রোম সাম্রাজ্যের উত্থান (পর্ব-২৯): সিম্ব্রিয়ান যুদ্ধ এবং দক্ষিণ গল অঞ্চলে রোমের শক্তিবৃদ্ধি

জুগুর্থার সাথে রোমের দ্বন্দ্ব চলমান থাকাকালেই উত্তর ইউরোপের দিক থেকে উদয় হল নতুন বিপদ। জার্মান ও সেল্টিক কিছু গোত্র ১২০-১১৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে তাদের নিবাস ছেড়ে ইতালির দিকে অভিবাসন করল। এদের মধ্যে প্রধানতম ছিল সিম্ব্রি ও টিউটন।

সিম্ব্রি ও টিউটনদের অভিবাসনের পথ © Pethrus/Ancient History Encyclopedia

রোমানদের সাথে প্রথম সংঘর্ষ

সিম্ব্রিদের এক দল ১১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আল্পসের উত্তরে বর্তমান অস্ট্রিয়ার অন্তর্গত নরিকাম এলাকাতে এসে পৌঁছল। এখানে বসবাস করত টরিসি নৃগোষ্ঠী। তারা ছিল রোমের সাথে মৈত্রীচুক্তিতে আবদ্ধ। সুতরাং অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে তারা রোমান সাহায্য কামনা করে বার্তা পাঠাল। ফলে পরের বছর রোমান কন্সাল কার্বো তাদের সহায়তার জন্য এগিয়ে এলেন। তিনি সিম্ব্রিদের উপর অতর্কিতে হামলা চালালেন। কিন্তু সিম্ব্রিরা তীব্রভাবে পাল্টা আক্রমণ করে সহজেই তাকে পরাজিত করল। রোমান সেনাদল ধ্বংস হয়ে গেল, কার্বো কোনোমতে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এলেন। সিনেটের সামনে তাকে এই বিপর্যয়ের জন্যে অভিযুক্ত করা হলে তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

কার্বোর পরাজয়; Image Source: heritage-history.com

সিম্ব্রিদের অভিযাত্রা

সিম্ব্রিরা পশ্চিমে রাইন নদী অভিমুখে যাত্রা করল। এখানে তাদের সাথে কেল্টিক গোত্রভুক্ত টিউটনরা যোগ দিল। তাদের দেখাদেখি আশেপাশের আরো কিছু নৃগোষ্ঠী এই দলে সম্মিলিত হলো, যার ভেতর টিগুরিনি এবং অ্যাম্ব্রোন অন্যতম। ১১১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই বিরাটবাহিনী রাইন নদী পার হয়ে রোমান প্রদেশে প্রবেশ করলে পুনরায় রোমানদের সাথে সংঘাতের সূচনা হয়। রোমান কন্সাল জুলিয়াস সিলানাস ১০৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। গলরা রোমের অধিনস্ত অঞ্চলে বসবাসের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় ভূমি বরাদ্দের দাবি জানায়। কিন্তু সিনেট এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে। ফলে সংঘাত চলতে থাকে। সিলানাসকে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হতে হয়। এরপর সিম্ব্রি ও টিউটনরা আরো চার বছর এই এলাকাতে লুটতরাজ চালিয়ে যায়। ওদিকে টিগুরিনিদের পৃথক হয়ে রাইন ধরে অগ্রসর হলো এবং ১০৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তাদের হাতে টিগুরিনিদের হাতে কন্সাল লুসিয়াস ক্যাসিয়াস পরাজিত ও নিহত হন।

রাইন নদী © Goodshoot/Jupiterimages

পরের বছরই কেপিও গলদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করা তুলুসা নগরী জয় করে নেন। এখানে রাতের আঁধারে রোমান সমর্থকেরা শহরে প্রবেশের রাস্তা খুলে দিলে রোমানদের হাতে তুলুসির পতন হয়। এদিকে ১০৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিম্ব্রি ও টিউটনরা নার্বোনেস গলের সীমান্তে এসে উপস্থিত হলো। রোমান সিনেট এবার চূড়ান্তভাবে এই গলদের সাথে মীমাংসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল।

