কলম্বিয়া দেশটির ইতিহাস তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মতোই রক্তাক্ত এবং সংগ্রামের কাহিনীতে ভরপুর। সেই স্প্যানিশ আমল থেকে শুরু করে এই সাড়ে এগার লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের দেশটির পথে প্রান্তরে কাতারে কাতারে মানুষ নিজেদের রক্ত ঢেলেছে। কখনো কংকুইস্তাদোরসদের বিরুদ্ধে, তো কখনো অন্তঃকলহ, কখনো ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে কিংবা কখনো একটি সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদী সমাজ গড়ে তুলতে।
এমনই একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হলো রেভোল্যুশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়া (স্প্যানিশ- ফুয়েরখাস আরমাদাস রেভ্যোলুশিওনারিয়াস দে কলম্বিয়া) বা ফার্ক। সেই ষাটের দশক থেকে ৫৩টা বছর ধরে কলম্বিয়াতে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে ফার্ক বিদ্রোহীরা। কখনো সমাজতন্ত্রের জন্য তো কখনো স্রেফ নিজেদের অস্তিত্বটা টিকিয়ে রাখবার তাগিদে। জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীর অন্যতম দুর্ধর্ষ সেই গেরিলা সেনাদের কাহিনী।
কলম্বিয়া, গাইতানের হত্যাকান্ড, লা ভায়োলেন্সিয়া
আর দশটা লাতিন আমেরিকার দেশের মতো কলম্বিয়াতেও ভূস্বামী আর ধনী ব্যবসায়ীদের খুব রমরমা অবস্থা ছিল। দরিদ্র লোকেদের অসন্তোষ থেকেই কলম্বিয়ায় বামপন্থী চিন্তা চেতনার সূত্রপাত হয়। হোর্হে গাইতান ছিলেন বামঘেষা এমনই একজন জনপ্রিয় নেতা। তিনি কলম্বিয়ার সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনে আগাগোড়া পরিবর্তন আনার কথা বলতেন। ১৯৪৮ এর নির্বাচনের কিছুদিন আগে, যখন সবাই নিশ্চিত যে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী গাইতান কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, তখন হুয়ান সিয়েরা নামের এক যুবক গাইতানকে হত্যা করে। ক্ষিপ্ত জনতা হুয়ানকে তখনই থুড়ে মাংসের কিমা বানিয়ে দেওয়ায় সে কাদের হয়ে কাজ করছে তা জানা যায়নি।
পাল্টাপাল্টি দোষারোপের মধ্যেই বেঁধে যায় ১০ বছর ব্যাপী এক দীর্ঘ দাঙ্গা। রক্ষণশীল আর উদারধারার লোকেরা একে অপরের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো। মারা গেল প্রায় ২ লক্ষ লোক। লা ভায়োলেন্সিয়া নামে পরিচিত এই হাঙ্গামা চলে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত। কলম্বিয়ার উদার ও রক্ষণশীল ঘরানার প্রধান দল দুটি ক্ষমতা ভাগাভাগি করে কলম্বিয়ার শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেয়। লা ভায়োলেন্সিয়া থামলো বটে, দেশে বিরাজ করতে থাকলো গুমোট এক পরিস্থিতি।
মার্কেতালীয় প্রজাতন্ত্র এবং ফার্কের উত্থান
১৯৫৮ সালের পরে দেখা গেল কলম্বিয়ার মানুষের ওপরে এই প্রধান দুই রাজনৈতিক দল যৌথভাবে নিপীড়ন আরম্ভ করেছে। লাতিন আমেরিকার ব্যাপারে নাক গলানো বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের স্বভাব। যথারীতি মার্কিন ব্যবসায়ী আর দুঁদে কূটনীতিবীদেরা কলম্বিয়ার হর্তাকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলো। কলম্বিয়া সরকার দেশের তাবত কৃষিজমি কেড়ে নিয়ে বার্নার্ড কুরি নামের এক মার্কিন ব্যবসায়ীর হাতে লিজ দিয়ে দিতে শুরু করলো। ৪ লক্ষের ওপরে পরিবার ভূমিহীন হয়ে গেল, শহরে গিয়ে এসব লোকেরা ভিড় জমাতো, আইনশৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়তে লাগলো। দারিদ্র্য আর বেকারত্বের সাথে সাথে জনসমাজে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো তীব্র অসন্তোষ। কিন্তু ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামের এই দুই দলীয় যৌথ শাসন পরিবর্তন হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না।
