Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্প্যানিশ ফ্লু: যে ভাইরাস কেড়ে নিয়েছিল ১০ কোটি মানুষের প্রাণ

১৯১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তখন অন্তিমদশায়। সেসময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডেভিড লয়েড জর্জ। মিত্রশক্তির সাফল্যে তিনি তখন বেশ উল্লসিত। দেশে অবস্থানরত সৈন্য এবং যুদ্ধোপকরণ তৈরির নারী কর্মীদের সাময়িক ছুটি দিয়ে তাদের সাথে নিয়ে ম্যানচেস্টার সফরে যান লয়েড জর্জ। পিকাডিল্লি স্টেশন থেকে আলবার্ট স্কয়ারের পুরো যাত্রাপথে তারা উল্লাস করতে করতে যান।

কিন্তু সন্ধ্যায় হঠাৎ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর জ্বর ও গলাব্যথা শুরু হয়। ধীরে ধীরে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপর লয়েড জর্জকে টানা ১০ দিন ম্যানচেস্টারের টাউন হলে শয্যাশায়ী হয়ে থাকতে হয়েছিল। এত বেশি অসুস্থ ছিলেন যে তাকে হাসপাতালের নেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। টাউন হলে তাকে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।

লয়েড জর্জের বয়স তখন ৫৫ বছর। ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান থেকে শুরু করে অধিকাংশ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের ধারণা ছিল তার অসুস্থতার পেছনে জার্মানির হাত রয়েছে। তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসকরা সেই দাবি নাকচ করে দেন। পরবর্তীতে জানা যায় তিনি স্প্যানিশ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জ; Image Source: BBC

স্প্যানিশ ফ্লুর নাম তখনও নির্ধারণ করা হয়নি। এই নামকরণ হয়েছিল অনেক পরে। তবে সে যাত্রায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ভাগ্যবান ছিলেন। এবং কোনোক্রমে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটেনের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ তার মতো ভাগ্যবান ছিলেন না। তারা স্প্যানিশ ফ্লু নামক সেই ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুবরণ করেন, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা যাওয়া মোট ব্রিটিশ সেনা ও সাধারণ নাগরিকের চেয়ে অনেক বেশি।

বৈশ্বিকভাবে এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ছিল কল্পনাতীত। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, সেই সময় পুরো বিশ্বে স্প্যানিশ ফ্লুর কারণে মারা গিয়েছিল প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন মানুষ, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মৃতের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। ধারণা করা হয়, প্রকৃত সংখ্যা উভয় বিশ্বযুদ্ধের সম্মিলিত সংখ্যার চেয়েও বেশি।

কোথা থেকে স্প্যানিশ ফ্লুর উৎপত্তি

শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, স্প্যানিশ ফ্লু সম্ভবত কোনো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হচ্ছে। স্পেন থেকে শুরু করে বিশ্বের অনেক সংবাদমাধ্যমই এমন খবর প্রকাশ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, এই তথ্য ভুল। স্প্যানিশ ফ্লুর জন্য দায়ী ছিল এক নতুন ধরনের ভাইরাস। পরবর্তীতে গবেষণার মাধ্যমে সনাক্ত করে যার নাম দেওয়া হয় ‘এইচ ওয়ান এন ওয়ান ভাইরাস (H1N1), তবে প্রাথমিকভাবে এর নাম ছিল স্প্যানিশ ফ্লু।

স্প্যানিশ ফ্লু সৃষ্টিকারী এইচ ওয়ান এন ওয়ান ভাইরাসের বিবর্ধিত ছবি; Image Source: SPL/Fotostock

১৯১৭ সালের ৬ এপ্রিল, মিত্রপক্ষে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ছিল তুলনামূলক ছোট। কিন্তু যুদ্ধে যোগ দেয়ার কয়েক মাসের মাথায় তারা বিশাল এক সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলে, যার মধ্যে থেকে প্রায় দুই মিলিয়ন সেনা ইউরোপে যুদ্ধের জন্য পাঠানো হয়।

