কাবা, পৃথিবী জুড়ে মুসলিমদের কাছে পবিত্রতম স্থান, অবস্থান তার মক্কা নগরীতে, যার পেছনে আছে সহস্র বছরের ইতিহাস। কিন্তু এই ইতিহাসের বেশিরভাগই আসলে অনেক মানুষের কাছে অজানা। কেবল হজ্ব বা ওমরা করতে এই পবিত্র তীর্থস্থানে যান মুসলিমরা, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর জন্ম আর বেড়ে ওঠা এ মক্কা শহরে- এটুকুই সবার সাধারণভাবে জানা। কিন্তু এই কাবা নিয়ে যে রক্তাক্ত অজানা ইতিহাস আছে সেটা অনেকে শুনলেই কেন যেন আঁতকে ওঠেন। এরকম পবিত্র স্থানেও কেউ রক্ত ঝরাতে পারে? যুগে যুগে অনেকবারই কাবাতেও হয়েছে রক্তপাত। আজকে চলুন মক্কা বা কাবার ইতিহাস জেনে আসা যাক। হয়ত এর বেশিরভাগ আপনার অজানা।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ হলেও মুসলিমদের কাছে পবিত্র দুটো নগরী হলো মক্কা আর মদিনা। তৃতীয় পবিত্র নগরী জেরুজালেম।মক্কা মূলত পবিত্র কাবার শরিফের কারণেই পরিচিত। কাবা শব্দের অর্থ ‘ঘনক’, ‘কিউব’। কালো ঘরটার ঘনক আকৃতির কারণেই এই নাম। চার হাজার বছর আগে এই মক্কার আশপাশের অঞ্চল ছিল জনবিরল মরুভূমি।
আদি ইসলামিক সূত্র অনুযায়ী ইহুদী, খ্রিস্টান আর ইসলাম ধর্মের পিতা নবী আব্রাহাম/হযরত ইব্রাহিম (আ)-কে তাঁর স্ত্রী সারাহ ঈর্ষান্বিত হয়ে হাজেরার শিশুপুত্র ইসমাইল (আ)-কে মা-সহ চোখের আড়াল করতে অনুরোধ করেন। আল্লাহ্র আদেশে ইব্রাহিম (আ) ইসমাইল (আ)-কে তাঁর মা হাজেরাসহ এই মক্কার বিরান ভূমিতে রেখে আসেন, যদিও পুত্রবিচ্ছেদে তাঁর প্রচণ্ড কষ্ট হয়েছিল। সেখানে বুখারি শরিফ মতে ফেরেশতা জিবরাঈলের (আঃ) ডানার আঘাতে ‘জমজম’ কূপ সৃষ্টি হয়। বিরান মরুর বুকে পানির সন্ধান পেয়ে ঐ এলাকায় লোক জড়ো হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে এই জায়গায় লোকালয় গড়ে ওঠে। ইসমাইলের নামানুসারে এই জনগোষ্ঠীকে বলা হত ইসমাইলাইট/ইসমাইলি। হযরত ইসমাইল (আ) তাদের কাছেই আরবি শেখেন, যেহেতু তাঁর মাতৃভাষা আরবি ছিল না।
ইসলামি সূত্র মতে, ইসমাইল বড় হবার পর হযরত ইব্রাহীম (আ) মক্কায় আসেন এবং আল্লাহ্র আদেশে এখানে কাবার নির্মাণ শুরু করেন পুত্রের সাথে। (মক্কার প্রাচীন নাম ছিল বাক্কা, আর মদিনার আগের নাম ছিল ইয়াসরিব) কাবার প্রাথমিক গঠন নির্মাণ শেষে একজন ফেরেশতা তাঁর কাছে অপার্থিব ‘সাদা’ পাথর নিয়ে আসেন, যেটা কাছের আবু-কুবাইস পর্বতের উপর আকাশ থেকে পতিত হয়েছিল (উল্কাপিণ্ড)। সেটা কাবার পূর্ব কোণে স্থাপন করে দেয়া হয়। আবার কোনো মতে, হযরত আদম (আ) নিজেই এ পাথর নিয়ে আসেন বেহেশত থেকে। কালের বিবর্তনে সেই সাদা পাথর কালো হতে থাকে এবং এটি এখন ইসলাম ধর্মের খুব গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র বস্তু। সত্যি বলতে, বর্তমান কাবাঘরে সেই আদি কাবার কিছুই অবশিষ্ট নেই, কেবল দুটো পাথর ছাড়া। একটি হলো সেই পাথর, যাকে ‘হাজরে আসওয়াদ’ বলে, যার অর্থ ‘কালো পাথর’। আরেকটি হলো সেই পাথর, যেটিতে হযরত ইব্রাহীম (আ) এর পায়ের ছাপ আছে, যেটির উপর দাঁড়িয়ে তিনি নির্মাণকাজ পরিচালনা করতেন বলে বর্ণিত আছে। এর নাম ‘মাকামে ইব্রাহীম’।
