কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, “তোমার প্রিয় কার্টুন কোনটি?” বেশির ভাগ মানুষই নেয় ‘টম অ্যান্ড জেরি’-র নাম। কারো পছন্দের তালিকার শীর্ষে এই কার্টুন না থাকলেও পছন্দের তালিকার প্রথম তিনটি জায়গার অন্তত একটি ঠিকই দখল করে নেয় এটি।
টম অ্যান্ড জেরি এমন একটি কার্টুন, যা শুধু বিশ শতকের শিশুদেরই নয়; বরং যুগে যুগে ছোটদের সাথে বড়দেরও সমানভাবে বিনোদন দিয়ে আসছে। অধুনা সামাজিক মাধ্যমের মিম কিংবা হাস্যরসাত্মক ভিডিওগুলোতে এখনো এই কার্টুনের ব্যবহারই বলে দেয়, আজও এই কার্টুন সবার কতটা প্রিয়!
সকলের এত পছন্দের ও ব্যাপক জনপ্রিয় এই কার্টুনটির মূল নির্মাতা হচ্ছেন উইলিয়াম ডেনবি হ্যানা এবং ও জোসেফ রোল্যান্ড বারবারা। শুধু টম অ্যান্ড জেরি নয়, জুটি বেঁধে তারা তৈরি করেছিলেন বহুল জনপ্রিয় আরো অনেক কার্টুন। নিউ মেক্সিকো ও ক্যালিফোর্নিয়াতে জন্ম নেওয়া এই দুই মহারথী কীভাবে একত্র হলেন, সেই গল্পে যাওয়ার আগে চলুন, তাদের নিজেদের ব্যাপারে একটু জেনে নেওয়া যাক।
উইলিয়াম ডেনবি হ্যানা
উইলিয়াম হান্যার জন্ম ১৪ জুলাই, ১৯১০ সাল নিউ মেক্সিকোর মেলরোজ শহরে। তার বাবা, উইলিয়াম জন ছিলেন একজন সিরিয়ান এবং মা, এভিস জয়েস ছিলেন আইরিশ। বাবা-মার তৃতীয় সন্তান ছিলেন তিনি। ছয় বোনের মধ্যে তিনিই একমাত্র ভাই।
বাবার চাকরিসূত্রে কয়েকটা রাজ্য ঘোরা হয়েছে তার। হ্যানার বয়সের কাঠি যখন তিনে পৌছায়, বাবার প্রথম বদলি হয় অরগ্যান রাজ্যের বেকার সিটিতে। সেখানেই বাইরের জগতের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয় তার। এভাবে বিভিন্ন রাজ্য ঘোরার পর অবশেষে উইলিয়াম জন পরিবার নিয়ে থিতু হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়াট শহরে।
১৯২২ সালে স্কাউটিংয়ে যোগ দেন হ্যানা এবং যৌবনে ঈগল স্কাউটের খেতাব অর্জন করেন। পরবর্তীতে স্কাউট ম্যাস্টার হয়ে সারাটা জীবন স্কাউটিং চালিয়ে গেছেন। বলা যায়, এটাই তার একমাত্র প্রশান্তির জায়গা।
১৯২৫ সালে কম্পটন হাইস্কুলে ভর্তি হন তিনি এবং একটি ডান্স গ্রুপের সাথে কাজ করেন। তিন বছর তাদের সাথে স্যাক্সোফোন বাজান হ্যানা। গানের প্রতি তার ভালোবাসা তার ক্যারিয়ারেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
কার্টুনিস্ট হওয়ার আগে হ্যানা ছিলেন একজন প্রকৌশলী। কম্পটন সিটি কলেজে হ্যানা সাংবাদিকতা ও অবকাঠামো প্রকৌশলী বিষয়ে লেখাপড়া করেন। কিন্তু অতিরিক্ত ডিপ্রেশনের কারণে কলেজ ড্রপ-আউট হতে হয় তাকে। ড্রপ-আউট হওয়া সত্ত্বেও প্রকৌশল বিষয়ে তার হাতেকলমের জ্ঞান, ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফার্মে তাকে অবকাঠামো প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি পেতে সাহায্য করে। কিন্তু এই পেশায় তিনি একদম আনন্দ পেতেন না। ফলে তার হতাশা আরও বেড়ে গেলো।
