যুদ্ধ-বিগ্রহের ইতিহাস জানতে ভালোবাসে অথচ গ্ল্যাডিয়েটরদের নাম শোনে নি, এমন মানুষ সম্ভবত খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিনই হবে। রোমান এম্পায়ার এবং রোমান রিপাবলিকের সুপরিচিত এ যোদ্ধারা লড়াইয়ে লিপ্ত হতো নিজেদের সাথে, লড়াই করতো বাঘ, সিংহ, হাতির মতো পশুদের সাথেও!
আজকের দিকে আমরা যেমন টেলিভিশনে দ্য রক, জন সিনা কিংবা সদ্য অবসর নেয়া আন্ডারটেকারদের রেসলিং দেখে মজা পাই, ঠিক তেমনই প্রাচীনকালে বিনোদন নেয়ার উদ্দেশ্যে কলোসিয়ামে আগমন ঘটতো রোমের জনসাধারণের। তবে রেসলিংয়ে সব ফলাফলই আগে থেকে নির্ধারণ করা থাকে, অর্থাৎ এতে আগে থেকে স্ক্রিপ্ট রেডি করা থাকে। কিন্তু গ্ল্যাডিয়েটরদের বেলায় এমনটা হতো না। তারা সত্যিকারের লড়াই করতেই এরেনায় প্রবেশ করতো, বীরের মতো লড়াই করতে করতেই এরেনার মাটিতে লুটিয়ে পড়তো কিংবা বিজয়ীর বেশে সেখান থেকে বেরিয়ে যেত।
আজকের লেখায় মূলত প্রাচীন রোমের হরেক রকম গ্ল্যাডিয়েটরদের নিয়েই আলাপ করা হয়েছে। তাদের অস্ত্র, বর্মের নমুনা আর পারিপার্শ্বিক অবস্থার পাশাপাশি আনুষাঙ্গিক ছবিগুলো পাঠকদের আসল গ্ল্যাডিয়েটরদের সাথে পরিচয়ের স্বাদ দেবে বলেই আমার বিশ্বাস।
বেস্টিয়ারী (Bestiarii)
‘বেস্টিয়ারী’ শব্দটির সাথে কি আপনি ইংরেজি ‘বিস্ট (Beast)’ অর্থাৎ ‘পশু’ শব্দটির কোনো যোগসূত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন? যদি তা করে থাকেন, তাহলে আপনি ঠিক রাস্তাতেই আছেন। কারণ প্রাচীন রোমে অন্যান্য গ্ল্যাডিয়েটরদের মতো এই বেস্টিয়ারীরা মানুষের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হতো না, বরং তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকতো কোনো পশু!
নিজেদের ধন-দৌলতের প্রদর্শন ও জনতার সামনে বাহবা কুড়োনোর জন্য এককালে রোমের অ্যাম্ফিথিয়েটার ও কলোসিয়ামগুলোতে আফ্রিকা ও এশিয়া থেকে ধরে আনা বাঘ, ভালুক, সিংহ কিংবা হাতির সাথে মানুষের লড়াইয়ের আয়োজন করতেন তৎকালীন রোমান সম্রাট ও সিনেটররা। আর দুর্ভাগা সেই মানুষগুলোকেই বলা হতো বেস্টিয়ারী।
এই বেস্টিয়ারীরা ছিলো আবার দু’ধরনের- ড্যামনেশিও অ্যাড বেস্টিয়াস (Damnatio ad bestias) ও ভেনাশিও (Venatio)।
এদের মাঝে ড্যামনেশিও বলতে আইনের ক্ষমতাবলে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ব্যক্তিদেরই কেবল বোঝানো হতো। অপমানজনক ও যন্ত্রণাদায়ক এক মৃত্যুর মুখোমুখি করতে তাদের ছেড়ে দেয়া হতো বিভিন্ন হিংস্র পশুর সামনে। পশুর হাতে মারা যাওয়া এ মানুষগুলোর মৃত্যুতে বিন্দুমাত্র দুঃখিত হতো না খেলা দেখতে আসা মানুষগুলো। কারণ তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যে এই ড্যামনেশিওদেরই সবচেয়ে নিচু শ্রেণীর বলে মনে করা হতো। অপরাধীদের পাশাপাশি ক্রীতদাস এবং শুরুর দিককার খ্রিষ্টানরাও ছিলো এই দুর্ভাগা সম্প্রদায়ভুক্ত।
