Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্নাতক পর্যায়ে সরকারি বৃত্তিসহ কোরিয়ায় পড়বার টিপস

প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী থাকেন যারা উচ্চ মাধ্যমিকের পরেই দেশের বাইরে পড়তে আসতে চান। কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকেই যথার্থ সুযোগ সম্বন্ধে জানতে পারেন না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের কোরিয়ার বিভিন্ন মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিতে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার এক অভূতপূর্ব উদ্যোগ নিয়েছে।

বর্তমান বিশ্বে গবেষণা ও জ্ঞানচর্চার অন্যতম পীঠস্থান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে কোরিয়া। মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং জ্ঞানচর্চার জন্য যথার্থ পরিবেশ থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় আছে এই দেশটি। স্নাতকোত্তর বৃত্তির তুলনায় সারা বিশ্বেই স্নাতক পর্যায়ে বৃত্তির সংখ্যা কম। কিন্তু কোরিয়ায় চিত্র ভিন্ন। সেখানে প্রচুর স্নাতক বৃত্তি আছে। কোরিয়ান সরকার কর্তৃক পরিচালিত কোরিয়ান গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (কেজিএসপি)-এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

এখন পর্যন্ত প্রায় দেড়শো দেশের তিন হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এই বৃত্তির অধীনে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়ন সম্পন্ন করেছেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ২-৩ জন এই বৃত্তি নিয়ে কোরিয়াতে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নের জন্যে পাড়ি জমান। এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য কেজিএসপি বৃত্তি সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা।

কেজিএসপি কী?

কেজিএসপি হলো স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কোরিয়ান সরকার দ্বারা প্রদত্ত একটি পাঁচ বছর মেয়াদী বৃত্তি। সম্প্রতি কেজিএসপিকে জিকেএস (গ্লোবাল কোরিয়ান স্কলারশিপ) নামে পরিচালন করা হচ্ছে। 

এই বৃত্তিতে বাধ্যতামূলকভাবে প্রথম বছর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত কোরিয়ান ল্যাংগুয়েজ ইন্সটিটিউটে কোরিয়ান ভাষা শিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশ নিতে হবে এবং এর পরবর্তী চার বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।

Source: studyinkorea.go.kr

আবেদনের নিয়ম 

বৃত্তির জন্য দুইভাবে আবেদন করা যায়। একটি হলো দূতাবাস বরাবর আবেদন। এখানে আবেদনপত্র এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দূতাবাস বরাবর পাঠাতে হয়। অপরটি বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর আবেদন। এখানে শিক্ষার্থী তার পছন্দমত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি আবেদনপত্র এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পাঠিয়ে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, একজন শিক্ষার্থী যেকোনো একভাবে আবেদন করতে পারবে। যদি কেউ দূতাবাস বরাবর এবং বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর উভয়ভাবে আবেদন করে তবে তার আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না ।

দূতাবাস বরাবর আবেদন বনাম বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর আবেদন

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং যোগ্যতা মোটামুটিভাবে দুই পদ্ধতিতে একই। তবে দূতাবাস বরাবর আবেদনের বেলায় একটি সুবিধা আছে। শিক্ষার্থী তার ইচ্ছেমতো এই বৃত্তির আওতাভুক্ত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করার সুযোগ পায়। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর আবেদনের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর আবেদনেরই সুযোগ থাকে।

যোগ্যতা

  1. আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে;
  2. বয়স অনূর্ধ্ব ২৫ হতে হবে;
  3. অবশ্যই উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হতে হবে;
  4. উচ্চ মাধ্যমিকে শতকরা ৮০ ভাগ নম্বর প্রাপ্ত হতে হবে; 
  5. যদি র‍্যাংকিং পদ্ধতি চালু থাকে তবে অবশ্যই আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট ক্লাসে শীর্ষ স্থানীয় হতে হবে;
  6. কোরিয়ান কিংবা ইংরেজিতে পারদর্শী প্রার্থীগণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

পরীক্ষার পদ্ধতি (দূতাবাস)

বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পদ্ধতির প্রথম পর্যায় পরিচালনা করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নোটিশ বোর্ডে প্রদত্ত নোটিশ অনুযায়ী আবেদনকারীকে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে আসতে হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাছাইকৃত প্রার্থীদের নাম প্রকাশিত হলে তাদের তথ্যাদি ও আবেদনপত্রের সকল কাগজপত্র বাংলাদেশে অবস্থিত কোরিয়ান দূতাবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বাছাইকৃত প্রার্থীদের একটি পরীক্ষা দূতাবাসে অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষাটি কোরিয়ান সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এবং নির্বাচিত একটি পরীক্ষণ কমিটি পরিচালনা করে। এই ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীকে পরবর্তী পর্যায়ে তার আবেদনপত্রে উল্লেখিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়। ভর্তি কমিটি মেইল, স্কাইপ কিংবা অন্য কোনো উপায়ে শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পরীক্ষা গ্রহণ করে। এ পর্যায়ে শিক্ষার্থী যদি তার পছন্দকৃত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত হন তবে তাকে যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় পছন্দ করে নিতে হয়। উল্লেখ্য চিকিৎসাবিদ্যা কিংবা স্থাপত্য এই বৃত্তির আওতাধীন নয়। এরপর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যাদি এবং অন্যান্য কাগজপত্র (কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাঠাতে হয়।

