Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মঙ্গোল বাহিনীর পরিচালনা কৌশল

চেঙ্গিস খানের প্রতিষ্ঠিত মঙ্গোল সাম্রাজ্যের কাহিনী যেকোনো ইতিহাস পাঠকই গোগ্রাসে গিলে থাকেন। বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত সেই মঙ্গোল সাম্রাজ্যের মূল শক্তি ছিলো তাদের প্রশিক্ষিত, শৃঙ্খলাবদ্ধ সেনাবাহিনী। পুরো বাহিনী জুড়ে যেভাবে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা হতো, তা ছিলো সত্যিই বিস্ময়কর। আর এ বিস্ময়কর কাজটি দক্ষতার সাথে করতে পারাটাও ছিলো তাদের একের পর এক বিজয়ের অন্যতম কারণ।

চেঙ্গিস খান

আজকের এ লেখায় তাই চেঙ্গিস খানের প্রতিষ্ঠিত সেই মঙ্গোল সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনী কিভাবে পরিচালনা করা হতো সেই কথাগুলোই তুলে ধরছি।

মঙ্গোল অভিজাত সমাজ

মঙ্গোল সেনাবাহিনী সম্পর্কে জানতে হলে শুরুতে আমাদের জানতে হবে তাদের অভিজাত সমাজ সম্পর্কে। কারণ মঙ্গোল সাম্রাজ্যের পরিচালকের আসনে তো ছিল তারাই।

খাগান

মঙ্গোল সাম্রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন ছিলেন একজন খাগান বা কাগান, যার অর্থ সম্রাট। একজন খাগান শাসন করতেন একটি পুরো খাগানাত বা সাম্রাজ্য।

Caption

খাগানকে ‘খানদেরও খান’ বলা হয়ে থাকে, যার অর্থ ‘রাজাদের রাজা’। খাগান আর খানের মাঝেও রয়েছে বেশ বড় একটি পার্থক্য। চেঙ্গিস খান এবং তার পরবর্তী শাসক, যারা কিনা একইসাথে তার বংশধর, তাদের বলা হতো খাগান। অপরপক্ষে অন্যান্য শাসকরা ছিলেন শুধুই ‘খান’ উপাধির অধিকারী।

খান

মঙ্গোলদের উপাধি হিসেবে আমরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত এই ‘খান’ উপাধিটির সাথেই। এর দ্বারা মঙ্গোলদের কোনো রাজা, শাসক, কমান্ডার, নেতা প্রমুখ ভূমিকার ব্যক্তিকে বোঝাতো। তবে সেই ‘খান’ একইসাথে ভয়ঙ্কর এক বিজেতাও হতেন।

ইলখান

ইলখান শব্দটির অর্থ ‘খানের অধীনস্ত’। একজন ইলখান সাধারণত একজন খানের অধীনে কাজ করতেন এবং সাম্রাজ্যের ছোট ছোট এলাকার শাসনভার তার হাতে ন্যাস্ত করা হতো। তারা যে এলাকা শাসন করতেন, সেটাকে বলা হতো ইলখানাত।

এভাবেই রাজ্যের ছোট ছোট এলাকা শাসনের মাধ্যমে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিস্তৃতিতে ভূমিকা রাখতেন একজন ইলখান। বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য সময়ে সময়ে তিনি রিপোর্ট করতেন খানের কাছে।

বয়ান

বয়ান বলতে বোঝানো হতো খানের জেনারেলকে। তিনি নেতৃত্ব দিতেন একটি অর্দুকে। অর্দু কী সেই কথা আমরা একটু পরেই আলোচনা করবো। বয়ান হতে হলে একজন ব্যক্তিকে খানের সাথে রক্ত সম্পর্কীয় হওয়া লাগতো না, যেমনটা লাগতো খাগানের বেলায়।

ইয়ুর্তকাই

অর্দুর দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে বলা হতো ইয়ুর্তকাই। একটি অর্দু যাতে ঠিকমতো চলতে পারে, সেজন্য সারাদিনই একজন ইয়ুর্তকাইকে নানা রকম দায়িত্ব পালন করতে হতো। এর মাঝে ছিলো খাদ্য ও পানীয়র ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যোগাড়, তলোয়ার দেখে রাখা এবং ঘোড়াগুলোর দেখাশোনা করা।

মঙ্গোলদের অস্ত্রাগার দেখাশোনার দায়িত্ব থাকতো এই ইয়ুর্তকাইয়ের ঘাড়েই। ফলে একজন খানের কাছে তার গুরুত্ব ছিলো সীমাহীন।