৫৭০ সালে আব্রাহার হস্তিবাহিনীর আক্রমণের সময় কাবা রক্ষার অলৌকিক ঘটনার বিস্তারিত ঘটনা রোর বাংলার আরেকটি পোস্টে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে বিধায় এ পোস্টে আমরা পরের ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করব। আগ্রহীগণ হাতিবাহিনী ধ্বংসের ঘটনা পড়তে এ লিংকে ক্লিক করতে পারেন।
৬০৫ সালে হযরত মুহাম্মাদ (সা) এই কালো পাথর নিয়ে একটি কোন্দল সমাধান করে দেন, যখন আগুনে কাবা পুড়ে গিয়ে অনেক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। নিজের হাতে তিনি পাথরটি পুনঃস্থাপন করেন কাবাতে। এখন সেই কালো পাথর রুপালি ফ্রেমে আবদ্ধ করে কাবার কোনে লাগানো আছে। এখান থেকে একটি দীর্ঘ লাইন মেঝেতে দাগ কাটা আছে অনেক দূর পর্যন্ত। এ লাইন থেকে শুরু করে একবার ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরে আবার ঐ লাইনে আসা হলো একবার তাওয়াফ। এভাবে সাতবার তাওয়াফ করতে হয়। এটি হজ্বের একটি অংশ এবং হজ্ব মৌসুম বাদে ওমরাতেও এভাবে তাওয়াফ করতে হয়। প্রাচীনকালে বনী ইসরাঈলের লোকেরাও হুবহু এভাবে ঘুরে ঘুরে জেরুজালেমে তাওয়াফ করত বলে ইহুদী পণ্ডিতগণ জানিয়েছেন।
ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী এই পাথরে চুমু খেলে পাপমোচন হয়। তাই এই পাথরের সামনে সবসময়ই জটলা থাকে, কিংবা থাকে লম্বা লাইন, সবাই চুমু খাওয়ার জন্য উদগ্রীব।
কাবার এই কালো পাথরের উৎস নিয়ে অমুসলিমগণ যে গবেষণা করেননি তা না। কেউ বলেছেন এটি বিরল প্রজাতির পাথর, কেউ বলেছেন উল্কাপিণ্ড। কিন্তু এই পাথরের পানিতে ভাসতে পারার বৈশিষ্ট্য এরকম অনেক হাইপোথিসিস বাতিল করে দিয়েছে। এখনও এর উৎস শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। কেউ কেউ ‘আরবের আটলান্টিস’ বলে পরিচিত বালির নিচে ডুবে থাকা পৌরাণিক ‘ইরাম’ নগরীর সাথে এই পাথরের সম্পর্ক খুঁজতে চেয়েছেন।
‘হারাম’ শব্দের অর্থ ‘অবৈধ’ এবং ‘পবিত্র’ দুটোই হয়। পবিত্র অর্থে মসজিদুল হারাম অর্থ পবিত্র মসজিদ। আবার অন্য অর্থে, এখানে যুদ্ধ আর রক্তপাত নিষিদ্ধ বিধায় একে মসজিদুল হারাম বলে। মক্কা বিজয়ের সময় কয়েকজন অপরাধী এ কারণে মসজিদুল হারামে লুকিয়ে পড়েছিল বলে জানা যায়, কারণ সেখানে কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবে না।
কাবাকে অনেক নামেই কুরআন-হাদিসে ডাকা হয়েছে; বাইতুল হারাম (Sacred House), বাইতুল্লাহ (House of Allah), বাইতাল আতিক (Ancient House) এবং আওয়াল উল বাইত (First House)। এর দিকে ফিরেই মুসলিমরা নামাজ আদায় করেন (‘কিবলা’), তবে এর আগে জেরুজালেমের পবিত্র ঘরের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করা হত। কাবা সম্পর্কে অনেককাল ধরেই কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল যে, কাবার উপর দিয়ে কোন পাখি বা কিছুই উড়ে যেতে পারে না। আসলে অনেক পাখিই কাবার ওপর দিয়ে উড়ে যায় এবং উপরে বসেও। কাবা পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থিত, কিংবা কাবা বরাবর সোজা আকাশেই স্বর্গদ্বার- এমন কথাও প্রচলিত ছিল।