শেষ পর্যন্ত হতাশার সাথে জিততে না পেরে, চাকরিটাও ছেড়ে দেন হ্যানা। এরপর তিনি প্যাসিফিক আর্ট অ্যান্ড টাইটেল নামক এক অ্যানিমেশন কোম্পানিতে শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০ বছর বয়সে, অর্থাৎ ১৯৩০ সালে তিনি এই চাকরিটিও ছেড়ে দেন।
এরপর হ্যানা যোগ দেন লুনি টিউন্স ও মেরি মেলোডিয়াসের কার্টুনের জন্মস্থান, হারমান-আইজিং স্টুডিওতে। এখানে তিনি ১৯৩৬ সালে প্রথম কার্টুন ডাইরেক্ট করেন, যার নাম ‘টু স্প্রিং’। এই বছরই ভায়োলেট ব্লাঞ্চ ওআরগ্যাটযকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এই কিংবদন্তি কার্টুন নির্মাতা। তাদের সংসারে আসে দু’টি ফুটফুটে সন্তান, ডেভিড উইলিয়াম ও বনি জিন।
প্রথম কার্টুন তৈরি করার কিছুদিনের মধ্যে মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার হারমান-আইজিং স্টুডিও কিনে নিলে হ্যানা তখন কাজ করতে শুরু করেন মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ারের হয়ে। এমজিএমে প্রথম প্রথম হ্যানাকে কার্টুন আঁকা, রঙ করা, গান লেখা ও গাওয়ার কাজ করতে হতো। ১৯৩৭ সালে এই প্রতিষ্ঠান নিজেদের অ্যানিমেশন বিভাগ খোলে। এই ডিপার্টমেন্টের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন হ্যানা। এখানেই তার সাক্ষাৎ হয় বারবারার সাথে।
তাদের একসাথে কাজ শুরু করার গল্পে যাওয়ার আগে একটু জেনে নেবো জোসেফ বারবারার ব্যাপারে।
জোসেফ রোল্যান্ড বারবারা
বিত্তশালী ইতালির অভিবাসী ভিঞ্চেস্ট বারবারা ও ফ্রান্সিস্কা ক্যালভ্যাকা দম্পতির ঘরে ১৯১১ সালের ২৪ মার্চ জন্ম নেন জোসেফ রোল্যান্ড বারবারা। তার জন্মের সময় বারবারা দম্পতি ছিলেন নিউইয়র্কের ম্যানহ্যাটন শহরে। তার বয়স যখন ৪ মাস, তখন বারবারা পরিবার ব্রুক্লিনের ফ্ল্যাটবুশ শহরে স্থানান্তরিত হয়।
তিন ভাইয়ের মধ্যে জোসেফ বারবারা ছিলেন সবার বড়। জোসেফের বাবা ছিলেন তিনটি কেশপ্রসাধন-দোকানের মালিক। কিন্তু জুয়া খেলে তিনি তার সকল সম্পত্তির নিঃশেষ করেন। জোসেফের বয়স যখন ১৫, তখন ভিঞ্চেস্ট বারবারা তাদের রেখে পালিয়ে যান। এরপর থেকে মা আর মামার লালন-পালনেই বড় হয় বারবারা ভ্রাতাত্রয়।
জোসেফের ছোট দুইভাই সেনাবাহিনীতে যোগদান করলেও জোসেফ ছোট থেকে ছিলেন চিত্রাঙ্কন-অনুরাগী। হাইস্কুলে থাকাকালীন জোসেফ বক্সিংয়ে বেশ কিছু পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি কিছুদিন ওয়ার্ল্ড লাইটওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন আল সিঙ্গারের বক্সিং ম্যানেজারের কাছে ট্রেনিং প্রাপ্ত হন। কিন্তু বক্সিংয়ের প্রতি আগ্রহটা বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি জোসেফ বারবারা।
