কোকা-কোলা! সারা বিশ্বের মানুষের কাছে জনপ্রিয় এক সুস্বাদু পানীয়ের নাম। ১৮৮৬ সালে ফার্মাসিস্ট জন পেম্বার্টন প্রথম কোকা-কোলা আবিষ্কার করেন। মূলত এক ধরনের ঔষধ হিসেবেই এই কোকা-কোলার আবিষ্কার। তারপর থেকে আজ প্রায় ১৩০ বছর ধরে চলছে এর রাজত্ব। কোকা-কোলার নামটি নেয়া হয়েছে এর প্রধান দুটি উপাদান কোলা বাদাম এবং কোকা নামের পাতা থেকে। কোকা-কোলার বর্তমান ফর্মুলা কোকা-কোলা কোম্পানী বেশ সতর্কতার সাথেই গোপন রেখেছে। ২০১৫ সালে কোকা-কোলাকে বিশ্বের ৩য় সেরা মূল্যবান ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি দেয়া হয়। ২০১৩ সালের তথ্য অনুসারে গোটা পৃথিবীর ২০০ টিরও বেশি দেশে কোকা-কোলা বিক্রি করা হয়। প্রতিদিনের প্রতি সেকেন্ডে গড়ে প্রায় ৮,০০০ গ্লাস কোকা-কোলা পান করা হয়ে থাকে। স্প্রাইট এবং ফান্টাও এই একই কোকা-কোলা কম্পানীর পণ্য। আজ এই জনপ্রিয় পানীয়ের বিষয়ে মজাদার এবং অবাক করা কিছু বিষয় নিয়েই এই লেখাটি লেখা হয়েছে। তো চলুন শুরু করা যাক।
ঔষধ হিসেবে যাত্রা শুরু
কোকা-কোলার প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিলো এক ধরনের ঔষধ হিসেবে। কোকা-কোলা কম্পানি তার প্রথম বছরে মাত্র ২৫ টি বোতল বিক্রি করতে পেরেছিলো। এটিকে ক্লান্তি দূরীকরণের সিরাপ হিসেবে সেসময় বিক্রি করা হতো। এর আবিষ্কারক দাবী করতেন এটি মাথা ব্যথা এবং পুরুষত্বহীনতার জন্যও এক বেশ কার্যকর ঔষধ। নিচে ১৮৮৬ সালের অর্থাৎ কোকা-কোলার আবিষ্কারের একদম প্রথম দিকের বিজ্ঞাপনগুলোর কিছু ছবি দেয়া হলো।
কোকেইনের ব্যবহার?
প্রথম দিকের কোকা-কোলাগুলোতে কোকেইন ব্যবহার করা হতো। যদিও তার পরিমাণ ছিল গ্লাস প্রতি মাত্র ৯ মিলিগ্রামের মতো। এটাকে তখন অ্যালকোহলের বিকল্প হিসেবে ভাবা হতো। কোকা-কোলার এই কোকেইন আফিমের নেশা থেকে মানুষকে দূরে রাখে এমনটাই তখন প্রচার করা হতো। পরবর্তীতে ১৯০৩ সালের দিকে এসে কোকা-কোলায় কোকেইনের ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
কোকা-কোলা বিজ্ঞাপনের পেছনে প্রচুর অর্থ খরচ করে থাকে। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে কোকা-কোলার বিজ্ঞাপন খরচ ২০১১ সালে ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। কোকা-কোলা অলিম্পিক গেমসের সবচেয়ে পুরাতন স্পন্সর। তারা ১৯২৮ সাল থেকে অলিম্পিকের স্পন্সর হিসেবে চুক্তিবদ্ধ আছে।
বর্তমানে মানুষের মানসপটে সান্টা ক্লজের যে ছবি আঁকা রয়েছে তার পেছনে কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনের অবদানই সবচেয়ে বেশি। কোকা-কোলা ১৯৩১ সালে প্রথম এমন মোটা, সাদা দাড়িওয়ালা, লাল সাদা ড্রেস পড়া সান্টা ক্লজকে তাদের বিজ্ঞাপনে তুলে ধরে। এটি এমনভাবে প্রচার হয়ে যায় আর মানুষ এমনভাবে গ্রহণ করে যে তারপর থেকে সান্টা ক্লজ বলতে মানুষ এমন একজনকেই কল্পনা করে নেয়।