ইসলামি ইতিহাস অনুযায়ী, হযরত ইসমাইল (আ) এর সময় সেখানে একত্ববাদ প্রচলিত থাকলেও কালক্রমে মক্কার মানুষেরা মূর্তিপূজা শুরু করে। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর জন্মের সময় সেখানে ৩৬০টি দেবদেবীর মূর্তি ছিল। পরে হযরত ইব্রাহীম (আ)/হযরত ইসমাইল (আ) এর অনুসরণ করা একত্ববাদ ধর্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠার সময় ৬২৯ সালে হযরত মুহাম্মাদ (সা) সেসব মূর্তি অপসারণ করেন। একই সাথে হযরত ইসমাইল (আ) এর আমল থেকে চলে আসা হজ্বপ্রথা বহাল রাখা হয়। এজন্য অনেকে এটিকে পৌত্তলিক প্রথা মনে করলেও আসলে এর উৎস ছিল আরো আগে।
উত্তর আরবের নাবতীয়দের দেবতা হুবাল, উজ্জা- এরা জায়গা পায় মক্কার কাবাতে এবং এক পর্যায়ে মক্কাবাসীদের প্রধান দেবতা হয়ে দাঁড়ায়। কখনো কখনো কাবাকে কিংবা কালো পাথরকে নারীত্বের উর্বরতার প্রতীক অর্থেই দেখা হত বলে কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায়, প্রাচীন কিছু আত্মজীবনীতে কাবাকে ব্যাকরণে স্ত্রীলিঙ্গ হিসেবে ধরা হয়। তাছাড়া প্রাচীন আরবের Fertility Rite (নারী বা পুরুষের উর্বরতা নিশ্চিত করতে যে উপাসনা করা হত) খুবই প্রচলিত ছিল। এরকম একটি Fertility Rite ছিল সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে কাবাঘর প্রদক্ষিণ করা। তখন বিশ্বাস করা হত, এতে নারীদের সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা আর পুরুষদের সক্ষমতা আরো বাড়বে।
তবে দূর দূরান্ত থেকে সকল ধর্মের মানুষ কাবা প্রদক্ষিণ করতে আসত। এই প্রথা অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল, এখনও আছে। আর যেহেতু মক্কায় রক্তপাত নিষিদ্ধ বলে একটা অলিখিত নিয়ম ছিলই, তাই বিনা দাঙ্গায় ব্যবসা করার জন্য খুব আদর্শ জায়গা ছিল সেটি। আর হজ্বের মৌসুমে আগতদের সাথে ব্যবসা করে ফুলে-ফেঁপে ধনী হয়ে যেত মক্কার ব্যবসায়ীরা।
হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর মৃত্যুর পর অনেকবার কাবা পুনর্নির্মাণ হয়, এর মধ্যে কোনো কোনো বার হয় কাবা আক্রমণের মত ঘৃণ্য কারণে। এখন সেই কাবা নিগ্রহের ইতিহাস শুরু করা যাক।
প্রথম মক্কা অবরোধ (৬৮৩ সাল)
খলিফার পদ নিয়ে যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাবা। ৬৮৩ সালে উমাইয়া শাসক ইয়াজিদ সম্ভাব্য বিদ্রোহ/গৃহযুদ্ধ দমন করতে আরবে সৈন্য পাঠান। মদিনা দখল করে মদিনার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সেই বাহিনী। কিন্তু মক্কাবাসীরা আত্মসমর্পণ করেনি। এক মাস অবরোধ করে রাখা হয় মক্কা। এ সময়টিতেই আগুনে কাবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘোড়া দুর্ঘটনায় ইয়াজিদের মৃত্যুসংবাদ শোনার পর অবরোধ শেষ হয়ে যায়। মক্কাতে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা), যিনি ছিলেন পরবর্তী সম্ভাব্য খলিফা।
ইবনে জুবাইর (রা) ক্ষতিগ্রস্ত কাবা পুরোটা ভেঙে নতুন করে গড়তে চাইলেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসলো না এই ভয়ে যে, যে কাবা ভাঙতে এগিয়ে আসবে তার উপর আসমানি গজব পড়বে। একজন সাহস করে একটা পাথর ছুড়ে মারল। কিন্তু তার উপর কোনো গজব আসল না। এটা দেখে বাকিরা সাহস পেয়ে ভাঙা শুরু করল। একদম পুরোপুরি মাটিতে মিশিয়ে দেবার পর আবার গোড়া থেকে বানানো শুরু হলো। তবে এবার আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর কাছ থেকে শোনা একটি হাদিসের ভিত্তিতে কাবার পরিধি বাড়িয়ে হাতিম জায়গাটিকে অন্তর্ভুক্ত করলেন। ফলে জায়গা অনেক বেড়ে গেল, দেখতে আর ঘনক রইল না। এটা ছিল হযরত ইব্রাহীমের (আ) বানানো আদি আকৃতির মতোই। অর্থাৎ বর্তমানে কাবাঘর ঘনক হলেও, আদিতে ছিল ভিন্ন আকৃতির। বর্ণিত আছে, অর্থাভাবে হাতিম পর্যন্ত নির্মাণ করতে না পারার কারণে কুরাইশরা ঘনক আকৃতি করে ফেলেছিল। তবে যে আকৃতিই হোক না কেন, এর সম্মান একই ছিল।
হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর টুকরো টুকরো হয়ে যায় এই আক্রমণে। আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা) একটা রুপার ‘লিগামেন্ট’ ব্যবহার করে সেগুলো জোড়া লাগান।
দ্বিতীয় মক্কা অবরোধ (৬৯২ সাল)
উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান তখন জেনারেল হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে পাঠান মক্কার আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা)-কে পরাজিত করে খিলাফতের প্রতিদ্বন্দ্বী নিশ্চিহ্ন করতে। খুব নৃশংস এই মক্কার অবরোধ স্থায়ী হয় ছয় মাস! আব্দুল্লাহ (রা) মারা যাবার পর অবরোধ শেষ হয়। আব্দুল্লাহর (রা) দুই পুত্র কাবার পাশেই লড়াইরত অবস্থায় মারা যান। এই আক্রমণের সময় পাথর নিক্ষেপ করে কাবা ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়।
এরপর আব্দুল মালিক আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইরের বানানো অতিরিক্ত অংশ ধ্বংস করে কাবার কুরাইশি ঘনক আকৃতি ফিরিয়ে আনেন।
কার্মাতিয় আক্রমণ (৯৩০)
কার্মাতিয় সম্প্রদায়ের ধর্ম ছিল একটা মিশ্র ধর্ম, মূল শিয়াদের থেকে অপভ্রংশ ইসমাইলি গ্রুপ আর পারস্যের কিছু আধ্যাত্মিকতার যোগসাজশে গড়ে ওঠে তাদের ধর্ম। তারা ৮৯৯ সালে পূর্ব আরবে একটি ধর্মীয় স্বাধীন সরকার ঘোষণা করে। এরা আব্বাসীয় খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
৯৩০ সালের হজ্বের সময় কার্মাতিয়রা মক্কায় সন্ত্রাসী আক্রমণ করে। হাজীদের খুন করে লাশ জমজম কূপে ফেলে দেয়। এরপর তারা ‘কালো পাথর’ চুরি করে নিয়ে যায়।
তারা একটা উপাসনালয় বানায় (‘মসজিদ আল দিরার’) যেখানে কালো পাথর স্থাপন করা হয়। এর মূল হোতা ছিল তাদের নেতা আবু তাহির। তার উদ্দেশ্য ছিল মক্কা থেকে হজ্ব বাতিল করা, কিন্তু সেটি সফল হয়নি। হজ্ব চলতে থাকে কালো পাথর ছাড়াই।
২৩ বছর পর, ৯৫২ সালে আব্বাসীয় খলিফা বিশাল টাকা দিয়ে সেই পাথর ফিরিয়ে আনেন। যে কার্মাতিয় ফিরিয়ে দিয়ে যায়, সে কুফার এক মসজিদে শুক্রবার দিন পাথরটি বস্তাবন্দি করে ছুড়ে মেরে যায়, সাথে থাকে একটা চিরকুট, “ক্ষমতা দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম, ক্ষমতা দেখিয়েই ফেরত দিলাম আমরা।”
এই ছুঁড়ে মারার ফলে সাত টুকরা হয়ে যায় পাথরটি।
কথিত আছে, আবু তাহিরের মৃত্যু হয় শোচনীয়ভাবে, তার দেহ পোকায় খেয়ে নেয়। উল্লেখ্য, একাদশ শতকে ফাতিমীয় খলিফা আল হাকিমের পাঠানো এক লোক কাবার সামনে এসে কালো পাথর ভেঙে ফেলতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই সে মারা পড়ে। এই পাথরের প্রতি কারো কারো এত ক্ষোভের কারণ বোধগম্য না।
১৬২৯ সালের বন্যা
