বাইরে কামানের প্রচণ্ড গর্জন।
ব্রিটিশ পতাকাবাহী জাহাজ এইচএমএস ভিক্টরি’র চিকিৎসকের কেবিনে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন জাহাজের সার্জন উইলিয়াম বেটি। তার রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। পিঠ ফুঁড়ে ঢোকা গুলি অন্যপাশ দিয়ে বেরিয়ে না এসে রয়ে গেছে শরীরের ভেতরেই। রোগীর নিঃশ্বাসের সাথে উঠে আসছে রক্ত। প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যেও তার সহকারী রোগীর বুকে মালিশ করছে বলে কিছুটা হলেও উপশম হচ্ছে ব্যথার।
দরজা ঠেলে জাহাজের ক্যাপ্টেন টমাস হার্ডি কেবিনে প্রবেশ করলেন। পোড়খাওয়া সৈনিক তিনি। রোগীর অবস্থা যে মুমূর্ষু তাকে বলে দিতে হলো না। হাঁটু গেড়ে বিছানার পাশে বসে পড়লেন তিনি। তার উপস্থিতি টের পেয়ে আহত ব্যক্তি চোখ খুলে তাকালেন। তার অনুচ্চারিত প্রশ্ন বুঝতে দেরি হলো না ক্যাপ্টেনের।
“জয় আমাদের অত্যাসন্ন। শত্রু বহর ছারখার হয়ে যাচ্ছে।”
শেষবারের মতো বিজয়ের দীপ্তিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল আহত ব্যক্তির মুখ। নিজের, তথা ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জনের সংবাদে পরিতৃপ্ত হয়ে চোখ বুজলেন নৌ-ইতিহাসের অন্যতম সেরা অ্যাডমিরাল, হোরাশিও নেলসন।
জেনারেলদের নিয়ে যতটা মাতামাতি করা হয়, নৌবাহিনীর কমান্ডারদের তার কানাকড়িও জোটে না বললে অত্যুক্তি হবে না। কাউকে যদি ইতিহাসের কয়েকজন সেরা সেনাধ্যক্ষের নাম বলতে বলা হয়, তাহলে অন্তত আলেকজান্ডার, জুলিয়াস সিজার, নেপোলিয়নের কথা উঠে আসবে। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় ইতিহাসবিখ্যাত কয়েকজন নৌ সেনাপতির নাম বলতে, তাহলে খুব বেশি লোক উত্তর দেয়ার জন্য খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এর কারণ খুব দুর্বোধ্য নয়। স্থলবাহিনী সবসময়ই যতটা গুরুত্ব পেয়ে এসেছে, সেই তুলনায় নৌ আর বিমান বাহিনীকে সাধারণত সহকারী বাহিনী হিসেবেই দেখা হয়। তবে ইতিহাসে এমন অনেক নৌ কমান্ডার আছেন, দেশের যুদ্ধজয়ে যাদের অবদান বরঞ্চ স্থলবাহিনীর থেকে বেশিই ছিল। তাদের তালিকা করলে ব্রিটিশ ভাইস অ্যাডমিরাল হোরাশিও নেলসন একেবারে উপরের সারিতেই থাকবেন। কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে তাকে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অ্যাডমিরাল বলতে চাইলেও সেটা তর্কযোগ্য। তবে নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ নৌবহরের শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করে তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তার সর্বশেষ, এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয় ট্রাফালগার যুদ্ধ।
হোরাশিও নেলসন
২৯ সেপ্টেম্বর, ১৭৫৮ সাল। নরফোক, ইংল্যান্ড।
বার্নহাম থর্প নামে ছোট্ট এক গ্রামে রেভারেন্ড এডমুণ্ড নেলসন ও তার স্ত্রী ক্যাথেরিনের কোল আলো করে এলো তাদের পঞ্চম সন্তান। তার নাম রাখা হলো হোরাশিও নেলসন। এডমুণ্ড আর ক্যাথেরিনের সর্বসাকুল্যে এগারোটি ছেলে-মেয়ে ছিল, তবে তারা কেউই নেলসনের মতো বিখ্যাত হতে পারেননি।
