আগের পর্বের পর থেকে
১
ভাটিতে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিতে নিতে সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বোর অতি মূল্যবান কয়েকটি মাস লেগে গেল। ১৫৮৪ সালে মার্চ মাস নাগাদ তিনি প্রস্তুতি শেষ করলেন। মার্চের শেষের দিকে গঙ্গা দিয়ে ভাটির পথ ধরলেন তিনি আর তার মুঘল সেনাবাহিনী।
মুঘল বাহিনী তাদের প্রথম আঁচড়টা দিল খিজিরপুরে। সোনারগাঁও থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের এই শহরটি ঈশা খানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী একটি নৌঘাঁটি ছিল। তবে খিজিরপুর দ্রুতই মাথা নত করল। খিজিরপুরের পর মাথা নত করল খোদ সোনারগাঁও! সোনারগাঁও পদানত করার পর সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বো যাত্রা করলেন ঈশা খানের আরেক গুরুত্বপূর্ণ ঘাটি কতরাব বরাবর। কতরাবও হার মানতে বাধ্য হলো। বর্তমান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মাসুমাবাদই হলো ঐতিহাসিক কতরাব।
এক ধাক্কায় ঈশা খানের গুরুত্বপূর্ণ তিন তিনটি শক্তিশালী ঘাটি দখল করে শাহবাজ খান কাম্বো এগোলেন আরেক গুরুত্বপূর্ণ ঘাটি এগারসিন্দুরকে লক্ষ্য করে। এগারসিন্দুরে (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়ায়) মুঘল সেনাবাহিনীকে মাসুম খান কাবুলির বাহিনী বাঁধা দিল। তবে অবশেষে তাকেও হার মানতে হলো। পরাজিত মাসুম খান কাবুলি কোনোরকমে একটি নদীচরে আশ্রয় নিয়ে জীবন রক্ষা করলেন।
এগারসিন্দুর দখল করে মুঘল সেনাবাহিনী বর্তমান গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোকে এসে ঘাটি গাড়লেন।
২
ভাটিতে যখন ঈশা খানের সর্বনাশ হচ্ছিল, তিনি তখন অবস্থান করছিলেন কুচবিহারে। সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বোর আক্রমণের কথা জানামাত্রই তার সমস্ত শক্তি জড়ো করে বাজিতপুরে এসে অবস্থান নিলেন। শাহবাজ খান কাম্বো তরসুন খানকে পাঠালেন বাজিতপুর দখলে নিতে। তরসুন খান বাহিনী নিয়ে এগিয়ে গেলেন। তবে পেছন থেকে ওত পেতে থাকা মাসুম খান কাবুলি মোক্ষম সময়ে তার উপর আঘাত হানে। এই আঘাতে তরসুন খান পরাজিত হলেন। পরে তাকে হত্যা করা হয়।
এদিকে সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বো আরেকটু এগিয়ে বানার নদীর তীরে ঘাটি গেড়ে অবস্থান নিলেন। তিনি ঈশা খানের সাথে সন্ধির কথা ভাবছিলেন ততদিনে।
ঈশা খানের কাছে সন্ধি প্রস্তাব পাঠানো হলো। সন্ধি প্রস্তাব পেয়ে তিনি ফন্দি আটতে লাগলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন সন্ধি তো করবেনই না, বরং মুঘল সেনাবাহিনীকে আক্ষরিক অর্থেই পানিতে চুবিয়ে মারবেন। মুঘলরা ভাটির বর্ষার সাথে তেমন পরিচিত না, তিনি এই সুযোগ কাজে লাগাবেন। নিজের পরিকল্পনামতো ঈশা খান ব্রহ্মপুত্রের নানা জায়গায় ১৫টি বাঁধ নির্মাণ করালেন। এক দিকে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে, অন্যদিকে মুঘলদের সাথে সন্ধি করবেন বলে সময়ক্ষেপণ করছেন।
