সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকা আজাদের আজ প্রচণ্ড মাথা ধরেছে। অফিস শেষে সে বাসায় ফিরে সোফায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়লো। মাথার ডান দিকে কেমন ভারী হয়ে আছে। সেই সাথে কপালের মাঝ বরাবর একটি শিরা সেই কখন থেকে দপ দপ করছে। আজাদ আলতো করে ডান হাতের আঙুল দিয়ে কপালের ডান দিকে মালিশ করতে থাকলো। কিছুক্ষণ ব্যথা কমে আসছে মনে হলেও সেটা আবার আগের মতো বেড়ে যেতে থাকে। আজাদ বুঝতে পারলো আঙুল মালিশে কাজ হবে না। এই ব্যথা তার নতুন নয়। এর আগেও কয়েকদিন ব্যথা হয়েছিলো এবং সে জানে এখন কী করলে তার ব্যথা প্রশমিত হবে। আজাদ গলার টাইয়ের বাঁধন খুলে শার্টের বোতাম খুলে দিলো। এরপর হাতা গুঁটিয়ে উঠে দাঁড়ালো সোফা থেকে।
বেডরুমের জানালার পাশে থাকা টেবিলের ড্রয়ার খুলতেই একটি আইসক্রিমের বক্স বেরিয়ে আসলো। সেটার ভেতরে নানা রকম প্রাথমিক ঔষধপত্র রাখা। একটু খুঁজতেই আজাদ তার কাঙ্ক্ষিত ট্যাবলেটের পাতা পেয়ে গেলো। সেখান থেকে একটি ট্যাবলেট ছিঁড়ে নিয়ে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানির সাথে দ্রুত গিলে ফেললো সে। সেই ট্যাবলেট খাওয়ার ২০ মিনিটের মাথায় জাদুর মতো কাজ হলো। মাথার ভারী ভারী ভাব কমে আসলো। কপালের শিরার দপদপানিও কোথায় হারিয়ে গেলো। মাথার পুরোটা জুড়ে যে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছিলো, সেটাও একসময় কমে গেলো। কিছুক্ষণ আগের বিধ্বস্ত আজাদ এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আজাদের মতো আমাদেরও অনেক সময় মাথায় প্রচণ্ড ব্যথার উদ্রেক হয়। তখন আমরা সেই জাদুকরি ট্যাবলেট সেবনের মাধ্যমে ব্যথা প্রশমন করি। পাঠকগণ নিশ্চয় প্রবন্ধের শিরোনাম দেখে আগেই বুঝে গেছেন আমরা কোন ট্যাবলেটের কথা বলছি। জ্বী, আমরা ব্যথানাশক ‘এসপিরিন’-এর কথা বলছি। প্রতিনিয়ত আমাদের এরকম নানা সমস্যার ঔষধ হিসেবে ডাক্তারগণ এসপিরিন সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এসপিরিন সেবনের মাধ্যমে উপকার লাভ করছে। কিন্তু আপনারা কি জানেন কীভাবে এসপিরিন আবিষ্কৃত হয়েছিলো? প্রথম কে বা কারা এসপিরিন ব্যবহার শুরু করেছিলো?