হাইস্কুলে পড়াকালীন জোসেফ দর্জির ‘ডেলিভারি বয়’ হিসেবেও কাজ করেছেন। ১৯২৮ সালে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন ইরাস্মাস হল হাই স্কুল থেকে। নিউইয়র্কের আরভিং-ট্রাস্ট কোম্পানিতে হিসেবরক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ১৯৩০ সালে। কার্টুন আঁকা ছিল জোসেফ বারবারার শখ। তাই চাকরির পাশাপাশি তিনি কার্টুন এঁকে, সেগুলো বিভিন্ন ম্যাগাজিনে পাঠাতে লাগলেন।
১৯৩৫ সালে স্কুলজীবনের প্রেমিকা ডোরথি আর্লকে বিয়ে করেন জোসেফ। স্কুলে এই জুটিকে ‘রোমিও-জুলিয়েট’ বলে ডাকত সকলে। এই জুটির কোল জুড়ে আসে চার সন্তান, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। দুর্ভাগ্যবশত, তাদের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান জন্মের দ্বিতীয় দিন মারা যায়।
বারবারার প্রথম কার্টুন ছাপা হয় খলিয়ার ম্যাগাজিনে। এতে তিনি বেশ আপ্লুত হন এবং সিদ্ধান্ত নেন ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে কার্টুন আঁকাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করবেন। ১৯৩৭ সালে বারবারা মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ারে কার্টুনিস্ট হিসেবে যোগদান করেন।
একদিন হ্যানা খেয়াল করেন, এমজিএমে বেশ গুণী একজন কমিক লেখক ও চিত্রকার আছেন। তার সাথে দলবদ্ধভাবে কাজ করলে মন্দ হয় না। প্রস্তাব দিলেন বারবারাকে একসাথে কাজ করার জন্য। জোসেফ বারবারাও রাজি হয়ে যান হ্যানার এই প্রস্তাবে। শুরু হয় তাদের যুগলবন্দী।
১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয় তাদের প্রথম কার্টুন পুস গেটস দ্য বুট। অ্যাকাডেমিক অ্যাওয়ার্ডের জন্য তালিকাভুক্ত হলেও দুর্ভাগ্যবশত, কোনো অ্যাওয়ার্ড তারা পাননি শেষ পর্যন্ত। মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার তাদেরকে পুস গেটস দ্য বুট কার্টুনের ইঁদুর-বিড়ালের থিমটা একটু উন্নত করবার পরামর্শ দিলো। তারা পরামর্শটি বেশ গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন এবং আমাদেরকে উপহার দেন টম অ্যান্ড জেরি কার্টুন।
টম অ্যান্ড জেরি প্রথম প্রচার হয় ১৯৪০ সালে। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত চলে এই কার্টুনের সিরিজ। এই ১৭ বছরে হ্যানা-বারবারা টম অ্যান্ড জেরি-এর ২০০টি পর্ব তৈরি করেন এবং ঘরে তুলতে সক্ষম হন নানান রকম পুরস্কার।
১৯৪৩-১৯৫২ সাল তাদের ক্যারিয়ারের বা এমজিএমের স্বর্ণযুগ বললে ভুল হবে না। এই কয় বছরে অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস এন্ড সায়েন্সেস-এর হয়ে তারা ৭টি অস্কার জেতেন।