বিশাল সৈন্যবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা তখন যুক্তরাষ্ট্রে ছিল না। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদেই তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন ক্যাম্প তৈরি করে। এর মধ্যে একটি ছিল কানসাসের ফোর্ট রাইলি। সেখানে সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নতুন করে ক্যাম্প ফান্সটন তৈরি করা হয়।

ক্যাম্প ফান্সটনে মোট ৫০ হাজার সেনার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে ১৯১৮ সালের মার্চের শুরুতে প্রথমে এক সৈন্য জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এর কয়েক ঘণ্টার মাথায় আরো শতাধিক সেনা একই কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে এই সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। মূলত এটি ছিল স্প্যানিশ ফ্লুর উৎপত্তি, যার মূল কারণ ছিল পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব।

কানসাসের ক্যাম্প ফান্সটনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া স্প্যানিশ ফ্লুতে আক্রান্ত রোগীরা; Image Source: AP/National Museum of Health 

একই জায়গায় বহু সংখ্যক সেনা থাকার কারণে সেখানে খুব সহজেই রোগের বিস্তার ঘটেছিল। পরবর্তীতে এপ্রিলে যখন মার্কিন সেনারা নিজ দেশ ছেড়ে ইউরোপের যুদ্ধের ময়দানে আসে, তখন তারা সাথে করে সেই ভাইরাসও নিয়ে আসে। এরপর তাদের থেকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানিসহ পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। স্প্যানিশ ফ্লুর হাত থেকে পৃথিবীর কোনো অংশই ছাড় পায়নি। এশিয়া, আফ্রিকাসহ প্রশান্ত মহাসাগরের বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোতেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল।

স্প্যানিশ ফ্লু নাম হওয়ার কারণ

স্প্যানিশ ফ্লুর ৩০ বছর আগে ইউরোপে রাশিয়ান ফ্লুর সংক্রমণ হয়েছিল, যার উৎপত্তিস্থল ছিল উজবেকিস্তানের বুখারা। উজবেকিস্তান সেই সময় রাশিয়ার অংশ ছিল। যে কারণে সেই ভাইরাসের নাম হয়েছিল রাশিয়ান ফ্লু। কিন্তু স্প্যানিশ ফ্লুর নামকরণ হয়েছিল অন্যায়ভাবে। কারণ এই ভাইরাসের উৎপত্তি স্পেনে হয়নি। আবার তারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কোনো পক্ষের হয়ে যুদ্ধেও জড়ায়নি। কিন্তু তাদের এই নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণেই ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়ের সাথে তাদের নাম জুড়ে গেছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া দেশগুলোর সরকার তাদের সংবাদমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেনও ছিল। সরকারের অনুমতি ছাড়া সেসব দেশের সংবাদমাধ্যম সংবেদনশীল কোনো খবর প্রকাশ করতে পারতো না। কিন্তু স্পেন যেহেতু নিরপেক্ষ ভূমিকায় ছিল তাই তাদের সংবাদমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।

যার ফলে রাজা ত্রয়োদশ আলফানসো এবং তার মন্ত্রীসভার বেশ কয়েকজন সদস্য যখন বিশেষ সেই ভাইরাসে সংক্রমিত হন, তখন স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম সেই খবর বেশ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের কারণে তখন ইউরোপে প্রথমবারের মতো এই ভাইরাসের কথা শোনা যায়। যদিও এর আগেই ইউরোপে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল।

Image Source: National Photo Company/ Library of Congress

কিন্তু ব্রিটেন, ফ্রান্স কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সরকার চায়নি তাদের জনগণ নিজ দেশে এমন রোগের কথা জানতে পারুক। ফলে নিজেদের যুদ্ধের যৌক্তিকতাকে ধরে রাখার জন্য তারা এই খবর গোপন করেছিল। এরপর স্পেনের সংবাদপত্র যখন তাদের রাজার অসুস্থ হওয়ার খবর প্রকাশ করে, তখন ব্রিটেনের ও ফ্রান্সের নেতারা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হিসেবে স্পেনের নাম প্রচার করে। যার ফলে তখন ভাইরাসটির হয়ে যায় ‘স্প্যানিশ ফ্লু’।

