয় আপনার স্মার্টফোনে আপনার নিজের স্পিকিং রেকর্ড করুন। নিজেই নিজের ভুল ধরতে পারবেন। স্পিকিং পরীক্ষার তারিখ যেহেতু তিন চারদিন আগেই জানিয়ে দেয়া হয়, তাই যেদিন আপনি স্পিকিং এর তারিখ জানবেন, সেদিন থেকে যত বেশি সম্ভব ইংরেজিতে কথা বলুন, পারলে চিন্তা ভাবনাও ইংরেজিতে করুন আর ঘুমের মধ্যে স্বপ্নটাও ইংরেজিতেই দেখুন!
স্পিকিং এ মার্কিং করা হয় চারটি বিষয়ের উপর- আপনার ফ্লুয়েন্সি ও কোহেরেন্সি। অর্থাৎ আপনি উত্তর দেবার ব্যাপারে কতটা স্বাচ্ছন্দ ও যে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছে সে ব্যাপারেই কথা বলছেন, আপনার ভোকাবুলারি, আপনার গ্রামার এবং আপনার উচ্চারণের স্পষ্টতার উপরে। অনেকের একটি ধারণা আছে, ব্রিটিশদের মতো উচ্চারণ না হলে স্কোর কম হয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। ব্রিটেনেই স্থানভেদে ৪০ এর উপর ইংরেজির ধরণ আছে, আপনি কোন ব্রিটিশ উচ্চারণ অনুসরণ করবেন? আসলে দেখা হয় উচ্চারণের স্পষ্টতা। যারা পরীক্ষা নেন তারা খুব ভালোমতোই জানেন একেক দেশের মানুষের উচ্চারণ একেক রকম। তাই ‘অ্যাক্সেন্ট’ নয়, বরং উচ্চারণের স্পষ্টতার উপর আপনার স্কোর নির্ধারণ হয়।
স্পিকিং টেস্ট মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে পরীক্ষক আপনার সাথে খুবই সাধারণ কিছু বিষয়ে কথা বলবেন। যেমন- আপনার নাম কী, আপনার বাসা কোথায়, ছাত্র নাকি চাকরি করেন, আপনার শখ কী এসব। দ্বিতীয় অংশে আপনাকে একটি কিউ কার্ড দেয়া হবে যেখানে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দুই মিনিটের মতো বলতে হবে আপনাকে, অনেকটা উপস্থিত বক্তৃতার মতো। শেষ অংশে পরীক্ষক কিছু বিষয়ে আপনার বিস্তারিত মন্তব্য জানতে চাবেন। বেশিরভাগ প্রশ্নই হবে আপনার দ্বিতীয় অংশের সাথে সম্পর্কিত। যেমন, আপনার কার্ডে যদি আপনাকে আপনার প্রিয় বই নিয়ে বলতে বলা হয় তাহলে দেখা যাবে তৃতীয় অংশে থাকবে আপনার প্রিয় লেখক কে ও কেন, বর্তমানে বই পড়ার চল কেমন, কোন ধরনের বই আপনার দেশে বেশি প্রচলিত ও কেন- এ ধরনের।
স্পিকিং এ ভালো করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনাকে দেখাতে হবে আপনি অনেক ইংরেজি বলতে পারেন। মনে রাখবেন, পরীক্ষক আপনার সততার পরীক্ষা নিচ্ছেন না, নিচ্ছেন আপনার ইংরেজির দক্ষতার উপরে। সুতরাং যদি কোনো প্রশ্নের মিথ্যা উত্তর দিয়েও বেশি বলতে পারেন, তো বানিয়ে বলুন। যে ব্যাপারে কিছুই জানেন সে ব্যাপারে যতটুকু সম্ভব বানিয়ে বলুন। সব সময় মনে রাখবেন, আপনি আপনার ইংরেজির দক্ষতার পরীক্ষা দিচ্ছেন, সুতরাং যত পারুন বলুন।
একটু উদাহরণ দেয়া যাক। সাধারণত স্পিকিং শুরু হয় “What’s your name?” এই প্রশ্নটি দিয়ে। আপনি চাইলে শুধু আপনার নাম বলতে পারেন আবার “My name is X” এভাবেও বলতে পারেন। কোনটিতে আপনার দক্ষতা বেশি প্রকাশ পাচ্ছে সেটি আশা করি বলে দিতে হবে না। যদি আপনি ছাত্র নাকি চাকরি জিজ্ঞাসা করে তাহলে শুধু ছাত্র বা চাকরি করি না বলে “I am student at University of X studying in Department of Y” অথবা “I am working as X in Y” বললে আপনার দক্ষতা বেশি প্রকাশ পাবে।