সুমেরিয়ান বাকল
আজ থেকে চার হাজার বছর পূর্বের কথা। তখন পৃথিবীতে সুমেরিয় সাম্রাজ্যের রাজত্ব চলতো। সেখানকার এক কবিরাজ একবার উইলো নামক এক বৃক্ষের বাকল কেটে তার নির্যাস সেবন করেছিলেন। এরপর তিনি লক্ষ করলেন, নির্যাস সেবনের ফলে তার দেহের ব্যথা প্রশমিত হচ্ছে। তিনি বিষয়টি সহকর্মীদের জানালেন। তারাও সেই উইলো গাছের বাকল নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিলেন এবং সুফল লাভ করলেন। সুমেরিয়ান বাকলের এই গুণের কথা দ্রুত দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়লো। প্রাচীন সভ্যতার পণ্ডিতরা তখন জানতেন না যে, এই উইলো গাছের বাকলের মাঝে লুকিয়ে আছে এমন ঔষধ, যা পরবর্তী হাজার বছরের চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে রাজত্ব করবে। এসপিরিন মূলত প্রাকৃতিক উপাদান স্যালিসাইক্লিক এসিড থেকে প্রাপ্ত যৌগ। আর এই স্যালিসাইক্লিক এসিডের সন্ধান পাওয়া যায় উইলোর মতো বেশ কয়েক প্রজাতির গাছের বাকল, ফল, সবজি, শস্য এবং বীজের মধ্যে। সুমেরিয়দের পূর্বে কেউ স্যালিসাইক্লেট যৌগ দ্বারা চিকিৎসা করেছে কি না, তা জানা যায়নি।
সমসাময়িক পাণ্ডুলিপি থেকে জানা যায়, মেসোপটেমীয় সভ্যতার কবিরাজরাও উইলো গাছের বাকল দ্বারা জ্বর, সর্দি, মাথা ব্যথাসহ অন্যান্য ব্যথার চিকিৎসা করতেন। মধ্যপ্রাচ্যের অঞ্চলের বাইরে সর্বপ্রথম উইলোর বাকলকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে চৈনিকরা। এরা বাতজ্বর প্রশমনেও উইলো বাকল ব্যবহার করতো। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে আধুনিক ঔষধের জনক গ্রিক পণ্ডিত হিপোক্রেটসের পাণ্ডুলিপি থেকে উইলো বাকলের ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়। তিনি জ্বর ও ব্যথা প্রশমনে উইলো বাকল থেকে প্রস্তুতকৃত পেস্টকে চিবিয়ে সেবন করার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া উইলো বাকল থেকে তৈরি বিশেষ চা পানের মাধ্যমে গর্ভবতী নারীদের প্রসব বেদনা হ্রাস করার কথাও উল্লেখ করেন। গ্রিসের বুকে স্যালিসাইক্লেটসের নতুন গুণ সম্পর্কে জানা যায়। আনুমানিক ১০০ সালের দিকে বিখ্যাত চিকিৎসক পিদানিয়াস ডিসকরাইডসের গ্রন্থ থেকে জানা যায়, তিনি উইলো বাকলের সাহায্যে প্রদাহের চিকিৎসা করেছেন।
কী এমন জাদু উইলোর বাকলে?
উইলো গাছের বাকলের ঔষধি গুণের কথা ধীরে ধীরে সবাই জানতে পারে। কিন্তু ঠিক কী কারণে উইলো গাছ এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলো, সেটা অজানা থাকলো ১৮শ শতাব্দী পর্যন্ত। এডওয়ার্ড স্টোন নামক এক ইংরেজ পাদ্রী সর্বপ্রথম উইলো বাকল নিয়ে বড় আকারের পরীক্ষা শুরু করেন। তিনি কয়েকশত জ্বরাক্রান্ত এবং ব্যথাগ্রস্থ রোগীর উপর উইলো বাকলের নির্যাস এবং পেস্ট ব্যবহারের মাধ্যমে এর কার্যকারিতা নির্ধারণের চেষ্টা করেন। এর এক শতক পর বিজ্ঞানীরা রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে উইলো বাকলের রহস্য অনুসন্ধানের চেষ্টা শুরু করেন। এই অনুসন্ধানের দৌড়ে সফলতা পান জোহান বুশনার নামক এক জার্মান ফার্মাকোলজিস্ট। তিনি উইলো বাকল থেকে সক্রিয় উপাদান আলাদা করে বিশুদ্ধকরণ করেন। উইলো থেকে উদ্ভূত সক্রিয়া উপাদানের নাম দেন স্যালিসিন (উইলো’র ল্যাটিন ‘স্যালিক্স’ থেকে নামকরণ করেন)।