এখন আসা যাক ভেনাশিওদের কথায়। তাদের কাজ ছিলো মূলত দর্শকদের আনন্দ দানের জন্য সরাসরি পশু শিকার করে দেখানো। ইতিহাসে অবশ্য খুব বেশি ভেনাশিওর কথা লিপিবদ্ধ নেই। তবুও অল্প যে কজনের কথা জানা যায়, তাদের মাঝে সবচে’ বিখ্যাত ছিলেন কার্পোফোরাস। বীরত্বের অসাধারণ নজির স্থাপন করে খালি হাতে তিনি ২০টি প্রাণীকে পরাস্ত করেছিলেন।
নক্সী (Noxii)
প্রাচীন রোমে নক্সীদের সম্পর্কে বলা হতো- ‘তারা নীচদের মাঝেও সর্বাপেক্ষা নীচ শ্রেণীর’। লোকে তাদেরকে মানুষ হিসেবেই গণ্য করতে চাইতো না। দুর্ভাগা এ নক্সীদের মাঝে ছিলো খ্রিষ্টান, ইহুদী, সেনাবাহিনী ত্যাগ করা কোনো সেনা, বিদ্রোহী ও খুনীরা। গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে কোনো প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ তাদের ছিলো না। বরং নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করে দর্শকদের আনন্দ দেয়াই (!) ছিলো তাদের একমাত্র নিয়তি।
বিভিন্ন রকম শত্রুর মুখোমুখি হতে হতো এই নক্সীদের। এর মাঝে বেশ কিছু পদ্ধতির কথা এখানে তুলে ধরছি।
১) তাদেরকে এরেনায় ছেড়ে দেয়া হতো তীরন্দাজদের সামনে। সেখানে একজন দক্ষ তীরন্দাজের নির্ভুল নিশানার হাত থেকে নিজেকে কোনোক্রমে বাঁচানোই ছিলো তার মূল চ্যালেঞ্জ।
২) কখনো নক্সীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আসতো ঘোড়সওয়ারের দল। তারা ঘোড়ার পদতলে পিষে কিংবা দ্রুতবেগে এসে বর্শার আঘাতে শেষ করে দিতে চাইতো সমাজের চোখে ঘৃণিত সেসব ব্যক্তিকে।
৩) মাঝে মাঝে আবার একটু আগেই উল্লেখ করা ড্যামনেশিওদের ভূমিকায় নামতে হতো নক্সীদের। কখনো কখনো একটি পশুর হাতেই মারা পড়তো শত শত ড্যামনেশিও।
৪) কখনো আবার তাদের এমন হেলমেট পরিয়ে দেয়া হতো যাতে চোখের জায়গাটাও থাকতো বন্ধ। ফলে দর্শকেরা যেভাবে বলতো, সেভাবেই চলতে চলতে মারা যেত নক্সীরা।
হতভাগা এই নক্সীদের পরনে প্রায় সময়ই কোনো কাপড় থাকতো না। আর যদি থাকতো, তবে তা হতো বড়জোর একটি নেংটি। অনেক সময়ই কোনো অস্ত্র দেয়া হতো না তাদের। সৌভাগ্যক্রমে যদি পেত, তবে তা হতো গ্ল্যাডিয়াস নামক ছোট একটি তলোয়ার কিংবা পুজিও নামক এক ধরনের ছোরা।
রিটায়ারিয়াস (Retiarius)
রিটায়ারিসদের সাজসজ্জা হতো অনেকটা জেলেদের মতোই। প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার জন্য তাদের হাতে থাকতো জাল (ভুল পড়েন নি!), ত্রিশূল এবং পুজিও।
হালকা অস্ত্রে সজ্জিত এ রিটায়ারিয়াসদের জন্য থাকতো আর্ম গার্ড ও শৌলডার গার্ড। সাধারণত প্রশস্ত বেল্ট দিয়ে আটকানো নেংটি কিংবা ছোট টিউনিকই হতো তাদের মূল পরিধেয় বস্ত্র। মাথা রক্ষার জন্য হেলমেট কিংবা পা রক্ষার জন্য কোনো গার্ড তাদের জন্য বরাদ্দ ছিলো না।
প্রথম শতকের দিকে এরেনায় আগমন হলেও রিটায়ারিয়াসদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় দ্বিতীয়-তৃতীয় শতকের দিকে। তবে হালকা অস্ত্রে সজ্জিত হবার কারণে সবসময়ই তাদের মাঝে পলায়নপর মানসিকতার প্রাধান্য লক্ষ্য করা যেত। এজন্য রোমান গ্ল্যাডিয়েটরদের মাঝে তাদেরকেই সবচেয়ে নীচু শ্রেণীর বলে মনে করা হতো।