১৯৫৭ সালে হ্যানা ও বারবারা মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ারে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেদের একটি কোম্পানি তৈরি করেন। তারা চলে যাওয়ায় এমজিএম নিয়োগ দেয় চাক জোন্সকে, যিনি একজন নামকরা কার্টুনিস্ট। জোন্স টম অ্যান্ড জেরি-কে নতুন মাত্রা দেন। এমজিএমের ব্যবসা আরও সফল হয় এবং ধীরে ধীরে এই কার্টুনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি প্রোগ্রামে পরিণত হয়।
ওদিকে হ্যানা-বারবারার কোম্পানি সুযোগ পায় ছোট পর্দার জন্য নতুন করে টম অ্যান্ড জেরি কার্টুন বানানোর। ১৯৭৫-১৯৭৭, এ ২ বছরে তারা নতুন টম অ্যান্ড জেরি-এর ৪৮টি পর্ব তৈরি করেন। এবারে হ্যানা বারবারা প্রোডাকশনের টম অ্যান্ড জেরি জায়গা করে নেয় সেরা কার্টুন হিসেবে।
হ্যানা-বারবারা যখন নতুন কোম্পানি শুরু করেন, তখন তাদের অ্যানিমেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা, যন্ত্রপাতি কোনোটাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল না বিধায়, তারা কার্টুনের গল্প ও চিত্রতে বেশি গুরুত্ব দিতেন। লোকেরা তাদের এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে ঠাট্টা করতো। কিন্তু তাদের কার্টুনের গল্প, সংলাপ আর ছবিগুলো এত মজাদার হতো, নিন্দুকরাও সেগুলোর প্রশংসা না করে পারতেন না।
হ্যানা বারবারা প্রোডাকশনের প্রথম প্রকাশিত কার্টুন রাফ অ্যান্ড রেড্ডি শো, যা ১৯৫৭ সালে সম্প্রচারিত হয়। এটা বিশ্বের প্রথম অ্যানিমেশন, যা অ্যামি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে।
১৯৬০ সালে তাদের কার্টুন দ্য ফ্লিন্টস্টোনস ছোট থেকে বড় সকলের মন জয় করে নেয়। দ্য ফ্লিন্টস্টোনস প্রথম অ্যানিমেশন সিচুয়েশনাল কমেডি, যার একেকটা পর্ব আধঘণ্টা ধরে সম্প্রচারিত হয়। এছাড়াও হ্যানা বারবারা প্রোডাকশন স্কুবি ডু, মাজিলা গরিলা-এর মতো নামকরা কার্টুন তৈরি করেন।
১৯৬৩ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে বারবারা ও ডোরথি দম্পতির। পরবর্তীকালে বারবারা রক গায়ক ভিঞ্চ টেইলরের বোন, শিলা হোল্ডেনকে বিয়ে করেন।
১৯৯৬ সালে ওয়ার্নারব্রোস হ্যানা-বারবারা প্রোডাকশন কিনে নেন। হ্যানা-বারবারার বানানো কার্টুনগুলো দিয়ে, তারা কার্টুন নেটওয়ার্ক চ্যানেলে সফলতার সাথে ব্যবসা করেন। হ্যানা বারবারা প্রোডাকশন ১৫০টি টেলিভিশন কার্টুন সিরিজ তৈরি করে। সকল সিরিজ মিলিয়ে তারা সর্বমোট ৩ হাজারটি পর্ব তৈরি করেছেন, যেগুলো প্রত্যেকটির সময়-দৈর্ঘ্য আধা ঘন্টা।
১৯৮৮ সালে এই প্রোডাকশন, গভর্নরস অ্যাওয়ার্ড অব দি অ্যাকাডেমি টেলিভিশন আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস পুরস্কার গ্রহণ করে। এছাড়াও এদের সফলতার তালিকায় আছে ৭টি অ্যাকাডেমিক অ্যাওয়ার্ড ও ৮টি অ্যামি অ্যাওয়ার্ড। এত শত অ্যাওয়ার্ডের মধ্যে হ্যানার সবচেয়ে পছন্দ তার ছোটবেলার ঈগল স্কাউটের অ্যাওয়ার্ডটি!
