সকাল থেকে আকাশ মেঘলা, বাইরে থেমে থেমে বৃষ্টি। তার সাথে চলছে স্কুল ও অফিসের কয়েকদিনের পেয়ে যাওয়া সরকারি ছুটি। পরিবারের সাথে মধুর সময় কাটানোর এর মতো সুযোগ কি আর হয়? আর এমন বৃষ্টির দিনে দুপুরের খাবারে যদি থাকে পেঁয়াজ-মরিচ আর ডিমভাজার সাথে মজাদার খিচুড়ি, তাহলে তো আর কথাই নেই। কিন্তু সেই একই রকম খিচুড়ি খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে যাননি তো আমাদের পাঠকেরা? তাহলে আপনাদের জন্যই আমাদের এই আয়োজন। আপনাদের বিরক্তি দূর করতে আর নতুম স্বাদের সন্ধান দিতে আজকে দেওয়া হচ্ছে অন্যরকম কয়েকটা খিচুড়ির রেসিপি।
ঘিয়ে রকমারি ডালের খিচুড়ি
উপকরণ
মসুর, মুগ, ছোলা ও মটরের ডালের মিশ্রণ- এক কাপ, চাল- এক কাপ, ঘি- দুই টেবিল চামচ, আস্ত শুকনো মরিচ- দুইটা, গোটা সরিষা- এক চা চামচ, জিরা- এক চা চামচ, কাঁচা মরিচ- তিন বা চারটি বা স্বাদমতো, হলুদ ও গুঁড়া মরিচ গুড়ো- আধা চা চামচ করে, টমেটো কুঁচি- এক চাপ, লবণ- স্বাদমতো, পানি- পরিমাণমতো।
প্রণালি
আগেই উল্লেখ করা চার ধরনের ডালের মিশ্রণ এক কাপ পরিমাণ নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। সকল ডালের অনুপাত যেন সমান থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবার বিশ মিনিট ডালের মিশ্রণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে যেন তা চালের সাথে সহজেই সিদ্ধ হয়ে যায়। প্রেশার কুকারে ঘি গরম করে নিয়ে তাতে একে একে শুকনো আস্ত লাল মরিচ, গোটা সরিষা, জিরা ও কুচি করা কাঁচা মরিচ ভেজে নিই। রঙ বদলাতে শুরু করলে এর মধ্যে এক কাপ কুচি করে কেটে রাখা টমেটো দিয়ে আরো কিছুক্ষণ নাড়তে থাকি। এতে স্বাদমতো লবণ দিই। এরপরে একে একে হলুদ গুঁড়ো ও শুকনো মরিচ গুঁড়ো যোগ করি। কিছুক্ষণ নেড়ে এতে আগে থেকে ধুয়ে ও পানি ঝরিয়ে রাখা এক কাপ চাল দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে। এতে পানি ঝরানো ডালের মিশ্রণ দিয়ে চার থেকে পাঁচ কাপ পানি যোগ করি। প্রেশার কুকারের ঢাকনা লাগিয়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে দুটি শিস হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি।
ব্যস, প্রস্তুত হয়ে গেলো বৃষ্টির দিনে পরিবারের সকলকে নিয়ে খাওয়ার জন্য অত্যন্ত সুস্বাদু রকমারি ডালের খিচুড়ি। আর শিশুদের জন্য এটি কতখানি পুষ্টিকর সে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আতপ চালে মাসকালাইয়ের ডালের খিচুড়ি
উপকরণ
আতপ চাল- আড়াইশো গ্রাম, মাসকালাইয়ের ডাল- দেড়শ গ্রাম, সরিষার তেল- দুই/ তিন টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বাটা- দুই চা চামচ, রসুন, আদা ও জিরা বাটা- এক চা চামচ করে, গোটা কাঁচা মরিচ- তিনটি, হলুদ ও লবণ পরিমাণমতো, তেজপাতা- দুইটি, এলাচ- দুইটি, দারুচিনি- দুইটি, চিনি- এক চা চামচ, ঘি- তিন বা চার চা চামচ।
প্রণালি
প্রথমে ডাল ও চাল মিশিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এবার একটি আলাদা পাত্রে পানি ফুটিয়ে আলাদা রেখে দিতে হবে। এবার একটি পাত্র চুলায় দিয়ে তাতে তেল দিয়ে তাতে একে একে পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা, হলুদ ও লবণ দিয়ে নাড়তে থাকি। এবার এতে তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি, গোটা কাঁচা মরিচ তিনটি (মাঝে অর্ধেক পর্যন্ত চিরে) ও চিনি দিয়ে নাড়তে থাকি। এই মসলার মধ্যে ধোয়া ডাল- চাল একসাথে দিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট পর্যন্ত ভালোভাবে মেশাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন পাতিলের তলায় লেগে না যায়। এতে ডাল- চালের দ্বিগুণ পরিমাণ গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিই। অল্প আঁচে চুলায় পনেরো থেকে বিশ মিনিটের মধ্যেই প্রস্তুত হয়ে যাবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী আতপ চালের সাথে মাসকালাইয়ের ডালের খিচুড়ি। গরম গরম খিচুড়ির ওপরে স্বাদমতো ঘি ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন পরিবারের খাবারের টেবিলে। স্বাদে ও গন্ধে একেবারেই অন্যরকম এই খিচুড়ি আপনার রান্নার গুণে মুগ্ধ করবে সকলকে।