ব্যাটল অফ অরাশিও

রাইন নদীর ডান তীরে প্রায় ৮০,০০০ সেনার বিশাল রোমান বাহিনী এসে জড়ো হলো। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন প্রো কন্সাল কেপিও ও কন্সাল ম্যাক্সিমাস। কেপিও ছিলেন অভিজাতবংশীয়, অন্যদিকে ম্যাক্সিমাস উঠে এসেছিলেন সাধারণ পরিবার থেকে। এছাড়াও কন্সাল হিসেবে ম্যাক্সিমাস ছিলেন কেপিওর ঊর্ধ্বতন, যা কেপিও মেনে নিতে পারছিলেন না। প্রথম থেকেই তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হতে থাকে। তাই দুই সেনানায়ক তাদের বাহিনী নিয়ে আলাদাভাবে শিবির করলেন। কেপিওর শিবির ছিল তুলনামূলকভাবে সম্মিলিত গল বাহিনীর ক্যাম্পের নিকটে। ওদিকে ম্যাক্সিমাস তার শিবিরে কর্তৃত্ব স্থাপন করতে ব্যর্থ হলে সেখানে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ফলে, মানসিকভাবে সেনারা যুদ্ধ করার অবস্থায় ছিল না।

ইত্যবসরে স্কারুসের অধীনে সেনাদলের অগ্রবর্তী অংশ স্কাউটিং করতে গেলে সিম্ব্রিদের সাথে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। বিশাল গল সেনাদলের সামনে স্কারুসের স্বল্প সংখ্যক সেনা খড়কুটোর মতো উড়ে গেল। বন্দি স্কারুসকে সিম্ব্রি নেতা বয়িরিক্সের সামনে আনা হলে তাকে হত্যা করা হয়। বয়িরিক্স আবারো ম্যাক্সিমাসের কাছে গলদের রোমান এলাকায় বসবাসের অধিকার দেয়ার প্রস্তাব পাঠান, কিন্তু এবারও তা প্রত্যাখ্যাত হয়। দুই পক্ষই এবার মোকাবেলার প্রস্তুতি নিল।

৬ অক্টোবর, ১০৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। রোমান কম্যান্ডারদের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছাড়াই কেপিও একাই হঠকারীভাবে গলদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। গলদের সম্মুখে ছিল অ্যাম্ব্রোনদের বাহিনী। তারা কেপিওর রণসজ্জা ছিন্নভিন্ন করে দেয়। আতঙ্কিত রোমান সেনারা ম্যাক্সিমাসের ক্যাম্পের দিকে পালাতে থাকে। ম্যাক্সিমাসের সেনারা ছিল অপ্রস্তুত। হঠাৎ করে কেপিওর সেনারা তাদের শিবিরের দিকে ছুটে আসতে থাকলে সেখানে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পেছনে রাইন নদী সেনাদের পালানোর রাস্তা আরো কঠিন করে তোলে। এই সুযোগে গলরা রোমান বাহিনীকে তছনছ করে দেয়। প্রায় ৬০,০০০ রোমান সেনা নিহত হয়। ব্যাটল অভ অরাশিও ছিল কান্নের যুদ্ধের পরে রোমান সেনাদলের অন্যতম রক্তক্ষয়ী পরাজয়।

অরাশিওর লড়াই; Image Source: batallashistoricas.com

জয়ী গলরা তাদের দেবতাদের উদ্দেশে বন্দিদের উৎসর্গ করে। রোমানদের সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র ভেঙে ফেলা হয়। লুণ্ঠিত সোনা-রূপা দেবতাদের অর্ঘ্য হিসেবে রাইনে ফেলে দেয়া হলো।

