কেউ যদি অমিতাভ বচ্চন কিংবা শাহরুখ খান অভিনীত ডন মুভিটি দেখার পর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে, বলিউডের ডন বলতে এই দু’জনকেই বোঝায়, তাহলে আপনি মারাত্মক ভুল করবেন। এই দু’জন রুপালী পর্দায় শুধু ডনের অভিনয়টুকুই করে গেছেন, বাস্তবে বলিউডের অভিনয়শিল্পী-প্রযোজক-পরিচালকদের কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন এক দুর্ধর্ষ মাফিয়া ডন। চলুন তার গল্প শোনা যাক।
তার ফোন পেলে সঞ্জয় দত্ত সুবোধ বালকের মতো সব কথা শুনতেন; ভয়ে কেঁপে উঠতেন সালমান খান-শাহরুখ খানরা। সুভাষ ঘাইয়ের মতো পরিচালক জান বাঁচানোর জন্য চাঁদা দিতেন তাকে। সে চাঁদা আদায় করতো বলিউডের বহু শক্তিমান নামকরা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে। সে সরাসরি চাঁদা চেয়েছে নব্বই দশকের গ্ল্যামারাস নায়িকা মনীষা কৈরালার কাছ থেকে, না পেয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারীকে খুন করেছে। চাঁদা না পেয়ে তার লোকজন নির্মমভাবে হত্যা করেছে প্রতিভাবান সুরকার গুলশান কুমারকে। বলিউডের সব রথী-মহারথীদের কাছে সে ছিলো এক মূর্তিমান আতঙ্ক।
এক হাইস্কুল ড্রপআউট বয়, যে তার স্মাগলিং বিজনেস ও চাঁদাবাজিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলো। সে ছিলো একজন বখাটে গুণ্ডা, কিন্তুু রমণীমোহন এক ক্যাসানোভা, অতিশয় ধূর্ত। নাকটা একটু বড়; কিন্তুু লম্বা, সুদর্শন ও ভদ্র কথায় নারী পটানোর উস্তাদ। নিজের বাড়িতে বসে বুভুক্ষু চোখে বলিউড সুন্দরীদের আবেদনময়ী ফটো দেখতো আর নিঃশ্বাস ফেলতো সে। পরবর্তীতে সে বলিউডের লাস্যময়ী সুন্দরীদের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়েছে।
১০০ টাকা পকেটে নিয়ে সে মুম্বাই শহরে এসেছিলো উত্তর প্রদেশের আজমগড় থেকে। এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান ছিলো সে। আর ২০০২ সালে পর্তুগালে গ্রেপ্তার হওয়ার সময় তার সম্পদের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৫,০০০ কোটি রুপি। খুন, চাঁদাবাজি, সম্পত্তির জবরদখল কিংবা বেআইনী অস্ত্র সরবরাহের জন্য মুম্বাই পুলিশের কাছে সে দাউদ ইব্রাহীমের পরই মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি। এই মুহুর্তে মুম্বাইয়ের আর্থার রোড জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে দিন কাটছে তার। হয়তো এখন কেবল মৃত্যুই তাকে মুক্তি দিতে পারে এ জীবন থেকে।
হ্যাঁ, তার নাম আবু সালেম।
অভাবনীয় উত্থান, মাফিয়াদের সংস্পর্শে আসা, অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া, মনিকা বেদীর মতো নায়িকার সাথে পরিচয়, তাকে বিয়ে করা, তাকে নায়িকা বানানো, অবশেষে ডিভোর্স হওয়া, সবশেষে ধৃত হয়ে পর্তুগালের লিসবনে বছর তিনেক বন্দী থেকে ভারত সরকারের সীমাহীন কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মুম্বাইয়ের জেলের বাসিন্দা হওয়া- এ সবই তার জীবনে ঘটেছে সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো। আবু সালেম সম্পর্কে আলোচনা না করলে মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের গল্প অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে ।