নেলসনের মামা, ক্যাপ্টেন মরিস সাক্লিং নেলসনের ১২ বছর বয়সে তাকে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির এক জাহাজে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। তার জাহাজের নাম ছিল এইচএমএস রাইজনেবল (HMS Raisonable)। সাগরে কয়েকটি অভিযানের পর ১৭৭৩ সালে তাকে পাঠানো হলো আর্কটিকে। সেখান থেকে সেই বছরেই তিনি ফিরে আসেন ইংল্যান্ড। এরপর সিহর্স জাহাজে করে তিনি চলে গেলেন ইস্ট ইন্ডিজ। ১৭৭৬ সালে তিনি আবার দেশে ফেরত এলে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হলো। ২৬ সেপ্টেম্বর তাকে ওরসেস্টার জাহাজের সাথে ভারপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট হিসেবে সংযুক্ত করা হলো। ১৭৭৭ সালের ১০ এপ্রিল নেলসনকে পরিপূর্ণ লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত করে লোয়েস্টফ জাহাজে করে প্রেরণ করা হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজে।
১৭৭৫ সাল। ব্রিটিশ আমেরিকাতে শুরু হয়েছে স্বাধীনতার লড়াই। নেলসনও জড়িয়ে পড়লেন এই লড়াইয়ে। পারিবারিক প্রভাব ব্যবহার করে ১৭৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বাগিয়ে নিলেন ব্যাজার জাহাজের কম্যান্ডারের পদ। হন্ডুরাসের মস্কুইটো উপকূল ধরে আমেরিকান মিলিশিয়ারা প্রায়শই ব্রিটিশ বানিজ্য জাহাজের উপর হামলা করত। নেলসনের উপর আদেশ হলো সেখানে পাহারা বসানোর।
১১ জুন ১৭৭৯ সালে পদোন্নতি দিয়ে নেলসনকে করা হলো এইচএমএস হিচিংব্রুক জাহাজের ক্যাপ্টেন। ততদিনে স্পেন ফ্রান্সের দেখাদেখি আমেরিকান স্বাধীনতাকামীদের সমর্থন দেয়া আরম্ভ করেছে। ফলে নেলসনকে পাঠানো হলো নিকারাগুয়াতে স্প্যানিশ স্যান জুয়ান দুর্গ আক্রমণ করতে। নেলসন এই কাজে সফল হন। কিন্তু এরপরই তিনি প্রবল জ্বরে পড়ে গেলে তাকে স্বাস্থ্য ফিরে পেতে জ্যামাইকাতে নিয়ে আসা হয়। এসময় তার উপর জ্যানাস নামে এক জাহাজের দায়িত্ব থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তাকে ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে আনা হয়।
সুস্থ হয়ে নেলসন চেপে বসলেন অ্যাল্বারমার্লে জাহাজে। ১৭৮২ সালের জুলাইয়ে তিনি এসে পৌঁছলেন কানাডা। এখানে হ্যালিফ্যাক্স থেকে পরের বছরের মে মাসে অ্যাডমিরাল হুডের অধীনে নেলসন রওনা হলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেখান থেকে তাকে ছয় মাসের জন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়া হলো।
১৭৮৪ সালে এইচএমএস বোরিয়াস জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে নেলসন আবার চললেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ।সেখানে ব্রিটিশ আইন অমান্য করে আমেরিকান বনিকদল আর কলোনির অধিবাসীদের মধ্যে বাণিজ্য চলছিল। হাই কমান্ডের নির্দেশ ছিল এ কাজ বন্ধ করার। সাগরে পাহারা বসালেন নেলসন, যাতে আমেরিকান বাণিজ্য জাহাজ দ্বীপে ঢুকতে না পারে। নেভিস দ্বীপে তার সাথে দেখা হলো বিধবা নারী ফ্রান্সিস নেসবিটের। ১৭৮৭ সালের মার্চে ফ্রান্সিস আর নেলসনের বিয়ে হয়ে যায়। কয়েক মাস পর অর্পিত দায়িত্ব শেষ হলে ফ্রান্সিস আর সৎ ছেলে জোশিয়াহকে নিয়ে নেলসন ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। পরবর্তী পাঁচ বছর সাগরে যাবার সুযোগ হলো না। রয়্যাল নেভি অর্ধেক বেতনে নেলসনকে বাড়িতেই রেখে দিল।
১৭৯৩ সাল।
ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। নড়ে গেছে ফ্রান্সে ষোড়শ লুইয়ের গদি। বিপ্লবের মূল কথা নাগরিক অধিকার ও সাম্যবাদ, একনায়কের হাত থেকে ক্ষমতার রাশ তুলে দেয়া জনগণের হাতে। যদিও বিপ্লব পরবর্তী ঘটনাবলী বিপ্লব-পূর্ব আশাবাদ পূরণে অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছিল, তথাপি ফরাসি জনগণ রাজতন্ত্রে ফিরে যেতে ইচ্ছুক ছিল না। এদিকে ইংল্যান্ডসহ ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলো বিপ্লবীদের উত্থানে বিচলিত হয়ে ওঠে। তাদের ভয় ছিল ফরাসিদের দেখে স্ব স্ব দেশের মানুষও যদি উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে তাহলে তো বিপদ। ফলে শুরু হয় ফ্রেঞ্চ রেভ্যুলশনারি ওয়ার্স, যেখানে ব্রিটিশরাও একটি পক্ষ।
যুদ্ধের শুরুতে নেলসনকে নিযুক্ত করা হয় এইচএমএস আগামেমননে’র কম্যান্ডে। তিনি ভূমধ্যসাগরে লর্ড হুডের অধীন নৌবহরে যোগ দেন। তিনি এখানে আশেপাশের ফ্রান্স ও তার স্প্যানিশ মিত্রদের বন্দর অবরোধে ভূমিকা রাখেন। জাহাজ থেকে নেমে স্থলযুদ্ধেও জড়িয়ে পড়েন। ইতালির উপকূলে অনেক জায়গাতেই নেলসন লড়াই করেন। এর মাঝে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ১৭৯৪ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিরাজমান ক্যাল্ভি শহর অবরোধ।এখানে শত্রুপক্ষের গুলিতে নেলসনের ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। তবে তিনি লড়াই চালিয়ে যান। ফরাসিদের বিপক্ষে বীরত্বের পুরষ্কার হিসেবে ১৭৯৬ সালের এপ্রিলে রয়্যাল নেভি তাকে কমোডোর পদে উন্নীত করে।
১৭৯৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নেলসন স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে সেন্ট ভিনসেন্ট অন্তরীপের সংঘর্ষে আবারও নিজের জাত চেনালেন। এখানে স্যার জন জার্ভিসের অধীনস্থ ব্রিটিশ নৌবহর মুখোমুখি হয় সংখ্যায় অধিক স্প্যানিশ বহরের। লড়াইয়ের একপর্যায়ে নেলসন একাই কয়েকটি স্প্যানিশ জাহাজের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি নিজে নেতৃত্ব দিয়ে স্যান নিকোলাস আর স্যান জোসেফ নামে দুটি শত্রুজাহাজে লাফিয়ে পড়েন। সব মিলিয়ে চারটি স্প্যানিশ জাহাজ নেলসন কব্জা করেন। অনেক স্প্যানিশ অফিসার বন্দি হয়। ঠিক ছ’দিন পর তাকে পদোন্নতি দেয়া হলো। নেলসন হলেন রিয়ার অ্যাডমিরাল। তাকে নাইটহুড প্রদান করে মেরিন কর্পসের সম্মানসূচক কর্নেল উপাধি দেয়া হয়।
১৭৯৭ সালের জুলাই নেলসনের জীবনে দুর্যোগের সময়। টেনেরিফের স্যান্টা ক্রুজে মালামাল ভর্তি এক স্প্যানিশ জাহাজ আক্রমণ করে তিনি ব্যর্থ হন। তুমুল লড়াইয়ে তার ডান বাহুতে আঘাত লাগে। ক্ষতস্থানে সংক্রমণ হলে চিকিৎসকেরা বাধ্য হন তার ডান হাত কেটে ফেলতে। দ্রুত তাকে দেশে পাঠানো হয়, এখানে রাজা দ্বিতীয় জর্জ তার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং নেলসনের জন্য রাষ্ট্রীয় পেনশনের ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু নেলসন বসে থাকার পাত্র নন। একটু ধাতস্থ হয়েই পরবর্তী বছরের এপ্রিলে এইচএমএস ভ্যানগার্ড জাহাজে পতাকা তুলে তিনি বেরিয়ে পড়লেন সাগরে। পর্তুগালের উপকূলে তিনি ব্রিটিশ কমান্ডার জারভিসের বহরে যোগদান করেন।
জারভিস একটি স্কোয়াড্রন আলাদা করে নেলসনের হাতে তুলে দেন। তার উপর দায়িত্ব দেয়া হলো ফরাসি বন্দর ত্যুঁলো’তে (Toulon) তাদের নৌবহরের উপর নজর রাখা। সেখানে জড়ো হচ্ছে ফরাসি সেনাবাহিনী, তাদের নেতৃত্বে উঠতি এক জেনারেল, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।