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ১৬২৯ সালে বন্যা হয়ে যায় মক্কায়, তখন কাবার দেয়াল ধসে যায়। বন্যা শেষে গ্রানাইট পাথরে নতুন করে কাবা বানানো হয়। ওসমানী সম্রাট চতুর্থ মুরাদের আমলে তখন মসজিদ পুরোটা সুন্দর করে আবার বানানো হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সেই একই মূল গঠন আছে।
মসজিদুল হারাম দখল (১৯৭৯)
এটি ছিল সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা এবং খুবই বিভ্রান্তিকর। এ ঘটনাটি বুঝতে হলে আগে কিছু পেছনের ঘটনা জানা দরকার।
ইসলামে বর্ণিত কিছু ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী, শেষ সময়ের দিকে মুসলিম জাতিকে ক্রান্তিলগ্নে নেতৃত্ব দিতে আবির্ভাব হবেন মুহাম্মাদ নামের এক ব্যক্তি, যাকে বলা হবে ইমাম মাহদি (‘ইমাম’ অর্থ ‘নেতা’, ‘মাহদি’ অর্থ ‘The Guided One’)। কোনো এক হজ্বের মৌসুমে তাওয়াফের সময় মানুষ তাঁকে চিনে ফেলবে এবং তাঁকে জোর করেই জাতির নেতা বানিয়ে দেবে। এ ঘটনার পরেই হযরত ঈসা (আ) বা যীশু খ্রিস্ট পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করবেন। [শিয়াগণ তাঁকে দ্বাদশ ইমাম বলে গণ্য করে থাকে এবং নামের পরে ‘আলাইহিস সালাম’ (আ) ব্যবহার করে নবী ও ফেরেশতাদের অনুরূপ, তবে সুন্নি মুসলিমেরা এমনটি করে থাকে না।]
এবার ফিরে আসা যাক ১৯৭৯ সালের ঘটনায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরের ঘটনা। ঘটনার হোতা ছিল জুহাইমান আল-ওতাইবি, সৌদি আরবের নাজদের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য। সে হঠাৎ করেই তার শ্যালক মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল-কাহতানিকে ঘোষণা করে বসে ‘ইমাম মাহদি’ হিসেবে!
বলা হলো, এই লোকের নাম মুহাম্মাদ, বাবার নাম আব্দুল্লাহ, ঠিক যেমনটা মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স) এর ছিল। আরও বলা হলো, তিনি মক্কার উত্তর থেকে এসেছেন। আর দিনটি ছিল, ২০ নভেম্বর, ১৯৭৯, হিজরি ১৪০০ সালের প্রথম দিন! কোনো এক অনিশ্চিত ইসলামিক বর্ণনা মতে, এই শতকে একজন ধর্ম সংস্কারক আসবেন। দাবি করা হলো, ইনিই তিনি।
জুহাইমান এর সাথে কাহতানির দেখা হয় এক জেলে বন্দী থাকা অবস্থায়। জুহাইমান তাকে সেখানে বলল, “আল্লাহ্ তো আমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছেন তুমি হলে মাহদি।” এরপর শুরু হয় ব্রেইনওয়াশ করা। এক পর্যায়ে কাহতানি নিজেই বিশ্বাস করা শুরু করে যে, সে নিজেই মাহদি।
তারা পরিকল্পনা করল, সাউদ পরিবারকে হটিয়ে নতুন শাসনতন্ত্র কায়েম করবে। তারা তাদের পরিকল্পনা মাফিক প্রচার করা শুরু করল খুব গোঁড়া কিছু বিশ্বাস, মসজিদে মসজিদে প্রচার করলেও তখনও তারা ধরা পড়ে নি। মূল হোতা জুহাইমান যোগদান করে মদিনার একটি স্থানীয় সালাফি গ্রুপে, যার নাম ছিল ‘Al-Jamaa Al-Salafiya Al-Muhtasiba‘। ‘সালাফি’ অর্থ যারা ‘সালাফদের অনুসারী’, ‘সালাফ’ বলতে ইসলামের প্রথম দিকের সাহাবা-তাবেয়ি প্রমুখকে বোঝানো হয় (প্রথম তিন প্রজন্ম) যারা নবী (সা) বা সাহাবীদের নিকটের মানুষ ছিলেন। সেই সালাফি ধার্মিক গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন প্রখ্যাত শেখ এবং শিক্ষক আব্দুল আজিজ বিন বাজ, ফতোয়া কমিটির প্রধান। অবশ্য তাদের কোনো ধারণাই ছিল না জুহাইমানের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে। সরকার তেমন পাত্তা দেয়নি একে। তারা একবার ধরা পড়েছিল বটে, কিন্তু ফাঁকফোকরে ছাড়া পেয়ে যায় সেই ১৯৭৮ সালে। এরপর তারা অনেক পরিমাণে অনুসারী যোগাড় করে ফেলে।