মঙ্গোল সেনাবাহিনীর বিন্যাস

শাসক সমাজের পর এবার এই শাসক সমাজের টিকে থাকার পেছনের মূল কারিগর তথা সেনাবাহিনীর দিকে নজর দেয়া যাক। শৃঙ্খলাবদ্ধ মঙ্গোল সেনাবাহিনীর সৈন্যদের সাজানোর মাঝেও ছিলো চমৎকার কিছু নিয়ম। ছোট থেকে বড় প্রতিটি বাহিনীতেই তারা সৈন্য সংখ্যা ১০ এর গুণিতক আকারে সাজাতো।

সেনাবাহিনীর পদবিন্যাস সম্পর্কে জানার আগে আমাদের একটি শব্দের সাথে পরিচিত হয়ে নেয়া জরুরি, আর তা হলো ‘নকুদ’। তারা আলাদা কেউ না। মঙ্গোল বাহিনীর প্রত্যেক যোদ্ধাকেই একেকজন নকুদ বলে সম্বোধন করা হতো। এই লেখাতেও তাই পরবর্তী সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে ‘সৈন্য’ কথাটির পরিবর্তে ‘নকুদ’ শব্দটি ব্যবহার করবো একটু ‘মঙ্গোলীয়’ ভাব আনার জন্যই!

আর্বাতু

১০ জন নকুদ নিয়ে গঠিত হতো একটি আর্বাতু। আর প্রতিটি আর্বাতুর নেতাকে বলা হতো আর্বান-উ দর্গা।

জাগুন

১০০ জন নকুদ অর্থাৎ ১০টি আর্বাতু নিয়ে গঠিত হতো একটি জাগুন। এই জাগুনের নেতৃত্বের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে বলা হতো জাগুতু-ঈন দর্গা।

মিঙ্গাত

১,০০০ জন নকুদ অর্থাৎ ১০টি জাগুন (বা ১০০টি আর্বাতু) নিয়ে গঠিত হতো একটি মিঙ্গাত। আর প্রতিটি মিঙ্গাতের অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা লোকটি পেত মিঙ্গান-ই নয়ান উপাধি।

তুমেন

১০,০০০ জন নকুদ অর্থাৎ ১০টি মিঙ্গাত (বা ১০০টি জাগুন বা ১,০০০টি আর্বাতু) নিয়ে গঠিত হতো একটি তুমেন। এই তুমেনের নেতার উপাধি হতো তুমেতু-ঈন নয়ান।

অর্দু

কতগুলো তুমেন নিয়ে গঠিত হতো একটি অর্দু। তবে তুমেনের সংখ্যা এখানে নির্দিষ্ট ছিলো না। ৩টি থেকে শুরু করে ১০টি, এমনকি এর চেয়েও বেশি হতে পারতো। অর্থাৎ অর্দুতে নকুদের সংখ্যা ৩০,০০০ থেকে শুরু করে ১,০০,০০০ কিংবা এর উর্ধ্বে চলে যেত। বিশালাকৃতির এ বাহিনীর নেতৃত্বের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিকে বলা হতো অর্লোক। তিনি সাধারণত খানের রক্ত সম্পর্কীয় হতেন।

সেনাবাবাহিনীর গঠন ও পদমর্যাদা নিয়ে তো মোটামুটি একটা ধারণা দেয়া হলো। এবার তাহলে নজর দেয়া যাক মঙ্গোলদের বিশেষ এক বাহিনীর দিকে। তাদের আলোচনা দিয়েই আজকের এ লেখার ইতি টানা হবে।

খেসিগ

খেসিগদের নিয়ে কথা বলার আগে চলুন একটু পেছন থেকে ঘুরে আসা যাক। বিশ্বজুড়ে ত্রাসের সঞ্চার করা মঙ্গোল সাম্রাজ্যের পূর্ববর্তী ভার্সন হিসেবে অনেকেই যে সংঘটিকে বিবেচনা করে থাকেন, তা হলো ‘খামাগ মঙ্গোল মৈত্রী সংঘ’। দ্বাদশ শতকের এ সংঘটির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন ইয়েসুগেই বাগহাতুর, যিনি ইয়েশুকেই নামেও পরিচিত। ইয়েসুগেই আপনার কাছে অপরিচিত হতে পারেন ঠিকই, তবে তার ছেলেকে চেনে পুরো বিশ্ব।

ইয়েসুগেই বাগহাতুর

তার ছেলে কে জানতে চান? লোকে তার ছেলেকে ‘চেঙ্গিস খান’ নামেই চেনে!

ক্ষমতার লোভে খুনোখুনি, হানাহানি, রক্তপাত আজকের দিনের পত্র-পত্রিকা আর টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর প্রতিদিনকার সংবাদ। শুধু এখনকার কথাই বা বলছি কেন? মানব ইতিহাসে এমন ঘটনার সূত্রপাত তো প্রকৃতপক্ষে হাজার হাজার বছর আগে থেকে। আর এমনই এক ঘটনার শিকার হয়েছিলেন চেঙ্গিস খানের বাবা ইয়েসুগেই।

১১৭১ সালের কথা। শিশু তেমুজিনের (চেঙ্গিস খানের পূর্বের নাম) বয়স তখন নয় বছর। খোঙ্গিরাদ গোত্রের এক উচ্চবংশীয় পুরুষ দাই সেত্‌সেনের বাসায় ছেলেকে রেখে ইয়েসুগেই গিয়েছিলেন এক বিয়ের দাওয়াতে। সেখানেই তার খাবারে বিষ প্রয়োগ করেছিলো বর্বর তাতার জাতির লোকেরা। সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে দাই সেত্‌সেন ও ইয়েসুগেই একে অপরকে কথা দেন যে, বড় হলে দাই সেত্‌সেনের মেয়ে বোর্তের সাথে বিয়ে হবে তেমুজিনের। আফসোস! বিয়েটা শেষ পর্যন্ত দেখে যেতে পারেন নি ইয়েসুগেই। বিষ প্রয়োগের তিনদিনের মাথায় পরিবারের সদস্য পরিবেষ্টিত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

শিল্পীর কল্পনায় তোঘ্রুল

এটা ছিলো কেবলমাত্র একটি নমুনা। মঙ্গোল সমাজে এমনটা মাঝে মাঝেই হতো। এছাড়া যাযাবর মঙ্গোলরা যেসব তাঁবুতে থাকতো, সেগুলোতে আমাদের ঘরের মতো শক্ত দেয়াল ছিলো না। ফলে তলোয়ার কিংবা বর্শার সাহায্যে সহজেই টার্গেটকে খতম করতে পারতো যে কেউ। এদের হাত থেকে বাঁচতে চেঙ্গিস খানের চাচা তোঘ্রুল একটি রাজকীয় রক্ষীবাহিনী তৈরি করেন, যার নাম ছিলো তোর্গুদ। ১২০৩ সালে তোঘ্রুল পরাজিত হলে চেঙ্গিস খান নতুন এক রাজকীয় রক্ষীবাহিনী তৈরি করেন। এর নামই ছিলো খেসিগ।

চেঙ্গিস খান

খেসিগ বাহিনী মূলত রাত ও দিন এ দুই সময়ে কাজ করা সৈন্যদের মাঝে বিভক্ত ছিলো। ভালো বেতন অল্প সময়ের মাঝেই এ চাকরিকে করে তুলেছিলো বেশ জনপ্রিয়। এ বাহিনীতে চাকরি করা নকুদদেরকে সমাজেও বেশ সম্মানের চোখে দেখা হতো। খেসিগ বাহিনী যাত্রা শুরু করেছিলো ১,০০০ এর মতো নকুদ নিয়ে। তবে দিন দিন দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে এ সংখ্যাটি। চেঙ্গিস খানের রাজত্বকালের মাঝামাঝি দিকে খেসিগ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১০,০০০ এর ঘরে গিয়ে ঠেকেছিলো।

খেসিগ বাহিনী

দিনের বেলা কাজ করা খেসিগ বাহিনীকে বলা হতো তোর্গুদ বা তুনঘাউত। শাসকদের প্রাত্যাহিক কাজকর্ম ও বিভিন্ন অভিযানের সময় তারা সর্বদা তার কাছাকাছি অবস্থান করতো।

রাতে কাজ করা খেসিগরা পরিচিত ছিলো খেভতূল নামে। রাতের আঁধারে তাঁবুতে নিদ্রারত শাসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ছিলো তাদের কাজ।

তথ্যসূত্র

১) en.wikipedia.org/wiki/Khagan

২) en.wikipedia.org/wiki/Khan_(title)

৩) en.wikipedia.org/wiki/Kheshig

৪) en.wikipedia.org/wiki/Yesugei

৫) warriorsandlegends.com/mongol-warriors/mongol-military-rankings/

Related Articles