ইহুদী জাতির ইতিহাস (পর্ব দশ): দ্বিখণ্ডিত লোহিত সাগর, এক্সোডাসের সূচনা

মিসরের কথা এলেই যে নামটি মাথায় চলে আসে তা হলো নীলনদ; নীলনদের কান্না, নীলনদের অভিশাপ- আরও কত কী! বিশ্বের দীর্ঘতম নদী নীল (النيل) ইংরেজিতে পরিচিত দ্য নাইল (The Nile) নামে, যদিও কোনো কোনো সূত্র মতে দীর্ঘতম নদী আসলে আমাজন নদী। এগারোটি দেশ দিয়ে বয়ে চলা নীলনদ সেই প্রাচীনকাল থেকেই মিসরের জন্য ছিল আশীর্বাদ, নীলনদের পানির কল্যাণে ফুলে ফেঁপে উঠত মিসরের ফসলরাশি। মিসরের প্রায় বেশিরভাগ ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আসলে খুঁজে পাওয়া যায় এ নদের তীরেই। নীলনদ শেষমেশ গিয়ে পড়েছে ভূমধ্যসাগরে (Mediterranean Sea)। খুবই প্রাচীনকালে এ নদীকে স্থানীয় মিসরীয় ভাষায় ডাকা হতো ‘হাপি’ বা ‘ইতেরু’, যার মানে আসলে কেবলই ‘নদী’। আর হিব্রুতে ডাকা হতো ‘হা-শিহোর’ (הַשִׁיחוֹר‬)। মজার ব্যাপার।, ধারণা করা হয়, এই নীল নামটি এসেছে ‘নীল রঙ’ থেকেই! প্রাচীন সংস্কৃতের ‘নীল’ (नील) থেকে আরবিতে চলে আসে নীলাহ (نيلة‎); ১৯২২ সালে ফারাও তুতেনখামুনের মমিতেও খুঁজে পাওয়া যায় সেই নীল রঙ, যা কি না ‘নীলনদের পবিত্র নীল লিলি ফুল’ নামে পরিচিত। 

কায়রোর দৃশ্যপটে আজকের নীলনদ; Image Source: Zastavki.com

নীলনদ নিয়ে এত কথা কেন হলো? কারণ, ইহুদীদের ইতিহাস বলতে গেলে অবধারিতভাবেই চলে আসবে এক্সোডাসের কথা, অর্থাৎ ফারাওয়ের হাত থেকে হিব্রু দাসদের পলায়নের ঘটনা। আর সেই ঘটনায় রয়েছে বিখ্যাত সাগরভাগের কথা। মিসর বলতেই যেহেতু নীলনদ মাথায় চলে আসে, তাই অনেকেরই এমনটা মাথায় গেঁথে থাকে যে, হিব্রুদের যেতে দিতে ভাগ হয়েছিল নীলনদ। কিন্তু আসলে তা নয় মোটেও। বরং ভাগ হয়েছিল লোহিত সাগর বা রেড সি। তবে এ ব্যাপারে রয়েছে মতবিভেদ। কুরআনে কেবল ‘সাগর’ বলা হলেও, তাওরাতে বলা আছে সাগরের সে জায়গাটির নাম ‘ইয়াম সুফ’ (হিব্রু יַם-סוּף), যার অর্থ ইংরেজিতে ‘সী অফ রিডস‘ (Sea of Reeds) বা বাংলায় ‘নলখাগড়ার (Seaweed) সাগর’। তবে প্রচলিতভাবে একে লোহিত সাগর অনুবাদ করা হয়, এবং এ ভুল অনুবাদটি তৃতীয় শতকে গ্রিক অনুবাদ করতে গিয়ে হয়ে যায়, এবং সেই অনুবাদ চলে আসে লাতিনেও। আর সেই থেকে প্রচলিত হয়ে যায় ‘লোহিত সাগর’। অথচ, লোহিত সাগর বেশ বড় একটি এলাকা, যেখানে সী অফ রিডস একটি নির্দিষ্ট জলজ এলাকা।