অনেক ধনী মানুষের কাছ থেকে অনুদান পাওয়ায় এই গ্রুপটি খুবই সশস্ত্র আর প্রশিক্ষিত ছিল। জুহাইমান নিজেই ছিল প্রাক্তন সেনা সদস্য। তারা প্রচুর অস্ত্র, গুলি, গ্যাস মাস্ক আর খাবার-দাবার নিয়ে জমিয়ে রাখে নতুন বছরের এক সপ্তাহ আগে থেকে। লুকিয়ে রাখা হয়েছিল মসজিদের নিচের শত শত ছোট্ট রুমে, লাশের খাটিয়ায় করে এগুলো নিয়ে আসা হয় বলে বর্ণিত আছে।
২০ নভেম্বর ফজরের সময়। মসজিদুল হারামের ইমাম মুহাম্মাদ আল সুবাইল নামাজের ইমামতি করবেন। ৫০ হাজার মানুষ সেখানে। ঠিক তখন আলখাল্লার নিচ থেকে অস্ত্র বের করে সন্ত্রাসীরা। বেশ ক’টি গুলি করে।
ইমাম থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে জুহাইমান বর্তমান সৌদি সরকারের দুর্নীতি নিয়ে বলা শুরু করল। এরপর কিছু হাদিস আর ভবিষ্যৎবাণী শুনিয়ে ‘ইমাম মাহদি’কে পরিচয় করিয়ে দিল। আর বলল, সবাইকে এখন তার অনুগত হতে হবে। এখানেই গলদ ছিল তার। ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী, ইমাম মাহদি নিজে রাজি হবার কথা না নেতৃত্ব নিতে, কিন্তু এক্ষেত্রে সে নিজেই রাজি!
গেট আটকে দেয় সন্ত্রাসীরা। দুই পুলিশকে খুন করে। পুলিশের কাছে কেবল ছিল দুটো কাঠের বেত, আর কিছুই না। আর সন্ত্রাসীরা ছিল প্রায় ৪০০-৫০০ জন! এমনকি তাদের দলে নারী সদস্যও ছিল!
তখন বিন লাদেন গ্রুপের দ্বারা মসজিদ সম্প্রসারণ করা হচ্ছিল। বিন লাদেন গ্রুপের একজন এই কাহিনী দেখে ফোন করে বাইরে জানিয়ে দেয়, ঠিক এরপরই সন্ত্রাসীরা কেটে দেয় টেলিফোন তার। কিন্তু বিশ্ব জেনে যায় কিছু একটা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এই সেই ধনী বিন লাদেন গ্রুপ, যার প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ বিন লাদেন। তার পুত্রই ওসামা বিন লাদেন। তবে বিন লাদেন গ্রুপের সাথে আল-কায়েদার কোনো সম্পর্ক ছিল না, এবং এখনো সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে এই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি।
সন্ত্রাসীরা অনেক বন্দীকে ছেড়ে দেয় বটে, কিন্তু অনেককে আটকে রাখে। মসজিদের উপরে ‘ডিফেন্সিভ পজিশনে’ চলে যায় তারা, মিনারে মিনারে ‘স্নাইপার’ রাখে। আর বাকি সবাই আশ্রয় নেয় মাটির নিচে। বাইরের কেউ জানত না ভেতরে কজন জিম্মি। কেউ জানত না ভিতরে কী হচ্ছে, কেমন ক্ষয়ক্ষতি; এরা কারা, কী চায়, কী করবে।
প্রিন্স ফাহাদ তখন তিউনিসিয়াতে মিটিং এ ছিলেন, আর ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান প্রিন্স আব্দুল্লাহ ছিলেন মরক্কোতে। তাই কিং খালিদ এই মিশনের দায়িত্ব দিলেন প্রিন্স সুলতানের উপর, যিনি ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সাথে ছিলেন প্রিন্স নায়েফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