এদিকে বর্ষার শুরুতে নদীর পানি যখন বাড়তে শুরু করলো, তখন তিনি নিজ রূপে ফিরে এলেন। নিজের প্রতিরক্ষা জোরদার করে মুঘল সেনাবাহিনীর উপর হালকা ঝটিকা আক্রমণ চালালেন। মুঘল সেনাবাহিনীও ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমণ চালালে ঈশা খান ব্রহ্মপুত্রের উপর সদ্য নির্মিত বাঁধগুলো সব ভেঙ্গে দিলেন। প্রচণ্ড পানির স্রোতে মুঘল সেনাবাহিনী প্লাবিত হলো। বিপুল সংখ্যক মুঘল সৈন্য পানিতে তলিয়ে মারা গেল। বেশ কিছু যুদ্ধজাহাজও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এদিকে মুঘল সেনাবাহিনী যখন পানির সাথে যুদ্ধ করে মরছে, তখন পানিকে সাহায্য করার জন্যই যেন ঈশা খান এগিয়ে এলেন ক্ষিপ্র গতিতে।
মুঘল বাহিনী এমনিতেই পানির কারণে নাকাল ছিল, তার উপর ঈশা খানের আক্রমণ গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো লাগছিল। তারপরও মুঘল সেনাবাহিনী যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তুললো। যুদ্ধ চললো সমানে সমান। বেশ কিছুদিন ধরে লাগাতার খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ হচ্ছিল। দুই পক্ষই টানা যুদ্ধে ক্লান্ত। এবার সত্যি সত্যিই দুই পক্ষ সন্ধির প্রয়োজন বোধ করলো!
৩
সন্ধিতে ঈশা খানকে কিছুটা বাড়তি সুবিধা দিতেই যেন ঢাকার মুঘল থানাদার সৈয়দ হোসেন ঈশা খানের হাতে বন্দী হলেন। উচ্ছ্বসিত ঈশা খান সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বোকে সন্ধি প্রস্তাব দিলেন। সন্ধির শর্তগুলো ছিলো নিম্নরূপ-
১. মুঘল সৈন্যরা ভাটি এলাকা ত্যাগ করবে
২. বিদ্রোহী মাসুম খান কাবুলিকে মক্কায় হজ্বে প্রেরণ করা হবে
৩. মুঘলরা চাইলে সোনারগাঁও বন্দরে একজন দারোগা নিযুক্ত করতে পারবে
শাহবাজ খান বুঝতে পারলেন ভাটির এই প্রতিকূল অঞ্চলে যুদ্ধ করে লাভ নেই। মুঘলরা মূলত বারবার পরাজিত হচ্ছে ভাটির বিরূপ আবহাওয়া আর বর্ষার কারণে। তারচেয়ে বরং সন্ধি করে ফিরে যাওয়াই ভালো। দুই পক্ষের মাঝে সন্ধি হয়ে গেল।
সন্ধির শর্তানুযায়ী সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বো সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে চলে যাওয়ার জন্য গোছগাছ করছিলেন, এর ভেতরেই তার কাছে খবর আসে ঈশা খান মুঘলদের দুর্বলতা আঁচ করতে পেরে আরও শর্ত চাপাতে চাইছেন। শাহবাজ খান বাধ্য হলেন আরেকটি অনিশ্চিত যুদ্ধের দিকে পা বাড়াতে।
৪
