Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রাচীন গ্রীসের জীবনযাত্রার অজানা ৭টি দিক

প্রাচীন গ্রীসের নাম শুনলে তাদের উপকথার জিউস, পোসাইডন ও অ্যাপোলোর মতো দেবতা কিংবা হেরা, এথেনার মতো দেবীদের নাম চলে আসে আমাদের অনেকের মাথায়। অনেকে কল্পনা করতে শুরু করে দেন তাদের বিশাল বিশাল সব স্থাপনার কথা, যা দেখলে আসলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। তবে তাদের দৈনন্দিন জীবনে আরো মজার কিছু ব্যাপার ছিল যা জানলে অবাক না হয়ে উপায় নেই। তৎকালীন গ্রীসের তেমনই ৭টি মজার বিষয় জানাতে আজকের এ লেখার আয়োজন।

১. ডাক্তারদের পরীক্ষানিরীক্ষা

প্রাচীন গ্রীসে যখন কোনো রোগী শরীর পরীক্ষা করাতে ডাক্তারের কাছে যেত, তখন এক অদ্ভুত কাজ করে বসতেন সেই ডাক্তার। রোগীকে ধরে তার কানের ময়লা বের করে এরপর সোজা সেটা নিজের মুখে চালান করে দিতেন তিনি, জিহবায় নাড়িয়ে নাড়িয়ে চেষ্টা করতেন সেই ময়লার স্বাদ বোঝার!

Source: Prevention

উপরে যা পড়লেন তা বিন্দুমাত্র বাড়িয়ে বলা হয় নি কিন্তু। সত্যি সত্যিই প্রাচীনকালে গ্রীসের ডাক্তাররা এভাবে একজন রোগীকে পরীক্ষা করতেন। এটা আসলে রোগীর রোগের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতো। আজকের দিনে নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা করে রোগীর রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়, কিন্তু সেই যুগে তেমন ব্যবস্থা ছিল না। তাই রোগীর কফের মাঝেই আঙুল চালিয়ে কিংবা বমির সামান্য অংশ চেখে নিয়েই রোগীর অবস্থা ও রোগের মাত্রা সম্পর্কে ধারণা করতে হতো একজন ডাক্তারকে।

এর সূচনা হয়েছিলো হিপোক্রেটিসের হাত ধরে। তিনি বিশ্বাস করতেন, শরীর তরল পদার্থে পরিপূর্ণ এবং সেই তরলের প্রতিটির স্বাদ আলাদা। গ্রীক ডাক্তারদের শেখানো হতো সেই তরলগুলোর প্রকৃত স্বাদ কেমন সেই সম্পর্কে, যেন অসুখে ধরলে রোগীর দেহের নানা তরলের স্বাদ পরখ করে তিনি অসুস্থতা সম্পর্কে বুঝতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে মূত্রের কথাতেই আসা যাক। হিপোক্রেটিক মেডিসিন অনুযায়ী মূত্রের স্বাদ হওয়ার কথা ডুমুরের জুসের মতো। তাই রোগীর কোনো শারীরিক সমস্যা হলে ডাক্তার যদি মূত্রের খানিকটা চুমুক দিয়ে সেই স্বাদ না পেতেন, তাহলেই তিনি বুঝে নিতেন যে কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে।

২. পাথর দিয়ে পরিষ্কার

টয়লেট পেপার আজকের দিনে সহজলভ্য হলেও মাত্র ষোড়শ শতকে ইউরোপে এর প্রচলন ঘটে। এর আগে যে মানুষ নানাবিধ জিনিস ব্যবহার করে টয়লেট পেপারের কাজ সারতো তা তো বলাই বাহুল্য।

প্রাচীন গ্রীসের কথাই ধরা যাক। রোমানদের মতো তারাও লাঠির আগায় স্পঞ্জ লাগিয়েই লজ্জাস্থান পরিষ্কার করার কাজটা সারতো। অবশ্য সবাই এমনটা করতো না। বরং অধিকাংশ লোক ব্যবহার করতো পাথর!

