ব্রিটিশ ইস্ট কোম্পানিকে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী কর্পোরেশন কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৬০০ সালে কোম্পানি গঠনের সময় তারা নতুন নতুন ব্যবসায়ীক মডেল তৈরি কোম্পানির মধ্যে ছিল অন্যতম। কিন্তু নিজ দেশের সীমানা ছেড়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে পা রাখা কোম্পানির মধ্যে তারা সর্বাগ্রে ছিল না। সর্বপ্রথম পর্তুগিজ ও ডাচরা মসলার ব্যবসা করার জন্য উপমহাদেশে পা রেখেছিল। আর ফরাসিরা এনেছিল লিমিটেড লায়াবিলিটি ও জয়েন্ট স্টক বা যৌথ তহবিলের ব্যবসায়ীক মডেল।
ব্রিটিশরা পর্তুগিজ ও ডাচদের অনুসরণ করেছিল। আর ফরাসিদের ব্যবসায়ীক মডেল গ্রহণ করে তারাই সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করেছিল। ব্রিটিশরা একই সাথে ব্যবসায়ীক ও জাতীয় স্বার্থের সাথে ভারসাম্য রেখে ব্যবসা করে গেছে। সেই সাথে নিজেদের দক্ষতা ও শক্তি সামর্থ্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে হটিয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করেছিল৷ এর জন্য তারা ডাচ, পর্তুগিজ ও ফরাসিদের সাথে একাধিকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে।
সর্বপ্রথম জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানির ধারণা দিয়েছিলেন ভেনেশিয়ানরা। দ্বাদশ শতাব্দীতে ভেনিসের সওদাগররা তাদের বাণিজ্য তরীগুলো একসাথে করে ব্যবসায়ীক সফরে বের হতেন। কিন্তু তাদের কেউ একক কোনো জাহাজের জন্য লভ্যাংশ গ্রহণ করতেন না। বরং তারা মোট লাভ থেকে নির্দিষ্ট হারে অর্থ পেতেন তারা। সেই সময়ে তারা নিজেদের জাহাজের জন্য বীমার পদ্ধতিও চালু করেছিলেন৷ তবে সেটা ব্যক্তিগত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হতো। ভেনেশিয়ানদের জয়েন্ট স্টক ও লিমিটেড লায়াবিলিটি ধারণাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যায় ফরাসি ও ব্রিটিশরা।
ব্রিটিশ ও ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বড় দুই উদ্ভাবন ছিল লিমিটেড লায়াবিলিটি ও স্থায়ী শেয়ার। লিমিটেড লায়াবিলিটির ফলে একজন ব্যবসায়ী যতটুকু বিনিয়োগ করবেন সেই অনুপাতে লাভ পাবেন অথবা লোকসান গুনবেন। আর স্থায়ী শেয়ার কোম্পানির তহবিলকে বড় করতে সাহায্য করেছিল। এই শেয়ার ক্রয় করার পর তার অর্থমূল্য ফেরত দেওয়া হতো না। বরং সময়ের সাথে সেই মালিকানা পরিবর্তিত হতো। ফরাসি ও ব্রিটিশদের এই দুই উদ্ভাবনই আধুনিক পুঁজিবাদী অর্থনীতির মূলভিত্তি। বর্তমান বিশ্বে এই নীতির বাইরে পুঁজিবাদী অর্থনীতির কল্পনা করাও দুষ্কর।
ব্রিটিশ ও ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল প্রাইভেট কোম্পানি হয়েও ব্যবসার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় নীতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করা। ভারতে ইউরোপের এই দুই শক্তিশালী দেশের সরকারি নীতির প্রয়োগ হয়েছে মূলত কোম্পানির মাধ্যমে। আর এজন্য তারা বারবার যুদ্ধেও জড়িয়েছে।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পর্যায়ক্রমে তার প্রতিপক্ষের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিয়েছে। পর্তুগিজদের সক্ষমতা ছিল স্বল্প। ফলে তারা ইংরেজদের কাছে বড় বাধা ছিল না৷ ইংরেজদের প্রথম চ্যালেঞ্জ করেছিল ডাচরা। ১৭৫০ এর দশক থেকে ব্রিটিশরা ডাচদের সাথে মোট চারবার নৌযুদ্ধে জড়ায়। শেষ যুদ্ধে ডাচদের পরাজয় তাদের ভারতে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। এরপর তাদের প্রধান শত্রুতে রূপ নেয় ফরাসিরা। কিন্তু ফরাসিরা নৌশক্তিতে পিছিয়ে থাকায় তারাও ব্রিটিশদের কাছে টিকতে পারেনি।