কিন্তু স্প্যানিশরা জানতেন তারা এই ভাইরাসের জন্য দায়ী নন। এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য তারা ফরাসি সেনাদের সন্দেহ করেছিল। কিন্তু তাদের হাতে শক্ত কোনো প্রমাণ ছিল না। তখন তারা এই মিথ্যা অপবাদ ঘুচানোর জন্য অভিনব এক উপায় বের করে। রাজধানী মাদ্রিদের জারজুয়েলা থিয়েটারে ডন জুয়ানের একটি মিথ মঞ্চায়নের সময় ‘দ্য সোলজার অব নেপলস’ নামে একটি গান খুবই জনপ্রিয় হয়। যে গানটি সেই ভাইরাসের মতোই দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে স্প্যানিশরা ভাইরাসটিকে ‘সোলজার অব নেপলস’ নাম দেয়।

কিন্তু বিশ্বজুড়ে শতবর্ষ আগের সেই মহামারী ভাইরাসের আসল পরিচয় এখনো ‘স্প্যানিশ ফ্লু’। স্পেনে ভাইরাসটির উৎপত্তি না হলেও সেখানকার লাখ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। এমনকি স্পেনে মৃত্যুর হার ব্রিটেনের চেয়ে দ্বিগুণ ছিল। আর ডেনমার্কের চেয়ে তিনগুণ বেশি ছিল।

স্প্যানিশ ফ্লুতে সবচেয়ে বেশি জীবনহানি ঘটেছে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে। এখানকার দেশগুলোতে মৃত্যুর হার ইউরোপের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি ছিল। অথচ ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এই হার ছিল সর্বনিম্ন।

এভাবেই আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়া হয়েছে; Image Source: Library of Congress/ Interim Archives

স্প্যানিশ ফ্লুর আক্রমণে সবচেয়ে বেশি মারা যান ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। শিশু ও গর্ভবতী নারীদের মৃত্যুর হার ছিল তুলনামূলকভাবে কম। যদিও গর্ভবতী নারীদের সংক্রমিত হবার আশঙ্কাই অধিক ছিল। তবে পরিণত বয়সের নারী ও পুরুষ উভয়ই সংক্রমণের শিকার হয়েছেন এবং মারা গেছেন। একই ধরনের ঘটনা সারাবিশ্বেই লক্ষ্য করা গেছে।

মৃতের হার শহরের তুলনায় গ্রামে তুলনামূলক কম ছিল। তবে কিছু শহর একেবারে জনশূন্য হলেও পাশের কোনো শহরে ক্ষতির হার কম হওয়ার নজিরও ছিল।

ভয়ঙ্কর গতিতে জীবনহানি

স্প্যানিশ ফ্লু যে দ্রুততার সাথে মানুষকে সংক্রমণ করেছিল তা এর আগে এবং পরে কখনোই দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে এমনও হয়েছে যে, কেউ সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় অসুস্থবোধ করেছেন। এরপর নাস্তা সেরে অফিস যাওয়ার পথেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

এই রোগের লক্ষণগুলোও ছিল ভয়ঙ্কর। প্রথমে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হতো। দেহে অক্সিজেনের অভাবে কিছুটা নীলবর্ণ ধারণ করতো। এরপর শ্বাসযন্ত্রে রক্ত জমে বমি ও নাক দিয়ে রক্তপড়া শুরু হতো। অনেকেই নিজেদের রক্তে গড়াগড়ি খেয়ে মারা যেতেন।

এই ভাইরাস অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন- ১৯১৮ সালে পারস্য তথা ইরান ছিল বিশ্বের অন্যতম এক ব্যর্থ রাষ্ট্র। রাশিয়া ও ব্রিটেনের প্রতিযোগিতার কারণে সেখানকার সরকার দুর্বল ও প্রায় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। ফলে সেখানে সঠিক কোনো স্বাস্থ্যব্যবস্থা ছিল না।