Source: thehistoryblog.com

তাদের টয়লেটগুলোতে জমানো থাকতো পাথর। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার পর লজ্জাস্থানে পাথর ঘষে তারা নিজেদের পরিষ্কার করে নিত। পাথর তো আর অফুরন্ত ছিল না। তাই পাথর ব্যবহারে জনগণকে মিতব্যয়ী হবার পরামর্শ দিয়ে প্রাচীন গ্রীসে একটি কথা প্রচলিত ছিল, “পরিষ্কার করতে তিনটি পাথরই যথেষ্ট!

কখনো তারা সিরামিকের ভেঙে যাওয়া পাত্রের টুকরো দিয়ে সেই কাজ সারতো। কেউ যদি আবার অতিরিক্ত প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতো, তাহলে প্রথমে কোনো পাত্রে শত্রুর নাম খোদাই করতো। এরপর সেই পাত্র ভেঙে ভাঙা টুকরোগুলো দিয়ে নিজেকে পরিষ্কার করে অদ্ভুত সুখ লাভ করতো তারা, যেন শত্রুর মুখেই মাখিয়ে দিচ্ছে হলুদ পদার্থ!

৩. পুরুষদের মাঝে সমকামিতা

প্রাচীনকালে রোমে পুরুষদের মাঝে সমকামিতা চালু ছিল। একজন অপেক্ষাকৃত বয়স্ক লোক অল্প বয়স্ক কোনো ছেলেকে তার ‘ভালোবাসার মানুষ’ হিসেবে বেছে নিত। এক্ষেত্রে সাধারণত বয়স্ক লোকটিই এগিয়ে যেত। দেখতে সুন্দর, বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছায়নি, এমন একজন ছেলের সামনে তারা জীবন্ত মোরগ নিয়ে হাজির হতো উপহার হিসেবে। আর এই উপহার দিয়েই ছেলেটির মন জয় করে নিত সেই লোকটি।

Source: Marie-Lan Nguyen

এরপর থেকে কৈশোরে উপনীত হবার আগপর্যন্ত ছেলেটি তার ভালোবাসার মানুষের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে থাকতো। যখনই তার মুখে দাড়ি গজাতে শুরু করতো, তখনই তার বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসতো। ওদিকে মুখে দাড়ি গজানোর অর্থ সেই ছেলেটি ততদিনে ‘আসল পুরুষ’ হয়ে উঠেছে। তাই নতুন পুরুষ হিসেবে সেই ছেলেটি আবার অন্য কোনো বাচ্চা ছেলেকে সঙ্গী হিসেবে নিতে চাইত। এভাবে সমকামিতার চক্র চলতেই থাকত প্রাচীন রোমে।

৪. খেলোয়াড়দের ঘাম

এককালে গ্রীসে খেলোয়াড়রা অদ্ভুত এক কাজ করতো। কোনো খেলা শুরুর আগে শরীরে একটা সুতোও রাখতো না তারা, বরং সারা গায়ে মেখে নিত তেল। এরপর উলঙ্গ হয়েই খেলার ময়দানে নেমে যেত তারা। খেলা শেষে তেলের কারণে সারা গায়ে ভালোই ময়লা লেগে থাকতো। তেল মাখানো শরীর থেকে এই ঘাম ও ধূলাবালি মিশ্রিত ময়লা পরিষ্কার করা যে সহজ ও দৃষ্টিনন্দন কোনো বিষয় ছিল না তা তো সহজেই অনুমেয়। তবে এগুলো কিন্তু ফেলনা কিছু ছিল না!