প্রথম মহাযুদ্ধের পর পরই কলম্বিয়ার কৃষক আর শ্রমিকদের মধ্যে কম্যুনিস্টরা প্রবেশ করতে শুরু করে। এসব দরিদ্র লোকেদের নিয়ে কলম্বিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের অনেক স্থানে নিজস্ব প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলে কম্যুনিস্টরা। সরকারী বাহিনীকে বেশ কয়েকবার হটিয়ে দেয় তারা। ১৯৬১ সালে এরকম একজন সংগঠক, ম্যানুয়েল ভেলেজ দক্ষিণ কলম্বিয়ার পাহাড়ের একটি অঞ্চলকে স্বাধীন মার্কেতালীয় প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করে। সরকারি বাহিনীর প্রাথমিক আক্রমণকে নস্যাত করে দেয় এই প্রলেতারিয়েত বাহিনী। বেশি জোর খাটালে পাছে কিউবার মতো বিপ্লব শুরু হয়ে যায় এই ভয়ে সরকারি বাহিনী অঞ্চলটিকে স্রেফ ঘেরাও করে রাখলো।
তবে মার্কিন পরামর্শকেরা থেমে ছিল না। কিছুদিন পরে তাদের সাহায্যে সরকারি বাহিনী এই প্রজাতন্ত্রে হামলা চালায়। গালভরা নাম হলে কী হবে, ৬০০ বর্গ কিলোমিটারের এই প্রজাতন্ত্রে লড়তে জানতেন মাত্র ৪৮ জন। ১৬ হাজার সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে এই ৪৮ জনই লড়লো। বাকি ১,০০০ নিরস্ত্র মানুষ নিরাপদে পালিয়ে যেতে ভেলেজের নেতৃত্বে এই যোদ্ধারাও পাহাড়ে মিলিয়ে গেলেন। এই ৪৮ জন মিলেই ফার্ক গঠন করে। সালটা তখন ১৯৬৪।
জঙ্গলের গেরিলারা
ষাট আর সত্তরের দশকটা জুড়ে ফার্ক কলম্বিয়া জুড়ে ছোটখাট আক্রমণ চালালেও তেমন একটা বড় বিপদ হয়ে উঠতে পারেনি। ফার্কের রীতিনীতিতে বড় পরিবর্তন ঘটে ১৯৮২ সালের বিখ্যাত এক গেরিলা কনফারেন্সের পরে। ফার্ক মাঝের সময়টাতে কিউবা আর সোভিয়েত ইউনিয়নে সৈন্যদের পাঠিয়ে প্রশিক্ষিত করেছে, আমদানি করেছে অস্ত্রশস্ত্র, সেই সাথে কোকা চাষ করে তাদের অর্থের থলিটাও স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠেছে ততদিনে। ১৯৮২ সালের কনফারেন্সের পরে ফার্ক নেতারা নিজেদের পরিকল্পনা ছকে ফেললেন। প্রথমে জঙ্গল আর গ্রামাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ধীরে ধীরে শহরের দিকে আগাতে হবে। সেই সাথে দখল নিতে হবে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এলাকাগুলোর, যাতে নিজস্ব অর্থায়নের পথটা খোলা থাকে। ফার্কের একটি মানানসই সেনাদল গড়ে উঠলো।
কলম্বিয়ার সরকার দেখলো মহাবিপদ। আলোচনার টেবিলে দর কষাকষি চললো। ১৯৮৪ সালে ফার্ক, কলম্বিয়ান কম্যুনিস্ট পার্টি আর অন্যান্য বামপন্থী দল মিলে প্যাট্রিয়টিক ইউনিয়ন নামক রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু কলম্বিয়ায় গণতন্ত্রের তুলনায় বন্দুকের জোর অনেক বেশি। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কলম্বিয়ার প্রত্যেক বামপন্থী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে খুন করা হয়েছে। যখনই ভূস্বামী, মাদক কারবারী কিংবা ব্যবসায়ীরা কোনো নেতাকে দেখেছেন ধনীদের স্বার্থ পরিপন্থী কাজ করতে, স্রেফ গুলি করে বা বোমা ছুঁড়ে খতম করে দিয়েছেন।