১৭৪০ সাল থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত এক শতকেরও বেশি সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিশ্বে বাণিজ্যে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে গেছে। তাদের ব্যবসার পরিধি ছিল চিলির কেপ হর্ন থেকে সুদূর চীন পর্যন্ত। ব্যবসায় সাফল্য লাভের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজেদের নতুন এক কোম্পানিতে পরিণত করেছিল, যাকে বলা হয় ‘হাইব্রিড কোম্পানি’। যার অর্থ তারা শুধু ব্যবসা নয়, একই সাথে ক্ষমতার পটপরিবর্তনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের পুঁজিবাদী নীতিকে ভারতীয় উপমহাদেশে সফল প্রয়োগ করার জন্য গড়ে তুলেছিল এক দক্ষ সেনাবাহিনী, যার অধিকাংশ ছিল ভারতীয়। প্রথমে তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও গোত্রের মধ্যে কৌশলে শত্রুতা সৃষ্টি করেছে। এরপর যখন ভারতীয়রা নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে তখন ইংরেজ কর্মকর্তারা ত্রাতা হিসেবে ফায়দা লুটেছে। এরপর ধীরে ধীরে কোম্পানি তাদের প্রয়োজনে ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত বেতন দিয়ে বিশাল এক সুদক্ষ বাহিনী গড়ে তোলে। যারা নিজ দেশের লোকদের খড়গহস্ত হয়েও কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করেছে।
ভারতে ব্রিটিশ রাজের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে। তাদের নীতি ছিল পুঁজিবাদ, সর্বোচ্চ পরিমাণ মুনাফা অর্জন এবং নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষায় নীতিবিবর্জিত যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার সফল প্রয়োগ। আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার সাফল্য পেয়েছিল সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মকর্তাদের হাত ধরে।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সোনালী সময়ে তাদের বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ২,৮০,০০০। যা তৎকালীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত সৈন্য সংখ্যার দ্বিগুণ৷ কোম্পানীর অধীনে ছিল ব্রিটেনের চেয়ে বড় এক রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব। বিভিন্ন সময়ে কোম্পানির বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। কিন্তু কখনো তাদের শোষণ ও শাসনে নীতির পরিবর্তন ঘটেনি। বরং যিনি কোম্পানির গভর্নর হিসেবে ভারতে এসেছেন তিনিই বিপুল অর্থসম্পদ ও সম্মান নিয়ে নিজ দেশে ফিরে গেছেন।
১৮০০ সালের শুরুর দিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নেতৃত্বে যোগ দেন ডিউক অব ওয়েলিংটন আর্থার ওয়েলেসলি ও তার ভাই রিচার্ড ওয়েলেসলি৷ ডিউক অব ওয়েলিংটন সেনাবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব নেন। আর রিচার্ড ওয়েলেসলি কোম্পানির প্রশাসনের বিষয়সমূহ দেখাশোনা করতেন। ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত কোম্পানির অধীনস্থ দেশীয় কর্মচারী ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া পরিচালিত হয়েছে।
কিন্তু কোম্পানির নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের লোভ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। এর মধ্যে ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটায়। কিন্তু এর আগে ব্রিটিশ সরকার তাদের শাসনকার্যে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি করেনি। ১৮৭৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে লন্ডনে রবার্ট ক্লাইভের ছোট এক মূর্তি ছাড়া লন্ডনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রত্যক্ষ কোনো অস্তিত্ব চোখে পড়ে না৷ কিন্তু তাদের পুঁজিবাদী নীতি ও তা বাস্তবায়নের জন্য লাঠিয়াল বাহিনীর ব্যবহার এখনো বিশ্বের আনাচে কানাচে হচ্ছে।
বর্তমান বিশ্বের হাইব্রিড কোম্পানি
