Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জনপ্রিয় খাবারের অজনপ্রিয় উৎপত্তিস্থল

খাবার খাওয়ার সময় মানুষ কত সাবধান থাকে, কত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলে। তবে মজার ব্যাপার হল পৃথিবীতে এমন অনেক জনপ্রিয় আর দামী খাবার এবং পানীয় আছে যেগুলো তৈরি হয় প্রাণীদের মল, বমি কিংবা উচ্ছিষ্ট থেকে। জেনে কিংবা না জেনে, বেশ খরচপাতি করে তবেই এই খাবারগুলোকে কাছে পায় মানুষ। ভাবা যায়? আপনিও না জেনে এমন কোনো খাবার বা পানীয় গ্রহণ করে ফেলেননি তো? চটজলদি মিলিয়ে নিন নীচের খাবারগুলোর সাথে।

কোপি লুয়াক

বিশ্বে সবচাইতে ব্যয়বহুল কফির মধ্যে কোপি লুয়াক একটি। কম ক্যাফেইন, কম প্রোটিন আর অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা কম থাকায় সবার কাছে বেশ জনপ্রিয় এই পানীয়টি। তবে আপনি কি জানেন কোপি লুয়াক তৈরি হয় কিভেট বিড়ালের মল থেকে?

কোপি লুয়াক; Source: www.look4ward.co.uk

মানুষের মতন কোপি লুয়াকের ফলের ভক্ত কিভেট বিড়ালেরা। তাই ইচ্ছেমতন ফল খেয়ে নেয় তারা আর শেষমেশ সেটা হজম করে যেটা ফেলে দেয় সেটা দিয়েই তৈরি হয় কোপি লুয়াক। ফলের বীজ হজম না হওয়ায় সেটুকু মল হয়ে বেরিয়ে আসে। একবার হজম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ায় কোপি লুয়াকের স্বাদ ও গুণাগুণ হয় অন্যান্য কফির চাইতে অসাধারণ এবং অনন্য।

পান্ডা ডাং গ্রিন টি

সাধারণত পান্ডারা বাঁশ খেয়েই নিজেদের শারীরিক পুষ্টি পায়। কিন্তু সিনচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ আন ইয়াশি পরীক্ষা করে জানান, পান্ডারা বাঁশ খাবার হিসেবে গ্রহণ করলেও সেটার মাত্র ৩০ শতাংশ পুষ্টি শরীরে কাজে লাগাতে পারে। আর ৭০ শতাংশ বাঁশের পুষ্টি রয়ে যায় হজম করা মলের মধ্যেই। তাহলে কি এই অন্যরকম পুষ্টিতে ভরপুর জিনিসটি দিয়ে কিছু করা যায় না?

অত্যন্ত পুষ্টিকর পান্ডা ডাং গ্রিন টি; Source: China.org.cn

যেই ভাবা সেই কাজ। সম্পূর্ণ নতুন একধরনের চা পাতা বানিয়ে ফেললেন আন ইয়াশি পান্ডাদের মল দিয়ে আর তার নাম দিলেন পান্ডা ডাং গ্রিন টি। ইয়াশির মতে, অন্যান্য গ্রিন টি’র মতো বাঁশের মধ্যেও ক্যান্সার প্রতিরোধকারী উপাদান আছে। অনন্য পুষ্টিগুণ আর ক্যান্সার প্রতিরোধকারী এই গ্রিন টি’র দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার পাউন্ড।

উন, কোনো কুরো

জাপানি ভাষায় নোংরা আর উচ্ছিষ্টকে বলা হয় উনকো। আর সেখান থেকেই এই বিয়ারের নাম এসেছে। নামের বর্ণনা শুনেই নিশ্চয় বুঝে গিয়েছেন, এমন কোন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ব্যাপার নেই উন, কোন কুরো নামক বিয়ারটির সাথে? ২০১৩ সালে কানাগাওাতে অবস্থিত শুঁড়িখানা সাংক্ট ক্যাল্যেনে বিয়ার বিক্রি শুরু করার কয়েক মিনিটের মধ্যে সব বিয়ার বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। বেশ জনপ্রিয় এই বিয়ারের অনন্যতা হচ্ছে এটি তৈরিতে কফি ব্যবহার করা হয়। আর সেই কাজে প্রস্তুতকারককে সাহায্য করে থাইল্যান্ডস গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এলিফেন্ট ফাউন্ডেশনের হাতিরা। অনেকটা কিভেট বিড়ালদের মতোই বীজ খেয়ে সেটাকে হজম করে মলের মাধ্যমে বাইরে ফেলে দেয় হাতিরা। সেটাকেই ব্যবহার করে উন, কোনো কুরোর প্রস্তুতকারকেরা। সমস্যাটা হলো, একেকবার বিয়ার তৈরির জন্য ৩৩ কিলোগ্রাম বীজ হাতিকে খাওয়ালে তার বদলে পাওয়া যায় মাত্র ১ কিলোগ্রাম উপাদান। এই বিয়ার পেতে হলে প্রতি ৩৫ গ্রামের জন্য ১০৪ ডলার করে খরচ করতে হবে আপনাকে।

মধু

এতক্ষণ নানারকম খাবার এবং পানীয় দেখে যাদের নাক একটু হলেও কুঁচকে যাচ্ছিল, তাদেরকেই বলছি। আর কিছু না হোক, মধু নিশ্চয়ই খেয়েছেন আপনি? আপনি কি জানেন, এই মধু তৈরি করতে মৌমাছিকে বমি করতে হয়?