সেকিউটর (Secutor)
একটু আগে উল্লেখ করা রিটায়ারিয়াসদের মূল প্রতিপক্ষ ছিলো এ সেকিউটররা। বলা যায়, রিটায়ারিয়াসদের সাথে লড়বার জন্যই প্রস্তুত করা হতো তাদের। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত এ সেকুইটরদের থাকতো শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, গ্ল্যাডিয়াস, পুজিও এবং প্রতিপক্ষের ত্রিশূল থেকে বাঁচবার জন্য শক্ত একটি হেলমেট। হেলমেটের শুধুমাত্র চোখের জায়গায় ছোট দুটি ছিদ্র থাকতো।
তাদের পরনে থাকতো একটি নেংটি ও বড় বেল্ট। ডান হাতে ম্যানিকা (Manica) নামক আর্ম গার্ড, বাম পায়ে অক্রিয়া (Ocrea) নামক বর্ম এবং এক হাতে স্কুটাম (Scutum) নামক একটি বাঁকানো চৌকোণাকৃতির ঢাল শোভা পেত।
লড়াইয়ের শুরুতে রিটায়ারিয়াসরা নিরাপদ দূরত্বে, কখনো কখনো পানি দিয়ে ঘেরা উঁচু প্লাটফর্মে থাকতো। তাদের আশেপাশে থাকতো পাথরের টুকরা যা তারা সেকুইটরদের দিকে নিক্ষেপ করতে পারতো। রিটায়ারিয়াসকে ধাওয়া করার সময় তার জালে ধরা না পড়া কিংবা তার নিক্ষেপ করা পাথর থেকে গা বাঁচিয়ে চলার পাশাপাশি তার ত্রিশূল থেকেও নিজেকে রক্ষা করতে সদা সতর্ক থাকতে হতো সেকিউটরকে। ভারী অস্ত্র একদিকে যেমন তাকে প্রতিপক্ষের উপরে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতো, তেমনি এটা তাকে তাড়াতাড়ি ক্লান্তও করে দিতো! ‘জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ’ প্রবাদটিকে যেন তাই ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পারতো সেকিউটররা।
ইকোয়াইট (Equite)
অশ্বারোহী এ ইকোয়াইটদের দিয়েই শুরু হতো যেকোনো গ্ল্যাডিয়েটর লড়াইয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ঘোড়ার পিঠে চেপে এরেনায় প্রবেশ করা ইকোয়াইটদের আকর্ষণীয় দিক ছিলো ক্ষিপ্রতা। দ্রুত গতিতে চলাচলের জন্য হালকা অস্ত্রে সজ্জিত এ গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকতো অন্য ইকোয়াইটরা।
শুরুতেই দ্রুত বেগে ঘোড়ায় চড়ে প্রতিপক্ষের দিকে ল্যান্সিয়া (Lancea) কিংবা ভেরাটাম (Verutum) নামক বর্শা ছুঁড়ে মারা হতো। এতে যদি কাজ না হতো, তাহলে পরের ধাপে ঘোড়া থেকে নেমে যেত তারা। তখন ২৭ ইঞ্চি লম্বা গ্ল্যাডিয়াস দিয়েই শুরু হতো দ্বন্দ্বযুদ্ধ।
ইকোয়াইটদের হেলমেটে শোভা পেত ময়ূর, তোতাপাখি, ঈগল কিংবা উটপাখির পালক। মাঝারি কিংবা বড় আকারের ঢাল ধরা থাকতো তাদের এক হাতে। ম্যানিকা নামক আর্ম গার্ডটিও থাকতো প্রতিরক্ষার জন্য।
প্রোভোকেটর (Provocator)
রোমান সেনাদের মতো সজ্জিত প্রোভোকেটর গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকতো অন্য আরেকজন প্রোভোকেটর। এর পেছনে অবশ্য বেশ কিছু কারণও ছিলো।