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসায়ীক মডেল সম্পর্কে জানার পর আশা করি বর্তমান বিশ্বের হাইব্রিড কোম্পানিগুলো সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। হাইব্রিড কোম্পানি হচ্ছে প্রাইভেট কোম্পানি ও সরকারের যুগলবন্দি এক ধারণা। ব্যক্তিগত কোম্পানিগুলো সারাবিশ্বে ব্যবসা করবে আর তাদের প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক ও সামরিক সাহায্য প্রদান করবে রাষ্ট্র। কোম্পানিও ব্যবসার পাশাপাশি রাষ্ট্রের নীতি প্রয়োগ করবে। যার সফল প্রয়োগ করেছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।
পশ্চিমের ক্ষমতাধর দেশ থেকে শুরু করে এশিয়ার পরাশক্তি চীন, জাপান কিংবা লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের কোম্পানিগুলো বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ীক স্বার্থ উদ্ধারের পাশাপাশি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি প্রয়োগের বড় হাতিয়ার হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
এক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করছে নিজ নিজ দেশের গোয়েন্দা বাহিনী ও সেনাবাহিনী। উদাহরণ হিসেবে ১৯৫৩ সালে ইরানে সিআইএ ও এমআই সিক্স পরিচালিত অভিযানের কথা বলা যায়। ইরানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক যখন নিজ দেশের তেল সম্পদকে জাতীয়করণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন তখনকে তাকে ক্ষমতাচ্যূত করে সিআইএ ও এমআই সিক্স।
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ তার পেছনেও বড় ভূমিকা রয়েছে সেখানকার তেল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো বর্তমান পশ্চিমা বিশ্ব আরবদের একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত করে রেখেছে। এমনকি সেই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী পর্যন্ত। আর এই যুদ্ধ বিগ্রহের মাঝখানে পানির দামে তেল কিনে নিজেদের জ্বালানি চাহিদা মেটাচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো সামরিক শক্তিবলে লুটপাট চালাচ্ছে।
টেক জায়ান্টরা যেভাবে ইস্ট ইন্ডিয়াকে অনুসরণ করছে
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আফিম ব্যবসা ছিল তাদের চতুরতার বড় এক উদাহরণ। তারা নিজ দেশে কখনো আফিম বিক্রি করতো না। তারা উত্তর ভারতে কোম্পানির কর্মচারীদের মাধ্যমে আফিম উৎপাদন করে চীনসহ অন্যান্য দেশে বিক্রি করতো। আর চা, মসলা, কাপড়, সল্টপিটার (শোরা) ও বহুমূল্যের ধাতু নিজ দেশে রপ্তানি করতো। একবার ভেবে দেখুন তো বর্তমান বিশ্বে আফিম তথা কৃত্রিম আফিমের বড় কারবারি কারা? নিঃসন্দেহে ফেসবুক, গুগল, আমাজন ও অ্যাপল। কিন্তু কিভাবে সেটা ব্যাখ্যা করা যাক।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নীতি ছিল তারা প্রথমে ভারতবর্ষকে জয় করবে। এরপর তারা পুরো অঞ্চলকে শাসন করার কোনো এক উপায় উদ্ভাবন করবে৷ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঠিক সেটাই করেছিল। প্রথমে তারা ব্যবসায়ী হিসেবে এসেছিল। এরপর তারা ধীরে ধীরে শাসকে রূপ নেয়৷ আর সেটাই তাদের চূড়ান্ত লাভের মুখ দেখায়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্টগুলো ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সেভাবেই অনুসরণ করছে। ফেসবুক, গুগল, আমাজন ও অ্যাপলের মতো কোম্পানিগুলো ছাড়া বর্তমান বিশ্বের একজন মানুষের একটি দিন অতিবাহিত করাও কঠিন৷ ফেসবুক ও গুগল মানুষকে তাদের হাতের মুঠোয় নিয়েছে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুৃষের পছন্দ অপছন্দ থেকে সব তথ্যই তাদের কাছে রয়েছে৷ ফেসবুক আধুনিক বিশ্বে আফিমের চেয়েও বড় নেশা। আর গুগল মানুষকে পরিচালনা করছে৷ মানুষকে তাদের প্রতি পুরোপুরি নির্ভরশীল করে তুলেছে।