একশ’ পুলিশ মসজিদ পুনরুদ্ধার করতে চেষ্টা করে, কিন্তু প্রচুর পুলিশ প্রাণ হারায়। পরে সৌদি আর্মি আর ন্যাশনাল গার্ড যোগদান করে তাদের সাথে। সৌদি সরকার পাকিস্তানি আর্মি স্পেশাল ফোর্সের সাহায্য চায় তখন। তারা আসবার পর অপারেশনে যোগ দেয়। রাতের মধ্যে পুরো মক্কা খালি করে ফেলা হয়! শূন্য হয়ে যায় মক্কা নগরী।
এখানে এসে ধর্মীয় বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যতটুকু বাইরে খবর গেছে, তা থেকে ফতোয়া কমিটি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিল, এটি কি আসলেই ভবিষ্যৎবাণীর সাথে মিলে যাচ্ছে? নাকি বানোয়াট? অনেক কিছুই মিলছে, আবার মিলছেও না। তাছাড়া হারাম শরিফে রক্তপাতের আদেশ কি দেয়া উচিৎ হবে? ইত্যাদি। উল্লেখ্য, সাধারণ অবস্থায় গাছও উপড়ে ফেলা যায় না মক্কাতে, গাছের প্রাণ নিধনও হারাম।
ফতোয়া কমিটির প্রধান ইবনে বাজ-এর কথা একটু আগে বলা হয়েছিল। তিনি অবাক হলেন যে, তারই ছাত্র এ কাজ করছে! তিনি এজন্য আরো সংশয়ে পড়ে যান এসব কী হচ্ছে তা ভেবে। যে ইমাম নামাজ পড়িয়েছিলেন, তিনি সাথে সাথেই বুঝতে পেরেছিলেন এরা যে সন্ত্রাসী গ্রুপ। তিনি কায়দা করে নারী পোশাক পরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন হারাম শরীফ থেকে। এরপর পুরো ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলেন।
শেষ পর্যন্ত আর্মিকে গোলাগুলিতে অনুমতি আর নির্দেশ দেয়া হয়। এর আগ পর্যন্ত আর্মি ছিল দোটানায়, তারাও জানে, ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী ইমাম মাহদির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আর্মি ধসে মারা যাবে। আর্মি গেট ভেঙে ভেতরে চলে যেতে চেষ্টা করে, কিন্তু একজন একজন করে মারা পড়তে থাকে স্নাইপারের গুলিতে। লাউডস্পিকারে সন্ত্রাসীরা দাবি জানায়, আমেরিকাকে তেল সাপোর্ট আর দেয়া যাবে না, বাইরের রাষ্ট্রের আর্মি বহিষ্কার করতে হবে ইত্যাদি।
কিছু না পেরে, সৌদি সরকার সিদ্ধান্ত নিল, সন্ত্রাসীদের ভাতে মারবে। কিন্তু বোঝা গেল, তারা প্রচুর খেজুর নিয়ে ঢুকেছে, আর জমজম কূপ থাকায় পানিরও সমস্যা নেই তাদের।
লরেন্স নাইটের ‘The Looming Tower: Al-Qaeda and the Road to 9/11′ বই থেকে জানা যায়, তিন ফ্রেঞ্চ কমান্ডোকে মক্কা আনা হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু নিয়ম অনুযায়ী কোনো অমুসলিম মক্কায় প্রবেশ করতে পারে না, তাই তাঁরা একটি সংক্ষিপ্ত ধর্মান্তরযজ্ঞে অংশ নেয় এবং সাময়িকভাবে ইসলাম গ্রহণ করে। তবে আরেকটি সূত্র অনুযায়ী, তাঁরা কম্পাউন্ডের ভেতরে প্রবেশ করেনি,বরং পাকিস্তানি স্পেশাল ফোর্স প্রবেশ করেছিল।
কয়েকবার আন্ডারগ্রাউন্ড সুড়ঙ্গ দিয়ে মিশনের চেষ্টা করা হয়। লুকিয়ে থাকা জায়গায় গ্রেনেড মেরে মেরে সন্ত্রাসীদের খোলা জায়গায় আনা হয়।
এরপর সকল পানির পাইপ খুলে দেয়া হয় যেন কাবার ভেতরে বন্যার মতো হয়ে যায়। ফলে সন্ত্রাসীরা সিক্ত অবস্থায় পানিতে দাঁড়িয়ে ছিল। এরপর পুরো পানিকে ‘ইলেক্ট্রিফাই’ করে ফেলা হয়। বাকি যারা রইল তাদেরকে টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে কাবু করা হয়।
দুই সপ্তাহ শেষে, বেঁচে থাকা সন্ত্রাসীরা সবাই আত্মসমর্পণ করে। দুই সপ্তাহ হারাম শরিফে কোনো নামাজ হয়নি, মক্কা ছিল ফাঁকা। এ ঘটনায় মারা যায় ২৫৫ জন আর ৫৬০ জন আহত হয়। মিলিটারি থেকে মারা যায় ১২৭ জন আর ৪৫১ জন আহত হয়। এ ঘটনার পরেই মূলত বর্তমান সৌদি রাষ্ট্রের আইন এখনকার মতো কঠোর অবস্থায় আসে, এর আগে ছিল অনেকটাই শিথিল।