অন্যান্য গ্ল্যাডিয়েটরদের বেলায় যেখানে কে কার প্রতিপক্ষ হবে তা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দিতো, সেখানে প্রোভোকেটররা নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ সিলেক্ট করে নিতো। এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষ গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলের মাঝে বিবাদ মীমাংসা কিংবা তুলনামূলক শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে নিজের সম্মান বৃদ্ধির বিষয়টি কাজ করতো।
প্রোভোকেটরদের মূল অস্ত্র ছিলো গ্ল্যাডিয়াস। এছাড়া প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য বেশ ভালোই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তাদের জন্য। হেলমেট, ব্রেস্টপ্লেট, ম্যানিকা ও পায়ের বর্মের পাশাপাশি তাদের হাতে শোভা পেত স্কুটাম।
গ্ল্যাডিয়াট্রিক্স (Gladiatrix)
নারী গ্ল্যাডিয়েটরদের ডাকা হতো এই নামে। পুরুষদের মতো তারাও বিভিন্ন খেলায় অন্য কোনো নারী কিংবা পশুর সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হতেন। তবে গ্ল্যাডিয়াট্রিক্সদের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না।
গ্ল্যাডিয়েট্রিক্সদের দেহ থাকতো বর্মের বাহুল্য বর্জিত। ব্রেস্টপ্লেট থাকতো না তাদের, অনেক সময় থাকতো না কোনো হেলমেটও। খর্বাকৃতির তলোয়ার এবং ঢালই হতো সেই নারীদের লড়াইয়ের একমাত্র অবলম্বন। দ্বিতীয় শতকের কাছাকাছি সময় থেকে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
মার্মিলো (Murmillo)
মার্মিলো বা মির্মিলো নামে পরিচিত এ গ্ল্যাডিয়েটররা ছিলো ভারী অস্ত্র ও বর্মে সজ্জিত। তাদের সাথে থাকতো গ্ল্যাডিয়াস নামক তলোয়ার, স্কুটাম নামক ঢাল, বাল্টিয়াস নামক চামড়ার বেল্ট, আর্ম গার্ড ম্যানিকা, ব্রোঞ্জ নির্মিত ও উপরে পালক শোভিত হেলমেট ক্যাসিস ক্রিস্টা, শিন গার্ড অক্রিয়া, পায়ের সুরক্ষার জন্য প্যাড ফ্যাসী।
এতসব অস্ত্র ও বর্ম বহন করতে হতো দেখে যে কেউ চাইলেই মার্মিলোদের দলে নাম লেখাতে পারতো না। এজন্য চওড়া কাঁধ, পেশীবহুল শরীরের পাশাপাশি আগ্রহী ব্যক্তিকে দীর্ঘদেহীও হওয়া লাগতো।
স্যামনাইট (Samnite)
স্যামনাইটরা ছিলো শুরুর দিককার গ্ল্যাডিয়েটর। খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে রোমানদের কাছে স্যামনিয়ামের পরাজয় ঘটলে রোমে তাদের আগমন ঘটে। রোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসা গোত্রগুলো থেকে ধরে আনা লোকদের সাথে লড়াই হতো স্যামনাইটদের।
সাধারণত গ্ল্যাডিয়াস, স্কুটাম, অক্রিয়া এবং পালকশোভিত হেলমেট থাকতো স্যামনাইটদের সাথে। এছাড়া আর্ম গার্ড ও লেগ প্যাড তো থাকতোই।
আন্দাবেতী (Andabatae)
এতক্ষণ ধরে যেসব গ্ল্যাডিয়েটরদের নিয়ে আলাপ করলাম, তাদের মাঝে সবচেয়ে দুর্ভাগা বলা চলে এদেরই। অবশ্য তাদের কাজ একজন গ্ল্যাডিয়েটরের মতো যুদ্ধ করা ছিলো না, বরং ছিলো নিজের মৃত্যুর মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকদের বিনোদন দেয়া!