১৮৩৮ সালে রাফায়েল পিরিয়া নামক এক ইতালীয় রসায়নবিদ স্যালিসিনের রাসায়নিক গঠন আবিষ্কার করেন। তিনি স্যালিসিনের নাম বদলে রাখেন স্যালিসাইক্লিক এসিড। এর এক যুগ পর ফরাসি রসায়নবিদ চার্লস গেরহার্দ এসিটাইল স্যালিসাইক্লিক এসিড প্রস্তত করতে সক্ষম হন। কিন্তু স্যালিসাইক্লিক এসিড যেমন জনপ্রিয় ছিল, এর এসিটাইল যৌগ কিন্তু তেমন সাড়া জাগাতে পারলো না। এর কারণ, এসিটাইল স্যালিসাইক্লিক এসিড ব্যবহারের ফলে পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়ার মতো বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। তাছাড়া এসিটাইল স্যালিসাইক্লেটে নানান ধরনের রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ ছিল যা এর গুণগত মানকে নিম্ন করে দিয়েছিলো। এই ঝামেলা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করেন জার্মান রসায়নবিদ ফেলিক্স হফম্যান। তিনি এসিটাইল স্যালিসাইক্লিক এসিড বিশুদ্ধ করে এর স্থায়ী রূপ প্রস্তুত করতে সক্ষম হন। এর ফলে যাবতীয় উপসর্গজনিত সমস্যা হ্রাস পায়।
এসপিরিন নামকরণ
সেদিনের গাছের বাকল আজকের পৃথিবীতে সুদৃশ্য প্যাকেটে এসপিরিন হিসেবে বিক্রয় হচ্ছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এসপিরিন কিন্তু স্যালিসাইক্লিক এসিডের কোনো রাসায়নিক নাম নয়। বরং এটি অনেকগুলো শব্দের প্রথম অক্ষর নিয়ে গঠিত একটি বাণিজ্যিক নাম। ফ্যালিক্স হফম্যানের আবিষ্কৃত বিশুদ্ধিকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে বেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস নামক এক বিখ্যাত ঔষধ প্রস্তুতকারক সংস্থা সর্বরপ্রথম এসপিরিন নামে এসিটাইল স্যালিসাইক্লিক এসিডের বাজারজাত করে। এসিপিরিন ছিল সর্বপ্রথম বাজারজাতকৃত কৃত্রিম ঔষধগুলোর মাঝে অন্যতম। ASPIRIN শব্দটিকে ভাঙলে আমরা A তে এসিটাইল, SPIR তে স্যালিসাইক্লিক অ্যালডিহাইড (স্যালিসাইক্লিক এসিডের যৌগ) পাওয়া যায় এমন গাছগুলোর গণের ল্যাটিন নাম এবং IN শব্দাংশটি ইতিবাচন অনুসর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯০০ সালে সর্বপ্রথম এসপিরিন ট্যাবলেট প্রস্তুত করা হয়। এর পর পরই এসপিরিনের জনপ্রিয়তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সমসাময়িক ঔষধের চেয়ে এসপিরিন ব্যবহার অনেকটা সস্তা, সহজলভ্য এবং নিরাপদ হওয়ার মানুষ তা সাদরে গ্রহণ করে নেয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এসপিরিন নামটি শুধু বেয়ার কোম্পানির মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনি। দেখাদেখি অন্যান্য কোম্পানিগুলো একই নামে ঔষধ বাজারজাতকরণ শুরু করে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের মূল্য দিয়ে বেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পুনরায় এসপিরিন নামের স্বত্ব ক্রয় করে নেয়।
জন ভেনের নোবেল প্রাপ্তি
এসপিরিন ব্যবহার দিনে দিনে পৃথিবীতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এসপিরিন হচ্ছে ঔষধশিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ‘Over the Counter’ ট্যাবলেট। এসপিরিনের রাসায়নিক সংকেত জানা থাকলেও, মানবদেহে এই ঔষধ কীভাবে কাজ করে, তা বহু বছর বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল। বিশেষ করে, এসপিরিন কীভাবে মানবদেহে প্রদাহ প্রশমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে, তা ছিল সকলের কৌতূহলের বিষয়। এই প্রশ্নের উত্তর মেলে ১৯৭১ সালে জন ভেন এবং প্রিসিলা পাইপারের হাত ধরে। তারা গিনিপিগের ফুসফুসের উপর এসপিরিনের প্রভাব পরীক্ষার মাধ্যমে এই রহস্য উদ্ঘাটনে সক্ষম হন।