কেজিএসপির অধীনে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নের জন্যে তালিকাভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়; Source: studyinkorea.go.kr

পরীক্ষার পদ্ধতি (বিশ্ববিদ্যালয়) 

এই পদ্ধতিতে সকল কাগজপত্র ডাক কিংবা কুরিয়ার যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কমিটি এরপর সরাসরি ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। নির্বাচিত শিক্ষার্থীকে পরবর্তী ধাপে কেজিএসপি-র পরীক্ষণ কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়।

যে যে কাগজপত্র জমা দিতে হয়

  1. Completed Application Form 
  2. NIIED Pledge 
  3. Personal Statement 
  4. Study Plan 
  5. Two Recommendation Letters 
  6. Completed Self Medical Assessment 
  7. Graduation Certificate of HSC Institution
  8. High School Grade Transcript (HSC Grade Transcript) (including a description of the school’s grading system)
  9. Certificates of Citizenship of the Applicant and Parents (Examples: a birth certificate, a government-issued certificate indicating the parent-child relationship, a family register, or parents’ passport copies) 
  10.  Awards (Optional)
  11. Applicants with certified scores on their proficiency in Korean or in English may be given preference. Some examples include the following: Proficiency in Korean: TOPIK (Test of Proficiency in Korean). Proficiency in English: TOEFL, TOEIC, or IELTS Academic (TOEFL ITPs are not acceptable)

বৃত্তিতে কি কি অন্তর্ভুক্ত থাকছে?

  1. কোরিয়া যাওয়া এবং বৃত্তি শেষে ফিরে আসার জন্য আসার বিমান খরচ;
  2. টিউশন ফি ব্যতীত মাসিক ৮ লক্ষ কোরিয়ান উওন (বাংলাদেশি প্রায় ৬০ হাজার টাকা);
  3. সকল প্রকার চিকিৎসা খরচ (মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স)।

বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্ন: আমি একবার স্নাতক পাশ করেছি, এমতাবস্থায় আমি কি স্নাতকের জন্যে আবেদন করতে পারি?

উত্তর: না। কেবলমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাই আবেদন করতে পারবেন।

প্রশ্ন: লেখা পড়ার মাধ্যম কোন ভাষায়?

উত্তর: কোরিয়ায় স্নাতক পর্যায়ে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ কোর্সই কোরিয়ান ভাষায় পড়ানো হয়। তবে আপনি যদি গ্লোবাল স্টাডিজ বিষয়ে পড়ার জন্য নির্বাচিত হন তবে সম্পূর্ণ কোর্সই ইংরেজিতে পড়ানো হবে। এমনিতে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স যে ভাষাতেই হোক না কেন বাধ্যতামূলকভাবে প্রথম বছর কোরিয়ান ভাষা শিখতে হবে।

প্রশ্ন: আমি উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ পাইনি। আমি কি আবেদন করতে পারব?

উত্তর: যদি আপনি শতকরা ৮০ ভাগ নম্বর পেয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আবেদন করতে পারেন। কিন্তু যেহেতু এটি তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এবং ওই বছর অন্যান্য আবেদনকারীর প্রোফাইল কেমন তার উপরেও নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা নির্ভর করে তাই নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা অনিশ্চিত।

প্রশ্ন: আমি কি মেডিকেলে পড়তে পারব?

উত্তর: না। মেডিকেল এবং আর্কিটেকচার এই বৃত্তির অন্তর্ভুক্ত নয়।

প্রশ্ন: নির্বাচিত হবার পর আমি কি আমার পছন্দের বিষয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করতে পারি?

উত্তর: না, এটি বিধিমালা বহির্ভূত।

একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি

বাংলাদেশ থেকে ইদানীং অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য কোরিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন। কিন্তু সঠিক তথ্য না জানার কারণে তারা নানাভাবে প্রতারিত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ কথা মনে রাখা দরকার যে, কোরিয়ায় কোনো এজেন্সির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো হয় না। শিক্ষার্থীদের নিজেরদেরকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে আবেদন করতে হয়।

শোনা যায় কিছু এজেন্সি লোভনীয় অফারের কথা বলে একেবারেই পিছনের সারির কিছু ইউনিভার্সিটিতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ভর্তি করাচ্ছে, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। অনেক শিক্ষার্থী ভুল তথ্য দ্বারা প্রতারিত হয়ে কোরিয়াতে এসে নানা ধরনের বিপদের সম্মুখীন হন যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করে।

কেজিএসপি সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.studyinkorea.co.kr

This article is in Bangla language. It covers the detailed information of Korean Government Scholarship Program for an undergraduate student from Bangladesh.

Feature Image Credit: Atonu Chakrabortty. For references please check the hyperlinks inside the article.

Related Articles