অন্যদিকে আমাজন মানুষকে ঘরমুখো করেছে। মানুষের প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্য তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। আর এক্ষেত্রে আমাজন মধ্যসত্ত্বভোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যেমন ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমিকা৷ আফিমের চাহিদা বেড়ে গেলে তারা উৎপাদকদের উপর চাপ প্রয়োগ করতেন। উৎপাদকরা আফিম উৎপাদন করে দিতেন। আর লভ্যাংশ যেত কোম্পানির খাতায়৷ একইভাবে উৎপাদক ও ক্রেতার মধ্যে মেলবন্ধন গড়ে দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করে যাচ্ছে আমাজন।
এদিকে অ্যাপল মানুষকে আভিজাত্যের নেশায় বুঁদ করে তুলেছে৷ তাদের পণ্য বাজারে আসার সাথে সাথে সারাবিশ্বের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তা কেনার জন্য। যেমন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেশমী কাপড়ের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। সেই সাথে ভারতের দামি রত্নের চাহিদা তো ছিলই। তবে ইস্ট ইন্ডিয়া দীর্ঘদিন নীতি-বিবর্জিত কার্যক্রম চালিয়েও ২০০ বছর টিকে ছিল। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব এত দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে যেখানে ছোট এক ভুল যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্টদের ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। যেমন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইতি টেনেছিল ‘সিপাহী বিদ্রোহ’।
অর্থ সম্পদের দিক অনেক এগিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান সৌদি আরামকো। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই তেল কোম্পানির ২০১৮ সালে মোট আয় ছিল ১১১ বিলিয়ন। যা টেক জায়ান্ট অ্যাপল ও গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের চেয়েও বেশি। সৌদি আরামকোর আনুমানিক মার্কেট ভ্যালু ২ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে অ্যাপল ও অ্যালফাবেটের মার্কেট ভ্যালু যথাক্রমে ১ ট্রিলিয়ন ও ৯০০ বিলিয়ন ডলার।
সৌদি আরামকো, অ্যাপল ও অ্যালফাবেটের যৌথ বাজার মূল্যের চেয়ে অধিক অর্থ আয় করেছে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ভারত থেকে তাদের আয় ছিল ৭৮ মিলিয়ন ডাচ গিল্ডারস। যা বর্তমানের হিসেবে ৭.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের সমান। যা জাপান ও জার্মানির মতো উন্নত দেশের মোট জিডিপির প্রায় সমান। এ তো গেল ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হিসাব। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আয় ছিল এর কয়েকগুণ বেশি।
খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ উৎস পাটনায়েক তার Dispossession, Deprivation and Development নামে এক গবেষণাপত্রে ভারত থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আয়ের হিসাব তুলে ধরেছেন। তার হিসাবমতে ভারত থেকে প্রায় ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যমানের সম্পদ ব্রিটিনে পাচার করেছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। যা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান জিডিপির দ্বিগুণেরও বেশি
উৎস পাটনায়েকের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত এই তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্পদের কাছে বর্তমান বিশ্বের প্রথম সারির টেক জায়ান্টদের সম্মিলিত বাজারমূল্যও নস্যি৷
প্রিয় পাঠক, রোর বাংলার ‘ইতিহাস’ বিভাগে এখন থেকে লিখতে পারবেন আপনিও। সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন রোর বাংলাকে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর মাধ্যমে। আমাদের সাথে লিখতে চাইলে আপনার পূর্বে অপ্রকাশিত লেখাটি সাবমিট করুন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ
১) ইস্ট ইন্ডিয়া আমলে ঢাকা
২) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস