Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

করোনাভাইরাস: কেমন আছে আমাজনের আদিবাসীরা?

করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল চীনের উহান প্রদেশে। তারপর একে একে ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। বড় বড় মেট্রোশহর থেকে শুরু করে একদম গ্রামাঞ্চল- কোনো কিছুই বাদ পড়েনি। কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব থেকে বাদ পড়েনি পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীও। বলছিলাম দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন রেইনফরেস্টের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কথা।

আধুনিক জগত থেকে বহু দূরে বসবাস করা আমাজনের এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠী কীভাবে মোকাবেলা করছে এই বৈশ্বিক মহামারী? ‘সভ্য জগত’ থেকে উদ্ভূত এই ভাইরাস কেমন প্রভাব ফেলছে আমাজনের গার্ডিয়ানদের ওপর?

পাতার তৈরি মাস্ক, পেরুভিয়ান অ্যামাজনের এক আদিবাসী নারী; Image source: Aidesep Handout/EPA

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১ এপ্রিল ব্রাজিলিয়ান আমাজনে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০ বছর বয়সী কোকামা গোত্রের এক নারীকে আমাজনের আদিবাসীদের মধ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত হিসেবে ঘোষণা দেয় ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদিবাসী বিষয়ক সেবা সেসাই। সুজান দ্য সিলভা পেরেইরা নামের এই নারী ছিলেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী।

এখন পর্যন্ত ১৫,৫০০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে ব্রাজিলের আদিবাসীদের মধ্যে। মারা গেছেন কমপক্ষে ৫২৩ জন। তবে বাইরের সাথে খুবই কম যোগাযোগ এবং ব্রাজিলের উগ্র ডানপন্থী সরকার থাকায় সত্যিকারের পরিসংখ্যান এর চেয়ে অনেক ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে।

হতে পারে মহাবিপর্যয়

করোনাভাইরাস শুরুর পর থেকেই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর সম্ভাব্য ভয়ংকর বিপর্যয়ের আশংকা করতে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। আধুনিক বিভিন্ন রোগের ন্যাচারাল ইমিউনিটি না থাকায় আদিবাসীরা সাধারণত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন। আমাজন বনের ছোট-বড় প্রায় ৪০০ গোত্রের মধ্যে কোনো কোনো আদিবাসী গোত্র পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন অনেকে।

‘সাদা মানুষদের নিয়ে আসা মৃত্যু’ বিভিন্ন সময়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ধ্বংসের কারণ হয়েছে সেই ১৫ শতক থেকে। ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকায় পৌঁছার পর থেকে ইউরোপিয়ানদের নিয়ে আসা বিভিন্ন রোগে আমেরিকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯০ শতাংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।   

আমাজনের আদিবাসীরাও এরকম বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। মূলত ‘৫০ এর দশক থেকে আমাজনের গহীনে প্রবেশ করতে থাকে বাইরের পৃথিবীর মানুষরা। সরকার হাতে নেয় অনেক উন্নয়ন প্রকল্প।

‘৭০ দশকের প্রথমদিকে এমনই এক হাইওয়ে নির্মাণ করে ব্রাজিল সরকার যা পানারা গোত্রের বসবাসের এলাকার মধ্যে দিয়ে যায়। বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগের আগে ৪০০ মানুষের এই জনগোষ্ঠী বাইরের মানুষের সংস্পর্শের পর জনসংখ্যা নেমে যায় ৮৩ জনের কমে!

আকা পানারা © Maria Fernanda Ribeiro

পানারা গোত্রপ্রধান আকা সেই ভয়ংকর সময়ের কথা এখনো মনে করতে পারেন,

প্রথমে মারা যান এক বৃদ্ধা। তারপর একে একে সবার জ্বর, বুকে ব্যথা আর গলাব্যথা হতে শুরু করলো। শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হতে লাগল অনেকের। প্রথম প্রথম আমরা মৃতদের কবর দিতে পারতাম। তারপর এত বেশি লোক মারা গেল আর আমরা সবাইও দুর্বল হতে লাগলাম যে, মৃতদের কবরও দেয়া হলো না আর।

সে সময়ের কিশোর আকা এখন নিজের লোকদের নেতা। করোনাভাইরাস আবারো বয়ে আনছে দুর্ভোগ আর দুশ্চিন্তা। আকা বলেন, “সাদা মানুষেরা আমাদের আদিবাসীদের সাথে এমন করে কেন?আমি আমার নিজের এবং আমার লোকেদের জন্য খুবই উদ্বিগ্ন। এই রোগ আমাদেরকে একদম শেষ করে দিতে পারে।”

মৃত্যুহার দ্বিগুণ      

আদিবাসী জনগোষ্ঠী কোভিড-১৯ এর আক্রমণে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে- এমনটাই দেখা যাচ্ছে পরিসংখ্যানে। Articulation of Indigenous Peoples of Brazil (APIB) এর ডাটা অনুযায়ী আদিবাসীদের করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার সাধারণ ব্রাজিলিয়ানদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এমনিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পরই ব্রাজিলের অবস্থান। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার সাধারণ ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে যেখানে ৫.২%, সেখানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাঝে সেই হার ৯.১% ।

ছড়িয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে?

 স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা  ©Tarso Sarraf/Agence France-Presse

আমাজনের আদিবাসীরা পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন মানুষদের মধ্যে পড়ে। তাদের মধ্যে কীভাবে ছড়িয়ে পড়লো কোভিড-১৯ মহামারি? আশ্চর্যজনক মনে হলেও এর উত্তর হতে পারে- সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে! নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবী করা হয়েছে।

আমাজনের গহীনের কানামারি গোত্রের কথাই ধরা যাক। মহামারির খবর আসার পর থেকেই নিজেদের গোত্রকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তারা। তবে মে মাসের শেষের দিকে সেসাই স্বাস্থ্যকর্মীদের রুটিন ভিজিটের পর তাদের মধ্যে ভাইরাসের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। বয়স্কদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। আদিবাসীদের সেবা দিতে গিয়েই তাদেরকে আক্রান্ত করে থাকতে পারেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এর কারণ হিসেবে যথাযথ প্রতিরক্ষামূলক যন্ত্রপাতি না থাকাকেই দায়ী করা হচ্ছে।

“গহীনে চলে যাও”  

মহামারী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে নতুন কিছু নয়। কারো কারো আছে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। কারো কাছে আছে বছরের পর বছর বহন করা পূর্বপূরুষদের জ্ঞান(Ancestral knowledge)। ‘মহামারী এসেছে?চলে যাও আমাজনের গহীনে’- এমন নীতিই অনুসরণ করছে অনেক আদিবাসী গোত্র।

ইকুয়েডরিয়ান আমাজনের ওয়ারানি গোত্রপ্রধানের কথাই শোনা যাক, “আমরা আমাদের লোকদের বলব প্লেগ আসছে এবং তোমরা জংগলের গহীনে চলে যাও।”

দুর্গম এক ওয়ারানি গ্রাম থেকে চীফ ম্যানুয়েলা পাওচি রেডিওর মাধ্যমে টাইম মেগাজিনকে জানান,

বাইরের মানুষ জঘন্য কাজ করছে। পশুপাখির বাসস্থান নষ্ট করছে। মানুষ নিজেরা এই রোগ তৈরি করেছে পৃথিবীকে হত্যা করে। আমরা জঙ্গলের গভীরে চলে যাব। প্রাকৃতিক ঔষধ আর খাবার খাব। এর ফলে আমরা থাকব সুস্থ আর শক্তিশালী।

বিচ্ছিন্নতা আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে বড় বড় শহরগুলোতে যেখানে অনেক মানুষের বসবাস। সেদিক দিয়ে আমাজনের আদিবাসীরা সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কম। এক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন বসবাস তাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তবে যেভাবেই হোক, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় সেই আশীর্বাদই অভিশাপে পরিণত হচ্ছে যথাযথ তত্ত্ব আর স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতায়। ওয়ারানি গোত্রের কথাই ধরা যাক। সবচেয়ে কাছের হাসপাতালে পৌঁছতে হলে একমাত্র উপায় ক্যানু (ছোট নৌকা), আর সেটাও কয়েকদিনের দূরত্ব।    

আমাজনের আদিবাসী শিশুরা © Victor Moriyama /The New York Times

দুর্গম এলাকা আর বনের গহীন এসব কিছুই রক্ষা করতে পারেনি তাদের করোনাভাইরাস থেকে। পেরুভিয়ান আমাজনের নাহুয়া গোত্র, যারা বাইরের পৃথিবী থেকে ৮০’র দশকের আগপর্যন্ত পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল এবং এখনও অনেকটাই বিচ্ছিন্ন, তাদের মধ্যেও ভাইরাসে আক্রান্তের খবর এসেছে।

প্রথাগত ঔষধে ফিরে যাচ্ছে অনেকে

বিচ্ছিন্নতা আর সরকারের অবহেলার কারণে আমাজনের অনেক গোত্রই ফিরে যাচ্ছে প্রথাগত ঔষধে। পূর্বপূরুষদের কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা থেকেই তারা চিকিৎসা করছে করোনার। সাতেরে মাওয়ি গোত্র গাছের বাকল, মধু আর বিভিন্ন উদ্ভিদ মিশিয়ে বানাচ্ছে ঔষধ আর মোকাবেলা করছে করোনাভাইরাসের।

গোত্রনেতা আন্দ্রে মাওয়ি এএফপিকে বলেন,

আমরা সব উপসর্গ দেখেছি আর ঘরে তৈরি সব ঔষধ দিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছি।

করোনার চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে নেটিভ উদ্ভিদের; Image source: independent.co.uk

প্রসঙ্গত, আমাজন রেইন ফরেস্টকে ‘প্রাকৃতিক ফার্মেসি’ বলে থাকেন বিজ্ঞানীরা। আধুনিক মেডিসিনের প্রায় ২৫% তৈরি হয় আমাজনের উদ্ভিদ থেকে! আরেকটা তথ্য দেয়া যাক, আমাজনের প্রায় ৮০,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে মাত্র ৫% উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।

কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার?

ব্রাজিলের উগ্র ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জায়ার বলসোনারোর আমলে এমনিতেই ভালো নেই আমাজনের আদিবাসীরা। গত বছরের অ্যামাজনের আগুনের কথা নিশ্চয়ই কেউ ভোলেননি এখনও। করোনাভাইরাসের মধ্যে বলসেনারো ‘আদিবাসীদের ভুলে যেতে’ চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ আদিবাসী নেতাদের।

এমনকি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আদিবাসীদের পক্ষে বিশেষ আইন পাস করার কথা থাকলেও এতে প্রেসিডেন্টের ভেটোর কারণে আটকে যায়। তবে আদিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবায় আমাজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন  করেছেন বলসোনারো।

This is a Bengali article about the indigenous people living in the Amazon rainforest and how they are coping with COVID-19. All the necessary sources are hyperlinked.

Featured Image: earther.gizmodo.com

Related Articles