তাদের মার্কেটিং পলিসিও অত্যন্ত শক্ত। কোকা-কোলার স্বাভাবিক ক্যানগুলো পানিতে ডুবে গেলেও কোকা-কোলা ডায়েট এর ক্যান পানিতে ভেসে থাকে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোকা-কোলার মালিক নিশ্চিত করেছিলেন যে, প্রতিটি ইউনিফর্ম পড়া আমেরিকান সৈনিক যাতে একটা করে কোকা-কোলার বোতল পায়। সৈনিকটি যেখানেই থাকুক না কেন এবং কম্পানির যত টাকাই খরচ হোক না কেন। ১৯৮০-৯০ এর দিকে কোকা-কোলা তাদের ভেন্ডিং মেশিনে এমন ব্যবস্থা করার চিন্তা করেছিলো যে এর দাম সেদিনের বাইরের তাপমাত্রার সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে এবং কমবে। যদিও পরিকল্পনাটি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
পৃথিবীর সবচেয়ে ২য় পরিচিত শব্দ
কোকা-কোলা হলো পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে পরিচিত শব্দগুলোর মাঝে ২ নম্বর পরিচিত শব্দ। প্রথম শব্দটি হলো “ওকে”। কোকা-কোলার লাল লোগোটি পৃথিবীর ৯০% লোকের কাছেই পরিচিত।
৩৫০০ ধরনের পানীয় এবং ৫০০ ব্র্যান্ড
কোকা-কোলা কম্পানি এত বিশাল পরিমাণে বিভিন্ন স্বাদের পানীয় বানিয়ে থাকে যে আপনি যদি প্রতিদিন ১ টা করে ভিন্ন স্বাদের পানীয়গুলো খেতে থাকেন তবে এভাবে আপনার ৯ বছরেরও বেশি সময় লাগবে সব রকম পানীয়ের স্বাদ নিতে। কোকা-কোলা এ যাবৎ ৩৫০০ এর ওপরে ভিন্ন ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের পানীয় তৈরি করেছে এবং এর ব্র্যান্ডের সংখ্যা প্রায় ৫০০।
২ টি দেশ যেখানে কোক-কোলা কখনই বিক্রি হয় না
পৃথিবীতে মাত্র ২ টি দেশ আছে যেখানে কখনই কোকা-কোলা বিক্রি হয় না। দেশ দুটি হলো কিউবা এবং উত্তর কোরিয়া।
কোকা-কোলার বোতল সংখ্যা
পৃথিবীর সব কোকা-কোলার বোতল যদি একটা আরেকটার পরে লম্বালম্বিভাবে সাজানো হয় তবে তা চাঁদে যেয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে এমন ঘটনা ঘটবে মোট ১৬৭৭ বার। আপনি যদি কোকা-কোলা এ যাবৎ যত বোতল তৈরি করেছে সব বোতল সংগ্রহ করতে পারেন এবং পৃথিবীর সব মানুষদের মাঝে ভাগ করে দেন তবে প্রত্যেকের ভাগে ১০০০ টির ওপড়ে বোতল পরবে। যদি এ যাবৎ যত কোকা-কোলা তৈরি করা হয়েছে তা দিয়ে কোকা-কোলার একটি সুমিং পুল তৈরি করা হয় তবে তা ৩ কি.মি. লম্বা, ১৫ কি.মি. প্রশস্থ এবং ২০০ মিটার গভীর হবে।
স্পেস বা, মহাশূন্যে পাঠানো প্রথম কোমল পানীয়
১৯৮৫ সালে কোকা-কোলাকে প্রথম কোমল পনীয় হিসেবে মহাশূন্যে পাঠানো হয়। চ্যালেঞ্জার নামের স্পেস শাটলের মহাকাশচারীরা মহাশূন্যে এই কোকা-কোলা পান করেন। নিচে মহাকাশে পাঠানো কোকা-কোলার ক্যানের ছবি দেয়া হল।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র যখন নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তখন আটলান্টায় এটিকে উৎযাপনের জন্য এক পার্টির আয়োজন করে যা বিরোধীতার কারণে প্রায় বাতিল হয়ে যাচ্ছিল। তখন কোকা-কোলার প্রধান আটলান্টা থেকে কোকা-কোলা কম্পানি উঠিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিলো যে, যে শহরের মানুষেরা তাদের নিজেদের নোবেল বিজয়ীকে সম্মান দিতে পারে না সেখানে কোকা-কোলা ব্যবসা করবে না।