দ্বিতীয় সেকশনে অর্থাৎ কিউ কার্ড দেবার পর আপনাকে এক মিনিট সময় দেয়া হবে উত্তর প্রস্তুত করার জন্য। কিউ কার্ডে নির্দিষ্ট বিষয় ছাড়াও সেই বিষয়ে কী কী বলতে হবে সেগুলোও পয়েন্ট আকারে উল্লেখ থাকে। প্রস্তুতির এক মিনিট কাজে লাগান, নোট করুন। কিউ কার্ডে উল্লেখিত পয়েন্টের ব্যাপারে অবশ্যই বলবেন। একটিও যদি বাদ যায় তাহলে আপনার মার্ক কমবে। আর যদি দেখেন কিউ কার্ডের বিষয় আপনার অভিজ্ঞতার বাইরে তাহলে এক মিনিটে একটি কাহিনী বানিয়ে ফেলুন। তারপর বন্ধুদের যেভাবে গল্প বলেন ঠিক সেভাবে পরীক্ষককে বলতে থাকুন। আবারো বলছি, এটি সততার পরীক্ষা না, ইংরেজির দক্ষতার পরীক্ষা। সুতরাং দরকার হলে বানিয়েও বলুন, তবুও অন্তত দেড় মিনিটের আগে থামবেন না। তবে বানাতে গিয়ে একেবারে অবাস্তব গল্প বানিয়ে বসবেন না আবার।
শেষ সেকশনে একটু বিস্তারিত উত্তর দেবার চেষ্টা করুন। যদি কোনো ব্যাপারে আপনি কম জানেন তাহলে সেটা প্রথমেই স্বীকার করে নিন এভাবে- “Well, I have never thought this before, yet from my limited experience on this topic I can say that…” কিংবা “I have limited knowledge on this topic, yet from my limited knowledge I can state that…”. হুবহু এভাবেই বলতে হবে তা নয়, বরং আপনি যখন স্বীকার করে নিবেন আপনি একটি ব্যাপারে কম জানেন, তারপরেও সেই কম জানা ব্যাপারে সুন্দরভাবে ইংরেজিতে বলবেন সেটি আপনার স্কোরে একটু হলেও সাহায্য করবে।
লিসেনিং
লিখিত পরীক্ষার দিনে পরীক্ষা শুরু হয় লিসেনিং দিয়ে। লিসেনিংয়ে চারটি সেকশন থাকে, প্রতিটিতে দশটি করে প্রশ্ন থাকে। প্রশ্নগুলো হয় মূলত শূন্যস্থান পূরুণ, এমসিকিউ, টেবিল মেলানো ও একটি ম্যাপ রিডিং। শূন্যস্থানের ক্ষেত্রে বানান খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভুল বানানে কিন্তু কোনো মার্ক পাবেন না। প্রথম সেকশন বেশ সহজ হয় এবং ধীরে ধীরে কঠিন হতে থাকে। প্রশ্ন পড়ার জন্য আপনাকে সময় দেয়া হবে, সুতরাং এই সময়টুকু কাজে লাগান। লিসেনিং হয় মূলত চল্লিশ মিনিট, যার মধ্যে প্রথম ত্রিশ মিনিটে আপনি কম্পিউটারে চালানো ভয়েস রেকর্ডার শুনতে শুনতে প্রশ্নপত্রে উত্তর লিখবেন। শেষ দশ মিনিট সেই উত্তরগুলো মূল উত্তরপত্রে লেখার জন্য। যেহেতু কোনো নেগেটিভ মার্কিং নেই, কোনোটি না পারলেও আন্দাজ করে একটি উত্তর লিখে আসুন। ক্ষতি হবার তো প্রশ্নই নেই, বরং ভাগ্যে থাকলে লাভও হয়ে যেতে পারে।