হ্যানা বারবারা প্রোডাকশনের কার্টুনগুলোর সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত
টম এন্ড জেরি
একটি হতাশাগ্রস্ত বিড়াল ও চতুর ইঁদুরের গল্প এটি। বিড়ালটি বিভিন্নভাবে ইঁদুর জেরির জীবনে ঝামেলা তৈরি করার চেষ্টা করে, কিন্তু জেরি সর্বদা টমকে কাঁচকলা দেখিয়ে পার পেয়ে যায়। এভাবেই এক একদিন এক এক ঘটনা নিয়ে এগোতে থাকে টম ও জেরির গল্প।
দা ফ্লিন্টস্টোনস
প্রস্থর যুগের প্রেক্ষাপটে তৈরী এই সিচুয়েশনাল কমেডি কার্টুনটি, জনপ্রিয় টিভি সিরিজ দ্য হানিমুনারসকে ব্যঙ্গ করে বানানো হয়েছে। নামমাত্র ফ্লিন্টস্টোনস পরিবার ও তাদের প্রতিবেশী রাবলস পরিবার নিয়ে এই কার্টুনের গল্প শাখা-প্রশাখা মেলতে থাকে ১৯৬০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৬৬ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত। এই কার্টুনের গান লেখা থেকে শুরু করে গান কম্পোজ সবটাই হ্যানা করেন। বলা বাহুল্য, এই কার্টুনের গান, আবা-ডাবা-ডু বেশ জনপ্রিয়।
স্কুবি ডু, হোয়্যার আর ইউ?
স্কুবি ডু কার্টুনটি কয়েকজন মধ্যবয়সী ছেলে-মেয়ে, ভূত-প্রেত ও একটা ভীতু কুকুরকে নিয়ে তৈরি করা। এই কার্টুনের কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছে স্কুবি ডু নামের একটি কুকুর। কুকুরের পালক শ্যাগি রজার্স এবং তার তিন বন্ধু ফ্রেড জোন্স, ভেলমা ডিংলি এবং ড্যাফনি ব্লেক; এই পাঁচ মূল চরিত্র নিয়ে তৈরি হয়েছে স্কুবি ডু কার্টুন।
এই কার্টুনের পরতে পরতে রহস্য, রোমাঞ্চ আর কমিক খুঁজে পাওয়া যায়। কাহিনী বিবেচনায় কার্টুনটিকে মিস্ট্রি ইনকর্পোরেটও বলা হয়। ‘স্কুবি ডু, হোয়্যার আর ইউ?’-এর প্রিমিয়ার হয়েছিল ১৯৬৯ সালে।
এর প্রতিটি পর্বে থাকতো এক বা একাধিক ভিলেন। সেই ভিলেনগুলো যে আর কেউ নয়, বরং তাদের বন্ধু বা পরিবারেরই কোনো সদস্য- পর্বের শেষে শ্যাগি ও স্কুবি সেই রহস্যই উন্মোচন করতো! এর মাধ্যমে দর্শকদের শিক্ষা দেওয়া হয় যে, আমাদের শত্রুগুলো আমাদের আশেপাশের মানুষ বৈ আর কেউ নয়।
দ্য অ্যাটম অ্যান্ট শো
অ্যাটম অ্যান্ট কার্টুনের মূল চরিত্র অ্যান্ট মূলত একজন সুপারম্যান। ছোট্ট সুপার পিঁপড়াটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৫ সালে। এই কার্টুন টিভি মাতিয়ে রেখেছিল পরের ৩টা বছর।
অ্যাটম অ্যান্টের বাসা শহর ছাড়িয়ে দূরের এক পাহাড়ে, যেখান থেকে সে তার সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। উড়তে পারা, অনেক দ্রুত কোথাও পৌঁছে যাওয়া, বলিষ্ঠ এবং দুঃসাহসী স্বভাবের কারণে তাকে বলা হয় ‘সুপারম্যান অ্যান্ট’। এই কার্টুনটি অনেকে সিক্রেট স্কুইরেল নামেও চেনে।
দ্য মজিলা গরিলা শো
খুব বেশিদিন কার্টুন জগতে রাজত্ব করতে না পারলেও, জনপ্রিয়তার কোনো অভাব হয়নি দ্য মজিলা গরিলা কার্টুনটির। মেলভিন ফিবলের পেট-শপের মজিলা একটি গরিলা, যাকে অনেকেই কিনে নিয়ে যায়, কিন্তু রাখতে চায় না। দিনশেষে মজিলাকে মেলভিনের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে টাকা ফেরত চায় সব খরিদ্দার। এভাবেই এগোতে থাকে মজিলা গরিলার গল্প।