কেক মধু জমা করছে মৌমাছি; Source: YouTube

সাধারণত, মৌমাছিদের পেটের দুটি ভাগ থাকে। একটি দিয়ে তারা খাবার পরিপাক করে আর অন্যটি দিয়ে মধু জমা করে। তো, প্রায় ১,৫০০ ফুলের মধু নিজের পেটে ভরার পর ডেরায় ফিরে আসে মৌমাছি। তারপর সেই জমা মধু বমি করে মুখে নিয়ে আসে আর প্রচন্ড শক্তি দিয়ে চিবুতে থাকে। অনেকক্ষণ চিবানোর পর তারপর মধুকে খোপের ভেতরে পুরে ফেলে তারা। আর পাখা দিয়ে দ্রুত বাতাস দিতে থাকে। এরপর নিজেদের তৈরি মোম দিয়ে মধুকে ঢেকে দেয়। কী ভাবছেন? এরপর আর খেতে পারবেন তো চেনা পরিচিত মধু?

শেলাক

শেলাক সরাসরি কোনো খাবার নয়। খাবারে চাকচিক্য আনতে ব্যবহার করা হয় এই উপাদানটি। কোন কোন খাবারে? এই ধরুন- চকোলেট, ক্যান্ডি ইত্যাদি খাবারে। ভারত, থাইল্যান্ড এবং বার্মাতে এই শেলাক বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু এটি তৈরি হয় কীভাবে? মূলত, লেসিফার ল্যাক্কা কের পোকার শরীর নির্গত রস এবং বর্জ্য থেকে তৈরি হয় এই শেলাক। গাছের গায়ে লেগে থাকা এই শেলাক বেশ কয়েক ধাপে পরিশুদ্ধ হয়। প্রথমে পানি এর সাথে লেগে থাকা সমস্ত ময়লা, পোকার শরীরের অংশ, সবকিছু পরিষ্কার করে দেয়। এরপর অ্যাসিড দূর করার জন্য সোডিয়াম কার্বোনেট দিয়ে পরিষ্কার করা হয় একে। তারপর খাবারে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয় শেলাক।

ইয়ান বো

“ক্যাভিয়ার অব দ্য ইস্ট” বলে পরিচিত এই অত্যন্ত দামী এবং বিখ্যাত ক্যাভিয়ারটি তৈরি হয় পাখির বাসা দিয়ে। সুইফটলেট নামক একটি পাখি নিজের মুখের লালা দিয়ে একটু একটু করে নির্মাণ করে নিজের এই বাসা। মূলত, নিজের সন্তান এবং হারিয়ে যাওয়া পাখিদের জন্যই বানানো হয় বাসাটি। তবে সেগুলো বাদে মানুষের রসনাকেও তৃপ্ত করে ইয়ান বো।

সুইফটলেট পাখীর বাসা দিয়ে তৈরি ইয়ান বো; Source: Pinterest

স্যুপ, ডেজার্ট ইত্যাদির সাথে খাওয়া হয় ইয়ান বো। শুরুর দিকে মাত্র ১,০০০ সুইফটলেট খামার ছিল। বর্তমানে সেই খামারের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হয়েছে ৬০ হাজারের বেশি। বর্তমানে এই খামারের মোট মূল্য ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

অ্যামবারগিস

খুব অন্যরকম এই খাবারটি তৈরি হয় স্পার্ম তিমির জিহ্বা আর পেটে। তবে অ্যামবারগিসের পরিমাণ এতটাই কম এবং এটি এত বেশি বিরল যে, এর প্রতি গ্রাম বিক্রি হয় বর্তমানে ২৯ ডলারে। সাধারণত, এটি সুগন্ধীতেই বেশি ব্যবহার করা হয়। তাছাড়াও খাবার হিসেবে, আইসক্রিম, ডিম রান্না এবং ককটেলে ব্যবহার করা হয় অ্যামবারগিস।

অনেকে মনে করেন, অ্যামবারগিস তৈরি হয় স্পার্ম তিমির বমি থেকে, বাস্তবে বমি নয়, বরং, তিমির বর্জ্য হিসেবেই পাওয়া যায় এটিকে।

ঐতিহ্যবাহী চিচা

ঐতিহ্যবাহী চিচা; Source: Wikipedia

অ্যান্ডেসে বিয়ার হিসেবে চিচার বেশ নামডাক আছে। অনেকের পানীয়ের তালিকায় বেশ বড় একটা জায়গা দখল করে থাকে চিচা। কয়েকশ বছর আগে অ্যাজটেক আর ইনকা সভ্যতার সময়গুলোতেও বেশ প্রতাপ ছিল এই বিয়ারের। সেসময় পানীয়ের অর্থ ছিল আধ্যাত্মিক কোনো এক পর্যায়ে চলে যাওয়া আর বন্ধুত্ব বাড়িয়ে তোলা। আপনি হয়তো চিচার এক গ্লাস নিজেও পান করেছেন। তবে ঐতিহ্যবাহী চিচা তৈরির বেশ আলাদা একটা পদ্ধতি আছে।

এতক্ষণ যে খাবার বা পানীয়গুলোর কথা বলা হলো, সেগুলো প্রাণীদের সাহায্যে তৈরি হলেও চিচা তৈরি হয় মানুষের সাহয্যে। চিচা তৈরি করতে প্রথমে এর প্রস্তুতকারকেরা চিচা মুখে ভরে চিবিয়ে নেয়। ফলে মুখের লালার সংস্পর্শে গাঁজন প্রক্রিয়া বেশ ভালো হয়। এরপর সেখান থেকে তৈরি হয় চিচা বিয়ার। বর্তমানে অবশ্য অনেকেই যন্ত্র ব্যবহার করে চিচা বিয়ার তৈরিতে। তবে এখনও ঐতিহ্যবাহী চিচা তৈরির প্রক্রিয়া চালু আছে।

ফিচার ইমেজ- look4ward.co.uk

Related Articles