গলদের পরবর্তী পদক্ষেপ

অরাশিওর পর সাময়িকভাবে অধীনস্থ গল অঞ্চলে রোমের শক্তি ভেঙে পড়েছিল। সিম্ব্রি ও তাদের মিত্ররা তখন ইতালিতে প্রবেশ করলে রোমকে বড় বিপদের মুখোমুখি হতে হতো। কিন্তু তারা সেদিকে না গিয়ে ভাগ হয়ে যায়। টিউটন ও অ্যাম্ব্রোনরা আশেপাশের এলাকাতে লুণ্ঠন চালাতে থাকে। এদিকে সিম্ব্রিরা পিরেনিজ অতিক্রম করে স্পেনে এসে উপস্থিত হলো। কিন্তু দুর্দম কেল্টিবেরিয়ান গোষ্ঠীর প্রবল বাধার সামনে তারা হতোদ্যম হয়ে পড়ে। ফিরে এসে ১০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তারা পুনরায় টিউটন ও অ্যাম্ব্রোনদের সাথে মিলিত হয়। এবার তারা ইতালিতে ঢুকে রোমের কাছ থেকে ভূমি কেড়ে নিয়ে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা করল। এই উদ্দেশ্যে তারা সেনাবাহিনীকে দু’ভাগে ভাগ করল। বয়িরিক্স সিম্ব্রিদের আর টিউটোবেড টিউটন ও অ্যাম্ব্রোনদের মিলিত বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করে দুই দিক থেকে ইতালির দিকে অগ্রসর হলো।

রোমের পুনর্গঠন

গলরা যখন অন্যদিকে ব্যস্ত, সে অবসরে রোম দ্রুত গুছিয়ে নেওয়া শুরু করে। সমস্ত তরুণ নাগরিককে অস্ত্রশস্ত্রে প্রশিক্ষিত হতে বলা হয়। সেনাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে গ্ল্যাডিয়েটর স্কুল থেকে প্রশিক্ষকদের নিয়ে আসা হলো। ২৫ বছরের নিম্নে কাউকে ইতালি ত্যাগ করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে সিনেট সবেমাত্র নুমিডিয়া বিজয় করা জেনারেল মারিয়াসকে দ্বিতীয় মেয়াদে কন্সাল নিয়োগ দিল। রোমান আইনে এই নিয়োগ সিদ্ধ না হলেও বিশেষ বিবেচনায় সিনেট তা অনুমোদন করে, এবং অভূতপূর্বভাবে পরের পাঁচ বছর অবধি মারিয়াস কন্সালের দায়িত্ব পালন করে যান।  

মারিয়াসের সামরিক সংস্কার

রোমের সমৃদ্ধির সাথে সাথে ইতালির বাসিন্দারা প্রাচুর্য আর ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে, পূর্বের রোমান সামরিক শৃঙ্খলা ছিল অবক্ষয়ের মুখে। সামরিক দায়িত্ব পালন বাধ্যতামূলক হলেও সেই আইন আগের মতো কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হতো না। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে সেনাদের দক্ষতাতেও মরচে ধরে। মারিয়াস দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিলেন। এর আগে রোমান বাহিনীতে যোগ দিতে হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হতে হতো। কিন্তু মারিয়াস সেই আইন উঠিয়ে দিলেন। তিনি হতদরিদ্র লোকদের সেনাদলে অন্তর্ভুক্ত করতে শুরু করলেন। মারিয়াস এমন একটি সেনাদল গড়ে তুলতে সমর্থ হলেন, যেখানে যুদ্ধের পর বাহিনী ভেঙে না দিয়ে অর্থের বিনিময়ে রেখে দেওয়া হয়।