লিসেনিংয়ের প্রস্তুতির জন্য সবচেয়ে সহজ হচ্ছে ইংরেজি ভিডিও দেখা আর ক্যামব্রিজের IELTS এর বইগুলো থেকে অনুশীলন করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সবাই ইংরেজি মুভি বা সিরিজ দেখার পরামর্শ দিলেও সাথে ডকুমেন্টারি ও ইংরেজি খবর দেখা উচিৎ। মুভি বা সিরিজে খুবই ক্যাজুয়ালি কথাবার্তা বলে বেশিরভাগ সময়। কিন্তু ডকুমেন্টারিতে পুরো ফরম্যালভাবে কথা বলে, যা লিসেনিংয়ের দ্বিতীয় ও চতুর্থ সেকশনের জন্য বেশ কাজে লাগবে। লিসেনিংয়ে ভালো করার একটাই উপায়, অনুশীলন আর মনোযোগ ধরে রাখা। পরীক্ষার হলে যদি মনোযোগ ছুটে যাবার কারণে একটি প্রশ্নের উত্তর শুনতে না পান তাহলে ঘাবড়ে না গিয়ে পরেরগুলো ভালো মতো শুনুন। একটি ভুল ঠিক করতে গিয়ে পরেরগুলো ভুল করার মানে নেই কোনো।
পরীক্ষা শুরুর আগে আপনাকে যথেষ্ট সময় দেয়া হবে আপনার হেডফোন পরীক্ষা করে নেবার জন্য। এ সময়টুকুকে কাজে লাগান, হেডফোন ভালোমতো পরীক্ষা করে নিন, ভলিউম কম-বেশি কাজ করে কি না যাচাই করে নিন। মূল পরীক্ষা শুরু হলে কিন্তু আর পিছে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। সুতরাং যা করার পরীক্ষা শুরুর আগেই করতে হবে।
রিডিং
লিসেনিং এর পরেই রিডিং শুরু হয়। রিডিংয়ে আপনাকে তিনটি মাঝারি আকারের প্যাসেজ থেকে প্রশ্ন করা হবে। মোট ৬০ মিনিটের রিডিং এর জন্য, সুতরাং প্রতিটি প্যাসেজের জন্য আপনি গড়ে ২০ মিনিট করে পাচ্ছেন। ইংরেজি পড়ার অভ্যাস না থাকার কারণে অনেকেই রিডিংয়ে সব প্রশ্নের উত্তর করতে পারেন না, ফলে স্কোর কমে যায়। সময় থাকলে হয়তো অনেকেই আরো প্রশ্নের উত্তর করতে পারতেন। সুতরাং পড়ার অভ্যাস, বিশেষ করে ইংরেজিতে পড়ার অভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ রিডিংয়ে ভালো করার জন্য।
পড়ার অভ্যাস বাড়ানোর জন্য ইংরেজি বই পড়ার বিকল্প নেই। আপনি গল্পের বই পড়তে পছন্দ করলে সেগুলো দিয়েই শুরু করুন। প্রথমদিকে কঠিন মনে হলেও পরে দেখবেন বেশ সহজ লাগছে। আপনাকে শুধু কষ্ট করে শুরুটা করতে হবে। তাহলে নিজেই অবাক হয়ে নিজের উন্নতি দেখবেন। গল্পের বই ভালো না লাগলে যে ধরনের বই ভালো লাগে সেগুলো পড়ুন। একেবারেই কিছু ভালো না লাগলে ক্রিকইনফোর বিশেষ আর্টিকেলগুলো পড়ুন। যেহেতু প্রায় সবাই ক্রিকেট পছন্দ করি, ক্রিকইনফো দিয়ে শুরু করলে দ্রুত ফল পাবেন। তবে সেখানেই পড়ে থাকলে চলবে না। ভালো কিছু বই পড়লে আপনার বই পড়াও হবে, আবার রিডিং এর অভ্যাসেও সাহায্য করবে।
এর বাইরে ক্যামব্রিজের বই থেকে অবশ্যই অনুশীলন করবেন। রিডিংয়ের ক্ষেত্রে ‘হেডিং ম্যাচ’ বেশ কঠিন মনে হয়। এ ধরনের প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্যাসেজের ৭-৮টি প্যারার প্রতিটির সারমর্ম কিংবা প্রতিটি প্যারার জন্য একটি হেডিং দিতে হয়। আর মোট অপশন থাকে যতটি দরকার তার থেকে ২-৩টি বেশি এবং বেশ কাছাকাছি। খুব মনোযোগ দিয়ে না পড়লে এক্ষেত্রে ভুল হবার ভালো সম্ভাবনা থাকে।
রাইটিং