এখনও সেই অঞ্চলে জন্মে রীডস বা নলখাগড়া; Image Source: biblearchaeology.org

ধারণা করা হয়, ইয়াম সুফ জায়গাটি লোহিত সাগরের কাছের এক বিশাল হ্রদের মতো ছিল, যা সাগরের সবচেয়ে সরু অংশ- এটি পার হলেই ওপারে চলে যাওয়া যায়। কিন্তু সুয়েজ খালের কারণে সেই জায়গা এখন শুকিয়ে গেছে। মিসরের সিনাই উপদ্বীপের সুয়েজ উপত্যকাতেই ছিল এর অবস্থান। আবার এটি অপর সরু সাগরীয় এলাকা গালফ অফ আকাবা (Gulf of Aqaba) বা আকাবা উপসাগরও হতে পারে। কেউ কেউ ‘তানিস হ্রদ‘-কে (Lake of Tanis) সাগর ভাগের জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মোট কথা, লোহিত সাগরের ঠিক কোন জায়গা দিয়ে হিব্রুরা পার হয়েছিল সেটা নিয়ে ধর্মীয় ইতিহাসবিদদের মাঝে রয়েছে ব্যাপক মতভেদ। 

সুয়েজ নাকি আকাবা? Image Source: wikimedia commons

এবার তবে আগের পর্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ঘটনায় প্রবেশ করা যাক, জায়গামতো লোহিত সাগর পার হবার কথাও আসবে। 

ফারাও নিজে চলে যাবার কথা বলাতে হয়তো বনি ইসরাইল ভাবতে পারেনি যে, তার মন পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সে রাত্রে আদেশ এলো আল্লাহর কাছে থেকে, যেমনটা কুরআনে বলা হয়েছে, “আমি মূসাকে আদেশ করলাম যে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাত্রিযোগে বের হয়ে যাও, নিশ্চয়ই তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে।” (কুরআন, ২৬:৫২)

সেদিন রাত্রে মুসা (আ) তার লোকদের বললেন, “এই দিনটি স্মরণে রেখো, যে দিনে তোমরা মিসর থেকে অর্থাৎ গোলামীর গৃহ থেকে বের হলে, কারণ মাবুদ তাঁর পরাক্রমশালীতা দিয়ে সেখান থেকে তোমাদেরকে বের করে আনলেন।” (তাওরাত, হিজরত, ১৩:৩

নীলনদ; Image Source: Alterra.cc

পাঠকদের মনে থাকবার কথা, এ সিরিজের আগের একটি পর্বে ইউসুফ (আ) এর মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা করবার সময় ইউসুফ (আ) এর অন্তিম ইচ্ছা উল্লেখ করা হয়েছিল, আর তা হলো, বনি ইসরাইল যখন মিসর ত্যাগ করবে তখন যেন সাথে করে তার মৃতদেহ নিয়ে যায় পবিত্র ভূমির উদ্দেশ্যে। হিব্রুরা মিসরে চারশ ত্রিশ বছর বাস করেছিল। আর এত বছরে ইউসুফ (আ) এর শবাধার কোথায় তা মানুষ ভুলেই যায়। তাফসিরে ইবনে কাসিরে এ বিষয়ে একটি ঘটনার উল্লেখ আছে। সেটি এমন-

সাহাবী আবু মুসা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা) একজন বেদুইনের বাড়িতে অতিথি হয়েছিলেন একদিন। সেই বেদুইন তার খুবই খাতির যত্ন করেন। ফেরার সময় রাসুল (সা) তাকে বললেন, “মদিনায় গেলে তুমি আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে।”

কিছুদিন পর ঐ বেদুইন মদিনায় এলেন, আর রাসুল (সা) এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তখন রাসুল (সা) বললেন, “কিছু চাও।”

বেদুইন বললেন, “আমাকে হাওদাসহ একটি উট আর দুধেল একটি ছাগী দিন আমাকে।”

তখন রাসুল (সা) বললেন, “বড়ই আফসোস, তুমি বনি ইসরাইলের সেই বুড়ির মতো চাওনি কিছু।”

সাহাবীরা বুঝতে পারলেন না ঘটনা কী। তারা জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল (সা)! বনি ইসরাইলের বুড়ির ঘটনা আবার কী?”