ঈশা খানও যেন এটাই চাইছিলেন। মুঘল সেনাবাহিনী এমনিতেই নিজের এলাকা ছেড়ে প্রতিকূল এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার উপর টানা যুদ্ধে তারা ক্লান্ত। ঈশা খান মুঘলদের মাঝে অন্তর্দ্বন্দ্বের ব্যাপারে কানাঘুষা শুনেছেন। প্রভাবশালী মুঘল সেনানায়করা এই ‘অভিশপ্ত’ ভাটি ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন। সৈন্যরাও ভাটির এই স্যাঁতস্যাঁতে প্রতিকূল পরিবেশ ছাড়তে পারলেই যেন হাফ চেড়ে বাঁচে। এমন দ্বিধা নিয়ে শক্তিশালী কোনো বাহিনীও তুলনামূলক দুর্বল বাহিনীর কাছে হার মানতে বাধ্য।
হলোও তা। ১৫৮৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আবারও দুই বাহিনীর মাঝে সংঘর্ষ শুরু হলো। কিছুদিন টানা সংঘর্ষের পর সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বো চরম তিক্ততা নিয়ে নিজের বাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়ে তান্ডার পথ ধরলেন। বিগত কয়েক মাসের পরিশ্রম, ঘাম আর রক্ত একেবারে মাঠে মারা গেলো। বাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়ে শাহবাজ খান কাম্বো শেরপুরে গিয়ে থামলেন। তিনি কিছুদিন প্রস্তুতি নিয়ে আবারও ভাটিতে নেমে আসার পরিকল্পনা করলেন। কিন্তু, বাহিনীর অন্যান্য সেনাপতি আর সৈন্যরা এই প্রস্তাবে আপত্তি জানালো। ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে জাঁদরেল এই মুঘল সেনাপতি তান্ডায় ফিরে গেলেন।
সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বো ভাটি এলাকা ত্যাগ করা মাত্রই বিগত কয়েকমাসে মুঘলরা যতগুলো দুর্গ দখল করেছিল, সব আবার বেদখল হয়ে গেলে। সুবাদারের পুরো অভিযানটি চূড়ান্তভাবে ব্যর্থতায় পরিণত হলো।
৫
সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বোকে আরেকটা ব্যর্থতা উপহার দেয়া সত্ত্বেও ঈশা খান দেখলেন এইবারের অভিযানটিতে মুঘল সেনাবাহিনী দুর্দান্ত গতিতে তার দুর্গগুলোতে আঘাত করেছে। কেবল বর্ষার সময়েই মুঘল সেনাবাহিনীর দুর্বলতার সুযোগে তাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। মুঘল সেনাবাহিনীর দুর্দান্ত আঘাতে একের পর এক তার দুর্গতগুলোর পতন ঘটেছে। খোদ কতরাবও মাথা নত করেছে। এই কতরাবেই তিনি তার পরিবারের সদস্যদের আবাস হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। ঈশা খান এই বিষয়টি নিয়ে আবারও ভাবতে বসলেন।