নব্বইর দশক শুরু হওয়ার পর কলম্বিয়া জড়ে গৃহযুদ্ধ আরো মারাত্মক আকার ধারণ করল। ফার্ক গেরিলারা আক্রমণ করতে থাকলো সরকারি সেনাস্থাপনা থেকে শুরু করে ধনী র্যাঞ্চ মালিক আর ব্যবসায়ীদেরকে। কলম্বিয়া সে আমলে অনুন্নত দেশ হওয়ায় অনেক দুর্গম অঞ্চলেই ফার্কের হাতে বিরাট বিরাট সব স্বায়িত্বশাসিত এলাকা চলে আসে। এসব অঞ্চলে কোকেনের কারখানা বসিয়ে, ধনী লোকেদেরকে অপহরণ করে এবং সোনার খনি থেকে বিপুল অর্থ সমাগম হত ফার্ক গেরিলাদের। শুধু ১৯৯৯ সালেই ফার্ক ৩,০০০ অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে।
এসব কর্মকাণ্ডে কিন্তু শহরাঞ্চলে এবং বহির্বিশ্বে ফার্কের জনপ্রিয়তা অনেক হ্রাস পায়। কলম্বিয়া গরিব দেশ হলেও সিংহভাগ লোক বাস করে শহরে। তারা ফার্কের ওপরে ক্রমশ বিরক্ত হয়ে উঠতে থাকে। বিশেষ করে অপহরণের ঘটনাগুলো অনেকের মনই বিষিয়ে তোলে। তবে এসবের পরেও ফার্কের হাতে অন্তত ২০ হাজার গেরিলা সৈন্য ছিল। কলম্বিয়ার উত্তর-পশিচম, পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব আর দক্ষিণের পার্বত্য অঞ্চল আর জঙ্গল মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ বর্গ মাইল এলাকায় ফার্কের কম-বেশি নিয়ন্ত্রণ ছিল। ইরাক আর সিরিয়ার আইএস এর কথিত খেলাফতের তুলনায় ১০ গুণ বড় ছিল এই অঞ্চল।
ফার্ক গেরিলাদের একটি চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের সেনাদলে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের উপস্থিতি। নারীরাও যুদ্ধ করতো, সম-অধিকার ভোগ করতো। এগুলো পশ্চাদপদ গ্রামের নারীদেরকে ভীষণভাবে টানতো। তাছাড়া সব গেরিলা যে সমাজতন্ত্রের জন্য ফার্কে যোগ দিয়েছিল এমনটা নয়। অনেকেই স্রেফ প্রতিবাদের জন্য, কেউ জঙ্গলজীবন আর যুদ্ধের অ্যাডভেঞ্চারের নেশায়, কেউ বা স্রেফ চাপের মুখে ফার্কে যোগ দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ফার্ক জোর করে অপ্রাপ্তবয়স্কদেরকে গেরিলা বাহিনীতে আসতে বাধ্য করে। পেরুর গেরিলা গ্রুপ শাইনিং পাথ এর সাথে ফার্কের যোগাযোগ ছিল।
নব্বইয়ের দশকে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ইউনাইটেড সেলফ ডিফেন্স ফোর্সসহ কয়েকটি ডানপন্থী আধা সামরিক বাহিনী ফার্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। ধনীদের সমর্থনপুষ্ট এই ডানপন্থী গ্রুপগুলো গ্রামের লোকেদের ওপরে মারাত্মক অত্যাচার করতো। কলম্বিয়ার ড্রাগ কার্টেলগুলো এদের সাহায্য-সহযোগিতা করতো, বিনিময়ে এরাও মাদকের কারবার করে প্রচুর অর্থ কামাতো। কলম্বিয়ার গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত নিহত এক লক্ষ সত্তর হাজার বেসামরিক মানুষের আশি ভাগই মরেছে এসব ডানপন্থী বাহিনীর হাতে।
একবিংশ শতাব্দীতে ফার্ক আর কলম্বিয়া সরকারের মধ্যে একাধিক আলোচনা হলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। ততদিনে ফার্ক কালি, মেদেলিন বা বোগোতার মতো বড় শহরগুলোকে একদম ঘিরে ফেলেছে বলা চলে। শহর থেকে বেরুবার রাস্তাগুলোতে প্রায়ই ফার্ক গেরিলাদের চেকপোস্টের দেখা মিলত। দশ লক্ষ ডলারের বেশি মূল্যের সম্পত্তি থাকলেই সেটার অন্তত এক-দশমাংশ ফার্ককে দিতে হত, কথা না শুনলে টপ করে আত্মীয়স্বজন বা পরিবারের লোককে অপহরণ করে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হত।