উত্তরে রাসুল (সা) বললেন, যখন মুসা (আ) বনি ইসরাইলকে নিয়ে সে রাতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তখন পথ চলতে চলতে বার বার পথ ভুল করছিলেন। বহু চেষ্টা করেও ঠিক পর বের করতে পারলেন না। তিনি তখন লোকদের একত্রিত করে জিজ্ঞেস করলেন, “ব্যাপার কী? আমরা পথ ভুল করলাম কেন?”

তখন বনী ইসরাইলের আলেমরা বললেন, “ব্যাপার হলো, হযরত ইউসুফ (আ) মারা যাবার সময় অঙ্গীকার নিয়েছিলেন আমাদের কাছে, যখন আমরা মিসর থেকে চলে যাব, তখন যেন তার শবাধারটিও এখান থেকে আমরা নিয়ে যাই।”

মুসা (আ) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কি জানো যে হযরত ইউসুফ (আ) এর কবর কোথায়?”

সবাই উত্তরে বলল, “আমরা কেউ এটা জানি না, আমাদের মাঝে কেবল এক বুড়ি জানে।”

হযরত মুসা (আ) লোক মারফত বুড়িকে ডেকে পাঠালেন। তিনি যেন তাকে দেখিয়ে দেন হযরত ইউসুফ (আ) এর কবর কোথায় আছে।

বুড়ি বললেন, “হ্যাঁ, আমি দেখিয়ে দিতে পারি, তবে প্রথমে আমার প্রাপ্য আমাকে দিতে হবে।”

হযরত মুসা (আ) তাকে বললেন, “তুমি কী চাও?”

বুড়ি উত্তরে বললেন, “আমি বেহেশতে আপনার সাথে থাকতে চাই।”

মুসা (আ) এর কাছে এটা খুবই গুরুতর চাওয়া মনে হলো। কিন্তু সাথে সাথেই আল্লাহ ওহী নাজিল করলেন, “হে মুসা! তুমি ঐ বুড়ির শর্ত মেনে নাও!” মুসা (আ) মেনে নিলেন শর্ত।

বুড়ি মুসা (আ)-কে একটি বিলের কাছে নিয়ে গেল, যার পানির রঙ পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। বুড়ি বললেন, “এই পানি উঠিয়ে ফেলার নির্দেশ দিন।”

তার কথা মতো বিলের পানি বের করে দেয়া হলে মাটি দেখা গেল। বুড়ি তখন বললেন, “এ জায়গাটা খুঁড়তে বলুন।”

মাটি খনন করলে পরে কবরটি প্রকাশ হয়ে পড়ল। তখন মুসা (আ) হযরত ইউসুফ (আ) এর শবাধারটি সঙ্গে নিয়ে নিলেন। এরপর তিনি আবার পথ চলা শুরু করলেন। এবার রাস্তা পরিষ্কার চেনা গেল। তিনি সঠিক পথ পেয়ে গেলেন।

অবশ্য এ ঘটনাটি দুর্বল। ইবনে কাসিরের মতে, এটি রাসুল (সা) এর মুখের কথা নয়। তবে বলা হয়েছে, আল্লাহ সে রাতে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ার আদেশ দিলে বনি ইসরাইলিরা মিসরীয়দের কাছ থেকে বহু অলংকার নিয়ে আসে, এবং চাঁদ ওঠার সময় চুপচাপ মিসর থেকে প্রস্থান করে। আর তখনই বৃদ্ধার ঘটনা ঘটে। সে রাতে চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল। কথিত আছে, হযরত মুসা (আ) নিজ হাতে শবাধারটি উঠিয়েছিলেন। 