আইনজীবীর পুত্র হয়ে বেআইনী জীবনের শুরু
এটা একটা অভাবনীয় বিষয় যে, ভারতের সবচেয়ে কুখ্যাত দুই মাফিয়া ডনের জন্ম হয়েছিলো এমন এক পরিবারে, যাদের কাজ ছিলো সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করা। দাউদ ইব্রাহীমের পিতা ছিলেন একজন পুলিশ, আর আবু সালেমের পিতা ছিলেন একজন আইনজীবী।
ভারতের জনবহুল রাষ্ট্র উত্তর প্রদেশের আজমগড় জেলার ছোট্ট শহর সারাই মীরে বসবাস করতেন অ্যাডভোকেট আবদুল কাইয়ুম আনসারী। আনসারী ও তার স্ত্রী জান্নাতুন্নিসার ছিলো ৫ সন্তান। তার মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ছিলো আবু সালেম। এক সড়ক দুর্ঘটনায় কাইয়ুম আনসারীর মৃত্যু হলে পুরো পরিবার অথৈ জলে পড়ে। উর্দু মাধ্যমের স্কুলের সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন আবু সালেম। জীবিকার অন্বেষণে মোটর সাইকেল মেকানিকের কাজে লেগে যান। খুব শিগগিরই দক্ষ মোটর মেকানিক বনে যান। চলে আসেন দিল্লীতে। উচ্চাভিলাষী আবু সালেম মোটর মেকানিকের কাজ ছেড়ে অন্য কিছু করতে চাইলেন। ১৯৮৫ সালের দিকে তিনি চলে আসেন মুম্বাই নগরীতে।
নগরীর জগেশ্বরী আরাসা শপিং সেন্টারে তার এক চাচাতো ভাইয়ের দোকানে কাজ শুরু করেন আবু সালেম। এই শপিং সেন্টারের অনেকগুলো দোকান ছিলো মাফিয়াদের মালিকানায়। তারা কালো টাকা বিনিয়োগ করতো এখানে। তিন বছর এখানে কাজ করেন আবু সালেম। মুম্বাই নগরীর সবচেয়ে দুর্ধর্ষ মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীম তখন বোম্বে থেকে পালিয়ে দুবাই থাকেন। দাউদের চাঁদাবাজি দেখাশোনা করতেন তারই ছোট ভাই আনিস ইব্রাহীম ও নুরা ইব্রাহীম। আরাসা শপিং সেন্টারে আনিস ইব্রাহীমের খাস লোক ছিলেন সৈয়দ টুপি। আবু সালেমের সাথে পরিচয় ঘটে সৈয়দ টুপির। সৈয়দ টুপির সৌজন্যে অচিরেই আবু সালেম আনিস ইব্রাহীমের ডানহাত হয়ে উঠেন। দুবাই থেকে দাউদ ইব্রাহীমের কাছে খবর চলে যায় আবু সালেমের দক্ষতার। এভাবেই অপরাধজগতে জড়িয়ে যান আবু সালেম।
ফুলটাইম অপরাধী
আনিস ইব্রাহীমের সঙ্গ পেয়ে অল্প দিনেই প্রচুর টাকার মালিক হয়ে যান আবু সালেম। মুম্বাই নগরীর সান্তাক্রুজ এলাকায় লুতফি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি দোকান দেন তিনি। দোকান দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যবসা পরিচালনা করা। ভারতে স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যবসা যুগে-যুগেই লাভজনক ছিলো। ষাট ও সত্তর দশকে হাজী মাস্তান, শুকুর বখিয়া ও ইউসুফ প্যাটেলের মতো মাফিয়ারা স্বর্ণ চোরাচালান করে বিপুল অর্থ উপার্জন করে।