১৯৬৪ সালের ১৪ জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই কার্টুন শেষ হয় ১৯৬৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর। তবে এর জনপ্রিয়তা সুস্পষ্ট হয়, যখন পরের বছর, ১৯৬৬ সালের এবিসি (অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন) নতুন করে কার্টুনটি সম্প্রচার করে। পরবর্তীকালে দ্য মজিলা গরিলা-এর আরও কয়েকটা সিক্যুয়েল বের হয়।
দ্য রাফ অ্যান্ড রেড্ডি শো
দ্য রাফ অ্যান্ড রেড্ডি শো হ্যানা ও বারবারার প্রথম যুগলবন্দী হলেও হ্যানা-বারাবারা প্রোডাকশনের কাজ নয়। একটি বিড়াল ও কুকুরের বন্ধুত্বের গল্প এটি। রাফ, একটি স্মার্ট ও জেদি বিড়াল, পক্ষান্তরে রেড্ডি বোকা, জ্ঞানী ও ভদ্র একটি কুকুর, যারা একে অপরের রুমমেট ও বেস্ট ফ্রেন্ড। ৫০ পর্বের এই কার্টুনটি শুরু হয় ১৯৫৭ সালে এবং এর শেষপর্ব চিত্রায়িত হয় ১৯৬০ সালে।
দ্য জনি কোয়েস্ট
আইএমডিবি রেটিং অনুযায়ী, হ্যানা-বারাবারা প্রোডাকশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ৩টি কার্টুনের একটি হচ্ছে দ্য জনি কোয়েস্ট। কার্টুনটিকে দা অ্যাডভেঞ্চারস অব জনি কোয়েস্টও বলা হয়।
জনির বাবা একজন বিজ্ঞানী, যিনি সারাদিন নানান রকম বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ে পড়ে থাকেন, এবং সেই কাজে সাহায্য করে জনি কোয়েস্ট। এই কার্টুনটিও দ্য মজিলা গরিলা-এর সাথে ১৯৬৪-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত টিভির পর্দা কাঁপায়।
দ্য স্মারফস
এটি একটি বেলজিয়াম কমেডি। কার্টুনটি সম্প্রচারিত হয়েছিল ১৯৮১ সালে, চলেছিল দীর্ঘ ৮ বছর। জঙ্গলের ভেতরে মাশরুমের ঘরে বসবাস করে ছোট্ট নীল রঙের একটি বামন জাতি। এই বামনদের নিত্যদিনের কাজ হচ্ছে, সকল অপশক্তি ও শত্রুদের পরাজিত করে নির্ভেজাল ও চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করা। তাদের এই লড়াইকে ঘিরেই বেড়ে উঠেছে দ্য স্মারফসের গল্পের লতাপাতা। কার্টুনটি শেষ হয় ১৯৯০ সালে।
বিশ্ববাসীকে এত সুন্দর সুন্দর কার্টুন উপহার দেওয়া এই দুই ‘কার্টুন-কিং’ একুশ শতকে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। খাদ্যনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০০১ সালের ২২ মার্চ ৯০ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্যের লস এঞ্জেলেসের নর্থ হলিউডে মৃত্যুবরণ করেন উইলিয়াম হ্যানা। তার সহজুটি জোসেফ বারবারা ২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর স্টুডিও সিটিতে প্রাণত্যাগ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।
তাদের মৃত্যুতে কার্টুন নেটওয়ার্ক ২০ সেকেন্ডের একটা সেগমেন্ট রাখেন, যেখানে বিন্দু জোড়া লেগে তাদের মুখাবয়বের সাথে “We’ll miss you – Cartoon Network” লেখাটি তৈরি হয়। এরপর ডানদিক থেকে মিশে যেতে থাকে।
হ্যানা ও বারবারা কার্টুন জগতের এই দুই কিংবদন্তি যথাক্রমে লেক ফরেস্টের এসেন্সিওন সিমেন্ট্রি ও গ্রেট মুজলিম প্রাইভেট সেকশনে শায়িত আছেন চিরনিদ্রায়।