উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্ব সম্পর্কে অনেকেরই জানা। ১৯৫০ সালের কোরিয়া যুদ্ধের পর থেকে দুই দেশ একে অপরের সাথে রেষারেষির সম্পর্ক। উত্তর কোরিয়ার একগুঁয়ে স্বভাবের ব্যাপারেও অনেকে অবগত। নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে তারা একের পর এক পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ বাড়িয়েই যাচ্ছে। অন্যদিকে, অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ছায়ায় থেকে দক্ষিণ কোরিয়া সব দিক দিয়ে দশ কদম এগিয়ে গেছে। এসবের মধ্যে অলিম্পিক প্রতিযোগিতার মতো এত বিশাল যজ্ঞ আয়োজন করা ভালোই চ্যালেঞ্জিং। আর সেখানে এর সাথে জড়িয়ে যায় সন্ত্রাসী হামলা। সবার মধ্যে ঢুকে যায় আতঙ্ক ও ভয়।
এটি ঘটেছিল ১৯৮৮ এর সিউল অলিম্পিকস প্রতিযোগিতার কয়েক মাস আগে। ১৯৮৭ সালের ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিমান (Korean Air Flight 858) এই হামলার শিকার হয়, এবং বিমানে অবস্থানরত ১০৪ জন যাত্রী ও ১১ জন ক্রু মেম্বারের সকলেই নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। দুজন উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচর এই হামলাটি সম্পাদন করে।
কীভাবে ঘটলো এই হামলা
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভায় হামলার রেকর্ডকৃত তথ্য-উপাত্তের মধ্যে পুরো পরিকল্পনাটি কীভাবে সম্পাদিত হয় তার পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়েছে।
১৯৮৭ সালের ১২ নভেম্বর উত্তর কোরিয়ার দুই এজেন্ট পিয়ংইয়ং থেকে উত্তর কোরিয়ার বিমানে চড়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোতে ভ্রমণ করছিলেন। তাদের সাথে আরো ছিলেন দুজন উত্তর কোরীয় কর্মকর্তা । মস্কোতে পৌঁছে পরদিন সকালে সেই দুজন এজেন্ট হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেখানে তারা উত্তর কোরিয়ার একজন গাইডেন্স অফিসারের বাড়িতে ছয় দিন অবস্থান করেন। ১৮ নভেম্বর এই দুই এজেন্ট গাড়িতে করে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় যান। অস্ট্রিয়া সীমান্ত পেরোনোর পরে বুদাপেস্টের সেই গাইডেন্স অফিসার দুজনকে দুটি নকল জাপানী পাসপোর্ট দেন। অর্থাৎ প্রথমে তারা পিয়ংইয়ং থেকে উত্তর কোরিয়ার নাগরিক হিসেবে মস্কো থেকে ভিয়েনায় আসেন।
এরপর পরিচয় পাল্টে জাপানি বাবা-কন্যা হিসেবে আবির্ভূত হন। পুরুষ এজেন্টের নাম বদলে হয় শিনিচি হাচিয়া এবং নারী এজেন্টের নাম বদলে হয় মায়ুমি হাচিয়া। ভিয়েনায় তারা পর্যটক হিসেবে আম পার্কিং হোটেলে অবস্থান করেন। সেখানকার অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইন্সের অফিসে গিয়ে টিকিট কেনেন। যাত্রাপথ ছিল ভিয়েনা থেকে বেলগ্রেড, তারপরে বাগদাদ, আবুধাবি এবং অবশেষে বাহরাইন। পাশাপাশি বাগদাদ থেকে আবুধাবি যাওয়ার জন্য কোরিয়া বিমান ৮৫৮ এ টিকেট বুক করলেন। কাজ শেষে পালানোর জন্য আবুধাবি থেকে আমান হয়ে রোম যাওয়ার জন্যও পরদিন টিকেট কাটেন তারা।
২৩ নভেম্বর ভিয়েনা ছেড়ে তারা বেলগ্রেডের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বেলগ্রেড পৌঁছে পলায়নের গন্তব্য রোম ছাড়িয়ে ভিয়েনা পর্যন্ত ঠিক করেন তারা, এবং একইসাথে টিকিটও বুক করেন। ২৭ নভেম্বরে ভিয়েনা থেকে ট্রেনে যুগোস্লাভিয়ায় দুজন গাইডেন্স অফিসার এসে তাদেরকে দেন জাপানে তৈরি একটি প্যানাসোনিক ট্রানজিস্টার রেডিও, যার ভেতরে ছিল বিস্ফোরক এবং মদের বোতলের ছদ্মবেশে একটি বোতলের ভেতর তরল বিস্ফোরক। পরদিন তারা ইরাকী এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে বাগদাদের সাদ্দাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে বেলগ্রেড ছেড়ে যান।