ফলে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া একটি পেশা হিসেবে গৃহীত হয়। এই সৈন্যদের পূর্ণ আনুগত্য ছিল তাদের জেনারেলদের প্রতি, যাদের কাছ থেকে তারা টাকা-কড়ি পেত। এর ফলে সেনাবাহিনীর উপর রোমান রাষ্ট্রের প্রভাব কমে যায় এবং জেনারেলদের ক্ষমতা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। মূলত এ কারণেই রোমান রাষ্ট্রের প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা পরে বিলুপ্ত হয় এবং সম্রাটকেন্দ্রিক শাসনের প্রচলন ঘটে।

গলরা অন্যদিকে ব্যস্ত থাকার সুযোগে মারিয়াস দক্ষিণ গলে রোন নদীর তীরে সেনাদের ক্যাম্প স্থাপন করেন। আল্পস থেকে ইতালিতে প্রবেশের রাস্তা পাহারা দেয়া ছাড়াও সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া তার উদ্দেশ্য ছিল। কঠিন নিয়মের ভেতর দিয়ে প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। প্রতিটি লিজিওনের সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পস যুক্ত করা হয়। অবশেষে ১০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মারিয়াস তার সেনাদের সামর্থ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিলেন।  

গলদের ইতালিতে আগ্রাসন

টিউটোবেড দক্ষিণ গলের ভেতর দিয়ে আর বয়িরিক্স আল্পসের পূর্বদিকের গিরিপথের মধ্য দিয়ে এগিয়ে এলেন। মারিয়াস তার সেনাদের নিয়ে টিউটোবেডের পথে আর প্রো-কন্সাল ক্যাটালাস বয়িরিক্সের রাস্তায় বাধা দিতে চললেন।

১০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বসন্তে সিম্ব্রিরা উত্তর ইটালিতে প্রবেশ করল। এখানে তারা অ্যাডিজ নদীর তীর ঘেঁষে চলতে চলতে নদীর উপরস্থ সেতুর কাছে এসে পৌঁছল। সেতুর দুই পাশে ক্যাটালাস তার সেনাঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন। সিম্ব্রিদের প্রবল আঘাতে তার বেশিরভাগ সেনা সাহস হারিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে। কিছু সংখ্যক রোমান প্রতিরোধ গড়ে তুললেও সিম্ব্রিরা একপর্যায়ে তাদের বাধা অতিক্রম করে সেতু পার হয়ে আসে। ক্যাটালাস পো নদীর দক্ষিণ পারে এসে নতুন করে শিবির ফেললেন। উত্তর পাড়ে সিম্ব্রিরা তাদের শীতকালীন ক্যাম্প তৈরি করল। তারা অপেক্ষা করছিল টিউটন আর অ্যাম্ব্রোনদের জন্য।

টিউটোবেডের পরাজয় (১০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

মারিয়াসের অধীনে ৪০,০০০ এর মতো সেনা দক্ষিণ গলে সুরক্ষিত ঘাঁটিতে অপেক্ষা করছিল। টিউটোবেডের নেতৃত্বে ১,২০,০০০ টিউটন ও অ্যাম্ব্রোন বাহিনী তাদের উপর আক্রমণ চালালেও সুবিধা করে উঠতে পারেনি। এদিকে সিম্ব্রিদের সাথে দ্রুত তাদের মিলিত হবার কথা ছিল। সুতরাং, তারা মারিয়াসের ক্যাম্প পাশ কাটিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রায় ছ’দিন ধরে চলার পর সম্পূর্ণ গল বাহিনী রোমানদের অতিক্রম করে চলে যায়। মারিয়াস তড়িৎ তার ক্যাম্প গুটিয়ে নিলেন এবং অ্যাকুয়া সেক্সটা নামক এলাকাতে সরে গিয়ে সেখানে পাহাড়ের উপর ছাউনি স্থাপন করলেন। এখানে রোমানরা নদী থেকে পানি আনার ছলে অ্যাম্ব্রোনদের উস্কানি দিলে তারা এগিয়ে এসে হামলা করে। রোমানরা উচ্চভূমিতে থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। মারিয়াসের আদেশে তারা নিচে থাকা অ্যাম্ব্রোনদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাদের ধ্বংস করে দেয়।    