Source: Ancient Facts

‘গ্লৈওস সংগ্রাহক’ নামে এক শ্রেণীর দাস ছিল গ্রীসে, যাদের কাজই থাকতো খেলোয়াড়দের শরীর থেকে এসব ময়লা সংগ্রহ করা। তারা বোতল নিয়ে খেলা শেষে খেলোয়াড়দের কাছে ছুটে যেত আর একের পর এক বোতল পূর্ণ করতে থাকতো। কেন এই ময়লা সংগ্রহ? কারণ এগুলোই যে পরবর্তীতে বাজারে বিক্রি করা হতো! শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সত্যি যে, এককালে গ্রীসের মানুষ খেলোয়াড়দের শরীর থেকে পাওয়া এই ময়লাই তাদের নিজেদের শরীরে মাখাতো ব্যথা থেকে মুক্তির আশায়!

৫. হাঁচি দিয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণ

গ্রীক চিকিৎসক সরেনাস মনে করতেন, গর্ভধারণ রোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পুরো দায়দায়িত্ব একজন নারীর। এজন্য কোনো নারী যদি গর্ভবতী হয়ে যেতেন, তাহলে তিনি স্বামীর বদলে তার স্ত্রীকেই বরঞ্চ দায়ী বলতেন। আসলে একজন পুরুষ কীভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ রোধে সাহায্য করতে পারবে, এ জিনিসটাই তাদের মাথায় আসতো না।

Source: Ancient Origins

তবে হাজার বছর আগের গ্রীসে নারীদের গর্ভধারণের ব্যাপারে বরঞ্চ সরেনাসকেই বেশি দায়ী বলা যায়। তার অদ্ভুত জ্ঞানই আসলে এর জন্য দায়ী। তিনি মনে করতেন, হাঁচি দিলেই বুঝি একজন নারী অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ঠেকাতে পারবে। তিনি পরামর্শ দিতেন, শারীরিক সম্পর্কের পর একজন নারী উবু হয়ে বসে হাঁচি দিয়ে নিজেকে পরিষ্কার করে নিলেই তার আর গর্ভধারণ নিয়ে ভাবার দরকার পড়বে না।

৬. নারীদের সমকামিতা

পুরুষদের পাশাপাশি তৎকালীন নারীদের মাঝেও প্রচলিত ছিল সমকামিতা। দুজন সমকামী মানসিকতার পুরুষ কীভাবে একে অপরের সাথে মিলিত হতে পারে সেই সম্পর্কে ধারণা থাকলেও নারীরা কীভাবে এমনটা করে থাকে তা নিয়ে তৎকালীন সমাজ ছিল সন্দিহান। আসলে নারীদের শারীরিক গঠনই তাদেরকে এমন দোটানায় ফেলে দিয়েছিল।

Source: uncloseted.wordpress.com

অবশেষে তারা সিদ্ধান্তে আসে, যেসব নারী সমকামে জড়িয়ে পড়ে, তাদের ক্লিটোরিস অনেক বড়, যা কিনা ‘ফিমেল পেনিস’ হিসেবে কাজ করে! আর বৃহদাকার এই ক্লিটোরিসকেই তারা নারীদের মাঝে সমকামিতার কারণ বলে চিহ্নিত করেছিল।

৭. কুমিরের মল দিয়ে বানানো ক্রিম

আজকের দিনে আমরা চিড়িয়াখানা, পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেল ছাড়া কুমিরের দেখা পাই না। তবে হাজার হাজার বছর আগেকার গ্রীসের পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। তাদের জীবনের সাথে কুমির বেশ ভালোভাবেই জড়িয়ে ছিল। এজন্য কুমিরের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় তাদের ওষুধপত্রেও।

Source: Rashis Sketchblog

এই যেমন চোখের চারপাশে দাগের কথাই ধরা যাক। গ্রীকরা চোখের চারপাশে দাগ প্রশমনে কুমিরের মল সংগ্রহ করে সেটাকে মিহি গুঁড়া করে এরপর পানিতে মিশিয়ে চোখের চারপাশে মাখাত!

ফিচার ইমেজ- Ancient History Encyclopedia

Related Articles