দাউদ ইব্রাহীমের ডি কোম্পানির সাথে সুসম্পর্ক থাকার কারণে আবু সালেম স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যবসা শুরু করেন। এদিকে দাউদ ইব্রাহীমের পক্ষ হয়ে মুম্বাই নগরীতে চাঁদাবাজি করার জন্য এক নম্বর সেনাপতিও নির্বাচিত হন তিনি। নগরীর নির্মাণশিল্প থেকে দাউদের নামে চাঁদা তুলতেন সালেম। আবু সালেমের নাম শুনলেই নিঃশব্দে চাঁদা দিয়ে দিতেন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা। সুদর্শন চেহারার অধিকারী হওয়ায় দাউদ তাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলিউডের অন্দর মহলে ঢোকার। সে কাজে শতভাগ সফল হয়েছিলেন আবু সালেম।
এনকাউন্টার উইথ গুলশান কুমার
নব্বই দশকের বলিউডের বিখ্যাত সুরকার গুলশান কুমার প্রথম জীবনে ফলের জুস বিক্রেতা হিসেবে তার জীবিকা উপার্জন শুরু করেন দিল্লীতে। তারপর বেশ কিছু হিন্দুু ধর্মীয় ভক্তিমূলক গান গেয়ে সুনাম অর্জন করলে তিনি টি সিরিজ প্রতিষ্ঠা করেন। টি সিরিজ নব্বই দশকে হিন্দি সিনেমার রোমান্টিক গানের জগতকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। আশিকি মুভির সবগুলো গান সুপার-ডুপার হিট হয়। গুলশান কুমারের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয় সুরকার নাদিম-শ্রাবণ জুটির। যদিও উভয় সুরকারের গুরু ছিলেন গুলশান কুমার, প্রথমজন নাদিম সাইফির সাথে অচিরেই গুলশান কুমারের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। সমস্যা খুবই সাধারণ। গুলশান কুমার নাকি নাদিম-শ্রাবণকে পাত্তা দেন না। বিভিন্ন মুভিতে নাদিম-শ্রাবণ জুটিকে আগের মতো কাজ করতে দেন না গুলশান। এই ঠুনকো অজুহাতে নাদিম সাইফি গুলশান কুমারকে হত্যা করার সংকল্প করেন। এ জন্য তিনি দ্বারস্থ হলেন মাফিয়া ডন আবু সালেমের। নাদিম সাইফি অগ্রিম ২৫ লাখ রুপি দিয়ে দেন আবু সালেমকে।
১২ আগস্ট ১৯৯৭, মুম্বাই নগরীর আন্ধেরীর জিতেশ্বর মহাদেব মন্দিরে সকালের প্রার্থনা সারছিলেন গুলশান কুমার। আবু সালেমের ঘাতক দল অপেক্ষা করছিলো কখন গুলশান কুমারের প্রার্থনা শেষ হয়। আবু সালেমের হিটম্যান রাজা নামের এক ভাড়াটে খুনী আবু সালেমকে ফোন করেন। সালেম তাকে নির্দেশ দিলেন ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করতে, কারণ গুলশান কুমারের আর্তনাদ শুনতে চান তিনি। মন্দির থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই রাজা গুলি করেন গুলশান কুমারকে। গুলশান কুমার পাবলিক টয়লেটে লুকিয়ে থাকার বৃথা চেষ্টায় দৌড় দেন। পড়ে যান পা পিছলে। আবার গুলি করে রাজা। দুবাই থেকে ফোনের অপর প্রান্তে সব শুনছেন আবু সালেম। শত শত লোকের সামনে এই নৃশংস ঘটনা ঘটছে। কেউ এগিয়ে আসছে না। পানি পানি বলে চিৎকার করছেন পুরো ভারতনন্দিত এই সুরকার। মোট ৬ রাউন্ড গুলি করে গুলশান কুমারের মৃত্যু নিশ্চিত করে স্থান ত্যাগ করে ঘাতক দল।
গুলশান কুমারের হত্যাকাণ্ড পুরো ভারতকে কাঁপিয়ে দেয়। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দর কুমার গুজরাল এ হত্যাকাণ্ড তদন্তের নির্দেশ দেন। পুরো বলিউড আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
