
উটকে বলা হয় মরুভূমির জাহাজ। আর উটের কথা ভাবতে গেলে দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে আরবের বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো মরুভূমির দৃশ্য। কিন্তু একবার ভাবুন তো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর একটি রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী, উটের পিঠে চড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমের বিশাল পার্বত্য এবং মরু অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছে! দৃশ্যটা কল্পনা করতে কিছুটা কমিক বইয়ের ছবির মতো হলেও সত্যিই এমনটা ঘটেছিল উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে। তৎকালীন টেক্সাস এবং ক্যালিফোর্নিয়া অভিযানের জন্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে নৌযানে করে উট আমদানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
সামরিক বাহিনীর জন্য উট প্রকল্পের মূল হোতা ছিলেন জেফারজন ডেভিস। ডেভিস তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের একজন শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন পিয়ার্সের যুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা এবং পরবর্তীতে কনফেডারেট স্টেট অব আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সামরিক বাহিনীতে নানা রকমের বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালানোর জন্যও সুপরিচিত ছিলেন।

মেক্সিকার যুদ্ধের পর, যুক্তরাষ্ট্রের রণবিভাগ দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অধিগ্রহণে থাকা বিস্তীর্ণ মরু আর পর্বতে ঘেরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাওয়ার কোনো রাস্তাই ছিল না। তাই এসব অঞ্চলে নিজেদের আস্তানা গড়তেও তাদের বেগ পেতে হচ্ছিলো। ফলে ডেভিসের কাছে মনে হয়েছিল একমাত্র উটের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
বর্তমানে নিউ মেক্সিকো এবং অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত জায়গাগুলোতে সেই সময়ে কার্যত কোনো রাস্তা তো ছিলই না, ছিল শুধু বিশাল পর্বত এবং মরুভূমির দুর্গম ভূখণ্ড। ঘোড়া, গাধা কিংবা ষাঁড়ের পিঠে চড়ে এই পথ পাড়ি দেয়াও ছিল খুব বিপজ্জনক। কারণ সেখানে তাদের চারণভূমি এবং পানির সংকট ছিল। কঠিন এবং রুক্ষ পরিবেশে টিকে থাকতে পারে বিধায় জেফারসন ডেভিস মরুর জাহাজ উটকেই মনে করলেন একমাত্র সমাধান। আর যেহেতু আমেরিকান সেনাবাহিনী প্রায়শই ইউরোপিয় সেনাবাহিনীগুলোর অনুকরণ করতো, তাই ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়া এবং ফ্রান্স কর্তৃক উট ব্যবহারের সুবিধা তাদের নজর কেড়েছিল।
কংগ্রেসের মাধ্যমে উট প্রকল্প প্রস্তাব এবং বিল পাস
ইউএস আর্মির কোয়ার্টার মাস্টার কর্পের কর্মকর্তা জর্জ হ্যারিসন ক্রসম্যান ১৮৩২ সালে একবার সেনাবাহিনীতে উট অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি উটের মাধ্যমে ফ্লোরিডার মতো দুর্গম এলাকায় সেনা পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও তার কথা যুক্তরাষ্ট্রের আর্মির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা খুব একটা আমলে নেননি। কিন্তু সীমান্ত রক্ষীবাহিনীতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চাকরি করা জেফারসন ডেভিস যখন ফ্রাঙ্কলিন পিয়ার্স প্রশাসনে চলে আসেন, তারপর তিনি সেনাবাহিনীতে উট ব্যবহার করার ধারণাটি আরো দৃঢ়ভাবে কংগ্রেসের নজরে আনেন।