নেলসন চলছিলেন ত্যুঁলোর দিকেই। কিন্তু সার্ডিনিয়ার কাছে প্রচণ্ড ঝড়ে জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে মেরামতের কাজে চারদিন ব্যয় করতে হয়। এরপর তিনি যখন ত্যুঁলো’তে পৌঁছলেন ততদিনে পাখি উড়ে গেছে। নেলসনের কাছে তাদের গন্তব্য নিয়ে কোনো তথ্য নেই। ফলে তিনি ইতালির পশ্চিম উপকূল চষে ফেললেন, কিন্তু কোথায় নেপোলিয়ন? খবর আসলো ফরাসিরা মাল্টা দখল করেছে। এরপর নেলসনের কাছে সংবাদ এলো নেপোলিয়ন কোথায় যাচ্ছেন, মিশর।
নেলসনের বহর মুখ ঘোরাল পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দিকে। জুনে আলেক্সান্দ্রিয়া পৌঁছে চারিদিক অনুসন্ধান করেও ফরাসী বহরের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া গেল না। নেলসন সিরাকিউজে গিয়ে রসদপত্র সংগ্রহ করে নীলনদের দিকে এগিয়ে এলেন। এখানে আবুকির বন্দরে খুঁজে পেলেন নোঙর করা ফরাসি যুদ্ধজাহাজের বহর, যাদের কমান্ডার অ্যাডমিরাল ব্রুয়ো। ১৭৯৮ সালের ১লা আগস্টের রাতে বিখ্যাত ব্যাটল অফ নাইলে’র লড়াইতে নেলসন ফরাসি নৌবহর আক্রমণ করেন। ১৩টি জাহাজ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়, রক্ষা পায় মাত্র ৪টি। তখন পর্যন্ত নেপোলিয়নের অপ্রতিরোধ্য বাহিনীর বিরুদ্ধে বলার মতো ব্রিটিশ বিজয় ছিল এই একটিই।
নেলসনের কাজে নেপোলিয়ন মহাবিপদে পড়ে গেলেন। তার ইচ্ছা ছিল মিশর দখল করে ব্রিটিশদের অর্থনীতির উপর আঘাত হানা, যাতে ভূমধ্যসাগর এবং তৎসংলগ্ন রাস্তা দিয়ে ব্রিটিশরা বাণিজ্য করতে না পারে। কিন্তু নেলসনের হাতে ফরাসি নৌবহর বিধ্বস্ত হলে তাকে সেই পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হলো। নৌবহর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেলে মিশরে অবরুদ্ধ হয়ে থাকতে হবে ভেবে চিন্তায় নেপোলিয়ন মিশর ত্যাগ করেন।
এদিকে নেলসন তখন নেপলসে, ভাসছেন প্রশংসা আর সম্মানে। তাকে আতিথেয়তা দিচ্ছেন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার উইলিয়াম হ্যামিল্টন আর তার স্ত্রী, এমা। নেলসনকে ব্যারন উপাধি দেয়া হলো এখানে। নেপলসে থাকাকালে নেলসন আর এমার মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি রাজনীতিতেও কিছুটা জড়িয়ে পড়েন। নেপলসের রাজা ফার্দিন্যান্ডকে পরামর্শ দেন ফরাসিদের বিপক্ষে নামতে। এর ফল হলো ভয়াবহ। ফরাসিরা ফার্দিন্যান্ডকে ইতালি থেকেই বিতাড়িত করে, তিনি আশ্রয় নেন সিসিলিতে।
এমা হ্যামিল্টনের সাথে সম্পর্ক এবং ইতালিতে বিপ্লবী শক্তির উত্থানের আশঙ্কায় ইংল্যান্ড থেকে নেলসনকে ডেকে পাঠানো হলো। ১৮০০ সালে দেশে পৌঁছান তিনি। প্রথমেই যে কাজ করলেন তা হলো স্ত্রী ফ্রান্সিসের সাথে সম্পর্কছেদ। এরপর অনেকটা প্রকাশ্যেই এমার সাথে সখ্য গড়ে তুললেন তিনি।
১৮০১ সালে তাকে ভাইস অ্যাডমিরাল পদোন্নতি দিয়ে অ্যাডমিরাল পার্কারের অধীনে বাল্টিক সাগরে প্রেরণ করা হয়। সেখানে প্রতিপক্ষ রাশিয়ান জার প্রথম পলের নেতৃত্বাধীন জোট, যার সদস্য সুইডেন, প্রুশিয়া আর ডেনমার্ক। এরা ফরাসিদের সাথে চলমান যুদ্ধে তখন অবধি নিরপেক্ষতা বজায় রাখায় ইংল্যান্ড বাল্টিকে অবরোধ আরোপ করেছে। সেই অবরোধ ভাঙতেই পলের জোট জড়ো হয়েছে। ১৮০১ সালের ২রা এপ্রিল পার্কারের আদেশ অমান্য করে নেলসন জোট সদস্য ডেনমার্কের বহরকে আক্রমণ করে বসেন। ব্যাটল অফ কোপেনহেগেনে পরাজয়ের পর ডেনমার্ক ইংল্যান্ডের সাথে শান্তিচুক্তি করতে বাধ্য হয়। এই ঘটনার পর পার্কারকে সরিয়ে নেলসনকে নৌবহরের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করা হলো।