দৃশ্যপটে সেনসেশনাল মনিকা বেদী
মনিকা বেদীর বাবা প্রেম বেদী ছিলেন একজন ডাক্তার। তাদের পুরো পরিবার থাকত নরওয়েতে, সেখানেই মনিকা বেদীর জন্ম। ১৭ বছর বয়সে ১৯৯২ সালে বিলেতের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হন মনিকা। ভর্তি হয়েই তিনি বুঝতে পারলেন, পড়াশোনা তার দ্বারা হবে না। এক গ্রীষ্মের ছুটিতে তিনি মুম্বাই চলে আসেন। মনিকা বেদীর সুশিক্ষিত পরিবার এতে যথেষ্ট মনঃক্ষুণ্ন হন। মুম্বাই এসে তিনি শখের বশে নাচ শেখার জন্য গোপী কিষাণ একাডেমিতে ভর্তি হন। নায়িকা হবার কোনো ইচ্ছা তার ছিলো না, তবুও সবাই যখন তাকে বলিউডে চেষ্টা করার জন্য তাকে উপদেশ দিলো, তিনিও এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাতে চাইলেন। কিন্তুু কোনো লাইন পাচ্ছিলেন না।
লাইন পাওয়ার জন্য মনিকা বেদী বিভিন্ন ফিল্মি পার্টিতে অংশ নিতে শুরু করলেন। পরিচালক সুভাষ ঘাইয়ের এক হোলি পার্টিতে রাকেশ রোশানের সাথে তার পরিচয় হয়। রাকেশ রোশান তাকে সান্তাক্রুজের অফিসে গিয়ে দেখা করতে বললেন। শাহরুখ-সালমানকে নিয়ে তিনি করণ-অর্জুন মুভি বানাচ্ছিলেন। টাক মাথার রাকেশ রোশানকে ভালো লাগেনি মনিকা বেদীর। তিনি আর তার অফিসে যান নি। মনিকা বেদীর জায়গায় নেয়া হলো মমতা কুলকার্নিকে। ছবি হলো ব্লকবাস্টার হিট।
হতাশ ও বেপরোয়া মনিকা বেদী একটি মুভির নায়িকা হওয়ার জন্য হন্যে হয়ে উঠলেন। দাউদের ঘনিষ্ঠ মাফিয়া ডন প্রযোজক মুকেশ দুগ্গাল এর সাথে পরিচিত হন মনিকা বেদী। মুকেশ তাকে সুরক্ষা মুভিতে প্রথম নায়িকা হিসেবে সুযোগ করে দেন। তার সহশিল্পী ছিলেন সাইফ আলী খান ও সুনীল শেঠী। কিন্তুু সেই মুভি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। মুকেশ দুগ্গালের সাথে মনিকা দুবাই ভ্রমণ করেন। সেখানেই পরিচয় হয় আরসালান আলী নামে এক পাকিস্তানির সাথে।
ঠিক সেই মুুহুর্তে মুকেশ দুগ্গাল নিহত হন। মনিকা বেদী ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন আরসালান আলীর সাথে। দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে গেলেন। আরসালান আলী নেপথ্যে থেকে মনিকা বেদীর ক্যারিয়ার গড়ার দিকে মনোযোগী হন। ১৯৯৯ সালে মনিকা বেদী অভিনীত ‘জনম সামঝা করো’ মুভিটি মুক্তি পায়। এর পর মুক্তি পায় ‘জোড়ি নাম্বার ওয়ান’। দুটো ছবিই হিট হয়। কৃতজ্ঞতাস্বরুপ আরসালান আলীর সাথে মনিকা বেদী অভিসারে মিলিত হতেন দুবাই নগরীতে ।
দুটো হিট ছবি করার পর একদিন দুবাই থেকে আরসালান আলী ফোন করে তাকে বলেন, “তুমি এখনই দুবাই চলে আসো“। মনিকা বেদী বললেন, “হঠাৎ দুবাই কেন?” আরসালান আলী বললেন, “ফোনে বলা সম্ভব নয়। তুমি আগে দুবাই আসো।”