ব্যাটল অভ অ্যাকুয়া সেক্সটা; Image Source: eclecticlight.co

মারিয়াস এবার টিউটনদের ধাওয়া করলেন। দুদিন পর তিনি তাদের নাগাল পেলেন। এখানে মারিয়াস একটি ছোট পাহাড়ের উপর ঘাঁটি করে ৩,০০০ রোমান সেনাকে পাঠালেন পাহাড়ের নিচে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকার জন্য।

টিউটনরা তেড়ে এলে রোমানরা প্রথমে বর্শানিক্ষেপ করে তাদের অনেককে হত্যা করল। শত্রুসেনারা কাছাকাছি চলে এলে রোমানরা উন্মুক্ত তরবারি হাতে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তাদের ধাক্কায় গলরা যখন পিছিয়ে যাচ্ছিল, তখনই জঙ্গলে থাকা রোমান সেনারা অতর্কিতে পেছনদিকে থেকে তাদের উপর আক্রমণ করে। টিউটনদের বাহিনী কচুকাটা হয়ে যায়। প্লুটার্ক দাবি করেন যে, প্রায় ১,০০,০০০ গল হতাহত আর বন্দি হয়। বন্দিদের মধ্যে তাদের নেতা টিউটোবেডও ছিল।

বন্দি টিউটোবেড © H. Leutemann/ eonimages.com

ব্যাটল অফ রডিন প্লেইনস

গ্রীষ্মকাল, ১০১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।

ক্যাটালাসের বিপদের খবর পেয়ে টিউটনদের পরাজিত করেই মারিয়াস তার সাথে এসে মিলিত হলেন। তাদের যৌথবাহিনী পো নদীর উত্তরে ভার্সেলির কাছে এসে তাঁবু গাড়লেন। বয়িরিক্স মারিয়াসের হাতে টিউটোবেডের পরাজয়ের খবর জানতেন না। রোমানদের শক্তিবৃদ্ধি আর মিত্রদের অব্যাহত অনুপস্থিতিতে বিচলিত হয়ে তিনি রোমান জেনারেলদের কাছে দূত পাঠিয়ে নতুন করে রোমান এলাকাতে বসতি স্থাপনের দাবি তুললেন। মারিয়াসে উত্তরে শৃঙ্খলিত টিউটন বন্দিদের প্রদর্শন করেন। বয়িরিক্স যুদ্ধের দাবি জানালে মারিয়াস তাকে জানালেন, তিনদিনের মাথায় রোমানরা পো আর সেসিয়া নদীর মিলনস্থলে রডিয়ান সমভূমিতে তার জন্য অপেক্ষা করবে।

রোমান বাহিনীতে ছিল ৫০,০০০ এর অধিক সৈন্য। মারিয়াস তার সেনাদের মোতায়েন করলেন ক্যাটালাসের পদাতিকদের দুই পাশে। ক্যাটালাসের সহকারী সুলা তার অশ্বারোহীদের নিয়ে মারিয়াসের সাথে যোগ দেন। সূর্যকে পেছনদিকে রেখে শুষ্ক রুক্ষ রডিয়ান প্রান্তরে রোমান আর সিম্ব্রিরা চূড়ান্ত মোকাবেলার প্রস্তুতি নিল।

বয়িরিক্স তার পদাতিক সেনাদের বাঁদিকে রেখে ডানপাশে অশ্বারোহীদের সজ্জিত করলেন। তার নির্দেশে পদাতিকেরা মারিয়াসের অধীনে রোমান ডানবাহুর দিকে অগ্রসর হলো। ওদিকে সিম্ব্রিয়ান অশ্বারোহীরা ক্যাটালাসের সেনাদের উপর ঝটিকা আঘাত হেনে পিছিয়ে এলো। শত্রুরা ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে মনে করে ক্যাটালাসের সেনারা তাদের ধাওয়া করলে রোমান সেনাবাহিনীর মধ্যভাগ তার দুই বাহুর সুরক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। সিম্ব্রিরা এই সুযোগের জন্যই অপেক্ষা করছিল, তাদের পদাতিক বামবাহু এবার ডানদিকে ঘুরে ক্যাটালাসের দিকে চার্জ করল।