মানবদেহে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক এক হরমোন জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা মানব মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত প্রেরণ করে থাকে। বিজ্ঞানী ভেন আবিষ্কার করলেন, এসপিরিনের ফলে মানবদেহে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এই পদ্ধতিতে এসপিরিন আমাদের দেহে ব্যথানাশক এবং প্রদাহ নিরামক হিসেবে কাজ করে থাকে। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮২ সালে বিজ্ঞানী জন ভেন, সুনে বার্গস্ত্রোম এবং বেংট সেমুয়েলসনকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়।
এসপিরিনের এপিঠ ওপিঠ
ব্যথানাশক ছাড়াও এসপিরিনের আরো বহু গুণ রয়েছে। আর্থ্রাইটিস, পেরিকার্ডাইটিস (হৃদপিণ্ডে প্রদাহ), কাওয়াসাকি রোগের মতো জটিল ব্যাধির চিকিৎসায় এসপিরিনের ব্যবহার রয়েছে। এমনকি বিজ্ঞানীরা কিছু কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এসপিরিন প্রয়োগে সুফল পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের ধারণা, এসপিরিনের কারণে ক্যান্সার কোষ তার বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট অগ্রগতি না হওয়ায় তা এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আটকে রয়েছে। এসব কিছু বিবেচনা করলে মনে হয়, এসপিরিন ব্যবহারে বোধহয় কোনো ক্ষতি নেই। অনেকেই এসপিরিনকে সকল সমস্যার সমাধান হিসেবে বিবেচনা করে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় সেবন করতে থাকে। এমনকি ডাক্তারের নির্দেশ না থাকা স্বত্বেও আমরা কারণে অকারণে এসপিরিন সেবন করছি। কিন্তু এই কাজটি কি ঠিক? মোটেও না।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্কট ফিশম্যানের মতে, এসপিরিন ব্যথানাশক হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমাধান নয়। তিনি মনে করেন, এসপিরিন যে পদ্ধতিতে দেহে উৎসেচক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, তা পাকস্থলীতে আলসার সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত মাত্রায় এসপিরিন সেবনের ফলে তা দেহে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। এর ফলে মস্তিষ্ক এবং অন্ত্রে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এমনকি রেয়েস সিনড্রোম নামক এক বিরল রোগ বিস্তারের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব রয়েছে। মূলত, এসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে প্যারাসিটামলের মতো ব্যথানাশক ইতোমধ্যে এসপিরিনের স্থান ছিনিয়ে নিয়েছে।
একবার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলোজির সহকারী অধ্যাপক ড. ক্যারল ওয়াটসন বলেছিলেন, “যদি আমাকে কখনো কোনো দ্বীপ বা মরুভূমিতে ফেলে আসা হয় আর একটি ঔষধ নেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে আমি এসপিরিন নেবো।” সুমেরিয়ানদের উইলো বাকলের নির্যাস থেকে শুরু হয়েছে ব্যথানাশক এসপিরিনের যাত্রা। এরপর নানা পরিবর্তন এবং বিপ্লবের পর তা আজ আমাদের হাতের মুঠোয় এক ট্যাবলেট হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। যদিও বিকল্প ঔষধগুলোর সহজলভ্যতা এবং কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকার কারণে তা আজ এসপিরিনের স্থান দখল করে নিচ্ছে, তবুও এসপিরিনের ইতিহাস কখনো মুছে যাবে না। এসপিরিনের ইতিহাসের সাথে হাজার বছরের ঔষধের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এর মাঝে লুকিয়ে থাকবে ঔষধক্ষেত্রে মানব জাতির অগ্রগতির গল্প।