বাগদাদের বিমানবন্দরে পৌঁছে তারা কেএএল ৮৫৮ এর আগমনের জন্য তিন ঘণ্টা ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করেন। নয় ঘণ্টা পরে বিস্ফোরিত হওয়ার জন্য বোমায় টাইমার ঠিক করা হলো। রাত সাড়ে এগারোটায় তারা কেএএল ৮৫৮ বিমানে আবুধাবির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। বিস্ফোরকগুলো সিটের উপরে ব্যাগ রাখার কম্পার্টমেন্টে রেখে দিলেন এবং তিন ঘণ্টা পর আবুধাবিতে নেমে গেলেন। ব্যাংককে নামার কিছু সময় পূর্বে আন্দামান সাগরের উপরে বিমানটি বিস্ফোরিত হয়; টাইমার সেট করার ঠিক নয় ঘণ্টা পর। অন্যদিকে ভিসা জটিলতার কারণে গুপ্তচর দুজন ভিয়েনাতে আর যেতে পারেননি। সেজন্য তারা বাহরাইনে চলে যান। সেখানেই বিমানবন্দরে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে। কিন্তু গ্রেফতারের আগেই দুজন গুপ্তচরই আত্মহত্যার চেষ্টা করে, যার ফলশ্রুতিতে পুরুষ এজেন্ট মারা যায়। মৃত গুপ্তচরের আসল নাম ছিল কিম সাং-ইল ও গ্রেফতারকৃত নারী গুপ্তচরের আসল নাম ছিল কিম হিয়ন-হুই।
যে কারণে ঘটলো এই হামলা
যদিও অলিম্পিকের প্রায় এক বছর আগে বোমা হামলাটি হয়েছিল, ওয়েলসের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সের্গেই রাডচেনকো বলেছেন, তার কোনো “সন্দেহ নেই” যে হামলাটি ছিল প্রতিযোগিতাকে নাশকতার রূপ দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন- উত্তর কোরিয়া এমন একটি “ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে আগ্রহী ছিল যা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে প্রতিযোগিতাকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করতে বাধ্য করবে বা নিদেনপক্ষে অন্যান্য দেশগুলোকে (যেমন- উত্তর কোরিয়ার মিত্র দেশগুলো) যোগ দেওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করবে।
কোরিয়ান বিমান বোমা হামলার আগেই সিউলে ১৯৮৮ সালের গ্রীষ্মকালীন প্রতিযোগিতার নিরাপত্তার ব্যাপারে সিআইএ উদ্বিগ্ন ছিল। এই হামলা গোয়েন্দা সংস্থাটিতে নতুন উদ্বেগের জন্ম দেয়। ১৯৮৮ সালের ৩ মে সিআইএ একটি মেমো প্রকাশ করে। সেখানে তারা উল্লেখ করে, “১৯৮৮ সালের সিউল গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের বিরুদ্ধে পিয়ংইয়ং এর প্রকাশ্য হুমকি এবং গত নভেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানের নাশকতার পর প্রতিযোগিতার সুরক্ষার ব্যাপারে উত্তর কোরিয়াকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করা হচ্ছে”। ১৯৮৮ সালের অলিম্পিক প্রতিযোগিতার আয়োজক হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার বাছাইয়ের পর আশির দশকের মধ্যভাগ থেকেই প্রতিযোগিতাটিকে ব্যাহত করার প্রচেষ্টা শুরু করেছিল উত্তর কোরিয়া। এরই মাঝে হঠাৎ দক্ষিণ কোরিয়া ও আইওসির উদ্দেশ্যে উত্তর কোরিয়া এক প্রস্তাব উত্থাপন করে, “দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে যৌথভাবে প্রতিযোগিতা আয়োজন ও সেগমেন্টগুলো সমান ভাগ করা।”