মুঘল নৌবহর যে ভাটিতে আবারও আসবে, তা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। কতরাব নদী তীরবর্তী এলাকা। কাজেই তার পরিবারের প্রতি প্রচ্ছন্ন একটা হুমকি সবসময়ই থাকছে। তিনি তাই নিজের বাসস্থানের জন্য নতুন এলাকা নির্বাচন করলেন। লক্ষণ হাজরার জঙ্গলবাড়ি জায়গাটাকে তিনি বেশ নিরাপদ মনে করলেন। কাজেই জঙ্গলবাড়ি কেড়ে নেওয়ার জন্য লক্ষণ হাজরাকে তিনি পরাজিত করলেন। অন্যদিকে ঈশা খান তার পুত্র মুসা খানকে বড়বাজুর আটিয়ার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিলেন। এভাবেই ঈশা খান কতরাব, জঙ্গলবাড়ি আর বড়বাজুর আটিয়ায় নিজের পরিবারের সদস্যদের ছড়িয়ে দিলেন, যাতে মুঘল নৌবহরের আক্রমণে পরিবারের একাংশ ধরা পরলেও বাকিরা নিরাপদে থাকেন।
ঈশা খান আরও জানতেন মুঘলরা বাংলার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না। যতবারই মুঘলদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক না কেন, বাংলায় একের পর এক মুঘল নৌবহর আসতেই থাকবে। ঈশা খান জানেন, পরাক্রমশালী মুঘল সাম্রাজ্যের মুখোমুখি হয়ে লড়াই করা যেমন তার পক্ষে সম্ভব না, ঠিক তেমনই আজীবন তাদের ঠেকিয়ে রাখাও সম্ভব না।
কাজেই ঈশা খান আরেকটি দুর্দান্ত পরিকল্পনা করলেন। কেমন হয় যদি মুঘলরা নিজেদের অধিকৃত অঞ্চলেই আটকে থাকে? মাসুম খান কাবুলিকে ঈশা খান বাছাই করলেন তার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য।
৬
সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বো রাজধানী তান্ডায় ফিরে গেলে ধূর্ত মাসুম খান কাবুলি শেরপুর দখল করে নিলেন। ১৫৮৪ সালের একেবারে শেষের দিকে বা ১৫৮৫ সালের শুরুর দিকে শাহবাজ খান আবারও ভাটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। শেরপুর বেদখল হওয়ার খবর তিনি শুনেছেন, কাজেই তার প্রথম গন্তব্য হলো শেরপুর।
ধূর্ত মাসুম খান এই সংবাদ পাওয়া মাত্রই পালিয়ে গেলেন। শাহবাজ খান কাম্বো বিগত কয়েকমাসে লড়াইয়ে দেখেছেন, মাসুম খান কাবুলি আর ঈশা খান কাজ করছেন খুব কৌশলে। আক্রমণ করে মাসুম খান কাবুলি পালিয়ে যাচ্ছেন, ঈশা খানের মুখোমুখি হতে গেলে পেছন থেকে এসে আক্রমণ করছে। সুবাদার তাই মাসুম খানের একটা পরিণতি দেখতে চাইলেন আগে। তিনি তার পেছনে উজির খানের নেতৃত্বে একটি বাহিনী মোতায়েন করে কিছুদিনের জন্য তান্ডায় ফিরে গেলেন।
শেরপুর থেকে পালিয়ে মাসুম খান কাবুলি ফতেহাবাদ অর্থাৎ, ফরিদপুরে ঘাটি গাড়লেন। ফরিদপুর থেকে আবারও মুঘল সেনাবাহিনীর ধাওয়া খেয়ে দিনাজপুরের তাজপুরে গিয়ে ঘাটি গাড়লেন। এভাবেই মাসুম খান কাবুলি আর মুঘল সেনাবাহিনীর মাঝে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া চলতে লাগলো। মাসুম খান কাবুলি কখনোই সামনাসামনি এসে যুদ্ধে জড়াচ্ছিলেন না, ফলে মুঘল সেনাবাহিনীও তার নাগাল পাচ্ছিল না। এর ফল দাঁড়ালো এই যে, মুঘল সেনাবাহিনী মাসুম খান কাবুলিকে ধাওয়া করতে গিয়ে তান্ডা, শেরপুর, তাজপুর আর ঘোড়াঘাটের মধ্যেই আটকে রইলো। আর এটাই ছিল ঈশা খানের পরিকল্পনা, যেন মুঘলরা খুব সহজেই আবার ভাটি অভিযানে যেতে না পারে!