মনিকা বেদী দুবাই গিয়ে যা জানলেন, তাতে তার অস্তিত্ব নড়বড়ে হয়ে গেলো। কারণ এই আরসালান আলীই হলো কুখ্যাত আবু সালেম। মনিকা বেদী না পারলেন ভারত ফিরতে, না পারলেন পরিবারের কাছে যেতে। ভারত জুড়ে ব্রেকিং নিউজ ছড়িয়ে পড়লো, মনিকা বেদী মুম্বাই থেকে পালিয়েছে আবু সালেমের আহবানে। ইন্টারপোলের ওয়ারেন্ট জারি হলো আবু সালেম-মনিকা বেদী উভয়ের বিরুদ্ধে।
ডন উইথ ডার্লিং: বিশ্বভ্রমণ
১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে আবু সালেম-মনিকা বেদী দুজনেই দুবাই নগরী ছেড়ে পালিয়ে যান। ইতোমধ্যে দাউদের ডি কোম্পানির সাথে মনোমালিন্য শুরু হয়েছে আবু সালেমের। কয়েকটি জাল পাসপোর্ট তৈরি করে আবু সালেম বিভিন্ন নামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘোরাঘুরি করতে লাগলেন। প্রথমেই তারা গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করে তারা চলে গেলেন কেনিয়ার নাইরোবিতে। কেনিয়া থেকে তারা গেলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতে। আবু সালেমের প্রথম স্ত্রী সামিরা ফ্লোরিডাতে অনেক আগে থেকেই বসবাসরত ছিলেন। বহু ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বছরের পরে এবার আবু সালেম যুক্তরাষ্ট্রে অনেকটা শান্তিতেই বসবাস করতে লাগলেন। সামিরা ও মনিকাকে দুই জায়গায় রেখে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে তার অর্জিত টাকা বিনিয়োগ করলেন। পাঁচটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, একটি সিনেমা হল ও কয়েকটি পেট্রোল পাম্প ক্রয় করলেন আবু সালেম।
ঝামেলা বাঁধলো তখন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর মুসলিম ফোবিয়া তৈরি হলো সেখানে। আবু সালেম মনিকা বেদীকে নিয়ে এবার পর্তুগালে চলে গেলেন।
লিসবনের জেল ও ভারত ফেরত
পর্তুগালে আরসালান আলী নামে বসবাস শুরু করলেন আবু সালেম। মনিকা বেদীর সাথে সুখেই দিন কাটছিলো তার। কিন্তুু এই সুখ বেশিদিন সইলো না কপালে। ইন্টারপোলের রেড ওয়ারেন্ট তো জারি ছিলোই। পর্তুগাল পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলো। মনিকা বেদীও গ্রেফতার হলেন। তারিখটা ছিলো ২০০২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। মুম্বাই সহ ভারতের সব জায়গায় প্রথম পাতায় প্রচারিত হলো তাদের গ্রেফতারের খবর। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন বলিউডের লোকজন। পর্তুগাল আদালতে দু’জনের সাজা হয় তিন বছরের। ভারত সরকার অনেক দেন-দরবার করে পর্তুগালের সাথে অপরাধী প্রত্যার্পন চুক্তি করে তিন বছর পরে দু’জনকেই মুম্বাই নিয়ে আসে। হাইকোর্টে আপিল করে পরবর্তীতে মুক্তি পান মনিকা বেদী।
আবু সালেমের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা চালু হয়। অধিকাংশ মামলাতেই তার যাবজ্জীবন কারাদনণ্ড হয়। তারপর থেকেই মুম্বাইয়ের আর্থার রোড জেলের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান এই দুর্ধর্ষ গ্যাংস্টার। খতম হয় একটি অপরাধময় জীবনের।
তথ্যসূত্র: Zaidi, S. Hussain. 2014. My Name is Abu Salem. Penguine Books, India.