ফিরাউন/ফারাও ও তার লোকেরা পরদিন যখন দেখলেন, চৌকিদার, পাহারাদার, গোলাম- কেউই নেই, তখন ক্রোধে পাগল হয়ে গেলেন। কারণ, এসব পদে হিব্রুরাই সাধারণত নিয়োজিত থাকত। তারা জানতে পারলেন, রাতের বেলা মিসর ত্যাগ করেছে বনি ইসরাইল। ফারাও তখনই সেনা জমায়েত করতে লাগলেন। সবাই জড়ো হলে পরে ফারাও বললেন, “নিশ্চয়ই এরা (বনী-ইসরাঈলরা) ক্ষুদ্র একটি দল। এবং তারা আমাদের ক্রোধের উদ্রেক করেছে। এবং আমরা সবাই সদা শংকিত।” (কুরআন, ২৬:৫৪-৫৬) সূর্যোদয়ের সময় ফারাওয়ের বাহিনী তাড়া শুরু করলো। 

ওদিকে আল্লাহ্‌ বনি ইসরাইলের লোকদেরকে লোহিত সাগরের মরুভূমির পথ দিয়ে গমন করালেন; আর বনি-ইসরাইলিরা রণসাজে সজ্জিত হয়ে মিসর দেশ থেকে যাত্রা করেছিল আগের রাতে। রাতের বেলা তাদের সামনে সামনে একটি বিশাল অগ্নিস্তম্ভ থেকে আলো আসতো, আর মেঘাচ্ছন্ন দিনের বেলায় মেঘস্তম্ভ থেকে আলো এসে তাদের পথ দেখাতো- তাওরাতে তা-ই বলা হয়েছে। (তাওরাত, হিজরত, ১৩)

আল্লাহর আদেশে মুসা (আ) বনি ইসরাইলের শিবির স্থাপন করলেন সাগরের কাছে। কথিত আছে, পেছনে ছয়শত রথ আর লক্ষাধিক সেনা নিয়ে হাজির হলেন ফারাও। ফারাও যখন নিকটবর্তী হলেন, তখন বনি-ইসরাইলিরা চেয়ে দেখলো যে, তাদের পেছনে পেছনে মিসরীয়রা আসছে; তাতে তারা ভীষণ ভয় পেল, আর মাবুদের কাছে কান্নাকাটি করতে লাগলো। 

হলিউডের পর্দায় ফারাওয়ের বাহিনী; Image Source: Musings&Rants – WordPress.com

তখন তারা মূসাকে বললো, “মিসরে কবর নেই বলে তুমি কি আমাদের নিয়ে আসলে, যেন আমরা মরুভূমিতে মারা যাই? তুমি আমাদের সঙ্গে এ কেমন ব্যবহার করলে? কেন আমাদেরকে মিসর থেকে বের করলে? আমরা কি মিসর দেশে তোমাকে এই কথা বলিনি, আমাদেরকে থাকতে দাও, আমরা মিসরীয়দের গোলামী করি? কেননা মরুভূমিতে মরণের চেয়ে মিসরীয়দের গোলামী করা আমাদের মঙ্গল।” তখন মূসা (আ) লোকদেরকে বললেন, “ভয় করো না, সকলে স্থির হয়ে দাঁড়াও। মাবুদ আজ তোমাদের কীভাবে নিস্তার করেন, তা দেখ; কেননা আজ যে মিসরীয়দেরকে তোমরা দেখতে পাচ্ছো, এদেরকে আর কখনোই দেখবে না। মাবুদ তোমাদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করবেন, তোমরা কেবল নীরব থাক।” (তাওরাত, হিজরত, ১৪)

কুরআনে বলা হয়েছে, “যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল, তখন মূসার সঙ্গীরা বলল, আমরা যে ধরা পড়ে গেলাম। মূসা বলল, কখনোই নয়, আমার সাথে আছেন আমার পালনকর্তা। তিনি আমাকে পথ বলে দেবেন।” (কুরআন, ২৬:৬১-৬২)