মুগ ডালে আচারি খিচুড়ি
উপকরণ
চিনিগুড়া চাল- এক কাপ, ভেজে ধুয়ে রাখা মুগ ডাল- আধা কাপ, সরিষার তেল- দুই টেবিল চামচ, তিনটি করে কালো এলাচ, সাদা এলাচ ও দারুচিনি, একটি তেজপাতা, পেঁয়াজ কুচি- এক কাপ, আদা ও রসুন বাটা- এক চা চামচ করে, জিরা, পাঁচফোড়ন ও হলুদের গুঁড়ো- অর্ধেক চা চামচ করে, গুঁড়া মরিচ- অর্ধেক চা চামচ, কাঁচা মরিচ- পাঁচ বা ছয়টি, পানি।
প্রণালি
পাতিলে তেল দিয়ে সাদা ও কালো এলাচ, দারুচিনি ও তেজপাতা দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। এতে পেঁয়াজ কুঁচি দিয়ে বাদামী করে ভেজে নিয়ে ধুয়ে রাখা চাল ও ডাল দিয়ে দিই। এর সাথে আদা বাটা, রসুন বাটা যোগ করে তাতে গুঁড়ো মসলাগুলো সব পরপর যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এখন এটা চুলায় তিন থেকে পাঁচ মিনিট কষিয়ে নিতে হবে। এতে পাঁচ বা ছয়টি গোটা কাঁচামরিচ যোগ করে চাল ও ডালের মোট পরিমাণের দ্বিগুণ গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিই। মাত্র পনেরো মিনিটেই তৈরী হয়ে যাবে মজাদার মুগের ডালের খিচুড়ি। এবার এতে আম বা জলপাইয়ের আচারের তেল তিন চা চামচ যোগ করে নেড়ে দিয়ে চুলায় দমে রাখি আরো প্রায় দশ মিনিট। পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলো জিভে জল আনা মুগ ডাল ও চিনিগুড়া চালের দারুণ আচারি খিচুড়ি।
রুইয়ের মাথায় খিচুড়ি
উপকরণ
চাল- এক কাপ, মুগ ও মসুরির সমাণ অনুপাতে ডালের মিশ্রণ- এক কাপের দুই তৃতীয়াংশ, রুই মাছের মাথা- বড়ো বা মাঝারি আকারের একটা, ভোজ্য তেল- পরিমাণমতো, পেঁয়াজ কুঁচি- দুই টেবিল চামচ, রসুন ও আদা বাটা- এক চা চামচ করে, গোটা কাঁচা মরিচ- তিন/চারটি, একটি তেজপাতা, এলাচ ও দারচিনি- দুইটি করে, জিরা বাটা- এক চা চামচ, হলুদ ও লবণ – পরিমাণমতো, গুঁড়া মরিচ- অর্ধেক চা চামচ।
প্রণালি
মাছের মাথা চার বা ছয় টুকরা করে কেটে হলুদ, লবণ ও গুঁড়ো মরিচ মাখিয়ে কড়া করে ভেজে নিতে হবে। ডালের মিশ্রণ ও চাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। আলাদা একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে রাখতে হবে।
একটি পাতিলে তেল দিয়ে তাতে একে একে পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ, লবণ, গুঁড়া মরিচ, তেজপাতা, দারুচিনি, এলাচ, জিরা বাটা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে। এতে চাল ও দুই ডালের মিশ্রণ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে তিন থেকে পাঁচ মিনিট চুলায় রেখে ভালোভাবে নেড়ে নিতে হবে। এতে তিন থেকে চার কাপ ফোটানো পানি দিয়ে তাতে ভাজা মাছের মাথার টুকরোগুলো দিয়ে একবার মিশিয়ে নিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মাঝারি আঁচে দশ মিনিটেরও কম সময়ে প্রস্তুত হয়ে যাবে অত্যন্ত সুস্বাদু রুইয়ের মাথা মেশানো এই খিচুড়ি।
এখানে সকল খিচুড়িই দুইজনের খাওয়ার পরিমাণে রেসিপি দেওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্য অনুযায়ী উপকরণের পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে হবে। সকল বয়সের মানুষের জন্যই খিচুড়ি স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর অতুলনীয় একটি খাবার।
ফিচার ইমেজ: jugantor.com