ডেভিস সেনাবাহিনীতে উট অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে বেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি বিশদ প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন, যা ১৮৫৩ সালের ৯ ডিসেম্বর, নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রায় পুরো একপাতা জুড়ে ছাপা হয়েছিল। তার লেখা প্রতিবেদনে সামরিক খাতে উট ব্যবহার এবং এর জন্য অর্থ তহবিল চেয়ে কংগ্রেসের কাছে আবেদন করেছিলেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসে ছাপা তার প্রতিবেদনের একটি অংশ-
প্রাচীন উপমহাদেশে উষ্ণ থেকে বরফে আচ্ছাদিত অঞ্চলে, শুষ্ক বিরানভূমি থেকে তুষারে ঢাকা পর্বতে পৌঁছানোর জন্য উটকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করা বেশ ফলপ্রসূ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে, একে অপরের সাথে যোগাযোগ এবং যাতায়াত রক্ষার ক্ষেত্রে উটকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সারকাশিয়ার সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে ভারতের সমতলভূমিতে সামরিক উপাদান পরিবহনসহ নানা রকম যাতায়াতের কাজে ঘোড়ার বদলে উট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মিশরে আরবদের পরাস্ত করার ক্ষেত্রেও নেপোলিয়নের বাহিনীতে ড্রমেডরি প্রজাতির উট বহর ব্যবহার করা হয়েছিল। এইসব উটের আবাসভূমি আমাদের পশ্চিমা সমভূমি এবং পার্বত্য ইন্ডিয়ান অঞ্চলের মতোই। উদাহরণস্বরূপ আরো বলা যায়, আলজেরিয়া দখলের সময় একই প্রজাতির উট ফান্স তাদের সেনাবাহিনীতে ব্যবহার করেছিল।
আমার এই প্রতিবেদনটি যথার্থ পরিক্ষা নিরীক্ষা করেই তৈরি করেছি। অতএব আমি মনে করি, আমাদের সেনাবাহিনীতে উট অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে সৈন্য প্রেরণের পাশাপাশি সেসব অঞ্চলে আমাদের ঘাঁটি স্থাপনে উট একটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে। অতএব সবকিছু বিবেচনা করে আমি মনে করি আমাদের সরকারের উচিত এইদিকে নজর দেয়া এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক উট মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করে আমাদের দেশের কাজেই নিযুক্ত করা।

ডেভিসের এই অনুরোধ বাস্তব রূপ নিতে আরো এক বছরের বেশি সময় লেগেছিল। সবশেষে ১৮৫৫ সালের ৩ মার্চ, সেনাবাহিনীর জন্য উট ক্রয় এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে উটের উপযোগিতা নিরূপণের জন্য ৩০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদানের একটি সামরিক বিল পাশ করা হয়েছিল।
এরপর কোনো সন্দেহ ছাড়াই সেনাবাহিনীতে উট প্রকল্প বেশ অগ্রাধিকার লাভ করে। নৌবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ডেভিড পোর্টারকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে উট আমদানি করার জন্য জাহাজ পাঠানোর ব্যপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার সাথে, মেক্সিকান যুদ্ধের একজন নামকরা সেনা কর্মকর্তা, হেনরি সি ওয়েইনকে উটের উপর যথেষ্ট খবরাখবর নেয়ার জন্য উট আমদানি প্রকল্পে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
উট আমদানির জন্য মধ্যপ্রাচ্যে নৌ যাত্রা
আর্থিক অনুদান এবং সেনা নিয়োগের পর জেফারসন ডেভিস খুব দ্রুতই উট প্রকল্প নিয়ে লেগে পড়েন। তিনি মেজর ওয়েনকে লন্ডন এবং প্যারিসে পাঠিয়ে উট বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হন। পাশাপাশি লেফটেন্যান্ট পোর্টারের কাছ থেকে ইউ এস নেভির, ইউএসএস সাপ্লাই নামের একটি জাহাজও বরাদ্ধ নিয়েছিলেন।

১৮৫৫ সালের মে মাসের ১৯ তারিখ, মেজর ওয়েইন একটি যাত্রীবাহী জাহাজে করে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে নিউ ইয়র্ক থেকে যাত্রা করেন। এর পরের সপ্তাহে বিশেষ মালবাহী জাহাজ, ইউএসএস সাপ্লাই ব্রকলিন নৌবহর থেকে উট আমদানির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাত্রা করে। মেজর ওয়েইন লন্ডন চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেন এবং উট দেখাশোনা এবং লালনপালন সম্পর্কে সম্যক ধারণা গ্রহণ করেন। সেখান থেকে তিনি চলে যান প্যারিসে। প্যারিসে তিনি একজন সেনা কর্মকর্তার সাথে দেখা করেন। তিনি সেনাবাহিনীতে উটের ব্যবহার এবং প্রয়োগ সম্পর্কে মেজর ওয়েইনকে বিস্তারিত ধারণা দেন। সেই বছর জুলাইয়ের ৪ তারিখে, ডেভিসের কাছে একটি চিঠি লিখে ওয়েইন লন্ডন এবং প্যারিসে তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন।
জুলাইয়ের শেষ দিকে ওয়েইন এবং পোর্টার একত্রিত হন। জুলাইয়ের ৩০ তারিখে ইউএসএস সাপ্লাই শিপে চড়ে তারা তিউনিসিয়ার দিকে যাত্রা করেন। সেখানে একজন আমেরিকান কূটনীতিক তাদেরকে তিউনিসিয়ার বিখ্যাত নেতা মোহাম্মদ পাশার সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দেন। মোহাম্মদ পাশা আমেরিকার এই দুই সেনা কর্মকর্তার একটি উট কেনার কথা জানাতে পেরে, তাদেরকে আরো দুটো উট উপহার দিয়েছিলেন। ১৮৫৫ সালের ১০ তারিখে জেফারসন ডেভিসকে লিখা একটি চিঠিতে মেজর ওয়েইন জানান, তারা তিউনিস উপসাগরে নোঙ্গর করেছেন এবং তাদের সংগ্রহে তিনটি উট যুক্ত হয়েছে।
এর পরের ৭ মাস এই দুই সেনা কর্মকর্তা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বন্দরে বন্দরে ঘুরে বেড়িয়েছেন উট কেনার জন্য। এবং কয়েক সপ্তাহ পরপরই তারা তাদের অভিযানের কথা চিঠি লিখে ওয়াশিংটনে তাদের অপেক্ষায় থাকা ডেভিসকে জানাতেন।