আন্দাবেতীদের হেলমেটে চোখের জায়গায় কোনো ছিদ্র থাকতো না। ফলে খেলার শুরুতেই সে ‘চোখ থাকিতেও অন্ধ’ হয়ে যেত। অস্ত্র হিসেবে হাতে থাকতো কেবলই গ্ল্যাডিয়াস। সাথে অন্য কোনো বর্ম থাকতো না এ দুর্ভাগাদের। আর প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা পেত তাদেরই মতো অন্য কোনো দুর্ভাগাকে।
দেখতে না পাওয়ায় এরেনায় থাকা দুজন আন্দাবেতী দর্শকদের কথামতোই আন্দাজে তলোয়ার চালাতো। এটা দেখেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেত প্রাচীন রোমানরা। এভাবেই আন্দাজে হাওয়ায় তলোয়ার চালাতে চালাতে একসময় প্রতিপক্ষকে আঘাত করতে সক্ষম হতো তারা।
কোনো আন্দাবেতী যদি মাটিতে পড়ে যেত, তবে সে আসলেই মারা গেছে কিনা, তা চেক করার জন্য তার পিঠে গরম লোহা দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হতো। তারপরও সন্দেহ থাকলে কখনো কখনো হাতুড়ি দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করে চিরতরে দূর করা হতো সেই সন্দেহ!
ডাইমাকেইরি (Dimachaeri)
ডাইমাকেইরিরা দু’হাতে দুটি তলোয়ার নিয়ে লড়াই করতো। ফলে তারা যে লড়াইয়ে বেশ দক্ষ ও শক্তিশালী হতো, সে কথা না বললেও চলে। ফেয়ার প্লের জন্য তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবেও সেরকম শক্তিশালী কাউকেই বেছে নেয়া হতো।
দীর্ঘদেহী এবং ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন হওয়া ছিলো ডাইমাকেইরি হবার প্রধান শর্ত। দীর্ঘদিনের ট্রেনিং শেষে তবেই তারা নিজেদের পরিপূর্ণ রুপে প্রস্তুত করতে পারতো।
হোপ্লোম্যাকাস (Hoplomachus)
হোপ্লোম্যাকাসদের সাজসজ্জা ছিলো অনেকটা গ্রীক হোপ্লাইট সৈনিকদের মতো। ব্রোঞ্জ হেলমেট, ম্যানিকা আর লেগ প্যাড থাকতো তাদের প্রতিরক্ষার জন্য। হাতে থাকতো গোলাকার ঢাল, ছোট তলোয়ার এবং বর্শা। হোপ্লোম্যাকাসদের মূল প্রতিপক্ষ ছিলো মার্মিলো আর থ্রেসিয়ান গ্ল্যাডিয়েটররা।
থ্রেসিয়ান (Thracian)
থ্রেসিয়ানদের মতো সজ্জিত এ গ্ল্যাডিয়েটরদের হাতে থাকতো আয়তাকার, বর্গাকার কিংবা গোলাকার এক ঢাল। সেই সাথে থাকতো সিকা (Sica) নামক ছোটখাট একটি তলোয়ার। এছাড়া দেহের সুরক্ষার জন্য অন্যান্য বর্মও পরিধান করতো থ্রেসিয়ান গ্ল্যাডিয়েটররা।