এটি ছিল খুবই আকস্মিক একটি প্রস্তাব, কারণ এর পূর্বে কখনোই কোনো দেশ অন্য একটি দেশের সাথে যৌথভাবে অলিম্পিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করেনি। তাছাড়া উত্তর কোরিয়া যেভাবে দর্শনার্থীদের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে এমতাবস্থায় এরকম যৌথ আয়োজন সম্পাদনের প্রস্তাব তাদের কাছ থেকে আসাটা অবিশ্বাস্য। এ প্রস্তাব সম্পর্কে ১৯৮৬ সালের বৈঠকে আইওসির সভাপতি জুয়ান আন্তোনিও মন্তব্য করেছিলেন, “উত্তর কোরিয়া দশ হাজারেরও বেশি সাংবাদিক এবং অলিম্পিক পরিবারের সদস্যদের জন্য তাদের সীমানা খুলে দিতে পারে বলে আমার পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন।” তবে পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া নিজেরাও সম্ভবত ভাবেনি যে, যৌথভাবে আয়োজন করার বিষয়টি সম্ভব হবে।
রাডচেনকো বলেছেন, “১৯৮৮ সালে প্রতিযোগিতা যৌথভাবে আয়োজনের কোনো বাস্তবিক প্রত্যাশা উত্তর কোরিয়ার ছিল না।” অংশগ্রহণের প্রস্তাবটি ছিল শুধুমাত্র মিত্র চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি যুক্তিসঙ্গত ইঙ্গিত দেওয়া। দক্ষিণ কোরিয়া প্রস্তাব করেছিল যে ফুটবল, টেবিল টেনিস এবং তীরন্দাজির মতো খেলার কয়েকটি টুর্নামেন্ট উত্তর কোরিয়া চাইলে আয়োজন করতে পারে। তবে এই প্রস্তাব অনুসারে উত্তর কোরিয়ার আয়োজনটি সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতার তুলনায় স্বভাবতই সীমিত পরিসরে হত। উত্তর কোরিয়া চেয়েছিল বেশ কয়েকটি পূর্ণ ক্রীড়া সেগমেন্ট আয়োজন করতে; কেবলমাত্র কয়েকটি টুর্নামেন্ট নয়। ১৯৮৭ সালের শরৎকাল নাগাদ এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কোনো চুক্তি সম্ভব নয়। তবুও উত্তর কোরিয়ার জন্য সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয়টি ছিল তখনও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনকে অনুষ্ঠান বর্জনের বিষয়ে সম্মত করাতে ব্যর্থ হওয়া। ১৯৮৮ সালের প্রথমদিকে উভয় দেশ অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার ঘোষণা করে।
এতগুলো দেশের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য একটি কূটনৈতিক জয়। ১৯৮৭ সালেই দেশটি সামরিক একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হয় এবং অলিম্পিকের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে নিজেদের তুলে ধরার জন্য আগ্রহী ছিল তারা। অলিম্পিকের পরবর্তী সময়ে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো দক্ষিণ কোরিয়াকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়া শুরু করে, যে কাজটি তারা এর পূর্বে করা থেকে বিরত ছিল। পাশাপাশি তারা উত্তর কোরিয়ার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে শুরু করলো। সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধে ইতিহাসবিদ শিলা মিয়োশি জাগার লিখেছেন, “আমরা বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার যে শাসনামল দেখছি – একদম বিচ্ছিন্ন, যুদ্ধ-ভাবাপন্ন ও উদ্দেশ্যসাধনের একমাত্র উপায় হিসেবে তৈরি ভয়ংকর পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত একটি রাষ্ট্র- তার সবটুকুই মূলত আরম্ভ হয়েছে ১৯৮৮ সালের অলিম্পিকের মধ্য দিয়েই।”
সেই ১৯৮৮ সালের অলিম্পিক নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য উত্তর কোরিয়া এই হামলার পরিকল্পনাটি করে বলে পরবর্তীতে জানা গেছে। গ্রেফতারকৃত নারী এজেন্ট কিম হিয়ন-হুই এর কাছ থেকে জানা যায়, কিম জং-ইল তাদেরকে হামলাটির জন্য সরাসরি আদেশ করেছিলেন। তাদের পরিকল্পনা ছিল হামলার মাধ্যমে একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে দক্ষিণ কোরিয়া অলিম্পিক আয়োজনে সফল হতে না পারে।