তখন ইসরাইলিদের আগে আল্লাহ্‌র যে ফেরেশতা ছিলেন তিনি সরে গিয়ে তাদের পিছনে গেলেন এবং মেঘস্তম্ভ তাদের সম্মুখ থেকে সরে গিয়ে তাদের পিছনে চলে গেলো। মেঘস্তম্ভটি মিসরের শিবির ও ইসরাইলের শিবির, এই উভয়ের মধ্যে দাঁড়ালো। তাতে সেখানে মেঘ ও অন্ধকার থাকলো, তবু তা রাতে আলো দান করলো। এর ফলে সমস্ত রাতে এক দল অন্য দলের কাছে আসতে পারল না। (তাওরাত, হিজরত, ১৪)

পরে মাবুদ মূসাকে (আ) বললেন, “তুমি আমার কাছে কেন কান্নাকাটি করছো? বনি-ইসরাইলদেরকে অগ্রসর হতে বল। আর তুমি তোমার লাঠি তুলে সমুদ্রের উপরে হাত বাড়িয়ে দাও, সমুদ্রকে দু’ভাগ কর; তাতে বনি-ইসরাইলেরা শুকনো পথে সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করবে।” (তাওরাত, হিজরত, ১৪)

কুরআনে বলা হয়েছে, “অতঃপর আমি মূসাকে আদেশ করলাম, তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রকে আঘাত কর। ফলে, তা বিদীর্ণ হয়ে গেল এবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতসদৃশ হয়ে গেল।” (কুরআন, ২৬:৬৩)

অনেকের ধারণা, সমুদ্র সাতভাগে কিংবা বারোভাগে ভাগ হয়েছিল, আসলে কেবল একটি রাস্তা হয়েছিল সমুদ্রে। মুসা (আ) তার লাঠি দিয়ে সমুদ্রের পানিতে আঘাত হানতেই প্রবল পূর্বীয় বাতাসে উঁচু পাহাড়ের মতো করে জলরাশি দু’পাশে দাঁড়িয়ে যায়, আর মাঝে একটি শুকনো রাস্তা। 

Image Source: Bible.CA

তাওরাত অনুযায়ী, পরে মিসরীয়রা, ফেরাউনের সমস্ত ঘোড়া ও রথ এবং ঘোড়সওয়াররা ধাবমান হয়ে তাদের পিছনে পিছনে সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করলো। কিন্তু রাতের শেষ প্রহরে মাবুদ আগুন ও মেঘস্তম্ভ থেকে মিসরীয়দের সৈন্যের উপরে দৃষ্টিপাত করলেন ও মিসরীয়দের সৈন্যদেরকে ভয় ধরিয়ে দিলেন। আর তিনি তাদের রথের চাকাগুলো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেন, তাতে তারা অতি কষ্টে রথ চালাতে লাগল; তখন মিসরীয়েরা বললো, “চল, আমরা ইসরাইলের সম্মুখ থেকে পালিয়ে যাই, কেননা তাদের প্রভু তাদের পক্ষ হয়ে মিসরীয়দের বিপক্ষে যুদ্ধ করছেন।” (তাওরাত, হিজরত, ১৪)

লোহিত সাগর ভাগ; Image Source: stmed.net

হিব্রুরা সবাই ওপারে চলে যাবার পর আল্লাহ্‌ মূসাকে (আ) বললেন, “তুমি সমুদ্রের উপরে হাত বাড়িয়ে দাও; তাতে পানি ফিরে মিসরীয়দের উপরে ও তাদের রথের উপরে ও ঘোড়সওয়ারদের উপরে আসবে।” তখন মূসা (আ) সমুদ্রের উপরে হাত বাড়িয়ে দিলেন, আর সকাল হতে না হতে সমুদ্র পুনরায় সমান হয়ে গেল; পানি ফিরে এলো ও ফারাওয়ের রথ ও ঘোড়সওয়ারদেরকে গ্রাস করলো, তাতে ফেরাউনের যে সমস্ত সৈন্য তাদের পিছনে সমুদ্রে নেমেছিল তাদের একজনও অবশিষ্ট রইলো না। (তাওরাত, হিজরত, ১৪)