এভাবে যেতে যেতে তারা যখন মিশরে, বর্তমান সিরিয়া এবং ক্রিমিয়ায় পৌঁছান, ততদিনে তারা উট কেনাবেচায় মোটামুটি সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছেন। তারা তাদের সংগ্রহ করা উটগুলোর দেখাশোনা করতেন এবং কোনো উট অসুস্থ হয়ে পড়লে, চলতি পথেই বিক্রি করে স্বাস্থ্যবান উটের সন্ধান করতেন। মিশরের এক সরকারী কর্মকর্তা তাদেরকে দুটো উট উপহার দিলেও, তারা এই দুটো উট জীর্ণশীর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে কায়রোর এক কসাইয়ের কাছে বিক্রি করেন।
১৮৫৬ সালের শুরুতেই ইউএসএস সাপ্লাই নামক উটের জাহাজটি প্রায় ভরে গিয়েছিল। জাহাজ থেকে স্থলে আবার স্থল থেকে জাহাজে উট ওঠানামার জন্য পোর্টার একটি ছোট নৌকা বানিয়েছিলেন। যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘ক্যামেল কার’ বা উটগাড়ি। ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি, ৩১টি উট এবং দুটো উটের বাচ্চা নিয়ে ইউএসএস সাপ্লাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা করতে প্রস্তুত। উট দেখাশোনা এবং লালনপালনের উদ্দেশ্যে ভাড়া করা তিনজন আরব এবং দুজন তুর্কি খামারিকে তাদের সাথে নিয়ে যান। যদিও অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে বৈরি আবহাওয়ার কারণে তাদের যাত্রা কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে ১৮৫৬ সালের মে মাসের শুরুতেই তারা টেক্সাস পৌঁছে যান।

উট প্রকল্পের জন্য বরাদ্ধ পাওয়া আর্থিক অনুদানের অল্প অংশই প্রথম দফার উট আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল। তাই ডেভিস ইউএসএস সাপ্লাই জাহাজ সমেত, লেফটেন্যান্ট পোর্টারকে পুনরায় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রেরণ করেন। তিনি পোর্টারকে ২য় দফায় আরেক কিস্তি উট কেনার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে, মেজর ওয়েইন টেক্সাসেই থেকে যান প্রথম দফায় কেনা উটের দেখভাল করার জন্য।
টেক্সাসে উট
১৮৫৬ সালের গ্রীষ্মে, মেজর ওয়েইন একপাল উট নিয়ে ইন্ডিয়ানোলা বন্দর থেকে স্যান এন্টনিওর দিকে যাত্রা করেন। স্যান এন্টনিও থেকে ৬০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ক্যাম্প ভার্দে নামক একটি আমেরিকান সেনা ঘাঁটিতে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে মেজর ওয়েইন উটগুলোকে সেনাবাহিনীর প্রাত্যহিক কাজকর্মের সাথে নিযুক্ত করতে থাকেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, উটের মাধ্যমে ঘোড়া কিংবা গাধার চাইতেও অনেক বেশি মালামাল বহন করা যায়। আর সৈন্যদেরকে অল্প প্রশিক্ষণ দিলেই তারাও উটগুলোকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
অন্যদিকে, লেফটেন্যান্ট পোর্টার দ্বিতীয় দফায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৭৭টি উট নিয়ে ফিরে আসেন। এদের মধ্যে কিছু ছিল উটের বাচ্চা, আবার কিছু কিছু উট মারাও গিয়েছিল।