৭
তবে মুঘলদের এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার কারণ ছিল খোদ নিজেদের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্বই। বাহিনীর অনেক জেনারেলই ভাটির প্রতিকূল পরিবেশে আর যেতে চাইছিলেন না। বিশেষত বর্ষায় প্রকৃতির কাছে তারা পুরোপুরি উন্মুক্ত আর অসহায় হয়ে পড়তেন। বর্ষায় ভাটির নদ-নদীগুলো ফুলে ফেঁপে সমুদ্রের মতো হয়ে যেত। নিজেদের এলাকা হওয়ায় এসময় ভুঁইয়ারা ঠিকই পথঘাট চিনতো, কিন্তু মুঘলরা চোরাগোপ্তা আক্রমণের শিকার হলেও সহজে বুঝতে পারতো না আক্রমণটা হচ্ছে কোন জায়গা থেকে।
দীর্ঘদিন ধরে লাগাতার চলা এই যুদ্ধে দুই পক্ষেই ব্যাপক প্রাণহানি আর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কাজেই মুঘল সেনাবাহিনীর একাংশের ভাটিতে অভিযান চালানোর ব্যাপারে অনীহা একেবারে অমূলক না।
এদিকে সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বোর একের পর এক ব্যর্থতার কারণে আকবর খুবই ক্ষুব্ধ হলেন। শাহবাজ খানকে সরিয়ে সাদিক খানকে বাংলার সুবাদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে অল্প কয়েকমাসের মাথাতেই আকবর আবারও শাহবাজ খান কাম্বোকে বাংলার সুবাদার হিসেবে নিয়োগ দেন।
দ্বিতীয় মেয়াদেও দায়িত্ব পেয়ে ভাটিতে শাহবাজ খান কাম্বো তেমন সাফল্য পাননি। দ্বিতীয় মেয়াদের তার প্রধান সাফল্য হলো আরাকান বাহিনীর হাত থেকে চট্টগ্রামকে মুক্ত করা। এসময় ভোলা দ্বীপকে মগ আর পর্তুগিজ জলদস্যুরা অভয়ারণ্য বানিয়ে নিয়েছিল। তিনি এসব দস্যুদের আক্রমণ করে বিতাড়িত করেন। সুবাদার শাহবাজ খান কাম্বোর নামানুসারে ভোলার নাম দেওয়া হয়েছিলো দক্ষিণ শাহবাজপুর।
এই চট্টগ্রাম অধিকার ছাড়া দ্বিতীয় মেয়াদেও সুবাদার ঈশা খানের বিরুদ্ধে তেমন কিছুই করতে পারেননি। খালি হাতেই তাকে ফিরে যেতে হয়েছিল ভাটি থেকে।
৮
ঈশা খানকে দমনে শাহবাজ খান কাম্বোর লাগাতার ব্যর্থতায় আকবর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। ১৫৮৬ সালের নভেম্বর মাসে তাই তিনি শাহবাজ খানকে সুবাদারির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আরেক জাঁদরেল জেনারেল উজির খানকে বাংলার দায়িত্ব দিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর ভাটিতে কোনোরকম অভিযান পরিচালনার আগেই পরের বছরের আগস্টের দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। ফলে সুবাদারির দায়িত্ব চলে গেল সাইদ খান নামক আরেক কর্মকর্তার কাছে।
১৫৮৮ সালের শুরু দিকে দায়িত্ব নিতে তিনি তান্ডায় এসে পৌঁছালেন। তবে ভাগ্যের নিয়তি, ভাটিতে বড় ধরনের অভিযান চালানোর তেমন সুযোগই তিনি পেলেন না। একে তো মাসুম খান কাবুলি ক্রমাগত পূর্ব সীমান্তের মুঘল দুর্গতগুলোতে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছিল। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুঘল সেনাবাহিনী এই হামলা ঠেকাতেই হিমশিম খাচ্ছিল।
অন্যদিকে উড়িষ্যায় আফগানদের দমনে তখন ব্যস্ত ছিলেন রাজা মানসিংহ। মানসিংহকে প্রায়ই বাংলা থেকে সাহায্য পাঠাতে হতো। স্বয়ং সাইদ খানকেই দুই বার তান্ডা থেকে উড়িষ্যায় যেতে হয়েছিল। ফলে ১৫৯৪ সাল পর্যন্ত ভাটিতে ঈশা খান বেশ স্বচ্ছন্দের সাথেই শাসন কার্য পরিচালনা করছিলেন।
১৫৯৪ সালে আকবর বিহার থেকে রাজা মানসিংহকে বাংলায় পাঠালেন আর সাইদ খানকে বিহারের দায়িত্ব দিলেন। রাজা মানসিংহ কী পারবেন এবার ভাটি বাংলা জয় করতে?
[এই সিরিজের পূর্বে প্রকাশিত পর্বটি পড়ুন এখানে। সিরিজের সবগুলো লেখা পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।]