ফেসবুক বা ব্লগে আমরা বেশ ভালোই লেখালেখি করতে পারি, কিন্তু মনে রাখতে হবে এটি পরীক্ষার খাতা, কোনো ফেসবুক স্ট্যাটাস নয়। সুতরাং লেখায় অবশ্যই ফরমাল টোন বজায় রাখতে হবে। সেই সাথে রাইটিংয়ে মার্কিং কিসের ভিত্তিতে হয় সেটা মাথায় রাখতে হবে। শুধুমাত্র লেখার ধরনের কারণে অনেকে কম মার্ক পেয়ে থাকেন।
স্পিকিংয়ের মতো রাইটিংয়েও মার্কিং হয় চারটি ভাগে- প্রথমত আপনাকে যে ব্যাপারে লেখতে বলা হয়েছে সে ব্যাপারেই লিখছেন কি না। আপনাকে যদি কোনো বিষয়ের ভালো ও খারাপ উভয় দিক নিয়ে লেখতে বলা হয় তাহলে দুটিই লেখতে হবে। একটি অনেক সুন্দর লেখে অন্যটি বাদ গেলে কিন্তু মার্ক অনেক কমে যাবে। সুতরাং কী লিখতে বলা হয়েছে সেটি মাথায় রেখে লেখতে হবে।
এরপরে থাকছে আপনার ভোকাবুলারি। একই শব্দ বারবার ব্যবহার করলে যিনি পড়বেন তার বিরক্তি লাগাটাই স্বাভাবিক। সুতরাং প্রতিশব্দ ব্যবহার করুন। নিচে একই কথা দু’ভাবে লেখা হয়েছে, দেখুন কোনটি পড়তে বেশি ভালো লাগে।
“Bangladesh Cricket Team has been playing good in ODIs since the 2015 World Cup. They defeated England in the world cup, then they defeated Pakistan, India and South Africa in home ground. Their leader Mashrafee bin Mortaza has emerged as a great leader for the country. His motivation is playing a major role for the good performance of the team”
“Bangladesh Cricket Team has been playing outstanding in ODIs since the 2015 World Cup. They defeated England in the world cup, then they defeated Pakistan, India and South Africa in home ground. Their leader Mashrafee bin Mortaza has emerged as an excellent leader for the country. His motivation is playing a major role for the impressive performance of the team”
প্রথম প্যারাতে ‘good’ শব্দটি দুবার ব্যবহার হয়েছে, কিন্তু পরের প্যারাতে এর বদলে ‘outstanding’ ও ‘impressive’ শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। আপনি যখন ‘good’ এর পরিবর্তে অন্য শব্দ দুটি ব্যবহার করবেন, তখন পরীক্ষক বুঝবেন আপনি ইংরেজিতে দক্ষ, আপনি জায়গামতো প্রতিশব্দ ব্যবহার করতে পারেন। আপনি ভোকাবুলারি সেকশনে বেশ ভালো নাম্বার পাবেন। এর জন্য আপনাকে GRE পর্যায়ের কঠিন সব শব্দ ব্যবহার করতে হবে না। বরং প্রচলিত শব্দগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, একই শব্দ এক প্যারায় বারবার ব্যবহার না করে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন।