মারিয়াস ছিলেন অভিজ্ঞ সেনানায়ক। তিনি সাথে সাথেই বিপদ অনুধাবন করতে পেরে তার দুই বাহুকে দ্রুত এগিয়ে যেতে আদেশ দিলেন। এদিকে প্রখর তাপে গলদের অসুবিধা হচ্ছিল, তারা ইতালির উচ্চ তাপমাত্রার সাথে অভ্যস্ত ছিল না। তার উপর সূর্যের সরাসরি আলো মুখে পড়ায় আর যুদ্ধক্ষেত্রের প্রবল ধুলায় তারা কিছুটা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে। ফলে, পদাতিকরা পূর্ণশক্তিতে হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়। এদিকে সুলার নেতৃত্বে অশ্বারোহীরা সিম্ব্রিদের ডানবাহুকে পরাস্ত করে পদাতিকদের ঘিরে ফেলে। চারিদিক থেকে আঘাতে গলসেনারা দলে দলে নিহত হতে থাকে। প্রবল বিক্রমে লড়াই করে যুদ্ধক্ষেত্রেই বয়িরিক্সের পতন হয়।

ব্যাটল অফ রডিয়ান প্লেইনস © ADOLF ERHARDT/ akg-images

সিম্ব্রিদের কিছু অংশ তাদের ক্যাম্পে পিছিয়ে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত নারীদের নিয়ে শেষবারের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলে। রোমানরা অবশেষে তা ভেদ করতে সমর্থ হলে বহু সিম্ব্রি নারী রোমানদের দাসত্ব থেকে নিষ্কৃতি পেতে নিজেদের শিশুসন্তানকে হত্যা করে নিজেরা আত্মহত্যা করে। তারপরেও বহু সিম্ব্রি নর-নারীকে রোমান সেনারা বন্দি করে দাস হিসাবে বিক্রি করে দেয়। শেষ হয়ে যায় ইতালিতে গল আগ্রাসন।

সিম্ব্রিদের পরাজয় © Alexandre-Gabriel Decamps/Ancient History Encyclopedia

সিম্ব্রিদের পরবর্তী অবস্থা

মারিয়াস রোমে ফিরে গেলে তাকে সিনেটের পক্ষ থেকে ট্রায়াম্ফ প্রদান করা হয়। এদিকে সিম্ব্রিদের দমন করা হলেও তারা নির্মূল হয়ে যায়নি। বন্দি সিম্ব্রিদের এক বড় অংশ স্পার্টাকাসের সাথে বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিল। এছাড়া সিম্ব্রিদের মধ্যে যারা বয়িরিক্সের সাথে রডিয়ান প্লেইনসের লড়াইতে ছিল না, তারা অন্যান্য অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। জুলিয়াস সিজার পুরো গল অঞ্চল পদানত করার সময় তাদের সাথে রোমানদের সংঘর্ষ হয়। এরপরেও বর্তমান ডেনমার্ক আর জার্মানির কিছু অংশে সিম্ব্রিরা বহু বছর বসবাস করতে থাকে।

This is a Bengali language article as part of a series on the rise of Ancient Rome. This article focuses on the attack upon Italy by Cimbri and Teutons and the subsequent conflict with Rome.

References:

  1. Tsouras, P. The Cimbrian War, 113-101 B.C 
  2. Cimbri
  3. Pennell, R. F. (1921). History of Rome from the Earliest times down to 476 Ad. The Macmillan Company, New York, USA.
  4. Boak, A. E. R. (1921) History of Rome to 565 A. D. The Macmillan Company, New York, USA.

Featured Image: ancientpages.com

Related Articles

Exit mobile version