১৯১৮ সালের আগস্টে যখন ইরানের উত্তর-পূর্বের মাশাদ শহরে স্প্যানিশ ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে, তখন এক রাতের মাথায় মহামারী আকার ধারণ করে। এবং দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়। কিন্তু এরপরও চলাফেরার উপর নিষেধাজ্ঞা না দেয়ায় তা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। যখন অবস্থার উন্নতি হয় তখন দেখা যায় শহরের শতকরা ৮ থেকে ২২ ভাগ মানুষ মারা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অকল্যান্ডের এক অস্থায়ী হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে; Image Source: Underwood Archives/Getty Images

১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বরে স্প্যানিশ ফ্লু সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে মোট ১৩ সপ্তাহে পৃথিবী জুড়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রাণহানি ঘটায় এই ভাইরাস। শুধু অক্টোবর মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২ লাখ মানুষ মারা যায়, যেখানে পুরো প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মারা গিয়েছিল ১ লাখ ১৬ হাজারের কিছু বেশি।

এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। সেই সাথে কবর খননকারী ও সৎকার ব্যবসায়ীরাও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে যান। ফলে অনেক মানুষকে একসাথে গণকবর দিতে বাধ্য হন তারা।

১৯১৯ সালের জানুয়ারিতে স্প্যানিশ ফ্লু শেষবারের মতো আঘাত হানে। প্রথমভাগে এই ভাইরাসের গতি কম ছিল। তবে দ্বিতীয় ভাগে তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। এরপর শেষ ধাপে এসে ভাইরাসটির ক্ষিপ্রতা অনেকাংশে কমে যায়। কিন্তু এরপরও ১৯২০ সালের মার্চে বিদায় নেওয়ার আগে ব্রিটেনে ২ লাখ ৫০ হাজার, যুক্তরাষ্ট্রে ৬ লাখ ৭৫ হাজার, জাপানে ৪ লাখ এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ সামোয়ার এক-পঞ্চমাংশ লোক মৃত্যুবরণ করেন।

সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে

১৯১৮ সালে ইউরোপ ও আমেরিকায় স্প্যানিশ ফ্লু মহামারী আকার ধারণ করে। তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ভারত। ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রচুর সংখ্যক সেনা ব্রিটেনের হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে, যাদের মাধ্যমে পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারী আকার ধারণ করে।

ব্রিটিশ ভারতে মানুষের স্যানিটেশন ব্যবস্থা ছিল খুবই খারাপ পর্যায়ে। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতাও বেশি ছিল না। স্প্যানিশ ফ্লু সবচেয়ে বেশি প্রাণহানী ঘটায় উপমহাদেশে। সংখ্যায় যা ছিল প্রায় ১৮ থেকে ২০ মিলিয়ন। অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল শুধুমাত্র এক ভাইরাসের আক্রমণে। একক দেশ হিসেবে যা ছিল সর্বোচ্চ। তবে সঠিক সংখ্যা কখনোই জানা যায়নি। সঠিক হিসাব করলে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় সেনা; Image Source: The Print Collector 

তবে বিশ্বব্যাপী স্প্যানিশ ফ্লুর ভয়াবহতা ছড়ানোর জন্য দায়ী হলো যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুদ্ধে অংশ নেওয়া দেশগুলো। ভ্যাকসিন ও অ্যান্টিবায়োটিকের পূর্ববর্তী সময়ে রোগ ছড়ানো ছিল খুবই সাধারণ এক বিষয়। এর মধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকা সত্য জানার পরেও গোপন রেখেছিল, যা এই ভাইরাসকে অপ্রতিরোধ্য হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করেছিল।

যুদ্ধের ময়দানে বুলেটের আঘাতে যত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন তার চেয়ে বেশি নিরপরাধ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে যুদ্ধের ময়দানে সৃষ্ট এক ভাইরাসের কারণে। এ কারণেই আমাদের যুদ্ধের পথ পরিহার করা উচিত। যুদ্ধ শুধু একটি সভ্যতাকে ধ্বংস করে না। সেই সাথে কেড়ে নেয় কোটি মানুষের প্রাণ।

This article is in Bangla language. It is about deadly history of Spanish Flu which killed more than 50-100 million life.

Necessary references have been hyperlinked.

Featured Image Source:  National Photo Company/ Library of Congress

Related Articles