তৃতীয় হচ্ছে আপনার লেখার প্রতিটি প্যারা প্রতিটির সাথে সংযুক্ত কি না এবং প্রতিটি প্যারা একটি সুনির্দিষ্ট টপিকে আলোচনা করে কি না। ধরুন, আপনাকে বলা হলো আধুনিক প্রযুক্তির উপকার নিয়ে। আপনি মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেট- এগুলো নিয়ে লেখবেন স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি এক প্যারার অর্ধেক মোবাইল, বাকি অর্ধেক টিভি নিয়ে বললেন। আবার অন্য এক প্যারায় টিভি নিয়ে আরেকবার বললেন। এগুলো আসলে ভালো লেখার বৈশিষ্ট্য নয়। আপনি মোবাইল নিয়ে একটি প্যারা লেখুন, টিভি নিয়ে একটি প্যারা লেখুন। আপনার লেখাটি যেন একটি গল্পের মতো হয়, যেখানে একেকটি প্যারা একেকটি অধ্যায় এবং একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে। প্রতিটি প্যারাকে ‘however’, ‘therefore’, ‘moreover’, ‘furthermore’ দিয়ে সহজেই সংযুক্ত করতে পারেন।
শেষ হচ্ছে আপনার গ্রামার। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ গ্রামারে বেশি ভুল করলে মার্ক কমবে নিশ্চিত। আপনার লেখায় আপনাকে দেখাতে হবে আপনি অনেক গ্রামার জানেন। যত বেশি সম্ভব ‘Tense’ এর ব্যবহার করুন, তাই বলে যে ‘Tense’ এর ব্যবহার যথাযোগ্য না সেটা ব্যবহার করতে যাবেন না। ‘Active-Passive voice’ এর ব্যবহার করুন। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে Complex Sentence ও Sub ordinate clause এর ব্যবহার। আপনার পুরো লেখায় যেন অন্তত ৫টি complex sentence থাকে সেটি নিশ্চিত করুন। Although, though, If- এগুলো দিয়ে বেশ সহজেই সেটি নিশ্চিত করতে পারবেন।
সাধারণ কিছু পরামর্শ
১. কোনো অবস্থাতেই ঘাবড়ানো যাবে না। মনে রাখবেন, IELTS এ পাশ-ফেল নেই। আপনি একটি সেকশনে একটু খারাপ করেও অন্যগুলো দিয়ে বেশ ভালো স্কোর করতে পারেন। সুতরাং একদম ঘাবড়াবেন না। এখানে আপনার সাথে কারো প্রতিযোগীতা নেই, আপনিই আপনার প্রতিযোগী।
২. লিসেনিং ও রিডিং এর উত্তর অবশ্যই পেন্সিল দিয়ে দিতে হবে। কলম দিয়ে দিলে আপনার উত্তরপত্র ও পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাবে।
৩. রাইটিং এর ক্ষেত্রে কলম বা পেন্সিল যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে পেন্সিল ব্যবহার করলে কাটাকাটি থাকবে না। তবে কলমে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলে কলমও ব্যবহার করতে পারেন।
৪. স্পিকিংয়ে বডি ল্যাঙ্গুয়েজের উপর মার্ক না থাকলেও আপনার পজিটিভ আচরণ আপনাকে ভালো মার্ক পেতে সাহায্য করবে।
৫. বাসায় প্রচুর অনুশীলন করতে হবে। ইংরেজি মাতৃভাষা থাকার পরেও অনেকে IELTS এ কম পান, কারণ একটি ভাষা জানা আর পরীক্ষা দেয়া এক না। পরীক্ষার ধরন রপ্ত করার জন্যই অনুশীলন দেয়া উচিৎ।
৬. স্পিকিং এর জন্য ইউটিউবে অনেক ভিডিও পাবেন। ৮/৯ ব্যান্ড স্কোরের ভিডিওগুলো দেখুন, বেশ উপকারে আসবে।
৭. ইউটিউবে প্রচুর টিউটোরিয়াল রয়েছে এবং বেশিরভাগই বেশ কার্যকরী। এগুলো থেকে সাহায্য নিতে পারেন।
৮. অন্তত ৩টি মক টেস্ট দিবেন। সেটি বাসাতেও দিতে পারেন, আবার কোনো কোচিং সেন্টারেও দিতে পারেন। তবে মক টেস্ট অবশ্যই দিবেন। তাহলে পরীক্ষার চাপ, সময়ের চাপ এগুলো পরীক্ষার দিনে আপনাকে ঘাবড়ে দেবে না।
ফিচার ইমেজ- University of Kent