কুরআন বলছে, “আমি সেথায় অপর দলকে পৌঁছিয়ে দিলাম। এবং মূসা ও তাঁর সংগীদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিলাম। অতঃপর অপর দলটিকে নিমজ্জিত কললাম। নিশ্চয়ই এতে একটি নিদর্শন আছে এবং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী ছিল না।” (কুরআন, ২৬:৬৪-৬৭)

কিন্তু ফারাওয়ের কী হলো শেষমেশ? বহুল প্রচলিত দ্বিতীয় রামেসিসের মমিই কি এই এক্সোডাসের ফারাওয়ের? আর লোহিত সাগর পাড়ি দেবার পর কী হয়েছিল বনি ইসরাইলের? 

পড়ুন পরের পর্বে। 

নীলনদ; Image Source: Zastavki.com

একাদশ পর্ব: মরিস বুকাইলি আর ফিরাউনের সেই মমি

এ সিরিজের পর্বগুলো হলো:

প্রথম পর্ব: ইহুদী জাতির ইতিহাস: সূচনা পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব: মিশরে যাবার আগে কেমন ছিল বনি ইসরাইল?

তৃতীয় পর্ব: হযরত ইউসুফ (আ): দাসবালক থেকে মিসরের উজির- ইহুদী জাতির ইতিহাস

চতুর্থ পর্ব: ইউসুফ-জুলেখার কাহিনীর জানা অজানা অধ্যায়

পঞ্চম পর্ব: মসজিদুল আকসা আর বাইতুল মুকাদ্দাসের ইতিবৃত্ত

ষষ্ঠ পর্ব: দাসবন্দী বনী ইসরাইল এবং হযরত মুসা (আ:) এর জন্ম

সপ্তম পর্ব: মিসরের রাজপ্রাসাদ থেকে সিনাই পর্বত

অষ্টম পর্ব: সিনাই পর্বত থেকে ফারাওয়ের রাজদরবার

নবম পর্ব: মিসরের অভিশাপ

দশম পর্ব: দ্বিখণ্ডিত লোহিত সাগর, এক্সোডাসের সূচনা

একাদশ পর্ব: মরিস বুকাইলি আর ফিরাউনের সেই মমি

দ্বাদশ পর্ব: তূর পর্বতে ঐশ্বরিক সঙ্গ এবং তাওরাত লাভ

ত্রয়োদশ পর্ব: ইসরাইলের বাছুর পূজা এবং একজন সামেরির ইতিবৃত্ত

চতুর্দশ পর্ব: জীবন সায়াহ্নে দুই নবী

পঞ্চদশ পর্ব: রাহাব ও দুই গুপ্তচরের কাহিনী

ষোড়শ পর্ব: জেরিকোর পতন এবং স্যামসনের অলৌকিকতা

সপ্তদশ পর্ব: এক নতুন যুগের সূচনা

 

বোনাস প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল:

দ্য ফার্স্ট মুসলিম: একজন ইহুদীর চোখে মহানুভব হযরত মুহাম্মাদ (সা)

ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত: কী, কেন এবং কীভাবে এর শুরু?

This article is in Bangla language, and about the Exodus of the Israelites from the Biblical times. For references, please visit the hyperlinked websites.

Featured Image: Graffiti Images

This article is copyrighted under Roar Bangladesh Ltd. No textual part of this article may be reproduced or utilized in any form or by any means, electronic or mechanical, including photocopying, recording, or by any information storage and retrieval system, without express permission in writing from the publisher. Any person or entity found reproducing any portion of this article will be held in violation of copyright, and necessary steps will be taken.

Related Articles

Exit mobile version