ফার্কের বড় বড় হামলাগুলোর মধ্যে আছে মেদেলিন বোমা হামলা (নিহত ২৩ জন), বোগোতা বোমা হামলা (নিহত ৩২ জন), বোখায়া চার্চ হামলা (নিহত ৭৯ জন), প্রেসিডেন্ট উরিবের ওপরে মর্টার হামলা, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ইনগ্রিড বেটানকোর্টসহ বহু দেশি-বিদেশি ব্যক্তিত্বকে অপহরণ ইত্যাদি। তবে ফার্কের সাথে লড়তে গিয়ে সব থেকে বড় মাশুল দিতে হয়েছে সেনাবাহিনীকে। দাবেইবা অঞ্চলে ফার্ক হামলায় মারা যায় ৩২ জন, তাদেরকে বাঁচাতে আসছিল যারা, তাদের হেলিকপ্টারে হামলা চালানো হলে মারা যায় আরো ২২ জন। ১৯৯৬ আর ১৯৯৮ সালে এমনই দুটি হামলায় মারা যায় যথাক্রমে ৮০ আর ৬০ জন সেনা। পরের বছর আবার ৬০ জন। ২০১০ সালে? সাড়ে চারশো জন! এত হিসাবে না গিয়ে বলা যায়, ২৫ হাজার সরকারি সৈন্য আর পুলিশসহ দুই লক্ষের ওপরে মানুষ হতাহত হয়েছে এসব সংঘর্ষে। ৭০ লক্ষ মানুষ হারিয়েছে তাদের ঘরবাড়ি।
ক্ষমতা হ্রাস
মাদক ব্যবসার ওপরে কড়াকড়ি, ক্রমাগত যুদ্ধের ফলে ভর করে বসা ক্লান্তি, অপহরণ আর চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভ, কলম্বিয়া সরকারের পেছনে মার্কিন ডলারের জোরালো সমর্থন এবং একের পর এক শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মৃত্যু ফার্ককে দুর্বল করে তোলে। ২০০৮ সালে বোমা হামলায় মারা যান শীর্ষস্থানীয় নেতা রাউল রেয়েস। প্রতিষ্ঠাতা নেতা ম্যানুয়েল ভেলেজ মারা যান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
ততদিনে পুরানো বন্ধুরাও ফার্কের পাশ থেকে সরে যাচ্ছে। হুগো শ্যাভেজ তো সরাসরি বলেই বসেন যে, লাতিন আমেরিকাতে গেরিলা যুদ্ধের জমানা শেষ।‘ ফার্কের অপহরণের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন বিখ্যাত লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজও। ২০০৮ আর ২০০৯ সালের দিকে বহু গেরিলা আত্মসমর্পণ করে। তারপরেও ২০১১ বা ২০১২ সালে ফার্কের হামলাগুলো ছিল ভীষণ ভয়ংকর। তবে এসবের নেতৃত্বে থাকা আলফন্সো কানো বা মোনো জোজোই এর মতো নেতারাও একসময় নিহত হন। কমতে থাকে সদস্যসংখ্যা। দেখা দেয় অর্থসংকট।
গেরিলা থেকে সাধারণ মানুষ
২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল দস সান্তোসের আহ্বানে আলোচনার টেবিলে দর কষাকষি শুরু হয়। ২০১৬ সাল নাগাদ উভয় পক্ষ হানাহানিতে ক্ষান্ত দেয়। সরকার প্রতিশ্রুতি দেয় যে গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন চালানো হবে, ফার্ককে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ দেওয়া হবে। বিনিময়ে ফার্ক অস্ত্র সমর্পণ করবে। অবশেষে ২০১৭ সালের ২৭ জুন, দীর্ঘ তিপ্পান্ন বছরের রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের যতি টেনে ফার্ক গেরিলারা অস্ত্র সমর্পণ করে। সরকার এখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে যেসব ঘটনায় মানবাধিকার লংঘন হয়েছে সেগুলো তদন্ত করে দেখা হবে। তবে কলম্বিয়ার মানুষের মধ্যে এই শান্তিচুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত বিদ্যমান। ফার্ক বর্তমানে কমন অল্টার্নেটিভ রেভোল্যুশনারি ফোর্স নামের একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
তবে যা-ই হোক, দেশকে পাল্টে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে একটা সময় যেসব কলম্বিয়ান মানুষ ঘরদোর ছেড়ে জলা-জঙ্গলের দুর্গম অঞ্চলে অস্ত্র হাতে লড়েছেন, ধনীদের মধ্যে সৃষ্টি করেছিলেন ত্রাস, সেই তারাই এখন জাতিসংঘ আর পুরনো শত্রু কলম্বিয়া সরকারের দয়া দাক্ষিণ্যে মূলধারার সমাজে ফিরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এর থেকে বড় পরিহাস সম্ভবত বিপ্লবের ইতিহাসে আর নেই!
ফিচার ইমেজ – pinterest