২০১৮ সালে সব আশঙ্কা পেছনে ফেলে এই দুই দেশ একই পতাকা হাতে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে। এরকম একটি দৃশ্য দেখা সম্ভব হবে এরকম খুব কম মানুষই ভেবেছিল। এর পূর্বেও দুবার এই পতাকা নিয়ে দুই দেশ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। প্রতিযোগিতা দুটি ছিল ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০০৬ সালে ইতালিতে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিক। কিন্তু ২০১৮ সালের ক্রীড়া অনুষ্ঠানের পূর্বে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণ নিয়ে কিম হিয়ন-হুই মন্তব্য করেন, “এটি কিম জং-উনের পরিকল্পিত একটি ‘পাবলিসিটি স্টান্ট’। তারা অলিম্পিককে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন-ভাবাপন্ন পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে।”
কিম হিয়ন-হুই
বর্তমানে কিম হিয়ন-হুই একেবারে পৃথকভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো একটি অজানা জায়গায় বসবাস করছেন; তবে কোথায় সেটি জানা সম্ভব নয়। জীবনের উপর আশঙ্কা থাকায় তার সর্বসময়ের সঙ্গী কয়েকজন দেহরক্ষী। তিনি মনে করেন, উত্তর কোরিয়া সরকার তাকে হত্যা করতে চায়। তিনি উত্তর কোরিয়ার এজেন্ট হিসেবে একসময় কাজ করতেন এবং পিয়ংইয়ং এর নির্দেশে ১৯৮৭ সালের দক্ষিণ কোরিয়ান বিমান হামলা ঘটিয়েছিলেন।
মাত্র ১৯ বছর বয়সে তাকে গুপ্তচর পেশায় নিয়োগ দেয়া হয়। এর পূর্বে তিনি প্রসিদ্ধ পিয়ংইয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানী ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করতেন। ৬ বছর ধরে তিনি প্রশিক্ষণ লাভ করেন। একজন জাপানী নারীর কাছ থেকে তিনি জাপানী ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন। এই জাপানী নারীর নাম ছিল ইয়েকো তাগুচি এবং তাকে জাপান থেকে অপহরণ করে উত্তর কোরিয়াতে নিয়ে আসা হয়। মান্দারিন ভাষা আয়ত্ত্বে আনার জন্য হিয়ন-হুই কিছুদিন চীনেও অবস্থান করেন। এরপর ১৯৮৭ সালের নভেম্বরে তার ডাক পড়ে একটি বিশেষ মিশনে।
“সবার কাছেই কিম ইল-সাং একজন ঐশ্বরিক ব্যক্তি ছিলেন তখন। তিনি যা আদেশ করতেন তা সবই প্রত্যেকের কাছে ন্যায্য মনে হতো। অত্যন্ত সততার সাথে তার যেকোনো আদেশ পালন করা হতো। নিজের জীবন ত্যাগ করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হতো,” বলেন কিম হিয়ন-হুই। উত্তর কোরিয়াতে জন্ম নেওয়ায় তিনি আফসোস প্রকাশ করেন এবং বলেন, “উত্তর কোরিয়ার মতো কোনো দেশ আর নেই।”
১৯৮৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত হিয়ন-হুইকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রো তেয়-উ তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমা প্রদান করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, বিমান হামলার শিকার ব্যক্তিদের মতো কিম হিয়ন-হুইও একইভাবে উত্তর কোরিয়ার ক্ষতির শিকার হয়েছে। তার চিন্তাশক্তি ও বিবেক স্থবির করে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া সরকার। তাই তাকে শাস্তি প্রদান করা ন্যায্য হবে না।
ত্রিশ বছর পরে কিমের জীবন কোরিয়ান উপদ্বীপের বিভ্রান্তিকর বিপরীত পরিস্থিতির কথা বলছে, যেখানে অলিম্পিক শান্তিপূর্ণ বা মারাত্মক হতে পারে, একত্রিত বা বিভাজন করতে পারে, এবং যেখানে একজন সন্ত্রাসী গৃহিণী হতে পারে।