খবর ছড়িয়ে যাবার পর ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি এটিকে ইহুদী-নাসারার চক্রান্ত বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “সন্দেহ নেই, এটা সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকান ক্রিমিনাল আর আন্তর্জাতিক ইহুদিবাদিদের ষড়যন্ত্র।” ফলে সারা বিশ্বে মুসলিমদের মধ্যে আমেরিকাবিদ্বেষ গড়ে উঠতে থাকে। পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস পুড়িয়ে দেয়া হয়। লিবিয়ার ত্রিপোলিতেও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ভেঙে পুড়িয়ে দেয় ক্ষুব্ধ মানুষ।
তথাকথিত ইমাম মাহদি সেই ঘটনাতে নিহত হয়। জুহাইমান আর তার ৬৭ অনুসারী গ্রেফতার হয়। তাদেরকে পরে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
মারা যাবার আগে জুহাইমানকে জিজ্ঞেস করা হয়, সে কেন এটা করল। সে বলেছিল, সে কাজটা করেছিল এই ভেবে, একটি ভবিষ্যৎবাণী সে ফলাতে পারলে, বাকিগুলোও ঘটতে শুরু করবে। এটি ছিল হারাম শরিফে ঘটানো সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী আক্রমণ, এখন পর্যন্ত।
১৯৮৭ সালের মক্কার ঘটনা
এটি কোনো আক্রমণ না, সংঘর্ষ।
৩১ জুলাই, ১৯৮৭; ইরানি হাজিরা সেখানে ইজরায়েল-আমেরিকা বিরোধী একটা বার্ষিক বিক্ষোভ করছিল। কিন্তু সৌদি পুলিশ আর ন্যাশনাল গার্ড বাধা দেয়। এটি রূপ নেয় সংঘর্ষে। এরপর জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। চাপা পড়ে মারা যায়, নাকি পুলিশের হাতে মারা যায় সেটা নিয়ে ইরান আর সৌদির মধ্যে তর্ক রয়েছে; কিন্তু প্রাণহানি হয়েছিল ২৭৫ ইরানি হাজীর, ৮৫ পুলিশ আর অন্য দেশের ৪২ হাজীর। এটি শিয়া হাজী বনাম সৌদি পুলিশের সংঘর্ষ নামে পরিচিত।
অনেক রক্তারক্তির কাহিনী শেষে ভিন্ন কিছু কথা দিয়ে লেখাটির সমাপ্তি টানা যাক।
কাবার ভিতরে যেকোনো দিকে ফিরে নামাজ পড়া যায়। বছরে দু’বার কাবার চাবি খোলা হয় ভেতরটা ধোয়ার জন্য। এ দু’বার হলো রমজান শুরুর এক মাস আগে, আর কোরবানির ঈদের এক মাস আগে। কাবার চাবি থাকে বনি শায়বা গোত্রের কাছে (যেহেতু মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এই গোত্রকে চাবি দিয়ে গিয়েছিলেন)।
মক্কার গভর্নর সাধারণ একটি ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করার কাজ শুরু করেন এবং তাঁর আমন্ত্রণে গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ এ কাজে অংশ নেন। জমজম পানির, তাইফের গোলাপজল আর উদ সুগন্ধি তেলের সংমিশ্রণ দিয়ে ভেতরটা পরিষ্কার করা হয়। সব শেষে পাঠকদের জন্য থাকছে কাবার ভেতর থেকে তোলা কিছু ছবি।
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যে হারে সন্ত্রাসী আক্রমণ চলছে, এরকম তীর্থস্থানগুলো কতদিন নিরাপদ থাকবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়; এমনকি জেদ্দাতেও সন্ত্রাসী আত্মঘাতী বিস্ফোরণ হয়েছে, এবং হারাম শরীফ আক্রমণের পরিকল্পনাও জঙ্গী সংঘটন করেছে বলে জানা গিয়েছিল। সর্বোপরি একটি নিরাপদ বিশ্বই আমাদের সকলের কাম্য।