ক্যাম্প ভার্দেতে উটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার জেফারসন ডেভিসের একটি সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। এ নিয়ে তিনি একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন, যা ১৮৫৭ সালে বই আকারেও প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর ফ্রাঙ্কলিন পিয়ার্স প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করলে, জেমস বুচনান নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট হয়ে আসেন এবং জেফারসন ডেভিস ওয়ার ডিপার্টমেন্ট থেকে সরে আসেন।
ডেভিসের পর ওয়ার ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব পান নবনিযুক্ত জন বি ফ্লয়েড। তিনিও সেনাবাহিনীতে উট প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী ছিলেন। ফলে তিনি আরো ১,০০০ উটের জন্য আর্থিক অনুদান চেয়ে কংগ্রেসের কাছ আবেদন করেন। কিন্তু লেফটেন্যান্ট পোর্টার কর্তৃক আমদানিকৃত দুই জাহাজ উটের পর আমেরিকান সেনাবাহিনী আর কোনো উট আমদানি করেনি।
উট প্রকল্পের শেষ পরিণতি
উনিশ শতকের মাঝামাঝি এবং শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য অনুকূল ছিল না। দাস প্রথায় বিভক্ত হয়ে যাওয়া থেকে উত্তরণের জন্য কংগ্রেসের মনোযোগ তখন অন্যদিকে সরে গিয়েছিল। উট প্রকল্পের প্রণেতা জেফারসন ডেভিসও মিসিসিপির প্রতিনিধি হয়ে ইউএস সিনেটে নিযুক্ত হন। আর সে সময় দেশ যেহেতু ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের মতো সংকটময় অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তাই তিনি উট প্রকল্পে খুব একটা সময়ও দিতে পারেননি।
টেক্সাসের ক্যামেল কর্পস তবুও চলমান অবস্থাতেই ছিল। কিন্তু প্রকল্পের প্রাথমিক কর্মকর্তাদের বদলি এবং আসন্ন গৃহযুদ্ধের জন্য এই প্রকল্প বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলো। কিছু কিছু উট দুর্গম এলাকায় সামরিক ঘাঁটিতে প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো কোনো সৈন্য এবং সৈন্যদলের কাছে উট তেমন একটা অগ্রাধিকার পায়নি। ঘোড়ার সাথে উটও নিয়ন্ত্রণ করা তাদের কাছে ঝামেলাপূর্ণ ব্যাপার মনে হয়েছিল।

১৮৫৭ সালের শেষ দিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর লেফটেন্যান্ট এডওয়ার্ড বেল নিউ মেক্সিকো থেকে ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত একটি মালবাহী রাস্তা নির্মাণের নির্দেশ পেয়েছিলেন। তিনি ২০টি উট এবং অন্যান্য প্রাণী সহ এই পথে অভিযান চালিয়ে জানিয়েছিলেন, তার ক্ষেত্রে উট বেশ ফলপ্রসূ অবদান রাখতে পেরেছিল। এরপর কয়েক বছর লেফটেন্যান্ট বেল দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে অনুসন্ধানমূলক অভিযানে উট সঙ্গে রেখেছিলেন।
তারপর শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। ফলে তার অভিযান ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত গিয়ে আকস্মিকভাবে থেমে যায়। যদিও গৃহযুদ্ধে সেনাবাহিনী বেশ কিছু পরীক্ষামূলক অভিযান চালিয়েছিল। যার মধ্যে বেলুন কর্পস, লিংকনের টেলিগ্রাফ ব্যবহার, আয়রন ক্ল্যাডের উদ্ভাবন উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এত কিছুর মাঝে সেনা সমরে উট আর প্রাধান্য পায়নি। টেক্সাসের উটগুলো পরবর্তীতে কনফেডারেটদের হাতে চলে গিয়েছিল। মনে করা হয়ে থাকে, বেশিরভাগ উটই ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করে দেয়া হয়েছিল এবং কিছু উট মেক্সিকোর সার্কাস দলের হাতে চলে গিয়েছিল।

১৮৬৪ সালে ফেডারেল ঘাঁটির উটগুলোকেও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়ার কথা শোনা যায়। যারা পরবর্তীতে এগুলোকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে দেয়। কিছু কিছু উট দক্ষিণ- পশ্চিমের গভীর জঙ্গলেও ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। আর তখনকার একটি মার্কিন অশ্বারোহী বাহিনী, মাঝে মাঝে অবশিষ্ট কিছু উটের দেখাশোনা করতো।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, বর্তমান সময়ের মতো আধুনিক সমরযান, বিমান, হেলিকপ্টার ছিল না। তাই সেই সময়ে সামরিকবাহিনীতে উট আমদানি করে দুর্গম পথ পাড়ি দেয়া খুব একটা অযৌক্তিক পরীক্ষা ছিল না। কিন্তু কালের বিবর্তনে মার্কিন সামরিক শক্তি এখন আরো অনেক বেশি শক্তিশালী এবং প্রযুক্তি নির্ভর। তাই তাদের উট প্রকল্প এখন স্থান করে নিয়েছে শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতায়।